#অভিশপ্ত_জীবন
সিজন 2
পার্ট ৪
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সারাদিন রজনী ঘরে থাকে আর নিশি বিভিন্ন অজুহাতে রজনীর থেকে দূরে দূরে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে, সামনে পরিক্ষা তাই একটু পড়তে বসেছিলাম।শাশুড়ীকে বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা বলতে লজ্জা করে। নিশির সাথে সব কিছু শেয়ার করা যায় খুব সহজে। কিন্তু মেয়েটার চঞ্চলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
রাসেল কে রাতে আকার ঈঙ্গিতে, নিশির বর্তমান চঞ্চলতা সম্পর্কে একটু বলে রজনী । কিন্তু রাসেল সব কিছু ধুর বলে উড়িয়ে দিলো। উল্টো সে রজনীকে বুঝালো,তুমি তোমার বোন কে অনেক ভালোবাসো, তাই সব সময় তাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবো। তুমি নিশির বড় বোন, নিশিকে নিয়ে ভাব্বে তাতে কোন প্রব্লেম নাই, কিন্তু নেগেটিভ কিছু না ভেবে পজেটিভ কিছু ভাবো, তাহলে দেখবে তোমার মনের সব সংশয় দূর হয়ে গেছে।
রজনীও ভেবে দেখে, রাসেলের কথা হয়তো ঠিক,, নিশির করা একটা ভুলের জন্য হয়তো আমি বারবার নিশিকে নিয়ে ভুলভাল ভাবছি। ছোট মানুষ, আর আমার এই বোরিং কাজ গুলো কি তার সব সময় করতে ভালো লাগে?
যত দিন যাচ্ছে তত রজনীর শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে। নিশির পড়াশোনা, রজনীর যত্ন, পাশাপাশি শাশুড়ীকে বাড়ির কাজে সাহায্য ইত্যাদি বিষয় গুলোর জন্য ওর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চললে রেজাল্ট ভালো হবে না। কিন্তু নিশির হাবভাব দেখে মনে হয় সে এখানে প্রচুর আনন্দে আছে। রজনী নিশিকে একদিন বিকালে জিজ্ঞেস করি,, তোর পড়াশোনার খুব চাপ তাইনা রে।
হ্যাঁ রে আপা, সামনে পরিক্ষা, তাই একটু,,,,, এইসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। আমি সব তুড়ি মেরে ম্যানেজ করে নিবো।
আমি বলছিলাম কি,,তুই না হয় বাসায় যা,, ওখানে থেকে একটু ফ্রী ভাবে পড়াশোনা কর। তোকে নিয়ে মায়ের অনেক স্বপ্ন রে।ভালো রেজাল্ট না হলে মা মনে কষ্ট পাবে।
তুই পাগল হয়ে গেছিস আপা!! তোর এই অবস্থায় আমি তোকে রেখে যাবো। তুই আমাকে এতোটাই স্বার্থপর ভাবিস আমাকে?? তোর বাবুদের হাটাহাটি না দেখা পর্যন্ত আমি এ বাড়ি থেকে যাচ্ছি না,, মনে রাখিস।
নিশি কথাটা বলেই উঠে চলে গেছে। কেন আমার মন বারবার কূ-ডাকছে। মনে হচ্ছে বিরাট কোন ঝামেলা হবে। ইদানিং রাসেল সারাক্ষণ ল্যাপটপ নিয়ে বসে বসে কি যেন করে। কিছু বললেই বলে, একটু দাড়াও, ব্যাস্ত আছি। কি নিয়ে এতো ব্যাস্ততা বুঝি না। খাওয়া, যত্ন সব কিছু সঠিক ভাবে চললেও মনের এমন খুতখুতানিতে কোন কিছু ভালো লাগে না।
আজ সকালে আনিসকে সাথে নিয়ে আমি রজনীকে দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু এসে নিশিকে বাড়িতে পায় নি।মনে মনে ভাবছি, বাইরের গ্রামে এসেও মেয়েটার দস্যিপনা গেলো না।
রজনী ভয়ে মা কে তেমন কিছুই বললো না। কারণ শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কারো সম্পর্কে কিছু বলা ঠিক না। রজনীর চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ। রাতে মনে হয় ঘুমাতে পারে না মেয়েটা। এমন শরীর নিয়ে ঘুম আসবেই বা কিভাবে।
আমি রজনীকে ধরে বসিয়ে দিলাম। তারপর চুলে তেল দিয়ে আচড়ে দিতে দিতে বললাম,, আমার লক্ষি মা! তোর কি কোন অযত্ন হচ্ছে এখানে?? জামাই কে কতবার বললাম আমাদের ওখানে নিয়ে যাবো কিন্তু কোন ভাবেই রাজি হলো না। তুই এমন শুকিয়ে গেছিস কেন।
একেই হয়তো বলে মায়ের মন। চাইলেও মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না। কিছুটা বিচলিত হয়ে রজনী বলে,, আমি কিভাবে অযত্নে থাকবো মা? আমার শাশুড়ী আমার দ্বিতীয় মা, আর রাসেলের কথা তো বলে শেষ করা যাবে না, সব সময় এটা নয় তো ওটা মুখের সামনে এনে জোর করে খাইয়ে দেয়।আর তোমার চঞ্চল ছোট মেয়েটা তো সব সময় আমার নার্স হিসেবে আছে। এতো কিছুর পরেও কিভাবে অযত্ন হবে আমার।
মনটা শান্ত লাগছে,, গাছে পাঁকা পেঁপেঁ এনেছি রজনীর জন্য। এই দুপুরে ঠান্ডা পেঁপেঁ কেটে খাইয়ে দিচ্ছি এমন সময় নিশির আগমন ঘটে। অনেক হাপিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে খুব দৌড়ে কোথাও থেকে এসেছে। নিশি এসেই আহ্লাদী সুরে বলে,
সব আদর শুধু বড় মেয়েকে দিলে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে তোমার আরো একটা মেয়ে আছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম, হয়েছে হয়েছে, আর আহ্লাদীপনা করতে হবে না। যে কাজের জন্য রেখেছি তা তো কিছুই করো না, আবারও পাঁকা পাকা কথা।
মা এবং মেয়েদের এমন আনন্দঘন মুহুর্তে রাসেল ও বাড়িতে চলে আসে। কিছুক্ষন আগে নিশি আসছে তার একটু পরে রাসেল বিষয়টি রজনীর মনে খটকা লাগে। ছিঃ নিজের বোন আর বর সম্পর্কে কি যা তা ভাবছি,,মনে মনে বলে রজনী।
সারাদিন মা বাবার সাথে ভালোই আনন্দ করেছে নিশি। রজনীকে ঔষধ খাওয়ানোর পরে ফোন নিয়ে বসেছে নিশি,, নিশিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কারো সাথে চ্যাট করছে। কেন যেন নিশির আনন্দ গুলো রজনীর বুকে কাঁটার মতো বিধেঁ। রাসেল কে কোন একটা প্রয়োজনে ডাকছে, রজনী। কিন্তু রাসেলের সেই কমন জবাব,, দাড়াও আসছি,,,
প্রতিটি মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরে থেকে রাসেলের সাথে তেমন কোন সম্পর্ক হয় নি। ডক্টরের কড়া নিষেধ এই বিষয়ে। সে ছেলে মানুষ। এই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করার সত্যিই অনেক দুর্বিষহ যন্ত্রণা।
রাসেল প্রতিদিন আমার কাছে ঘুমায়। তবে মাঝে মাঝে আমার ঘুম ভেঙে গেলে খেয়াল করি, সে ল্যাপটপে বিভোর। রাসেলকে আজ রাতে আমি বলি,, নিশির মাত্র কিছু দিন পরে পরিক্ষা কিন্তু সে আমার সেবা যত্ন করতে করতে পড়ার পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় পায় না। আমার মনে হয়, নিশিকে বাড়িতে পাঠানো উচিত। আর তাছাড়া তুমি আর মা আছোই তো,,,,,
বাকি আরও কথা অসম্পূর্ণ রেখেই,, রাসেল উত্তর দিলো,,
আমার মনে হচ্ছে তুমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছো,,আমি তীরে এসে তরী ডুবাবো?নিজের চাকরি ছেড়ে এসেছি তোমার জন্য আর বাচ্চাদের জন্য। কিভাবে বাচ্চা গুলোকে সুস্থ অবস্থায় দুনিয়ায় আনা যায় তা ভাবতে ভাবতে আমি অস্থির আর তুমি বলছো এই সময় নিশিকে বাড়ি পাঠাবে?বুঝলাম নিশির পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো একটা কোচিং-এ ভর্তি করে দিবো, বাসার অন্য সব কাজ করা নিশির জন্য বন্ধ করে দিবো তবু্ও বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত নিশি এ বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।
রাসেল কথা গুলো শোনামাত্র নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম,, নিশিকে এ বাড়িতে রাখার জন্য রাসেল এতো উতলা কেন? রাসেল যেভাবে কথা গুলো বলছে তাতে মনে হচ্ছে, নিশি আমার বোন না,সে একজন নামকরা গায়নী ডাক্তার।
রাতে আর ঘুম হলো না। ঘুমন্ত রাসেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অতীতের কথা গুলো মনে করছি আর কান্না করছি। কত মধুর সম্পর্ক ছিলো আমাদের। রাসেল চরিত্র নিয়ে কোন রকম সন্দেহ ছিলো না আমার মনে। অথচ আজ সেই রাসেলকে কেন যেন পর মনে হচ্ছে। আল্লাহ তুমি আমার চিন্তা ভাবনা গুলো কে ভুল প্রমাণিত করো।
আজ সকালে নিশির ফোন আমার টেবিলের উপর রেখে, আমার জামাকাপড় ধুতে গেছে নিশি। এই সুযোগে আমি নিশির, নিশির ফোন হবে কেন এটা তো আমার ফোন, যায়হোক ফোনটা হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য কল লিষ্ট এবং মেসেজ গুলো দেখবো। কিন্তু আমার আশাতে ছায়!!
স্ক্রিনলক করে রাখা। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম খোলার জন্য কিন্তু বৃথা। ঠিক তখনই নিশি ঘরে এসে আমার হাতে ফোন দেখে চমকে যায়। সে সাথে সাথে বলে,, কি রে আপা, কেউ কল দিয়েছিলো নাকি?
আমি বললাম, কি প্যাটার্ন দিয়েছিস বলতো? এক যায়গা তে কল দিবো। তখনই আমার হাত থেকে ফোন ছোঁ মেরে নিয়ে বললো, নাম্বার বল?
নাম্বার আমার মুখস্থ আছে, তুই লক খুলে দে।
নিশি আমার সাথে এটা সেটা বলে সময় পার করছে। প্রায় দুই তিন মিনিট পরে নিশি আমার হাতে ফোন দিলো।আমি জানি, আমি যা দেখার উদ্দেশ্যে ফোন নিতে চেয়েছিলাম তা এতোক্ষণে নিশি ডিলিট করে দিয়েছে।
দিন যত যাচ্ছে সন্দেহ তত বাড়ছে। রাতে ঘুম ভাঙার পরে দেখি রাসেল আমার পাশে নাই। মনে মনে ভাবলাম এইসব যন্ত্রণা বুকে পুষে রাখার চেয়ে আসল ঘটনা সামনে আনা উচিত। খুব সাবধানে নিজেকে সোয়া থেকে তুললাম। উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক নিশির ঘর পর্যন্ত যাবো। যদি ঘরে নিশি থাকে তাহলে বুঝবো রাসেল অন্য কোন কাজে রাতে বাইরে গেছে। আর নিশি ঘরে না থাকলে এক আর এক এ দুই হবে।
পাশের টেবিল, তারপর ওয়ারড্রব, তারপর দরজা টা ধরে ধরে কোন রকম চৌকাঠ পর্যন্ত আসতেই পাশের ঘরে রাসেলের কথা শুনতে পেলাম।
চলবে ,,,,,,,,