#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_১৩
.
.
.
ভোর ছয়টায় ফোনের কর্কষ শব্দে বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় মেঘ৷ ফোনের স্কিনে সিনিয়র স্যার তারেক শেখের নাম্বার দেখে মেঘের চোখের সব ঘুম উধাও হয়ে যায়৷ মেঘ দ্রুত কল রিসিভ করতে ফোনের ওপাশ থেকে তারেক শেখ বলে ওঠে ,
-” আদঘন্টার মধ্যে তোমাকে অফিসে দেখতে চাই মেঘ৷”
মেঘ দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ছয়টা বাজে৷ মেঘ টাইম দেখে চোখ বন্ধ করে তারেক শেখ কে বলে,
” আ’ম কামিং স্যার ৷”
মেঘ দ্রুত ফোনটা বেডে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷ একে বারে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ফর্মাল ড্রেস পড়ে ৷ ফোন ওয়ালেট রুমাল ঘড়ি সব শেষে রিভালবার টা নিয়ে মেঘ বেড়িয়ে পড়ে৷
২৯.
ফারহা পুরো রাত জেগে ম্যাপ দেখে নিজের মতো প্লান বানিয়ে নিয়ে রাফিকে ফোন করে৷ রাফি ঘুম ঘুম চোখে ফোন নাম্বার না দেখে হ্যালো বলতে ফোনের ওপাশ থেকে ফারহা বলে ওঠে ,
-” রাফি আই নিড ইউর হেল্প এন্ড রাইট নাও৷”
রাফি ঘুমের ঘোরে মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে পৌছাতে রাফির ঘুম উঠে বসে বলে,” কে ফারহা দি নাকি ফারিহা দি?”
” তোর ফারহা দি ৷ এখন দ্রুত ফ্রেস হয়ে খান মন্জিলে চলে আয় ৷”
রাফি ফারহার কথায় উল্টো কোন প্রশ্ন না করে বলে, ” আমি এখুনি আসছি দি৷ ”
ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে ৷ এক ব্যাগে ম্যাপ আর কিছু যন্ত্র নিয়ে , নিজেও তৈরি হয়ে নেয় কারণ হাতে সময় খুব কম আর এই কম সময়ে তাকে বোম গুলো নিষ্ক্রিয় করতে হবে৷
ফারহা জিন্স আর লং শার্ট পরে , লম্বা চুল গুলো উচু করে খোপা করে নেয়৷ ফারহা কাপবোর্ড থেকে দুইটা ব্লাক লং হুডি ওয়ালা জ্যাকেট বের করে ব্যাগে ভরে নিয়ে নিচে এসে দেখে রাফি দৌড়ে আসছে৷ আচমকা রাফিকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে ফারহা হতভম্ব হয়ে যায়৷ রাফি ফারহার সামনে দাড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
” দি আমি বেশি দেরি করে ফেলেনি তো?”
” না বেশি দেরি করে ফেলিস নি৷ এখন আমাকে ফলো কর রাফি৷”
” ওকে দি৷”
রাফি ফারহার পেছন পেছন যেতে লাগলো৷ ফারহা রাফি খানমন্জিলের পেছনের গেট দিয়ে বের হতে রাফি দেখে আদিল অলরেডি গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ ফারহা দ্রুত গাড়িতে বসে রাফিকে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে ৷ রাফি ব্যাকসিটে বসতে আদিল গাড়ি স্টাট দিয়ে দ্রুত বেগে চালাতে লাগলো৷
ফারহা গাড়িতে বসে ব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট বের করে রাফির দিকে এগিয়ে দেয়৷ আর অন্যটা নিজে পড়ে নিলো৷
” দি আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
” যেখানে যাচ্ছি না কেন রাফি ৷ নিজেকে তৈরি করে নে আজ তোকে অনেক বড় কাজ করতে হবে৷”
” দি আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না৷ আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর নিজেকে তৈরি করার কথা বা আসছে কেন?”
আদিল রাফির বোকা বোকা কথা শুনে বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলে, ” রাফি যাচ্ছিস তো আর গেলে তো দেখতে পাবি৷ তাহলে এতো প্রশ্ন কেন করছিস হাহ্!”
” সরি ভাইয়া৷ ”
আদিলের গাড়ি স্মৃতিসৌধের সামনে থামতে ফারহা মাথায় হুডি ফেলে চোখে ব্লাক সানগ্লাস আর মুখে মাক্স পড়ে নিয়ে ব্যাগ হাতে বের হয়৷ রাফি ও ফারহার মতো সেজে বের হতে ফারহা আদিলকে বলে,” পিচ্চি এখান থেকে এয়ারপোর্টে চলে যাবি ৷ আমি তোকে একটা ছবি সেন্ড করেছি ৷ ছবির মেয়েটাকে তোকে রিসিভ করে তোর ফ্লাটে নিয়ে যাবি৷ ”
” ওকে বাট আপু গাড়িটা রেখে যাই?”
” একদম না ৷ তুই গাড়ি নিয়ে চলে যা আমাদের জন্য গাড়ি অলরেডি এখানে পৌছে গেছে ৷ ওই দিকে তাকিয়ে দেখ৷”
আদিল রাফি দুজনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখে একটা বেশ দামী গাড়ি সাইড করে রাখা ৷
” ওকে দি আমি তাহলে এয়ারপোর্টে চলে যাচ্ছি কিন্তু দি একটা প্রশ্ন ছিলো৷”
” পিচ্চি এখন আর কোন প্রশ্ন নয় ৷ তোকে এখুনি বের হতে হবে ৷”
আদিল ফারহাকে প্রশ্নটা করতে না পেরে হতাশ হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়৷ খুব ভোর হওয়ায় লোকজনে আনাগোনা কম হলেও খুব একটা কম নয়৷ ফারহা ম্যাপ বের করে এক্সজেক্ট বোম লুকিয়ে রাখার জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হয়৷ রাফি বোম দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো৷ তা দেখে ফারহা রাফিকে বলে ওঠে ,” ছোটু এই বোমের লাল রঙের তার টা ঝটপট কেটে ফেল৷”
রাফি ভয়ার্ত চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে বলে,” দি আ,,আমি তা,,তার কাটবো?”
” ছোটু সময় নষ্ট করা আমার একদমি পছন্দ না দ্রুত কাজটা করে ফেল৷ আমাদের আরো অনেক জায়গায় যেতে হবে৷”
ফারহার ধমক শুনে রাফি ফারহার হাত থেকে প্লাস বোমের দিকে এগিয়ে গেল৷
____________
” স্যার আসতে পারি?”
” এসো মেঘ আমি তোমার জন্যই এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম৷ ”
মেঘ চেয়ারে বসতে বসতে সিনিয়র অফিসার তারেক শেখকে বলে,” স্যার এতো সকালে জরুরী তলব?”
” তোমাকে তো আমি আগেই জানিয়েছিলাম শহরে টেরোরিস্ট দল ঢুকেছে৷ তারা শহর টা শেষ করার জন্য শক্তিশালী বোমা ইউজ করবে যার ফলে পুরো শহর মৃত্যুপুরীতে রূপান্তর হতে খুব একটা সময় নেবে বলে আমার মনে হয় না৷”
” কিন্তু স্যার শহরে এমন টাইড সিকিউরিটি থাকতে এরা এই কাজ গুলো করার সাহস কি করে পাবে?”
” মেঘ সাহস কি করে পাবে সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করার সময় এখন না ৷ অলরেডি অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে৷ আমার কাছে খবর আছে শহরে জনবহুল প্লেসে বোম সেট করে দিয়েছে টেরোরিস্ট ৷ এখন তোমাকে যা করার করতে হবে মেঘ৷ এই পুরো শহরটা বাঁচানোর দায়িত্ব এখন তোমার মেঘ৷”
মেঘ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে উঠলো ,” স্যার অলরেডি সাতটা বেজে গেছে ৷ আমাদের হাতে সময় নেই৷ আমাদের এখুনি বের হতে হবে৷ ”
” মেঘ আমি তোমার সাথে দুটো টিম দিচ্ছি যারা বোম গুলো নিষ্ক্রিয় করবে৷ ”
” ওকে স্যার৷”
মেঘ যেতে নিলে তারেক শেখ মেঘকে ডেকে বলে,” মেঘ তোমার ফোনে আমি একটা ছবি সেন্ড করেছি৷ ওটা এই শহরের ম্যাপ ৷ কোথায় কোথায় বোম সেট করা হয়েছে সেটা তুমি ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবে৷ আর আশা করবো এতেই তোমার কাজটা একটু হলেও সহজ হয়েছে?”
” ইয়েস স্যার ৷ কাজটা সত্যি আরো সহজ হয়ে গেল৷”
“বেস্ট অফ লাক মেঘ৷”
” থাঙ্ক ইউ স্যার৷”
মেঘ কেভিন থেকে বের হতে ৷ দুটো টিমে চারজন চারজন করে টোটাল আটজন কে নিয়ে মেঘ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে৷
৩০.
ফারহা রাফিকে নিয়ে প্রায় পনেরোটার মতো বোম নিষ্ক্রিয় করে৷ রাফি প্রথম প্রথম ভয় পেলেও তারপর আর ভয় পায় না৷ সি সি ক্যামেরার নিজেদের মুখ লুকিয়ে কাজ গুলো করে ফারহা রাফি বেড়িয়ে যায়৷
অন্যদিকে মেঘ তার টিম নিয়ে দশটা বোম নিষ্ক্রিয় করে আর বাকি বোম গুলো নিষ্ক্রিয় করতে এসে দেখে অলরেডি বোম গুলোর আসল তার গুলো কেউ কেটে দিয়েছে৷ দুপুর বারটার আগে মেঘ তার টিম ফারহা রাফি বোম গুলো নিষ্ক্রিয় করে পুরো শহরটাকে সেভ করে ফেলে৷
কাজ শেষ হতে মেঘের মনে কেন যেন সন্ধেহের দানা উকি মারে, মেঘ সন্ধেহের বসে বড় বড় শপিংমলের সি সি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চায় ৷ কিছুক্ষণ পর মেঘ ফুটেজে দেখতে পায় দুজন ব্যক্তি হুডিয়ালা জ্যাকেট পড়া সাথে চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাক্স পড়া বিধায় কারোর ফেস দেখা যায় নি৷ মেঘ স্পষ্ট দেখতে পেলো ব্যক্তি দুজন খুব সর্তকতার সাথে বোমের তার কেটে দিয়ে বোম নিষ্ক্রিয় করে দিলো৷ তবে এই মুখোশের আড়ালের থাকা ব্যক্তির সন্ধান মেঘ করতে পারলো না৷
____________________________
রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আদিল তনুকে নিয়ে তার ফ্লাটে চলে আসে৷ আদিল গাড়ি পার্ক করার সময় তনুকে বলে ওঠে ,” তনুপু তুমি একদম আমার আপুর মতো ৷ তোমাদের স্বভাব খানিকটা এক রকম ৷”
” বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা আদিল ৷ এক তো হতেই হতো তাই না?”
” হুম ঠিক তাই৷ আচ্ছা চলো সিক্স ফ্লোরে৷ ওখানে ৬০৭ নম্বর ফ্লাটে৷ ”
আদিল তনুকে নিয়ে লিফ্টি উঠে সিক্স ফ্লোরে এসে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে ফারিহার চিৎকার শুনতে পেল আদিল তনু৷ আদিল বিরক্তি নিয়ে তনুকে বলে,” দেখো তনুপু ফারিহা আপু কিভাবে চিৎকার করছে৷ কানের তালা ফাটিয়ে ছাড়বে এবার৷”
” দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে দেও আদিল ৷ তাহলে আর ফারিহার চিৎকার বাইরে পৌছাবে না৷”
” হুম ঠিক বলেছো তনুপু৷ আমি এখুনি দরজা ভালো করে লক করে দিচ্ছি৷”
আদিল দরজা লক করে তনুকে তার রুম দেখিয়ে দিয়ে আদিল তার রুমে ফ্রেস হতে চলে যায়৷
তনু রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ফারিহাকে যে রুমে বেধে রাখা হয়েছে সে রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে ফারিহা পাগলের মতো করছে ৷ গতকাল রাতে নেশা করা বা ড্রাকস কোনটাই নিতে না পারায় ফারিহার চোখে মুখে কেমন যেন হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে৷
ফারিহার চোখ জোড়া হঠাৎ তনুর উপর পড়তে ফারিহা চমকে ওঠে বলে,” ত,,তনু তুই?”
” ইয়েস বেইব আমি , তো কেমন আছিস বল? ভালো লাগছে তো এখানে থাকতে?”
” ইউ বিচ , তুই আমাকে কিডন্যাপ করেছিস? এই মারুকে?”
” ওহ বেইব চিল ৷ আমি কেন তোকে কিডন্যাপ করতে যাবো হু? আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না?”
” তাহলে কে আমাকে এখানে বন্দি করেছে? কার এতো বড় বুকের কলিজা?”
তনু ফারিহার দিকে এগিয়ে গিয়ে স্বজোড়ে থাপ্পর মারে৷ ঠোঁটের কোন কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় ফারিহার, ফর্সা গালে থাপ্পরের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট ৷ ফারিহা আগুন চোখে তনুর দিকে তাকাতে তনুর ফারিহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি নিয়ে ফারিহাকে বলে,” মারু তুই কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস তা তুই নিজেও জানিস না৷ ”
ফারিহা তনুর দিকে তাকিয়ে বলে ক্রুর হাসি দিয়ে বলে,” কিং ফায়ার তোকে ছাড়বে না তনু৷ তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি কিং ফায়ারের বা হাত ৷ ”
” রেইলি! ওহ মাই গড আমি তো ভয়ে মরেই যাবো ফারিহা ৷ প্লিজ সেভ মি ফারিহা সেভ মি৷” বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তনু৷
” তনু আমি জানি না তুই কেন আমাকে এখানে আটকে রেখেছিস? কিন্তু যে কারণে হোক আমি যে কিং ফায়ারের কাজটা করতে পেরেছি এটাই বড় কথা ৷ দুপুর বারটা থেকে শহরে ধামাকা হবে তনু ৷”
” ওয়াও রেইলি তাহলে এখন কয়টা বাজে দেখেছিস ফারিহা?” তনু তার ফোনটা ফারিহার মুখের সামনে ধরতে দেখে বারটা পনেরো বেজে গেছে অথচ কোন হইচই শব্দ কিচ্ছু হচ্ছে না৷
ফারিহা হতবিহ্বল হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,” এটা কি করে সম্ভব?”
তনু ফারিহার চুলের মুঠি ধরে কর্কশ গলায় বলে উঠলো ,” কি করে সম্ভব? জানতে চাস? তাহলে শোন তোর আর তোর কিং ফায়ারের প্লানটা পুরো ফ্লপ কে করেছে ?”
” কে কে করেছে বল তনু কে করেছে?”
” আমি করেছি ৷” রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো ফারহা৷ ফারিহা ফারহাকে দেখে অবাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহার দিকে, ফারিহা এখন বিশ্বাস করতে পারছে না ফারহা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে৷
” কি হলো ফারিহা ওপস সরি মারু , বল কি বলবি আমাকে?”
ফারহা ফারিহার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে৷
” এটা তুই কেন করলি ফারহা৷” গলায় তেজ নিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো ফারিহা৷
ফারহা পায়ের উপর পা তুলে ফারিহার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” তোর কি মনে হয় ফারিহা আমি এমনটা কেন করলাম?”
” কারণ তুই এই শহরটাকে বাঁচাতে চাস৷” দাঁতে দাঁত চেপে উওর দিলো ফারিহা৷ ফারিহার উওর শুনে ফারহার ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো ৷
অন্যদিকে পুরো হোটেল রুম ভেঙে তসনস করে ফেললো কিং ফায়ার ৷ প্রচন্ড রাগে ওয়াইনের বোতল ছুড়ে মারে হ্যারির দিকে তখনি…..
.
.
.
#চলবে………..