#তোমায_নেশায়_আসক্ত
#part:25
#Suraiya_Aayat
আরুর থেকে কোনরকম কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আরিস আরূর দিকে তাকাতেই দেখল আরূর শরীরটা নেতিয়ে পড়েছে , আর ওর বুকে মাথা রেখে জ্ঞান হারিয়েছে ৷
আরিশ বুঝতে পারল আরুশির এখন কি অবস্থা ! আরু বেশি ভয় পেয়ে আর প্রচন্ড শরীরের অস্বস্তিতে সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷
হঠাৎই বাইরে থেকে সানার আওয়াজ শোনা গেল,,,
সানা : ভাইয়া আরুর কি অবস্থা ? ও কি ঠিক আছে ? আমাকে কি দরকার ?
আরিশ আরুশিকে শক্ত করে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বলল : ও এখন সেন্সলেস হয়ে গেছে আর জামাকাপড় ও সম্পূর্ণ ভিজে ৷
সানা : আমি কি হেল্প করব ? আই মিন আমি কি চেঞ্জ করিয়ে দেবো ?
আরিস : তার কোন দরকার নেই আমি নিজেই পারবো ৷ তুই চিন্তা করিস না আর তুই নিচে গিয়ে আম্মুকে বল যে আরুপাখির শরীরটা খারাপ , আমি সবটা সামলে নেবো , না হলে খামোখা চিন্তা করবে আর আর যতক্ষণ না আরুপাখির সেন্স ফিরে আসে ততক্ষণ আমি নিচে যাব না ৷
সানা মুচকি মুচকি হেসে : আচ্ছা ভাইয়া…..
সানা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরিশ আরুশির শরীর থেকে ভেজা জামা কাপড়গুলো খুলে একটা টাওয়েল দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিল আরূশির শরীরে,,,,,,
তাড়াতাড়ি করে আরুশিকে বিছানায় শোয়ালো আর নিজে দু মিনিটের মধ্যেই চেঞ্জ করে আসলো তাড়াতাড়ি করে ৷
আরুশির ভিজে চুল থেকে পড়া জলগুলো বিছানায় পড়ে বিছানা ভিজে গেছে অনেকটাই ৷ আরিশ আরুশিকে এবার নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল তারপর আরশির গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলো,,,,
আরিস : এই আরুপাখি ওঠো, কি হলো তোমার?
আরু উঠছে না দেখে গ্লাস থেকে জল নিয়ে আরিশ আরুর মুখে ঝাপটা দিল….
তাতেও কোনো কাজ হচ্ছেনা ৷
কিন্তু আরুশির শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমেই চলেছে…
আরিশের চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল ৷ দেরী না করে ওয়ারড্রব থেকে ব্ল্যাঙ্কেট বার করে এনে আরুশির শরীরে জড়িয়ে দিল….
কোন ভাবেই কোন কাজ হচ্ছে না , আরুশির শরীর আগের থেকেও বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ৷
আরিশ বুঝলো যে এভাবে কোন কিছুই হবে না তাই নিজেকেও আরশির সঙ্গে জড়িয়ে নিল আর দিতে শুরু করলো ওর ভালোবাসার ছোঁয়া ৷
ক্রমশ আরুশিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে আরিস আর আরিশের ভালোবাসার উষ্ণতায় আরোশীর শীতলতা কেটে যাচ্ছে….
ধীরে ধীরে আরুশির জ্ঞান ফিরে আসায় অরিশের দেওয়া ব্যাথা গুলোকেও ক্রমশ অনুভব করতে পারল আরু ৷
নিজেও মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে আরিস এর ভালোবাসায় ৷
কিছুক্ষণ পর আরিশ দেখল যে আরুশি ক্রমশ নরমাল হয়ে আসছে , আর এখন চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে বাচ্চাদের মতো , চোখের জল জমে আসার কারণে মাঝে মাঝে একটা পাপড়ি অপর পাপড়ির সঙ্গে লেপটে যাচ্ছে ৷
আরুশিকে আবার নরমাল হয়ে আসতে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল আরিশ ৷ কিছুক্ষণের জন্য যেন ওর মাথা আর কাজ করছিল না ৷
আরুর খুব দুর্বল লাগছে তাই কিছু বলছেনা ৷ কেবল ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে….
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে তারপর ওর ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল…..
আরুশির কাছে আরিশ যেন একটা নিরাপদ আশ্রয়, এখানে থাকলে কোন বিপদে ওকে ছুঁতে পারবে না এটা আরু বিশ্বাস করে ৷সারা জীবনটা আরিস এর বুকে এভাবেই কাটাতে চায় আরূশী ৷
❤
ওই মেয়ের সাহস কি করে হয় আমার কফিতে লঙ্কাগুঁড়ো মেশানোর ! আমি তো ওকে শেষ করে ফেলব ৷ নাটক করে নিজেকে অসুস্থ প্রমাণ করে আরিশ এর কাছ থেকে সিমপ্যাথি আদায় করতে চাই তাই না ! আমি তা কিছুতেই হতে দেবো না,ও এই বাড়িতে এভাবে কতদিন টেকে আমিও দেখবো, ওর আরিশের সঙ্গে ডিভোর্স করিয়ে দিয়ে আমি ওকে বিয়ে করব যদি না করি তাহলে আমার নাম ও রাইসা নয়…
রাইসার রুমে ঢুকতেই কথাগুলো শুনতে পেল সানা, বুঝতেই পারলো যে রাইসা ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাবে ৷ আর রাইসা যদি একবার জানতে পারে যে আরিশ আর আরু ওই ভাবে রয়েছে তা হলে তো জমে যাবে ৷ সানা এবার মজা নেওয়ার জন্য রাইসার কাছে গেল ৷
সানা যেতেই রাইসা আবারও শুরু করলো,,,,,
রাইসা: তুই বল সানা মেয়েটার কত সাহস যে আমার কফিতে লংকা মিশিয়েছে ,রাইসার কফিতে !
সানা মনে মনে : হ্যাঁ তুমি তো বিরাট কিছু যে তোমার কফিতে কিছু মেশানো যাবে না , যত্তসব আজাইরা ৷ আরূমন যা করেছে ঠিক করেছে, আমি হলে তো আরও বেশিকরে মেশাতাম ৷
সানা এবার তবু নিজের রাগটাকে চেপে নর্মাল হয়ে বলল : সে ওর মেশানো ঠিক হয়নি , কিন্তু ও সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷ ভাইয়া ওর ড্রেসটা চেঞ্জ করে দিয়েছে , বলে হাসি টাকে আটকে রাখার চেষ্টা করলো তবুও যেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে….
কথাটা শুনে রাইসা যেন আরো তিনগুণ হাইপার হয়ে গেল , কোনভাবেই আরিসের সঙ্গে আরূকে ও সহ্য করতে পারে না সেই ছোটবেলা থেকে,,,,
রাইসা : আমি এক্ষুনি যাব আরিশের কাছে , ওই মেয়ের কাছ থেকে নিয়ে আসবো আরিশকে ৷ আমি এক মুহূর্তও আরিশকে ওর কাছে রাখবো না ৷ আজকে আমার সাথে এরকম করেছে , না জানি অন্য দিন আরিস এর সাথে কি করে !
সানা মনে মনে: ও আরিশ ভাইয়া কে কেন , কাউকে কখনো কিছু করবে না , তোমাকেও কিছু করত না কিন্তু সকালে তুমি ওর সঙ্গে যে ব্যবহারটা করেছো তার কারনে এটা তোমার পাওনা ছিল রাইসা আপু৷
রাইসা যেই যেতে যাবে তখনই সানা ওর হাতটা ধরলো, যে করেই হোক ওদের এত সুন্দর মুহূর্তটাকে কেবলমাত্র রাইসার জন্য নষ্ট হতে দিতে পারেনা ও কখনোই ৷ এমনিতেই ওদের দুজনের মধ্যে এই কদিনের যা হয়েছে তাতে আরুর অসুস্থতায় যেন আরিশ এর ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে আর সব পিক হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ৷ এই সব কথাগুলো মনে মনে ভাবছে সানা ৷
রাইসা : কি হলো তুই আমাকে আটকাচ্ছিস কেন?
সানা : আপু তুমি এখন যেও না, ওরা নিজেদের মধ্যে প্রাইভেট কিছু সময় কাটাচ্ছে তাই আমার মনে হয় না তোমার এখন যাওয়াটা ঠিক হবে ৷
রাইসার রাগ তো এবার সপ্তম আসমানে ছাড়িয়ে গেল৷
রাইসা : আরিশ শুধু আমার , শুধু আমার আর কারো নয় ৷
❤
আরুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আরিশ ,ঘুম অনেকক্ষণ আগেই ভেঙ্গে গেছে , উঠছে না কেবলমাত্র আরুশির কারণে ৷ আরুশি বাচ্চাদের মত গুটিসুটি হয়ে ওর বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে , এখন বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে আরুশি জেগে যাবে তাই এখন আরুশিকে জাগানো ঠিক হবে না তাই উঠতেও পারছেনা আরিশ ৷
সকালের ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে আরু যে এমনকিছু ঘটাবে সেটা হয়তো আরিশ কল্পনাও করেনি ৷ কথাটা ভেবে খুব হাসি পেল আরিশের কারণ এমন বাচ্চাদের মত কাজগুলো আরুশির দ্বারাই সম্ভব ৷মেয়েটা এখনো বড়ো হলো না ৷ কপালে ভালোবাশার একটা পরশ একে অনেকক্ষন আরুশির দিকে তাকিয়ে রইল আরিশ ৷ মেয়েটাকে নিজের থেকেও বড্ড বেশি ভালোবাসে আরিশ , ওর কেউ কখনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তাকে আরিশ ছাড়বে না ৷
❤
গুটি গুটি পায়ে অনিকা খানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল আরূ, সরাসরি রুমে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না ৷ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছে , রাত 11 টা প্রায়, আরিশ ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল , আরশকে ছাড়িয়ে কোনক্রমে ওনাদের রুমে এসেছে আরু ক্ষমা চাওয়ার জন্য ৷ আফজাল সাহেবের রুমে আছেন তবে ওনাকে খেয়াল করেননি আরুশী….
আরুশী আর একবার উঁকি মারতেই আফজাল সাহেব পেপার পড়তে পড়তে হেসে ফেললেন ৷ওনাকে হাসতে দেখে অনিকা খান অবাক হয়ে বললেন : পেপারে কি কোন সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়েছে যে তাকে দেখে তোমাকে হাসতে হবে , নাকি আবার নতুন করে বিয়ে করার শখ জেগেছে , কোনটা ?
শ্বশুর-শাশুড়ির এমন প্রেমের কথোপকথন শুনে আরুশির নিজেরও বেশ খানিকটা লজ্জা লাগছে৷
আফজাল সাহেব চোখের ইশারায় অনিকা খানকে দরজার কাছে যেতে বললেন , অনিকা খান প্রথমে কিছু বুঝলেন না তবে উনার ইশারা বুঝতে পেরে দরজার কাছে গিয়ে দেখল আরুশী দাঁড়িয়ে আছে৷
অনিকা খানকে এভাবে দেখে আরুশি চমকে গেছে সঙ্গে খানিকটা লজ্জায়ও পড়ে গেছে , কারণ উনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে এতক্ষণ ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে উনাদের প্রেমের কথোপকথন শুনছিল ও ৷
অনিকা খান আরুশিকে রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন,,,,,
আফজাল সাহেবের সামনে কাচুমুচু মুখ করে বসে আছে আরুশি কিছুই বলছে না ভয়ে যেন কাঠ হয়ে গেছে ৷ বারবার ভাবছে যে যদি দুপুরের ঘটনার জন্য আফজাল সাহেব ওকে কিছু বলেন তাহলে !
আফজাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন : আমি যা শুনলাম তা কি ঠিক আরু মামনি ৷
আরু থর থর করে কাঁপছে, কি বলবে ও এখন ! এই ঘটনাটার কারণে আফজাল সাহেব যদি এখন ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেয় সেই ভয় পাচ্ছে ও , আর
অনিকা খান তো আরুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন
হঠাৎ করে আফজাল সাহেব জোরে উৎফুল্লতা সঙ্গে বলে উঠলেন : এটাই তো আশা করেছিলাম মামনি তোর থেকে , কেউ তোকে অপমান করবে আর তুই তাকে এত সহজে ছেড়ে দিবি , পাল্টা জবাব দিবি না এটা জানলে আমিও খুব রেগে যেতাম ৷ কিন্তু তুই যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস , নিজের অধিকারটা সবার আগে , কখনো নিজের অধিকার ছাড়বি না ৷
আফজাল সাহেবের কথা শুনে আরুশি ছলছল চোখে তার দিকে তাকালো ৷ আরিশের বাবা মায়ের মত একজন শ্বশুর-শাশুড়িকে পেয়ে আরু নিজেকে ধন্য মনে করে ৷ কতজন মেয়ের কপাল এমন সৌভাগ্য হয়?
মাঝে মাঝে নিজের বাবার সঙ্গে আফজাল খান কে মেলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আরূ যেন কখনোই মিলিয়ে উঠতে পারে না কারণ দুটি চরিত্রের মধ্যে যে বড্ড তফাৎ , কেউ নিজের সন্তানকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেয় আবার কেউ পড়ে সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো করে কাছে টেনে নেয় ৷
চলবে,,,,,,,
গল্পটা যেন দিন দিন আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে😒 ৷
আর গল্পর part number বেশি হলে আপনাদের কি কোন অসুবিধা আছে? না থাকলে আমি আরো বড়ো করে লিখব কারন অনেক বেশী গভীরে গিয়ে ডিটেইলসে গল্পটা লিখতে হয় তাই ৷
বেশি part না চাইলে বলবেন তাহলে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ৷
আর আজকে গল্পটা দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না তাও লিখলাম😎 ৷