তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ১২

0
506

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:12
#Suraiya_Aayat

ভিতরে থাকা লোকটা আরুকে গাড়ির ভিতরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে দিল ৷ ড্রাইভ সিটে বসে থাকা লোকটাকে আরু দেখে চিনতে পারল না , ওর গলা যেন আরো শুকিয়ে আসছে, না জানি লোকটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আর তার উদ্দেশ্যই বা কি কিছু জানে না ও ৷ আরু ইচ্ছামতো কিলঘুসি মারছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য৷

আরূ: আপনি গাড়ি থামান, না হলে আমি কিন্তু এক্ষুনি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেবো বলে দিলাম ৷

লোকটা: সেই ভুলটা একদম ই করবেন না ৷

কথাটা বলতেই আরূ জোরে দুম করে আরো একটা কিল বসালে লোকটার কাঁধ বরাবর , লোকটার রীতিমতো খারাপ অবস্থা, প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে ৷

শেষমেষ না পেরে সিটের পাস থেকে ক্লোরোফর্মের বোতলটা নিয়ে আরুর মুখের সামনে স্প্রে করতে.ই কিছুক্ষণের মধ্যেই আরূ অজ্ঞান হয়ে গেল , আর তার সঙ্গে লোকটাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ এত কিল-ঘুসি লোকটাকে আরু মেরেছে তা সারা জীবনেও এত কিল-ঘুসি পাইনি সে ৷

|
|💖
|

চেয়ারে হাত-পা অবস্থায় আরূকে বেঁধে রেখেছে, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷

এতক্ষণে গায়ের ভিজে জামা কাপড় গুলোও প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে এসেছে , কতক্ষণ যে ওখানে পার করল তার হিসাব নেই ৷ জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করেছে ,জোরে জোরে চেঁচাতে লাগল আরূ ৷

হঠাৎ একটা গায়ের উপর দিয়ে আরশোলা যেতেই আরূ আরো বেশীকান্না করতে লাগলো ৷

আরূ: প্লীজ হেলপ , কেউ আমাকে বাঁচান ,আমি বাড়ি যাব , প্লিজ কেউ হেল্প করুন , আমি ওনার কাছে ফিরে যাবো , প্লিজ হেল্প বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল৷

হঠাৎ কারও পায়ের আওয়াজ শুনে কান্নার মাত্রাটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল আরূর ৷

হঠাৎ মুখের উপরে আলো পড়তেই সামনে তাকাতেই চমকে গেল কারণ সামনে আরিস রয়েছে আর তার পাশে একজন আরিসের সমবয়সী ছেলে , তাকে অবশ্য আরূ কখনো দেখেনি তবে সেই ওকে এখানে এনেছে এটুকু মনে আছে ৷

তবে আরিসের হাতে ধারালো ছুরির টা দেখে আরুর প্রাণ যায় যায় অবস্থা ৷

আরূ : আপনি এসে গেছেন! প্লিজ এখান থেকে আমাকে নিয়ে যান , আর এই লোকটা আমাকে এখানে এনেছে , আপনি ওনাকে মারূন ধরে ৷ আর আমি আর কখনও আপনার কথার অবাধ্য হবো না প্লিজ আমাকে নিয়ে জান এখান থেকে ৷

আরিস আরূর কথার কোন উত্তর দিল না , জোরে জোরে ভয়ঙ্কর একটা হাসি দিতে লাগল তা শুনে আরূর প্রাণ যায় যায় অবস্থা , ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না আরিশ কেন এমন পাগলামো করছে ৷ আর ওর সামনে আরূ বসে আছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাও কেন আরিশ ওকে বাচাচ্ছেনা ?

আরূ ভয়ে ভয়ে: আপনি এভাবে হাসছেন কেন আর আপনার হাতে ছুরি কেন?

আরিশ এবার ধীর পায়ে ছুরিটা হাতে নিয়ে আরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ তারপর ও আরুর গলায় ছুরি ঠেকাতেই আরূ হাউ হাউ করে কেঁদে দিল ৷

আরূ: আমাকে মারবেন না প্লিজ , আপনি যা বলবেন আমি তাই করব তবে ছুরিটা হাত থেকে ফেলে দিন৷ আমার খুব ভয় করছে , আমি আপনার থেকে আপনার জীবন থেকে চলে যাব তবুও আমাকে মারবেন না প্লিজ ৷ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো গলায় আটকে আসছে তা ও কে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তো কথাগুলো বলতেই হবে , যদি এতে আরিশের ওর প্রতি মায়া হয় ৷

আরিশ ছুরিটা আরুর গলায় জোরে চেপে ধরল,ছুটি ধরা জায়গায় মাংসটা সামান্য কেটে গিয়ে একটু রক্ত গড়িয়ে পড়তেই আরূর চোখের জল যেন সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেল ৷

আরিশ: সাহস হয় কি করে তোমার আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার , কোন অধিকার নেই তোমার তা করার ৷ তোমাকে সারা জীবন আমার সাথেই থাকতে হবে , সে তুমি চাও আর না চাও, এই কথাটা আমাকে যদি আর দুবার বলেছ তবে আর আসত থাকবে না তুমি ৷

আরু : আমি আপনার সাথেই থাকবো , আমাকে প্লিজ ছাড়িয়ে দিন এখান থেকে, ৷

আরিশ আগের অবস্থান থেকেই বললো : আজকে তো তুমি শেষ বলে ছুরিটা আরেকটু জোরে চেপে ধরতেই আরূ অজ্ঞান হয়ে গেল তারপর কি হল ওর আর মনে নেই ৷

|
|💖
|

অর্ধেক রাতে নিজের উপর সামান্য কিছুটা ভারী ভারী বলে মনে হতেই আরূ চোখ খুললো তারপরে ও কোথায় সেটা যখন ও মনে করতে লাগলো তখনই মনে পড়ে গেল আরিস এর সেই ভয়ঙ্কর চেহারার কথা,
কথাটা ভাবতেই জোরে চেচিয়ে উঠল আরূ৷

আরিসের ঘুম ভেঙে গেল , ও হুড়মুড় করে উঠে পরল৷

আরিশ : কি হয়েছে আরূপাখি এমন করছ কেন?

আরিশ কে দেখে যেন আরূর ভয়টা দ্বিগুণ হতে লাগলো , আরিশকে ধাক্কা দিল সাথে সাথে ও নিচে পড়ে গেল ৷

আরু: ছোবেন না আপনি আমাকে , আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন ৷ কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার যে আপনি এরকম করছেন আমার সাথে! আজ আমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে ,?আর আমাকে এখানেই বা কে আনলো?

আরিশ হাতের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল: আমি এনেছি তোমাকে, এনি প্রবলেম !

আরূ: আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না এক্ষুনি চলে যাব ৷ বলে যেই দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে যাবে তখনই খপ করে আরিশ আরূর হাত ধরে ফেলল৷

আরুশি : আপনি আমাকে ছাড়ুন , আমি আপনার সাথে থাকবো না আপনি আমার ক্ষতি চান ৷

আরিশ আরুশির হাত জড়িয়ে ধরে ওর সাথে মিশিয়ে নিল তারপরে গভীর আর শান্তকণ্ঠে আরুশিকে বলল : আই লাভ ইউ আরুপাখি ৷

আরূ আরিশ কে ধাক্কা মেরে : আপনি আমাকে ভালোবাসেন না , যদি বাঁসতেন তাহলে ছুরিটা ওভাবে আমার গলায় ধরতে পারতেন না ৷

আরিশ এবার আরুশিকে কোলে তুলে নিল ৷

আরিশ আরুকে নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল আর সাথে একটা blanket নিল ৷

আরূশি : আপনি এবার আমাকে ব্যালকনি থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাই না ! আমাকে নামান, আমি আর এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকবো না ৷

বেলকুনিতে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসে আরুশিকে কোলে নিল আরিশ ৷

কি সবসময় পালানোর কথা বল হ্যাঁ ? জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি , আর তোমার মনে সন্দেহ থাকতেই পারে আমাকে নিয়ে, অবশ্যই আমি তা তোমাকে বলব ৷

আরুশি: আমি আপনার কোন মনগড়া কথা শুনতে চাই না আপনি আমাকে ছাড়ুন ৷

আরিশ ধমক দিতেই আরূ একদম চুপ হয়ে গেল,

আরিশ : এবার আমি যা বলবো তুমি শুধু শুনবে৷

আরিশ : তোমাকে যে কিডন্যাপ করে নিয়েছিল সে আর অন্য কেউ নয় ও হচ্ছে আর আমার ফ্রেন্ড আরাভ ৷ তোমাকে আমি বলেছিলাম যে কলেজে শেষে দাঁড়াতে কিন্তু তুমি কি করলে না, দাড়াওনি, আমাকে উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি এসেছিলে ৷ খবরটা আমার কানে পৌঁছেছে ঠিকই তবে অফিসের একটা ইমপর্ট্যান্ট কাজ থাকার কারণে সঙ্গে সঙ্গে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাই আরাভের অফিস ছুটির সময় ওকে বললাম যে মাঝ রাস্তা থেকে তোমাকে যেন গাড়িতে তুলে নেয়, নিয়ে ওখানে তোমাকে বেঁধে রাখে , যতক্ষণ না আমি আসছি ততক্ষনে যেন তোমাকে না ছাড়ে ৷

আরোশী : এতে আপনার লাভ কি হল?

আরিস: এতকিছু করার কারন তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য , আর এটা বোঝানোর জন্য যে আমি যা বলব সেই কথাটা যদি তুমি না শোন তবে প্রত্যেক পদে পদে তুমি বিপদে পরবে ৷ আর সব সময় তো তোমাকে রক্ষা করার জন্য আমি সেখানে থাকবো না তাই আমি যা বলব তার বাইরে গিয়ে এক পা-ও চলবে না তুমি ৷ তোমার অজান্তেই তোমার অনেক বিপদ আছে যা হয়তো তুমি জানোনা , তোমাকে আমি হারাতে দেব না কখনো নিজের থেকে ৷ (বলে ওকে বুকে জড়িয়ে নিল)

আরুশি চুপচাপই রইল শান্ত হয়ে কারন এত কিছু জিনিস আরিশ ভেবে করেছে তা ওর ধারণার বাইরে….

সেদিনের রাতটা ওভাবে আরিশের বুকেই কাটাল আরূ ৷

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে,,,,,,

আফজাল সাহেব : আরিশ আর একমাস পরেই তো্মার ফাইনাল exam , তা কী ডিসিশন নিলে? এরপর কি করবে আই মিন আমি বলতে চাইছিলাম যে আমার অফিস সামলাবে নাকি বিদেশে চলে যাবে?

আরিশ : সেরকম কোন প্ল্যান নেই তবে ইচ্ছা আছে যে বিদৈশে গিয়ে প্রফেসরি করার,৷ কলেজ থেকে যে ফাস্ট হবে তাকে সুযোগটা দেওয়া হবে এখন সবকিছুই ডিপেন্ড করছে রেজাল্টের উপর , দেখি কি হয় ৷

আরিসের মা: অফিসের এত কাজের প্রেসার তাছাড়া কলেজেও যেতে পারছিস না , সবকিছু ম্যানেজ করতে পারবি একা?

আরিশ একটা মুচকি হাসলো : আমি জানিনা ৷ আমি শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি ৷

সানা : ভাইয়া ধর তুই গোটা ইউনিভার্সিটি টপার হলি,আর হবিও আমি কেন সবাই জানে, তাহলে সে সুযোগ পাবি তুই ,তখন কি তুই চলে যাবি?

আরিস : ইচ্ছা তো আছে দেখি কি হয় ৷

সানা : তাহলে আরূর কি হবে ? আই মিন ওর পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাব, তোর সঙ্গে যদি যায়৷

আরিস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাঁকা চোখে দেখে বলল: আমি কি একবারও বলেছি যে আমার সঙ্গে ওকে নেব ! আর তাছাড়া আমি ওকে নিয়ে যেতে চাইলে ও যাবে না তাই না আরুপাখি ?

আরোশী মাথা নিচু করে চুপ চাপ খাচ্ছে কোন কথা বলছে না, কিই বা বলবে ? ওর তো এখনও আরিশের প্রতি কোন অধিকারবোধ জন্মায়নি যে আরিশকে জোর গলায় বলবে যে আমি আপনার সঙ্গে যাব৷ অধিকার দেখালে বলত ৷

আরিশ : যার ইচ্ছা হবে যাবে , আর যার ইচ্ছা হবে যাবে না , বলে ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে ঘরে চলে গেল…..

কিছুক্ষণ পরে ঘরে আসলো আরু দেখলো আররিস টাই পড়ছে ৷

আরিশ দেখল আরুশি কিছু বলল না , হয়তো আরিশের বলা কথাগুলোর কারনে কিছুটা হলেও খারাপ লেগেছে….

অনেকক্ষণ ধরে আরুশি চুপচাপ বসে আছে , কেউ কিছু বলছে না দেখে আরিশ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বলে উঠলো : আজকে তোমার ক্লাস নেই?

আরোশী শান্তকণ্ঠে : আছে ৷

আরিস : তাহলে এখনো রেডি হওনি কেন?

আরূশি : আমার আজকে যেতে ইচ্ছা করছে না তাই আমি যাব না ৷

আরিশ মনে মনে: কথাটা ম্যাডামের মনে লেগেছে দেখেছি , বেশ ভালো ৷
তুমি না চাইলেও যেতে হবে , আমি বলছি তুমি যাবে তো যাবে ৷

আরোশী বিরক্ত হয়ে : আমি বললাম তো যাব না আপনি কেন আমাকে জোর করছেন?

আরিস : যাবে তার কারণ প্রিন্সিপালের থেকে তুমি এক সপ্তাহের ছুটি নেবে সেই কারণে ৷

আরোশী অবাক হয়ে: প্রিন্সিপালের থেকে আমি কেন ছুটি নেব?

আরিশ : সেটা তোমার এখন না জানলেও চলবে, আগে রেডি হয়ে এস ৷

আরুশি: আমি যাব না বলেছি তো যাবো না দেখি আপনি কি করতে পারেন ৷ বলে মুখ গম্ভীর করে বসে রইল ৷

আরিশ : তাহলে এখন দেখছি আমাকেই ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতে হয় ৷

আরূ তাও আগের মতো করেই বশে আছে তা দেখে আরিশ খানিকটা অবাক হলো ৷

আরিশ: আসলে না আরুপাখি আমার এখন খুব রোমান্স রোমান্স পাচ্ছে , এসো এখন বাকি কাজটুকু সেরে ফেলি ,অফিসে পরেও যেতে পারব ৷

কথাটা শোনামাত্রই আরুশি আর এক মিনিটও দেরি করল না , একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল৷

আরিশ : শেষমেশ কাজ হয়েছে ৷

চলবে,,,,,,

আজকের part টা একটু ছোট হয়ে গেছে তবে ইনশআল্লাহ কালকে বড়ো করে লিখে দেব, আসলে আমি সন্ধ্যাবেলা গল্প লিখতে বসি আর আজকে সন্ধ্যা বেলা অনলাইন ক্লাস ছিল বলে লেখা হয়নি আগে থেকে একটু লেখা ছিল আর পরে আর একটু লিখে এখন পোস্ট করছি ওর জন্য বেশি দেরি হয়ে গেল , আই এম রিয়েলি সরি ফর দ্যাট ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here