#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব ৪৭
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পাথর চুপচাপ কহিনুরের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা কিছু একটা নিয়ে ভাবছে। আশেপাশে সন্দেহ করা যায় এমন মেয়ে কে আছে বুঝতে পারছে না। মাথা খারাপ অবস্থা। সুলতান পরিবারের সকলেই অভি/শাপ মুক্ত হয়েছে তাছাড়া ওই পরিবারের এমন কেউ নেই যাকে সন্দেহ করা যায়। কে হতে পারে? তফসিল হবে না এটা সিউর। বোন হয়ে নিশ্চয়ই সে ভাইয়ের সঙ্গে এসব করবে না। অন্য কেউ আছে। কে আছে তবে? মাথা খারাপ হচ্ছে। ওকে এভাবে এলোমেলো ভাবতে দেখে পাথর ওর মুখটা নিজের হাতের তালুতে নিয়ে মায়াভরা কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,
> পাগলী আমার, অযথা এতোটা কেনো ভাবছো?। মেয়েটার উদ্দেশ্যে পূরণ হয়নি সে নিশ্চয়ই থেমে থাকবে না। আবারও আসবে তখন তাঁকে ধরবো। শুধু অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্য্য না ধরলে তো লক্ষ্য পূরণ সম্ভব না তাইনা?
পাথরের কথাটা ওর বেশ পছন্দ হলো। ছেলেটার ঘটে বুদ্ধি আছে। কহিনুর স্বাভাবিক হলো রাগ মোটামুটি কমেছে। ও পাথরের চোখের দিকে তাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
> আপনি হঠাৎ এখানে কেনো? আমাকে পাহারা দিচ্ছেন না তো? তবে শুনুন আমার বয়স হয়েছে সেই বাচ্চাটি আর নেই,যথেষ্ট বুঝি। জানি বাবার মতো আমার একটু রাগ বেশি তবে নিজেকে সামলাতে জানি।
কহিনুরের ছেলেমানুষি কথা শুনে পাথর হাসলো। ওর নাকের ঢগাই আঙুল ছুঁয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,
> জানিতো আমার বউ বলে কথা। পাথরের বউ কি আর যেমন তেমন কেউ হবে? সুলতানা কহিনুর ফারুকী বাপবা মানুষের হৃদয় হরণকারীনি। সে যাইহোক কহিনুর কি শুধু হৃদয় ছিনিয়ে নিতেই জানে?তাঁর হৃদয়ে প্রেম নেই? বর কতটা কাছে অথচ মাঝখানে আকাশ সমান দুরুত্ব। ভালো লাগে এমনটা?
পাথরের আবেগপূর্ণ কথা শুনে কহিনুর থমকে গেলো। ঢোক গিলে ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পাথরের পুরুষালী শক্ত হাতের মুঠোয় বন্ধি কহিনুর ছটফট করতে করতে থেমে গেলো। ওর ইচ্ছা করলো না লোকটাকে আঘা/ত করতে। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে। পাথর সেটা বুঝতে পেরে মুখটা ওর মুখের সামনে নামিয়ে এনে ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো,
> কেউ একজন বলেছিলো হৃদয়ের লেনাদেনা অবশ্যই হবে। তবে আজ কেনো সে কথা রাখছে না? এতোটা আপনার হয়েও কেনো তাঁর হৃদয়ের থেকে দূরে আছি উত্তর চাই? তবে কি সে মিথ্যা বলেছিলো?
পাথরের কণ্ঠে অভিযোগ ঝরে পড়ছে। কহিনুর থমকে গেলো। কি উত্তর দিবে মাথায় আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে ও আগে কখনও পড়েনি। যা মাথায় এসেছে করেছে কিন্তু এখন কি করবে? সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার জন্য ওর মনে যথেষ্ট মায়া আছে কিন্তু ভালোবাসা আছে কি? তাছাড়া আরও কঠিন একটা সত্যি লুকিয়ে আছে যেটা প্রকাশ ঘটলে লোকটা কি ওর জন্য এমন ব্যাকুল থাকবে? কহিনুর ভাবতে পারছে না। পাথর আবারও বলে উঠলো,
> উত্তর দিতে হবে না শুধু ভালোবাসা চাই। হৃদয়ের কাছাকাছি আসতে চাই। যুদ্ধ শেষে তোমার কাছে ফিরে শান্তি পেতে চাই। দিবে না তুমি?
পাথরের এমন অকুল আবেদনে কহিনুর আহত হচ্ছে। চোখের কোনে পানি চলে আসলো। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে তাই জোর করে ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসতে চাইলো কিন্তু আবারও বাঁধা পেলো। পাথর পেছন থেকে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। লোকটা আজ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন কেনো করছে কে জানে। কহিনুর চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো,
> চাচ্চু অপেক্ষা করছেন আমার জন্য। আমাকে যেতে দিন।
কহিনুরের বলতে দেরি হলো কিন্তু পাথরের ওকে টেনে নিতে দেরী হলো না। পাথরের গরম নিশ্বাস পড়ছে ওর মুখের উপরে। কহিনুর সুযোগ খুঁজছে কিভাবে এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। ওকে এভাবে চুপচাপ দেখে পাথর হিং/স্র হয়ে উঠলো। মনে হলো ওর মধ্যে থাকা প/শুর জাগরণ ঘটতে চলেছে। অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। কহিনুরের হঠাৎ মনে হলো পাথর ঠিক নেই। কিছু একটা হচ্ছে। কিন্তু কি? কিছুক্ষণ আগেও ঠিক ছিল। ওর ধ্যান ভাঙলো পাথরের কণ্ঠ শুনে,
> কেনো আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? আমি পারছি না এই দহন সহ্য করতে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ একবার কথা শুনো।
পাথর ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। কহিনুর ভ্রু কুচকে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে। পাথর ক্রমাগত ওর মুখের দিকে নিজের মুখটা এগিয়ে আনতে গিয়ে থমকে গেলো। কারণ ততক্ষণে সাঈদ ওর চোখে আলোক রশি ফেলেছে। পাথর তীব্র যন্ত্রণাই মাথাই হাত দিয়ে বসে পড়লো। কহিনুর ওকে ধরতে গেলো ঠিক তখনই সাঈদ চিৎকার করে বলল,
> নূর সাবধান। ওকে বশ করা হয়েছে। একটু সময় দাও ঠিক হয়ে যাবে।
কহিনুর চোখ বন্ধ করে নিলো। এটাই সন্দেহ হয়েছিলো। কথাবার্তা নেই হুটহাট রো/মান্টিক হয়ে যাওয়ার ছেলে পাথর না। কহিনুর হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কি ভয়ং/কর অবস্থা। কথাটা ভেবে ও সাঈদকে ইশারা করলো ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। কহিনুর পাথরের পাশে বসে মিনমিনে কণ্ঠে বলল,
> আপনি ঠিক আছেন? উঠতে পারবেন নাকি সাহায্য করবো?
পাথর লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো খুঁলে উত্তর দিলো,
> মাথায় যন্ত্রণা করছে। তুমি ঠিক আছো? এখানে কি করছো তুমি?
কহিনুর বুঝতে পারলো আঁধারকে বাঁচাতে একে ব্যবহার করা হয়েছে।তবে কে এমন জঘন্য চালটা চেলেছে বুঝতে বাকি নেই। কথাটা ভেবে ওর হাসি পেলো। এমন কুটিল বুদ্ধি ওই লোকটার মাথা থেকেই আসতে পারে। অভিশপ্ত পাথর যদি কোনো ক্রমে কহিনুরকে নিজের করে নেয় তবে কহিনুরের ক্ষতি হবে ভেবেই এমন বুদ্ধি করা হয়েছে। সাঈদের সঙ্গে মিলে ও পাথরকে নিয়ে ফিরে আসলো। জামসেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মেয়ে জামাইয়ের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ও চিন্তিত। দুটোই একরকম। শক্তির পরীক্ষা দিচ্ছে কোথায় গিয়ে কে জানে। হঠাৎ কহিনুরকে দেখে ওর ভাবনার অবসান ঘটলো। কহিনুর কক্ষের বাইরে এসে জামসেদের পাশে বসতে বসতে বলল,
> চাচ্চু আমি ঠিক আছি। তোমাকে এতোটা চিন্তা করতে হবে না।
জামসেদ তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে উত্তর দিলো,
> তোদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি হার্ট এটাক করবো। তোর বাবা আর ছোট আম্মুর কাহিনী জানিস তো? অধরা ফোন দিয়েছিলো। এই দুজনে মিলে দাদুকে তিনটা ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। বেচারা এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
জামসেদের কথা শুনে কহিনুর শব্দ করে হেসে ফেললো। বাবার মতো ও নিজেও হুটহাট কাজ করে ফেলে। বাবার মেয়ে বলে কথা। কহিনুর হাসি থামিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
> কিছু উদ্ধার করতে পেরেছে? তুমি জানো কিছু? চাচ্চু এভাবে দূরে থেকে আমি তো কিছুই জানতে পারছি না। কিছু একটা বুদ্ধি করে সুলতান ভিলাতে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো প্লিজ। এভাবে কতদিন? তুমি জানো আমার রূপ নিয়ে কেউ একজন ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ আমি জানিনা। তুমি এমন কাউকে চিনো যে অভিশপ্ত এবং কালো শক্তির অধিকারী?
জামসেদ মাথা নাড়িয়ে বলল,
> জানিনা হয়তো খান পরিবারের কেউ হবে। ভাবিস না কিছু একটা বুদ্ধি পাওয়া যাবে। ডাইরী আর কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। সব চাইতে চমকে যাওয়ার বিষয় হচ্ছে একটা মহিলার ক\ফিন পাওয়া গেছে। লা/শ টাটকা আছে।তোর মায়ের ধারণা ওটা চন্দ্রর লা/শ। আমাকে ফিরতে হবে। ঝামেলা আরও একটা বেঁধেছে ঐশ্বর্য আর আদি এসেছে। ওরা থাকবে কিছুদিন। ওদের জন্য একটা কাজের মেয়ের দরকার সেটাও আমাকে খুঁজতে হচ্ছে। দুটো সংস্থাই ফোন করেছি। উত্তর আসেনি।
কহিনুর কিছু একটা ভেবে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
> চাচ্চু এইতো বুদ্ধি। তোমাকে কষ্ট করে কাজের লোকের খোঁজ করতে হবে না। আমি আছি না?
কহিনুরের কথা শুনে জামসেদ হতভম্ভ হয়ে গেলো। কি বলে এই মেয়ে? সুলতান পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকী সেকিনা নিজের বাড়িতে নিজে কাজের মেয়ে হয়ে যাবে ভাবা যাচ্ছে না। তাছাড়া জুবায়ের জানলে তুলকালাম ঘটাবে। ঐশ্বর্যের ব্যবহার খুব একটা ভালো না। ওর কাজের মেয়ে হওয়া মানে চারটিখানি কথা না। জামসেদ গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,
> একদম না। খুবই খারাপ হবে আম্মা। আমাদের এতোটাও খারাপ দিনকাল আসেনি যে মেয়েকে কাজের লোকের ভুমিকায় অভিনয় করাবো। হবে না। সুলতান পরিবারের মেয়ে বউরা অনেক সম্মানিত।
জামসেদের কথা শুনে কহিনুর হাসলো। চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,
> খু/ন করে সম্মান দিয়ে কি লাভ চাচ্চু? তুমি না করোনা প্লিজ। ওখানে যাওয়াটা আমার দরকার। ওই ক/ফিনটা আমার দেখতে হবে। রহস্য আমাকে ডাকছে বুঝলে?আমি চাইছি না ওদেরকে সাবধান করে দিতে।ছদ্মবেশে গেলে লাভে লাভ। একটু ভাবো? তোমাদের কাছাকাছি থাকবো সঙ্গে রহস্য উন্মোচন করবো। তুমি জানো এই পাথর আজ আমার বারোটা বাজিয়ে দিতো? আমি এখানে নিরাপদে নেই।
কহিনুর পাথরের বিষয়টা ইচ্ছা করেই বললো যাতে জামসেদ ওকে নিয়ে যেতে অস্বীকার না করে। ওর বুদ্ধি কাজে দিলো। জামসেদ রাজি হলো। কারণ ওকে নিয়ে গেলে অধরা বা মীরা ওকে সাহায্য করবে। কাজকর্ম কিছু করতে হবে না। কহিনুর জামসেদের থেকে উঠে গিয়ে সাঈদের সামনে গিয়ে বসলো। পাথর ঘুমিয়ে আছে। নীরবতা ভেঙে কহিনুর বলে উঠলো
> তোমার আম্মি খান বাড়িতে নেই সাঈদ। উনাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি উদ্ধার করতে। উনি হয়তো বিশেষ কিছু জানেন। যাইহোক তোমার হাকিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করাতে পারবে একটু? যাও অনুমতি নিয়ে এসো। গিয়ে বলো সুলতানা কহিনুর ফারুকী তার দর্শনপ্রার্থী।
সাঈদ লাফিয়ে উঠলো। উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
> উনি রাজি হবেন না নূর। খুব কড়া উনি।
> তুমি গিয়ে একবার বলে দেখো নিশ্চয়ই রাজি হবেন। আমার বিশ্বাস উনি আমার অপেক্ষায় আছেন।।
সাঈদ উত্তর দিলো না। কহিনুর দৃষ্টি ফিরিয়ে পাথরকে দেখে নিলো। ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে। কপালের উপরে এলোমেলো চুলগুলো আছড়ে পড়ছে। কহিনুর আলগোছে চুলগোলো এলোমেলো করে আবারও ঠিক করে দিলো। লোকটার মুখশ্রি মনে হয় পুরোটাই মায়া দিয়ে বাঁধানো কোনো জাদুকরী মিরর। অজানা ভালোলাগার গুপ্ত খনি। কথাটা ভেবেই কহিনুর হাসলো।
*********
হঠাৎ গ্রীষ্মের গরম কেটে গিয়ে তুষারপাত হচ্ছে। জুবায়ের কম্বলের মধ্যে পা তুলতেই অধরা সেটা টেনে নিয়ে বলল,
> গোসল করে তবেই বিছানায় উঠবেন। ক/ফিন ছুঁয়েছেন সেখানে কোনো বিষাক্ত কিছু থাকতে পারে। আদিকালের মৃ/ত দেহ ছুঁয়ে কিছুতেই আমার বিছানায় উঠা যাবে না।
জুবায়ের মুখটা কাচুমাচু করে করে উত্তর দিলো,
> কোথায় নিয়ম আছে ক/ফিন স্পর্শ করলে গোসল করতে হয়। শীতের মধ্যে আমি ম/রতে চাইনা। পারবোনা ক্ষমা চাই।
অধরা জ্বলে উঠলো জুবায়েরের কথা শুনে। উদ্ধারকৃত মালামাল যা পেয়েছে কোনো কাজেই আসেনি। দাঁত ভাঙা ডাইরীর ভাষা। যে লিখেছে তাকে পেলে অধরা তাঁকে সাধুবাদ জানাতো। রাগ হচ্ছে তাই সেটা জুবায়েরের উপরে খাটানোর জন্য এই পরিকল্পনাটা করে ফেলেছে। মনের শান্তি বড় শান্তি। কথাটা ভেবে ও কম্বলটা আরও খানিকটা গুছিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো। জুবায়ের কপাল চাপড়ে উঠে বসলো। মেয়েটা বড্ড জেদি যা বলেছে তাই করাবে। কথাটা ভেবে ও ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। মনে মনে ফন্দি আটলো কিভাবে অধরাকে উচিৎ জবাব দেওয়া যায়। গোসল শেষ করতে ওর মিনিট পাঁচেক লাগলো। বেরিয়ে এসে হুড়মুড় করে কম্বল টেনে ভেতরে ঢুকে পড়লো। হাড় কাপানো শীত। কুটিল হেসে নিজের ঠাণ্ডা হাতটা অধরার মুখে ঠেসে ধরতেই অধরা সরিয়ে দিলো। জুবায়ের হার মানলো না। আবারও চেষ্টা করলো। অধরা বিরক্ত হয়ে সরে গেলো। ঠিক তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। জুবায়ের চুপচাপ চোখ বন্ধ করলো। বো/ম মারলেও এখন আর উঠবে না। বাইরে যে থাকে থাকুক। অধরা ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠতে বললো কিন্তু লাভ হলো না। তাই ভ্রু কুচকে ও বকতে বকতে গিয়ে দরজা খুঁলে দেখলো আদি দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা কাচুমাচু করে বলে উঠলো,
> আন্টি কফি পাওয়া যাবে? সরি আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি আসলে আমি কিচেনের কিছুই চিনি না। একবার দেখিয়ে দিলে নিজেরটা নিজে করতে পারবো। ঐশ্বর্য ঘুমিয়ে গেছে উঠছে না।
অধরা মলিন হাসলো। ছেলেটা লজ্জা পাচ্ছে। এখানে আসতে চাইনি কিন্তু জুবায়ের ঐশ্বর্যের জন্য ওকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার ভালোর জন্য এইটুকু করতেই হতো। অধরা ভয় পাই বাইরের কাউকে এখানে আনতে। এই বাড়িটা মৃ/ত্যুপুরীর চাইতে কম না। যেই আসবে অ/ভিশপ্ত হয়ে ফিরবে। কালো শক্তির নজর খুবই ভয়ঙ্কর। কথাটা ভেবে ও সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
> যখন যা লাগবে আমাকে বলবে লজ্জা পাবেনা। আমারই ভুল আগামীকাল থেকে আমি তোমার কক্ষে ফ্লাক্সে গরম পানি আর কফি রেখে আসবো।
অধরার কথা শুনে আদি উত্তর দিলো না। চুপচাপ নেমে আসলো উপর থেকে। কিচেনে গিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
> কহিনুর কোথায় আন্টি? ওক দেখছি না কেনো?
আদির কথা শুনে অধরা থমকে গেলো। মেয়েটাকে দূরে রাখতে ভীষণ কষ্ট হয়। কবে যে ঝামেলা মিটবে আর মেয়েটাকে কাছে পাবে এটা ভেবেই অস্থির লাগে। কিছু বলা দরকার ভেবে ও উত্তর দিলো,
> তোমার বাবা মা কেমন আছেন? দাদুরা সবাই ঠিক আছেন তো? খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। সময় পাচ্ছি না। এতো সব ঝামেলা হচ্ছে বাড়িতে। যাইহোক তুমি কক্ষে যাও।
অধরা কৌশলে বিষয়টা এড়িয়ে গেলো। আদির হাতে কফির কাফটা ধরিয়ে দিয়ে প্রস্থান করলো। আদি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ওর পিছু নিলো। আশা ছিল কহিনুরকে দেখতে পাবে কিন্তু ভাগ্য খারাপ।
*********
নানা রকমের সুস্বাদু খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে কহিনুর। ওর সামনে সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে। যার বাড়ির এক রাতের মেহমান হিসেবে কহিনুরের আগমন ঘটেছে। নিমন্ত্রিত অথিতির আপ্যয়নে কোনো ত্রুটি রাখেনি এই বৃদ্ধ। কহিনুর খাওয়া ভুলে লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে চাইছে। কিছু একটা লুকিয়ে রাখা হচ্ছে ওই অতিরিক্ত ভক্তির মধ্যে। কিন্তু কি সেটা?
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।