তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩

0
695

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:3
#Suraiya

সকালবেলা আরু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠেছে কারণ আজকে ওদের বিয়ের শপিং এ যাবে ৷

আরু আরিশের কথা প্রায় ভুলেই গেছে , সম্পূর্ণ মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু চাইলেই কি আর সব চেষ্টা সফল হয় ! তেমনই আরূর ক্ষেত্রে হচ্ছে….

রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখল অভ্র ড্রইংরুমে বসে আছে, শপিং করার জন্য অভ্র আর আরু একাই যাবে, বড়রা তাদের সঙ্গে কেউ যাচ্ছে না….

অভ্র গাড়ি চালাচ্ছে আর আরুর সাথে নানান ধরনের কথা বলছে,আরু মাথা নাড়ালেও তা মন থেকে না, তার কারণ আরিসের বলা প্রত্যেকটা কথা তার কাছে যেন আতঙ্কের মতো মনে হচ্ছে, এতটা আতঙ্ক একটা মানুষের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব নয় ৷

শপিংমলে ওরা গেছে , প্রথমে আরুর জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা টা কিনল রেড কালারের ৷ এই কালারটা একদমই পছন্দ করে না আরু তবুও অভ্রের পছন্দ বলে তাই আর না করতে পারেনি ৷তারপর অভ্র নিজের জন্য পাঞ্জাবি আর ব্লেজার কিনল…..

আরূ একটা জামা ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ট্রায়াল রুমে যেতে গেলেই অভ্র ওর পিছন পিছন গেল , সেটা অবশ্য আরূর অজানা…..

জামাটা গায়ে দিয়ে যখন আরূ দেখছিল তখন হঠাৎ ট্রায়াল রুমের দরজায় নক পড়ায় আর অভ্রের গলার আওয়াজ পাওয়ায় আরু একটু বেশ অবাক হল, কারণ এখানে অভ্রের আসা একেবারেই উচিত হয়নি৷তার পর ভাবল হয়তো দেখতে চেয়েছে যে পোশাক টায় আরুকে কেমন লাগে তাই এসেছে হইত৷

এই ভেবে আরু দরজা খুলতেই তার হাতটা টেনে ওকে বাইরে বার করে এনে কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোটের দিকে এগোতে লাগলো অভ্র ৷ আশেপাশে কোন লোক ছিল না তাই কেউ দেখতে পাইনি আর সে সুযোগই নিতে চেয়েছে অভ্র ৷
আরূ নিজেই এত অবাক হয়েছে যে সমস্ত কিছু তার ভাবনার আগেই হচ্ছে ৷ হঠাৎ অভ্র যখন ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করবে তখনই অভ্রের পিছন দিয়ে আরিসের মত একজনকে দেখতেই আরূ ভয় পেয়ে গেল ৷ ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল ৷ ও যাকে দেখেছে সে মুখে একটা ডেভিল মার্কা হাসি নিয়ে আরূর দিকে তাকিয়ে হাসছে , আর সেই হাসি দেখে ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে আরু ধাক্কা মারলো অভ্রকে ৷ তারপরে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো মানুষটা আর নেই৷

অভ্র রেগে গিয়ে বলল: পাগল হয়ে গেছে তুমি ?এভাবে ধাক্কা মারলে কেন ?আর আমাকে কি তোমার ক্যারেক্টারলেস বলে মনে হয়?

আরু(আমতা আমতা করে): দেখুন বিয়ের আগে এসবকিছু ঠিক না , আর তাছাড়া আমি এসব পছন্দ করিনা ৷ আর পাবলিক প্লেসে আপনার এরকম করাটা মোটেই উচিত হয়নি, আর ধাক্কাটা আমি মারতে চাই নি ৷আপনি নিজের মধ্যে ছিলেন না তাই আমি বাধ্য হয়েছি….

অভ্র : (মনে মনে) কাম ডাউন অভ্র , বেশি হাইপার হওয়া উচিত হবে না ,কাম ডাউন ৷ কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় ৷
তারপরে ও নরম কন্ঠে বলল :
আই এম রিয়েলি সরি আরুশি , আমি ওরকম করতে চাইনি ৷রিয়েলি সরি ফর দ্যাট, আসলে আমি তোমাকে দেখে নিজের মধ্যে ছিলাম না তাই এরকম হয়ে গেছে৷
আর তাছাড়া বিয়ে হয়ে গেলে তো তুমি আমারই৷

আরু: ইটস ওকে বলে আবার ট্রায়াল রুমের ভিতরে চলে গেলো ৷

ট্রায়াল রুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আরূ ৷
একটু আগেই ও আরিশ এর মতো একজনকে দেখল, তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি এখন সব জায়গাতেই ও আরিশ কে দেখছে?

মনের ভয় গুলো যেন আরো বেশি গভীর হচ্ছে….

আজকে আরিশ এর অফিসের প্রথম দিন ৷ কলেজে খুব একটা এটেণ্ট করে না ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছাড়া ৷আর কলেজ টপার হওয়ার কারণে টিচাররাও খুব একটা বেশি মাথা ঘামিয়ে দেখেন না এই ব্যাপারটা নিয়ে ৷

বাবা-মায়ের কথা রাখতেই ওর আজকে অফিসে জয়েন করা ৷ না হলে কোন কিছু নিয়ে পড়ার জন্য ফরেন কান্ট্রি তে চলে যেতে চেয়েছিল আরিশ , আটকা পড়ে গেল একটা কারণে যা হলো “আরুপাখি৷”

টেবিলের উপরে থাকা গ্লোবটাকে বার বার ঘোরাচ্ছে আরিশ , আর মনে মনে হাসছে ৷ এই মুহূর্তে অকে দেখলে কেও ওকে যে পাগল বলবে না সেটার গ্যারান্টি নেই….

হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই…..

আরিস : কাম ইন ৷

আরাভ: আজকে অফিসে যাইনি আমি তাই তোর সঙ্গে ভাবলাম কিছুটা সময় কাটাবো তাই তোর বাড়িতে গেলাম , আন্টি বললেন যে তুই নাকি অফিসে এসেছিস ৷ কথাটা শুনে বিশ্বাস হলো না আমার তাই চোখটাকে সার্থক করার জন্য এখানে আসা ৷
তো কেমন লাগছে নতুন অফিস নতুন সব কাজ?

আরিশ মুচকি হেসে : এই তো বেশ ভালই লাগছে৷ তোর খবর বল ৷ আমি যে কালকে তোকে আসতে বলেছিলাম আসিস নি কেন?

আরাভ: কি আর বলি তোকে !তোর বোনকে মানাতে গিয়ে সময় পার হয়ে গেছে ৷ আচ্ছা তোর বোন টা এমন কেন রে ? আমি কোনদিক থেকে খারাপ যে আমাকে পছন্দ করেনা ৷

আরিশ : তোর গোটা বদনটাকেই ও পছন্দ করেনা৷

আরাভ: মজা করিস না দোস্ত, আমি কিন্তু সিরিয়াস৷ তোর বোনকে একটু তুই বলনা , তোর বোন তো তোর সব কথা শোনে ৷

আরিশ: এ পেয়ার কা মামলা হে বস , তাই আমার থেকে কিছু এক্সপেক্ট করো না ৷
ভালোবাসা হলো অদ্ভুত এক অনুভূতি যা সকলের প্রতি আসে না, ওর ও হয়তো আপনার প্রতি আসেনি৷

আরাভ বুকে হাত রেখে : দোস্ত মজা করিস না,নইতো ছোটখাটো হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো কিন্তু ৷ এত কবি কবি ভাব নিচ্ছিস কেন ? হুমায়ূন আহমেদ হয়ে যাবি নাকি?

আরিস : হুমায়ুন আহমেদ না হতে পারি তবে আমার আরুপাখির পারফেক্ট জীবনসঙ্গী হতে পারব ৷ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে ৷

আরাভ: দোস্ত মেয়েটার পিছনে তুই এখনো পড়ে আছিস? ছেড়ে দে না মেয়েটাকে আর কিইবা আছে ওই মেয়েটার মধ্যে এমন?

আরিশ : তুই বুঝবি না ৷ পরশুদিন আমার বিয়ে আর কালকে হলুদ ইনভাইট রইল, চলে আসিস, বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷
আরিশ এর পিছন পিছন আরাভ ও বেরিয়ে গেল..

আরাভ: কিছুই তো বুঝলাম না, বুঝিয়ে বল৷

আরিশ : ও তুই বুঝবিনা…..

আরিসের দরজায় নক করতেই আরিশ সানাকে ঘরের ভিতরে আসতে বললল ৷

সানা : ভাইয়া কালকে আমাকে একটু শপিং এ নিয়ে যাবি?

আরিশ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে: কেন কালকে আবার তোর কি আছে ?বিয়েটিয়ে করছিস নাকি?

সানা : ভাইয়া সব সময় কেন মজা করিস বলতো! আমার কেন বিয়ে হতে যাবে, বিয়ে তো আরু মানে আরুশির ৷
পরশুদিনের বিয়ে আর কালকে হলুদ ৷ হলুদ অ্যাটেন্ড করার জন্য কিছুতো নতুন পরে যেতেই হবে , পুরনো ড্রেস পড়ে তো আর যাওয়া যায় না তাই না!

আরিশ: তা তোর ফ্রেন্ড বাড়ি এসে তো ইনভাইট করে গেল না ৷

সানা : আরুশির অন্য কি কি কাজ ছিল তাই আসতে পারেনি , তাই কলেজে কার্ডটা দিয়ে দিয়েছে ৷

আরিশ : আচ্ছাহহহ! ( একটা হাসি দিল তার কারণ আরুশির তার বাড়িতে না আসার কারণটা আরিশ বেশ ভালোই জানে)

আরিশ: আচ্ছা যাব রেডি হয়ে থাকিস…..

অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে আরুশি,ঘুমাতে রাতে হয়েছিল ৷ সারাদিন এত ধকল যাওয়ার পরে বাড়ি এসে অনেক কাজ সারতে হয়েছে ওকে ৷

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ আরুশি অনুভব করলো ওর নিঃশ্বাসগুলো আটকে আটকে আসছে , দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম ৷ তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য যখন চোখ খুলে দেখল তখন দেখল আরিস ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে , তাই ওর নিশ্বাস আটকে আসছে ৷ আসাটাই স্বাভাবিক ৷

এই অবস্থায় আরিশ কে দেখে আরু চমকে গেল, কোনরকমে আরিশকে ছাড়িয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যখন ধাক্কা মেরে উঠে বসলো তখন দেখল আরিশ মেঝেতে পড়েগিয়ে হাসছে পাগলের মত….

পাশে থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আরু ৷

আপনি এখানে কি করতে এসেছেন?

এটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন আরূপাখি ? আমার শ্বশুরবাড়ি, আমার বউয়ের ঘর আমি আসতেই পারি তাইনা!

দেখুন আপনি পুরো পাগল হয়ে গেছেন, আপনি চলে যান৷ আপনাকে আমি এখানে একমুহূর্তও দেখতে চাই না ৷

আমি romance না করে তো যাবোই না আজকে ৷আর তুমি তো ঘুম থেকেই উঠছিলেনা দেখেই তো আমি অমন করলাম ৷

আপনি এখনই বেরিয়ে যান ৷ নাহলে আমি চেঁচাবো ৷

ওকে চেঁচাও ৷ বলে হাসতে লাগল ৷

আরু যেই দরজার দিকে পালাবে তখনই আরিশ আরুর হাতটা খপ করে ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল ৷

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here