অভিশপ্ত জীবন সুচনা পর্ব

0
811

অভিশপ্ত জীবন
সুচনা পর্ব
লেখিকাঃ- #Fabiha_Busra_Borno

ডিভোর্সের ৪ মাস যেতে না যেতেই আবারও নতুন পাত্র পক্ষের সামনে ঘোমটা টেনে বসে আছি। যদিও নিজের ইচ্ছেতে আসিনি। কখনো ভাবিনি এই বয়সে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছর সংসার করার পরেও একটা বাচ্চা না থাকাই ডিভোর্সির তকমা গায়ে লেগেছে। না আমি বন্ধা নয় আমিও কনসিভ করে ছিলাম, একবার নয়,, বহুবার। কিন্তু নির্মম জালিমদের অত্যাচারে পরাজিত হতে হয়েছে আমার অনাগত সন্তানদের। আজ যদি আমার বাচ্চা গুলো বেঁচে থাকতো তাহলে তারা ক্লাস সিক্স বা সেভেন এ পড়তো। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আর কখনো মা ডাক শুনতে পাবো না।

আসুন আমার পরিচয় দিই। আমি সুমি, বয়স ২৮ বছর। আমার যখন বিয়ে হয় তখন বয়স ছিলো ১২ বছর। এবার বলি আমার বন্ধত্বার গল্প।

২০০৬ সাল। ক্লাস সেভেন এর দুরন্ত কিশোরী মেয়ে আমি।দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ হওয়ার জন্য প্রায় বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসতো। তখন আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মেয়েদের ই ১২/১৬ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যেতো। যেহেতু আশেপাশের পরিবেশ থেকে জানতে পেরেছি এই বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয় তাই আমি ও মনে মনে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমার ছোট এক ভাই এবং একটা বোন আছে। ছোট ভাই ক্লাস থ্রি তে পরে এবং বোনের বয়স ৩ বছর। ছোট ভাই বোনের সাথে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি আর মাঝে মাঝে পাত্র পক্ষের আগমনের মধ্যে দিয়ে ক্লাস সেভেনের দ্বিতীয় সাময়িকী পরিক্ষা শেষ হলো। এর মধ্যে আবারও আমার একটা ফুফা তার পরিচিতি একটা ছেলে কে সাথে নিয়ে আসেন। ছেলে টা অসম্ভব সুন্দর, কোন এক মেডিক্যালে জব করে। ছেলেটা ও আমাকে পছন্দ করে। তারপর শুরু হয় বিয়ের শলাপরামর্শ। কোন রকম যৌতুক ছাড়ায় আমার বিয়ে ঠিক হয়। দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় মাত্র ১০০০০ হাজার টাকা। দিন তারিখ ঠিক হয়। আর ১৫ দিন পরে বিয়ে।আমার হবু বর মাঝে মাঝে আব্বার মোবাইলে কল করে আমার সাথে কথা বলতো। প্রথমে খুব লজ্জা লাগতো। কিন্তু ২ দিন কথা বলার পরে কেমন যেন আলাদা টান অনুভব হতো। আব্বা বাসায় ফোন রেখে গেলেই তাকে মিস কল দিতাম,, অনেক কথা বলতাম। মাঝের ৭/৮ দিন কে মনে হতো ৭/৮ বছর। যায়হোক নানা জল্পনা কল্পনার ভিতর দিয়ে চলে আসলো সেই প্রতিক্ষার দিনটি। গ্রামের সামাজিক নিয়ম মাফিক বিয়ে টা সম্পুর্ন হতে হতে রাত প্রায় ৮ টা বেজে গেলো। বিদায়ের সময় দাদা দাদি আব্বা মা সহ চাচারা অনেক কান্নাকাটি শুরু করেন। ছোট বোনটা কোন কিছু না বুঝেই হয়তো সবাই কান্না দেখেই কান্না করতে শুরু করে। এতো পরিমাণ কান্না করে যে কান্নার হ্যাচকিতে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। আমার কোলে এসে আর অন্য কারো কাছে যেতে চাইছে না।অনেক কষ্টে মা আমার বোন কে দূরে নিয়ে গেলো। তারপর বিদায় লগ্নে আমি বসলাম মাইক্রোবাসের সামনের জানালার পাশের সিটে।আমার ডান পাশে বর। এই প্রথম তার বাহুর সাথে আমার বাহুর হালকা স্পর্শ। তারপর মাইক্রোতে উঠে আরো অনেকে, যার ফলস্বরূপ অনেক গাদাগাদি করে বসতে হয়। এই সুযোগে আমার বর আমার খুব কাছে চলে আসে আমি ও এগুতে এগুতে জানালার সাথে এতো লেপ্টে গেছি যে আমার দুষ্ট বর বলেই ফেলছে “” মাইক্রোর জানালা ভেঙে গেলে জরিমানা দিতে হবে।
এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা চলার পরে শশুর বাড়ি তে পৌছালাম। শাশুড়ী আমার হাতে ৫০০টাকা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে।আমার মেঝো জা চিনি মুখে দেওয়ার জন্য বাড়ির উঠোনে একটা মাদুর পেতে দেয়। চিনি খাওয়ানোর সময় সচারাচর শাশুড়ী বসে নতুন বউ বরের মাঝখানে কিন্তু এখানে আমাদের মাঝে বসেছে আমার মেঝো জা।আমার বড় জা এবং শাশুড়ি নিষেধ করা সত্বেও উনি আমাদের মাঝেই ছিলেন। তারপর আরও নানা নিয়মনীতি শেষ করে আমার বাসোর ঘরে নিয়ে আসা হয় আমাকে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমার মেঝো জা-য়ের দুটো মেয়ে দুই এবং চার বছর বয়সী। কেন জানি না মেয়ে দুটো কে সব সময় আমার কাছে রেখে যাচ্ছে। চার বছর বয়সী মেয়েটার নাম শিমলা। তো শিমলা আমার চুরি, হার,নথ,আংটি ইত্যাদি নিয়ে নারাচারা করেই চলেছে। মেয়েটা খুব জিদ ধরেছে আমার সাথে ঘুমাবে। আমি তো লজ্জায় বার বার বলছি,,আচ্ছা থাকুক আমাদের সাথে। তারপর শাশুড়ী এক প্রকার জোর করে শিমলা কে নিয়ে গেছে। কিন্তু বর টা এখনো আসছে না। তাই আত্মীয়দের মাঝে কেউ কেউ আমার সাথে বসে গল্প করছে।প্রায় রাত একটা বা দেড়টার দিকে বর রুমে আসছে এলোমেলো চুলে। তারপর আমাকে বলে, সরি দেরি হয়ে গেলো, আসোলে মেডিক্যাল থেকে কল আসছিলো তাই কথা বললাম।
আমি বললাম ঠিক আছে, তারপর সে নানা রকম কথা গল্প ও দুষ্টুমি শুরু করলো। এভাবেই রাত কেটে গেছে। চারিদিকে ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে এর মাঝেই দরজাতে কড়া নারে আমার মেঝো জা।মুহিত(আমার বরের নাম) বারবার বলছে, ভাবি তুমি যাও, উঠছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপরই উনি বিরতিহীন ভাবে ডেকেই যাচ্ছেন।উউফঃ খুব বিরক্ত নিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম। তারপর আমি দরজা খুলে দিলে ভাবি বললেন,, সবাই ঘুম থেকে উঠার আগে গোসল সেরে নাও। চলো তোমাকে কলপাড় দেখিয়ে দিয়ে আসি। বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজনের মধ্যে গোসল করতে লজ্জা করবে না তোমার। এই জন্যই তো বারবার ডাকছি।

ভাবির উপরের বিরক্তি গুলো সব দূর হয়ে গেছে। কারণ উনার কথার যুক্তি আছে। আমি এতো কিছু বুঝিনি। তাই উনি সতর্ক করে দিলেন। তারপর ভাবির সাথে কলপাড়ে গেলাম বাড়ির পিছনে পাঠকাঠির চাটাই দিয়ে চারিদিকে ঘিড়ানো কলপাড়।আমি টিউবওয়েল চাপছিলাম তখন ভাবি বললো তুমি গোসল শেষ করো আমি তোমার জন্য কাপড় আনছি।ভাবি আমাকে একা রেখে চলে গেছে। আমার গোসল শেষ হয়েছে অনেকক্ষন,,কিন্তু ভাবির শুকনো কাপড় নিয়ে আসার কথা নেই। অবশেষে একটা সুতি শাড়ি পেটিকোট ব্লাউজ হাতে তার দেখা মিললো। এসেই হন্তদন্ত হয়ে বলা শুরু করলো খুঁজে পাচ্ছিলাম না তোমার কাপড় গুলো তারপর মুহিত কে ডেকে তুলে সুটকেস খুলে বের করে নিলাম। তাই একটু দেরি হলো। তারপর কাপড় পড়ে চলে আসছিলাম তখন দেখি বাসার মুরোব্বিরা প্রায় অনেকেই উঠে গেছে। কেউ কেউ চুপিচুপি কিছু একটা বলছিল কিন্তু আমার উপস্থিতিতে সবাই চুপ করে যাচ্ছে। আমি ভাবছি হয়তো অনেক দেরি করে গোসল দিলাম এটা নিয়ে কিছু বলছেন। তাই আমি ও আর মাথা ঘামায় নি। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় গ্রামের সকল মানুষের নতুন বউ দেখার ভীড়। আমাকে বসানো হয়েছে শাশুড়ীর বড় ঘরে। নানা রকম মানুষের নানা রকম উপদেশ, পরামর্শ জ্ঞান ইত্যাদি দিতে লাগলেন। গ্রামের কিছু দাদি শাশুড়ী তো আমাকে বলেই ফেললেন যে,দামান কে আঁচলে বাইন্ধা রাইখো, সব সময় দামানকে চোখে চোখে রাখতে হয়। দামানের উপর যত কদর করবা দামান ও তত তোমার উপর কদর করবে।

এ ঘরে বসে থাকা অবস্থায় মুহিত দুই/তিন বার এসেছিলো। দাদির ওইসব কথা বলার সময় ও মুহিত ছিলো। মুহিত সুটকেস এর চাবি নেওয়ার অজুহাতে ওই ঘর থেকে আমাদের ঘরে নিয়ে আসে। তারপর বাবার বাড়ির জন্য মন খারাপ নাকি জিজ্ঞেস করে এবং স্বান্তনা দেয়। তারপর নতুন বউ বরের মিষ্টি খুনসুটি আর দুষ্টুমিতে আনন্দঘন মুহূর্তে পৌঁছালাম আমরা। কিছুক্ষন পরেই ঘরের পিছনের জানালায় কড়া নেড়ে মেঝো জা, বিয়েতে উপহার পাওয়া বড় বড় গামলা, বালতি ও পাতিল গুলো চাই। সেগুলো নাকি রান্নার জন্য ব্যাবহৃত হবে। আমি ভাবিকে ঘরে আসতে বলি। বিয়েতে উপহার পাওয়া বিভিন্ন রকম ঘর সাজানো আসবাবপত্রের মধ্যে বাক্স ও ছিলো। আর ওই বাক্স তে ছোট জিনিসপত্র গুলো রেখে পাঠিয়েছিলেন। ভাবিকে যা যা লাগে সেগুলো নিতে বললে উনি প্রয়োজন মতো সব কিছু নিয়ে যান এবং সাথে করে আমাকে ও নিয়ে যান।বাইরে নাকি গ্রামের আরো অনেকে বউ দেখতে এসে বসে আছেন। বাইরে বসে থাকতে থাকতে আব্বা মা ভাই বোনের কথা খুব মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই বউভাত দাওয়াতে আমাকে নিতে আসবে সবাই। এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে দুপুর ছুঁইছুঁই অবস্থা। সবাই আমাকে গোসল করাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। প্রসস্থ উঠোনের মাঝখানে উঁচু বেঞ্চের উপর ফিরি পাতা। বেঞ্চের এক পাশে পিতলের কলসিতে আম পাতা দিয়ে ফুল বানিয়ে রাখা। কলসির আরেক পাশে শিল-পাটা রাখা হয়েছে। সবুজ রঙের কচি কলাপাতা উপর কিছু দুর্বাঘাস,কাঁচা হলুদ বাটা, মেহেদী বাটা, সাবান শ্যাম্পু রাখা।

পাড়ার কিছু মেয়েরা আমার চুলে ফিতা দিয়ে বিনুনি করে দেয় এবং বিনুনির শেষ মাথায় অনেক গুলো গিট বেঁধে দেয়। তারপর মুহিত কে একটা লুঙ্গি পড়িয়ে গামছা ঘাড়ে আমার কাছে নিয়ে আসে।

মুহিতের হাতে বড় একটা পানপাতা আর তিনটা গোটা সুপারি। পান পাতা দিয়ে আমার চোখ বন্ধ করে কোলে করে নিয়ে বেঞ্চের উপরের ফিরিতে বসাতে হবে। মুহিত কে যথারীতি নিয়ম গুলো শিখিয়ে দিচ্ছিলেন আমার বড় জা আর মেঝো জা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। মুহিত পান পাতা দিয়ে আমার চোখ মুখ বন্ধ করে কোলে নিতেই আমি মুহিতের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরি, যেন পড়ে না যায়। বুঝতে পারছি এক হাতে পানপাতা আর অন্য হাতে আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে মুহিত হিমসিম খাচ্ছে। তখনই মেঝো জা বলেন, যদি কোলে করে নিতে না পারো তাহলে হাঁটিয়ে নিয়ে যাও!! কিন্তু উপস্থিত জনতা বলা শুরু করে কোলে করেই নিতে হবে। তাই মুহিতও আমাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চের নিচের শিল-পাটার উপর দাঁড় করিয়ে দেয়। আর মুহিত ও আমার পিছনে দাঁড়ায়। আমার শাশুড়ি এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের অর্ধেক মুহিত কে খাইয়ে দিলেন এবং বাকি অর্ধেক আমাকে। তারপর গোটা সুপারি এবং কয়েকটি দূর্বাঘাস আমাদের মাথায় এবং কপালে ছোঁয়ায় দিয়ে তিনি চলে যান। তারপর সবাই একে একে আমাদের গায়ে, হাতে মুখে গলায় কাঁচা হলুদ ও মেহেদী লাগিয়ে দেন। মুহিত আমাকে আবারও কোলে করে নিয়ে তিন পাক ঘুরে বেঞ্চের সামনের ফিরিতে বসিয়ে নিজেও পিছনের ফিরিতে বসে। আমাদের মাথার উপরে মুহিতের গামছা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং মুহিত কে আমার চুলের বিনুনি খুলে দিতে বলেন সবাই। মুহিত তো পরেছে মহা বিপদে, বেচারা এতো গুলো গিট খোলা বললেই খোলা!!! যে মেয়েটা গিট দিয়েছে তাকে ফাজলামো করে মুহিত কিছু বকা দিলো। গামছার নিচে বিনুনি খুলতে খুলতে মুহিতের অবাধ্য হাত এখানে সেখানে গিয়ে যাচ্ছে। না পারছি আমি নড়াচড়া করতে বা না পারছি কিছু বলতে। অবশেষে বিনুনি খোলা শেষ। পাড়ায় সব মাঝ বয়সী মেয়েরা আমাদের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে সারিগানের তালে তালে নাচ করছেন। একে অন্যের গায়ে কাঁদা ছিটাছিটি, রং মাখামাখি এবং উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে থেকে একে ওকে টেনে এনে তাদের সাথে নাচতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে দুজন ভাবি আমাদের গোসল সম্পুর্ণ করে দিলেন। তারপর গামছা দিয়ে আমার ও মুহিতের হাত বাঁধা হলো। আর নাচের মেয়ে গুলো আমার শাশুড়ী ভাসুর সহ আরো অনেকের কাছে থেকে টাকা দাবি করতে থাকেন। কেউ টাকা দিতে না চাইলে আমাদের শুকনো কাপড় দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। এইরকম নানা আনন্দ উল্লাসের মধ্যে দিয়ে গোসল সম্পুর্ন হলো। আমাকে শুকনো কাপড় পড়ানোর পরে আবারও নতুন করে বউ সাজানো শুরু করে। তারপর বাইরে যেখানে বউভাতের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে তার এক পাশে টেবিল চেয়ারে আমাকে বসানো হয়। সকল দাওয়াতি আত্মীয় স্বজনরা খাওয়া শেষে আমাকে নানান রকম উপহার দিচ্ছেন। পাশের চেয়ারে বসে একটা ননদ সবার নাম ঠিকানা এবং উপহার গুলোর লিষ্ট করছে।

এভাবেই সময় পার হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাদের এখন ও বাড়িতে যাওয়ার পালা। প্রায় সবাই রেডি। কিন্তু ঝামেলা পাকালো আমার মেঝো জা। শিমলা প্রচুর কান্না করছে আমাদের সাথে যাবে বলে। তার মা যে তাকে ইন্ধন যোগাচ্ছেন তা ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি। অবশেষে শিমলা কে সাথে নিতে হলো। ভাবি বারবার আমাকে এবং মুহিত কে বলছিল যেন আমাদের সাথে রাখি শিমলা কে। এমনকি রাতেও যেন আমার কাছে রাখি। নয়তো অনেক কান্না করবে মেয়েটা। এ বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় রাত ৯ টা বেজে গেলো। আসার পরেই ছোট বোন পপি এবং ছোট ভাই শামিম কে জড়িয়ে ধরি। অনেক কান্না পাচ্ছে তাই কান্নাও করলাম কিছুক্ষণ। এদিকে নতুন জামাইয়ের আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে যায় সবাই। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় ১২ টা বেজে গেলো। আমার মা পপি এবং শিমলা কে সাথে নিয়ে ঘুমানোর বন্দবস্ত করে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো আমার মেঝো জা ঘন্টায় দুই তিন বার করে ফোন দিয়ে শিমলার খবর নিচ্ছে। মুহিত ও মাঝে মাঝে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে যাচ্ছে। ভাবি অনেক জিদ করে শিমলার সাথে কথা বলার জন্য তাই মুহিত ফোন টা শিমলার কাছে নিয়ে যায়। ফোনে লাউডস্পিকার দেওয়া ছিলো তাই আমার জা যে শিমলা কে আমাদের সাথে থাকার জন্য ফুসলাতে লাগে তা আমরা সবাই শুনতে পায়। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে শিমলা কে আমাদের সাথে নিতে হয়। ভাবি রাতের ভিতর আরো চার পাঁচ বার কল দিলেন। আমার সাথে ও কথা বললেন, আমাকে বললেন যে এই প্রথম শিমলা কে দূরে রাখা তাই তার চোখে ঘুম পাচ্ছে না। শিমলা ঘুমানোর পরে মুহিত শিমলা কে খাটের এক পাশে সুইয়ে দিয়ে আমাকে মাঝখানে নেয়। দুজন নতুন মানুষ রাতের গভীরতার সাথে মিশে গভীর আলিঙ্গনে লিপ্ত হওয়ার এক পর্যায়ে আবারও কল আসলে মুহিত ফোন বন্ধ করে রাখে। যায়হোক এভাবেই সকাল হলো। আজ আবারও আমাদের নিতে শশুর বাড়ি থেকে লোকজন আসবেন। তাদের সম্মানার্থের জন্য চলছে প্রস্তুতি। সময় চলে তার নিজ গতিতে। দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ও বাড়ি থেকে অনেকেই এসেছেন। সাথে বড় ভাবি মেঝো ভাবিও। মেঝো ভাবি এসেই শিমলা কে জরিয়ে ধরে আদর করতে থাকে। তার এমন আদর দেখে বুঝতে পারি গত রাতে কতটা কষ্ট পেয়েছে মেয়েকে ছাড়া থাকতে। এই জন্যই বুঝি এতো বার ফোন দিচ্ছিলেন। মায়ের মন বলে কথা। আমার চাচাতো বোনরা মুহিত কে পেয়ে অনেক খুশি। সারাদিন নতুন দুলাভাই কে সাথে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আমি আমার সব চাচাদের বাসা শশুর বাড়ি থেকে আসা মেহমানদের সাথে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলাম। ছোট চাচার বাসায় গিয়ে দেখি মুহিত নাহার এবং রোকসানা আড্ডা দিচ্ছে। মেঝো ভাবি ওদের সাথে মুহিত কে দেখেই এমন কিছু কথা বললেন যা শুনে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here