#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_১০
.
.
.
মেঘ হুট করে ফারহার হাত টেনে ধরতে ফারহা ব্যালেন্স রাখতে না পেরে মেঘের বুকে হুমরে পরে যায় ফারহা৷ মেঘ ফারহার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে মেঘ ফারহাকে বলে, ” তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধু মাত্র আমার ফারুপাখি কিন্তু আজ তুমি অন্য পুরুষের জড়িয়ে ধরে একদম ঠিক করো নি৷ এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে৷” ফারহার কোমরে মেঘ নখ গুলো বসিয়ে দিতে ফারহা নিজের ঠোঁট চেপে ধরে ব্যাথা সহ্য করে নিলো৷ মেঘের কথা শুনে ফারহা বুঝতে পারলো, মেঘ নিশ্চয়ই তাকে অর্নিলের সাথে দেখেছে নাহলে মেঘ এমন ভাবে রিয়েক্ট কখনো করতো না৷ ফারহা মেঘের শক্ত পক্ত বলিশ্ঠ হাত জোড়া থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে মেঘ আবার বলে উঠলো ,” আমার হাত থেকে তোমার মুক্তি নেই ফারুপাখি৷ যতোই চেষ্টা করো না কেন আমার ভালোবাসার জাল ছিড়ে তুমি কখনো বের হতে পারবে না৷”
“মেঘ তুমি অসুস্থ তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন৷”
” হ্যাঁ, ফারুপাখি আমার বিশ্রামের প্রয়োজন আর আমি তো বিশ্রামই করছি৷” ফারহাকে জড়িয়ে ধরে বললো মেঘ৷
” মেঘ তোমাকে মেডেসিন খেতে হবে ৷ আর তার জন্য তোমাকে খাবার খেতে হবে৷”
” ফারুপাখি তার আগে বলো , যারা দেশের ক্ষতি চায় তুমি তাদের একজন হলে কেন?”
আচমকা কথাটা মেঘের মুখে শুনে ফারহা স্তব্ধ হয়ে গেল৷ মেঘ চোখ টিপ টিপ করে চেয়ে আছে ফারহার দিকে, মেঘের চোখ মেলে তাকাতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে তবুও ফারহার মুখটা দেখার জন্য তাকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে মেঘ৷
ফারহা মেঘকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ফারহা মেঘের পাশে বসে বলে ,” আমি বাধ্য ছিলাম মেঘরাজ ৷ তখন যদি ওদের কথা মতো কাজ না করতাম তাহলে যে আমাকে আমি সহ সব কিছু হারাতে হতো৷ তুমি হয়তো কখনো ভাবতেও পারবে না আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে৷ যদি তুমি সবটা জানতে তাহলে হয়তো সব ধ্বংস করে দিতে৷
মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে ফারহার কথা গুলো শোনার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন ভাবে চোখ আর মেলে রাখতে পারছে না ৷ দু’টো চোখের পাতা বুজে আসছে বারংবার ৷
ফারহার চোখের পাতা ভিজে ডুবো ডুবো অথচ ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যর হাসি নিয়ে মেঘের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে ফারহা বলতে লাগলো,” মেঘরাজ আমি আমার প্রতিশোধ না নিয়ে তোমার জীবনে নিজেকে জড়াতে পারবো না৷ ওদের কে ধ্বংস না করে আমার শান্তি নেই৷ আমি জানি মেঘরাজ তুমি হয়তো আমার সম্পর্কে সবটাই জেনে গেছো৷ তবুও আমি তোমার কাছে ধরা দিবো না আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তবে আমি বেঁচে থাকতে আমার মাতৃভূমির কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না মেঘরাজ ৷ আর না তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবো আমি, কথা দিচ্ছি মেঘ আগামি সাত দিনের ভিতর আমি সব কিছু ঠিক করে দিবো৷ ফারিহাকে আমি তার যোগ্য শাস্তি দিবো আর সেই মানুষটা যার জন্য আজ ফারহা থেকে আরুর জন্ম হলো তাকে আমি ছাড়বো না৷ ”
২৩.
ফারহা আরো কিছু বলতে যায় তখনি ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফারহা সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরতে অপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে৷
-” আপু তোমার কথা মতো কাজ হয়ে গেছে ৷ কেসটা এমন ভাবে ঘুড়িয়ে দিয়েছি যাতে সবাই মনে করে ফুলি মেয়েটা নিজে সুইসাইড করেছে৷”
” গুড ভেরি গুড পিচ্চি৷ শোন তোকে আর একটা কাজ করতে হবে৷ অবশ্য কাজটা তুই করবি না রাফিকে দিয়ে করাবি৷”
” কি কাজ আপু একবার বলে তো দেখো?”
” ড্যাডের কাছে অর্নিলের পুরো বায়ো ডাটা রাফিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবি৷ আর মিস্টার আমান খন্দকারের সাথে খান ইন্ড্রাষ্টিজের সাথে যে ডিলটা আটকে ছিলো৷ সে ডিলটা যে আমান খন্দকার পেয়ে যায় সেটা তুই দেখবি৷”
” ডোন্ট ওয়ারি আপু এই কাজটা আমি ভালোই সামলে নিতে পারবো ৷ কিন্তু আপু আমার একটা প্রশ্ন আছে?”
” কি প্রশ্ন?”
” আপু তুই ফারিহা আপুর সাথে ঠিক কি করতে চাইছিস বলবি আমাকে?”
” বলবো কিন্তু তার আগে বল তোর উত্তরার ফ্লাটটা ফাঁকা তো ?”
” হ্যাঁ, কেন?”
” আগামিকাল দেখতে পাবি কেন৷”
” ওকে আপু তোর কথা মতো কাজটা ঝটপট করে ফেলি ৷ ”
” হুম” ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে ৷ ওয়াশরুমে গিয়ে মেঘের শার্ট প্যান্ট ধুয়ে শুকাতে দিয়ে দরজা বাইরে থেকে লক করে কিচেনে গিয়ে নিজে কিছু খেয়ে মেঘের জন্য খাবার নিয়ে আসে রুমে, ফারহা মেঘের ঘুম ঘুম থাকা অবস্থায় ভাত মাখিয়ে মেঘকে খাইয়ে দেয় ৷ মেঘ ছোট বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেয়ে নেয়৷ মেঘের এমন বাচ্চাদের বতো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেতে দেখে ফারহা হেসে ফেলে৷
মেঘকে খাইয়ে দিয়ে জ্বরের ঔষধ মেঘকে খাইয়ে দিয়ে ব্লাংকেট জড়িয়ে দিয়ে মেঘের শার্ট ইস্ত্রী করে বাকি টুকু শুকিয়ে ফেলে, মেঘের শার্টটা সাইড টেবিলে রাখতে দরজায় কেউ নক করে৷ ফারহা ইস্ত্রী রেখে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে দেখে আইরিন দাড়িয়ে আছে৷ ফারহা বাইরে এসে দরজা লক করে তার মমকে প্রশ্ন করে৷
” মম তুমি এখন এখানে?”
” না এসে উপায় রেখেছো তোমরা দু’বোন? কে কখন বাড়ি ফিরো বা বের হও কেউ কি জানে?”
ফারহা বুঝতে পারছে তার মা ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা গুলো কেন বলছে৷
” মম তুমি কি বলতে চাও তা ক্লিয়ার করে বলো ৷ এভাবে ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বলে ফেলো কি চাই তোমার?”
আইরিন খান গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে , ” আমি চাই তোমরা দু’বোন এবার সংসারি হও৷”
” ব্যস শুধু এতোটুকুই তোমার বলার ছিলো মম?”
” হ্যাঁ, এতোটুকুই বলার ছিলো৷ আর একটা কথা মেঘের মা তোমাকে মেঘের বউ করতে চায়৷ আর তুমি যেহেতু বড় তাই তোমার বিয়েটাই আমি আগে দিতে চাইছি৷”
” কিন্তু মম আমি যে একা বিয়ে করবো না৷”
” মানে!”
” আমি এবং ফারিহা একি দিনে বিয়ে করবো মম৷”
” কিন্তু ফারিহার জন্য তো কোন পাত্র ঠিক করা হয়নি ফারহা!”
” পাত্র খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে মম ৷ ততোক্ষণ আমার বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো৷”
” ফারহা মেহরীমা ভাবি পরে আমাকে ফোন করলে আমি কি জবাব দিবো বলতে পারো?”
” বলবে বিয়েটা হবে তবে দু’মাস পর..”
” দু’মাস! এতো সময় কেন নিচ্ছো ফারহা?”
” মম বিয়ে যদি আমাদের দিতে হয় তাহলে আমি যেটা বললাম সে অনুযায়ী হবে আর না হলে বিয়েটাই হবে না৷”
ফারহার এমন বাঁকা বাঁকা কথা শুনে আইরিন খান রেগে গেলেও কিছু বললো না কারণ তিনি ভালো করেই জানেন তার দুই মেয়ে মহা ঘ্যাড়তেরা যেটা বলে সেটাই করে৷ আইরিন খান কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়৷
আইরিন খান চলে যেতে ফারহা ফারিহার রুমে ঢুকতে দেখে ফারিহা একটা ম্যাপ দেখছে আর সেটার মেইন মেইন পয়েন্ট গুলোয় ক্রস চিহ্ন দিচ্ছে৷ ফারিহা ফারহার উপস্থিত বুঝতে পেরে বলে,” কিং ফায়ার তোর উপর রেগে আছে আপু৷”
ফারহা সিঙ্গেল সোফায় বসে সামনে ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে তাতে একটা বাইট দিয়ে বলে,” কিং ফায়ারের নেক্সট প্লান কি?”
” আমাকে কিছু বলেনি মেবি তোাে বলবে৷ আর হঠাৎ এদেশে এসেছে তার কারণটাও আমার কাছে ক্লিয়ার নয় আপু৷”
” কিন্তু আমার কাছে ক্লিয়ার ফারিহা৷” মনে মনে বললো ফারহা৷
ফারিহাকে স্মৃতিসৌধের উপর ক্রস চিন্হ দিতে দেখে বলে,” কিং ফায়ার তোকে কোন কাজ দিয়েছে ফারিহা?”
” হ্যাঁ ঢাকার সব থেকে বড় প্লেসের যেমন: জাদুঘর মিউজিয়াম স্মৃতিসৌধ পার্ক আর বেশ কিছু জনবহুল প্লেস মার্ক করতে বলেছে৷ ”
ফারহা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে ,” ফারিহা কিং ফায়ার এবার পুরো রাজধানী উড়িয়ে দেওয়ার প্লান করছে৷ ”
” করুক না তাতে তোর আমার কি? আমাদের কাজই তো রক্ত নিয়ে হলি খেলার৷ আর তার জন্য ও বেশ মোটা অংকের টাকা একাউন্টে ঢুকে তাই না?”
ফারহা ফারিহার দিকে শীতল চাহনি দিয়ে পুরো ম্যাপটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে, ” ফারিহা বোম ব্লাস্টের টাইমিং কখন?”
” যেভাবে টাইমার গুলো আগে সেট করা হতো আপু৷ ধরো বারটা একমিনিটে যদি একটা টাইমার সেট করা হয় তাহলে পরের টা হবে বারটা দুই মিনিট ৷ এভাবে একের পর এক বোমের টাইমার সেট করা হবে৷”
” ঠিক আছে তুই তোর কাজ কর আমি রুমে যাচ্ছি রেস্ট নিতে ৷”
” গুড নাইট ”
ফারহা ফারিহার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে দেখে মেঘ এখনো ঘুমিয়ে আছে৷ ফারহা দরজা লক করে ধীরে ধীরে মেঘের পাশে শুয়ে পড়ে ফারহা৷
লাল ফোলা ফোলা রক্তিম মুখটা দেখে ফারহার বুকের ভিতর ধুকধুক করে উঠছে৷ মেয়েদের মতো লাল টকটকে মেঘের ঠোঁট জোড়া কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ ফারহা কিছু না ভেবে মেঘের ওই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের তার নরম ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দেয়৷
ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ফারহা মেঘের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, “মেঘরাজ আজ তুমি যদি জেগে থাকতে তাহলে হয়তো এই দুঃসাহস আমি কখনোই দেখাতাম না৷ হয়তো এই স্পর্শ আমার জায়গায় তুমি আমাকে দিতে, আমার এলোমেলো চুলের ভাজে তুমি মুখ গুজে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে৷ হয়তো তোমার মনের সব অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে কিন্তু আজ যেহেতু সময়টা পাল্টে গেল৷ দু’জন ভালোবাসার মানুষের স্থান পরিবর্তন হলো তখন না হয় আমি আজ আমার মনে অব্যক্ত অনুভুতি তোমার কাছে প্রকাশ করবো ৷ তোমায় জানাবো কতোটা ভা,,,” বাকিটা বলার পূর্বে ফারহার ফোনটা বিকট শব্দ করে বেজে উঠলো৷ ফারহা ফোনের স্কিনে প্রাইভেট নাম্বার দেখে ভ্রুযুগল কুচকে কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে শীতল গলায় কেউ একজন বলে উঠলো ,
-” আরু বেবি আমি তোমাকে আগামি ত্রিশ মিনিটের ভিতর আমার সামনে দেখতি চাই৷ ” আঙ্গুলের ফাঁকে রিভালবার ঘুড়াতে ঘুড়াতে বললো কিং ফায়ার ৷
ফারহা মেঘের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,” আ’ম কামিং সুন কিং ফায়ার ৷”
ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো ফারহার কানে , ফারহা হুট করে কল কেটে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,” আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো মেঘরাজ ততোক্ষণ না হয় তুমি ঘুমিয়ে থাকো৷ ”
ফারহা মেঘের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে কাপবোর্ড থেকে রিভালবার টা নিয়ে রুম লক করে বেড়িয়ে যায়৷
২৪.
” হ্যালো মেঘ!”(তারেক শেখ)
” নো স্যার , ইট’স মি আসলাম৷ স্যার এতো রাতে আপনি ফোন করেছেন? কোন বিপদ হয়েছে?”
” আসলাম মেঘ কোথায়?”
“মেঘ স্যার তো বেড়িয়েছে ৷ আর ওনার ফোনে চার্জ না থাকায় ফোনটা গাড়িতে ফেলে গেছে তাই আমি ফোনটা নিয়ে এসেছি৷”
” আসলাম কাল সকালে মেঘকে হেড অফিসে আসতে বলবে ইট’স এমার্জেন্সি ৷”
“ওকে স্যার৷”
আসলাম মেঘের ফোন চার্জে বসিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে জ্যাক তার পুরো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে৷ জ্যাককে এভাবে ঘুমাতে দেখে আসলাম প্রচন্ড বিরক্ত ৷ দুই বেডরুম এটাচ ওয়াশরুম একটা ড্রইংরুম একটা কিচেন নিয়ে ফ্লাট আসলামের, আসলাম জ্যাককে গেস্টরুমে থাকতে বললেও জ্যাক তার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ায় আসলাম দাঁত কিড়মিড় করে গেস্ট রুমে ঘুমাতে চলে গেল৷
.
.
.
.
“কেমন আছো আরু বেবি?” রিভালবার দিয়ে ফারহার গলায় স্লাইট করতে করতে প্রশ্ন করলো কিং ফায়ার ৷
ফারহার শীতল চাহনিতে কিং ফায়ারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো৷
.
.
.
#চলবে…………