অভিশপ্ত_জীবন সিজন 2 পর্ব ২

0
243

#অভিশপ্ত_জীবন
সিজন 2
পর্ব ২

আচ্ছা নিশি বলো তো, বাবা মায়ের বৃদ্ধকালের শেষ সম্পদ কি?

মা,তুমিই তো সব সময় বলো যে, সন্তান বাবা মায়ের বৃদ্ধকালে সম্পদ! তাহলে আবারও জিজ্ঞেস করছো কেন?

মা-রে, তুমি ভালো করে জানো আমার আপন কোন সন্তান নেই,, তোমাকে আর রজনী কে মনের ভুলেও কখনো অন্যের সন্তান ভাবিনি। তোমাদের দুই বোন কে আমি আমার সম্পদ মনে করি। আর পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই তাদের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে চেষ্টা করে। আমিও তাদের ব্যাতিক্রম নই। তোমার মতো বয়স যখন আমার ছিলো তখন জীবন যুদ্ধে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে সামান্য সখ আহ্লাদ করার সময় পাই নি। আমি কখনোই চাই না, আমার মতো জীবন কারো হোক। আর তোমাদের ধারে কাছে ও আসতে দিবো না এমন পরিস্থিতি। আমার অনেক বড় স্বপ্ন তোমাকে ডাক্তার বানাবো। মা গো তুমি আবারও আগের মতো পড়াশোনায় মনযোগ দাও।

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বুঝানোর পরে,, নিশি সুন্দর করে বলে আচ্ছা মা, আমি এবারও ভালো রেজাল্ট করবো আর তোমার মনের আশা পুর্ন করার চেষ্টা করবো।

মা মেয়ে মিলে রাতের রান্না শেষ করে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। আজ নিশি সন্ধ্যা বেলা থেকেই পড়া শুরু করে দিয়েছে। মনটা ভরে গেলো এমন দৃশ্য দেখে।

প্রায় আট দশ দিন থেকে নিশি রেগুলার কলেজে যায় এবং বাড়িতে থাকে,, আজ বিকালবেলা নিশির সৎ ভাই নিশিকে ডাকতে আসে। আমি নিশিকে বুঝিয়ে বললাম, সামনে তোমার ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা তাই ওখানে আর যেও না। পরিক্ষা শেষে যেও। নিশি হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমি চাই কষ্টের ভিতর থেকে সে বুঝুক এটা তার ভুল ছিল।

নিশির ভাই ফিরে গিয়ে তার মাকে কি বলেছে জানি না। পরের দিন সকাল বেলা ওই মহিলা এসে বাড়ির বাইরে থেকে জোরে জোরে নিশিকে ডাকে। নিশি বাইরে গেলেই সে বলে, তুহিন কাল তোকে ডাকতে আসছিলো তুই যাসনি কেন?

নিশি ছোট করে বলে, মা যেতে দেয় নি।

তখন উনি চিল্লায় বলা শুরু করে,, যার নিজের পেটের সন্তান নাই সে কিভাবে সন্তানের দয়া মায়া বুঝবে। ওই বন্ধা যেমন যেতে নিষেধ করলো ওমনি তুই মেনে নিলি?? ওর স্বামীর উপর কর্তৃত্ব খাটায় বলেই কি আমার মেয়ের উপর ও কর্তৃত্ব খাটাবে?এতো সাহস! অনেক সহ্য করেছি আর না। আমিও দেখে নিবো কিভাবে আমার মেয়েকে আমার কাছে থেকে দূরে সড়িয়ে রাখে।

আমি বাড়ির বাইরে এসে উনাকে বলি,,শুধু পেটে ধরলেই কি মা হওয়া যায়? এ-তোই যদি সন্তানের জন্য আপনার মায়া তাহলে ছোট্ট দুটো মেয়ে রেখে অন্য পুরুষের সাথে পালিয়েছিলেন কিভাবে? তখন কোথায় ছিলো আপনার এই মায়ের দরদ। তখন তো এই বন্ধা মহিলা টি-ই ওই মেয়েদের শেষ সম্বল ছিলো। আপনি নিজের অতীত কে এতো তারাতাড়ি ভুলে গেলেও সবাই ভুলে যাবে তা ভাবলেন কিভাবে?

উনিও আমাকে বললেন,, কিভাবে শেষ সম্বল ছিলি তা আমার ভালো করে জানা আছে,,ফকিন্নি ঘরের মেয়েদের মতো আমার মেয়েদের বড় করেছিস তুই। না দিয়েছিস ভালো জামাকাপড় না পুরোন করেছিস ওদের কোন আবদার,, ওদের বাপের কামায় নিজের ভাই বোনের ছেলে মেয়েকে দিয়েছিস।

এতো কিছু শোনার পরে ইচ্ছে করছিলো উনাকে ঝাটা দিয়ে কয়েকটা দিই। কিন্তু চরিত্রহীনদের সাথে তর্ক করে নিজের সম্মান খোয়ানো টা উচিত না।

উনি নিশিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার তাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু নিশি কি যেন ভেবে উনার সাথে যায় নি।

দুপুরের আগে আনিস বাড়ি ফিরে সোজা নিশিকে ডাকে। তারপর কোন কিছু না বলেই একটা থাপ্পড় মারে। অমনি আমি নিশিকে জড়িয়ে ধরে দূরে নিয়ে আসি। আনিস তখন রেগে বলতে থাকে, আর কখনো যদি তুই ওই খারাপ মেয়ের কাছে যাস তাহলে তোকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবো। সাথে আরো অনেক কিছু বলে।

নিশি আমার সাথে ভালো করে কথা বলছে না। হয়তো সে ভেবেছে আমার জন্য সে বাবার হাতে মাইর খেয়েছে। রাগ সবার ই তো হবে। এই বয়সে বাবা মারাটা কেউ মেনে নিতে পারবে না। নিশির চোখে আমি অপরাধী হয়তো।

বাড়ির থমথমে পরিবেশ নিয়ে কেটে গেছে দুইতিন দিন। মাঝে মাঝে নিশি ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে কারো সাথে কথা বলে। জিজ্ঞেস করলে বলে বান্ধবীর সাথে কথা বলছে। আজ বিকেলে নিশি একটা বই হাতে নিয়ে রান্না ঘরে আমাকে বলে,মা আমি নিলাদের বাড়ি গেলাম। কিছু পড়া ঠিক করতে হবে। আমিও ভাবলাম, মন খারাপ করে আছে কয়েকদিন থেকে, তাহলে যাক, একটু ঘুরে আসুক, মন ভালো হবে।

আমি শুধু বললাম, সন্ধ্যার আগে বাড়িতে আসবে। তারপর নিশি চলে গেছে। কিন্তু মাগরিবের আজান শেষ হয়ে গেছে তবুও ফিরছে না। ছটফট করছে মন। আজিজ বিকেলে চা খাওয়ার জন্য মোড়ের দোকানে যায় আর মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়িতে আসে। সামর্থ্য মেয়ে বাড়ি ফিরে নি এই কথা কাউকে বলা যাবে না। বদনাম রটাবে। তাই কোন রকম অস্থির মন নিয়ে বাড়িতে থাকি। আনিস বাড়ির ফিরার সাথে সাথে আমি সব কিছু খুলে বলি। তারপর দুজনেই যায় নিলাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ওদের বাড়ি যেতে যেতে এশার আজান দিয়েছে । আমরা ভিতরে গিয়ে নিলাকে জিজ্ঞেস করলাম,বিকালে নিশি আসছিলো নাকি।

নিলা বললো সে আসে নি। আমি সাথে সাথে মাথা ঘুরে নিচে বসে পড়ি। সন্ধ্যা থেকে যে ভয় করছিলাম তাই হলো। কেন আমি আটকানোর চেষ্টা করলাম না। নাহ্ এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না,, বড় কিছু ঘটে যাওয়ার আগে নিশিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা আবারও ফিরে আসি। কাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না। নিলা বলেছে,নিশির কোন ছেলের সাথে সম্পর্কেও নাই। তাহলে কোথায় গেলো?

আমরা আবারও নিশির মায়ের কাছে খোজার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। উনার বাড়ির পাশের একজন ভিতরে পাঠালাম নিশি আছে নাকি দেখতে। একটু পরেই উনি ফিরে এসে বলেন, নিশি উঠোনে দাঁড়িয়ে কারো সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে আর ওর মা বারান্দায় বসে আছে। আনিস ভিষণ রেগে গেলো। অন্তত,যেটা ভেবেছিলাম সেটা নিশি করে নি ভাবে একটু প্রশান্তি পেলাম। আনিসকে বুঝিয়ে বললাম, আপাতত আজ এই বিষয় নিয়ে যেন আমরা এখনে ঝামেলা না করি। মানুষ জানাজানি হলে, ভালো কথাও খারাপ রুপ নেই।

বাসায় এসে রজনীর সাথে কথা বললাম। মেয়েটা প্রতিদিন আমার সাথে কথা বলবেই। রজনী আর কিছু দিন পরে আসবে। সে এসেই নিশির সাথে কথা বলবে।

৬/৭ দিন পার হয়ে গেছে নিশি ও বাড়ি থেকে এখনো ফিরে নি। আমি দুই এক জন কে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিলাম বাড়িতে আসার জন্য তাও আসে নি। গ্রামের মানুষের মুখে মুখে একই কথা, নিশি নাকি সব সময় ফোনে কথা বলে। ফেসবুকে নাকি তার কত রকম ছবি দেওয়া। কেউ কেউ আমার মুখের সামনে বলে, বে**র পেট থেকে ভালো মেয়ে বের হয় নাকি। মা মায়ে তো সব সময় রংচং মেখে টইটই করে ঘুরে বেড়ায়।

আজ একজন এসে বলে,, নিশিকে নিয়ে ও বাড়িতে নাকি ঝামেলা হয় সব সময়। আর সহ্য করতে পারছি না। কিভাবে মেয়েটা এতো নির্লজ্জ হলো। আমি সোজা ওই বাড়িতে চলে গেলাম। যেতেই দেখি, বাড়ির ভিতর থেকে বড় বড় কথার শব্দ আসছে। নিশি বাড়ির সামনে বাগানে বসে ফোনে কিছু একটা করছে।বাড়িতে এমন ঝামেলা হচ্ছে সেগুলো তার কোন তোয়াক্কা নাই। সে আপন মনে ফোনে বিভোর হয়ে আছে।

আমি সরাসরি নিশির হাত থেকে ফোন টা নিয়ে একটা গাছের সাথে আছাড় মারি। ফোন ভেঙে গেছে সাথে সাথে। আমি নিশির গায়ে এই প্রথম হাত তুললাম। চার পাঁচটা থাপ্পড় মেরে বলি,, এত্তো নির্লজ্জ কিভাবে হলে তুমি? সামান্য লজ্জাও তোমার ভেতর নাই। পাড়া প্রতিবেশী সবাই তোমার নামে যা নই তা বলে বেড়াচ্ছে সেগুলোতে তোমার কোন তোয়াক্কা নাই। খারাপের সঙ্গে থেকে খারাপ হয়ে গেছো?

আমার কথা শুনে ভিতর থেকে,, নিশির মা বাইরে চলে আসে আর আমার সাথে ঝগড়া করতে শুরু করে। উনার বলা বিশ্রী কথা গুলোর রাগ আমি নিশির উপর ঝাড়লাম। পাশে পড়ে থাকা একটা গাছের চিকন ডাল দিয়ে নিশির পিঠে মারতে শুরু করি আর বলি,,

সব ভুলে গেছো তুমি? রাতে যখন জ্বরের ঘোরে ভুল বকতে তখন কই ছিলো তোমার এতো আদরের মা? স্কুলের সবাই যখন তোমাদের খারাপ মেয়ের বাচ্চা বলতো তখন কই ছিলো তোমার ধোঁয়া তুলসি পাতা মা? ভেবে দেখো তো উনি কখনো তোমাকে সৎ উপদেশ দিয়েছে?

পাড়ার সবার মুখে তোমার কেচ্ছাকাহিনী জাকজমক ভাবে রটিয়ে আছে এখন এগুলো বুঝো তুমি??

সাথে সাথে নিশির মা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলা শুরু করে আর অমনি উনার বর ঝাটা দিয়ে উনাকে মারতে আরম্ভ করে। মারতে মারতে বলছেন, মা* তুই আমার জীবন টা শেষ করে দিলি,,কখনো আমার বাধ্য মতো ছিলি না,, আর বয়স হয়ে গেছে তাও তোর চরিত্রের পরিবর্তন হয় নি। আমি কামায় করি নিজের ছেলে মেয়ের জন্য আর তুই সেই টাকা দিয়ে অন্যের জন্য খরচ করিস,,,,

তখন আমি নিশির চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম,, তার এখানে থাকা টা কতটা অপমানজনক। আমি নিশিকে নিয়ে চলে আসছি। রাগের মাথায় অনেক মেরেছি মেয়েটা কে। আমার নিজের ই খুব খারাপ লাগছে এখন। বাড়িতে আসার পরে নিশিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম।

রজনী এসেছে আজ বিকালে। পুরো ঘটনা টা শোনার পরে রজনী আগেই চলে এসেছে। আজ সারাদিন রজনী নিশিকে নিয়ে অনেক ঘুরাঘুরি করেছে। জামাই মেয়ে এসেছে তাই আমিও রান্না নিয়ে অনেক ব্যাস্ত ছিলাম।

চলবে ,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here