তুমি শুধু আমার – পর্ব ৯

0
515

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ৯

রায়হান, কেমন আছিস বৃষ্টি মা,,ভালো আছিস তো?
বৃষ্টি,বাবা এখানে দাড়িয়ে সব বলবে না কি ভিতরে ঢুকতে দিবে?

ও হ্যাঁ, আয় ভেতরে আয়।বৃষ্টি ভিতরে ঢুকেই দেখে সামনে কালা কোট পরে একটা লোক বসে আছে,, তাকে দেখা মাএই বৃষ্টি তার বাবার দিকে তাকায়।

রায়হান রহমান;; বৃষ্টি এইখানে বসে পরো, বৃষ্টি তার বাবার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, কি দেখছিস বৃষ্টি মা তারাতারি উনার সামনে বসে পেপারে সাইন করে দেও কিন্তুু বাবা কিসের পেপারে সাইন করবো আর আঙ্কেলেই বা এখানে কেনো?

কামরুল হোসেন;;কেমন আছো বৃষ্টি মা?

বৃষ্টি;;ভালো আছি আঙ্কেল কিন্তু আপনি এইখানে হঠ্যাৎ বাবার সাথে দেখা করতে এসেছেন।

কামরুল হোসেন;;হুম,,,,আচ্ছা বৃষ্টি মা তুমি কি নিজের ইচ্ছায় এই পেপারে সাইন করছো না কি তোমাকে জোর করে এই পেপারে সাইন করাচ্ছে(রায়হানের দিকে তাকিয়ে)

রায়হান;;কি যে বলিস না তুই কামরুল,,আমি কেনো জোর করবো,,বৃষ্টি মা নিজের ইচ্ছাতেই পেপারে সাইন করবে।

বৃষ্টি;; আঙ্কেল আপনি কি বলছেন এইসব,, আমাকেই বা কে জোর করবে আর কিসের পেপারে আমি সাইন করবো?বাবা এইসব কি হচ্ছে,

ফ্রেশব্যাক…..

কহিনুর;;এই নেও তোমার কফি,,,,,

—রায়হান, তুই আমার বাসায় ঠিক সময় এসে পরিস,আচ্ছা রাখছি।এই বলেই কল টা কেটে দেয়।

কহিনুর;;কফি টা টেবিলে রেখে, কার সাথে কথা বললে তুমি আর কে আসবে আমাদের বাসায়?

রায়হান,আসলেই দেখতে পারবে?
-কহিনুর, তুমি কি করতে চাইছো বলো তো আর কার সাথেই বা ফোনে কথা বললে?

রায়হান,আমার বন্ধু কামরুলের সাথে,,,,আমি মেঘ আর বৃষ্টির ডিভোর্স করাবো?আমি এইভাবে আমার বৃষ্টি মা কে কষ্ট পেতে দেবো না।

কহিনুর;;কিইই, পাগল হলে না কি,তুমি কিন্তুু এইটা ঠিক করছো না? বৃষ্টি যদি যানতে পারে যে তুমি মেঘের কাছ থেকে ওকে আলাদা করতে চাইছো তাহলে আমাদের মেয়েটা খুব কষ্ট ভাবে। তুমি বাবা হয়ে এইভাবে নিজের মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারো না।
রায়হান,আমি যা করছি বৃষ্টির ভালোর জন্য করছি,তুমি এর মাঝে বাধাঁ দিতে আসবে না আমি চাই না মেঘের মতো একজন মাফিয়ার সাথে আমার মেয়ে সংসার করুক।
কহিনুর, আমি মানছি মেঘ বৃষ্টি কে জোর করে বিয়ে করেছে কিন্তুু বৃষ্টির কোন ক্ষতি করেনি।মেঘ বৃষ্টি কে খুব ভালোবাসে,ওদের দুজন কে ওদের মতো থাকতে দেও।
রায়হান আর কহিনুর দুইজনের কথা কাটাকাটির মাঝেই কহিনুর নিজের রুম থেকে বৃষ্টি কে দেখা মাএই নিচে চলে যায়।

বতমান,,,,,

–রায়হান,বৃষ্টি মা পেপার টায় সাইন করে দে।
বৃষ্টি,কিন্তুু বাবা আমি কিসের পেপারে সাইন করবো সেইটা তো বলবে?
রায়হান,তোর আর মেঘের ডিভোর্স পেপার?তুই মেঘ কে ডিভোর্স দিবি,আমি চাই না তুই এই মাফিয়া টার সাথে,,,,,

বৃষ্টি;;চুপ করো বাবা চুপ করো, অনেক বলেছো মেঘ মাফিয়া, মেঘ খুনি,, হ্যাঁ আমি মানছি মেঘ একজন মাফিয়া একজন খুনি,শোন বাবা একটা পয়সার যেমন এপিঠ ওপিঠ থাকে ঠিক তেমনি মেঘের ও ভালো দিক আর খারাপ দিকও আছে।তোমরা শুধু ওই মানুষ টার খারাপ দিকটাই দেখছো আর আমি ওই সাথে থেকে তার ভালো দিকটা দেখিছি,যে মানুষ টা আমাকে এতো ভালোবাসে আর তুমি আমার বাবা হয়ে বলছো তাকে ডিভোর্স দিতে।আমি কখনই মেঘ কে ডিভোর্স দিতে পারবো না।

রায়হান,কেনো পারবি না ডিভোর্স দিতে, মেঘের মতো একজন মাফিয়ার সাথে কেনো থাকতে চাইছিস,কেনো বৃষ্টি মা কেনো?

বৃষ্টি;;কারন আমি মেঘ কে ভালোবাসি বাবা খুব ভালোবাসি আমি মেঘ কে, নিজের অজান্তে আমি মেঘ কে ভালোবেসে ফেলেছি, আমি মেঘ কে ছাড়া থাকতে পারবো না,এই বলেই বৃষ্টি বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

—-রায়হান,, বৃষ্টি মা শোন আমার কথা টা তো একটি বার শোন,,
কহিনুর, বাধাঁ দিও না,,আমাদের মেয়ে টা অনেক বড় হয়ে গেছে, নিজের ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে,তুমি ওকে আর বাধাঁ দিও না, দোয়া করি বৃষ্টি যেনো মেঘের সাথে সুখে থাকে।
হুম তুমি ঠিক বলেছো,আমার এমন বারাবারি করাটা ঠিক হয়নি।

—-বৃষ্টি নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছে আর বাবা বলা কথা গুলো ভাবছে,কি করে বাবা আমাকে এইভাবে কষ্ট দিতে পারলো।এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি বাসায় চলে আসে।বৃষ্টি কে একা আসতে দেখে এলিনা বলে,,,,

এলিনা,কি রে বৃষ্টি তুই একা কেনো মেঘ দাদু ভাই কোথায়?
বৃষ্টি,উনি আমাকে নিজের বাসায় নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেছে।
এলিনা,,ও আচ্ছা,মেঘ তোর বাবা মার সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়ে ছিলো,,তাহলে এতো তারাতারি চলে আসলি যে,

বৃষ্টি;;ভালো লাগছে না দাদি, তাই চলে এসেছি,,এই বলেই বৃষ্টি উপরে চলে যায়।নিজের রুমে গিয়ে বিছার বসে মেঘের একটা ছবি হাতে নিয়ে বলে,ভালোবাসি, ভালোবাসি খুব ভালোবাসি মিষ্টারঃমাফিয়া হাসবেন্ড, ও হ্যাঁ কি যেনো বলে #তুমি শুধু আমার💖এই বলেই বৃষ্টি মুচকি হাসি দেয়।

✨✨✨

অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে চেয়ারে একটা লোক কে হাত, পা, বেধেঁ রেখেছে।সেই লোকটা আর কেউ না কামরুল হোসেন।

কামরুল,কে তোমরা আর আমাকে এইভাবে কেনো বেধেঁ রেখেছো,,
রনি,খুব শখ না স্যার আর ম্যামের ডিভোর্স করানো,এইবার তোর ডিভোর্স করাবে আমাদের স্যার।

কামরুল,কে তোমাদের স্যার আর আমি কারও ডিভোর্স করাই নি আর তোমরা কার কথা বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,ছেড়ে দেও আমাকে।এই কথা বলা মাএই রুমের চারপাশে লাইটের আলো জ্বলে উঠে।

“গায়ে ব্ল্যাক সার্ট তার উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট হাতে রোলেক্সের ঘড়ি,পায়ে ব্ল্যাক সু, চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা হাতে পিস্তল ঘুরাতে ঘুরাতে এসে উকিলের সামনে চেয়ারে এসে বসে। মেঘ কে দেখা মাএই যেনো উকিল ভয় পেয়ে যায়।

মেঘ;;কিরে উকিল খুব শখ না, আমার আর বৃষ্টির ডিভোর্স করানো,তুই কি ভেবে ছিলি আমি কিছুই জানতে পারবো না,রনিকে ফোন করে আমি বৃষ্টির উপর নজর রাখতে বলি।

কামরুল;;আমাকে ক্ষমা করে দিন মিষ্টারঃমেঘ, আমি জানতাম না যে আপনি বৃষ্টির হাসবেন্ড,,, জানলে হয় তো কখনই আমি এই কাজ টা করতাম না,প্লিজ আমাকে এইবারের মতো ক্ষমা করে দিন,আমি কখনো আর কারো ডিভোর্স করাবো না,,,,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমি এখান থেকে অনেক দুরে চলে যাবো।।

মেঘ,রনি উনার কে বাসায় পৌছে দিয়ে এসো,
রনি,ওকে স্যার,,,,
এই বলেই মেঘ এইখান থেকে বের হয়ে যায়।

—-মেঘ বাসায় ফিরে দেখে এলিনা তার জন্য অপেক্ষা করছে।
এলিনা,দাদু ভাই এতো দেরি হলো কেনো আসছে।

মেঘ;;দাদি বৃষ্টি কোথায়?

এলিনা;; বৃষ্টি তার রুমে আছে।মেঘ আর কিছু না বলেই সোজা উপরে চলে যায়।রুমে গিয়ে দেখে বৃষ্টি চুপচাপ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।

মেঘ, কাছে গিয়ে বৃষ্টিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে?কি হয়েছে বৃষ্টি এতো চুপচাপ কেনো কেউ কিছু বলেছে?বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

বৃষ্টি;;আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন?

মেঘ;;এইটা কি ধরনের প্রশ্ন বৃষ্টি?

বৃষ্টি;;বলুন না মেঘ?আপনি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসেন।

মেঘ,তোমাকে আমি আমার নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি,, তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি,এমনি কি তোমার জন্য এই মেঘের প্রান টাও দিতে রাজি কিন্তুু হঠ্যাৎ তুমি এই কথা কেনো বলছো।কি হয়েছে তোমার?

বৃষ্টি;;আচ্ছা,আমি যদি আপনাকে বিষ দেই,,, তাহলে আপনি সেইটা খাবেন(মুচকি হেসে)

মেঘ;;হুম জানপাখি, তোমার জন্য আমি বিষ খেতেও রাজি,,,,

বৃষ্টি;;তাই না কি,,,,

মেঘ;;হুম জানপাখি,,,এইবার দিয়েই দেখো?

বৃষ্টি;;তাহলে এই নিন,,,,একটা ছোট বোতল বের করে,,আর প্রমান করে দেখান যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন,,,,,

মেঘ;;কি এইটা,,,,

বৃষ্টি,,নিয়ে দেখুন কি এইটা,,,,(মুচকি হেসে)

“মেঘ মুচকি হেসে বৃষ্টির কাছ থেকে বোতল টা নেয়া মাএই মেঘের মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়,,,এক মুহুতেই যেনো মেঘের পায়ের তলার মাটি সরে যায,,,মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে,,,,,বিষ!!

বৃষ্টি,হ্যাঁ বিষ,আর প্রমান করুন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন….

মেঘ;;কিন্তুু বৃষ্টি, এইটা খেলেতো আমি মারা যাবো,আর তুমি কি পাগল হয়ে গেছো।
—-মেঘের এমন কথা শুনে বৃষ্টি উচ্চসরে হাসতে লাগলো।

বৃষ্টি;;like seriously মেঘ?সামান্য একটা বিষের বোতল দেখে আপনি ভয় পেয়ে গেলেন।এই আপনার ভালোবাসা,আমি তো মনে করেছি আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন আর এখন তো দেখছি সব আপনার নাটক।

মেঘ;;just shut up বৃষ্টি, তুমি এইসব বলতে পারো না,,, তুমি আমার ভালোবাসা কে এইভাবে ছোট করতে পারো না,,,আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,,,!

বৃষ্টি;;ও হো তাই না কি?তাহলে এই বোতলের বিষ টা খেয়ে দেখান।।

মেঘ;;ok fine,,এই বিষ টা খেতে হবে তাই না?

বৃষ্টি;;হ্যা তাই,,,,,(মুচকি মুচকি হেসে)

মেঘ আর কিছু না বলে সাথে সাথে খেয়ে নিলো,,, সম্পূর্ণ বোতল শেষ করে ফেললো,,এইটা দেখা মাএই বৃষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে।

কিছুখন পরেই মেঘ,যখন দেখলো যে তার কিছুই হচ্ছে না তখন মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখে যে বৃষ্টি মুচকি মুচকি হাসছে।

বৃষ্টি,,মেঘের সামনে বসে মেঘ কে জড়িয়ে ধরে বলে,,,আপনি কি ভেবে ছিলেন আমি আপনাকে বিষ দেবো,, যে মানুষ টা আমাকে এতো ভালোবাসে সেই মানুষ টা কে আমি মেরে ফেলবো,,,আমি যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি মেঘ,,খুব ভালোবাসি মেঘ আপনাকে।

—- বৃষ্টির মুখে ভালোবাসার কথা শুনে মেঘ অবাক হয়ে যায়,
মেঘ বৃষ্টি কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলে,,,
তুমি কি বললে এইমাএ, তুমি আমাকে ভালোবাসো সত্যি তুমি আমাকে,,,,

বৃষ্টি,মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে,,,,বৃষ্টির মুখে হ্যাঁ শুনা মাএই মেঘ বৃষ্টি কপালে ভালোবাসার দিয়ে জড়িয়ে ধরে।মেঘ বৃষ্টি কে ছেড়ে কানে ফিসফিস করে বলে আমাকে কি দিবে তোমার স্বামীর অধিকার,,বৃষ্টি কিছু না বলে মেঘের বুকে মুখ লুকায়,,মেঘ তার উওর পেয়ে গেছে আর কিছু না বলেই মেঘ বৃষ্টিকে কে পাজা কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলো।
.
.
.
বৃষ্টি,মেঘের পানে এক ধ্যানে চেয়ে আছে।তারপর মেঘ বৃষ্টির উপর ঝুকে গিয়ে সারা মুখে কিস করতে থাকে।মেঘ বৃষ্টির ঠোটঁ জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।ঠোটঁ ছেড়ে ধীরে ধীরে গলায় ঠোটঁ দিয়ে স্লাইড করে আর বৃষ্টি চোখ বুজে তা অনুভব করে থাকে।মেঘ তার শাড়ির আচঁল কাধ থেকে সরাতে যাবে তার আগেই মেঘ বৃষ্টির কানে ফিসফিস করে বলে,,,,

—–বৃষ্টি, আমি কি পারবো আজ তোমার সাজটুকু আগোছালো করতে,,দিবে কি সেই অনুমতি?

মেঘের কথায় বৃষ্টি আর কিছু না বলেই মেঘের ঠোটেঁ ঠোটঁ ডুবায়।আজ মেঘ স্বামী হিসেবে সে সার্থক, পেরেছে সে তার ভালোবাসে কে নিজের করে নিতে।এতো দিনের অপেক্ষার প্রহর যেনো আজ অবসান ঘটলো একজন পেরেছে সকল ঘৃনা কে উপেক্ষা করে ভালোবাসতে আর অন্য জন পেরেছে তার ভালোবাসে কে জয় করতে।

—এ যেনো আজ নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো(মেঘ বৃষ্টি),,,,,

#চলবে,,,,,,,

(যানি না কি লিখেছি। কতটুকু আপনাদের ভালো লাগবে।আপনার কাছে থেকে ভালো কমেন্টের আশা করছি।লেখায় ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here