রোদেলা,পর্ব: ৬৩

0
807

#রোদেলা,পর্ব: ৬৩
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু

আমি এখন বলতে গেলে উদ্দেশ্যহীন জীবণ যাপন করছি…
: উদ্দেশ্যহীন কেন…
: কেন জানিনা…
: কফি দিতে বলি…?
: একটু পর বলো, মাত্র খাবার খেলাম…
: ওকে… তারপর…
: তারপর আর কি…
: আপনার গল্পের বাকী অংশটা…
: গল্প আর কি… গল্প তো আমার না….
তোমার….
তোমার পুরো গল্পের কিছুটা অংশ আমার কাছে…
কথাটা শুনে চমকে তাকায় রোদেলা সুফিয়ানের দিকে… শান্ত স্বরে বলে-
: তো বলুন শুনি সেটা…
: ঐ ঘটনার ছয় মাস পর্যন্ত আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। তুমি নেই…
কিন্তু আছো… এমন একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো মনের ভিতর । তার উপর তোমার পায়ের পাতা, পায়ের নখের মেহেদী…
এসব ক্লু নিয়ে কি মনে করে যেন তোমার কলেজে এক ছোট ভাইকে পাঠালাম, খোঁজখবর কিছু দিলো ও, আমি এরপর তোমার ডিপার্টমেন্টের পিয়ন সালামের কাছে গিয়ে তোমার কাগজপত্রের খোঁজ নিলাম। তিনি বললেন একজন মহিলা এসে তোমার ইন্টারমিডিয়েটের কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন, বেশ কিছুদিন আগে। প্রথমবারের মতো একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। তোমার কাগজপত্র কোন মহিলা নিবে….?!

অনেক টাকায় যে সেসব দফারফা হয়েছে তা আমি ভদ্রলোক না বললে ও বুঝেছি। তার ফোন নম্বর চাইলাম। কিন্তু সালাম ঐ মহিলার কোন ফোন নম্বর সেভ করে না রাখায় নম্বর দিতে পারলেন না। তখন তাকে মোটামুটি সব বললাম, ইমোশনালি ঘায়েল করবার চেষ্টা আরকি। কারন না বললে তিনি আমার ব্যাপারটা কত জরুরী তা বুঝবেন না। হয়তো কোন খবর দিতে নাও চাইতে পারেন। আমার নম্বর দিয়ে আসলাম আর বললাম উনি আসলে তার নম্বরটা রেখে আমাকে যেন দেয়। তারপর তিনি বললেন –
অনার্সের মূল কাগজপত্র কয়েকদিন পর আসবে, তাও নিতে ঐ মহিলা আসবেন। আমি তাকে কিছু টাকা দিয়ে বললাম তিনি আসলে যেন অবশ্যই আমাকে ফোন করেন। সেই তিনিটা হচ্ছে তোমার শাহনাজ চৌধুরী আন্টি…?
ঠিক বলছি কি?
: হুম
: এরপর শুধু অপেক্ষা….
এরমধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেলো জীবণে। মা অসুস্থ হয়ে গেলেন। হঠাৎ একরাতে স্ট্রোক হয়ে বাথরুমে পরে গেলেন। তাকে নিয়ে ভীষণরকম ব্যাস্ততায় কাটলো ঐ বছরের পুরো সময়টা। হার্টে রিং পরানো হলো। বাসায় ফিরলেন সুস্থ হয়ে। আমিও কিছুটা ফ্রি হয়ে তাগাদা দিলাম তোমার কলেজের ডিপার্টমেন্টে। ব্যাটা আমাকে চিনতে পারলো না প্রথমে। বেমালুম ভুলে গেছে তাকে অর্পিত করা দায়িত্বের কথা। অনেক পরে যখন চিনলো তখন বললো ভদ্রমহিলা তোমার কাগজপত্র কিছুদিন আগেই নিয়ে গেছেন। আমার তখন রক্ত মাথায় উঠে যায়। আমার যা মাথা গরম বয়োবৃদ্ধ মানুষ না হলে আমি ঠিক উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতাম। অনেক খুঁজে তার নম্বর নিলাম আমি। বেশ কয়েকবার কল দিয়ে তার পরিচয় নেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেখানে ব্যার্থ হয়ে আমার এক বন্ধু যে কিনা সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট ওর সাহায্য নিয়ে ঐ ফোন নম্বর দিয়ে খোলা সব সোশ্যাল সাইটগুলোর একসেস নিলাম। সেখানে এমন কিছু খুঁজতে শুরু করলাম যাতে তোমার পর্যন্ত পৌঁছাতে কোন ক্লু পাই। তুমি যেহেতু নিজেকে লুকাতে চাইছিলে তাই প্রিসিলাকে এসব কিছুই বলি নি আমি।
ভাগ্যিস বলিনি…!

তার সোশ্যাল সাইটগুলোতে তেমন কিছুই পেলাম না। আমার ভিন্ন একটা ফোনে সেই সকল সাইটের একসেস রেখে দিলাম অবজারভেশনে রাখতে। বিশ্বাস ছিলো কোন না কোন ক্লু তো পাবোই….

তারমধ্যে আমার সুস্থ স্বাভাবিক, রোগের ধকল সামলে উঠা মা ঘুমের মধ্যে চলে গেলেন। হার্টে রিং পরানোর সময় ডাক্তার বলেছিলেন ৮০/২০ চান্স অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার। সেই চ্যালেন্জ মোকাবিলা করে মা আমার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। তারপর হঠাৎ এত সুন্দর হয়ে গেলেন বলার মতো না। তার কাজ করার উদ্যোম বাড়লো আগের চেয়ে, তুচ্ছ বিষয়ে হাসতে হাসতে বিষম খায়, যেন কিশোরী কোন মেয়ে বয়স যেন কমে গেছে বহু বছর। আমি খুব খুশি ছিলাম মাকে এমন রূপে দেখে। চলে যাবেন বলেই হয়তো তার এমন পরিবর্তন হয়েছিল। কথায় আছে না প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে দপ করে জ্বলে উঠে…. কথাটা যে কত সত্যি মায়ের চলে যাওয়ার পর তা বুঝেছি। অপারেশন এর সময় এমন কিছু যদি হতো আমার কষ্ট কম হতো কিছুটা। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে হঠাৎ এমন চলে যাওয়া মানতে পারছিলাম না আমি, আমরা কেউই । মনের ঝড়ও প্রকাশ করতে পারছিলাম না। ছোট ভাইবোন ওরা ভেঙে পরবে তাই…

মায়ের বিয়োগ শোক কাটিয়ে না উঠতেই বোনের বিয়ে দিলো মামা সম্বন্ধ এনে। ওর বিয়ের পর আমরা স্বাভাবিক জীবণে ফিরলাম যেন। দুই ভাই একা এত বড় ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করলাম। তেমার মা আমাদের খাওয়ার কষ্টের কথা ভেবে আমাদের বাড়িতে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে উঠলেন। পরিবারহীন আমি পরিবার পেলাম যেন। এ সুযোগে আমি অনেক কাছাকাছি এসে পরি তোমাদের পরিবারের। অনেক চেষ্টা করি জানতে প্রিসিলা কিছু জানে কি না। কিন্তু ও সবসময় এ ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতো। আমি ভাবতাম তোমার বিয়োগের শোক এখনো কাটিয়ে উঠেনি হয়তো….

এরমধ্যে ঐ বন্ধু একটা সন্দেহজনক টেক্সের স্ক্রিনশট পাঠালো আমায়। তোমার শাহানাজ আন্টি তার বোন মেহেনাজের সাথে চ্যাট করছিলেন তোমার ভর্তির ব্যাপারে… তখনো আমি বুঝিনি তারা তোমার ব্যাপারে কথা বলছেন। কারন ইউনিভার্সিটি অফ চেষ্টার ইংল্যান্ডের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তো তোমার যাওয়ার কথা না। তাছাড়া তারা কথাবার্তায় কোথাউই রোদেলা নামটি ব্যাবহার করে নি। পুরো চ্যাট লিস্টে রুবা নামটা ব্যাবহার করা।

রুবা নামের কাউকে চিনে কিনা তা কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম প্রিসিলাকে৷ প্রিসিলা বললো না….

পরে গেলাম অথৈ সাগরে। ইংল্যান্ডের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রুবার এডমিশন…. এই এক লাইনই সম্বল টোটাল এক্সপেরিমেন্টে। ঐ বন্ধুকে সার্চ চালু রাখতে বললাম। এদিকে ব্যাবসা, আর ভাইকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাতে একটু ব্যাস্ত হয়ে পরলাম। ব্যাস্ততায় ভুলেই গেলাম এসব। এরপর বছর দুয়েক পর ঐ বন্ধু আমাকে একটা ছবি পাঠালো…..

ছবিটা দেখে আমার দুনিয়া দুলতে লাগলো…
সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরিহিত একটা মেয়ে কালো গাউনে লাল সাদা বর্ডার হুডে, মাথায় ক্যাপ পরে হাস্যজ্জ্বল ছবি। এই সেই রুবা….
যে ইউনিভার্সিটি অফ চেষ্টার থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করে ঐ বছর সমাবর্তনে অংশ নিয়েছে।
যাকে আমি চিনি রোদেলা নামে….
বলে ফোনে থাকা ছবিটা সুফিয়ান দেখায় রোদেলাকে… ফোন হাতে নিয়ে ছবিটা দেখে মুচকি হাসে রোদেলা।

এরপর একটু থামলো সুফিয়ান, সামনে রাখা গ্লাসের পানি শেষ করে বিরতি নিলো কিছু সময়। পাঁচ পাঁচটা বছরের সারাংশ বলা কি মুখের কথা। রোদেলা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে, ঠিক যেন কোন অভিযাত্রীকের রোমাঞ্চকর যাত্রার বর্ননা…
সুফিয়ান বললো
: কফি দিতে বলো..
রোদেলা তাদেরকে কফি দিতে বলে- বললো মনে হচ্ছে কোন ট্রেজার সন্ধানের গল্প শুনছি…
মুচকি হেসে সুফিয়ান বলে-
অর্থবিত্তের মাঝে বড় হওয়া আমি টাকাপয়সাকে ট্রেজার মনে করি নি কোন দিনই । গাড়ি চালাতে পেট্রোলের যেমন গুরুত্ব, টাকা আমার জীবণে ঠিক ততোটা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ট্রেজার সন্ধান করছিলাম কিনা জানিনা, ঐ সময়টা আমার মনে হচ্ছিল আমি আমার নিজেকে খুঁজছি।

কফির মগে ঠোঁট লেগে থাকা অবস্থায়ই রোদেলা তাকায় সুফিয়ানের দিকে। কথাটা ঠিক যেন ধাক্কা দিলো রোদেলার ভিতরটাকে। কফির মগটা নামিয়ে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকায় সুফিয়ানের দিকে। কিছুটা বিস্ময়, কিছুটা সহানুভূতি, কিছুটা ভালোবাসা, একসাথে মিশালে যা হয় তাই ছিলো হয়তো ওর দৃষ্টিতে তখন।

সুফিয়ান কথাটা বলে কেমন যেন অস্বস্তিতে পরে যায়। প্রসঙ্গ বদলাতে বলে-
তারা কফিটা আসলেই ভালো বানায়….
সুফিয়ানের কথায় রোদেলার চেহারার ভাবের কোন পরিবর্তন হয় না।

তাতে আরো বেশী অস্বস্তিতে পরে সুফিয়ান।
রোদেলা বলে-
রুবিন আঙ্কেলের একটা মেয়ে ছিলো – নাম রুবা, দশ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মা*রা যায় ও। শাহনাজ আন্টি আমাকে রুবা নামেই ডাকতেন। সেই শুরু থেকেই, কারন ছোট্ট রুবার আর আমার চেহারায় অনেক মিল রয়েছে। আমি না বলতাম না, কারন আমাকে রুবা ডেকে যদি তিনি শান্তি পান তাতে ক্ষতি কি…

: ও আচ্ছা…..
: তারপর বলুন….
তারপর আর কি, এরপর আমি সবকিছু একপাশে রেখে তোমার খোঁজ নিতে শুরু করলাম। আরো ছয়মাস পরে ইংল্যান্ডের এম্বাসিতে পাসপোর্ট জমা করলাম। কারন তখন আমি আমার ভাইকে নিয়ে দৌড়ের ওপরে ছিলাম। কারন ও ব্রিলিয়ান্ট হওয়া সত্ত্বেও মন মতো ভার্সিটিতে এডমিশনের সুযোগ পাচ্ছিল না। ইংল্যান্ডের ভিসা নিতে প্রথম বার রিজ্যাক্ট হলাম। পরের বার কন্ট্রাক্টে ভিসা নিলাম। আর এসে পরলাম এখানে। এখানে আসার আগে
তোমার খোঁজ খবর সব নিয়েছে পরশ। কোথায় থাকো, কি করো, তোমার ছোট্ট থেকে ছোট্ট ইনফরমেশন।

এখানে আসার তৃতীয় দিনেই আমি তোমাকে দেখেছি প্রথম বারের মতো। কিন্তু তেমার সামনে যাই নি। সময় নিয়েছি নিজেকে গুছাতে। তারপর আটঘাট বেঁধে তোমাকে দেখা দিলাম। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ আমি…
তুমি তো পুরাই …. হা হা হা….

উচ্চ স্বরে হাসে সুফিয়ান, রোদেলা যেন লজ্জা পায় ওর হাসিতে। বলে-
আমি আসলে আমার সব অতীত ঝেড়ে ফেলে এখানে এসেছি। আপনি আমার অতীতের একটা অংশ তাই ঐ দিন ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আপনাকে দেখে। এমন ব্যাবহারের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।
: আচ্ছা আর দুঃখিত হতে হবে না, একটা প্রশ্ন করি…?
: করুন…
: গতরাতে তুমি বলেছিলে যে শোভনের প্রতি তোমার যে অনুভূতি ছিলো তা তুমি অস্বীকার করতে পারবে না… তা সেই অনুভূতি কি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে…?
হঠাৎ কেমন রোদেলার মুখচোখ শক্ত হয়ে যায়৷ কাটাকাটা শব্দে বলে-
আমি বাংলাদেশ থেকে যে রাতে রওনা দিয়েছিলাম, সে রাতের আকাশে আমি আমার সব অতীত উড়িয়ে দিয়েই রওনা দিয়েছি ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। কারন আমি জানতাম আবেগকে প্রশ্রয় দিলে আমি বেশীদূর এগুতে পারবো না। আমাকে অনেকদূর যেতে হবে, নিজের পরিচয় তৈরী করতে হবে।
: সহজ বাংলায় তাহলে তোমার উত্তর না… তাই তো…?
: হুম…
: জেনে খুশি হলাম….!
: আমি আর কোনদিন দেশে ফিরবো না, এখানেই সেটেল হবো,।
: গুড…, ভেরি গুড ডিসিশন….
: একটা সাহায্য করবেন আমাকে….
: কি সহায্য…
: কৃষ্ণচূড়া বাড়িটা আমি কিনতে চাই…?
: ওহ্ আচ্ছা,
: কোন খরচ না থাকায় পাঁচবছরে আয়ের পুরো টাকাটাই সেইভ হয়েছে। সেগুলো দিয়ে বাড়িটা কিনবো, বাবা মায়ের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে আমার, না যাই দেশে এভাবেই না হয়….
: সমস্যা নেই, আমি খোঁজখবর নিয়ে তোমাকে জানাবো…

বেশ কিছু সময় চুপ থাকে দুজন, প্রশ্নের সাগরে ডুবে দুজন, তবুও কোন জিজ্ঞাসা নেই…. হাবিজাবি ভেবে রোদেলা বলে-
: আমারও অনেক প্রশ্ন আছে…
: আমি রেডি…
: আমার সর্বপ্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে আপনি আমাকে খুঁজতে এত কাঠখড় পোহালেন কেন…?
রোদেলার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে সুফিয়ান, বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না ও… চোখ ফিরিয়ে
মৃদু হেসে বলে-
: আমি তো ভেবেছিলাম তুমি উত্তরটা জানো…?
: নাহ্, জানি না তো…!
: সত্যি জানো না….?
: আমি আপনার উত্তরটা শুনতে চাচ্ছি…
তুমি যদি নাই জানো তাহলে এ প্রসঙ্গটা থাক রোদেলা…, সব প্রশ্নের উত্তর বলে কয়ে দেয়া সম্ভব না…
পিনপতন নীরবতা টেবিলটাতে, আশেপাশে কফির মগ, প্লেট আর চামচের টুংটাং শব্দ এ নিরবতার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যেন। সুফিয়ান ফোন ঘাটছে, আর রোদেলা তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে।

একটু পর সুফিয়ান বলে-
ওহ্ ভালো কথা… আমি পরশু চলে যাচ্ছি দেশে…
: হোয়াট….?!
: হুম…
যে কাজে এসেছি তা তো শেষ, এবার ফিরতে হবে আমায়…
: ছয়মাস তো হয় নি এখনো, তবুও কেন….?
: এতদিন তোমাকে খোঁজাটা একটা প্রোজেক্টের মতো ছিলো আমার কাছে। আর এখানে থাকার কারনও ছিলো এটা। তোমাকে খুঁজে পেয়েছি এখানে থাকার আর কারন নেই তো…?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে সুফিয়ান বললো-
: আচ্ছা উঠি তাহলে….
বলেই দ্রুত উঠে বিল পেমেন্ট করে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়ায় সুফিয়ান। অপেক্ষা করে রোদেলার বের হওয়ার। এদিকে রোদেলার যেন এতটুকু শক্তি নেই উঠবার। তবুও অনেকক্ষণ পর উঠে বের হয় ও…
বলে-
: আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, আমাকে একটু পৌঁছে দিবেন…
কোন কথা না বলে গাড়ির চাবি নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে সুফিয়ান।

ত্রিশ মিনিটের যাত্রায় কেউ কোন কথা বলে না। রোদেলা তাকিয়ে থাকে সুফিয়ানের দিকে। সুফিয়ানের চোখমুখ শক্ত। ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে রোদেলার দেয়া লোকেশন দেখতে দেখতে। বাড়ি সামনে নেমে বিদায় নেয় সুফিয়ান। রোদেলা ভিতরে আসতে অনেক অনুরোধ করে। কিন্তু সুফিয়ান উবার ডেকে চলে যায় মেলিংটনে। ফিরবার পথে ছোট্ট করে বলে-
: আসি রোদ, সবসময় ভালো থেকো তুমি, আমাদের আর হয়তো দেখা হবে না….!
রোদেলা যেন ভাষাহীন কোন দন্ডায়মান মূর্তি, তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করবার নেই….
সুফিয়ানের গাড়িটা যখন চলে গেলো সেই মূর্তির গাল বেয়ে পানি পরতে লাগলো। চুপি সারে,নিঃশব্দে, যাতে যার গাল বেয়ে পরা সে যেন টের না পায়…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here