#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১০
বসার জায়গায় বসে একমনে প্রতীক্ষা করছে রাগিনী। তার হাতের চুড়িগুলো নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেল কোহিনূর চেঞ্জিং রুমে গিয়েছে। বের হবার কোনো নাম নেয় তার। লোকটা আসলেও ড্রেস চেঞ্জ করতে পেরেছে তো? শার্টের বোতামগুলো লাগাতে পেরেছেন? নাকি ভেতরে কোনো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। এসব ভাবতে ভাবতে বিচলিত হয়ে চেঞ্জিং রুমটার দিকে তাকালো সে। আর বসে থাকা যাচ্ছে না। উঠে দাঁড়ালো এবার। হাতের ব্যাগটা নিয়ে এগোতে লাগল সেদিকে। এরই মাঝেই খুলে গেল সেখানকার দরজা। দরজা খুলতে দেখে আর এগিয়ে গেলো না রাগিনী। ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানেই। দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে এলো কোহিনূর। ব্যস্ত পানে এখনো ব্লেজার ঠিকঠক করছে সে। রাগিনীর দুটো সুন্দরতম আঁখির পলক পড়তে আর দেখা গেল না। আঁটকে গেল ঠিক কোহিনূর নামক ব্যক্তিটির মাঝে। মনের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে এক উথাল-পাতাল! এইতো তার কল্পনার কোহিনূর রত্ন। তার চুল, হাঁটাচলা সব হবে অন্যরকম! আশ্চর্যজনক হবে তার স্টাইল! নিজের কাল্পনিক রূপকে এতো দ্রুত বাস্তবে দেখতে পেয়ে যেন চাঁদ হাতে পেয়ে গিয়েছে রাগিনী। খামচে ধরেছে তার ওড়না। চোখটা সরাতে মন চাইছে না। এ যেন তার মস্ত বড় একটা রত্ন। যা যত্নের পর চকচক করছে!
হঠাৎ করেই রাগিনীর সামনে চুটকি বাজায় ধ্যান থেকে বেরিয়ে হকচকিয়ে তাকায়। খেয়াল করে তার অনেকটা ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে কোহিনূর। এবার ঘন ঘন চোখের পলক পড়ে তার। রাগিনীর এমন তাকানোর ধরন দেখে কোহিনূর খানিকটা ঘাড় কাঁত করে বলে,
“সো ম্যাডাম রাগিনী, ডু আই লুক মোর হ্যান্ডসাম?”
রাগিনী যেন এখনো ঘোর কাটাতে পারেনি। তাই কথাটা যেন তার কর্ণকুহরে পৌঁছেও পৌঁছালো না। অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
“কী?”
“এজন্যই আমি এসব ট্রাই করতে চাইছিলাম না। এমনিতেই আমাকে দেখলে আপনার মাথা ঠিক থাকে না। এখন এইসব পোশাকে দেখলে তো আরো বিপদ হয়ে যাবে। দেখুন, আপনার শ্রবণশক্তিও কমে গেছে আমাকে এভাবে দেখে।”
মুখটা বেলুনের মতো চুপসে গেল রাগিনীর। লোকটা একনাগাড়ে কি বলে যাচ্ছে এসব? অবশ্য যা বলছে তা ভিত্তিহীনও নয়। এতোক্ষণ তো রাগিনী এই ব্যক্তিতেই মেতে উঠেছিল। সে তার চুপসে যাওয়া মুখ নিয়ে বলল,
“অদ্ভুত কি সব কথা বলছেন আপনি? দেখি চলুন। এখনো অনেক কাজ বাকি!”
বলে হাঁটা দিতেই রাগিনী খেয়াল করে কোহিনূর শার্টের প্রথম দুটো বোতাম খোলা রেখেছে। সঙ্গে সঙ্গে আবারও দাঁড়ায় সে। চোখজোড়া সরু করে কোহিনূরের নিকট যেতেই কোহিনূর চোখ গোল গোল করে তাকায়। দুই কদম পিছিয়ে যায় সে। আশ্চর্য! মেয়েটা এগিয়ে আসছে কেন? দ্রুত এগিয়েই কোহিনূরের শার্টের কলার ধরে টানে রাগিনী। তার বোতামে হাত দিয়ে বলে,
“একটা বোতাম লাগাতে হবে। তবেই ভদ্রলোক, ভদ্রলোক দেখাবে।”
জোরে জোরে কেশে ওঠে কোহিনূর। চমকে প্রশ্ন করে ওঠে,
“মানে কি? আমাকে তার মানে অভদ্র দেখায়?”
“হ্যাঁ দেখায়। বখাটে ছেলেদের মতো দেখায়। যখন চুলগুলো অগোছালো রাখেন! এলোমেলো ভঙ্গিতে থাকেন তখন যে কোনো মেয়ে দেখলেই ভড়কে যেতে বাধ্য।”
সোজাসাপটা উত্তর দিল রাগিনী। তা শুনে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেল কোহিনূরের। এই মেয়েটা কি সব বলে তাকে? তবে কোহিনূর তো দমে যাবার পাত্র নয়। সে আবারও পাল্টা জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে তুমি ভয় পাও না কেন?”
রাগিনী আর কোনো কথা বলল না। কোহিনূর তার দিকে ঝুঁকে উত্তরের আশায় উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে। রাগিনী তার হাতটা কোহিনূরের বুকে রেখে আলতো ধাক্কা দিয়ে নিজে দূরে সরে গিয়ে হাঁটা শুরু করে বলল,
“এদিকে আসুন। বললাম না? আরো কাজ বাকি আছে!”
একে একে দামি জুতো, ব্র্যান্ডের ঘড়ি নিজে পছন্দ করে কিনলো রাগিনী এবং তার কথামতো কোহিনূর এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেসব পড়ে নিল। সবকিছু শেষে জিনিসপত্রের বিল পে করে বেরিয়ে এলো রাগিনী এবং সে। গাড়িতে গিয়ে বসল দুজন। রাগিনীর কথা অনুযায়ী গাড়ি চলতে শুরু করল। রাগিনী ও কোহিনূর দুজনই পাশাপাশি বসা। তবে দুজন বেশ দূরত্ব বজায় রেখেছে। একজন এক প্রান্তে অন্যজন সিটের আরেক প্রান্তে! জানালার হাত দিয়ে ভর করে গালে লাগিয়ে বসে বাহিরের দিকটা দেখার ভঙ্গিমা ধরেছে রাগিনী। তবে সমস্যা হচ্ছে তার অবাধ্য চোখ দুটো। যারা বার বার বেহায়ার মতো ছুটে চলেছে তার পাশেই থাকা পুরুষটিকে দৃষ্টিপাত করতে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার দৃঢ় ইচ্ছে জানাচ্ছে মস্তিষ্ক। যেন এর আগে ততটুকু দেখে তারা শান্তি লাভ করেনি। হঠাৎ করেই কিছু একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনলো সে। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। আশেপাশে তাকালো। ব্যাগের চেইন খুলে ফোনটা দেখে নিল। তবুও উশখুশ করতে থাকলো সে। তারপর সামনে থাকা ড্রাইভারকে প্রশ্ন করে উঠল,
“চাচা, আপনার কি ফোন বাজছে? বাজলে ধরুন! আমি কারো ফোন ভাইব্রেশন হবার মতো অনুভূত করছি।”
“না তো। আমার ফোনে তো কেউ ফোন দিতাছে না।”
সামনে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বলল ড্রাইভার। সন্দেহ কমলো না রাগিনীর। আশেপাশে তাকালো। খুঁজতে থাকলো যদি কোনো ফোন মেলে। নড়েচড়ে উঠল পাশে থাকা কোহিনূর। জোরেশোরে কেশে উঠল। তারপর হঠাৎ করেই রাগিনীর হাতটা জোরে চেপে ধরল সে। হতভম্ব হয়ে রাগিনীর পুরো মনোযোগ চলে গেল কোহিনূরের দিকে।
“শোনো রাগের রানী, আমি আর তুমি আজকে অনেক ঘুরবো। কোথাও বাদ দিব না। শুধু শুধু ওই এক ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না।”
কোহিনূরের শিশুসুলভ কথা! তার অন্য রূপ দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে চেয়ে রইল রাগিনী। তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ অবশ্যই। আমরা অনেক ঘুরব আজকে।”
কোহিনূর ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে ওঠে। হাসির ঝংকার ওঠে আশেপাশে। রাগিনী একমনে মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার জানা নেই মানুষটিকে আসলেই কি করে আগের মতো করে তুলবে! কি করে সম্ভব হবে এসব কিছু?
রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম। বেশ লম্বা লাইন গাড়ির। শহরের নৃত্য দিনের এক ঘটনা। দুপুরের ভ্যাপসা গরম! অস্থির হয়ে উঠেছে রাগিনী বসে থাকতে থাকতে। গাড়ির এসিতেও দম বন্ধ লাগছিল তার। তাই জানালাটা একটু খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে কোহিনূর প্রতি মিনিটে জিজ্ঞেস করছে আর জেদ ধরছে কখন তারা ঘুরতে যাবে! রাগিনী কোনোমতে তাকে থামিয়ে রেখেছে। কোহিনূর ভর দিয়ে চোখটা বন্ধ করে বসে আছে। হঠাৎ করেই রাগিনী বলে উঠল,
“চাচা, আমি একর্টু নামব। একটা কাজ আছে!”
সেকেন্ডেই চোখ খুলে তাকায় কোহিনূর। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে রাগিনী নেমে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে জানালার কাছে চলে গেল কোহিনূর। চোখটা নিবদ্ধ থাকলো রাগিনীর উপরেই। মাথায় প্রশ্ন এলো কোথায় যাচ্ছে সে? খুব একটা বেশি দূর যায় না রাগিনী। সে গিয়েছে কংক্রিটের রাস্তার ডাস্টবিনটার কাছে। কোহিনূর উৎকন্ঠা থাকে বিষয়টা দেখতে। কি করতে চাইছে মেয়েটা? তাকে ভারি অবাক করে দিয়ে ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে নাক এক হাতে ধরে অন্যহাতে ভেতর থেকে সযত্নে বের করল একটা বিড়ালের ছোট বাচ্চা। বাচ্চাটিকে নিয়ে আবারও গাড়ির দিকে চলতে থাকল সে। মুখে ঢেকে রাখা ওড়না ছেড়ে দিল। মেয়েটির অদ্ভুত স্বস্তিময় হাসি চোখ এড়ালো না কোহিনূরের। মেয়েটার এই হাসি বেশ গাঢ় এবং প্রশান্তির। বিড়ালের সেই ছোট্ট ছানাটিকে মেয়ে যেন রাজ্য জয় করে ফেলেছে।
গাড়িতে এসে বসল রাগিনী। তার হাতে ছোট্ট ছানাটি মিউ মিউ করছে। তার চোখটাও হয়ত সবে ফুটেছে। সাদা রঙের বড় বড় লোমে তার ময়লায় অন্যরকম রঙ ধারণ করেছে। গায়ে বেশ ময়লা। তবুও সেই বিড়াল ছানার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছে না রাগিনী। বরং খুশি হচ্ছে বেশ। আনমনেই রাগিনী বিড়াল ছানার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“তোমাকে কে ওখানে ফেলে রেখেছে লিটল ফেইরি?”
বিড়াল ছানাটি মিউ মিউ করে উঠল। যেন তার কত অভিযোগ! এই নিষ্ঠুর সমাজের প্রতি। তার কোনো জায়গা নেই এইসব মানুষের পরিবেশে। সেটাই যেন অভিযোগ করতে ব্যস্ত সে। এবার রাগিনী কোহিনূরের দিকে দৃষ্টিপাত করল। আর বলল,
“কোহিনূর! আমি বলছিলাম যে আমাদের বোধহয় আগে ভেট আই মিন এনিম্য হসপিটালে যাওয়া উচিত। দেখুন এই লিটল ফেইরির অবস্থা! আমরা আগে যাই সেখানে? তারপর না হয় যাব ঘুরতে?”
কোহিনূর নিরব হয়ে চেয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত সম্মতি জানাতেই হাসিটা বাড়ল রাগিনীর। সে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল,
“চাচা, এনিম্যাল হসপিটালে চলুন আগে।”
নিস্তব্ধ অন্ধকার ঘর। ঘরটা এতটাই নিস্তব্ধ যে ওয়াশরুম থেকে টপটপ করে পানি পড়ার অবধি আওয়াজ আসছে। চেয়ারে বসে দুলছে এক মানব। তার অবয়ব বলে দিচ্ছে কাউকে বেশ কয়েকবার ধরে ফোন করে যাচ্ছে সে। এক লম্বাটে মানুষ। সবদিক থেকে বেশ স্বাস্থ্যবানই বলা চলে। প্রশস্ত এক দেহ! অনবরত ফোন দেওয়ার পর ব্যর্থ হয়ে সেই ফোন নামিয়ে রাখে। সেই ফোনে এক রক্তিম এবং ভয়া’নক দৃষ্টি আবদ্ধ থাকে। অতঃপর দৃষ্টি সরে গিয়ে পড়ে একটা ছোট গোল টেবিলের উপর পড়ে থাকা নিউজপেপারের দিকে। নিউজপেপারটা আজকের। ফ্রন্ট পেজে বড় বড় করে লিখা, ‘আত’ঙ্কবাদীর দ্বিতীয় আ’ক্রমণের কথা আন্দাজ করতে পেরে সেখান থেকে সব শ্রমিক ও মেটেরিয়ালস্ সরিয়ে ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ এবং অফিসারের দল।’
নিউজপেপারের উপর হাত রাখে সেই পুরুষ। দাঁত কিড়মিড় করার সাথে সাথে নিউজপেপার দুমড়েমুচড়ে ফেলে। তারপর তার একাংশ নিজের মুখে পুরে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে মুখ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সেই কাগজ। আর বলে ওঠে,
“এতোবার এই মেয়েকে কল করছি তাও ধরার নাম নেই। নেশা করে কি টলে পড়ে আছে নাকি! অন্য কোনো খবর রাখে না বোঝাই যাচ্ছে। নয়ত এতো বড় ব্লান্ডার কি করে হলো? কি করে ফ্যাক্টরির মতো সামান্য জিনিস ব্লা’স্ট করাতে পারল না? বোধবুদ্ধি দিন দিন লোপ পাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাকেই তার সাথে দেখা করতে হবে।”
এনিম্যাল হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে রাগিনী। তার স্নিগ্ধ মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। তার অস্থিরতা একমনে দেখে চলেছে কোহিনূর। মেয়েটার এতো অস্থিরতার কারণ বুঝতে এখনো সক্ষম হয়নি সে। তার এতো বিচলিত মনোভাব কীসের জন্য? সামান্য বিড়াল ছানার জন্য? হ্যাঁ সেটাই। এনিম্যাল ডক্টর ছানাটাকে দেখছে। আর বাহির থেকে সেটা উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে রাগিনী। অবশেষে ডক্টর বেরিয়ে আসে। তাতে রাগিনীর চোখমুখের রঙ পাল্টে যায়। দ্রুত ডক্টরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“ডক্টর! তাকে কেমন দেখলেন?”
“দ্যা বেবি ইজ অলরাইট। জাস্ট খিদে আর মা ছাড়া হবার কারণে এমন করছে। তাকে আমি খাইয়ে দিয়েছি। আপনি তাকে একটু পর পর খাওয়াবেন। বাচ্চাদের একটু পর পর খাওয়াতে হয়। আর একটু যত্ন নিলেই সে ঠিক হয়ে যাবে।”
রাগিনীর মাঝ থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। কোহিনূর দূরে বসে থেকে সবটাই লক্ষ্য করছে। অন্য কোনো হেলদোল নেই তার। রাগিনী ভেতরে গিয়ে দুহাত দিয়ে খুব আগলে ধরে বিড়াল ছানাকে বাহিরে নিয়ে এলো। বাহিরে এসেই তার দৃষ্টি গেল কোহিনূরের দিকে। কোহিনূরের এমন চুপচাপ বসে থাকা দেখে রাগিনী কিছুটা অবাক হলো। কোহিনূর উঠে দাঁড়িয়ে ইশারা করে হসপিটাল থেকে বের হতে বলল। বলেই আগে আগে হাঁটা ধরল কোহিনূর।
সারা রাস্তা বিড়াল ছানার সঙ্গেই কথা বলতেই সময় কেটেছে রাগিনীর। তাকে নিয়েই যেন এখন তার হাজারো ব্যস্ততা। কোহিনূর রীতিমতো হতভম্ব! মেয়েটা দেখি বেশ স্বার্থপর! সামান্য বিড়াল ছানা পেয়ে তাকে ভুলে গেল? তবে কোহিনূরের পাশে থাকা এই দৃশ্যের অভাব হয় না। তাই কোহিনূরও বিন্দুমাত্র দৃশ্যটা মিস করছে না। একটি স্নিগ্ধ অপরূপ মেয়ে আরেকটা স্নিগ্ধ জীবকে জড়িয়ে কতশত কথা বলছে সেটাতেই মত্ত কোহিনূর নিজেও। সে যেন আজ অন্যরকম জগতে হারিয়েছে। রাগিনীর জোর সুরে ঘোর কাটলো তার।
“কি দেখছেন এমন করে?”
রাগিনী কোহিনূরকেই উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল। কোহিনূর সেটা বুঝতেই নিজের চোখ নামিয়ে এমন ভান ধরল যেন সে কোনোকালেই রাগিনীর দিকে তাকায়ই নি। সে নিজেই চমকে যাওয়ান ভান করে বলল,
“কি দেখব?”
“আগে তো বলতেন আমি আপনাকে দেখছি বলে আপনার সুন্দর রূপের কারণে আমার শ্রবণশক্তিও কমে গেছে।”
বলেই থামলো রাগিনী। আবারও বলল,
“ডু আই লুক মোর বিউটিফুল?”
কোহিনূর খুব করে কিছু একটা বলতে চাইলো। কিন্তু বলতে পারলো না। তার আগেই হুট করেই গাড়িটা খুব জোরে ব্রেক করল। হকচকিয়ে উঠল রাগিনী। জিজ্ঞেস করল,
“চাচা, কি হলো? এভাবে ব্রেক করলেন কেন?”
“জানি না। সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।”
রাগিনী সামনে তাকিয়ে দেখে সত্যিই তাই। গ্রামের পথ। আজ তার ইচ্ছে হয়েছিল একটু গ্রাম ঘুরে দেখার। সেকারণেই এদিকে এসেছিল তারা। কিন্তু এটা কেমন বিপদ? রাগিনী কিছু একটা বুঝে বলল,
“গাড়ি ঘুরান চাচা।”
রাগিনীর কথামতোই কাজ করতে গেল ড্রাইভার। কিন্তু তাদেরকে হতভম্ব করে দিয়ে পেছন থেকেও একটা গাড়ি যেন তাদেরকে ঘিরে ধরল। দুদিকে দুটো গাড়ি। রাগিনীর মস্তিষ্ক যেন ফাঁকা হতে লাগল। কি হচ্ছে? তার রাগ হলো এবার। বিড়াল ছানাটিকে সিটের উপরে রেখে দিয়ে বলল,
“আমি বাহিরে গিয়ে দেখছি কি হয়েছে!”
ড্রাইভার তাকে মানা করল। তবে রাগিনী কি শোনার মেয়ে? সে নেমে গেল। রাগিনীর পেছন পেছন কোহিনূরও নেমে গেল গাড়ি থেকে। তা খেয়াল করে রাগিনী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ঘুরে বলল,
“আপনি নামলেন কেন? গাড়িতে ওই ছানাটি পড়ে যেতে পারে। খেয়াল রাখুন যান!”
কথাটা শেষ হওয়া মাত্র হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। রাগিনী নিজের কান চেপে ধরল। চোখমুখ খিঁচে ফেলল। আবারও শব্দটা শোনা গেল। রাগিনী চোখ মেলে দেখার চেষ্টা করল সামনের গাড়ি থেকে কেউ রি’ভলবার বের করে তারই উপর গু’লি বর্ষণ করে চলেছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল তার। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]