ধূসর প্রেমের অনুভূতি – শেষ পর্ব

0
803

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#শেষপর্ব
.
.
____

মেঘের দুষ্টুমি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মাইশাকে দেখার জন্য গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়াতে ফারহা শুনতে পায় রোজা আর তার মায়ের কথোপকথন ৷

” মম প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড আমি রাফিকে ভালোবাসি৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷ ”

” রোজা ভুলে যেওনা আমরা এই বাড়ির আশ্রিতা৷ তার উপর তোমার ভাই এই বাড়ির সাথে যা যা করেছে তা জেনে ওরা কেউ তোর আর রাফির সম্পর্ক মেনে নিবে? ”

রোজা কাঁদতে কাঁদতে তার মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” মম প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো৷ আমি রাফিকে ছাড়া বাঁচবো না৷ তুমি প্লিজ আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নেও না মম৷” রোজার চোখের পানি দেখে রোহিনীর চোখে পানি টলমল করছে৷ একমাত্র মেয়ের ভালোবাসা ভুলতে বলা একজন মায়ের জন্য কতোটা কষ্ট কর তা একমাত্র সেই বলতে পারে৷ রোহিনী রোজাকে পা থেকে ধরে দার করিয়ে বললো,” ওকে আমি তোমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবো কিন্তু তখন যখন ফারহা আর তার পরিবার তোমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে৷” কথাটা বলে রোহিনী রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷ ফারহা রোহিনীকে বের হতে দেখে দরজার আড়ালে দাড়িয়ে পড়লো৷

ফারহা এক ঝলক রোজার দিকে তাকিয়ে মাইশার রুমের দিকে চলে গেল৷ মাইশার রুমে সামনে এসে ফারহা দেখে তার শাশুড়ি আর মা দুজনে মাইশার কাছে বসে আছে৷ একজন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তো আর একজন গায়ে কাঁথা ঠিক করে দিচ্ছে৷ এই মুহূর্তে মেয়েটার যে ভালোবাসার দরকার আছে সেটা তার শাশুড়ি আর মা পূরণ করে দিচ্ছে৷

ফারহা মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায়৷ সন্ধ্যেবেলায় ড্রইংরুমে বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য উপস্থিত৷ কেউ এখনো বুঝতে পারছে না ফারহা কেন সবাইকে এখানে একসাথে ডেকেছে৷ মেহবুব চৌধুরী নিরবতা ভেঙে ফারহাকে বলে,” ফারহা মামুনি আমরা তো সবাই এখানে উপস্থিত তাহলে এখন বলতে পারো তুমি কি বলতে চাও?”

” বলবো বড় বাবা তার আগে যার আশার কথা সে আসলে বলবো৷” ফারহার কথা শেষ হতে না হতে ফারহার ফুফি মোহনা এসে হাজির হয়৷ তাকে দেখে ফারহার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো৷ মোহনা এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ফারহাকে বলে,” ফারহা মামুনি এতো জরুরী তলব কোন সমস্যা হয়েছে?”

” হুম ফুফিমা সমস্যা মানে বিরাট সমস্যা৷ এই দেখো তোমার ছোট ছেলে রাফি আমাদের নাকের নিচে লুকিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে৷ ”

” কিহ! এতো বড় সাহস রাফি৷” মোহনা রেগে রাফির দিকে তাকাতে রাফি অসহায় দৃষ্টিতে ফারহার দিকে তাকায়৷ ফারহা গম্ভির মুখ করে তার ফুফিকে বলে,” ফুফিমা আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি৷”

” কি ডিসিশন?”

” আগামি সপ্তাহে পিচ্চি আর আলফার বিয়ে হবে এবং সেই একই বিয়ের আসরে ছোটু আর রোজার বিয়ে আমি ঠিক করেছি৷”

ফারহার কথা শুনে মোহনা ফারহার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো,” আমি জানি আমার মেয়ের ডিসিশন কখনো ভুল হতে পারে না৷ আমাকে যেহেতু ডেকেছো তার মানে আমার মতামত তোমার কাছে ইম্পটেন্ট তাই তো?”

” একদম ফুফিমা৷ কারণ ছেলে তোমার, আমার ভাই হলেও আমার আগে তোমার অধিকার ওদের উপর, তাই তুমি শেষ ডিসিশন নিবে৷ ”

ফারহার কথা শুনে রাফি আর রোজার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ রাফির মা ঠিক কি ডিসিশন নিবে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না৷ সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ৷

কিছুক্ষণ ভেবে হঠাৎ মোহনা বলে উঠলো,” আমার ডিসিশন হলো!!! ” মোহনা সবার চোখে মুখে এমন আতঙ্কের ছাপ দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে আবার গম্ভির গলায় বলে উঠলো,” আমার ডিসিশন হলো এই বিয়েটা….” মোহনা আবারও সবার মুখের দিকে তাকালো৷ সব থেকে বেশি হাসি পাচ্ছে রাফি আর রোজার মুখ দেখে৷ রোহিনীর চোখে মুখেও চিন্তার ছাপ কি বলবে মোহনা এটাই হয়তো ভেবে যাচ্ছে ৷ কিন্তু এবার সবার চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে মোহনা বলে উঠলো,” আমার ডিসিশন হলো রাফি আর রোজার বিয়েটা হচ্ছে৷” মোহনার কথা শুনে রাফি রোজা দুজনে এক্সসাইটেড হয়ে সবার সামনে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে৷ তা দেখে ফারহা কাশি দিয়ে উঠে, সাথে সাথে রাফি রোজা দুজন দুজনকে ছেড়ে দেয়৷ সবাই সেটা দেখে ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো৷

শুরু হয়ে গেল আদিল-আলফা, রাফি-রোজার বিয়ের আলোচনা৷ আলফা কয়েকমাসের জন্য শহরের বাইরে ছিলো৷ আদিল তাদের বিয়ের কথা জানাতে আলফা তার পরের দিন চলে আসে৷ দু’পরিবারের ভেতর বিয়ের আলাপ আলোচনা করে সব কিছু ঠিক করে নেয়৷ রোজার যেহেতু পরিবার বলতে শুধু রোহিনী সেহেতু ফারহা মেয়ে পক্ষ হয় সবটা সামলে নেয়৷ আর মেঘ ছেলে পক্ষ৷ দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে৷ বিয়ে বাড়ি আত্মিয় স্বজনে গিজগিজ করছে৷ মেঘ এক মুহূর্তের জন্যও ফারহাকে নিজের করে পাচ্ছে না৷ যখনি ডাকছে তখনি কোন না কোন কাজের বাহানা দিয়ে চলে যাচ্ছে৷ প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে আছে মেঘের, অর্নিলেরও সেম অবস্থা৷ ফারিহাকে এক মুহূর্তের জন্য কাছে পাচ্ছে না ৷ ডাকলে বিজি বলে এড়িয়ে যাচ্ছে৷ শ্রাবণ তার ভাই আর অর্নিলের রাগ দেখে মিটি মিটি হাসছে৷ শ্রাবণও আজ কাল নুপূরের আশে পাশে থাকতে ভিষণ ভালো লাগে৷ মেয়েটা যে বড্ড সরল ৷ তার সরলতা দেখে শ্রাবণের মনে তার জন্য বিন্দু বিন্দু করে জায়গা করে নিচ্ছে৷ শ্রাবণের এক ডাকে নুপূর তার সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে৷ বিষয়টা শ্রাবণ বেশ মজা পাচ্ছে৷ ফারহা ফারিহা বিষয় টা বুঝতে পেরে এরপর থেকে যতোবার শ্রাবণ নুপূরকে ডেকেছে ঠিক ততোবার ফারহা অথবা ফারিহা শ্রাবণের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে৷ শ্রাবণকে শায়েস্তা করে ক্ষান্ত হয় ফারহা ফারিহা৷ এদিকে শ্রাবণও মেঘ অর্নিলের মতো মুখ ভার করে আছে৷

(৮৭)

তনু হসপিটাল থেকে পালিয়েছে কথা জানতে পেরে ফারহা প্রচন্ড রকমের রেগে আছে৷ রাগটা কন্ট্রোল করতে পারছে না৷ এতো টাইট সিকিউরিটি থাকা সত্যেও তনু কিভাবে পালিয়ে যায় এটাই বুঝতে পারছে না ফারহা৷ তবে ফারিহার চোখে মুহখে রাগ নেই আছে ভয়ের ছাপ৷ এতো গুলো বছর পর তাদের জীবনে এতো সুখ এতো আনন্দ ফিরে এসেছে৷ এই তনু না আবার রাহু হয়ে সব গ্রাস করে নেয়?

গায়ে হলুদের কার্যক্রম শেষ হয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই৷ যে যার মতো ব্যস্ত৷ এদিকে দু’জোড়া কপোত কপোতী তারা নিজেদের মুঠো ফোনে প্রণয় আদান প্রদানে ব্যস্ত ৷ আবার অন্য দিকে কেউ তাদের ভালোবাসার মানুষ গুলোর অভিমান ভাঙাতে ব্যস্ত৷

পুরো রাত খোজ করার পরও তনুকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি৷ মেঘের ফোর্স , সূর্য বা ফারহা ফারিহা কেউ তনুকে খুজে পায়নি৷ তনু হঠাৎ কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে সেটা কেউ আন্দাজ করতে পারছে না৷ যদি পারতো তাহলে সামনে যেটা ঘটতে চলেছে সেটা হয়তো ঘটতো না৷

পরের দিন সুসম্পূর্ন হয় আদিল-আলফা, রাফি-রোজার বিয়েটা৷ প্রত্যেকে খুশি তাদের ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনে পেয়ে৷ অন্য দিকে ফারহার চোখে মুখে দুঃচিন্তার ছাপ৷ ফারহা তার হাতে থাকা ফোনটায় কিছুক্ষণ আগে আশা ভিডিও টা দেখে ফারহার হাত পা কাঁপছে৷ ফুটন্ত এসিডের উপর মাইশাকে ঝুলিয়ে রেখেছে তনু৷ এটা তারই ভিডিও৷ তনু ভিডিওতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে৷ ফারহা একা এবং কোন অস্র ছাড়াই তার কাছে আসতে হবে নাহলে মাইশাকে সে ফুটন্ত এসিডে ফেলে দিবে৷

ফারহা ফোনটা রেখে রিভালবার নেওয়ার জন্য কাপবোর্ডের কাছে পৌছাতে দরজা বন্ধ শব্দ পেয়ে ফারহা দৌড়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলে দরজা খুলতে পারে না চিৎকার চেঁচামেচি করেও কোন লাভ হয় না কারণ এই দো’তালায় বাইরের মানুষদের প্রবেশ নিশেধ ৷ আর পরিবারের সবাই এখন নিচতালায় বিয়ের অনুষ্ঠানে৷ ফারহা তার ফোন দিয়ে মেঘকে কল করতে যাবে তখনি ফারহা তার ফোনটা কোথাও খুজে পায় না৷ ফারহার বুঝতে বাকি নেই কেউ তাকে মাইশাকে বাচাঁতে যেতে দিতে চাইছে না৷ ফারহা চাইলে সাউন্ডপ্রুফ রুমে চিৎকার করে কোন লাভ পেল না৷ ফারহা ব্যালকনি থেকে নামার চেষ্টা করা জন্য ব্যালকনিতে আসতে দেখে পুরো ব্যালকনি গ্রিল দিয়ে আটকে ফেলা হয়েছে৷ এটা খোলার কোন সিস্টেম নেই৷ ফারহা নিরাশ হয়ে রুমে ফিরে এলো৷

“মাম্মা টুমি পাপা তোলাকে(তোমাকে) খুজে৷”

“হঠাৎ আমার তিন বছরের মেয়ের আদো আদো নতুন বলতে শেখা কথা গুলো শুনতে পেয়ে ডাইরী লেখা বন্ধ করলাম৷ এই ডাইরীতে আমার জীবনের যেমন সুন্দর মুহূর্তের কথা গুলো লেখা আছে ঠিক তেমনি আমার জীবনে ব্যর্থতা, আমার পরাজয় আমার জীবনের ভয়ঙ্কর সব মুহূর্তের কথা লেখা আছে৷ সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা আমি আজও ভুলতে পারি নি৷ সেটা নায় পরে বলবো এখন আপাদতো আমার মেঘলা মামুনীর কথা গুলো শুনি নি৷”

ফারহা তার ডাইরীটা কাপবোর্ডে তুলে রেখে মেঘলাকে কোলে নিয়ে দু’গালে চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,” কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের ? আমার লক্ষী মাম্মামটা এখানে কি করছে? নিরব ভাইয়ার সাথে খেলছো না কেন?”

” মাম্মা নিলবকে (নিরব) ধললে(ধরলে) শুধু কেঁদে দেয়৷ তাই পাপা নিলবকে ধলতে বালন(বারণ) কলেছে(করেছে)৷”

মেয়ের কথা শুনে ফারহা হেসে দিয়ে বলে “তা তোমার পাপা কোথায়?”

” নিচে৷”

ফারহা মেঘলাকে নিয়ে নিচে গিয়ে দেখে নিরবকে কোলে নিয়ে খেলছে মেঘ৷ নিরব হলো নুপূর আর শ্রাবণের এক মাত্র ছেলে নিরব চৌধরী৷ নিরবের ছয় মাস বয়স৷ নুপূর ফারহাকে দেখতে পেয়ে কিচেন থেকে চেচিয়ে বলতে লাগলো,” আপু আমি এতিম খানার বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি বানিয়ে রেখেছি৷ তোমার রান্না করা খাবারের সাথে মিষ্টি গুলো নিয়ে যেও৷ আর হাহ আজ আমিও তোমাদের সাথে অর্নিল ভাইকে দেখতে যাবো৷ ”

ফারহা ফিচেল হাসি দিয়ে বলতে লাগলো ঠিক আছে৷ কিন্তু তোমাকে দ্রুত রেডি হতে হবে৷ ওদিকে মম ফোন করেছিলো ৷ ড্যাড মম খান মঞ্জিল থেকে অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে৷ আদিল রাফি মনে হয় এখুনি এসে পড়বে৷ আর মাইশা ফোন করেছিলো তিনি নেক্সট উইকে বাংলাদেশে আসবে৷”

ফারহার বলা শেষ হতে না হতে আদিল-আলফা, রাফি-রোজা এসে হাজির হয়৷ আলফা তিন মাসের প্রেগনেন্ট ৷ আর রাফি আর রোজার একমাত্র ছেলে রোহান বয়স একবছর৷ ফারহার শশুর শাশুড়ি দুজনে গতবছর একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়৷ রোজার মম রোহিনী চৌধুরী ম্যানশনে থাকে৷

সবাই বাচ্চাদের এতিম খানায় পৌছে যায় ঠিক সময়ে৷ ফারহা নুপূর রোজা আলফা আইরিন রোহিনী নিজের হাতে বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়ে তাদের জামা কাপড় খেলনা দেয়৷ মেঘ এতিম খানায় মোটা অংকের টাকা ডোনেট করে বাচ্চাদের খাওয়া ও পড়াশুনার জন্য;

বিকেলে মেঘ-ফারহা, শ্রাবণ-নুপূর, রাফি-রোজা, আদিল-আলফা মেন্টাল হসপিটালে অর্নিলের কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছে৷ বাচ্চাদের আগে পাঠিয়ে দিয়েছে ফারহা আইরিন আর রোহিনীর কাছে৷ ফারহা যতোবার অর্নিলের সামনে দাড়ায় ঠিক ততোবার অর্নিল ফারহাকে ফারিহা ভেবে জড়িয়ে ধরে৷

ফারহা দু’চোখের কোণ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে ৷ আজ ফারিহার মৃত্যু বার্ষিকী ৷ আবার মজার বিষয় হলো আজ আদিল-আলফা, রাফি-রোজার বিবাহ বার্ষিকী ৷ বুঝতে পারলেন না তাই তো? তাহলে চার বছর আগে সেই বিয়ের দিনটা ফিরে দেখা যাক!

চার বছর পূর্বে ফারিহা ফারহাকে রুমে আটকে রেখে তনুর পাঠানো লোকেশনে পৌছে যায় ফারিহা সবার অজান্তে৷ তনু ফারিহাকে ফারহা ভেবে পেছন থেকে আঘাত করে বসে ৷ সে দিন সূর্য ফারিহাকে লুকিয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে ফারিহার পেছন নেয় সূর্য৷ আর যখন তনু প্রতিশোধের নেশায় বুদ হয়ে ফারিহাকে দ্বিতীয় আঘাত করতে যায় তখনি সূর্য তনুকে পেছন থেকে শুট করে দেয়৷ সেখানে প্রাণ ত্যাগ করে তনু৷ মাইশাকে বাচিঁয়ে ফারিহার কাছে এসে সূর্য ফারিহাকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করে কিন্তু ডক্টর সেদিন ফারিহার চেকয়াপ করে জানায় অনেক আগেই ফারিহা না ফেরার দেশে চলে গেছে৷ ফারিহার চলে যাওয়াটা অর্ণিল মেনে নিতে পারে নি৷ পাগলের মতো আচরন করে৷ অনেক বড় বড় ডক্টর দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি৷ সারাক্ষণ ফারিহার নাম জবতে থাকতো৷ ফারহাকে বাদ দিয়ে সবাইকে ফারিহার শত্রু মনে করে আঘাত করে বসতো৷ অর্নিলের বাবা মা শেষ পর্যন্ত অর্নিলকে সামলাতে না পেরে মেন্টাল হসপিটালে এডমিট করে দেয়৷

সেদিন ফারিহা নিজের প্রান দিয়ে ফারহাকে বাঁচিয়েছিলো ৷ সেদিন যদি ফারিহা ফারহাকে রুমে আটকে না যেত হয়তো সেদিন ফারিহার বদলে ফারহা থাকতো আর অর্নিলের জায়গায় মেঘ!

মেঘ ফারহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,” ফারুপাখি অর্নিলের সাথে দেখা করে আসবে না? ”

ফারহা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো৷

” ফারহাপু ভেতরে যা, অর্নিল ভাইয়ার সাথে দেখা করে আয়৷ ”

আদিলের কথা শুনে ফারহা চোখের পানি মুছে৷ ধীর পায়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় সেই চেনা পরিচিত মুখটা ৷ অযত্নে অবহেলায় শুকিয়ে গেছে৷

অর্নিল ফারহাকে দেখে ফারিহা ভেবে দৌড়ে ছুটে এসে ফারহাকে জড়িয়ে ধরে৷

” ইয়ে কি মজা আমার ফারিহা এসে গেছে৷ দেখেছো সবাই আমি বলেছিলাম না আজ আমার ফারিহা আমার সাথে দেখা করতে আসবে৷ দেখেছো তোমরা ইয়ে কি মজা৷ জানো ফারিহা এই নার্স গুলো না সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলে ৷ বলে তুমি নাকি মরে গেছো৷”

ফারহা কথা টা শুনে কেবিনে থাকা নার্সের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো৷
“নেক্সট টাইম যদি আপনি আর এমন কোন কথা অর্নিলকে বলেছেন তাহলে আমি এনশিওর করবো যাতে আপনার চাকরি টা না থাকে৷”

” স্যরি ম্যাম৷ এই ভুল আমি দ্বিতীয়বার করবো না৷”

ফারহা অর্নিলকে তার আনা খাবার খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে৷

_________

নিস্তব্ধ রাত নিকষ কালো আধার রাতে আকাশে মিটি মিটি করে জ্বলছে তারা ৷ মেঘের বুকে মাথা তারা খোচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা৷ প্রতি বছর ফারহা দিনটা এভাবে কাটায় আর রাতটা মেঘের বুকে৷ এই রাতটা মেঘলা শ্রাবন আর নুপূরের কাছে থাকে৷

ফারহা আকাশের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে উঠলো,” মেঘরাজ ওই যে সব চেয়ে বেশি জ্বল জ্বল করছে যে তারাটা ওইটাই হলো আমার বোনু আমার ফারিহা৷ দেখলি তো ফারিহা তুই নিজেকে ভালো বোন প্রমান করার জন্য নিজেকে উর্সগ করে আমাকে সারা জীবনের জন্য দোষী করে গেলি৷ তোর ভালোবাসার মানুষটা তোকে ভালোবেসে দীর্ঘ চারটা বছর পাগল হয়ে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি হয়ে আছে৷ কেন রে ফারিহা এতোটা স্বার্থপর কেন হলি? বোনের জন্য নিজের প্রানটা ত্যাগ করতে দ্বিধা করলি না? কিন্তু তোর জন্য কতো গুলো জীবন নষ্ট হলো? কেন করলি এমন বল না ফারিহা কেন করলি?”

মেঘ ফারহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতে লাগলো,” ফারিহা স্বার্থপর হয়ে ছিলো তার প্রিয়জনদের বাঁচাতে৷ আল্লাহ হয়তো ফারিহার আয়ু এই পর্যন্ত রেখেছিলো৷ তাইতো আজ ফারিহা আমাদের মাঝে নেই শুধু আছে ধূসর প্রেমের অনুভূতি যার জোড়ে অর্ণিল হয়তো এখনো এই পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিচ্ছে৷ ভালোবাসা তার রুপ বদলায় আকার বদলায় কিন্তু অনুভূতি বদলায় না৷ হয়তো তাই এখনো অর্নিলের মাঝে ধূসর প্রেমের অনুভূতি বিদ্যমান৷ আমৃত্যু ভালোবেসে যাবে ফারিহাকে, হোক না সেটা অদেখা অছোঁয়া৷ তবুও ভালোবেসে যাবে ৷ আমাদের ভালোবাসার মতো ফারপাখি৷ কথা দিচ্ছি আমৃত্যু তোমায় ভালোবেসে যাবো৷ হয়তো কখনো আড়ালে নয়তো ধূসর প্রেমের অনুভূতিতে তবুও ভালোবেসে যাবো৷

” ভালোবাসি মেঘরাজ ”

” ভালোবাসি ফারুপাখি ”

****থাক না কিছু ভালোবাসা আড়ালে আবডালে৷ হোক নতুন করে নতুন ভালোবাসার অনুভূতি৷ কেউ কল্পনায় ভালোবেসে যায় তো কেউ বাস্তবে ভালোবাসার রঙে নিজের ভালোবাসার মানুষকে রাঙিয়ে যায়৷ চলতে থাকুক না এই ধূসর প্রেমের অনুভূতির খেলা৷ ****

*সমাপ্ত*

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here