ধূসর প্রেমের অনুভূতি – পর্ব ৩৭

0
317

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩৭
.
.
মেঘকে কথা বলতে বলতে রোজা চুপ হয়ে মনে মনে কথা গুলো বলতে লাগলো৷ হঠাৎ মেঘের কথায় রোজা তার ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে কিছু বলতে যাবে তখনি তনুর ফোনটা বেজে ওঠে৷ তনু সবার দিকে তাকিয়ে ফোনের স্কিনে তাকাতে কপাল কুচকে কল রিসিভ করে কানে ধরতে ৷ ফোন কলে ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে তনুর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,” আ’ম কামিং৷ ”

ফারহা তনুর দিকে ভ্রু যুগল কুচকে বলে,” এখন কোথায় যাচ্ছিস তনু?”

তনু ফারহার দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বলল,” কাজ আছে৷ আর প্লিজ তোর শ্বশুর বাড়ি থাকছি বিধায় এটা জানতে চাস না কী জন্য কী কাজে বের হচ্ছি৷”

তনুর গলার তেজ দেখে ফারহা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ” ওহ কামওন ইয়ার আমি কি তোকে কোন প্রশ্ন করেছি? তুই তোর ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি যেতে পারিস ৷ তবে সাবধানে থাকিস ৷ কখন আবার কি হয়ে যায় বলা তো যায় না৷ ”

ফারহার কথা শুনে রাগে তনুর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে৷ মেঘ একবার ফারহা দিকে তাকাচ্ছে আবার তনুর দিকে তাকাচ্ছে৷ মেঘ বুঝতে পারছে না তনুর এমন অহেতুক রাগের কারণ টা!

তনু লাঞ্চ না করে উঠে পড়ে৷ এদিকে ফারহা আর তনুর দিকে খেয়াল না করে নিজের খাওয়ায় মন দিলো৷ হঠাৎ ফারহার ফোন বেজে উঠতে ফারহা ফোনের স্কিনে ছোটু নাম দেখে দ্রুত কল রিসিভ করে৷

” দি কোথায় তুই?”
ফোনের ওপাশ থেকে রাফির গলা ঠিক মতো শুনতে না পেলেও প্রচুর গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেল ফারহা৷ ফারহা এক মুহূর্ত দেরি না করে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে৷ মেঘ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না৷ তবে ফারিহা ফারহার পেছন পেছন উঠে চলে যায়৷ অর্নিল ফারিহাকে বাধা দিতে নিলে মেঘ ইশারায় বারণ করে৷ এদিকে মেঘ আর ফারহার মম ড্যাড সন্ধেহের চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,” মেঘ ফারহা মামুনি এভাবে ছুটে গেল কেন? তোমরা কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”

মেঘ আমতা আমতা করতে করতে বললে উঠলো, ” মম তুমি তো জানো আঙ্কেল আন্টিদের চারিদিকে কত শত্রু ৷ ফারুপাখি মেবি কোন শত্রুর খোজ পেয়েছে৷ ”

মেঘের কথা শুনে মেহবুব চৌধুরী রেগে বলতে লাগলো,” ফাজলামি পেয়েছো মেঘ? তুমি আইনের লোক হয়ে ঘড়ে বসে খাবার খাচ্ছো আর তোমার স্ত্রীকে একা একাই শত্রুর সাথে লড়াই করতে পাঠিয়ে দিচ্ছো বাহ বাহ৷”

” ড্যাড তুমি আমাকে ভুল ভাবছো৷ আমি জানি ফারুপাখির শরীরে একটা ফুলের টোকা লাগবে না৷ কারণ তোমাদের বউমা নিজের আত্মরক্ষা করতে জানে৷ ”

” তাই বলে তুমি এভাবে চৌধুরী বাড়ির ছোট বউমাকে একা ছেড়ে দিবে?”

মেহবুব চৌধুরীর কথা থামিয়ে ফারহার ড্যাড ফায়েজ খান বলে ওঠে ,” আহ মেহবুব কী হচ্ছে কী? মেঘ ঠিকি বলেছে৷ তোদের ছোট বউমা আর মার বড় মেয়ে একাই একশ ৷ তার ক্ষতি করার সাধ্য আল্লাহ ব্যতিত কারোর নেই৷”

” কিন্তু!”

” কোন কিন্তু নয়, শান্ত হো মেহবুব৷ ভাবি মেহবুবকে আর এক পিস মাছের টুকরো দিন৷ ”

” জ্বী ভাইজান৷ ”

(৬৮)

ফারিহা ফারহার পথ আগলে দারিয়ে আছে৷ ফারহাকে একা কোন মতে ফারিহা যেতে দিতে চাইছে না৷ ফারিহা জেদ ধরে আছে সেও ফারহার সাথে যাবে৷ ফারহা ফারিহাকে বোঝাতে গিয়েও কোন লাভ হয়নি ৷ ফারিহা তার সির্ধান্তে অটল৷ তাই বাধ্য হয়ে ফারহা ফারিহাকে নিয়ে যেতে রাজি হয় তবে শর্ত একটাই, ফারহা যে কোন উপায়ে নিজেকে সেইভ রাখতে হবে৷ ফারহার শর্ত শুনে ফারিহা খুশি হয়ে ফারহার গলা জড়িয়ে ধরে৷

অন্যদিকে ফুল স্পিডে গাড়ি রাইড করে জেসিকা সেই বিল্ডিংয়ে ঢুকে যায়৷ চারিদিক জন মানবহীন বিধায় জেসিকা নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোন চেষ্টাই করলো না বরং মাথা উচু করে দ্রুত বিল্ডিংয়ে ঢুকে গেল৷ জেসিকা ফ্লাটের সামনে এসে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে জেসিকার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে বসে হ্যারি৷ জেসিকা মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে৷ লিও তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বের হয়ে জেসিকাকে নিচ থেকে তুলে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা শক্ত করে বেধে ফেলে৷ এদিকে নার্স দু’জন বেশ ভয় পেয়ে যায়৷ পাশে দাড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে নার্স৷ লিও নার্স দু’জনের দিকে তাকিয়ে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো৷ হ্যারি লিওয়ের হাসি অর্থ বুঝে মাথা নেরে সায় জানালো৷

কয়েক সেকেন্ডে হ্যারি লিও নার্স দু’জনকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল৷ শুরু হলো পাশবিক অত্যাচার৷ নার্স দু’জনে আত্মচিৎকার চার দেওয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ ৷

____________

ফারহা ফারিহা দু’বোন একই রকম একই সাজে সজ্জ্বিত হয়ে ড্রইংরুমে আসতে অর্নিল মেঘ দুজনে তাকিয়ে রইল৷ মেঘ তার ফারুপাখিকে চিনতে সময় নষ্ট করলো না কিন্তু অর্নিল এখন অব্দি ফারিহা কে সেটা চিনে উঠতে পারলো না৷ ফারিহা অর্নিলের দিকে রেগে কটমট করে তাকিয়ে গট গট করে হেটে বেরিয়ে গেল৷ আর ফারহা মেঘের দিকে মিষ্টি করে হেসে বেরিয়ে গেল৷

ফারহা রাফির ফোন নাম্বার ট্রাক করে পৌছে গেল৷ সেখানে উপস্থিত হতে একটা গুলি ফারহার গাড়ির ব্যাক মিররে এসে লাগে৷ ফারহা ফারিহা দুজনে সময় নষ্ট না করে রিভালবার বের করে গাড়িতে বসে মুখোশ পড়া লোক গুলোর উপর শুট করতে থাকে৷ ফারহার গাড়ি বুলেট প্রুফ না হওয়ায় গাড়ির বেহাল দশা৷ ফারহা ফারিহাকে দ্রুত গাড়ি থেকে নামতে বললো ফারহা৷ ফারিহা ফারহার কথা মতো গাড়ি থেকে নেমে দেওয়ালের আড়ালে যেতেই ফারহার গাড়ি ব্লাস্ট হয়ে গেল৷ মুহূর্তে এমন কিছু ফারিহা একদমি স্পেক্ট করেনি৷ চোখের সামনে দাউ দাউ করে ফারহার গাড়ি আগুনে জ্বলছে৷ মুখোশদারি লোক গুলো গাড়িটা জ্বলতে দেখে ব্যাক করলো৷ যেন তারা এটাই চেয়েছিলো ফারহা শেষ হয়ে যাক৷ রাফি আদিল এবং তার মা মোহনা দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ফারিহাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে ফারিহার দিকে; কে ফারহা আর কে ফারিহা এটা রাফি বুঝতে না পেরে ফারিহাকে ফারহা ভেবে বলে ওঠে, ” দি তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয়নি তো? ”

ফারিহা নিস্তব্ধ স্তম্ভিত হতবিহ্বল হয়ে জ্বলন্ত আগুনের দিকে তাকিয়ে রইল৷ রাফি ফারিহাকে চুপ থাকতে দেখে ফারিহার দুই বাহু ধরে ঝাঁকাতে ফারিহা রাফির দিকে ফিরে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে হাতের ইশারা করে বলে ,” আ,,পু!”

” আ,,আপু মানে! তু,,মি ফারিহাপু?”

” ফারিহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে৷ মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না৷ আদিল স্তম্ভিত বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল৷ মোহনা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়৷ হঠাৎ এমন কিছু ফারহার সাথে হবে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি৷

ফারিহা কাঁপা কাঁপা হাতে মেঘের নাম্বারে ডায়াল করে ৷ মেঘ নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো ৷ হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফারিহার নাম্বার৷ মেঘ কিছু না ভেবে দ্রুত কল রিসিভ করে৷ ফারিহা কান্নার জন্য ঠিক ভাবে মেঘের সাথে কথা বলতে পারছে না৷ মেঘ ফারিহার কান্নার জন্য কোন কথাই বুঝে উঠতে পারলো না৷ কিন্তু এটা বুঝতে পারলো কিছু একটা ঘটেছে৷ মেঘ শুধু একটা প্রশ্নই করলো৷ লোকেশনটা কোথায়?”

ফারিহা কান্না গলায় শুধু রাফি বললো৷ ব্যাস এতোটুকুতে মেঘ বুঝতে পারলো তাকে কোথায় যেতে হবে৷

মেঘ এক মুহূর্ত দেরি না করে রিভালবারটা কোমরে গুজে বেরিয়ে গেল৷

_________________

জ্ঞান ফিরতে চোখ মেলে তাকাতে মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো জেসিকা৷ চোখ মুখ খিচে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে ফ্লাটে বাধা অবস্থায় দেখে চমকে ওঠে জেসিকা৷ ধীরে ধীরে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় জেসিকার কাছে, রাগে পুরো শরীর কাঁপতে থাকে তার; হ্যারি লিওয়ের কাজ এটা বুঝতে তার এক মুহূর্ত দেরি হলো না৷ জেসিকা না পেরে চিৎকার করে হ্যারিকে ডাকতে লাগলো,” হ্যা,,,রি ইউ ব্লাডি বিচ ৷ কোথায় তুই? তোর সাহস কি করে হয় আমাকে আটকে রাখার? কু* বা* কোথায় তুই? ”

জেসিকার চিৎকার হ্যারি লিওয়ের কানে পৌছাতে দুজনে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুম থেকে বেরিয়ে এসে জেসিকার দিকে তাকিয়ে পৌশাচিক হাসি দিয়ে বলে উঠলো,” ওহ কামওন সুইটহার্ট এভাবে চিৎকার করলে তোমারই ক্ষতি; ইউ নো না আমি চিৎকার চেঁচামেচি একদম লাইক করি না৷ ”

জেসিকা লিও আর হ্যারির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” মেয়ে দুটো বেঁচে আছে হ্যারি? ”

হ্যারি মুখ বাঁকিয়ে মাথা নাড়িয়ে দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বলল,” সুইটহার্ট এই জন্য তোমাকে এতো ভালোবাসি৷ এবার বলো তো লাশ তিনটার কি ব্যবস্থা করবো?”

জেসিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” ইউ বাস্টার্ড ৷ একজন কে মেরেছিস তা মেনে নিয়েছি৷ কিন্তু ওদের কেন মারলি?”

লিও হাত দিয়ে গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠলো,” পাখি দুটো খুব চেচাঁমেচি করছিলো জেসিকা৷ বারণ করা সত্যেও শুনছিলো না পালানোর চেষ্টা করছিলো তাই উপায় না পেয়ে পাখি দুটোর ডানা ভেঙে একে বাড়ে গুড়িয়ে দিয়েছি৷

” আমাকে কেন বেধে রেখেছো লিও হ্যারি?”

হ্যারি ঘাড় বাঁকিয়ে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল,” কিং ফায়ার কোথায়?”

জেসিকা যেটা ভেবেছিলো সেটাই হয়েছে৷ হ্যারি কিং ফায়ারকে খুজে না পেয়ে এমন পাগলামি করছে ৷ আর এই পাগলামি কেন করছে এটাও জেসিকা জানে৷ কিং ফায়ার তার পাওয়ার হ্যারিকে দিয়ে যায়নি৷ যার ফলস্বরুপ হ্যারির এই রুপ৷

জেসিকাকে চুপ থাকতে দেখে হ্যারি প্রচন্ড রেগে চেয়ার আছার মেরে ভেঙে জেসিকার গাল শক্ত করে ধরে বলে,” বল কিং ফায়ারকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? কোথায় আছে কিং ফায়ার?”

” আমি জানি না হ্যারি কজ আরু কিং ফায়ারকে কিডন্যাপ করেছে৷”

আরুর নাম শুনে হ্যারির রাগ যেন তরতর করে বেড়ে গেল৷ আরো তিনগুন জোড়ে জেসিকার গাল চেপে ধরে বলে, ” আ’ম নট এ্য ফুল জেসিকা৷ এই ফ্লাটের এড্রেস আরু কোন ভাবে জানতে পারে না৷ কিং ফায়ারকে তুই লুকিয়ে রেখেছিস৷ ”

” নো হ্যারি আমি তোমাকে বোকা বানাচ্ছি না৷ আমি সত্যি বলছি আরু কিং ফায়ারকে কিডন্যাপ করেছে৷ ”

জেসিকার চোখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হ্যারি জেসিকার গাল ছেড়ে দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে৷ রাগ কন্ট্রোলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে দিচ্ছে৷

_____________

জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ির দিকে মেঘ ছুটে যেতে নিলে আদিল রাফি মেঘকে ধরে ফেলে৷ মেঘ আগুন দৃষ্টিতে আদিল রাফির দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিতে বললে আদিল বলে,” জিজু আপুকে হারিয়েছি এখন আপনাকে আমরা হারাতে পারবো না৷ ওই জ্বলন্ত আগুনের কাছে আপনাকে আমি যেতে দিতে পারবো না?”

মেঘ হাত ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে ফারিহার দিকে এগিয়ে গিয়ে স্বজোড়ে এক থাপ্পর মারে; মেঘের হাতের মার খেয়ে তাল সমলাতে না পেরে ছিটকে মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে যায় ফারিহা৷ মেঘ তৎক্ষনাৎ ফারিহার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে পেছন থেকে কেউ মেঘের হাত চেপে ধরে৷ মেঘ পেছনে ঘুরতে স্বজোরে মেঘের মুখে কেউ ঘুশি মেরে বলে,
.
.
.
#চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here