#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_২৪
.
.
অর্নিলের উওর পাওয়ার আশা না করে ফারিহা তার পুরো অতিতটা এক এক অর্নিলের সামনে তুলে ধরে৷ ছোট বেলা থেকে করা প্রত্যেকটা অন্যায় , টেরোরিস্ট দলে যোগ দেওয়া ৷ নিরিহ মানুষকে হত্যা করা৷ ফারহার সাথে করা প্রত্যেকটা অন্যায়ের কথা না লুকিয়ে অর্নিলকে বলে৷ সবটা শুনে অর্নিল হতভম্ব হতবিহ্বল স্তব্দ হয়ে গেল৷
ফারিহা অর্নিলকে নিরুত্তর দেখে তাচ্ছ্যিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ” কি হলো অর্নিল কথা গুলো শুনে ভালোবাসা উবে গেল? ধ্যাত আমি বা কি? যে মেয়ে এতোটা জঘন্য হিংস্র হতে পারে তাকে কে ভালোবাসবে? এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কেন বার বার আমি তোমার থেকে দুরে সরে যাওয়ার কথা বলেছি?”
অর্নিল ফারিহার দিকে না তাকিয়ে দোলনা থেকে উঠে ব্যালকনি থেকে চলে গেল৷ ফারিহা অর্নিলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল৷
গৌধূলির লগ্ন পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এলো পৃথিবীর মাঝে, আকাশে মিটি মিটি তারা রা উকি মারছে৷ ক্ষনে ক্ষনে মেঘের দল এসে তারা গুলোকে ঢেকে দিচ্ছে৷ আকাশে এখনো চাঁদের দেখা মেলেনি৷ তবুও অন্ধকারে নিজের ভালো লাগাটা তৈরি করে নিয়েছে ফারিহা৷ হঠাৎ ব্যালকনিতে ছোট ছোট মরিচ বাতি জ্বলে উঠলো৷ তার সাথে সাথে এক কোনে থাকা বাল্বটা জ্বলে উঠতে পুরো ব্যালকনিটা নীল আলোয় ছেঁয়ে গেল৷ হঠাৎ এতো আলো জ্বলে ওঠায় ফারিহা অবাক হয়ে গেল৷ তখনি ফারিহাকে চরম পর্যায়ে অবাক করে ব্যালকনিতে অর্নিল ট্রে হাতে উপস্থিত হয়৷ ফারিহা অর্নিলকে দেখে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে৷ অর্নিল সে দিকে নজর না দিয়ে বলল, ” টেবিলের উপর থেকে কফির মগ দুটো হাতে তুলে নেও সুইটহার্ট ৷ দেখছো তো হাতে আমার কত্তো বড় ট্রে! রাখার তো আর কোন জায়গা দেখছি না৷ ”
ফারিহা হা হয়ে অর্নিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ অর্নিল এতো কিছু জানার পরও তার সাথে এতো নরমালি বিহেব কি করে করতে পারে এটাই বুঝতে পারছে না৷ তার উপর সুইটহার্ট বলায় মনে মনে বেশ ধাক্কা খেল ফারিহা৷ ফারিহাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্নিল ঠোঁট কামড়ে মিটি মিটি হাসতে হাসতে বললো,” এই যে মিসেস অর্নিল খন্দকার অনেক সময় পাবেন আপনার হাসবেন্টকে দেখার৷ এখন আপাদতো মগ দুটো হাতে নিন আর আমাকে ট্রে টা রাখার ব্যবস্থা করে দিন৷”
ফারিহা পারে না ব্যালকনির গ্রিল ভেঙে নিচে লাফ দিতে৷ অর্নিল এভাবে লজ্জা দিবে ভাবতে পারেনি৷ দ্রুত চোখ সরিয়ে মগ দুটো হাতে নিতে ফারিহা চরম অবিশ্বাসী চোখে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলে,” তু,,তুমি কিছুক্ষণ আগে আমাকে কি বলে সম্মোধণ করলে?”
অর্নিল ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে দোলনায় বসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ” কি বলেছি আমি?”
” মি মিসেস অর্নিল খন্দকার!”
” হ্যাঁ, যে আমার বউ হবে সে তো মিসেস অর্নিল খন্দকার হবে তাই না?”
ফারিহা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলে,” ফাজলামির একটা সীমা থাকে অর্নিল৷ আমি তোমার মোহ ভালোলাগা ভালোবাসা নই৷ আর না আমার মতো মেয়ের সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে নষ্ট করে ফেলবে৷ ভালো হয় আমি এখান থেকে চলে যাই৷” ফারিহা রেগে চলে যেতে নিলে অর্নিল ফারিহার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে কোলে উপর বসিয়ে বলে,” এক পা রুমের বাইরে রেখে দেখো সুইটহার্ট আই সোয়্যার তোমার অবস্থা আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না৷ আর কি যেন বললে তুমি আমার মোহ ভালোলাগা নাহ! তুমি এখনো এই অর্নিলকে চেনোনি তাহলে৷ অর্নিল কখনো সামান্য ভালোলাগার জন্য এতোটা হার্ট ওয়ার্ক কখনো করে না৷ ভালোবাসি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি বুঝিস না কেন পাগলি? আর তোর অতিত নিয়ে সত্যি আমার মাথা ব্যাথা নেই তবে এর থেকে তোমাকে বেড়িয়ে আসতে হবে৷ একটা সুন্দর নরমাল জীবন তুমি লিড করবে৷ ”
এতোক্ষণ মুগ্ধ হয়ে ফারিহা অর্নিলের কথা গুলো শুনছিলো৷ মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে কাউকে তার নোংরা জঘন্য পাপের অতিত জেনেও তাকে আগলে রাখতে চায়?
ফারিহা দু’চোখে পানি টলমল করছে ৷ হয়তো এখুনি ঝড়ে পড়বে! ফারিহার চোখ থেকে অশ্রুকনা গড়িয়ে পড়তে অর্নিল তার ঠোঁট জোড়া দিয়ে মুহূর্তে পানি শুষে নিয়ে বলে,” একবার বিয়েটা হতে দেও সুইটহার্ট কথা দিচ্ছি আমি বেঁচে থাকতে তোমার চোখে কখনো পানি আসতে দিবো না৷ ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবো সব সময়৷ ”
” তা সম্ভব নয় অর্নিল৷ কিং ফায়ার যদি জানতে পারে আমি তার হয়ে আর কাজ করবো না তখন সে আমাকে ছাড়বে না৷ হয়তো যদি জানতে পারে আমি তোমার কাছে আছি তাহলে তোমার এবং তোমার পরিবারের উপরে বিপদ ঘনিয়ে আসবে৷ তার থেকে বরং আমাকে যেতে দেও আপু আমার জন্য টেনশন করছে৷”
” প্রথমতঃ তোমার আপু মানে ফারহা তোমার জন্য মটেও টেনশন করছে না বরং আমাকে ফোন করে বলেছে তোমার খেয়াল রাখতে৷ আর আগামিকাল এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবে৷”
অর্নিলের কথা শুনে ফারিহা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,” তারমানে আপু জানে তুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছো?”
” এটা নিয়ে আমিও সত্যি প্রচন্ড অবাক হয়েছি৷ যেখানে আমি আর মম ড্যাড ব্যতিত কেউ জানে না তোমাকে আমি কিডন্যাপ করেছি সেখানে ফারহা জানলো কি করে? ”
অর্নিল ফারহার বলা প্রত্যেকটা ফোনে বলা কথা ফারিহাকে জানায়৷ সবটা শুনে ফারিহার ইচ্ছে করছে নিজেকে খুন করে ফেলতে৷ যে বোনের এতো ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে সে বোন তাকে বাঁচানোর জন্য কতো কিছু না করছে৷ কিং ফায়ারের সাথে হয়তো যুদ্ধ ঘোষনা করতে দুবার ভাববে না৷
ফারিহা মনে মনে ভেবে নিয়েছে, আর না এবার থেকে একজন পার্ফেক্ট বোন একজন পার্ফেক্ট মেয়ে একজন পার্ফেক্ট ওয়াইফ হয়ে দেখাবে৷ ” ফারিহা যা কৃতকর্ম করেছে তার জন্য তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে৷ নিজেকে পরিবর্তণ করে ফেলবে৷ যাতে ফারহা বা অর্নিল কখনো তাকে নিয়ে লজ্জা অনুভব না করে৷
অর্নিল ফারিহার ভাবনার মাঝে তার মুখে নুডুলস ঢুকিয়ে দিলো৷
” আর ভাবতে হবে না তোমাকে , এখন থেকে তোমার সব ভাবনা আমার তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসবে আমাকে নিয়ে ভাববে বুঝেছো?”
ফারিহা নুডুলস খেতে খেতে অর্নিলকে প্রশ্ন করলো৷
” তখন ওভাবে চলে গিয়ে ছিলে কেন?”
অর্নিল পাকোড়ায় সস লাগিয়ে খেতে খেতে বললো, ” কফিটা ঠান্ডা সরবত হয়ে গিয়েছিলো তাই ভাবলাম কিছু স্পাইসি বানিয়ে আনি ৷ তাই এখান থেকে সোজা কিচেনে গিয়েছিলাম৷ কেন তুমি কি ভেবেছিলে? অর্নিল সবটা শুনে মুখ ঘুড়িয়ে চলে গেছে?”
ফারিহা মুখে না বললেও অর্নিল ঠিকি বুঝতে পারে ফারিহার মনের কথা৷ অর্নিল মুচকি হেসে বলে,” ফারিহা অর্নিল বেঁচে থাকতে কখনো তোমায় ছাড়বে না৷ সে বিষয়ে নিশ্চিত থেকো৷”
” আর আমি যদি ছাড়তে চাই?” খানিকটা মজা করে বললো ফারিহা৷ কিন্তু ফারিহার কথা শুনে অর্নিল আগুন চোখে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,” তাহলে তোমাকে জানে মেরে দিবো তারপর নিজেকে শেষ করে দিবো৷”
ব্যাস এতোটুকু কথা শুনে ফারিহার ঠোঁটের কোণে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠলো৷ এতো গুলো বছরে আজ ফারিহা সত্যি এমন একজনকে পেয়েছে যে তাকে পাওয়ার জন্য যেমন মারতে পারে তেমন মরতেও পারে৷ ফারিহা হুট করে অর্নিলের গলা জড়িয়ে ধরে অর্নিলের নাকে নাক ঘষে হুট করে ঠোঁটে চুমু খায় ফারিহা৷ ফারিহার এমন কান্ডে অর্নিল অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ এতো ইজিলি ফারিহা তাকে মেনে নিবে এটা ভাবেনি অর্নিল৷ অর্নিল ফারিহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে,” আজকেই মম ড্যাড কে বলছি বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে৷ এভাবে আর কিছু মুহূর্ত থাকলে সত্যি আমার ধারা কোন ভুল হয়ে যাবে সুইটহার্ট ৷ আর বিয়ের আগে তোমায় হারাম ভাবে স্পর্শ করতে চাই না আমি৷ তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ডেট ফিক্সড করবো৷”
ফারিহা কিছু না বলে অর্নিলের বুকে মাথা রেখে হার্টবিটের ধুকধুক শব্দ শুনতে লাগলো ফারিহা৷
(৪৭)
বিকেল থেকে অনেকবার মেঘকে ফোন করে না পেয়ে ফারহা আসলামকে ফোন করে৷ মেঘ আসলাম এবং তারেক শেখ জরুরী আলোচনায় মগ্ন ৷ আসলামের ফোন হঠাৎ ভাইব্রেট হতে আসলাম ফোন হাতে নিয়ে ফারহার নাম্বার দেখে মেঘকে কিছু না বলে একটু দুরে সরে দাড়িয়ে কল রিসিভ করে৷
” হ্যালো ম্যাম৷ এই সময় আপনি আমাকে ফোন করেছেন? এনেথিং সিরিয়াস ?”
” মেঘ কোথায় আসলাম ভাই?”
” স্যার তো সিনিয়র স্যারের সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ত৷ ম্যাম স্যারকে ফোনটা কি দিবো কথা বলবেন?”
” না আসলাম ভাই৷ আপনি যাস্ট মিটিং শেষ হলে আমাকে একটা টেক্সট করে জানিয়ে দিবেন ৷”
” ওকে ম্যাম৷”
ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে ফোন হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো মেঘের কথা৷
” সব তো ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ এমন কি হলো? যার জন্য মেঘ আমার উপর এতোটা অভিমান করে আছে? কি করেছি আমি?”
ভাবতে ভাবতে ফারহার মনে পড়লো তখন তনুর সাথে কথা বলে বের হবার সময় দরজার কাছে একটা ছায়া দেখতে পেয়েছিলো কিন্তু বের হবার পর পর সে ছায়া আর দেখা যায়নি৷ ফারহা প্রথমে ভেবেছিলো তাদের কোন মেইড সারভেন্ট হবে হয়তো! তাই প্রত্যেক সারভেন্ট কে নজরে রেখেছে৷ কিন্তু তারা যদি না হয় তাহলে কে হবে? মেঘ নয়তো! মেঘের কথা ফারহার মাথায় আসতে ফারহা একটু ভিতু হয়ে পড়লো৷ কারণ মেঘ যদি সত্যি সবটা্শুনে থাকে তাহলে তার পুরো ডিটেইলস মেঘ বের করে নিয়েছে এটা শিওর ফারহা৷ ফারহা একটু দম নিয়ে বলে উঠলো,
” আর নয় এই চোর পুলিশ খেলা এবার যা হবে সবটা সবাই জানবে৷ আর আমি মেঘকে ঠকাতে পারবো না ৷ মেঘ যদি মনে করে আমাকে সাজা দিবে তাহলে আমি তাই মাথা পেতে নিবো ৷ আজ নয় এস্পার নয় ওস্পার হয়ে যাবে৷ ”
এক ঘন্টা পর ফারহার ফোনে আসলামের মেসেজ আসতে৷ ফারহা আসলামকে মেসেজ করে জানায় সে না পৌছানো পর্যন্ত যেন মেঘকে অফিসে আটকে রাখে৷”
মিটিং শেষ হতে আসলাম মেঘ কে বলে,” স্যার কয়েকটা ফাইল আপনাকে একবার দেখতে হবে৷ আমি কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করেছি৷ সেগুলো যদি একবার আপনি দেখে নিতেন?”
মেঘ হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে মাত্র রাত আটটা বাজে৷ ফারহার উপর যথেষ্ট অভিমান থাকায় মেঘ বাড়ি যাওয়ার কথা বাদ দিয়ে নিজের কেভিনে গিয়ে বসে৷ ততোক্ষণে আসলাম কয়েকটা ফাইল নিয়ে আসে মেঘের কাছে৷
“স্যার আমার কাছে ইনফরমেশন আছে টেরোরিস্টের হেড এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে শহর থেকে একটু দুরে একটা ভাঙা পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা ইতিমধ্যে আবার প্লান করতে বোম ব্লাস্ট করার৷ ”
” আসলাম তোমাকে যে ছবি টা পাঠিয়েছি৷ তার কোন ইনফরমেশন পেয়েছো?”
” স্যার আমার সোর্সের কাছ থেকে কিছুটা জানতে পেরেছি৷ তা হলো এই লোকটা বাংলাদেশে বোম ব্লাস্টের একদিন আগে এসেছে৷ এবং যে হোটেলে উঠেছিলো সেখানে ফারহা বা ফারিহা ম্যামের একজনকে দেখা গেছে৷ সি সি ক্যামেরায় তাদের একজনকে দেখা গেছে৷”
” আসলাম খোজ নেও ৷ ওরা যদি জায়গা পরিবর্তণ না করে তাহলে আমরা এমেডিয়েটলি সেখানে অপারেশনে যাবো৷ আমি শিওর ওই আগুন নামের লোকটা কিং ফায়ার যার কথা ফারুপাখি বলছিলো৷ এই লোকটাই হচ্ছে টেরোরিস্টের হেড৷”
” ওকে স্যার আমি খোজ নিচ্ছি৷”
মেঘ ফাইল দেখতে লাগলো হঠাৎ মেঘের ফোনে আলো জ্বলে উঠতে মেঘ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহার মেসেজ৷ মেঘ মেসেজটা অপেন করে দেখে তাতে গোটা অক্ষরে লেখা,” মেঘরাজ আমি তোমার অফিসের নিচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি৷ আগামি দু’মিনিটের ভিতর তুমি নিচে না আসলে আমি উপরে গিয়ে যা সিনক্রিয়েট করবো তার সম্পূর্ণ দায় ভার কিন্তু তোমার! অনলি টু’মিনিটস মাইন্ড ইট ৷”
মেঘ ফারহার মেসেজ দেখে সাথে সাথে টাইমটা দেখে ফোন হাতে দৌড়ে কেভিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷ আসলাম থাইগ্লাস সরিয়ে নিচে তাকিয়ে ফারহাকে দেখে বুঝতে পারলো তার স্যার কেন হন্ত দন্ত হয়ে এভাবে ছুটে গেল৷ নিশ্চয়ই তার ম্যাম স্যারকে থ্রেট করেছে ৷ আসলাম নিঃশব্দে হেসে ফাইল গুলো গুছিয়ে লক করে রেখে বের হয়৷
চার তালা থেকে দৌড়ে দুমিনিটে নেমে আসা মুখের কথা নয়৷ মেঘ দুমিনিটের মাথায় ফারহার সামনে দাড়ায়৷ ফারহা ভ্রু কুচকে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাক্কা দু’মিনিটের মাথায় তার সামনে দাড়িয়ে আছে৷ খানিকটা হাঁপাচ্ছে মেঘ৷ মেঘ ফারহার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” এরকম মেসেজের মানে কী ফারুপাখি?”
ফারহা গাড়ির ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে বলে,” গাড়িতে ওঠো ৷” মেঘ কোন তর্ক ছাড়াই গাড়ির ফ্রন্ট সিটে উঠে বসে ৷ ফারহা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়৷ গাড়িতে কেউ কারো সাথে কথা বললো না৷ ফারহা আড়চোখে মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে ড্রাইভিং করায় মন দিলো৷
ব্রিজের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে মেঘ ফারহা৷ কারো মুখে কোন কথা নেই৷ বাতাসে ফারহার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে বাতাসে উড়ছে৷ মেঘ কয়েক মুহূর্তের জন্য সব অভিমান ভুলে গিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে, ফারহা আড়চোখে তাকিয়ে মেঘকে দেখছে৷ ফর্মাল ড্রেস পড়া মেঘ৷ চুল গুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে কপালে ছেয়ে আছে৷ চোখে মুখে ক্লান্তির ছাঁপ গালে খোচা খোচা চাপ দাড়ি এতেই মেঘকে মারাত্নক আকর্ষণীয় লাগছে ফারহার কাছে ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে৷
ফারহা ধীরে ধীরে মেঘকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ মেঘ প্রথমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পরে আর চেষ্টা করে না৷ স্থির দৃষ্টিতে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷
ফারহা মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” মেঘরাজ এত অভিমান কেন করে আছো তোমার ফারুপাখির উপর? কি করেছি আমি? কেন আমায় ইগনোর করছো?”
মেঘ ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো,” তুমি কিছু করোনি ফারুপাখি৷ আমি হয়তো এখনো তোমার বিশ্বাসের যোগ্য হয়ে উঠতে পারি নি! তাই হয়তো এখনো আমাকে ধোয়াশায় থাকতে হয়৷”
ফারহা এবার হান্ড্রেড পার্সেন শিওর হলো মেঘ-ই সে ব্যক্তি যে আড়ালে তাদের কথা শুনেছে৷ ফারহা তার শুকনো ঠোঁট জোড়া জিব্বাহ্ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলে,” আই এম স্যরি মেঘরাজ৷ আসলে আমার এই দ্বিতীয় রুপটার কথা তোমাকে জানানোর সাহস হয়নি৷ তুমি ভুল বুঝে আমায় তোমার থেকে দুরে সরিয়ে দেও যদি? আমি জানি মেঘ তুমি এখন সবটাই জানো৷ তারপরও তোমার জানার মাঝে অজানা আরো অনেক কিছু আছে সেটা আমি তোমাকে আজ বলবো তারপর না হয় তুমি যা ডিসিশন নিবে তাই হবে৷ যদি আমাদের বিচ্ছে….. বাকিটা বলতে পারলো না তার আগে মেঘ ফারহার গলা চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো৷
.
.
#চলবে……