কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:৫১

0
694

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:৫১
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন

জার্মানির বিখ্যাত হোটেল গুলোর মধ্যে এলমাউ কেল্লার বেশ জনপ্রিয় রয়েছে।পাহাড়ের কোলে দুর্গম এই হোটেলে বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে ধনী অতিথিদের সমাগম ঘটে৷ এই হোটেলের বিশেষ স্থাপনার খাদ্যতালিকাও ভোজনরসিকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়৷জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যের আলপ্স পর্বতে এলমাউ নামের এই কেল্লা অবস্থিত।
গোটা বিশ্বে এই কেল্লার নাম ছড়িয়ে পড়েছে৷ পসরা ফারুকীর কথাকথিত বয়ফ্রেন্ড জ্যাকি বেলহাম দুদিনের জন্য এখানে ঘুরতে এসেছে। জ্যাকির টাকা পয়সার অভাব নেই। ওর এই বিশাল অর্থ সম্পত্তির যোগান কোথা থেকে আসে কারো জানা নেই। নাইট ক্লাব পার্টি আর বারে ওর অগাধ যাতায়াত। বিস্তার মেয়ে ফ্রেন্ড আছে ওর। এই কেল্লাতে বছরে ওর কয়েকবার যাতায়াত হয়। যদিও রাজধানী থেকে দূরে তবুও ওর তেমন অসুবিধা হয়না। পসরাকে ও বুঝিয়ে এসেছে। আরমান ফারুকী ওকে জামাই হিসেবে মেনে নিলে দ্রুত ফিরে আসবে। জরুরী ব্যবসার কাজে যাচ্ছে যদিও জানা আছে আরমান ফারুকী ওকে ঠিক মেনে নিবে। সারারাত জেগে থাকার দরুন সকালে ঘুমিয়েছে তাই উঠতে উঠতে সন্ধ্যা লেগে গেলো। বয়স পঞ্চাশ পূর্ণ হয়নি এখনো যথেষ্ট স্মার্ট। ভালোলাগা ভালোবাসার কাছে বয়স কোনো মেটার করে না। ও এসব নিয়ে ভাবেও না। তাইতো পসরা ওর বয়সে বেশ খানিকটা বড় হওয়ার পরেও ওকে নিজের করে নিতে কোনো দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে না। ভালোবাসার দাম দিতে হয়। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও গোসল করে নিলো। কোনোরকমে রেডি হয়ে খাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসলো। করিডোর ধরে এগিয়ে আসলো। এই কেল্লা এমনভাবে নির্মিত হয়েছে এখানে আসলে মনে হয় হোটেলের মধ্যেই যেন আর একটি হোটেল৷ সেখানে ৪৭টি সুইট ও বিশাল বড় সব ঘর রয়েছে৷ সেই ভবনের নাম ‘রিট্রিট’৷ লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার আদর্শ জায়গা৷ ২০১৫ সালের জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের সময় সেটির উদ্বোধন হয়৷ এখানেই শীর্ষ নেতাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷তাঁরা এখানে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া বা সাঁতার কাটতে পারেন৷ ৪৭টি ঘরের ছোট হোটেলে তারা থাকতে পারেন৷ প্রত্যেকের জন্য পাঁচটি করে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে ৷ সঙ্গে আরও কিছু মানুষ থাকেন৷ তবে কর্মীরা সবাই মূল দুর্গে থাকেন৷ একটি ভবন প্রেসেডেন্টদের জন্য, অন্যটি কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট রাখা আদর্শ বন্দোবস্ত৷ শিল্পোন্নত দেশগুলির শীর্ষ নেতারা আবার এই হোটেলেই মিলিত হন৷ এখানে এলমাউ কাসেলের মতো সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব৷এই ফাইভ স্টার হোটেলের মূল ভবনে ১১৫টি ঘর ও সুইট রয়েছে৷ হোটেলটিকে ‘হাইডঅ্যাওয়ে’ বলা হয়৷ অর্থাৎ সেখানে ভিড় এড়িয়ে নিভৃতে সময কাটানো সহজ৷ দুদিন আগে দেশসেরা কয়েকজন ব্যবসায়ীর কন্যারা এখানে এসেছে ঘুরতে। যদিও ঘোরাঘুরি এটা বিশেষ কিছু না বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ডেটে এসেছে।তবে র্দুএক জন্য সিঙ্গেল এসেছে। জ্যাকিও একা আসেনি। প্রাণ প্রিয় বান্ধবী ক্যারণকে সঙ্গে এনেছিলো। মেয়েটা ভোররাত থেকে হঠাৎ উধাও। বিষয়টা নিয়ে ওর অতটা মাথাব্যথা নেই সমস্যা হচ্ছে এখানে আরও একটা দিন থাকতে হবে। একা থাকা ওর দিয়ে হবে না। নিঃসঙ্গ রাত ওকে ঝাপটে ধরবে। কখনও সেটা সম্ভব না। জ্যাকি বেরিয়েছে কাউকে পাওয়ার বাসনা নিয়ে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও হোটেলের বাইরে বেরিয়ে আসলো। সন্ধ্যা শেষ হয়ে সূর্য প্রায় নিভু নিভু অবস্থা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দুর্গম পর্বতমালার উপর থেকে মনে হচ্ছে সূর্যটা ঠিক হাতের মুঠোয় বন্ধি করা যাবে। জ্যাকি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ ওর নজর গেলো কিছুটা দূরে এক রমণীর দিকে। অদ্ভুত পোশাকে খোলা চুলে মেয়েটা দুহাত প্রশস্ত করে পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে এসে ঢেউর মতো চুলগুলো মৃদু মৃদু দুলছে। ফর্সা তর্কের সঙ্গে সবুজ পোশাক বেশ মানিয়েছে। তবে পোশাকটা ওর কেমন চেনা চেনা মনে হলো। জার্মানিতে বড় হওয়ার সুবাদে ওর বাঙালি কালচার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। কিন্তু পসরার সুবাদে এটা চিনতে ওর খুব বেশি একটা দেরী হলো না। মেয়েটা শাড়ি পরেছে লম্বা করে আচল ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। কানে ঝুমকা আর ওষ্ঠে গোলাপী রঙের লিপস্টিক। জুয়েলারি বলতে দুহাত ভর্তি স্বর্ণের চুড়ি আর গায়ে ভারি ভারি গহনা।নড়াচড়ার জন্য মাঝে মাঝেই রুমঝুম আওয়াজ আসছে। ও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য। জ্যাকি ঢোক গিললো। মনে হলো পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য ওর সামনে আছে। ও আর অপেক্ষা করলো না। হৃদয়ের ঝড় বৃদ্ধি করে কাজ নেই ভেবে চুপচাপ মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তাঁতে মেয়েটার কোনো হেলদোল হলো না। মনে হয়ে আগে থেকেই জানতো এটা হবে। জ্যাকির মনে হলো এটা পজেটিভ সাইন। এগোনো যাবে সমস্যা হবে না। যদি রাজিও না হয় তাতে ও কিছু আসবে যাবে না। কিভাবে রাজি করাতে হয় ওর জানা আছে। কথাটা ভেবে ও মৃদু কণ্ঠে বলল,
> হাউ সুইট.. দারুণ জায়গা তাইনা?
মেয়েটা উত্তর দিলো না। নির্বাক আর ভাবুক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যাকি ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। এইটুকু একটা মেয়ে ওকে ইগনোর করছে বিষয়টা মানতে পারছে না। তবুও মুখে হাসি ধঁরে রেখেই দ্বিতীয়বার মুখ খুঁললো,
> একাকিত্বের সঙ্গি হিসেবে আমি সঙ্গে দিতে রাজি আছি। কেউ ইচ্ছা করলেই এই চমৎকার স্থানে আমার মতো চমৎকার মানুষটাকে বন্ধু হিসেবে পেতে পারে। আমি কিন্তু হতাশ করবো না।

জ্যাকির খুব সুন্দরভাবে প্রস্তাব দিয়ে বসলো। উত্তর হিসেবে রিনরিনে মিষ্টি হাসির শব্দ ওর কানে বেজে উঠলো। ধারালো নেশাধরা সেই হাসির আওয়াজ। ওর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। শিরশিরে অনুভূতিরা দানা বাঁধলো ওর শরীর মন জুড়ে। ঢোক গিয়ে আড় চোখে তাঁকিয়ে দেখলো। কিছু বোঝার আগেই নির্জনতা কাটিয়ে মেয়েটা বলে উঠলো,
> আপনি সত্যি চমৎকার মানুষ। তবে আমাদের বয়সের তারতম্যটা একটু বেশিই নজরে আসছে তাইনা? যাইহোক এখানে কতদিনের জন্য এসেছেন?
মেয়েটার খাপছাড়া উত্তর শুনে জ্যাকি মুখটা গম্ভীর করে উত্তর দিলো,

> আধুনিকতার যুগে বসবাস করেও বয়স নিয়ে এমন চিন্তা? সামান্য একটা বিষয়। মনের মিলটাই হচ্ছে আসলো। তাছাড়া বন্ধুত্ব করতে গেলে বয়স কোনো ধাঁধা না। বললামতো একবার বিশ্বাস করো নিরাস হবে না। আচ্ছা ঠিক আছে এখানে যতটুকু সময় আছি এইটুকু সময় আমরা মন মতো ডেট করি তারপর ফিরে গেলে নিজেদের মতো থাকবো রাজি?
জ্যাকি বেশ চনচল হয়ে উঠেছে। বন্ধুত্ব না হতেই ডেটের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে। উত্তর হিসেবে মেয়েটা বলল,
> একেবারে ডেট? আপনি তো মশাই হাওয়ার গতিতে এগিয়ে চলেছে। বেশি হয়ে যাচ্ছে না? তাছাড়া আমি কিন্তু সিঙ্গেল নয় বিবাহিত।
মেয়েটার কথা শুনে জ্যাকি বিশ্বাস করতে পারলো না। এইটুকু মেয়ের বিয়ে কিভাবে সম্ভব? কথাটা ভেবে ও উত্তর দিলো,
> বিশ্বাস যোগ্য হচ্ছে না। যাইহোক সে আমার কি? আমি তো তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি না। জাষ্ট বন্ধুত্ব। তাছাড়া ডেট করার মধ্যে বিশেষ খারাপ কিছু দেখছি না। মন ভালো রাখার টনিক।

জ্যাকির কথা শুনে মেয়েটা এবার শব্দ করে হাসলো। তারপর ঘুরে তাঁকালো। সূর্য ডুবে গিয়ে চাঁদের কিরণ পড়তে শুরু করেছে ধরণীতে। মৃদু বাতাস বইছে সঙ্গে শীতের আমেজ তো আছেই। হাসির সঙ্গে মেয়েটার গোলাপ রাঙা পাতলা ঠোঁট ভেদ করে মুক্তার মতো দাঁত ঝিলিক দিচ্ছে। এতো তৃপ্তিকর হাসির কারণ কি জ্যাকির মাথায় আসলো না। হতবাক হয়ে দেখতে থাকলো। এই রমণীর আচরণ কেমন রহস্যময় লাগছে। হঠাৎ মেয়েটা হাসি থামিয়ে মুখটা কঠিন করে ফেলল। হাতের মুঠো শক্ত করে চোখ বন্ধ করে উচ্চারণ করলো,

> একটা ভুলের মাশুল মানুষ আজীবন বহন করে অথচ কিছু মানুষের জীবনটাই ভুলে ভরা ওদের সঙ্গে ঠিক কেমন আচরণ করা উচিত বলে আপনার মনে হয় মিস্টার জ্যাকি বেলহাম? ও সরি ভুল বললাম মিস্টার জ্যাকসন খান।

জ্যাকি চোখ বড়বড় করে ফেলল। এই মেয়েটা ওর নাম কিভাবে জানলো বুঝতে পারছে না। জ্যাকসন খান নামটার ব্যবহার ও অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে তবে হঠাৎ কিভাবে তা প্রকাশ পেলো? মনের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন ওর উঁকিঝুঁকি কাটছে। মেয়েটার পরিচয় জানা উচিত ছিল তানা করে এতোক্ষন বকবক করলো। তাই বিড়বিড় করে বলল,
> কে তুমি?
চারদিকে রিনরিনে আওয়াজে মুখোমুখি হয়ে উচ্চারিত হলো,
>আমি কহিনুর, সুলতান জুবায়ের ফারুকীর একমাত্র কন্যা সুলতানা কহিনুর ফারুকী। আপনার কনিষ্ঠ ভ্রাতার একমাত্র পুত্রবধূ আর বর্তমানে আপনার মৃ/ত্যু দূত। বিশ্বাস করুন একটুও কষ্ট হবে না। আপনার মতো নোং/রা লোকের হৃদপিণ্ডে নিজের নাম লেখানোর মতো নোং/রা কাজ আমি করবো না। শুধুমাত্র ধারা/লো খ/ঞ্জর দিয়ে ওটা টু/করো টু/করো করে দেখবো সেখানে কতখানি পাপ লুকিয়ে আছে।

কহিনুরের কথা শুনে জ্যাকি ঘাবড়ে গেলো তবে প্রকাশ করলো না। চোখের সামনে কহিনুর দাঁড়িয়ে আছে। যাকে পাওয়ার জন্য সবার এতো আয়োজন। যার মধ্যে লুকায়িত আছে মূল্যবান রত্ন। এর মালিক হওয়ার মানে সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার শক্তি। ক্ষণিকের মধ্যেই লোভে ওর চোখ দুটো চকটক করে উঠলো। ভেবেছিলো পসরাকে টোপ দিয়ে সুলতান ভিলাতে ঢুকবে তারপর কহিনুরকে হয/ত্যা করবে কিন্তু তার আগেই শিকারি হাতের নাগালে বন্ধি। কথাটা ভেবেও বাঁকা হেসে বলল,
> বাহ দারুণ হবে।তেজ আছে দেখছি। শ/ত্রু যতটা শক্তিশালী হবে ক/ষ্ট দিতে তো ততটাই মজা হবে। শুনো আমাদের কাছে ওসব জাত ধর্ম সম্পর্কের কোনো মানে নেই। খান পরিবার শুধুমাত্র কালো জাদুর সামনে মাথা নত করে।। তোমার কি মনে হয় আমি তোমার মতো অতি সাধারণ ক্ষুদ্র একটা মানুষ? একজন শক্তিশালী অর্ধমানবের যম/দূত তোমার মতো মেয়ে ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে।

জ্যাকি শব্দ করে খাক খাক আওয়াজ করে তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসলো। ঘৃণাই শরীর জ্বলে উঠলো কহিনুরের। এতোক্ষন সবটা সহ্য করেছে খুব কষ্ট করে এখন আর পালো না। হাতের মুঠোয় রাখা খঞ্জর/টা চকচক করছে সেটা ঘুরিয়ে নিয়ে লোকটার পেট বরাবর লা/থি বসিয়ে দিলো। হাই হিলের আঘাতে লোকটা পিটিয়ে গেলো। তবে দমলো না। একদম সোজা থাকলো। হাসি থেমে গিয়েছিলো সেটা আবারও ফিরে আসলো। কহিনুরের মেজাজ চরম থেকে চরম খারাপের দিকে যাচ্ছে। কতটা ভ/য়ঙ্কর মৃ/ত্যু ওই লোকটাকে দিলে মনে শান্তি ফিরবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। সকাল সকাল সাঈদকে পাঠিয়ে নতুন একটা তথ্যের সন্ধান পেয়ে পাথরকে না বলে সাঈদকে নিয়ে ও বেরিয়ে এসেছে। মাকে বলেছে ওদিকটা সামলাতে। পাথর ওর জন্য পাগল হয়ে উঠেছে সেটা ওর জানা আছে। কিছু করার নেই। কথাটা ভেবে ও উত্তর দিলো,
>সম্মান দিতে আর পারছি না।অন্তরিকভাবে দুঃখিত।মৃ/ত্যুর আগে যতটুকু পারিস প্রলাপ বকার বকে নে। তোর মৃ/ত্যু তো আজ আমার হাতেই হবে। আসলে আমার প্রিয় একজন রিকুয়েস্ট করেছে তোর মৃ/ত্যু টা ও নিজ চোখে দেখবে। তাই অপেক্ষা করেছি।

কহিনুরের কথা শেষ হলো না সাঈদ এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
> জনাব সবটা জেনে গেছেন উনি চলে এসেছেন। কি হবে এখন? আটকাতে পারিনি।
কহিনুর চোখ বন্ধ করে ফেলল। এই সাঈদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে এতোটা ড্রামা করতে হলো। নয়তো এতোক্ষনে কাজ শেষ হয়ে যেতো। ঠিক তখনই পাথর এসে থামলো কহিনুরের সামনে। জ্যাকি কিটকিট শব্দ হেসে গড়িয়ে পড়লো। পাথর কিছু বলার আগেই ও বলল,
> পাথর আমার রক্ত।ও আমার সঙ্গে বে/ইমানি করবে না। কিন্তু এখন তোর কি হবে এটাই ভাবছি আমি।
জ্যাকির কথা শুনে পাথর বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাঁকালো। এই ভদ্রলোকের পরিচয় ওর জানা নেই। বলল,
> কে আপনি?
> তুমি আমার ভ্রাতার পুত্র। তোমার চাচাকে ও হ/ত্যা করতে চাইছে? আটকানোর চেষ্টা করো।

পাথর চমকালো। চাচা হয় এই লোকটা ঠিক মাথায় ঢুকলো না। ওদের কথার মধ্যেই কহিনুর শাড়ির আচলখানি কিছুটা উচু করে পাথরের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
> আমাকে দেখুন একবার আপনার মনে হয় আমি কাউকে হ /ত্যা করতে পারি?
পাথর কহিনুরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থমকে গেলো। কি চমৎকার লাগছে মেয়েটাকে। শাড়িতে এই প্রথমবার নূরকে দেখে চোখ ফেরাতে পারলো না। বুকের মধ্যে ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে। পাথর নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ওর অবস্থা দেখে কহিনুর হাসলো। ঠিক তখনই জ্যাকি কহিনুরের দিকে আ/ক্রমণ করে বসলো। কহিনুর ধরে ফেলল খঞ্জ/রটা। তারপর আস্তে করে পাথরকে সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতে থাকা খঞ্জ/রটা জ্যাকির বুক বরারব বসিয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
> ওকে বশে আনতে আমার দুমিনিটও লাগে না। দুই মেয়েকে দিয়ে যেই খেঁলাটা তুই শুরু করেছিস তোকে হ /ত্যার মধ্য দিয়ে আমি সেই খেলাটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। তোর ইতিহাস আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে।

কহিনুর জ্যাকিকে দ্বিতীয়বার আর সুযোগ দিলো না। হিং /স্র হয়ে থাবা বসিয়ে দিল। শক্তি প্রয়োগ করে হাতের নখের সাহায্যে সত্যি সত্যি ওর বুক চিরে বের করে আনলো হৃদ /পিণ্ড। ফিনকি দিয়ে র/ক্ত গড়িয়ে পড়লো চার‍দিকে। লোকটা ওর হাতের মুঠোয় ছটফট ছটফট করছে। মুখটা কালো হয়ে উঠেছে। কহিনুর পাশ ফিরে সাঈদকে ইশারা করতেই ও গুড়া ছাই টাইপের কিছু জ্যাকির দিকে ছুড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে পাথরের বশ কেটে গেলো। এতোক্ষন ও সবটা দেখছিলো কিন্তু নড়াচড়া করতে পারেনি। কহিনুর ওর হাতের থাবায় লাফাতে থাকা হৃদপিণ্ডটার দিকে বাঁকা হেসে জ্যাকির শরীরটা ধা/ক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।কহিনুরের হাত থেকে ফোঁটা ফোটা র/ক্ত মাটিতে গিয়ে পড়ছে। মৃ/ত্যু য/ন্ত্রণায় জ্যাকির শরীর মাটিতে ছটফট করছে। কহিনুর সোজা গিয়ে ওর মাথায় কাছে বসে পড়লো। পৈশাচিক হেসে খঞ্জরটা হৃদপিণ্ড বরাবর টান দিয়ে বলে উঠলো,
> বলেছিলাম না আমি তোর মৃ/ত্যু দূত?সুলতানা কহিনুর ফারুকী কখনও কথার খেলাপ করেনা। মৃ/ত্যুর আগে দেখে যা আমি তোমার সঙ্গে ঠিক কি কি করলাম আর করবো। আর হ্যাঁ তোর তুরুপের তাস তোর মেয়েরা আমার দাবার গুটি। বিশ্বাস কর তোর চাইতে ওদের অধিক য /ন্ত্রণা দিয়ে মা/রবো।

কহিনুর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ওর অবয়ব নিয়ে এই নরপিশাচ খেঁলা করেছে নিজের মেয়েকে কাজে লাগিয়ে। আর ঐশ্বর্য,সে কিভাবে পারলো নিজের অমানুষ বাবার কথা শুনে জুবায়েরকে ঠকাতে? সত্যি কালো শক্তির এই নরপ/শুদের কোন ধর্ম নেই। হঠাৎ ডান গালে থা/প্পড় খেয়ে কহিনুর থমকে গেলো। পাথর রাগে ফুলছে। তবে দ্বিতীয়বাদ আর সুযোগ পেলো না। প্রতিবার খু /নের পরে ও অচেতন হয়ে পড়ে। এবারও তাই হলো। ঢলে পড়লো মাটিতে। পাথর হতভম্ব হয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো। একদিকে মৃ/ত চাচার শরীর পড়ে আছে অন্যদিকে চাচার খু/নী নিজের প্রিয় স্ত্রী লুটিয়ে আছে। কার কাছে যাওয়া উচিৎ ভেবে চোখ বন্ধ করলো। তারপর সাঈদকে ইশারা করলো লা/শের ব্যবস্থা করতে। সাঈদ হয়তো এতোক্ষন এই হুকুমের আশায় করছিলো তাই আদেশ পাওয়া মাত্র হাতের মুঠোয় থাকা গুড়ো গুলো ছিটিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে সব অদৃশ্য হয়ে গেলো। পাথর আর অপেক্ষা করলো না। কহিনুরকে তুলে নিয়ে সুলতান ভিলার দিকে পা বাড়ালো। সাঈদ ওর পিছু নিলো।
*************
থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে সুলতান ভিলাতে। হঠাৎ আজ সব কিছুই কেমন গম্ভীর লাগছে। ঐশ্বর্য নিজের কক্ষে দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছে। জুবায়ের আর অধরা উতলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদি ডাইনিং রুমের সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে ফোন টিপছে। ঐশ্বর্যের নেকামী ওর পছন্দ না। জুবায়ের চিন্তা করছে ভাবছে মেয়েটার কি বেশিই শরীর খারাপ করছে কে জানে। পসরা ফারুকী অনবরত নিজের বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু বন্ধ বলছে। কহিনুর নিজের কক্ষে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও পিটপিট করে তাঁকালো। নড়াচড়া করে উঠতে গিয়ে মাথা ভার হয়ে আসলো। সাঈদ উদ্গ্রীব হয়ে আছে। কিন্তু পাথরের চোখে ক/ঠোরতা বিরাজ করছে। নিজের চোখের সামনে খু/ন হতে দেখেছে তাও নিজের চাচাকে বিষয়টা মানতে পারছে না। কহিনুর কিভাবে পারলে এতোটা নিষ্ঠুর হতে। কহিনুর উঠে বসতেই পাথর ওর দুবাহু নাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> কেনো করলে এমনটা? তোমার এই দুটো কোমল হাতদুটো কিভাবে পারলো এমন হিং/স্র হয়ে কারো প্রা/ণ নিতে? যখনই তোমার কাছে আসবো তখনই ওই ববর্র জঘন্য দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসবে। আমিতো ছিলাম নূর একটু ভরসা করতে পারলে না?
কহিনুর ওর কথায় মৃদু হাসলো। পাথরের মুখটা নিজের দুহাতের তালুতে নিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
> শুনতে পাচ্ছেন ওর চিৎকার? আরও শুনতে পাবেন। আপনি চাননি যে আমার অবয়ব নিয়ে খেলা করছে তাঁর শাস্তি হোক?
পাথর ভ্রু কুচকে ফেলল। হাতের মুঠো শক্ত করে বলল,
> নাম বলো একবার। পৃথিবীতে নিশ্বাস ফেলার দ্বিতীয় সুযোগ আমি দিবো না।
পাথরের উত্তর শুনে কহিনুর চোখ বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল,
> ঐশ্বর্য আর তফসিল আপন দুইবোন আর এদের পিতা হচ্ছে জ্যাকসন খান। ওরা আপনার র‍/ক্ত। আপনার দাদুর উপরে এরা টেক্কা দিয়ে এই বাড়ির বৃদ্ধ দাদুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ফলস্বরূপ আমার অবয়ব নিয়ে আঁধারের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে ঐশ্বর্য। খান পরিবার এখনো অভিশপ্ত তাই ঐশ্বর্যও সেই হিসেবে অভিশপ্ত। আঁধার ভেবেছে ওটা আমি ছিলাম। একদিকে খান সাহেবের ধ্বং স আর উনার সব কিছু হাতের মুঠোয় পাওয়া অন্যদিকে চন্দ্রের শরী/র প্রাপ্তি তার সঙ্গে কহিনুর লাভ। এখানে তিনজনের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। তবে অগোচরে সবাই সবার শত্রু। ষড়যন্ত্রে সবাই লিপ্ত। বুঝতে পেরেছেন?

পাথর সবটা বুঝলো কি বুঝলো না জানা নেই তবে ওর মেজাজ হঠাৎ করেই ঐশ্বর্যের উপরে খারাপ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে উপরে গিয়ে ঘাড় মটকে দিয়ে আসতে। কতবড় সা হস কহিনুরের রূপ নিয়ে আঁধারের সঙ্গে বাইরে ডেটে গিয়েছিলো। ভাবলেই শরীর জ্বলে উঠেছে। তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ভাবলো, ঐশ্বর্যের মায়ের পরিচয় কি? উনি কিভাবে সুলতান পরিবারে এসে লুকিয়ে ছিলেন? এদের কাহিনী কি?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here