#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪২
অবচেতন রাগিনীর হাতের পার্লস চেক করছেন ডক্টর। গুমোট সেই চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরে থেকে করুণ অবস্থা হয়ে গিয়েছে মেয়েটার। শরীরটা ভিজে গিয়েছে ঘামে। এসির বাতাসে সবে তার লাল আভায় মিশ্রিত মুখশ্রীর বর্ণ মিশতে শুরু করেছে। তবে রুমাল দিয়ে বেঁধে রাখা গালের দাগটা এখনো তেমনই আছে। এতটাই শক্ত করে বাঁধা হয়েছিল তাকে। হাতের দাগটা আরো প্রগাঢ় হয়েছে। কালসিটে পড়ে যাবে বোধহয়। রাগিনীর অন্যপাশে সোজা হয়ে মলিন দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন রাশেদ সাহেব। মুখে কোনো কথা নেই। শুধু দেখছেন নিজের মেয়েকে। বারংবার আফসোস করছেন। নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করছেন। কেন উনি বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন? আর কেনই বা সাহানার সেই কাঁদো কাঁদো মুখ এবং মনগড়া কাহিনী শুনে এ বাড়িতে কাজে রাখলেন! সবই উনার ভুল। তার জন্যই বোধহয় তার একমাত্র আদরের মেয়েটার আজ এই হাল। মেয়েটার কিছু হলে তো উনি শূন্য হয়ে যাবেন। মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরেই তো উনার বাঁচা। রাগিনীর কিছু হয়ে গেলে উনি বাঁচবেন কীভাবে? এসব ভেবেই বুকের ভেতরের ব্যথা হচ্ছে তীব্র থেকে তীব্রতর।
নির্জন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাগিনীর বিছানা থেকে খানিকটা দূরে। মাথাটা করে রেখেছে নত। অপলক নেত্রপল্লব শুধু এবং শুধু রাগিনীর দিকে চেয়েই কাটছে। ডক্টর আরো কিছুক্ষণ চেক করে জবান খুলতেই সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল উনার দিকে।
“আমার মনে হয় না যে শুধু সামান্য ঘুমের ঔষধ বা ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু দিয়ে ক্ষ্যান্ত থাকা হয়েছে। আরো এমন কিছু রাগিনীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে যে তার জ্ঞান ফিরতে আরো সময় লাগবে। হয়ত কোনো ইনজেকশন বা ড্রা’গ জাতীয় কিছু পুশ করা হয়েছে।”
“রাগিনীর সেন্স সত্যিই ফিরবে তো?”
রাশেদ সাহেবের ভয়ে ভয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে ডক্টর আবারও ভাবুক হয়ে বললেন,
“আই থিংক সো! ওর পার্লস রেট, হার্টবিট রেট সব ঠিকঠাক আছে। শুধু প্রেশারটা ফল করেছে। এখন আপনি যদি ওকে যেকোনো হসপিটালে নিয়ে যানও তবে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। তারা রিজন তো জানতে চাইবে। আর বিষয়টা তো সুবিধার নয়। এতে শুধু সবার প্রেশার বাড়বে। অন্য কোনো লাভ হবে না। তার চেয়ে অপেক্ষা করুন। অন্তত সকাল অবধি দেখুন। আর আমি তো বলছি অল ইজ রাইট। রাতের মধ্যেই জ্ঞান এসে যাবে।”
“আপনি সিউর তো ডক্টর?”
নির্জনের উত্তেজনায় বলা কথাগুলো শুনে এবার নির্জনের দিকে এক পলক তাকালেন রাশেদ সাহেব। তার মুখচোখের বিবর্ণ রঙ! চুপসে যাওয়া মুখ দেখে মনে হলো সেও বেশ চিন্তিত। রাশেদ সাহেবের গম্ভীর দৃষ্টি নিজের দিকে দেখে কিছুটা থতমত খেল নির্জন। তবে কিছু বলল না। ডক্টর তার বলা কথার জবাবে বললেন,
“ইয়েস, ওফকোর্স। বলা যায় সে এখন ঘুমোচ্ছে। তাকে বিরক্ত করতে হবে না। যা ওর শরীরে দেওয়া হয়েছে সেটার প্রভাব কাটলেই তার জ্ঞান ফিরে আসবে।”
“থ্যাংক ইউ, ডক্টর।”
উঠে দাঁড়ালেন রাশেদ সাহেব। ডক্টরও যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলেন। তাকে এগিয়ে দিতে রাশেদ সাহেবও যেতে লাগলেন। ঘরে রইল শুধু মেহরাজ, নির্জন, সৈয়দ এবং বিছানায় পড়ে থাকা রাগিনী। ঘর খালি হতেই উসখুস করতে শুরু করল মেহরাজ। ফট করেই কিছু একটা ভেবে নির্জন সৈয়দের উদ্দেশ্যে বলল,
“গলা শুঁকিয়ে গিয়েছে। ঠান্ডা পানি হবে?”
চকিতে তাকানো সৈয়দ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে প্রস্থান করলেন ঠান্ডা পানি আনার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল মেহরাজ। নির্জন কড়া গলায় বলল,
“কী সমস্যা? যক্ষ্মা রোগী হওয়ার ইচ্ছে আছে?”
মেহরাজ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল না নেই তার ইচ্ছে। অতঃপর আবারও আগের ন্যায় নির্জন বলল,
“তোমাকে কি বাহিরে যাওয়ার জন্য আলাদা করে ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে?”
এবার না বুঝেই মেহরাজ মাথা নাড়িয়ে হালকা হেসে বলে,
“জি স্যার।”
পরক্ষণেই বুঝে উঠতে পেরে হকচকিয়ে উঠে বলল,
“আই মিন না স্যার।”
বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল মেহরাজ। ঘরে শুধুমাত্র রাগিনী আর নির্জন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত চোখে তাকায় সেই সুদৃঢ় এবং সুদর্শন পুরুষ। আরো একটু একান্তে সময় চাইছিল সে খুব করে। ইচ্ছে ছিল নিজের মনের অনুভূতি উগড়ে দিতে। এজন্যই বোধহয় ঘর ফাঁকা হওয়ার জন্য দুষ্টু পাখির মতো চুপটি করে দাঁড়িয়ে ছিল সে। তার যে সাধ মিটছে না। সে ধীর পায়ে গিয়ে বসল রাগিনীর পাশে। ডান হাতটা নিলো নিজের হাতের মুঠোর। হাতটা এখনো গরম রাগিনীর। নির্জন যত্ন করে বুলিয়ে যেতে লাগল মেয়েটার হাতের দাগ পড়া জায়গাটায়। কোমল হাতের কী অবস্থা! রাগিনীর অন্যহাতটাও ধরল নির্জন। দুটো হাত একত্র করে নিজের দাড়ি যুক্ত গালে আলতো করে লাগিয়ে নিলো সে। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আই এম স্যরি! সব আমার ভুল। আমি সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করে উঠতে পারিনি। নির্জন আহমেদ অনেক বড় একটা কার্লপ্রিট। তুমি কখন জাগবে? জেগে আমাকে শা’স্তি দেবে সেই অপেক্ষায় আছি। তবুও যেন আমাকে দূরে ঠেলে দিও না প্লিজ। তোমার ওই ঘৃণাভরা দৃষ্টি আমার কাছে অসহনীয় হয়ে দাঁড়াবে।”
চোখ বুঁজে রাখা রাগিনীর কাছ থেকে এলো না কোনো উত্তর। সে নির্বিকার যেন। তবুও প্রলাপ বকতে থাকল নির্জন।
“বেশি চেয়ে ফেলছি? কী করবে বলো? আমার ডিমান্ড আগে থেকেই বেশি। একটু বেহায়া টাইপ আমি। সেকারণেই হয়ত বলতে পারছি এতকিছুর পরেও যে তোমার বিষা’ক্ত দৃষ্টি আমার কাছে মোটেও সহ্যকর হবে না। এই বেহায়া লোকটাকে মেনে নিও একটু।”
বলেই হালকা মলিন হাসে নির্জন। এলোমেলো হয়ে যাওয়া রাগিনীর চুল হাত দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে থাকে সে। আনমনে আবারও নিজের মনের চাওয়া থেকে কপালে আস্তে করে চুমু খেয়ে বসে সে। তারপর ভাবে, দিন দিন বুঝি সে সত্যিই লজ্জাহীন হয়ে যাচ্ছে! তবে প্রেয়সীর সামনে লজ্জাহীন হওয়াটা ক্ষতির নয়। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। মনে ঝেঁকে বসা অনুভূতিগুলো খুব করে চায় রাগিনীকে। সবসময় ছুঁয়ে দিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে মস্তিষ্ক। আর সুযোগ যেন একটাও হাতছাড়া করতে চায় না সে। আকাশপাতাল চিন্তাভাবনার মাঝে নিজের কপালের সাথে রাগিনীর কপাল লাগিয়ে রাখে সে। রাগিনীর মুখে পড়তে থাকে নির্জনের তপ্ত শ্বাস। আর নির্জনের মুখশ্রীতে চলে আসে মৃদুভাবে রাগিনীর গরম শ্বাস। এমনভাবেই কেটে যায় কিছু মূহুর্ত। নির্জন নিজেই বকবক করে বলে,
“ভাগ্যিস তোমায় খুঁজে পেয়েছি। নয়তবা আর কিছু মূহুর্ত তুমি বিহীন কেটে গেলেই হয়ত আমাকে সত্যি সত্যিই মেন্টাল হসপিটালে জায়গা হতো!”
কথা বলার মাঝে হুট করেই কানে আসে অন্যরকম এক ডাক। তবে নির্জন নড়চড় করল না। সেভাবেই চোখ বুঁজে থাকল। ফট করেই একটা আকস্মিক কান্ড ঘটে গেল। গালে অনুভব করল ভীষণ জ্বলুনি। হুড়মুড়িয়ে সোজা হয়ে গালে হাত দিয়ে বসল সে। চোখ বড় বড় করে তাকাল রাগিনীর পাশেই থাকা ছোট্ট তুলতুলে রিও এর দিকে। রিও যেন তৎক্ষণাৎ চোখ দ্বারা ধম’কানি দিল। সামনের একটা পা তুলে তেড়ে এসে থেমে গেল। চেঁচিয়ে উঠল নিজ ভাষায়। নির্জনের ভাবনায় বিরাজ করল এ আবার কখন এলো? টের তো পেল না। বিড়াল বাচ্চা হলে কী হবে? এর তো দেখা যায় পেটে পেটে শয়তানি! সৈয়দ ও মেহরাজের আগমনে দ্রুত উঠে দাঁড়ায় নির্জন। গালে রয়ে যায় হাত। ভেজা কিছু অনুভব করে। বুঝতে সময় লাগে না র’ক্ত নামক জিনিসটা হাতে ভরেছে। রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিও এর দিকে। সৈয়দ তড়িঘড়ি করে পানি এনে এগিয়ে দেয় নির্জনের দিকে। অপরদিকে মেহরাজ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সরু চোখে তাকিয়ে তার স্যারের গালে হাত দেওয়ার কারণ বোঝার চেষ্টায় আছে। অতঃপর মেহরাজ রাগিনীর দিকে তাকায়। রাগিনীর জ্ঞান ট্যান ফিরে আবার থাপ্প’র দিয়ে ফেলেছে নাকি? তবে তো মহা সর্ব’নাশ! পরপরই মনে হলো, নাহ। রাগিনী তো এখনো চোখ বন্ধ করেই স্থির হয়ে শুয়ে। তবে ব্যাপার কী?
পানি এগিয়ে দেওয়ার নির্জন এবার কোনোরকমে বলে উঠল,
“লাগবে না, ধন্যবাদ। পানি খাওয়ার শখ আমি মিটে গিয়েছে।”
“দুঃখিত। আসলে ঠান্ডা পানি তো ছিল না। তাই ঠান্ডা পানি তুইলা নিয়ে আসলাম।”
সৈয়দের নিচু সুরে বলা কথাগুলো শুনে নির্জন ফের নম্রভাবে বলার চেষ্টা করল,
“বললাম তো লাগবে না। কষ্ট করে আনার জন্য ধন্যবাদ।”
ব্যস…আর দেরি করে না নির্জন। গালে হাত রেখেই হনহনিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে সেখানে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে গালে চেপে ধরে। তীব্রভাবে জ্বলছে। পিচ্চি একটা বিড়াল কিনা আজ তাকে এভাবে খা’মচে দিল তাও আবার শুধুমাত্র রাগিনীর কাছে যাওয়ার জন্য? কী হিংসুটে হয়ে গিয়েছে আজকাল বিড়ালও! ভাবা যায়? রুমালটা জোরে চেপে ধরতেই হাজির হলো মেহরাজ। উত্তেজনার সঙ্গে প্রশ্ন করল,
“স্যার! আপনার কী হয়েছে? গালটা কি খাল হয়ে গিয়েছে?”
“তোমার ননসেন্স কথাবার্তা স্টপ করো। বিড়াল খাম’চে দিয়েছে।”
“সে কী! ওই ছোট্ট ছানার সাহস হলো কী করে আপনাকে খাম’চে দেওয়ার!”
“তার মালকিনের যেমন সাহস হয়েছে আমাকে সার্বক্ষণিক অস্থির রাখার ঠিক তেমন!”
কথাবার্তার মাঝেই ধীর পায়ে এসে উপস্থিত হন রাশেদ সাহেব। উনার গম্ভীর ও বিমূঢ় মুখটা ভেসে ওঠে নির্জনের সামনে। কথোপকথন বন্ধ হলো মেহরাজ ও তার মাঝে। একধ্যানে চেয়ে রইল নির্জন সেই মানুষটির দিকে। রাশেদ সাহেব চশমা ঠিক করে বললেন,
“আপনাদের আর কোনো কাজ আছে এখানে?”
মাথা নাড়ায় নির্জন। অর্থাৎ নেই। রাশেদ সাহেব আবারও আগের কণ্ঠে বললেন,
“তবে আসুন আমার সঙ্গে। আপনাদের সাথে কিছু কথা আছে।”
হাঁটা ধরেন রাশেদ সাহেব। মেহরাজ একবার নির্জনের দিকে চেয়ে নিজেও পিছু পিছু যেতে শুরু করে। রুমালটা গাল থেকে নামিয়ে নেয় নির্জন। সাদা রুমালে খুব একটা বেশি নয় হালকা র’ক্তের ছাপ। খুব একটা বেশি কাটেনি তবে। রুমাল মুড়িয়ে দরজা একটু সরিয়ে জ্ঞানহারা সেই প্রেয়সীর দিকে চেয়ে শেষবারের মতো একবার নিজের দুটো সুদৃঢ় দর্শনেন্দ্রিয়ের তৃষ্ণা ঘুচিয়ে নেয়।
হলরুমে এসে সোফায় বসেন রাশেদ সাহেব। বেশ ভদ্র ভঙ্গিতে ইশারা করে নির্জন ও মেহরাজকেও বসতে বললে তারা বসে যায়। রাশেদ সাহেব দেরি না করে সরাসরি প্রশ্ন করে ওঠেন,
“আমার আমার হসপিটালে এতকিছু হয়ে গেল! অথচ আমাকেই জানানো হলো না কেন? অফিসার নির্জন আপনি রাইট?”
“ইয়েস। কিন্তু কোহিনূরও আমার নামই। সেই নামেই ডাকতে পারেন।”
“তবে বলুন, আমাকে কেন জানানো হলো না? দিনের পর দিন আমার মেয়েটার সঙ্গে এক্টিং করে যাওয়ার কারণটা কি শুধুমাত্র ওই আত’ঙ্কবাদী আমার মেয়ে সেটা সন্দেহ করা?”
নির্জন মাথা দুলিয়ে বলে,
“ইয়েস। আই এম স্যরি ফট দ্যাট। আপনাকে জানানোর কারণ ছিল একটাই। আপনার মেয়ে রাগিনী। আপনি কোনোদিক থেকেই বিশ্বাস করতেন না।”
“হ্যাঁ করতাম না। কারণ আমার মেয়েকে আমার চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না। ও র’ক্ত দেখে অবধি ভয় পায়। অতিরিক্ত শ’ব্দে ওর ফোবিয়া আছে। ও কাউকে অসহায় অবস্থায় দেখতেও পারে না। আর সে কিনা টেরো’রিস্ট?”
“আমাদের কাছে আর অন্য কোনো রাস্তাও ছিল না বিশ্বাস স্যার। আপনি নিজে হয়ত নকল রাগিনীকে দেখেছেন। এত নিখুঁত চেহারায় মিল সবার ভুল হবে।”
রাশেদ সাহেব কিছুটা ক্ষ্যান্ত হলেন এবার। আসলেই তো! ভুলটাও কিছু বলেনি নির্জন। সে তো নকল রাগিনী তাজরীনকে দেখে নিজেই প্রথমে থতমত খেয়ে গিয়েছিল। নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দিলেন,
“ঠিক আছে। আপনার কথা যুক্তিযুক্ত অফিসার। বাট আই ওয়ান্ট ফুল সেফটি ওফ মাই ডটার!”
নির্জন উনাকে আশ্বস্ত করে বলল,
“নির্জন আহমেদ নিজে রাগিনী তাজরীনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিল।”
“আপনার কাজটা কি শুধুই আমার মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা? আই ডোন্ট থিংক সো!”
রাশেদ সাহেবের কথায় কিছুটা ভ্যাকাচেকা খায় নির্জন। পাশে থাকা শ্রোতা ও নীরব মেহরাজও শূন্য হয়ে চেয়ে রয়েছে। বোঝার আপ্রাণ চেষ্টা করছে রাশেদ সাহেবের বলা কথাটির মর্মার্থ। তৎক্ষনাৎ উনি আবার থমথমে গলায় বলেন,
“আপনার কি আমার মেয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে?”
দুটো হাত মুঠো করে ফেলে নির্জন। মুখ নিচু হয়। প্রচন্ড গরম লাগতে শুরু করে মূহুর্তেই। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। এ কেমন প্রশ্ন? এই প্রশ্নের উত্তরে কী বলবে সে বুঝে উঠতে যে পারে না। আর এমন অর্ধবয়স্ক মানুষের সামনে এর জবাব কিই বা দিতে পারে সেটা মস্তিষ্কে খেলে উঠবে না। সে কী করে বলবে, যে সে রাগিনীকে সার্বক্ষণিক নিজের খুব কাছে চায়? হৃদয়ের কপাটে শুধু রাগিনী তাজরীন নামটি লিখে দিয়েছে? এসব বলার আগে বোধহয় এখানেই জ্ঞান হারাতে হবে। রাশেদ সাহেব এতক্ষণ স্থির নয়নে তাকিয়ে ছিলেন নির্জনের দিকে। কিছু বুঝে উঠে বললেন,
“আমি আমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গিয়েছি। জবাবের প্রতিত্তোরে আমি বলব প্লিজ এই বিষয়টার সমাপ্ত এখানেই করুন। বেশি দূর এগোতে যাবেন না। আপনার মনের অনুভূতির ইতি টানুন অফিসার নির্জন।”
নির্জন স্তব্ধ, হতবিহ্বল। কিছু বলার আগেই সরাসরি মানা করাটা যেন বুকে তীরের ন্যায় বিঁ’ধে। কেন রাগিনীর বাবার এই আবদার? কারোর জন্য মনে সুন্দরতম অনুভূতি জন্মানো কি খারাপ?
“এমনিতেই জানি না রাগিনীর সঙ্গে কীসব হচ্ছে। এই একটা কেসেই আমার মেয়েটাকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে। আর ও যদি আপনার মতো জীবনসঙ্গীকে পায় যার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই তবে… ”
কথার মাঝে রাশেদ সাহেব থেমে গেলেন। আর বলতে পারলেন না। উনারও দ্বিধাবোধ হলো বেশ কিছুটা। ইতস্তত বোধ করে আবারও বলা শুরু করলেন,
“হয়তো আপনার কাছে আমার কথাগুলো বোকা বোকা লাগতে পারে। এটা ঠিক যে আপনার মতো মানুষও সংসার করে। তারাও পরিবার গড়ে তোলে। কিন্তু আমি বাবা হিসেবে কিছুটা স্বার্থপর মানুষ। মেয়েটাকে নিয়ে ওভার পজেসিভ। তাই এখানেই সব কিছুর সমাপ্তি ঘটুক। অন্য কাউকে নিয়ে ভাবুন। তবে আমার মেয়ে নয়।”
হুট করেই উঠে দাঁড়ায় নির্জন। তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে আসে। বাহিরে থাকা গুমোট পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। মুখ দিয়ে কোনোরূপ কথা না বলে দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে যায় সদর দরজা দিয়ে। মেহরাজ নিজেও থমকেছে আজ। একবার রাশেদ সাহেবের দিকে কিছুটা অস্বস্তির দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর সে নিজেও প্রস্থান করে।
ঘরের সব জিনিসপত্র এলোমেলো। কোনো জিনিস ঠিক জায়গাতে নেই। কয়েকটা শোপিচ ভেঙেচুরে পড়ে আছে ফ্লোরে। সেই সঙ্গে সেই ভাঙা জিনিসপত্রের মতোই ফ্লোরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে রূপাঞ্জনা। অগোছালো চুলগুলোতে মুখ ঢেকে গিয়েছে অর্ধেকটা। বড় বড় শ্বাস ফেলে চলেছে বারংবার। গালটায় পড়েছে পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ। টনটন করছে ব্যথায়। আচমকা চুলে টান পড়ায় সে কুঁকড়ে ওঠে। চোখমুখ খিঁচে ধরতেই কুর্ণকুহরে ভেসে আসে ডার্ক ম্যাক্সের গলা।
“শা* বে*ন্মা! আমার কথা অমান্য করার সাহস কে দিল তোকে? সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করলি কেন আজ? মনে কি রঙ লেগেছে?”
চলবে…
[বি.দ্র. প্রথমেই সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। দেরিতে গল্প দিয়েছি জানি আমি। তাও বিনা নোটিশে কিছুটা উধাও হয়ে গিয়েছিলাম বলা চলে। এমন করার কারণ কিছু পাঠক জানে আবার কিছু পাঠক জানে না। বিষয়টা কষ্টজনিত কারণে। আমার এক পোষা পাখির মৃ’ত্যু। যা আমি এখনো মেনে নিতেও পারছি না। সেই শোকটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি এখনো। তাই এতদিন গ্যাপ!
গল্প বিষয়ে একটা প্রশ্ন সবার কাছে। রূপাঞ্জনা ও অভিরূপের সম্পর্ক কীরূপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনারা? মনের অনুভূতিগুলোকে কি এগিয়ে নিয়ে যাবে? নাকি শুধুমাত্র বন্ধুত্ব অবধি টিকবে? আমি তাদের সম্পর্কটা ভেবে রাখিনি। আপনাদের মতামত অনুযায়ী ভাববো। তাই আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আরো একটা কথা! গল্পের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে শেষের লাইনে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]