ভুলোনা আমায় – পর্ব ৭

0
226

#ভুলোনা_আমায়
#পর্ব-০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

টুসি ঘরে ঢুকে বললো,
— তামান্না’র পর মেহেদী দেওয়ার সিরিয়াল আমার ছিল। আপনি ডাকলেন কেন বলেন তো?

সোহান টুসি’র হাত ধরে খাটের উপর বসিয়ে বললো,
— আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করবে তুমি?

টুসি কপাল কুঁচকে বললো কি ইচ্ছে শুনি? তারপর ভেবে বলবো পূরন করতে পারি কিনা।

সোহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— ভয় পাচ্ছ?অযথাই ভয় পাচ্ছ,ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমি এমন কোন কঠিন কিছু চাইবো না। শুধু চাই তোমার হাতে মেহেদি পরিয়ে দিতে! দিবে কি সেই অধিকার?
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি মেহেদী নিয়ে আসি। আপনি বসুন।
— তার প্রয়োজন নেই, আমি আগেই এনে রেখেছি।
— কোথায় পেলেন? মেহেদী তো সব ওখানে মেয়েদের কাছে। আপনি তো সেখানে যান না, তাহলে?
— দাদির থেকে নিয়েছি।
— ওহ্ আচ্ছা, এই ব্যাপার।সে জন্যই বলি বুড়ি কেন মেহেদী চাইছে! জিজ্ঞাসা করাতে বলে, আমার দরকার আছে।
— আচ্ছা তাই?
— হুম তাই তো।
— চলো দেওয়া শুরু করি?

টুসি তার ডান হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর সোহান মনে মনে ছক তৈরি করে, দেওয়া শুরু করলো।টুসি মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর ভাবছে এ লোক এতো সুন্দর করে মোহিনী দিতে পারে?অথচ সে মেয়ে হয়েও কখনো মেহেদী দিতে পারে না।

প্রথমে বড় করে বৃত্ত তৈরি করে এর মাঝে ফুল লতাপাতা দিয়ে আর্ট করলো। তারপর বৃত্তের চারিদিকে ছোট বড় ছোট বড় দাড়ির মতো করে এর‌উপর ঢেউ ঢেউ করে আর্ট করলো। তারপর পাঁচ আঙুলের শেষাংশে ছোট করে লতাপাতার আর্ট করে, অতঃপর শেষ করে।

মেহেদী ডিজাইন টা সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল।(লেখিকা ও টুসি’র মতো অকর্মা)

টুসি বলেই ফেললো এতো সুন্দর করে মেহেদী দেওয়া কোথায় শিখেছেন আপনি?
সোহান হেসে বললো,
— সুন্দর হয়েছে বুঝি? এমনিতেই মনের আঁকিবুঁকি গুলো তোমার হাতে প্রকাশ করলাম। তুমি যেহেতু সুন্দর বলেছো তাহলে আমি সার্থক “আলহামদুলিল্লাহ”।
— সত্যি সুন্দর হয়েছে। আমি যাই সবাইকে দেখিয়ে আসি। সবাই চমকে যাবে হা হা হা…
— সবাই দেখলে কিন্তু তুমি ই লজ্জা পাবে, তার চেয়ে এখানেই থাকো। শুকিয়ে গেলে তুলে নিও।
— আরে এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আপনি বেশি বুঝেন,যাই আমি।

আর কি সে চলে গেল দৌড়ে। সোহান হাসতে হাসতে বললো,
— আমার পিচ্চি ব‌উটা,কবে যে বড় হবে আল্লাহ তা’আলা জানেন।
.
.
টুসি না থাকায় তামান্না যে কিনা টুসি’র খালাতো বোন।সে মেহেদী দেওয়া শুরু করে। এখন তার দেওয়া শেষ হলে তিশা দিচ্ছে।যে কিনা কাকাতো বোন টুসি’র। এরমধ্যে টুসি দৌড়ে এসে বললো, –এই দেখ আমার মেহেদী দেওয়া শেষ।

সবাই আশ্চার্য হয়ে তাকায়, কেননা টুসি নিজে মেহেদী দিতে পারে না এটা সবাই জানে। তবে এতো সুন্দর করে মেহেদী কে দিয়ে দিল?মেহুল বললো,
— ভাবী তুমি তো খুব সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারো! তুমি আমাকে দিয়ে দিও কেমন?

তামান্না অবাক চাহনিতে বললো,
— এই টুসি তুই না এতো দিন বলছিস তুই মেহেদী দিতে পারিস না। তাহলে আজকে কিভাবে দিলি? আমাদের মিথ্যা বলে বোকা বানিয়েছিস তাই না?

টুসি রেগে গিয়ে বললো,
— তোর মাথা!
আমাকে উনি মেহেদী দিয়ে দিয়েছেন।

আটজন মেয়ে বড় বড় চোখে তাকায় টুসি’র দিকে। তিশা তো বলেই বসলো,
— হাউ সুইট! দুলাভাই কি রোমান্টিক আহা.. আমার কবে যে এমন একটা বর হবে?আর আমাকে এভাবে মেহেদী দিয়ে দিবে।

তারপর একে একে সবাই বলতে শুরু করলো। তাদের কবে যে এমন একটা বর হবে। শেষে তামান্না বললো,
— টুসি তুই বরং তোর কিউট বর কে আমাদের দিয়ে দে! এমন একখান বর পেলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে,যে কিনা তার স্ত্রী ছাড়া পরনারীর দিকে চোখ তুলে তাকায় না।তোর তো তাকে পছন্দ না।তাই তুই বরং আমাদের দিয়ে দে!দিবি কিনা বল?

সবার মাঝে মেহুল নিরব দর্শক হয়ে বসে আছে।আর এদের কথায় টুসি’র গা জ্বালা দিয়ে উঠলো।তাই রেগে গিয়ে বললো,
— সবকটা লুচুর দল!অন্যের বরের দিকে নজর দিস কেন তোরা? লজ্জা করে না তোদের? আমি সবার আব্বু আম্মু কে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।

তারপর হনহন করে ঘরে চলে গেল। এদিকে সবাই তাজ্জব বনে গেল। কেননা সবাই জানে টুসি সোহানকে একদম পছন্দ করে না। তবে টুসি’র মনে অধিকার বোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যেই সবাই এরকম বলেছে।তাই কিছুক্ষণ পর সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। মেহুল সবাই কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— এভাবে হাসতে নেই।বড় ভাইয়া সব সময় আমাকে বলে,সব সময় হাসবি তবে মুচকি হাসবি। এবং এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন,
ইসলামের দৃষ্টিতে মুচকি হাসির গুরুত্ব অপরসীম, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।হাসি মানব চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য, মানুষের অন্তরের অভ্যন্তরীণ উৎফুল্লতা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম, হাসি সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। কখনো কখনো হাসি ভুলিয়ে দেয় আমাদের মনের সব যাতনা, যারা হাসতে জানে তাদের সবাই ভালোবাসে। হাসির দ্বারা পরস্পরের মধ্যে খুব সহজে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের বীজ বপন হয়, একটুখানি হাসির পরশে শত্রুও বন্ধুত্বে রূপ নেয়।
নিজের মুখের হাসি অন্যের জন্যও আনন্দ বয়ে আনে, হাসি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের দুঃখের বোঝা হালকা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ হাসি মানুষের হৃদয়ের চাপা ব্যথা দূরীভূত করে, জীবন চলার পথে, কাজে কর্মে বহু মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন মুখ মলিন না রেখে হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলাই উত্তম।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেন, হাসি আমাদের মনের উদ্বেগ দূর করে, রাগ আর দুঃখ দূর করে, তাই হাসির গুরুত্ব অনেক।
প্রকারভেদে হাসির বহুমাত্রিক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- হাসি মানসিক চাপ দূর করে, ব্যথা জ্বালা কমায়, রোগ প্রতিরোধ করে, চিন্তাভাবনা সতেজ ও শাণিত করে। সম্পর্কের বিকাশ ও উন্নতি করে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ইতিবাচক ভাবনা শেখায়।
রাসূল সা:-এর অনুপম আদর্শের মধ্যে অন্যতম একটি মহৎ আদর্শ হলো তিনি হাজার দুঃখের মধ্যেও মুচকি হাসতেন। অট্টহাসি কখনো দিতেন না, অট্টহাসি অভদ্রতা ও অহঙ্কারের পরিচায়ক। আর মুচকি হাসি রাসূল সা:এর সুন্নাত। মুচকি হাসি মুমিন বান্দার সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।
সাধারণত হাসি তিন প্রকার-
এক. তাবাসসুম- মৃদু বা মুচকি হাসি, এ হাসিতে দাঁতও দেখা যায় না, শব্দও হয় না। নবী সা: সর্বদা মুচকি হাসি হাসতেন, এ হাসিই উম্মতের জন্য সুন্নাত।
দুই. দিহক- এ হাসিতে দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না, এভাবে হাসা জায়েজ আছে তবে না হাসাই উত্তম।
তিন.কহকহা- এ হাসি হলো অট্টহাসি, এটি নির্লজ্জ লোকদের হাসি এবং এতে চেহারার আকৃতি পরিবর্তন ঘটে। তাই ইসলামে অট্টহাসি নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে অন্তর মরে যায়। এ ছাড়াও নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে অজু ও নামাজ উভয় নষ্ট হয়ে যায়।
প্রিয় নবী সা: সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন, তাকে কখনোই কেই অকারণে মুখ মলিন করে থাকতে দেখেননি।
হাসি সম্পর্কে রাসূল সা:-এর কয়েকটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এমন কাউকেই দেখিনি যিনি রাসূল সা:-এর থেকে অধিক হাসি মুখে থাকতেন।[১]
হজরত আবু জর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিও তোমার জন্য সদকা।[২]
রাসূল সা: বলেন, প্রতিটি ভালো কাজ সদকা, আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো অন্য ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।[৩]
উপরের হাদিস পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, হাসির দ্বারা আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মুচকি হাসির মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠা হিংসার দেয়ালের পতন ঘটে এবং আমরা একে অন্যের কাছাকাছি আসতে পারি।
আমাদের প্রিয় নবী সা: সবসময় মুচকি হাসতেন, মুচকি হাসি ছিল তার চিরাচরিত ভূষণ। প্রতিটি হাদিসগ্রন্থে তাঁর হাসির ব্যাপারে আলোচনা এসেছে। বস্তুত হাসির মতো সাধারণ একটি আমলে আল্লাহ তায়ালা এত বড় পুরস্কার দেবেন, ভাবতেই অবাক লাগে। হাসি মুখে কথা বলার দ্বারা মুমিন বান্দা খুশি হয়, সাথে আল্লাহও খুশি হন, এর বিনিময়ে আল্লাহ বান্দাকে কিয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন।তাই আসুন আমরা মুচকি হাসির অভ্যাস গড়ে তুলি, রাসূল সা:-এর সুন্নাতকে সমাজে সমুন্নত রাখি।
.
.
বিয়ে বাড়িতে টুসি কালোর সাথে সোনালী রঙের গাউন সাথে মেচিং হিজাব পরে এসেছে, সাজগুজেও জুরি নেই তার।মেহুল অনেক বার নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়েছে,যে ভাবী,ভাইয়া এভাবে সাজগোজ করে বাহিরে বের হ‌ওয়া পছন্দ করে না। কিন্তু টুসি মেহুলের কথা অগ্রাহ্য করে ওর অন্যান্য বোনদের মতো সেজেগুজে সেও যায়। এখন দেখার বিষয় সোহানের পতিক্রিয়া!….
_________
[১](তিরমিজি)
[২](তিরমিজি)
[৩](তিরমিজি : ১৯৭০)
___________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here