#অভিশপ্ত_জীবন
সিজন 2
পর্ব ৬
এইসব ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো। চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে, আর একবার কল আসুক কিন্তু না, এলো না। রাসেলের নাম্বার ছিলো নাকি অন্য কারো নাম্বার তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বতে আছি। নিশির আসার শব্দ শুনতে পেয়ে ফোন টা আগে যেখানে ছিলো সেখানে রেখে আমি অন্য মুখো হয়ে সুয়ে আছি। নিশি এসে বলে,
আপা আমার ফোন টা কই রে।
দেখ আছে বিছানার উপরেই, জান নামের কেউ একজন কল করেছিল,,
নিশির চোখে মুখে ভয়ে ছাপ স্পষ্ট,, তুতলিয়ে জিজ্ঞেস করে,, তুই রিসিভ করেছিলি??
এই শরীর নিয়ে উঠে রিসিভ করতে করতে কল কেটে গেলো তাই রিসিভ করতে পারিনি, আফসোস, একটু আগে যদি রিসিভ করতাম তাহলে আমার ছোট বোনের জান কে তা জানতে পারতাম।
আরে আপা তুইও না, আমার বান্ধবীর নাম্বার এভাবে সেভ করেছি, সেও নাকি আমার নাম্বার কলিজা দিয়ে সেভ করেছে। বিশ্বাস কর অন্য কিছু না রে।
বলেই তারাহুরো করে বাইরে চলে গেছে। আমি জানি সব কথা গুলো নিশি মিথ্যা বলেছে। অপেক্ষায় আছি রাসেলের ফিরার। সন্ধ্যার আগে অনেক ফলমূল এবং মাদার হরলিক্স নিয়ে হাজির। আমার সব কিছু তে আগের মতোই রাসেলের নজর,, হরলিক্স ফুরিয়ে গেছে কাল, আমি বলিও নি অথচ আজ নিয়ে চলে আসছে। এই ফলমূল গুলো খেতে আমার বিরক্ত লাগে তবুও প্রতিদিন নিশি জোর করে খাইয়ে দেয়। মাঝে মাঝে এমন আচরণ দেখে মনে হয়,, আমার মনে যে সন্দেহ আছে তা নিতান্তই ভুল।
যায়হোক, রাসেল আমাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে, চুল গুলো আঁচড়িয়ে দেওয়ার জন্য চিরুনি নিচ্ছে। আমি শান্ত গলায় বললাম,,
আচ্ছা রাসেল,, তোমার আগের নাম্বারে কল দিলাম সেদিন কিন্তু বন্ধ বললো কেন?? তুমি কি অন্য নাম্বার ইউজ করো?
আরে না, পাগল নাকি অন্য নাম্বার কেন ইউজ করবো, এই নাম্বার টা সবার কাছে দেওয়া আছে, চাইলেই কি চেঞ্জ করা যায়??
তাহলে কি তোমার ফোনে দুটো সিম আছে?
হুম আছে তো, সেই অনেক আগে থেকেই তো আমার দুটো সিম, কেন তুমি জানোনা??
আরে জানি তো,, ওইদিন দুই নাম্বারেই ট্রাই করলাম কিন্তু হলো না তাই জিজ্ঞেস করলাম।
অহ!! হয়তো নেট প্রব্লেম ছিলো। আচ্ছা আমার মেয়ে গুলো কি করছে এখন দেখি তো,,, বলেই সে আমার পেট নিয়ে খেলতে শুরু করে। কেন যেন মাঝে মাঝে মনে হয় অযথা আমি কষ্টে পাচ্ছি, আমার ভালোবাসা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। আর আমার বোন আর যায় করুক আমার ক্ষতি হবে এমন কিছু কখনোই করবে না।
নিশি সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে,, মাঝে মাঝে রাসেলের থেকে হ্যাল্প নেওয়ার জন্য এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। রাসেল ও নিশিকে গাইড করে সব সময়। সামনে নিশির টেস্ট এক্সাম, তাই রাসেল প্রায় সব সময় নিশিকে পড়ার জন্য বলে। নিশি পড়তে না চাইলে জোর করে বই ধরিয়ে দিয়ে বলে, রেজাল্ট খারাপ হলে তোমার আপা সারাজীবন আমাকে খোচা দিয়ে বলবে, আমার জন্য তোমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।
রাসেল মাঝে মাঝে নিশিকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়ায়। যদিও ঘরের দরজা খোলা থাকে, বাইরে আমার শশুর শাশুড়ী সবাই থাকে। যদি খারাপ কিছু দেখতো তাহলে তো নিশ্চয়ই তারা প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু আমার মন বুঝে না। সব সময় কু চিন্তা মাথায় ঘুরাঘুরি করে।
নিশি আমাকে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাওয়ানোর পরে পড়তে বসেছে। কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ওইঘর থেকে ডাক দিয়ে বলে,, কি রে আপা! দুলাভাই আসছে নাকি রে?
না এখনো আসেনি।
আসলে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিস তো,, একটা কোশ্চেন বুঝতে পারছি না।
আমি কোন উত্তর দিলাম না। কেন যেন বিরক্ত লাগছিলো প্রচুর। বেশ কিছুক্ষণ পরে রাসেল এসে বলে,, কি গো আমার মেয়ের মা! কি করো গো?
আমি আর কি করবো, প্রতিটি মুহুর্তের যা কাজ তাই। রাসেল আমাকে ঠিক করে সুইয়ে দিয়ে বলে,, আচ্ছা নাও, মন খারাপ করে থেকো না। আর কয়েকদিন পরেই বেবি হবে। তারপর তুমি আগের মতো চঞ্চল হয়ে চলাচল করতে পারবে। এখন ঘুমিয়ে পড়ো চুপচাপ।
আচ্ছা রাসেল একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আমাকে বলে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? তুমি তো আমার রানী, যা ইচ্ছে হুকুম করুন মহারানী। আপনার বান্দা হাজির হুকুম পালনের জন্য।
আমি সিরিয়াস মুডে থাকলেও রাসেল ফানি মুডে আছে। আমি ভনিতা ছাড়াই বললাম,, এতোদিন তোমার আমার মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়নি,তোমার তাতে খারাপ লাগে না?
রজনী,, বিছানায় থেকে থেকে তুমি পাগল হয়ে গেছো তাই এমন উদ্ভট প্রশ্ন করছো। তুমি ভালো করেই জানো তোমাকে আমি কতটা ভালো বাসি। তোমার এই অবস্থায় আমি ওইসব চিন্তাও করি না কখনো।
আমি রাসেলকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলি,,আমি মরে যাবো যদি কখনো শুনি তোমার আমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে। প্লিজ আমার বিশ্বাসের মর্যাদা টা রাখো।
হঠাৎ করে নিশি এসে হাজির,, আমাদের এমন ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত দেখে সে হেসে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। তারপর বলে,, আপা তুই সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী রে,, দুলাভাইয়ের মতো ভালো মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিস। আচ্ছা দুলাভাই এখন আপাতত বউয়ের আঁচলের নিচে থেকে বের হয়ে একটু শালীর ফরমায়েশ পুরোন করুন।
জ্বী, এই বান্দা দুই বোনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। বলুন কি করতে হবে।
আপাতত কিছু কোশ্চেন বুঝিয়ে দিলেই হবে।
ওওওও বুঝতে পারছি,, তোমার মতলব কি,,চলো চলো, শুভ কাজে দেরি করে লাভ নেই।
নিশি রাসেলের ডাবল মিনিং কথা গুলো আমার বোধগম্য হয় না। প্রথমে রাসেলের কোশ্চেন বুঝিয়ে দেওয়ার কথার শব্দ শোনা গেলেও এমন ঘরটা স্তব্ধ হয়ে আছে। কারো কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। মনে মনে ভাবছি উঠে গিয়ে দেখবো নাকি কি হচ্ছে ঘরে। যদি ভয়ংকর কিছু দেখি তাহলে কিভাবে সহ্য করবো। কিন্তু না দেখলেও তো শান্তি পাচ্ছি না।
এইসব ভাবার সময় ই রাসেল ঘরে চলে আসে। আমি খুব ভালো করে, রাসেলের গলা, মুখ,জামাকাপড়, এবং চুল গুলো লক্ষ্য করলাম। কোথাও কোন কিছু এলোমেলো আছে নাকি। কিন্তু তেমন কিছুই চোখে পড়লো না। এভাবে এতো সন্দেহ নিয়ে বাচা যায় না। সত্যিই এটা মনে হয় আমার রোগ হয়ে গেছে।
সামনে ৫ তারিখে আমার ডেলিভারি ডেট। মনে মনে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন আমার শাশুড়ী। আমিও মুক্তি পাবো এই ঘর বন্দী জীবন থেকে। দিন গুলো ঠেলে পার করছি। নিশির পরিক্ষা শেষ। কিছু দিন পরে ফাইনাল পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ নিশির টেস্ট এক্সাম এর রেজাল্ট হবে। রাসেল বাড়িতে আসার সাথে সাথে নিশিকে ধমকানো শুরু করে। কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। ধমকাধমকির মাঝখানে বুঝতে পারছি, নিশির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।
এতো যত্নের পরে ও যদি রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে সবাই বকাবকি করবে এটাই স্বাভাবিক। নিশি সারাদিন ঘর থেকে বের হয় নি। মা অনেক বার ডেকেছে খাওয়ার জন্য কিন্তু কিছু খায় নি। অনেক জেদি মেয়েটা। আমি কতবার ডাকলাম আমার কাছে আসার জন্য কিন্তু তবুও এলো না। রাতে রাসেল বাসায় এসে জিজ্ঞেস করে,, নিশি কিছু খেয়েছে নাকি। মা বলে, না কিছু খায় নি। এতো করে না বকলেও পারতি। মেয়েটা সারাদিন অনেক কাজ করে, আর কাজের ফাঁকে পড়াশোনা করে। এবার খারাপ রেজাল্ট হয়েছে, দেখিস ফাইনালে খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
রাসেলকে দেখলাম বারান্দা দিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে নিশির ঘরে যাচ্ছে। বিষয়টি আমার কাছে আবারও যন্ত্রনাদায়ক লাগছে। রাসেল গিয়ে জিজ্ঞেস করে,, তুমি খাওনি কেন,, না খেয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছো। চুপচাপ উঠে খেয়ে নাও। এখনো সময় আছে নিজেকে পরিবর্তন করার। প্রথম কথা গুলো এ ঘর থেকে শোনা গেলেও এখন আর শোনা যাচ্ছে না।
আমি অস্থির মন নিয়ে উঠে যাচ্ছি, ওই ঘরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য। আমি আগের দিনের মতো আবারও দরজায় আড়ি পেতে থাকি। রাসেল বলছে,,
আর কত করে বোঝাব তোমাকে,, তুমি যা করছো সব ভুল। আমি না পারছি কাউকে বলতে না পারছি তোমাকে সামলাতে। তুমি কি একটা বার ও তোমার আপার কথাটা ভাবছো? সব কিছু জানার পরে সে কতটা কষ্ট পাবে। তোমাকে নিয়ে তার এবং তোমার মায়ের কত স্বপ্ন। অথচ তুমি সব কিছু ভুলে এইসব জিদ ধরে বসে আছো।
দুলাভাই প্লিজ আমাকে বুঝায়েন না। আমি অনেক চেষ্টা করছি এ পথ থেকে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু নিজের মন কে আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না। তাই তো জেনে বুঝে বারবার ওই একই ভুল করে চলেছি। আমি কি করবো এখন,, কিভাবে সব ভুলে যাবো। কিভাবে বললে আপনি সব কিছু বুঝবেন। আমি জেনে বুঝে আগুন ঝাপ দিয়েছি।
নিশি প্রচুর কান্না করছে, আর রাসেল চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে আবারও বলা শুরু করে।
আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝি নিশি। তোমাকেও বুঝতে হবে, তুমি এখানে থাকলে সব সময় দেখা হবে, আর এই জন্য তুমি চাইলেও ভুলে থাকতে পারবে না। তাই আমি চাই তুমি তোমাদের বাড়িতে যাও। কয়দিন পরে তোমার আপার বাচ্চা হবে। এর মধ্যে তোমার এইসব অতিরিক্ত ঝামেলা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।
এই কথা গুলো বাইরের কারো কানে গেলে লজ্জায় সবাই এক সাথে মারা যাবো। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। আশার করি তোমাকে আর কিছু বোঝাতে হবে না।
কথাটা বলার সাথে সাথে রাসেল দরজা খুলে বাইরে চলে আসে।আমি তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে দেখে রাসেল ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছে। অবাক হয়ে বলে, তুমি!??
সাথে সাথে নিশিও বেড়িয়ে আসছে। মাথাটা ঘুরছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবো। নিশি আমাকে ধরে বলে,, তুই এখানে কেন আপা? কোন দরকার হলে আমাকে ডাকতি,, এভাবে একা একা উঠে আসা উচিত হয় নি তোর।
আমি নিশির গালে স্ব জোরে থাপ্পড় মেরে দিলাম। এখানে এসে তুদের কূ-কীর্তির কথা গুলো শুনে ফেলেছি বলে চমকে গেলি? সত্য কখনো চাপা থাকে না। আমার অনেক আগে থেকেই তোদের সন্দেহ হতো। বারবার চাইতাম যেন আমার সন্দেহ ভুল হয়। কিন্তু হলো না। কিভাবে পারলি বড় বোনের সংসার ভেঙে দিতে।
রজনী কি বলছো যা তা,, পাগল হয়েছো তুমি? সব কিছু না শুনে শুধু মাত্র অর্ধেক শুনে এমন মন্তব্য করা উচিত না।
তুমি চুপ করো,,তোমাকেও চেনা শেষ আমার। আমার বিশ্বাসের মর্যাদা তুমি দাওনি। আমার অবুঝ ছোট বোন কে তোমার ফাঁদে ফেলে,, নিজের যৌন চাহিদা মিটিয়েছো,ছিহ্ঃ
চলবে, ,,,
আসছে,, নতুন মোড়।