#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_০৪
.
.
.
ঘুমের মধ্যে পিঠে নরম কিছুর ছোঁয়া পেতে মেঘের ঘুম ছুটে যায়৷ অপর জন কিছু বুঝে ওঠার আগে মেঘ হাত টা ধরে পাশ ফিরে মায়াবি মুখের অধিকারিণীকে দেখে হ্যাচকা টান দিকে নগ্ন বুকে ফেলে দিয়ে বলে, ” কে বলে চাঁদকে স্পর্শ করা যায়না
এই যে!! ছুঁয়ে দিলাম।”
ফারিহা নেশা মেঘের ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনে যেন নেশা হয়ে গেল ফারিহার , একটু একটু করে মেঘের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে মেঘের ঠোঁটে চুমু দিতে গেলে মেঘ ফারিহাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ মেঘ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে ফারিহা হিংস্র চাহনিতে তাকায় মেঘের দিকে , মেঘ ফারিহার চাহনি অপেক্ষা করে উঠে বসে টিশার্ট পড়ে নিয়ে ফারিহার উদ্দেশ্য বলে,” তুমি এখানে কি করছো ফারিহা?”
মেঘের কথা শুনে ফারিহা যেন অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কারণ আজ পর্যন্ত কেউ তাদের দুই বোনকে আলাদা করে চিনতে পারে নি আর আজ মেঘ আচমকা ধরে ফেললো কে ফারহা আর কে ফারিহা!
” মেঘ তুমি কি করে জানলে আমি ফারিহা?”
মেঘ কিছু বললো না ঠোঁটের কোনে হাসি এনে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ ফারিহার তার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উওর না পেয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷
(০৯)
ফারিহা রেগে শ্রাবনের রুমে ঢুকে বেডের উপর থেকে বালিশ গুলো নিয়ে ছুড়ে ফেলতে লাগলো৷ আচমকা ফারিহার রাগের কারণ শ্রাবণ বা ফারহা দুজনে কেউ বুঝে উঠতে না পারলেও ফারহা ফারিহার এমন রাগি লুক দেখে আন্দাজ করে নেয় মেঘের সাথে ফারিহার কিছু একটা হয়েছে৷
ফারহা ফারিহার হাত থেকে বালিশ কেড়ে নিয়ে বলে ,” ফারিহা এটা খান মন্জিল নয় এটা চৌধুরী ম্যানশন বলে যাস না৷ ”
ফারিহা চোখ বন্ধ করে রাগটা কমানোর চেষ্টা করতে লাগলো ৷ এখন এই মুহূর্তটা যে তার রাগ প্রকাশের জন্য উপযুক্ত নয় এটা ফারহার কথায় ফারিহা বেশ বুঝতে পারলো৷ আচমকা ফারিহা ফারহাকে বলে,” আপু আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি৷ তোর হয়ে গেলে চলে আসিস বাই৷”
ফারিহা ফারহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে যায় শ্রাবণের রুম থেকে ফারিহা৷ শ্রাবণ এতোক্ষণ দাড়িয়ে ফারিহাকে দেখছিলো৷ ছোট বেলার শান্ত শিষ্ট মেয়েটা বড় হয়ে তোটা জেদি রাগি হতে পারে এটা শ্রাবণ মটেও ভাবতে পারেনি৷
ফারহা ফারিহার হয়ে শ্রাবণকে স্যরি বলতে শ্রাবণ বলে, ” স্যরি বলার কোন প্রয়োজন নেই ফারহা , কিন্তু ফারিহা এতো চেন্জ কি করে?”
ফারহা হাসলো শ্রাবণের কথা শুনে,
” ভাইয়া সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলায় , বদলায় তার চিন্তা চেতনা, বদলায় তার মন, বদলায় তার ভালোবাসা তবে মানুষ ভিত্তিক ভাবে, হয়তো একজন মানুষে তার ভালোবাসা সীমাবদ্ধ থেকে ভালোবাসার রুপ বদলায় আবার কারো একাধিক মানুষে ভালোবাসার রুপ বদলায়, কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল ৷ ”
” বাবাহ্! ফারু তুই এতো ভাষণ দিতে শিখলি কি করে? তোর কথার এতো পরিবর্তন? ভাবা যায়? যাই হোক তুই বস আমি চেন্জ করে আসছি৷”
” না ভাইয়া আমি ড্রইংরুমে যাচ্ছি ৷ তুমি নিচে এসো মামুনি সবার জন্য স্পেশাল পাকোড়া বানাচ্ছে৷ ”
” গ্রেট তাহলে তো আসতেই হচ্ছে৷”
ফারহা শ্রাবণের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷
” স্যার এটা আপনি কি করছেন? আসলে আপনি কাকে ভালোবাসেন? ফারহা ম্যাম নাকি ফারিহা ম্যাম?”
মেঘ চুলে জেল দিতে দিতে আসলামকে বলল, ” আমার লাইফে শুধু একজনের জন্য এক সমুদ্র এক আকাশ সমান ভালোবাসা রয়েছে৷ সে আমার ফারুপাখি ৷ ”
” তাহলে স্যার ফারিহা ম্যামের সাথে কি আপনি অভিনয় করছেন? ন মানে আপনারা ঘনিষ্ঠ হন যখন তখন তাই বললাম৷”
মেঘ আসলামের কথার প্রত্ত্যুতরে বলল,” অভিনয় বলতে কিছুই নেই আসলাম৷ ফারিহাকে আমি কখনো ভালোবাসি নি আর না বাসবো বরং ভালোবাসার বিপরীত শব্দটা আমাদের মাঝে এক্সজিট করে৷ ”
” ঘৃনা!”
মেঘ হঠাৎ তার বাচনভঙ্গি কঠিন করে বলে উঠলো ,
” আসলাম আমাদের এখুনি অফিসে যেতে হবে ৷ ”
” ওকে স্যার আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি৷”
আসলাম বেড়িয়ে যেতে মেঘ তার ফোন টা হাতে নিয়ে নিচে এসে দেখে সোফায় বসে একটা মেয়ে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে ৷ মেঘ মেয়েটার চুলের জন্য ফেস না না দেখতে পারলেও অনুমান ভিত্তিক ভাবে ধরে নেয় মেয়েটি তার অতিপরিচিত৷ মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেয়েটির সামনে এসে দাড়াতে মেঘ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো ,” ফারুপাখি!”
ফারুপাখি নামটা শুনে ফারহা কফি খাওয়া বন্ধ করে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে ফারহা হাসি মুখে বলে ওঠে ,” কেমন আছো মেঘ?”
” ভালো ৷ তুমি?” সোফায় বসতে বসতে বললো মেঘ৷
” গুড, আচ্ছা মেঘ ফারিহার সাথে কি তোমার কিছু হয়েছে ?”
” না কেন?”
” রেগে মেগে চলে গেল মেয়েটা ৷”
মেঘ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে , ফারহা বুঝতে পারছে মেঘের দৃষ্টি তার উপর সীমাবদ্ধ তবুও কেন যেন ফারহার অস্বস্থি হচ্ছে ৷ ঠিক সে সময় শ্রাবণ এসে ফারহার পাশে বসে ফারহার হাত থেকে তার অর্ধেক খাওয়া কফিটা কেড়ে নিয়ে বলে,” অনেক খেয়েছিস ফারু ৷ আর খেতে হবে না ৷ এবার বাকি কফিটা আমি খাবো৷” বলে কফিতে চুমুক দিলো৷ তা দেখে ফারহা হেসে ফেলে বলে,” ভাইয়া ছোট বেলাকার অভ্যাস এখনো তোমার গেল না৷ এখনো কি ছোট বেলার মতো আমার খাবার কেড়ে খাবে?”
মেঘ ফারহার আর শ্রাবণকে পারে না গিলে ফেলতে৷ প্রচন্ড রেগে গেছে মেঘ৷ চোখ দুটো লাল বর্ন ধারন করেছে ৷ আসলাম শ্রাবণের পরে আসতে সবটা পর্যবেক্ষণ করে তার স্যার মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মেঘের ফর্সা মুখখানা রাগে লাল হয়ে আছে৷ শ্রাবণ কিংবা ফারহা কেউ মেঘকে খেয়াল করছে না৷ এই ইগনোরনেস টা মেঘ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আর না পারছে শ্রাবণের সাথে তার ফারুপাখিকে এক সাথে দেখতে৷
হুট করে মেঘ ফারহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো৷ ফারহা মেঘের এমন আচমকা কান্ডে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে শ্রাবণের মুখের দিকে তাকাতে দেখে শ্রাবণ হাসছে৷ ফারহার এবার ভিষণ রাগ হলো শ্রাবণের উপর, শ্রাবণ যে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটা করেছে তা বুঝতে আর বাকি নেই ফারহার, মেঘ এখন প্রচন্ড রেগে আছে ৷ এখন কিছু বলা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা তাই ফারহা চুপ করে মেঘের সাথে যেতে লাগলো৷
মেঘ ফারহাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়৷ ফারহা কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু মেঘ ভুলেও ফারহার দিকে একবারের জন্য তাকাচ্ছে না৷ মেঘ যেন পণ ধরে আছে সে একবারের জন্য ফারহার দিকে তাকাবে না৷ ফারহা হাল ছেড়ে দিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে৷
মেঘের রাগ যেন এখনো পড়ছে না ৷ মেঘ ছোট বেলা থেকে ফারহার সাথে কোন ছেলেকে সহ্য করতে পারে না৷ মেঘ নিজের ভাইয়ের সাথেও ফারহাকে কখনো মিশতে দিতো না৷ এতে ফারহা মনে মনে ভিষণ রাগ হলেও তা কখনো মুখে প্রকাশ করতো না মেঘের ভয়ে, আর আজ এতো গুলো বছর পর ও তার প্রতি মেঘের অনুভূতি গুলো ফিকে হয়ে যায় নি৷ বরং সময়ের সাথে সাথে আরো স্ট্রং হয়েছে৷
(১০)
চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব নিয়ে গাড়িতে বসে আছে অর্নিল৷ আজ ভোর বেলায় অর্নিলের বাবা মা মিস্টার আমান খন্দকার ও মিসেস শাহিনুর খন্দকার ফিরেছেন৷ দেশের নাম করা বিজনেসম্যান হওয়ার সুবাদে টাকার জোড়ে অর্নিলের জামিন করিয়ে নেন আমান৷
অর্নিলের মুখে সবটা শুনে আমান খন্দকার শুধু তার ছেলেকে বলল,” অর্নিল মাই সান ৷ ফারিহা মেয়েটি তোমাকে কখনো ভালোবাসেনি ৷ আমার মনে হচ্ছে এই সবকিছু ওই মেয়েটির প্লান৷ নাহলে তুমি মেয়েটিকে তোমার ফ্লাটে ডাকো নি আর না খুন করেছো তাহলে কি করে মেয়েটি তোমার ফ্লাটে আসবে? আর কি যেন বলছিলে? তোমার ফ্লাটের চাবি তোমার কাছে আর ওই মেয়েটার কাছে ছিলো তাহলে ক্লিয়ারলি বোঝা যাচ্ছে ৷ ওই মেয়েটি এই সব পরিকল্পনা করেছে৷”
” হাউ ইস দিস পসিবেল ড্যাড? আর ফারিহা কেন আমার সাথে এমনটা করবে?” গম্ভির গলায় বললো অর্নিল…
” কেন করলো এটার উওর তো তুমি বের করবে অর্নিল৷ মেয়েটির পুরো ডিটেইলস আগে জানতে হবে তোমাকে৷ আমার মনে হয় না মেয়েটিকে তুমি খুব একটা জানো রাইট?”
অনির্ল মাথা নেরে সায় জানায়৷ এতোক্ষণ অর্নিলের মা মিসেস শাহিনুর খন্দকার চুপ থেকে সব শুনে বলে, ” অর্নিল বাবা যে তোর সাথে এমন নোংরা খেলা খেলেছে তাকে তুই একদম ছাড়বি না৷ তুই শুধু আসল সত্যিটা খুজে বের কর তারপর যা করার তোর ড্যাড করবে৷ ”
” নো মম, ড্যাড নয় যা করার আমি করবো৷ যদি এর পেছনে ফারিহার হাত থাকে তাহলে এর জন্য চরম শাস্তি ওকে পেতে হবে আর শাস্তি আমি ওকে দিবো তোমরা না৷ ”
” ওকে মাই সান তুমি যা চাইবে তাই হবে৷ ”
অর্নিল আর কিছু না বলে চুপ তার ফোনটা বের করে ফারিহার নাম্বারে ডায়াল করে………..
!
!
!
ব্রিজের উপর দাড়িয়ে আছে মেঘ ফারহা৷ মেঘ কোন কথা বলছে না দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারহার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে মেঘের চুপ থাকাটা ৷ ফারহা বিরক্তিতে নিজের মনে বক বক করতে লাগলো আর মেঘকে গালি দিতে লাগলো,” উজবুক একটা জোর করে এখানে নিয়ে এসে চুপ করে দাড়িয়ে আছে৷ ইচ্ছে তো করছে ধাক্কা দিয়ে সোজা নদীতে ফেলে দি ৷ ” ফারহা দাঁত কিড়মিড় করতে করতে মেঘের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলে, ” আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো মেঘ?”
ফারহার কথা শুনে মেঘ রাগি চোখে ফারহার দিকে তাকায়৷ ফারহা মেঘের রাগ দেখে মটেও বিচলিত না হয়ে বলে,” এভাবে লাল লাল চোখ দিয়ে তাকিয়ে কোন লাভ নেই মেঘ৷ ওয়াটএভার এখানে নিয়ে আশার কারণ যেহেতু বলবে না সেহেতু এখানে আমার থাকার কোন মানে হয় না৷ আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি তোমার হাওয়া খাওয়া হয়ে গেলে চলে এসো৷”
ফারহা যেতে নিলে মেঘ খপ করে ফারহার হাত ধরে উল্টো করে মুচরে ধরে ব্রিজের রেলিংয়ের সাথে চেপে ধরে বলে, ” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু লিভ হেয়ার ফারুপাখি ৷ নিজেকে কি ভাবো তুমি ফারুপাখি? হাহ্! কি ভাবো নিজেকে?”
” মেঘ লিভ মাই হ্যান্ড ৷ ইট’স হার্টটিং মি ৷”
মেঘ মুহূর্তে ফারহার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, ” যাস্ট এতোটুকুতেই তোমার কষ্ট হচ্ছে? আর এতো গুলো বছর আমাকে কতোটা কষ্ট পেতে হয়েছে তার বিন্দুমাত্র ধারনা তোমার আছে?”
ফারহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,” কষ্ট তুমি পেয়েছো আমি নই মেঘ ৷ ভালো তুমি আমাকে বেসেছো আমি বাসিনি তাই আমার কাছে কোন কিছু এক্সপেক্টটেশন করো না প্লিজ৷ ”
ফারহার কথা শুনে মেঘ কিছু মুহূর্তের জন্য যেন অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে, ফারহা গাড়ির দিকে এগোতে নিলে মেঘ ফারহার চুলের ভাজে হাত দিয়ে ফারহার ঠোঁটের ভাজে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়৷
মেঘের এমন আচমকা আক্রমনে জন্য ফারহা মটেও প্রস্তত ছিলো না৷ ফারহা মেঘের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে মেঘ ফারহাকে কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷
!
!
!
অর্নিলে নাম্বার থেকে ফোন আসতে দেখে ফারিহা একদফা অবাক হয়ে গেল৷ অর্নিলের নাম্বার থেকে কল আশা মানে অর্নিল মুক্ত ৷ কিন্তু এমন ফুলপ্রুফ প্লান থেকে অনির্ল এতো সহজে বের হতে পারে এটা ফারিহার কল্পনা অতিত ৷ দুবার রিং হয়ে কল কেটে যাওয়ার পর আবার অনির্লের নাম্বার থেকে কল আসতে ফারিহা কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের অপাশ থেকে অর্নিল বলে ওঠে……..
.
.
.
#চলবে…………