#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_০৩
.
.
.
ফারহা খালি ইনজেকশন আর নেশা করার সামগ্রী গুলো সরিয়ে ফেলে ফারিহাকে বেডে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই চমকে ওঠে ফারহা৷
” পিচ্চি তুই এখানে?”
” কেন আসতে পারি না বুঝি?”
ফারহার দরজা লক করে সিঙ্গেল সোফায় পায়ের উপর পা রেখে আদিলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” কেন এসেছিস? ”
” আপু আমি তোমাকে একটা কথা জানাতে এসেছি ৷ জানি না কথাটা তোমার জন্য ইম্পটেন্ট কি না! তবে আমি যেহেতু জেনেছি সেহেতু তোমাকে জানানো আমার কর্তব্য ৷”
ফারহা তার ব্রু-যুগল কুচকে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ” কি বলতে চাইছিস তুই?”
” আপু মেঘ ভাইয়া কোন সাধারণ লোক নয়৷ মেঘ ভাইয়া একজন …..” আদিল তার কথা সম্পূর্ন করার পূর্বে আদিলের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ আদিল ফারহার দিকে তাকাতে ফারহা ইশারা করে কল রিসিভ করতে৷ আদিল কল রিসিভ করে ৷
” হ্যালো ভাইয়া তুই কোথায়?”
” কি হয়েছে? এতো রাতে আমাকে কেন কল করেছিস?”
” ভাইয়া আ,, আমি আসলে মুম্বাই যেতে চাইছি৷”
” হঠাৎ মুম্বাই কেন যেতে হবে তোকে? ”
” মিস্টার রায় যেতে বলেছে মুম্বাই ৷ ওখানে নাকি আমাদের কোম্পানির আর একটা ব্রাঞ্চ …” বাকিটা বলার আগে আদিল বলে ওঠে ,” না রাফি মুম্বাইতে কোন ব্রাঞ্চ খোলার প্রয়োজন নেই৷ আর মিস্টার রায়ের সাথে আমি কোন বিজনেস করবো না ৷ এটা তুই ওনাকে ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিস৷ আমি এখন ব্যস্ত আছি রাখছি৷ ”
আদিল রাফির কোন কথা না শুনে কল ডিসকানেক্ট করে ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে ফারহার দিকে তাকাতে দেখে ফারহা নেই ৷ আদিল আপু আপু বলে দুবার ডেকে ফারহার কোন সারা শব্দ না পেয়ে আদিল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷
আদিল চলে যেতে ফারহা নিঃশব্দে ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে আদিলকে দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারে আদিল চলে গেছে৷ ফারহা ভেজা তোয়ালে ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য কফি বানিয়ে রুমে এসে কাপবোর্ড থেকে ট্যাব বের করে ৷
(০৭)
মাথা নিচু করে মেঘের সামনে দাড়িয়ে আছে আসলাম ৷ মেঘের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ৷ মেঘের কেভিন থেকে ইম্পটেন্ট ফাইল হাড়িয়ে যাওয়াটা কোন সাধারণ বিষয় নয়৷ পুরো অফিসে সি সি ক্যামেরা ধারা আবৃত কিন্তু সে ক্যামেরায় নিজেকে আড়াল করে ফাইল টা চুরি করা এটা কোন প্রফেশনাল লোকের কাজ এটা মেঘের বুঝতে দেরি নেই৷
মেঘ দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে তাকিয়ে আসলামকে প্রশ্ন করে,” ফাইলটা কার ডিটেইলস ছিলো আসলাম?”
” ম্যামদের পুরো ডিটেইলস ছিলো স্যার, তবে!”
” তবে কি আসলাম?”
” স্যার আমি পুরো ডিটেইলস কালেক্ট করতে পারেনি৷ পুরো ডিটেইলস কালেক্ট করতে হলে আমাকে লন্ডনে যেতে হবে৷ ”
মেঘ রেগে হাতের গ্লোকটা ছুড়ে মেরে আসলামকে বলে, ” আগে খোজ নেও কার এতো বড় বুকের কলিজা যে আমার কেভিনে ঢুকে ফাইল চুরি করে? তাকে আমার সামনে দেখতে চাই আসলাম ৷ তার কলিজা টা আমি একটু মেপে দেখবো ৷ মেঘ চৌধুরীর সাথে লাগতে আসে তাকে তো মাকে দেখতেই হবে৷”
” জ্বি স্যার কিন্তু লোকটা কোন ক্লু রেখে যায়নি ৷ স্যার ভাবনার বিষয় হলো বাইরে যে চারটা কুকুর থাকতো সবসময় সে চারটা কুকুরকে নৃশংস ভাবে কেউ ছুড়ি দিয়ে মেরে দিয়েছে৷”
আসলামের কথা শুনে মেঘ চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, মেঘের চোখের সামনে সব কিছু কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে৷ তার প্লান গুলো কে যেন ভেস্তে দিচ্ছে বারংবার৷ মেঘের ভাবনার মাঝে কেউ দরজায় নক করে৷
” মে আই কামিং স্যার?”
মিষ্টি গলা শুনে মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলে, ” ইয়েস মিস নাবিলা ৷”
মিস নাবিলা মেঘের সিনিয়র বস হলেও মিস নাবিলা মেঘের সামনে এমন ভাব করে যেন মেঘ মিস নাবিলার সিনিয়র আর সে তার জুনিয়র৷
মেঘ আসলামকে যেতে ইশারা করতে আসলাম কেভিন থেকে বের হয়ে যায়৷ মিস নাবিলা ভেতর থেকে দরজা করে দিয়ে হুট করে মেঘের কোলে বসে পড়ে মেঘের গালে চুমু খেয়ে বলে, ” মিস্টার হ্যান্ডসাম আর কতো অপেক্ষা করাবে আমাকে? এবার আমায় বিয়েটা করে নেও না ৷”
” হুম বিয়ে তো আমি করবো তবে আমার ফারুপাখিকে মিস নাবিলা৷”
ফারুপাখি নামটা শুনে তৎক্ষনাৎ মেঘের কোল থেকে উঠে মেঘের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে,” কে এই ফারুপাখি মেঘ ? যার জন্য তুমি আমাকে বার বার রিজেক্ট করছো?”
” কে ফারুপাখি ? ফারুপাখি আমার হৃদস্পন্দন , আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটা কম্পন সে, আমার প্রথম এবং শেষ অনুভূতি , আমার জীবনের একচিলতে রোদ্দুর , আবছা ধূসর প্রেমের অনুভূতি আমার ফারুপাখি ৷ ”
মিস নাবিলা মেঘের মুখের এতো সুন্দর করে সাবলীল ভাষায় নিজের মনের অনুভুতি গুলো বলতে শুনে, নাবিলার যেন পুরো শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে ৷ মেঘের মনে অন্য কেউ আছে এটা যেন নাবিলা মেনে নিতে পারছে না৷
” মেঘ ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র অফিসার ৷ তুমি এভাবে আমাকে রিজেক্ট করতে পারো না মেঘ৷ ইউ নো না আমি চাইলে তোমার জবটা কেড়ে নিতে পারি?”
নাবিলার কথা শুনে মেঘ তার ঠোঁটের কোনে সেই মারাত্মক সু্ন্দর হাসিটা ফুটিয়ে তুলে নাবিলার উদ্দেশ্য বলে, ” মিস নাবিলা আপনি আমাকে মিসআন্ডারস্টান্ডিং করছেন ৷ আপনি হয়তো এখনো আমাকে চিনতে পারেন নি? আর হ্যাঁ আপনি চাইলে আপনার মতো চেষ্টা করতে পারেন আমার জবটা কেড়ে নেওয়ার বাট ট্রাস্ট মি এতে আপনার বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয়না ৷ ”
মিস নাবিলা ফোঁস ফোঁস করতে করতে মেঘের টেবিলের উপর ফাইলটা রেখে কেভিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷
মেঘ মিস নাবিলার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে , ” সিলি গার্ল ৷ এই মেয়ে এসেছে মেঘ চৌধুরীকে বিয়ে করতে হাহ্! এই মেঘ চৌধুরীর যা চাই তা যে কোন মূল্যে ছিনিয়ে নিতে জানে…”
আসলাম কেভিনে ঢুকে মেঘকে বলে, ” স্যার রাত চারটা বাজে আপনি চৌধুরী ম্যানশনে ফিরবেন না? ”
” ফিরবো গাড়ি বের করো আসলাম ৷ আর শোন তুমি আজ আমার সাথে থাকবে৷”
” ওকে স্যার”
.
.
.
ভোর চারটায় খান মন্জিলের গার্ডেনে গার্ড কোন মেয়েকে এক্সারসাইজ করতে দেখে দ্রুত মেয়েটার কাছে এসে দেখে জমজ বোনের একজন, ফারিহা গার্ডকে দেখে ঠান্ডা গলায় বলে,” এখানে কি করছেন চাচা?”
” না মানে ম্যাডাম ভোর বেলা তো কেউ এদিকে আসে না ৷ তাই দূর থেকে আপনাকে দেখে চিনতে পারেনি৷”
” গত তিন মাস ধরে আমি এখানে এক্সারসাইজ করি চাচা আর আজ আপনি খেয়াল করলেন? এই আপনি আপনার কাজ করেন?”
” মাফ করবেন ম্যাডাম , এখন থেকে আরো ভালো করে গার্ড দিবো৷”
” ঠিক আছে এখন আপনি এখান থেকে চলে যান৷”
” ওকে ম্যাডাম”
গার্ড চলে যেতে ফারিহা তার এক্সারসাইজে মন দিলো, ফারহা ফারিহার রুমের বড় জানালার থাই গ্লাস সরিয়ে ওখানে বসে কফি খাচ্ছে ৷ বাংলাদেশে আসার প্লান টা ফারহার কখনো ছিলো না কিন্তু প্রয়োজনের কারণে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হলো দুই বোন৷ ফারহা কফি খেতে খেতে মেইন গেইটের দিকে চোখ পড়তে ফারহা দু’চোখ সেখানে স্থির হয়ে যায়৷ মেঘ টেডি স্মাইল দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ সত্যি মেঘ কিনা এটা জানার জন্য ফারহা চোখ বন্ধ করে আবার সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই৷ ফারহা নিজের হেলুসিনেশন ভেবে পাত্তা দিলো না৷ আকাশে কালো নিকষ অন্ধকার দূর করে ধিরে ধিরে সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো আকাশ জুড়ে, আবারো রাতের পরে নতুন আর একটা দিনের সূচনা হলো৷ সূর্যদ্বয়ের সময়টা এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে ফারহা তার পুরো দুনিয়া ভুলে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷
ঘাসের উপর আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে ফারিহা তার কিছুক্ষণ পর ফারহা এসে ফারিহার পাশে শুয়ে পড়ে বলে, ” তোর নেক্সট প্লান কি ?”
” মেঘকে বিয়ে করা৷” সহজ গলায় উওর দিলো ফারিহা৷ ফারিহার কথা শুনে ফারহা মুচকি হেসে বলে, ” তাহলে অর্নিলের কি হবে ফারিহা?”
” জাহান্নামে যাক৷ ওকে আর আমার ভালো লাগে না আপু৷ মেঘকে দেখার পর থেকে আমার বুকের ভেতর টা তোলপার হচ্ছে আপু, মেঘের চাহনি ওর স্পর্শ তার চেয়ে বড় কথা ওর ঠোঁটের সিগ্ধ হাসি দেখলে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারি না আপু, কিন্তু মনে হয় না তুই বুঝতে পারবি কারণ তোর জীবনে কোন ভালোবাসার মানুষ নেই৷ আর যারা আসতে চেয়েছে তাদের কে তুই মৃত্যুর দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিস৷ ”
” এখন তুই কি চাস ?”
” মেঘকে চাই৷ ওর পাগল করা স্পর্শ পেতে চাই৷ ওর নগ্ন বুকে আলিঙ্গন করতে চাই৷ সব শেষে মেঘকে আমার চাই ৷”
ফারহা ফারিহার কথা শুনে ফারিহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারিহা যখন মেঘকে নিয়ে কথা বলতে বলতে ফারিহার চোখে মুখে এক প্রকার হিংস্রতার ছাপ দেখতে পায় ফারহা ৷ ফারহার ফারিহাকে আর একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বলে ওঠে, ” ফারিহা তুই জানিস মেঘের একধিক গার্লফ্রেন্ড আছে?”
” জানি তবে এটা গার্লফ্রেন্ড হবে না আপু , কারণ মেঘ কাউকে ভালোবাসে না ৷ ”
” তবে শরীরটাকে ভালোবাসে তাই তো? ” ম্লান হেসে বললো ফারহা….
” আমি বলেছি না আপু মেঘ শুধু আমার; ওকে পাওয়ার জন্য যদি ওর সো কোল্ড গার্লফ্রেন্ডদের শেষ করতে হয় তো করবো৷ ”
ফারহা ফারিহার কথা শুনে শুধু হাসলো ৷
” ফারিহা আজ চৌধুরী ম্যানশনে যাবো আমরা নাস্তা করে রেডি থাকিস৷”
” ওকে আর ওই কাজটা হয়েছে?”
” হুম কম্পিলিট ৷ আমি রুমে যাচ্ছি তুই আয়৷”
” হুম আসছি৷”
!
!
!
(০৮)
বড় বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে মেঘ৷ আসলাম কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নেয়৷ আসলাম আর যাই হোক না খেয়ে থাকতে পারে না৷ আর এই বিষয়টা মেঘকে ভিষণ হাসায়৷ মেঘ চায়ের কাঁপের টুং টাং আওয়াজ শুনে পিট পিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে আসলামকে বলে , ” আসলাম দুপুর বারটার আগে যদি আমার আর ঘুম ভাঙে তাহলে তোমার পশ্চাৎদেশে লাথি মারতে আমি দুইবার ভাববো না মাইন্ট ইট৷ ” কথাটা বলে মেঘ অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
আসলাম এবার কোন শব্দ না করে চায়ের কাঁপ নিয়ে দ্রুত মেঘের রুম ত্যাগ করে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়৷
ফারহা ফারিহা চৌধুরী ম্যানশনে ড্রইংরুমে বসে আছে৷ মেঘের মা মিসেস মেহরীমা চৌধুরী প্রচন্ড খুশি হয় ফারহা আর ফারিহাকে দেখে, দুজনকে পেয়ে গল্প জুরে দেয়৷ এদিকে ফারিহা বার বার এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘকে খোজার চেষ্টা করছে৷ ফারহা ফারিহার বিষয়টা বুঝতে পেরে মিসেস মেহরীমাকে বলে , ” মামুনি বাড়িতে তুমি একা আছো? বড় আব্বু শ্রাবণ ভাইয়া মেঘ এরা কোথায়?”
” তোমার বড় আব্বু সকাল সকাল অফিসে বেড়িয়ে গেছে৷ আর শ্রাবণ নিজের রুমে আছে ৷ মেঘ বাড়িতে আছে কিনা বুঝতে পারছি না৷ ছেলেটা অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে৷”
” কেন মেঘ কেন এতো দেরি করে বাড়ি ফিরে? ও তো আর শ্রাবণ ভাইয়ার মতো অফিসে যায় না!”
” কে বললো তোদের যে ও অফিসে যায় না? জানিস মেঘ কতো বড় অফিসার? মেঘ গোয়েন্দা বিভাগের একজন বড় অফিসার৷”
মেঘের মায়ের কথা শুনে ফারিহা চুপ হয়ে গেল৷ এদিকে ফারহার ঠোঁটের কোনে হাসি, ফারহা মুচকি হেসে মেহরীমাকে বলে,” মামুনি কতো বছর পর এই বাড়িতে এলাম ৷ বাড়িটায় কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের!”
” হ্যাঁ , তুই ফারহা শ্রাবণ মেঘ কতোটা সময় কাটিয়েছিস খেলেছিস ৷ আর আজ সেই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়ে গেছে৷ এই বুড়ো বুড়িদের ভুলে গেছে৷”
ফারহা ফারিহা দুজনে মেহরীমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” কিচ্ছু ভুলিনি মামুনি সব মনে আছে ৷ আর তুমি তোমার হাতের সেই স্পেশাল পাকোড়া না বানিয়ে আমাদের বকছো?”
মেহরীমা মাথায় হাত দিয়ে বলে ,” ইস ভুলে গেছি একদম ৷ তোরা বস আমি এখুনি তোদের জন্য স্পেশাল পাকোড়া আর কফি বানিয়ে আনছি৷ ” মেহরীমা কিচেনে ছুটে যেতে ফারহা ফারিহাকে বলে, ” মেঘের রুমটা চেক করে দেখ মেঘ এসেছে কিনা? আমি ততোক্ষণ না হয় শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসছি৷”
” কিন্তু আপু মামুনি যেটা বললো?”
” ওটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো ফারিহা৷”
ফারিহা উঠে মেঘের রুমে চলে গেল ৷ আর ফারহা শ্রাবণের রুমের সামনে গিয়ে নক করতে ভেতর থেকে শ্রাবণ বলে ওঠে,” দরজা খোলা আছে৷”
ফারহা রুমে প্রবেশ করতে শ্রাবণ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতে শ্রাবনের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়৷
” তুই? ”
” কেমন আছো ভাইয়া?”
” ভালো তার আগে বল তুই ফারহা নাকি ফারিহা?”
ফারহা মুচকি হেসে বলে , ” ফারহা, আমি ফারহা ভাইয়া৷”
শ্রাবণ হাত থেকে ফাইল রেখে ফারহার হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, ” এতো বছর পর এই ভাইয়ার কথা মনে পড়লো বুঝি ফারু?”
ফারু নামটা শুনে ফারহা চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের দিকে, তা দেখে শ্রাবণ বলে ওঠে , ” এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই ফারু৷ আমি জানি একমাত্র মেঘ ছোটবেলা থেকে তোকে ফারুপাখি বলে ডাকে ৷ আর আমি কখনো ভুলবসত ফারু ডেকে ফেললে কি রাগটাই না হতো মেঘ৷ ”
” ওটা অতিত ভাইয়া৷”
শ্রাবণ ফারহার কথার প্রত্ত্যুতরে কিছু বললো না ৷ বরং উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে দুটো কিটক্যাট নিয়ে এসে ফারহার ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” তোর চকলেট দিতে কিন্তু এখনো ভূলেনি ফারু৷”
শ্রাবণের কথা শুনে ফারহা হেসে ফেলে…….
ঘুমের মধ্যে পিঠে নরম কিছুর ছোঁয়া পেতে মেঘের ঘুম ছুটে যায়৷ অপর জন কিছু বুঝে ওঠার আগে মেঘ হাত টা ধরে পাশ ফিরে মায়াবি মুখের অধিকারিণীকে দেখে হ্যাচকা টান দিকে নগ্ন বুকে ফেলে দিয়ে বলে, …..
.
.
.
#চলবে…………….
[ভুল-ট্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন৷ ]#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_০৩
.
.
.
ফারহা খালি ইনজেকশন আর নেশা করার সামগ্রী গুলো সরিয়ে ফেলে ফারিহাকে বেডে ঠিক মতো শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই চমকে ওঠে ফারহা৷
” পিচ্চি তুই এখানে?”
” কেন আসতে পারি না বুঝি?”
ফারহার দরজা লক করে সিঙ্গেল সোফায় পায়ের উপর পা রেখে আদিলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” কেন এসেছিস? ”
” আপু আমি তোমাকে একটা কথা জানাতে এসেছি ৷ জানি না কথাটা তোমার জন্য ইম্পটেন্ট কি না! তবে আমি যেহেতু জেনেছি সেহেতু তোমাকে জানানো আমার কর্তব্য ৷”
ফারহা তার ব্রু-যুগল কুচকে আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ” কি বলতে চাইছিস তুই?”
” আপু মেঘ ভাইয়া কোন সাধারণ লোক নয়৷ মেঘ ভাইয়া একজন …..” আদিল তার কথা সম্পূর্ন করার পূর্বে আদিলের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ আদিল ফারহার দিকে তাকাতে ফারহা ইশারা করে কল রিসিভ করতে৷ আদিল কল রিসিভ করে ৷
” হ্যালো ভাইয়া তুই কোথায়?”
” কি হয়েছে? এতো রাতে আমাকে কেন কল করেছিস?”
” ভাইয়া আ,, আমি আসলে মুম্বাই যেতে চাইছি৷”
” হঠাৎ মুম্বাই কেন যেতে হবে তোকে? ”
” মিস্টার রায় যেতে বলেছে মুম্বাই ৷ ওখানে নাকি আমাদের কোম্পানির আর একটা ব্রাঞ্চ …” বাকিটা বলার আগে আদিল বলে ওঠে ,” না রাফি মুম্বাইতে কোন ব্রাঞ্চ খোলার প্রয়োজন নেই৷ আর মিস্টার রায়ের সাথে আমি কোন বিজনেস করবো না ৷ এটা তুই ওনাকে ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিস৷ আমি এখন ব্যস্ত আছি রাখছি৷ ”
আদিল রাফির কোন কথা না শুনে কল ডিসকানেক্ট করে ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে ফারহার দিকে তাকাতে দেখে ফারহা নেই ৷ আদিল আপু আপু বলে দুবার ডেকে ফারহার কোন সারা শব্দ না পেয়ে আদিল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷
আদিল চলে যেতে ফারহা নিঃশব্দে ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে আদিলকে দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারে আদিল চলে গেছে৷ ফারহা ভেজা তোয়ালে ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য কফি বানিয়ে রুমে এসে কাপবোর্ড থেকে ট্যাব বের করে ৷
(০৭)
মাথা নিচু করে মেঘের সামনে দাড়িয়ে আছে আসলাম ৷ মেঘের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ৷ মেঘের কেভিন থেকে ইম্পটেন্ট ফাইল হাড়িয়ে যাওয়াটা কোন সাধারণ বিষয় নয়৷ পুরো অফিসে সি সি ক্যামেরা ধারা আবৃত কিন্তু সে ক্যামেরায় নিজেকে আড়াল করে ফাইল টা চুরি করা এটা কোন প্রফেশনাল লোকের কাজ এটা মেঘের বুঝতে দেরি নেই৷
মেঘ দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে তাকিয়ে আসলামকে প্রশ্ন করে,” ফাইলটা কার ডিটেইলস ছিলো আসলাম?”
” ম্যামদের পুরো ডিটেইলস ছিলো স্যার, তবে!”
” তবে কি আসলাম?”
” স্যার আমি পুরো ডিটেইলস কালেক্ট করতে পারেনি৷ পুরো ডিটেইলস কালেক্ট করতে হলে আমাকে লন্ডনে যেতে হবে৷ ”
মেঘ রেগে হাতের গ্লোকটা ছুড়ে মেরে আসলামকে বলে, ” আগে খোজ নেও কার এতো বড় বুকের কলিজা যে আমার কেভিনে ঢুকে ফাইল চুরি করে? তাকে আমার সামনে দেখতে চাই আসলাম ৷ তার কলিজা টা আমি একটু মেপে দেখবো ৷ মেঘ চৌধুরীর সাথে লাগতে আসে তাকে তো মাকে দেখতেই হবে৷”
” জ্বি স্যার কিন্তু লোকটা কোন ক্লু রেখে যায়নি ৷ স্যার ভাবনার বিষয় হলো বাইরে যে চারটা কুকুর থাকতো সবসময় সে চারটা কুকুরকে নৃশংস ভাবে কেউ ছুড়ি দিয়ে মেরে দিয়েছে৷”
আসলামের কথা শুনে মেঘ চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, মেঘের চোখের সামনে সব কিছু কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে৷ তার প্লান গুলো কে যেন ভেস্তে দিচ্ছে বারংবার৷ মেঘের ভাবনার মাঝে কেউ দরজায় নক করে৷
” মে আই কামিং স্যার?”
মিষ্টি গলা শুনে মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলে, ” ইয়েস মিস নাবিলা ৷”
মিস নাবিলা মেঘের সিনিয়র বস হলেও মিস নাবিলা মেঘের সামনে এমন ভাব করে যেন মেঘ মিস নাবিলার সিনিয়র আর সে তার জুনিয়র৷
মেঘ আসলামকে যেতে ইশারা করতে আসলাম কেভিন থেকে বের হয়ে যায়৷ মিস নাবিলা ভেতর থেকে দরজা করে দিয়ে হুট করে মেঘের কোলে বসে পড়ে মেঘের গালে চুমু খেয়ে বলে, ” মিস্টার হ্যান্ডসাম আর কতো অপেক্ষা করাবে আমাকে? এবার আমায় বিয়েটা করে নেও না ৷”
” হুম বিয়ে তো আমি করবো তবে আমার ফারুপাখিকে মিস নাবিলা৷”
ফারুপাখি নামটা শুনে তৎক্ষনাৎ মেঘের কোল থেকে উঠে মেঘের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে,” কে এই ফারুপাখি মেঘ ? যার জন্য তুমি আমাকে বার বার রিজেক্ট করছো?”
” কে ফারুপাখি ? ফারুপাখি আমার হৃদস্পন্দন , আমার হৃদয়ের প্রত্যেকটা কম্পন সে, আমার প্রথম এবং শেষ অনুভূতি , আমার জীবনের একচিলতে রোদ্দুর , আবছা ধূসর প্রেমের অনুভূতি আমার ফারুপাখি ৷ ”
মিস নাবিলা মেঘের মুখের এতো সুন্দর করে সাবলীল ভাষায় নিজের মনের অনুভুতি গুলো বলতে শুনে, নাবিলার যেন পুরো শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে ৷ মেঘের মনে অন্য কেউ আছে এটা যেন নাবিলা মেনে নিতে পারছে না৷
” মেঘ ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র অফিসার ৷ তুমি এভাবে আমাকে রিজেক্ট করতে পারো না মেঘ৷ ইউ নো না আমি চাইলে তোমার জবটা কেড়ে নিতে পারি?”
নাবিলার কথা শুনে মেঘ তার ঠোঁটের কোনে সেই মারাত্মক সু্ন্দর হাসিটা ফুটিয়ে তুলে নাবিলার উদ্দেশ্য বলে, ” মিস নাবিলা আপনি আমাকে মিসআন্ডারস্টান্ডিং করছেন ৷ আপনি হয়তো এখনো আমাকে চিনতে পারেন নি? আর হ্যাঁ আপনি চাইলে আপনার মতো চেষ্টা করতে পারেন আমার জবটা কেড়ে নেওয়ার বাট ট্রাস্ট মি এতে আপনার বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয়না ৷ ”
মিস নাবিলা ফোঁস ফোঁস করতে করতে মেঘের টেবিলের উপর ফাইলটা রেখে কেভিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷
মেঘ মিস নাবিলার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে , ” সিলি গার্ল ৷ এই মেয়ে এসেছে মেঘ চৌধুরীকে বিয়ে করতে হাহ্! এই মেঘ চৌধুরীর যা চাই তা যে কোন মূল্যে ছিনিয়ে নিতে জানে…”
আসলাম কেভিনে ঢুকে মেঘকে বলে, ” স্যার রাত চারটা বাজে আপনি চৌধুরী ম্যানশনে ফিরবেন না? ”
” ফিরবো গাড়ি বের করো আসলাম ৷ আর শোন তুমি আজ আমার সাথে থাকবে৷”
” ওকে স্যার”
.
.
.
ভোর চারটায় খান মন্জিলের গার্ডেনে গার্ড কোন মেয়েকে এক্সারসাইজ করতে দেখে দ্রুত মেয়েটার কাছে এসে দেখে জমজ বোনের একজন, ফারিহা গার্ডকে দেখে ঠান্ডা গলায় বলে,” এখানে কি করছেন চাচা?”
” না মানে ম্যাডাম ভোর বেলা তো কেউ এদিকে আসে না ৷ তাই দূর থেকে আপনাকে দেখে চিনতে পারেনি৷”
” গত তিন মাস ধরে আমি এখানে এক্সারসাইজ করি চাচা আর আজ আপনি খেয়াল করলেন? এই আপনি আপনার কাজ করেন?”
” মাফ করবেন ম্যাডাম , এখন থেকে আরো ভালো করে গার্ড দিবো৷”
” ঠিক আছে এখন আপনি এখান থেকে চলে যান৷”
” ওকে ম্যাডাম”
গার্ড চলে যেতে ফারিহা তার এক্সারসাইজে মন দিলো, ফারহা ফারিহার রুমের বড় জানালার থাই গ্লাস সরিয়ে ওখানে বসে কফি খাচ্ছে ৷ বাংলাদেশে আসার প্লান টা ফারহার কখনো ছিলো না কিন্তু প্রয়োজনের কারণে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হলো দুই বোন৷ ফারহা কফি খেতে খেতে মেইন গেইটের দিকে চোখ পড়তে ফারহা দু’চোখ সেখানে স্থির হয়ে যায়৷ মেঘ টেডি স্মাইল দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ সত্যি মেঘ কিনা এটা জানার জন্য ফারহা চোখ বন্ধ করে আবার সামনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই৷ ফারহা নিজের হেলুসিনেশন ভেবে পাত্তা দিলো না৷ আকাশে কালো নিকষ অন্ধকার দূর করে ধিরে ধিরে সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো আকাশ জুড়ে, আবারো রাতের পরে নতুন আর একটা দিনের সূচনা হলো৷ সূর্যদ্বয়ের সময়টা এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে ফারহা তার পুরো দুনিয়া ভুলে প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷
ঘাসের উপর আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে ফারিহা তার কিছুক্ষণ পর ফারহা এসে ফারিহার পাশে শুয়ে পড়ে বলে, ” তোর নেক্সট প্লান কি ?”
” মেঘকে বিয়ে করা৷” সহজ গলায় উওর দিলো ফারিহা৷ ফারিহার কথা শুনে ফারহা মুচকি হেসে বলে, ” তাহলে অর্নিলের কি হবে ফারিহা?”
” জাহান্নামে যাক৷ ওকে আর আমার ভালো লাগে না আপু৷ মেঘকে দেখার পর থেকে আমার বুকের ভেতর টা তোলপার হচ্ছে আপু, মেঘের চাহনি ওর স্পর্শ তার চেয়ে বড় কথা ওর ঠোঁটের সিগ্ধ হাসি দেখলে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারি না আপু, কিন্তু মনে হয় না তুই বুঝতে পারবি কারণ তোর জীবনে কোন ভালোবাসার মানুষ নেই৷ আর যারা আসতে চেয়েছে তাদের কে তুই মৃত্যুর দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিস৷ ”
” এখন তুই কি চাস ?”
” মেঘকে চাই৷ ওর পাগল করা স্পর্শ পেতে চাই৷ ওর নগ্ন বুকে আলিঙ্গন করতে চাই৷ সব শেষে মেঘকে আমার চাই ৷”
ফারহা ফারিহার কথা শুনে ফারিহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারিহা যখন মেঘকে নিয়ে কথা বলতে বলতে ফারিহার চোখে মুখে এক প্রকার হিংস্রতার ছাপ দেখতে পায় ফারহা ৷ ফারহার ফারিহাকে আর একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বলে ওঠে, ” ফারিহা তুই জানিস মেঘের একধিক গার্লফ্রেন্ড আছে?”
” জানি তবে এটা গার্লফ্রেন্ড হবে না আপু , কারণ মেঘ কাউকে ভালোবাসে না ৷ ”
” তবে শরীরটাকে ভালোবাসে তাই তো? ” ম্লান হেসে বললো ফারহা….
” আমি বলেছি না আপু মেঘ শুধু আমার; ওকে পাওয়ার জন্য যদি ওর সো কোল্ড গার্লফ্রেন্ডদের শেষ করতে হয় তো করবো৷ ”
ফারহা ফারিহার কথা শুনে শুধু হাসলো ৷
” ফারিহা আজ চৌধুরী ম্যানশনে যাবো আমরা নাস্তা করে রেডি থাকিস৷”
” ওকে আর ওই কাজটা হয়েছে?”
” হুম কম্পিলিট ৷ আমি রুমে যাচ্ছি তুই আয়৷”
” হুম আসছি৷”
!
!
!
(০৮)
বড় বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে মেঘ৷ আসলাম কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নেয়৷ আসলাম আর যাই হোক না খেয়ে থাকতে পারে না৷ আর এই বিষয়টা মেঘকে ভিষণ হাসায়৷ মেঘ চায়ের কাঁপের টুং টাং আওয়াজ শুনে পিট পিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে আসলামকে বলে , ” আসলাম দুপুর বারটার আগে যদি আমার আর ঘুম ভাঙে তাহলে তোমার পশ্চাৎদেশে লাথি মারতে আমি দুইবার ভাববো না মাইন্ট ইট৷ ” কথাটা বলে মেঘ অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
আসলাম এবার কোন শব্দ না করে চায়ের কাঁপ নিয়ে দ্রুত মেঘের রুম ত্যাগ করে গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়৷
ফারহা ফারিহা চৌধুরী ম্যানশনে ড্রইংরুমে বসে আছে৷ মেঘের মা মিসেস মেহরীমা চৌধুরী প্রচন্ড খুশি হয় ফারহা আর ফারিহাকে দেখে, দুজনকে পেয়ে গল্প জুরে দেয়৷ এদিকে ফারিহা বার বার এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘকে খোজার চেষ্টা করছে৷ ফারহা ফারিহার বিষয়টা বুঝতে পেরে মিসেস মেহরীমাকে বলে , ” মামুনি বাড়িতে তুমি একা আছো? বড় আব্বু শ্রাবণ ভাইয়া মেঘ এরা কোথায়?”
” তোমার বড় আব্বু সকাল সকাল অফিসে বেড়িয়ে গেছে৷ আর শ্রাবণ নিজের রুমে আছে ৷ মেঘ বাড়িতে আছে কিনা বুঝতে পারছি না৷ ছেলেটা অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে৷”
” কেন মেঘ কেন এতো দেরি করে বাড়ি ফিরে? ও তো আর শ্রাবণ ভাইয়ার মতো অফিসে যায় না!”
” কে বললো তোদের যে ও অফিসে যায় না? জানিস মেঘ কতো বড় অফিসার? মেঘ গোয়েন্দা বিভাগের একজন বড় অফিসার৷”
মেঘের মায়ের কথা শুনে ফারিহা চুপ হয়ে গেল৷ এদিকে ফারহার ঠোঁটের কোনে হাসি, ফারহা মুচকি হেসে মেহরীমাকে বলে,” মামুনি কতো বছর পর এই বাড়িতে এলাম ৷ বাড়িটায় কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের!”
” হ্যাঁ , তুই ফারহা শ্রাবণ মেঘ কতোটা সময় কাটিয়েছিস খেলেছিস ৷ আর আজ সেই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়ে গেছে৷ এই বুড়ো বুড়িদের ভুলে গেছে৷”
ফারহা ফারিহা দুজনে মেহরীমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” কিচ্ছু ভুলিনি মামুনি সব মনে আছে ৷ আর তুমি তোমার হাতের সেই স্পেশাল পাকোড়া না বানিয়ে আমাদের বকছো?”
মেহরীমা মাথায় হাত দিয়ে বলে ,” ইস ভুলে গেছি একদম ৷ তোরা বস আমি এখুনি তোদের জন্য স্পেশাল পাকোড়া আর কফি বানিয়ে আনছি৷ ” মেহরীমা কিচেনে ছুটে যেতে ফারহা ফারিহাকে বলে, ” মেঘের রুমটা চেক করে দেখ মেঘ এসেছে কিনা? আমি ততোক্ষণ না হয় শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসছি৷”
” কিন্তু আপু মামুনি যেটা বললো?”
” ওটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো ফারিহা৷”
ফারিহা উঠে মেঘের রুমে চলে গেল ৷ আর ফারহা শ্রাবণের রুমের সামনে গিয়ে নক করতে ভেতর থেকে শ্রাবণ বলে ওঠে,” দরজা খোলা আছে৷”
ফারহা রুমে প্রবেশ করতে শ্রাবণ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতে শ্রাবনের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়৷
” তুই? ”
” কেমন আছো ভাইয়া?”
” ভালো তার আগে বল তুই ফারহা নাকি ফারিহা?”
ফারহা মুচকি হেসে বলে , ” ফারহা, আমি ফারহা ভাইয়া৷”
শ্রাবণ হাত থেকে ফাইল রেখে ফারহার হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, ” এতো বছর পর এই ভাইয়ার কথা মনে পড়লো বুঝি ফারু?”
ফারু নামটা শুনে ফারহা চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের দিকে, তা দেখে শ্রাবণ বলে ওঠে , ” এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই ফারু৷ আমি জানি একমাত্র মেঘ ছোটবেলা থেকে তোকে ফারুপাখি বলে ডাকে ৷ আর আমি কখনো ভুলবসত ফারু ডেকে ফেললে কি রাগটাই না হতো মেঘ৷ ”
” ওটা অতিত ভাইয়া৷”
শ্রাবণ ফারহার কথার প্রত্ত্যুতরে কিছু বললো না ৷ বরং উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে দুটো কিটক্যাট নিয়ে এসে ফারহার ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” তোর চকলেট দিতে কিন্তু এখনো ভূলেনি ফারু৷”
শ্রাবণের কথা শুনে ফারহা হেসে ফেলে…….
ঘুমের মধ্যে পিঠে নরম কিছুর ছোঁয়া পেতে মেঘের ঘুম ছুটে যায়৷ অপর জন কিছু বুঝে ওঠার আগে মেঘ হাত টা ধরে পাশ ফিরে মায়াবি মুখের অধিকারিণীকে দেখে হ্যাচকা টান দিকে নগ্ন বুকে ফেলে দিয়ে বলে, …..
.
.
.
#চলবে…………….
[ভুল-ট্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন৷ ]