#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৩
ঘুমটা হঠাৎ করেই ভেঙে গেল কোহিনূরের। বিরক্তিমাখা চোখমুখে চোখটা খোলার চেষ্টা করল। চোখে তীব্র আলো পড়তেই চোখটা আবারও বন্ধ করে ফেলল খিঁচে। এতো আলো কীসের? হাতটা চোখের উপর রাখলো সে। অতঃপর আস্তে আস্তে করে চোখ মেলতে থাকল। ঘাড় সোজা করে সে আসলে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করল। দৃষ্টি স্পষ্ট হতেই কোহিনূর বুঝল সে ফ্লোরেই বসে রয়েছে এখনো। রাগিনীর মাথার কাছে বসে সিটের সঙ্গে ঠেস দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি সে। ঘাড়টা এবার ব্যথা করছে। কাঁধের ব্যথাও যেন জেগে উঠেছে। ভালো করে নড়েচড়ে বসতেই কাঁধের ব্যথা যেন বেড়ে গেল। সেখানে হাত দিতে চাইতেও থেমে গেল সে। মাথা তুলে তাকালো। করিডোরের দুই সাইড দিয়ে লাগানো বেশি পাওয়ারের লাইটগুলো জ্বলছে। তাই চারদিকে এতো আলো! কিন্তু এতো রাতে এতো লাইট জ্বালানো কেন হয়েছে বুঝলো না কোহিনূর। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে বিড়াল ছানাটি গভীর ঘুমে। নিজেকে গুটিয়ে চোখ বুঁজে ঘুমের দেশে অবস্থান করছে সে। ঘাড়টা আরেকটু ঘুরিয়ে নিল কোহিনূর। দৃশ্যমান হলো এক সুন্দরতম চেহারা। মোটা ব্ল্যাঙ্কেট আর ব্লেজারের চোটে শুধুমাত্র বেরিয়ে আছে ছোট্টখানি মুখশ্রী। জ্বরের ঘোরে যেন মুখটা আরো ছোট হয়ে গেছে। দুটো ফর্সা গালে দেখা যাচ্ছে লাল আভা। আবারও উপরদিকে তাকালো কোহিনূর। স্মিত হাসি দিল সে।
“এতো আলো থাকতে কেন এই মুখশ্রীর নূর আমার কাছে অত্যাধিক আলোকিত লাগছে?”
এবার নিজে সোজা হয়ে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে ধপ করে আগের মতো বসে পড়ে কোহিনূর। কোনোরকমে তার হাতটা বুকের বামদিকে রেখে চোখ পুনরায় বুঁজে বলে,
“ওহ হো! কন্ট্রোল, কন্ট্রোল, কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ কোহিনূর।”
পায়ের শব্দ পায় কোহিনূর। ধপধপ করে হেঁটে আসার শব্দ তার কানে লাগে। চোখটা খুলে করিডোরের ডানদিকে তাকায় সে। দুজন হেঁটে আসছে। তার মধ্যে একজন কোহিনূরের চেনাই। কারণ সে পলাশ। বেচারার যেন সদ্য ঘুম ভেঙেছে। সেই ঘুমটাকে ব্যাগে ভরে বন্ধ করে নিজে বাধ্য হয়ে হেঁটে আসছে। পেছন পেছন ধীর পায়ে হেঁটে আসা মানুষটাকে চিনতে একটু বেগ পেতে হলো কোহিনূরের। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর মনে হলো সে তাকেও চিনে। সে তো রাগিনীর বাবা। রাশেদ সাহেব হেঁটে এদিকেই আসছেন পলাশের পিছু পিছু। কোহিনূর চোখ সরিয়ে নেয়। বড় বড় শ্বাস নেয় কয়েকবার। ঠোঁট দুটো চেপে উঠে দাঁড়ায়। এবার ঠোঁট উল্টিয়ে ছুটে যায় রাশেদ সাহেবের দিকে। কোহিনূরের এমন ছুটে আসা দেখে কিছুটা চমকান রাশেদ সাহেব। কোহিনূর উনার নিকটে আসতেই উনি থেমে যান।
“আঙ্কেল, আঙ্কেল! রাগের রানীর কি যেন হয়েছে। সে ঘুমের মধ্যে বকবক করছে। ভয় পাচ্ছে। ওর শরীর অনেক গরম। ওইযে কি যেন বলে না? সেটা এসেছে!”
ভ্রু কুঁচকালেন রাশেদ সাহেব। ছেলেটা কি বলার চেষ্টা করছে? কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন,
“জ্বর এসেছে? রাগিনীর গায়ে জ্বর এসেছে?”
মাথা চুলকালো কোহিনূর। এরপর উত্তরে মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিল,
“হ্যাঁ জ্বর এসেছে।”
রাশেদ সাহেবের উতলা মুখটা এবার ফুটে উঠল। তড়িঘড়ি করে হাঁটতে শুরু করলেন এবার। কোহিনূরের পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। রাগিনীর কাছে এসেই উনার চোখে পড়ল রাগিনীর লাল মুখটা। জ্বরে লাল হয়ে গিয়েছে মেয়েটার মুখ। হালকা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে। বিচলিত হয়ে রাগিনীর কপালে হাত রাখলেন রাশেদ সাহেব। তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে নিলেন। কোহিনূর ও পলাশ আসতেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“ও তো সকালে ভালোই ছিল। এতো জ্বর এলো কি করে হঠাৎ?”
পলাশ কটমট করে কোহিনূরকে দেখিয়ে বলে উঠল,
“এইযে! সারাদিন এই পাগলটার সাথে ঘুরছে। সে তো নিজেও আ’হত হয়ে আসছিল। তার জন্য ডক্টরও ডাকা হইছিল। এখন আবার ম্যাডাম অসুস্থ!”
কোহিনূর মুখ ফুলিয়ে কিছু বলতেই বিড়াল ছানার ডাকাডাকির শব্দে সকলের মনোযোগ সেদিকে গেল। ছোট বিড়াল ছানাটি গা টানা দিয়ে লাফ মেরে সিটে উঠে রাগিনীর কাছে বসে মিউ মিউ করে ডাকতে থাকলো। তাতেই চোখটা পিটপিট করে উঠল রাগিনীর। জোর করে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করল সে। দুর্বল চাহনি নিয়ে আশপাশটা ঝাপ্সা লাগলো তার কাছে। তবে সামনে থাকা মানুষটিকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হলো না তার। গলা থেকে আওয়াজ বের হতে চাইলো না তার তবুও শক্তি দিয়ে বলে উঠল,
“বাবা!”
রাগিনীর মাথায় হাত রাখলেন রাশেদ সাহেব। রাগিনী খুব কষ্টে নিজের গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,
“আমি কোথায়?”
“তুমি এখনো মেন্টাল হসপিটালে আছো। তোমার শরীর খারাপ রাগিনী। জ্বর এসেছে। বাড়ি চলো আমার সাথে।”
বাবার কথা শুনে উঠে বসে চারিদিকে দেখে নিল রাগিনী। মাথাটা ভার লাগছে তার। মাথার একপাশ হাত দিয়ে ধরে বলল,
“তুমি কখন এলে এখানে?”
“এইতো মাত্র এলাম। এসে দেখি তুমি এখানেই ঘুমাচ্ছো গায়ে জ্বর নিয়ে।”
করিডোরের দেয়ালে ঝুলতে থাকা বড় ঘড়ির দিকে চোখ রাখে রাগিনী। ঘড়িতে রাত ১ টা বেজে ২০ মিনিট। চকিতে কোহিনূরের দিকে তাকায় সে। কোহিনূর তার নিচের ঠোঁট উল্টে রেখে বার বার চোখের পলক ফেলে তাকে দেখছে। তারপর বাবার দিকে তাকায় রাগিনী। হতবাক হয়ে দুর্বল কন্ঠে বলে,
“বাবা, এতো রাত হয়ে গেছে। আর আমি এখানে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তুমি টেনশন করছিলে তাই না? আই এম সরি বাবা!”
বড় একটা শ্বাস নেন রাশেদ সাহেব। আর গম্ভীর গলায় বলেন,
“টেনশন করা তো স্বাভাবিক বিষয়। তুমি এতো রাত অবধি বাহিরে আমি তো স্থির হয়ে কোথাও বসতে পারছিলাম না। তোমাকে কল করেও পাইনি। ড্রাইভারকে কল করলাম তার ফোন বন্ধ। আমার চিন্তা বেড়ে গেল। শেষমেশ এখানে ফোন করি। জানতে পারি তুমি এখানেই এসেছিলে। তাই আমিও চলে আসলাম।”
রাগিনীর মনে পড়ে তখনি ড্রাইভারের ফোনটা ওইসব পুলিশের লোক নিয়ে হয়ত বন্ধ করে দিয়েছিল। তাই রাশেদ সাহেব ফোনে ড্রাইভারকেও পান নি। আর রাগিনীর ফোন তো সাইলেন্ট। তার কারণেই তার বাবা আজ এতো প্রেশারে পড়ে গেল। ভাবতেই দুঃখ বাড়লো তার। এই মানুষটাকে আর প্রেশারে ফেলতে চায় না সে। রাশেদ সাহেবের দিকে করুণ চোখে তাকায় রাগিনী। মানুষটার চশমা ভেদ করে দেখা যাচ্ছে লাল চোখ দুটো। ঘুমের অভাবে মুখটা ফুলে গিয়েছে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রাগিনী। দুর্বল পায়ে দাঁড়ানোর শক্তিটাও পাচ্ছে না। টলমল করতে থাকে। কোহিনূর ছুটে এসে একটা হাত আর কাঁধে হাত রাখে তার। চমকে তাকায় রাগিনী। সেখানেই থামে না কোহিনূর। রাগিনীর গায়ে ঝুলিয়ে রাখা ব্লেজারটা ভালো করে রাগিনীকে পড়িয়ে দিয়ে কিছুটা জোর করেই। তারপর উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠে,
“এটা পড়ে থাকো। তাহলে আর ঠান্ডা লাগবে না।”
কোহিনূরের কথা শুনে একটু হাসি পেল রাগিনীর। তবে দুর্বল মুখে আর হাসলো না। মানুষটার রূপ আবার পাল্টেছে। শিশুদের মতো কথাবার্তা বলছে। কিন্তু তার যে যত্ন করার দিকটা হারায়নি। সে অবিরাম রাগিনীর প্রতি যত্নশীল। রাগিনীর আরেক হাত রাশেদ সাহেব ধরলেন। আর গাম্ভীর্যের সঙ্গে বললেন,
“যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বাড়িতে যেতে হবে। তোমার শরীর ভালো নয়। ইউ নিড টু টেক রেস্ট।”
রাগিনী তার বাবার কথায় সম্মতি জানায়। কোহিনূরের দিকে একবার মলিন সুরে বলে,
“আজকে আমি আসি। কাল আমি আবার…”
কথাটার মাঝখানে কোহিনূর না বোধক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
“উঁহু, কাল আসতে হবে না। আমি কালকে এখানকার খাবারই খেয়ে নিতে পারব। তুমি একবারে ভালো হয়ে এখানে আসবে। আর যেদিন ভালো হয়ে আসবে সেদিন একবারে পাঁচ ধরনের আইটেম করে নিয়ে আসবে। ভুলে যাবে না যেন!”
রাগিনী এবার মলিন হাসে। তারপর রাশেদ সাহেবের সাহায্যে উনার হাত ধরে রওনা দিতে যেতেই আবারও পিছু ফিরে তাকায় সে। ইশারায় বিড়াল ছানাকে ডেকে নেয় সে। আর রাশেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে বলে,
“বাবা, ওকে আমি রাস্তার ডাস্টবিন থেকে রেসকিউ করেছি। ওকে কি আমি আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি?”
“এটা আবার বলতে হবে? এতো ছোট্ট সদস্য বাড়লে তো আমারই ভালো। হ্যালো, লিটল ওয়ান! কাম হেয়ার।”
বিড়াল ছানা যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল। সে বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে চলে এলো। রাশেদ সাহেব ঝুঁকে তাকে একহাতে কোলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। অন্যহাতে নিজের মেয়েকে ধরলেন। তারপর একসঙ্গে হাঁটা ধরলেন। কোহিনূরের অপলক চাহনি চেয়ে রইল বাবা-মেয়ের দিকে। সঙ্গে বিড়াল ছানাও যেন এক পরিবার পেলো। কত সুন্দর এক দৃশ্য! এই দৃশ্য দেখে অনেকক্ষণ নির্দ্বিধায় কাটানো যায়।
রাত যখন গভীর থেকে গভীরতম হতে থাকল! রাস্তা একটু বেশিই শুনশান হয়ে উঠল। রাস্তায় শুধু বড় বড় গাড়ির আনাগোনা। তার বেশির ভাগই বাস বা ট্রাক। রাস্তায় ধারে কংক্রিটের ফুটপাতের পাশে একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটা স্থির। গাড়ির মধ্যে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে এক মানব। সিগারেটের ধোঁয়ায় ধোঁয়াশা গাড়ির ভেতরটা। তবুও আপনমনে সিগারেট ধরিয়ে একহাতে সেটা ধরে মাঝে মাঝে প্রায় কালো বর্ণের ঠোঁট দ্বারা স্পর্শ করছে সে। দৃঢ় অপেক্ষা করছে কারোর। সিগারেট টেনে মাঝে মাঝে গাড়ির আয়নায় তাকাচ্ছে। অবশেষে যেন অবসান ঘটল সেই অপেক্ষার। ঘাড় বাঁকিয়ে একমনে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল। জনমানবহীন ফুটপাতে ধরে হেঁটে আসছে এক নারী। মুখের অর্ধেক মাস্ক দিয়ে ঢাকা আর মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে রাখা। পায়ের হিল জুতোর শব্দ হচ্ছে একটু একটু করে। আশেপাশে তাকিয়ে খুব সাবধানে হাঁটছে সে। মাইক্রোবাসের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সামনের দরজা খুলে ফট করেই ভেতরে বসে পড়ল সেই সিগারেট হাতে ধরে রাখা মানবটির পাশে। তার ডাগরডাগর আঁখি দিয়ে চাইলো সেই লোকটার দিকে। কথা বলতে কাঁপছে মেয়েটির কন্ঠস্বর। তবুও সাহস করে বলল,
“ডা…ডার্ক ম্যাক্স!”
চোখ বুঁজে ছিল সেই লোকটি। আপনমনে সিগারেট মুখে নিয়ে ছিল। মেয়েটির কথা শুনে চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মেয়েটির আঁতকে উঠল। এই রক্তিম বর্ণের ফ্যাকাশে হিংস্র চোখটা সে অনেক ভয় পায়। তবে তাকে অবাক করে দিয়ে ম্যাক্স হাসলো। আর বলল,
“আরে, লেডি বস যে! এতো রাতে দেখা করার সময় হলো আপনার?”
“আ…আসলে ডার্ক ম্যাক্স…”
ম্যাক্স এবার গাড়িতে এক থাবা দিয়ে হিংস্র বাঘের মতো মেয়েটির দিকে ঝুঁকে পড়ল। আর হিসহিসিয়ে বলে উঠল,
“আজ পর্যন্ত কোনো প্ল্যানিং ফেল করে নি। কি এমন হলো? যে এবার কিছু ঘটার আগেই সবাই ধরে ফেলল?”
বলেই অন্যহাত দিয়ে পেছনের সিটে থাকা নিউজপেপারটা লেডি বসের দিকে ছুঁড়ে মারল ম্যাক্স। তারপর পুনরায় নিজের সিটে বসল। শুঁকনো চোখেমুখে বসে রইল সেই মানবী। ইতিমধ্যে কপালের ঘাম বেয়ে গালে এসে পড়েছে।
“আজ পর্যন্ত কেউ জানে না যে তুই মানে লেডি বসের উপরেও একজন রয়েছে। এমনকি টিমের কোনো লোকেরই এই আন্দাজ নেই যে তুই ওদেরকে চালাস আর আমি তোকে চালাই। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করিস না যে আমাকে বাধ্য হয়ে ওদের সামনে আসতে হয়।”
দ্রুত মাথা নাড়ায় সেই নারী। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ম্যাক্স নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে তার হাতের জ’লন্ত সিগারেট লেডি বসের হাতে চেপে ধরে। আকস্মিক এই ঘটনায় চিৎকার করতে উদ্যত হয় সে। কিন্তু ম্যাক্স তা হতে দেয় না। খোলা মুখে নিউজপেপারের কিছু অংশ ঢুকিয়ে দেয়। চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরে মেয়েটির। ম্যাক্সের ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আনন্দ পাচ্ছে লেডি বসকে শাস্তি দিয়ে। তার কানের কাছে এসে ম্যাক্স ফিসফিস করে বলল,
“লিসেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যে কাজে এসেছি সেটাতে যদি অসফল হই। তবে তোর ভয়া’নক মৃত্যু আমার হাতে লিখা আছে। আমি জানি, তুই ম’রতে ভয় পাস না। আমরা যা করি তাতে ভয় পাওয়াও উচিত না। কিন্তু রিমেম্বার! ডার্ক ম্যাক্স তড়পে তড়পে মৃ’ত্যু দেয়। যা দেখে মৃ’ত্যুও কেঁপে ওঠে।”
ছটফট করে মেয়েটির। হাতটা সরিয়েও নিতে পারছে না সে। ধরে রেখেছে ম্যাক্স তাকে। ম্যাক্স একটু সময় পর আপনাআপনি তাকে ছেড়ে দিতেই যেন প্রাণ ফিরে পায় সে। মুখ থেকে কাগজ বের করে তার সিগারেট দ্বারা ক্ষত স্থানটা হাত দিয়ে চেপে ধরে অসহায় পানে তাকিয়ে থাকে। ম্যাক্স সেই সিগারেট আবারও মুখে পুড়ে নিয়ে বলে,
“যা! পরের প্ল্যানিংটা সেড়ে নে।”
মেয়েটি কোনোমতে মাথা নাড়ায়। চোখমুখ খিঁচে ফেলে। ম্যাক্স আবারও বলে,
“মদের নেশায় ডুবে থাকিস না। সবসময় তোর দিকে কিন্তু আমার নজর থাকবে। এখন যাহ্!”
আর দেরি করল না মেয়েটি। মাস্কটা পড়ে গাড়ির দরজা খুলে ছুটে একপ্রকার পালিয়েই গেল। ম্যাক্সের চোখ তার থেকে সরে গেল না। সে হাসল।
“দুনিয়াটা বেশ অদ্ভুত! কে কাকে পরিচালনা করে তা বোঝা দায়।”
গোয়াতে তখন সকাল। সবে সাতটা বাজে। সমুদ্রের প্রতিধ্বনির শব্দ তখন সবারই কানে বাজবে। মনোরম এক দিন। সেখানকার নামি-দামি হোটেলে এক রুমে অবস্থান করছে অভিরূপ! রুমের বেডে এলোমেলো হয়ে গভীর ঘুমে মত্ত সে। ঘুমানোর জন্য যেন জায়গাটা পারফেক্ট! সে তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বারোটার আগে ঘুম থেকে উঠবে না। তাই হোটেলে কর্মরত সবাইকে তার ঘরে আসতে মানা করে দিয়েছে। প্রয়োজন হলে নিজেই ডেকে নেবে। কিন্তু ভাগ্য যেন তার সাথ দিলো না। দরজায় কলিংবেল বাজানোর বদলে অনবরত কেউ ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। শব্দ কানে আসতেই ঘুম হালকা হলো অভিরূপের। নড়েচড়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। চোখ মেলে তাকিয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসল সে। পায়ে স্লিপার পড়ে বিরবির করে উঠল,
“হোয়াট ননসেন্স! এতো সকালে কোন অভদ্র ডাকাডাকি শুরু করল?”
অভিরূপ ভেবেই রাখলো দরজার ওপাশে যেই থাকুক না কেন খুব ঝাড়বে। এই ভেবে বেড থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে কোনোদিক না তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলা শুরু করল,
“ইডিয়ট! এতো সকালে রাসকেলের মতো কে রুমের দরজায় এভাবে ধাক্কায়? ম্যানারলেস…”
আরো কিছু বলতে চাইলো অভিরূপ। কিন্তু তার পেটে ব্যথা অনুভব হলো। পেট ধরে ভালো করে সামনে তাকালো সে। নোমানকে দেখে হিতাহিত শূন্য হয়ে পড়ল প্রথমে। তারপর এক ঝিলিক হাসি দিয়ে ঠোঁট সরু করে চুমু দেওয়ার মতো করে নোমানকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ওহ মাই বেস্টফ্রেন্ড, মাই ব্রাদার! আমাকে এতো মিস করছিলি যে সরাসরি কলকাতা থেকে গোয়ায় চলে এলি? দ্যাটস্ হোয়াই আই লাভ ইউ!”
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে নোমান বলে উঠল,
“একদম গায়ে পড়বি না। সর বলছি! আমাকে ওখানে ফাঁসিয়ে দিয়ে এখানে এসে ইনজয় করছিস?”
এবার নোমানকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়ায় অভিরূপ। তার মাথার এলোমেলো ঘন চুলগুলো দুহাত দিয়ে সামলে নেয় সে। গলা খাঁকারি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আই ওয়াজ টায়ার্ড! এতোগুলো পারফরম্যান্স করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।”
“কতদিন এখানে থাকার প্ল্যান করেছিস?”
“এইতো আর দুইদিন!”
নোমান আশ্বস্ত হয় এবার। আর বলতে শুরু করে,
“তাহলে এক কাজ কর। আমিও রীতিমতো ওই পারফরম্যান্স এর ঝামেলা থেকে পালিয়ে এসেছি। তবে সেখানকার হেড বলেছে যে এরপর উনি আবার যেই পারফরম্যান্স রেডি করবেন সেখানে তুই উপস্থিত থাকলেই চলবে।”
অভিরূপ যেন এই কথা শুনেও শোনে না। চুপ থেকে রুমের ভেতরে গিয়ে হাতে টাওয়াল তুলে নেয় সে। আর বলে ওঠে,
“ও হ্যালো! উনার চলতে কে বলছে? আমি উনার পারফরম্যান্সে যাচ্ছি না। উনার থেকে যা এডভান্স নিয়েছিলাম তা উনার একাউন্টে আবারও ব্যাক করেছে। সো আমার থাকার কথা নয় সেখানে। আর আমি বলেছি এখানে আর দুইদিন থাকব রাইট? কিন্তু এটা তো বলিনি যে আমি দুইদিন পর এখান থেকে আবার কলকাতা ব্যাক করব!”
নোমান আশ্চর্য হয়। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকায়। অভিরূপের মুখে হাসি। নোমান উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে,
“হোয়াট ডু ইউ মিন? কোথায় যেতে চাচ্ছিস আবার?”
“কাল বাংলাদেশ নিয়ে কয়েকটা আর্টিকেল পড়লাম। বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। জীবনে এতো দেশ-বিদেশ ঘুরেছি। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশে ঘোরাই হয়নি। সো আই থিংক, এবার যাওয়া উচিত!”
এবার চোখটা রসগোল্লার মতো করে তাকায় নোমান। কিছু বলার আগেই অভিরূপ ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। দরজার কাছে মাথা বের করে দিয়ে বলে,
“বাংলাদেশ, বি রেডি! অভিরূপ চৌধুরী অভি ইজ কামিং।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। অনেকেই বলছেন রহস্য তাড়াতাড়ি খুলতে। আমি আগেও বলছি আবারও বলছি রহস্য খুলতে সময় হয়ত লাগবে না। আমি চাইলেই কাহিনী ঘুরিয়ে রহস্য খুলে দিতেই পারি। কিন্তু এতে মূল থিম নষ্ট হয়ে যাবে আমার। গল্প খারাপ হবে। তাই ধৈর্য রাখুন। আশা করছি ভালো কিছুই পাবেন। আর একটা কথা, নাইস, নেক্সট শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত! আমি বেঁচে থাকলে অবশ্যই নেক্সট পার্ট পাবেন। একটু গঠনমূলক মন্তব্যের আশায় রইলাম।]