#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_২৯
.
.
(৫৪)
“ডক্টর মিস্টার ইমরান দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে তো?”
” নো মিস জেসিকা মিস্টার ইমরান সহ তার দুই বন্ধুর সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে৷ ”
ডক্টরের কথা শুনে জেসিকা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ কিং ফায়ার হ্যারি লিও যদি দ্রুত সুস্থ হয়ে না ওঠে তাহলে এই বড় খেলাটায় তাদের হার নিশ্চিত৷
_________
মেঘ ফারহা অর্নিল ফারিহা মিস্টার এন্ড মিসেস খান আদিল রাফি রোজা এবং তার মা রোহিনী চৌধুরী ম্যানশনে প্রবেশ করতে মেঘের মম ড্যাড মেহবুব চৌধুরী এবং মেহরীমা চৌধুরী দুজনে সকলকে আমন্ত্রণ জানায়৷ মেঘ তার ড্যাডকে আগে থেকে মেসেজ করে দিয়েছিলো বিধায় তিনি সারভেন্টদের বলে গেস্ট রুম গুলো ক্লিন করিয়ে রাখে যাতে ফারহার ফ্যামিলির কারোর কোন অসুবিধা না হয়৷
মিসেস মেহরীমা ফারহাকে বরণ করে ঘরে তুলে নেয়৷ চৌধুরী বাড়ির নতুন বউকে বরণ ছাড়া বাড়িতে প্রবেশ করানোর কোন নিয়ম চৌধুরী বংশে নেই৷
বিধ্বস্ত অবস্থায় সোফার এক কোনে বসে আছে রোহিনী৷ রোজার মুখ ভার হয়ে আছে৷ মেঘের বাবা মা মেঘের থেকে সবটা জানতে পেরে ভিষণ ভাবে মর্মাহত হন৷
মেঘ ফারহা অর্নিল ফারিহা তনু আদিল রাফিকে নিয়ে টেরেসে চলে যায়৷ এদিকে মিসেস মেহরীমা আইরিনের পাশে বসে বলতে লাগলো,” ভাবি আজ যা হয়েছে ভুলে যান৷ একটা কথা মনে রাখবেন সব সময় আল্লাহ যা করে সকলের মঙ্গলের জন্য করে৷ আজ যা যা কিছু আপনাদের সাথে ঘটেছে নিশ্চয়ই এর পেছনে ভালো কোন কারণ আছে৷ ভাবি আল্লাহর উপর ভরশা রাখুন৷ দেখবেন আল্লাহ সব কিছু ঠিক করে দিবে৷”
আইরিন চোখের পানি মুছে মেহরীমাকে বললো,” হ্যাঁ ভাবি আপনি ঠিক বলেছেন৷ কিন্তু আমার মেয়ে দুটোর জীবনে একের পর এক বিপদ এসে চলেছে৷ মেয়ে দুটো কি শান্তিতে বাঁচতে পারবে না?”
” বললাম তো ভাবি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে৷ আর আপনার মেয়েরা আর আমার বউমা একা নয় সেটা কেন ভুলে যাচ্ছেন? আমার মেঘ বউমার পাশে আছে৷ আর ফারিহার সাথে অর্নিল৷ আমার বিশ্বাস আল্লাহ সব কিছু ঠিক করে দিবে৷ ”
” হ্যাঁ ভাবি৷ ভাবি আমরা এই অসময়ে এসে আপনাদের হয়তো অনেক বিপদে ফেলে দিলাম?”
” কি বলেন ভাবি? আমি জানি আপনাদের থাকার জায়গার কোন অভাব হবে না৷ কিন্তু মেঘ আপনার জামাইয়ের রিকুয়েস্টে এখানে এসেছেন বলে বিপদে পড়বো ভাবলেন কি করে? বিপদে আত্মিয় স্বজন যদি পাশে না থাকে তাহলে এমন আত্মিয় স্বজন থেকে কি লাভ বলতে পারেন ভাবি?”
মিসেস মেহরীমার কথা শুনে মিসেস আইরিন এর ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো ৷ তার বড় মেয়ে এমন একটা পরিবার পেয়েছে৷ যে পরিবার তাকে সব সময় সাপোর্ট করে৷ নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখতে চায়৷ এর চেয়ে একজন মেয়ের মায়ের কি চাওয়া থাকতে পারে? মিসেস আইরিন মিসেস মেহরীমার হাত ধরে বলেন,” ভাবি এভাবে সব সময় আমার মেয়েটাকে ভালোবেসো৷ নিজের মেয়ের মত আগলে রেখো৷ ”
” সেটা আপনাকে আর বলতে হবে না ভাবি৷ ফারহা মামুনিকে শুধু আমার ছেলের বউ করে নিয়ে আসি নি৷ এনেছি আমার একটা মেয়ে বানিয়ে বুঝলেন?”
” খুব বুঝলাম৷ এখন চলুন কিচেনে আপনাকে হেল্প করি৷”
” চলুন৷”
” দি এখন আমরা কি করবো? ওই কিং ফায়ার হ্যারি লিও তো পালালো?”(রাফি)
” গাধা ওরা পালায়নি ওদের একরকম তুলে নিয়ে গেছে৷” আদিল ধমক দিয়ে বলল রাফিকে,
ফারহা রেলিং ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে৷ মেঘদের বাড়িটা বিশাল এড়িয়া নিয়ে, মাঝখানে ডুপ্লেক্স বাড়ি৷ বাড়ির পেছন দিকটায় বড় বড় গাছ৷ আর সামনের দিকটায় ফুলের বাগান৷ নানা রকম ফুল গাছে ভর্তি বাগান৷ এক পাশে বড় সুইমিংপুল বসার জন্য চেয়ার টেবিল রাখা ৷ বলতে গেলে বেশ চোখ ধাঁধানো সুন্দর যাকে বলে৷
আদিল রাফির কোন কথাই ফারহার কানে যাচ্ছে না৷ ফারহা আপাদতো নিজের মাইন্ড ফ্রেস করায় ব্যস্ত৷ হঠাৎ পেছন থেকে মেঘ ফারহাকে জড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,” ফারুপাখি এতো মনোযোগ দিয়ে তো আমার দিকেও কখনো তাকাও নি? ”
” মেঘ এই সব কি হচ্ছে? ছোটরা আছে এখানে, ”
” সো ওয়াট! ওরা প্রত্যেকে এডাল্ট ৷”
ফারহা এক প্রকার জোর করে মেঘের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে খেয়াল করে সবাই মুখ টিপে হাসছে৷ ফারহা তার চোখ জোড়া ছোট করে ফারিহাকে বলে উঠলো,” ফারিহা তনু কোথায়?”
ফারিহা আশে পাশে তাকিয়ে তনুকে না দেখতে পেয়ে বলে,” আশ্চর্য তনু কোথায় গেল? ” ফারিহার কথা শুনে অর্নিল বলে উঠলো,
” একমিনিট গাইজ আমরা যখন খান মন্জিল থেকে বের হয়ে ছিলাম তখন তনুও আমাদের সাথে সাথে বের হয়৷ কিন্তু আমাদের গাড়িতে তনু ওঠে নি৷ আমি ভেবেছিলাম তনু হয়তো তোমাদের গাড়িতে উঠেছে৷”
” না অর্নিল আমাদের গাড়িতে তো মম ড্যাড রোহিনী আন্টি ছিলো৷”
মেঘের কথা শুনে ফারহা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারিহাকে বলে,” ফারিহা তোকে যেটা করতে বলেছিলাম করেছিস?”
” হ্যাঁ আপু, আমি তার ফোন হ্যাক করে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করার দু সেকেন্ড পর সব ডিলিট হয়ে যায়৷ সে হয়তো আগে সন্ধেহ করেছিলো তাই দ্রুত সব নম্বর ছবি ডেটা ডিলিট করে দিলো৷”
” সে গুলো কোথায়?”
” আমার অর্নিলের ল্যাপটপে ৷”
” অর্নিল আপনি যদি আপনার ল্যাপটপ কাইন্ডলি কিছুক্ষনের জন্য আমাকে দিতেন?”
” এটা কেমন কেমন কথা বলছেন ফারহা? দিবো না কেন ল্যাপটপ? দেখুন এভাবে বলবেন না৷ আমি এখুনি গিয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে আসছি৷”
” ওয়েট অর্নিল যাচ্ছেন যখন ফারিহাকে নিয়ে যান৷ এখানে থাকলে ওর মানুষিক চাপ বাড়বে যেটা আমি চাই না৷ এমনিতে ফারিহা অসুস্থ ওর এখন বিশ্বামের প্রয়োজন৷”
” সেটা এখানে থেকেও করা যায়৷ আপু আমি কোথাও যাবো না৷ এখানেই থাকবো৷”
” ফারপাখি ফারিহা যখন থাকুক না৷”
ফারহা মেঘের কথা পাত্তা না দিয়ে অর্নিলকে বলল,” অর্নিল প্রথমবার যেভাবে আপনার হবু বউকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন আজ প্রয়োজন পড়লে সেভাবে নিয়ে যাবেন৷”
ফারহার কথাটা অর্নিলের বেশ পছন্দ হয়েছে৷ অর্নিল নিজেও চাইছিলো না ফারিহা এখানে থাকুক৷ কারণ ফারিহার শরীরের ক্ষত গুলো এখনো সম্পূর্ন শুকায়নি৷ আর এখানে থাকলে রেস্ট ফারিহা একদমি নিবে না সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে অর্নিল৷ তাই দেরি না করে সত্যি সত্যি ফারিহাকে পাজাকোলে নিয়ে টেরেস থেকে নেমে যায়৷ মেঘ ওদের সিকিউরিটির জন্য কয়েকজন গার্ড পাঠিয়ে দেয় সাথে সাথে৷
অর্নিলের গাড়ি বেড়িয়ে যেতে ফারহা আদিল আর রাফিকে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে দেয়৷ দুজনে চলে যেতে মেঘ ফারহাকে কোলে বসিয়ে বলে,” জান তুমি ঠিক আছো?”
ফারহা মেঘের মুখের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” না মেঘ আমি ঠিক নেই ৷ একদম ঠিক নেই৷ ”
মেঘ ফারহার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে৷ ফারহা মনে মনে ভিষণ কষ্ট পেয়েছে এটা বুঝলেও কিন্তু কার জন্য কষ্ট পেয়েছে এটা বুঝতে পারছে না মেঘ৷ মেঘের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ফারহা বলে উঠলো,” মেঘরাজ আমি যদি তোমার বুকে মাথা রেখে একটু কান্না করি তুমি কি খুব রাগ করবে?”
মেঘ কোন কথা না বলে ফারহাকে বুকের জড়িয়ে ধরে৷ ফারহা মেঘের বুকে মাথা রেখে হু হু করে কাঁদতে লাগলো৷ ফারহা আজ কতো বছর পর কাদঁছে সেটা সে নিজেও জানে না৷ এতোটাই কাঁদছে যে মেঘের শার্ট ফারহার চোখের পানিতে ভিজে টইটম্বুর ৷ মেঘ আজ আর বাধা দিচ্ছে না৷ ফারহাকে কাদঁতে বাধা না দেওয়ার কারণটা হয়তো মেঘ নিজেও বুঝতে পারছে৷ তবুও সবটা অস্পষ্ট ধূসর তাই মেঘ কিছু বললো না৷ ফারহা মেঘের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে৷ মেঘ ফারহা কোন সারা শব্দ না পেয়ে তাকিয়ে দেখে ফারহা ঘুমিয়ে পড়েছে৷ মেঘ মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এতো অল্প বয়সে মেয়েটা কি করে এতো মানুষিক চাপ সহ্য করতে পারে? এতোটুকু মাথায় হাজারটা প্লান গিজগিজ করে আর বুদ্ধির কথা নাই বা বললাম!
মেঘ ফারহাকে পাজাকোলে নিয়ে টেরেস থেকে নামতে দেখে দরজার কাছে রোজা আদিল রাফি দাড়িয়ে আছে৷ প্রত্যেকের চোখে পানি৷ আদিল কিছু বলতে যায় তখনি মেঘ ইশারায় কথা বলতে বারণ করে৷ আদিল আর কিছু না বলে দরজার সামনে থেকে সরে দাড়ালো৷ মেঘ ফারহাকে নিয়ে নিজের বেডরুমে নিয়ে এসে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপালে ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে সরে এলো৷
(৫৫)
লিও টিপটিপ করে চোখের পাতা মেলে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিজেকে একটা ছোট্ট রুমে আবিষ্কার করে৷ লিও উঠে বসার চেষ্টা করতে হাতে ব্যাথা অনুভব হতে দাঁতে দাঁত চেপে সে ব্যাথা সহ্য করে উঠে বসে৷ রুমের ভিতর একটা জানালা আছে সেটা বন্ধ থাকায় রুমটায় কেমন গুমুট গুমুট লাগছে৷ লিও ভেবে পাচ্ছে না সে এখানে কি করছে? তার হয় জেলে নয় হসপিটালে থাকার কথা কিন্তু দুটো প্লেসের একটাতেও যে সে নেই এটা বুঝলো লিও৷ কিন্তু এটা কোন জায়গা? আর কে তাকে এখানে নিয়ে আসলো সেটাই বুঝতে পারছে না লিও৷ লিও রুমটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, রুমে একটা বেড একটা টেবিল আর একটা চেয়ার আছে৷ বাকি পুরো রুম ফাঁকা৷ লিও এর ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন শরীরে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে বেড থেকে নামতে শরীরের ব্যাথায়”চ” বিরক্তি সূচক শব্দ মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে৷ লিও বেড থেকে উঠে দাড়াতে নিলে লিও ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পরে যেতে নিলে দুটো শক্ত হাত লিও কে ধরে ফেলে৷ লিও ভ্রুযুগল কুচকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো ,” জেসিকা!”
” ইয়েস ডার্লিং জেসিকা৷ তো এই ভাঙা শরীর নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো শুনি?”
” ওয়াশরুমে৷” কথাটা বলে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে তাকালো লিও৷ জেসিকা লিওয়ের রাগ দেখে মুচকি হেসে বললো,” আমি তোমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে হেল্প করছি ওয়েট৷”
লিও কিছু বললো না কারণ তার সত্যি ওয়াশরুমে যাওয়াটা ভিষণ রকমের প্রয়োজন৷
লিও ওয়াশরুমের কাজ শেষ করে বের হয়ে আসতে জেসিকা লিওকে ধরে বেডে শুইয়ে দেয়৷ লিও বেডে শুয়ে জেসিকাকে প্রশ্ন করে৷
” জেসিকা কিং ফায়ার আর হ্যারি কোথায়?”
” পাশের রুমে শুয়ে আছে তবে এখনো তাদের জ্ঞান ফিরে নেই৷ আর ফিরবেই বা কি করে? আরু মারুর হাতে যেভাবে মার খেয়েছে তারপরও যে বেঁচে আছে সেটা তোমার গড এর কাছে থ্যাঙ্ক ইউ বলো লিও৷ ”
” আমাদের এখানে কেন নিয়ে এসেছো?”
” খুব সিমপিল রিজন লিও৷ আমি আরু মারু দুজনের মৃত্যু দেখতে চাই৷ প্রতিশোধ নিতে চাই প্রতিশোধ৷”
” ওয়াট! প্রতিশোধ ! কিন্তু কেন? তোমার সাথে ওদের দুবোনের কিসের শত্রুতা?”
” শত্রুতা! কিসের শত্রুতা জানতে চাও? ওদের দুবোনের জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে৷ আমি আমার মা বাবা কে হারিয়েছি শুধু মাত্র ওদের জন্য, আর আমি ওদের কে ছেড়ে দিবো ভাবলে কি করে লিও? এই জেসিকা তার শত্রুদের ছেড়ে দিতে জানে না৷ এটা নিশ্চয়ই জানো?”
” জানি কিন্তু…..” বাকিটা বলার আগে জেসিকা তার হাত দিয়ে লিওয়ের ঠোঁটের উপর হাত রেখে বলে,” সময় এলে তুমি তোমার সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবে লিও৷ এখন রেস্ট নেও আমি আসছি ৷”
” কোথায় যাচ্ছো?”
” শত্রু শত্রু খেলা খেলতে বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি তোমার এখানে কোন অসুবিধা হবে না৷ আমি তিনজন নার্স রেখেছি তারা তোমাদের দেখা শুনা করবে৷ টাইমলি মেডেসিন খাবার খাইয়ে দিবে৷ আর হ্যাঁ পালানোর চেষ্টা একদম করবে না তাহলে আমার কিছু হবে না কিন্তু তুমি তোমার শত্রু আরু মারুর হাতে মারা পড়বে সো বি কেয়ারফুল ৷”
কথা গুলো বলে জেসিকা বেরিয়ে গেল৷
_______
দু’ঘন্টা ঘুমানোর পর আদুরে গলায় তার নাম শুনে ফারহার ঘুম ভেঙে যায়৷ অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে৷ ফারহা দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখে মিসেস মেহরীমা বসে আছে৷ ফারহাকে উঠতে দেখে মেহরীমা বলে,” মামুনি দ্রুত গোছল করে এসো ৷ মেঘ আমাকে বলেছে তুমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাওনি৷ ”
ফারহা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো ,” মামুনি মেঘ খেয়েছে?”
মেহরীমা বেশ খুশি হলো এটা দেখে তার ছোট ছেলের ভালো মন্দ নিয়ে ফারহা ভাবে৷
” না মেঘ এখনো খায়নি তুমি খাওনি বলে৷ দেখো বেলা কতোটা হয়েছে? চারটা বেজে গেছে অলরেডি৷ সবার লাঞ্চ করা শেষ শুধু তুমি মেঘ আর তোমার বান্ধবী কি যেন নাম হ্যাঁ তনু তার খাওয়া বাকি আছে৷”
তনু নামটা শুনে ফারহার ঘুম একদম ছুটে গেল৷ ফারহা বেড থেকে নেমে মেহরীমাকে বলে,” মামুনি যাস্ট বিশমিনিট আমি এখুনি শাওয়ার নিয়ে আসছি তুমি টেবিলে খাবার দিয়ে দেও৷” বলে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ফারহা৷
টপটপ করে চুল দিয়ে পানি পড়ছে ফারহার ৷ ফারহা চুলের পানি না মুছে ড্রইংরুমে চলে আসলো ৷ ড্রইংরুমে তনু মেঘ আদিল ব্যতিত আর কেউ নেই৷ ফারহা ভেজা চুল দিয়ে পানি পড়তে দেখে আদিলের দৌড়ে গিয়ে টাওয়াল নিয়ে এসে ফারহার ভেজা চুলের পানি মুছতে মুছতে বলতে লাগলো,” আপা তুই কি কখনো বড় হবি না? দেখ তোর চুলের পানি ফ্লোরে পড়ে ভিজে গেছে৷ হুট হাট না দেখে যে কেউ স্লিপ কেটে পরে হাড়গোড় ভেঙে ফেলতে পারে৷”
” পিচ্চি এতো চুল মোছার সময় নেই আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে৷ ”
” হু শুধু তোর একার ক্ষিদে পায় তাই না? জিজু তোর জন্য না খেয়ে আছে ৷”
ফারহা মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘ মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর তনু তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে, বেপারটা ফারহার একদমি ভালো লাগলো না৷ ফারহা রেগে মেঘকে বলে উঠলো ,” মেঘ এখনো বসে আছো কেন? ডাইনিংয়ে চলো আমার ক্ষিদে পেয়েছে৷” মেঘ বিনাবাক্যে সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে ডাইনিংয়ে চলে যায়৷ ততোক্ষণে ফারহার চুল গুলোর পানি শুকিয়ে এসেছে৷
” আপা তুই খেয়ে নে আমি রুমে গেলাম৷”
” ওকে”
ফারহা ডাইনিংয়ে এসে দেখে মেহরীমা মেঘের মম খাবার বেরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে৷
মেহরীমা ফারহাকে মেঘের পাশের চেয়ারে বসতে বলে৷ তনু ফারহার অপজিটে বসে খাবার খেতে লাগলো৷ ফারহা নিজের হাতে খেতে নিলে মেহরীমা বারণ করে৷ নিজের হাতে ফারহাকে খাইয়ে দিতে লাগলো৷ ফারহা খেতে খেতে তনুকে বলে ওঠে ,
.
.
.
#চলবে…………