গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে – পর্ব ১৫

0
588

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৫

রাগিনীর সকালের গভীর ঘুমটা ভাঙ্গে বিড়াল ছানার সেই সুন্দর ডাকে। হাত-পা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে যেই না পাশ ফিরতে যাবে তখনি তার তুলতলে গালে কোনো কিছুর স্পর্শ লাগে। কানের বেশ কাছে ভেসে আসে মিউ মিউ শব্দটা। চোখটা আধখোলা করে তাকায় রাগিনী। মাথাটা এখনো বেশ ভার। তার ঠিক মুখের সামনে বসে আছে বিড়াল ছানা। তার নীল বড় বড় চোখ দুটো চেয়ে আছে রাগিনীর দিকে। নিষ্পাপ সেই চাহনিটাকে উপেক্ষা করতে পারল না রাগিনী। একগাল হেঁসে তার হাতটা উঠিয়ে বিড়াল ছানার মাথার উপর রেখে মাথা বুলিয়ে দিল। রাগিনী দুর্বল কন্ঠে বলে উঠল,
“আর ইউ হাংরি লিটল ফেইরি?”

বিড়াল ছানাটি কি বুঝল জানা নেই রাগিনীর। সে জোরে জোরে মিউ মিউ করে উঠে তার লেজ নাড়ালো। রাগিনী তার সামনের একটা পা ধরে একটু ঝাঁকিয়ে নরম সুরে বলল,
“ওহ হো! পিচ্চিটা তো অনেকক্ষণ ধরে খায়নি। ভেট ডক্টর বলেছিল বাচ্চাদের একটু সময় পর পর খাওয়াতে। আচ্ছা লিটল ফেইরি, ওয়েট অ্যা মিনিট। এক্ষুনি খেতে দেব তোমায়।”

ধীরেসুস্থে উঠে বসল রাগিনী। বসার সাথে সাথে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। মাথাটা দুহাতে ধরে চোখ বন্ধ করে নিল সে। মাথাটা ব্যথা করছে এখনো। গা দরদর করে ঘামছে আর জ্বর নামছে। রয়েসয়ে চোখ খুলে পা নামিয়ে স্লিপার পড়ে ফ্লোরে দাঁড়াতেই টলমল করতে থাকলো। এলোমেলো পায়ে হেঁটে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আয়নায় সেই প্রতিবিম্ব চেনার চেষ্টা করল। নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করল সেই প্রতিবিম্বতে। প্রতিবিম্বতে স্পষ্ট হয়েছে একটা লাল মুখ। ফুলে গিয়েছে দুটো গাল। চোখটা একরাতেই কিভাবে যেন বসে গিয়েছে। চোখ দুটো কচলে হাতের কাছে থাকা মাথার কাটা দিয়ে চুলটা কোনোমতে খোঁপা করে বেঁধে নেয় রাগিনী। কিন্তু তাকে বিরক্ত করতে ছোট চুলগুলো পার পেয়ে এসে পড়ল কপালে। কপালে ফুঁ দিয়ে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকালো সে। ঠোঁট চেপে ধরে ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা চুলের ব্যান্ড নিয়ে চুল আঁটকে ফেলল দ্রুত। তারপর বিড়াল ছানার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আই এম রেডি কিউটি! জাস্ট গিভ মিনিটস্।”

বলেই রাগিনী তার বেডের নিচ থেকে একটা ছোট্ট বল বের করে বিড়াল ছানার কাছে দিল। সে ব্যস্ত হয়ে পড়ল বল নিয়ে। সেই সুযোগে রাগিনী টাওয়াল ও কাবার্ড থেকে একটা পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল ফ্রেশ হতে।

বেশিক্ষণ সময় নেয়নি রাগিনী। তবে বেশ গরম লাগছিল তার। শরীর থেকে জ্বর নামার পর যা হয় আরকি! তাই শাওয়ার নেয় সে। বিড়াল ছানার জন্য তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়ে ওয়াশরুম থেকে। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চুল মুছতে থাকে। এবার মাথাটাও হালকা লাগছে। শরীরের দুর্বলতা কমেছে। প্যানিক এট্যাকের জন্য জ্বরটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না ফলে দ্রুত রাগিনীর কাছেও স্থায়ী হয়নি। ঘরে এসে রাগিনী খুঁজতে থাকে বিড়াল ছানাকে। কিন্তু না পেয়ে চোখদুটো আশপাশটায় খোঁজ করে। কোথায় সে? বিছানার নিচ থেকে খট করে আওয়াজ আসায় একটু ঝুঁকে পড়ে রাগিনী। মাথা থেকে খুুলে পড়ে যায় বেঁধে রাখা টাওয়াল। তবে মুখে চলে আসে হাসি। এইতো তার লিটল ফেইরি। বল নিয়ে খেলতে খেলতে বেডের নিচে শুয়ে পড়েছে। রাগিনী হাত বাড়িয়ে তাকে একহাতে বের করে নিজের কাছে টেনে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অনুভব করে তার ঘরের দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ঘুরে পিছু তাকাতেই কাশি ওঠে রাগিনীর। বিড়াল ছানাকে কোনোরকমে নামিয়ে নেয় বেডে। নেত্রপল্লবের ঘনঘন পলক ফেলা বলে দেয় সে চরম বিস্মিত। দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কোহিনূর এমন কাশির আওয়াজ শুনে বিচলিত চোখে তাকায়। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে। রাগিনী বিস্ময় কাটিয়ে কাশি থামিয়ে তাড়াতাড়ি করে হেঁটে আসতে উদ্যত হয়। আর কিন্তু তার চুল থেকে বেয়ে পড়া পানিতে ফ্লোর কিছুটা ভিজে যাওয়ায় সেখানে পা পড়তেই পা পিছলে যায় তার। কোহিনূর কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাগিনীর ধপ করে পড়ে গিয়ে নাজেহাল অবস্থার সৃষ্টি হলো। কোহিনূর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল দরজার কাছেই। আসলে এই মূহুর্তে কি করা উচিত সেটা বুঝতে পারছে না। চোখজোড়া স্থির ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা সেই ভেজা ও মুষড়ে যাওয়া এলোকেশীর দিকে। সেই এলোকেশী যখন দুটো হাত নাড়িয়ে কোহিনূরের ধ্যান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে তখন নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় কোহিনূর। রাগিনী হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করে এখানে সে কী করছে?

অতঃপর উঠে বসতে চায় রাগিনী। কিন্তু কোমড়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছে। সোজা হয়ে বসা যাচ্ছে না। তা দেখে কোহিনূর ভেতরে ঢুকে আসে এবার। রাগিনী চোখ দুটো কপালে তুলে তাকিয়ে থাকে। আসলে কোহিনূর এই সকালে তার বাড়িতে উপস্থিত হবে সেটা ভাবতে পারেনি। এখনো পারছে না। ফলে নিজের চোখটাকে বিশ্বাস করাতে তার এই অপলক চাহনি কোহিনূরের উপর থেকে সরছে না। যখন কোহিনূর একহাত রাগিনীর পিঠ এবং অন্যহাত দিয়ে রাগিনীর হাত স্পর্শ করে রাগিনী এক অন্য ঘোর থেকে বেরিয়ে চকিতে তাকায়। ছটফটিয়ে ওঠে। কোহিনূর তাকে থামাতে নির্বিঘ্নে বলে ওঠে,
“আরে! তুমি একা উঠতে পারবে না। আমি হেল্প করছি।”

“আগে বলুন আপনি এতো সকালে এখানে কি করছেন? আর সায়েদুল চাচা আপনাকে ঢুকতে দিল কি করে? আরো একটা কথা, আপনি আবারও আমার বাড়ি চিনলেন কি করে?”

একটা প্রশ্নের উত্তরও পায় না রাগিনী। তার এমন প্রশ্নের উপর প্রশ্ন এবং তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে চাওয়া সত্ত্বেও যখন কোহিনূর রাগিনীর মাঝে কোনোরকম হেলদোল দেখতে পেলো না তখন থম মেরে এক মূহুর্ত রাগিনীর পায়ে চেয়ে থেকে হুট করেই মেয়েটাকে আরেক দফা চমকে দিয়ে কোলে তুলে নিল কোহিনূর। রাগিনী বোকা বনে গেল। আকস্মিকতায় সে কূল পেলো না। কাঁপতে থাকল ভয়ে। একহাতে খামচে ধরল কোহিনূরের জামা। মুখ লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে উঠল,
“আশ্চর্য! এটা কি করছেন?”

“হেল্প!”

“এটা কোন ধরণের হেল্প?”

আর উত্তর এলো না কোহিনূরের মুখ থেকে। বিরাজ করল নিরবতা। এমন নিরবতার কারণ দেখতে খিঁচে রাখা চোখ দুটো খুলে তাকায় রাগিনী। তীব্র রোদের আলোয় আবারও বন্ধ হয়ে আসে তার আঁখি। তবে অস্পষ্ট দৃশ্য দেখা যায়। কোহিনূর শব্দহীন হাসছে। তার হাসি বরাবর মারাত্মক! একেবারে রাগিনীর হৃৎস্পন্দনের গিয়ে হা’মলা করে। এই হাসিটা দেখে আবারও নিজের মনে উথাল-পাতাল ঢেউ খেলানোর মানে হয় না। রাগিনী নড়েচড়ে উঠে নামার চেষ্টা করে। আর কোহিনূরের বুকে একটু থাবা মারতেই পুরো শরীর ঝাঁকিয়ে তোলে সে। মুখ দিয়ে ব্যথিত সুরে বলে,
“উঁহু… লাগছে আমার।”

রাগিনীর মনে পড়ে কোহিনূরের গতকালকে পাওয়া আঘাতের কথা। সঙ্গে সঙ্গে রাগিনী হাত সরিয়ে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
“সরি, সরি, সরি! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি আমাকে রোদের দিকে ধরে রেখেছেন। একটু বেডে বসিয়ে দিলেই তো পারেন।”

কোহিনূর আর এক মূহুর্তও না থেমে রাগিনীকে ধপ করেই বসিয়ে দিল বিছানায়। কোমড়ে যেন এবার খট করে উঠল। মুখ জড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলল,
“কোলে নিয়েছিলেন যাতে আমি ব্যথা না পাই সেজন্য। এখন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলছেন যাতে ব্যথা পাই সেজন্য?”

“কি করব মিস. রাগের রানী! এতোদিন অবধি মনের দরজা বসে বসে ভাঙছিলে সেটা অবধি ঠিক ছিল কিন্তু আজকে আমার শরীরটাকেও আ’ঘাত দিয়ে ক্ষ’তবিক্ষ’ত করে ফেলছো। এতো কিছু মানা যায়?”

কথাটা শেষ করল কোহিনূর ব্যস্ত গলায়, আনমনে। নিজের কাঁধে হাত দিয়ে আলতো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল সে। কিন্তু রাগিনীর জবাব না পেয়ে তার মনে হয় সে আসলে একটু আগে কি বলল? মাথা উঠিয়ে কোহিনূর দৃষ্টি রাখে রাগিনীর উপর। মেয়েটা ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে। পলক ফেলার নাম নেই চোখের। উশখুশ করে ওঠে কোহিনূর। আজকাল মুখ দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা সব বেরিয়ে যাচ্ছে। এর একটা ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যদিকে রাগিনী থম মেরে বসে রয়েছে। কানে পালা করে বার বার কাছে কথাটা। কথাটায় মাখানো ছিল কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অনুভূতি। যা রাগিনী অনুভব করতে পারে। সেই অনুভব রাগিনীর হৃদয় নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। সামনে থাকা মানবটির দিকে মনোযোগের সহিত চেয়ে বোঝার চেষ্টা করে, ‘তার মনেও কি বেঁধেছে কোনো নতুন অনুভূতির বাস?’

কোহিনূরের হাতটার শীতল স্পর্শ যখন রাগিনীর কপালে পড়ে তখন মৃদু কেঁপে ওঠে রাগিনী। বড় বড় দুইবার নিশ্বাস নিয়ে কিছু বলার আগেই কোহিনূর বলে ওঠে,
“যাক জ্বরটা নেমেছে।”

“আপনি এখানে এলেন কি করে?”

রাগিনী এবার স্পষ্ট করে দৃঢ় গলায় প্রশ্ন করে। কোহিনূর এক দম নেয়। তারপর উত্তর দেয়,
“আগেরবার যেভাবে এসেছিলাম!”

“কি করে এসেছিলেন আগেরবার?”

“তা তো মনে নেই।”

ভ্রু কুঁচকে যায় রাগিনীর। লোকটার এটা মনে থাকে না কেন? এটা কেমন সমস্যা? এবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,
“মনে করুন। মনে করে তারপর বলবেন। এখানে কি করে এসেছেন তাও বলুন। বাড়িতে কি করে ঢুকলেন?”

বলেই ঘড়ির দিকে তাকালো রাগিনী। ঘড়িতে সকাল দশটা ছুঁইছুঁই। এর মানে তার বাবা রাশেদ সাহেব এতোক্ষণে নিজের ডিউটির জন্য বেরিয়ে যাওয়া কথা! গিয়েছেনও হয়ত। তাহলে কি কোহিনূর মেইন গেট দিয়ে ঢুকেছে? তাহলে তো সায়েদুল চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলার কথা! তেমন তো কিছুই শুনলো না রাগিনী। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কোহিনূরের কথায় তার দিকেই মনোযোগ স্থির হলো তার।
“আমার এতটুকু মনে আছে যে আমি এখানে যখন আসি তখন বাড়ির বাহিরে ওই লোকটা আমাকে ঢুকতে দেয়নি তাই পাঁচিল টপকে এসেছি।”

রাগিনীর চক্ষু এবার চড়কগাছে পরিণত হয়। এতো সাংঘাতিক মানুষ! না চাইতেও ফট করে বলে ওঠে,
“আপনি কি আগে চোর বা ডাকাত ছিলেন?”

“হোয়াট?”

কোহিনূর সরু দৃষ্টিতে থাকায়। রাগিনী হালকা কেশে বলে ওঠে,
“না কিছু না।”

এবার কোহিনূরের কিছু বলার আগেই বিড়ালটা মিউ মিউ করে হঠাৎ করেই কোহিনূরের হাঁটুর কাছে এসে দাঁত বের করে। যেন সে খুব রেগে গিয়েছে। তা দেখে কিছুটা চমকে তাকিয়ে রাগিনী স্বভাবসুলভ হাসি দিতেই কোহিনূর বলে ওঠে,
“দেখো, একদিন হতে না হতেই তোমার সঙ্গে থেকে থেকে সে তোমার স্বভাব পেয়ে যাচ্ছে। যখন তখন আমাকে ধমকাচ্ছে। তার নাম আই থিংক রাগিনীর কাট ভার্সন রাখলে ভালো হয়।”

“মোটেও না। সে আপনাকে সহ্য করতে পারছে না কারণ আপনি আমার কাজে বাঁধা দিয়েছেন। আমি ওর জন্য খাবার আনতে যাচ্ছিলাম। সেটা আপনার জন্য এখনো আটকা পড়ে আছে।”

রাগিনী থামে একটু। বিড়াল ছানাকে আলতো করে ছুঁইয়ে কোলে নিয়ে বলে,
“তাছাড়া সে ছেলে। তাই তার জন্য ছেলে নাম ঠিক করতে হবে। এখনো ওর নাম দিতে পারিনি আমি। আপনি বসে বসে নাম ঠিক করুন। আমি ওর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”

“ওর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। বাড়িতে একটা ক্ষুধার্ত আর অসহায় ব্যক্তি এসেছে তার দিকে তোমার হুঁশ আছে? শুধু এই দুই আঙ্গুলের ছানার দিকে খেয়াল!”

রাগিনী উঠে দাঁড়িয়েছিল সবে। দরজার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। কোহিনূরের এরূপ কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সে। চোখে পড়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে রেখে ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখা মানুষটির উপর। বুকে দুটো হাত সুন্দর করে জড়িয়ে রেখেছে। রাগিনী হাসি হাসি মুখেই জবাব দেয়,
“তবে সেই ক্ষুধার্ত আর অসহায় মানুষকে অসহায় অসহায় ভাব ধরতে হবে। তবেই আমি বুঝব। এমন স্টাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে রাগিনী জীবনেও খাবার দেবে না।”

মুখটা কাঁচুমাচু করে তড়িঘড়ি করে হাতটা নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় কোহিনূর। রাগিনীর হাসির শব্দ পায় সে। হেঁসে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। দরজার ওপারে গিয়ে বলে,
“আর একটা কথা, ঘর থেকে বের হবেন না। তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আমি এপাশ থেকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।”

বলেই দরজা বন্ধ করে দেয় রাগিনী। কোহিনূর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে। গালে হাত রেখে বিড়াল ছানার দিকে তাকায়। সে এখনো কোহিনূরের দিকে কেমন গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে কপাল কুঁচকায় কোহিনূর। হাতটাকে জড়ো করে বলে,
“এইযে, রাগের বস্তা! আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। চোখগুলো খুলে নিয়ে বাহিরে ফেলে দেব বুঝলে?”

বিড়াল ছানা এবার তেড়ে আসতেই সরে বসে কোহিনূর। বিরবির করে বলে,
“এ্যাংরি বার্ড পুরো! নামটা ভাবছি এ্যাংরি বার্ডই রাখা উচিত। চোখ খুলে নেব না হ্যাপি?”
বিড়াল ছানাটি এবার বসে পড়ে। তার শরীর চুলকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কোহিনূরও এবার চুপ করে। ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি পড়তেই নজরে আসে নিচে পড়ে আছে রাগিনীর টাওয়াল। একটু ঝুঁকে হাত দিয়ে তুলে নেয় সে। চোখটা আঁটকে যায় সেই টাওয়ালেই।
“মেয়েটা এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটা জিনিসই এতো মোহনীয় কেন?”

ফ্রি টাইম চলছে এখন সিটি হসপিটালে। দুপুরের সময়। গরম বেশি পড়েছে। সূর্যমামার প্রকোপ একটু বেশিই। দ্বিতীয় তলার প্রথম চেম্বারের দরজার সামনে বড় বড় করে লিখা, ‘ড. শাহ্ রাশেদ রাশেদ (মনোবিজ্ঞানী)।
চেম্বারের ভেতরে বসে রয়েছেন রাশেদ সাহেব। বাড়িতে সৈয়দের কাছে ফোন করে রাগিনীর খোঁজ খবর নিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত হন তিনি। সকালে অবশ্য চেম্বারে আসার আগে মেয়েটার ঘরে তিনি গিয়েছিলেন। ঘুমিয়েছিলেন বলে ডিস্টার্ব করেন নি আর। তাই মেয়েটাকে একটু দেখেই বেরিয়ে পড়েন কাজের জন্য। উনার বসে থাকার জো নেই। প্রতিদিন কতশত পেশেন্ট আসে তার ঠিক নেই। প্রচন্ড ব্যস্ত মানুষ। সৈয়দের কল সবে কাটতে না কাটতেই আরেকটা ফোন আসে উনার ফোনে। নম্বরটা দেখে খানিকটা অবাক হন রাশেদ সাহেব। সরু চোখে তাকায়। ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি আসে। ফোনটা দ্রুত রিসিভ করেন।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here