তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩৯

0
381

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:39
#Suraiya_Aayat

ক্যাম্পাসের মধ্যে বসে আছে ওরা তিনজন, তিথি সানা আর আরু….

তিনজনের মধ্যে নানান ধরনের গল্প চলছে আর তা নিয়ে হাসাহাসি চলছে নানান রকমের ৷
মূলত সেখানে যে যার নিজেদের জামাইকে নিয়ে চর্চা করছে ৷

তিথি নাহিদ কে নিয়ে নানারকম কথা বলছে ,আর সানা বলছে আরাভ কে নিয়ে ৷ কিঞ্চিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ভঙ্গিতেই বলছে কথাগুলো ওরা দুজনে ৷
আরু ওদের দুজনের কথাই শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ৷ ওর কাছে তো আরিশকে নিয়ে অভিযোগ করার মতো কোন বিষয়বস্তুই নেই তাই কিছু না বলে চুপ করে ওদের কথা শোনায় শ্রেয় বলে মনে করছে ও ৷
এতদিন ধরে আরিশকে যতটা কাছ থেকে জেনেছে আর চিনেছে তাতে আরূর চোখে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেখেনি ৷ মানুষটা কি করে এতটা পারে সেটার উত্তর আজো বুঝে উঠতে পারেনি আরু….
বারবারই মানুষটার প্রেমে পড়ে যাই আর তখন একটাই কথা মনে হয়,,,,,
__” বৃথা একটা সংজ্ঞাহীন অথৈ সাগর এর মত মানুষকে হয়তো পুরোটা নাই বা জেনে উঠতে পারলাম ,থাক না তার প্রতি কিছু অজনা ভালোবাসা ৷”

তিথি এবার আরূকে ধরে বলল :
__” কিরে তুই চুপ করে আছিস যে, তোর কি আরিশ ভাইয়াকে নিয়ে কিছু বলার নেই?”

সানা মুচকি মুচকি হেসে বলল ,,,,,
__”ওর ভাইয়ার প্রতি কোন অভিযোগ থাকতেই পারে না কারন ভাইয়া কখনো কোনো অভিযোগ করার সুযোগ রাখে না ৷”

তিথি আরুকে ডাকতেই আরূ চমকে গেল কারণ এতক্ষণ ধরে আরিসের রুমটার দিকে তাকিয়ে ছিল ও, মানুষটা রুমে নেই ক্লাস নিতে গেছে,আর দরজাটা হাট করে খুলে রেখে গেছেন তাই রুমের ভীতরটাতে স্পষ্ট দৃষ্টিপাত করতে পারছে আরূ ৷ আরিশ ওখানে না থাকলেও আরু সেই চেয়ারটায় আরিশ কে কল্পনা করার চেষ্টা করছে বারবার , হয়তো কাজের সময় ব্যস্ততার খাতিরে ওই চেয়ারটায় বসে মানুষটা হয়ত মুখে কলম গুজে কাজটাকে সহজ করার চেষ্টা করেতেন,আবার হয়তোবা মাঝে মাঝে অগোছালো চুল গুলো কে আঙ্গুল দিয়ে মঠি করে পিছন দিকে ঠেলে দিতেন তখন হয়ত শার্টের কলারটা কেও একটু নামিয়ে নিয়েন নীচের দিকে যাতে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কিঞ্চিৎ স্বস্তি মেলে ৷

এসবই হাজারো কল্পনা জল্পনা করছিলো আরিস কে নিয়ে, তখনই তিথি ডাকতেই চমকে গেল ও ৷

আরোশী মুখের হাসিটা চওড়া করে বলতে শুরু করল,,,,,

__”কি শুনতে চাইছিস তোরা বল আমি নিশ্চয়ই বলবো যদি তার সঠিক উত্তরটা আমার কাছে থাকে ৷”

__”এটাই জানতে চাইছি যে আরিশ ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে,আই মিন তোর প্রতি ওনার ভালোবাসাটা ঠিক কেমন সেটাই জানতে চাইছি , তাহলে আমি বুঝতে পারবো যে নাহিদ আর আরিশ ভাইয়ার ভালোবাসার গাঠনিক পার্থক্যটা ঠিক কোথায় !”

__” আসলে ভালোবাসায় পার্থক্য বলে কোন জিনিস হয় না ৷ শব্দটা যেন বড্ড বেমানান এই ভালোবাসা নামক সম্পর্কটার সাথে , আমি ঠিক কখনো ভালোবাসার ভেদাভেদ করতে চাইনি আর করলেও হয়তো বারবার ব্যর্থ হতাম কারণ আমি নিজেই কখনো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা গড়ে তুলতে পারিনি নিজের মতো করে ৷ উনিই আমাকে শিখিয়েছেন ভালোবাসা জিনিসটা কেমন হয় ৷ উনি নিজের সম্পূর্ণ ভালবাসাটাকে অনুভূতির আকারে প্রকাশ করেছেন আমার কাছে তাই হয়তো কখনো এমন পার্থক্য করে বোঝার চেষ্টা করে ওঠা হয়নি আর ৷
তুই যদি জানতে চাস যে আমার প্রতি ওনার ভালোবাসাটা ঠিক কেমন তাহলে আমি এটাই বলব যে আলাদাভাবে উনি কখনো ভালবাসার ডেফিনেশন আছে বলে মনে করেন না , ওনার মতে আমি ওনাকে ভালোবাসা কি তা শিখিয়েছি এবং আমাকেও যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তো আমিও একই কথাই বলবো যে আমি উনার থেকে ভালোবাসা জিনিসটা কি তা শিখেছি ৷ আমরা দু’জনে একে অপরের পরিপূরক তাই সবটা এত সহজ বলে মনে হয় ৷
ভালোবাসা একটা অনুভূতি যা সকল মানুষের প্রতি আসে না যেমন তোর নাহিদ ভাইয়া ছাড়া এত বছরেও অন্য কোন পুরুষের প্রতি আসেনি তেমনি উনিও আমাতে আকৃষ্ট , আমার ভালোবাসায় আসক্ত , আমি উনাকে হাজার বার দূরে ঠেলে দিলে তুমি কখনও দ্বিধাবোধ করবেন না পুনরায় আমার কাছে ফিরে আসতে….
আসলে ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক কেমন সেটা বুঝে উঠতে পারলেও উনার আমার প্রতি ভালোবাসাটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না আজো ৷ উনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভালবাসেন যেগুলো হয়তো উনি আমার জীবনে না আসলে জানতেই পারতাম না যে কতটা চাইলে একটা মানুষ কে নিজের করে পাওয়া যায় ৷
আর তাছাড়া উনি ভালোবেসে যে কাজগুলো করেন সেগুলোর কথা নাহয় আমি নাই বললাম ৷ আমার কুড়ি বছর বয়সেও আমার বাচ্চামো স্বভাব গুলোকে ভালবাসার চোখেই দেখেন, কখনো বিরক্ত বোধ করেন না, হালকা কুয়াশা মাখা রাতেও ওনার গায়ে বমি করে দিলেও মুখদিয়ে আবেগজনিত একটা শব্দটিও উচ্চারণ করেন না , আমার কিছু হলে যেন নিজের প্রাণটাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন এমনটাই অনুভব করেন উনি….
আমি হিনা উনি কিছুই নয় এই জিনিসটা উনি বড্ড বিশ্বাস করেন তাই আমিও উনার দীর্ঘ বিশ্বাসের দেয়ালটা কখনো ভাংতে চাইনা ৷
আজো ভালোবাসি আর আজীবন ভালোবাসবো,,,,,, অনুভুতিতেই বিরাজ করুক সকল ভালোবাসা ৷ ভালোবাসা অবিরাম ৷”

এতক্ষণ ধরে তিথি আর সানা দুজন আরূর কথা মন দিয়ে শুনছিল, ওরা এত বছর ধরে আরূকে দেখছে,তাই ওকে ভালোভাবে চেনে যে ও ঠিক কেমন স্বভাবের,তাই আজ আরুর মধ্যে পরিবর্তনটা ওরা লক্ষ্য করতে পারছে , দীর্ঘ পরিবর্তন হয়েছে ওর মাঝে ৷

ওদের দুজনের গভীর দৃষ্টি উপেক্ষা করে আরু আবার মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাটা দিল সামনের দিকে, কারন সেখানে আরিশ পকেট এ্ হাত রেখে আরুর জন্য অপেক্ষারত আর মুখে রয়েছে বরাবরের সেই মন মাতানো হাসি , যা আরূকে বারবার ঘায়েল করার জন্যই যথেষ্ট ৷

আরু নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, নিজের ম্যাচিউরিটি টাকে বাড়াতে চাইছে কারণ ও জানে ওর অনেক কাজ কর্মের জন্য আরিশকে অনেক ধকল সামলাতে হয়, ওর বাচ্চামো স্বভাবগুলো মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে চলেছে দিনদিন, আর এগুলো যে দিন শেষে আরিশ এর জন্য বড়ই কষ্টদায়ক আর ক্লান্তিকর সেটা আরিশ কখনো প্রকাশ না করলেও আরু ঠিক বুঝতে পারে….

সানা আর তিথির মধ্যে এখন অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে ৷ আরূর বলা প্রত্যেকটা শব্দ যেন ওদের ভাবনাচিন্তা কে পরিবর্তন করে দিয়েছে৷ এতক্ষণ ধরে ওরা যে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছিল আরুশির কথাগুলো হলো তার যোগ্য জবাব ৷ আসলে সত্যিই ভালবাসার মানুষটাকে যদি সঠিকভাবে না ই ভালোবাসতে পারো তাহলে তারা অপরের চোখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নজরে আসে , আর আরু ওর কথাতেই প্রমাণ করে দিল ৷ অরিশ আর আরুর ভালোবাসাটা এক অদ্ভুত রকমের, যেমনটা আরুশিও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি আজও তেমনি হয়তো বাইরের তৃতীয় ব্যক্তি চেষ্টা করলেও কখনো বুঝে উঠতে পারবে না কারণ তা যে দীর্ঘ মহা সাগরের মতই যেখানে শুরু থাকলেও কোনো শেষ নেই ৷

আরিশ আর আরু দুজনে সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে, দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা ৷ নীরবতা ভেঙে আরিশ বলল,,,,,
__” আমার রুমের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলে আরুপাখি?”

আরিশের থেকে এরকম একটা প্রশ্ন আরু শুনবে সেটা হয়তো আশা করেনি ও ৷ হাটতে হাটতেই বলল,,,
__”কই না তো ৷”

__”ওহ আচ্ছা তাই ! তাহলে এখন তো ধরে নিতেই হয় যে আজকাল ভালোবাসার নজরে কিছু দেখলেও সেটা ভুল হয় ৷”

আরু এবার থেমে গেল, থেমে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__”আমি আপনার রুমের দিকে তাকিয়েছিলাম কারণ ওই ফাঁকা রুমটার মধ্যে আপনি উপস্থিত না থাকলেও সেখানে আপনাকে অনুভব করতে চাইছিলাম আমি ৷ ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে না থাকলেও মনের মাঝে কল্পনা করতে অসুবিধা কোথায় ?”

অন্য সময় হলে আরু হয়তো প্রশ্নটা কে এড়িয়ে যেত কিন্তু আরিশের বলা শেষের কথাটা যেন বড্ড স্পর্শকাতর , কারণ আরিশ বললো যে ও ভালবাসার চোখ দিয়ে কিছু দেখলে তাও আজকাল ভুল দেখায়,কিন্তু সেটা তো সত্যি নয় ৷ আরিশের ভালোবাসা নিখাদ, সেটা আরু জানে তাই এখন সত্যিটাকে অস্বীকার করলে ওদের ভালোবাসাকে অসম্মান করা হয়, তার জন্যই উত্তরটা দেওয়া জরুরি বলে ও মনে করলো ৷

মুখের হাসিটা টেনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরুকে চোখের ইশারায় আবার পুনরায় সামনের দিকে এগোতে বলল , একসাথে আরো পথ চলা বাকি ওদের, জীবনে একবার থেমে গেলে সেখানেই পড়ে থাকতে হবে নাহলে সামনে এগোনোর রাস্তাটা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসবে….

সামনে নানান ধরনের খাবার রয়েছে আর আরিশ আর আরূ দুজনেই বসে আছে ৷ আরূ খাবার গুলো দেখছে আর কেমন একটা হচ্ছে তবু এখন ভাবছে যে ওর কষ্ট হলেও নিজের বেবির কথা ভেবে আর আরিশের কথা ভেবে ওকে খেতেই হবে কারণ ও আরিশ কে বারবার কষ্ট দিতে চায় না, যদিও বা আরিশ এগুলো জানলে খুবই রাগ করবে যে ওর ভালোবাসাটাকে আরোশী কষ্টের চোখে দেখে তবুও এত ব্যস্ততার মাঝেও আরিশকে যদি একটু ফ্রী স্পেস দেওয়া যায় তাহলে সমস্যা কিসের….

আরুশি খাবার হাত নিতেই আরিস বলে উঠলো,,,
__”তোমাকে হাত দিতে হবেনা আমি খাইয়ে দিচ্ছি৷”

আরুও আর না করলো না কারণ এগুলোর সাথে ও পরিচিত ৷ আরিশ কখনো কাউকে পরোয়া করেনি আর আজ করবে না , আগে ক্যান্টিনে খুব লাঞ্চ করার সময় আরিশ খুব একটা না আসলেও তবে এখন আরিশ প্রতিনিয়ত আসে, আর ওদেরকে এমনভাবে দেখে দেখে সকলেই অভ্যস্থ, কেউ আর আগের মতো বিষয়টা দেখে হাসাহাসি করে না ৷ আগে আরূও এই সমস্ত বিষয় নিয়ে অনেকটা ভাবলেও এখন আর ভাবে না কারণ যার যা ভাবার সে সেটাই ভাববে, ওর ভাবনাতে কারোরই ভাবনা-চিন্তার পরিবর্তন হবে না…..

আরিশ আরুকে খাইয়ে দিচ্ছে মনোযোগ সহকারে আর আরু ও খাচ্ছে কিন্তু আরিস এখনো খাচ্ছে না দেখে আরু বলে উঠলো,,,
__”আপনি সেই থেকে আমাকে খাইয়ে যাচ্ছেন আর নিজে তো কিছু খাচ্ছেনা৷”

__”আগে তোমার খাওয়া শেষ হোক তারপরে আমি অফিসে গিয়ে লাঞ্চ করে নেব ৷”

__”আপনি কি আবার অফিসে যাবেন ?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল কারণ আরিশের এত কষ্ট আরু আর নিতে পারছে না, মানুষটা বড্ড বেশি স্ট্রাগেল করে সারাদিন ৷

__”হ্যা অফিসে যেতে হবে , অফিসে কাজের প্রচণ্ড চাপ , তাছাড়া বাবা একা হাতে কতটা সামলাবেন বলো!আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে কিনা ! বাবারও বয়স হয়েছে বেশি প্রেসার দেওয়া ঠিক না তাই নিজেই হ্যান্ডেল করা যায় তারই চেষ্টা করছি ৷”
__”কিন্তু তুমি খাওয়া থামালে কেনো? তাড়াতাড়ি খাও ৷”
খানিকটা ধমকের সুরেই বললো আরিশ ৷ আসলে এক্সট্রা 5 মিনিট ক্লাস নিতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে ওর ৷
আর আজকে অফিসের কাজটাও একটু বেশি সেই কারণে ৷
আরুশির খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আরিশ আর আরু ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এল ৷ আরূ আরিশকে অনেকবার খাওয়ার কথা বলেছে তবে আরিশ খাইনি ৷ আরুর আন্দাজ হয়ে গেছে যে অফিসে গিয়েও আরিশের আর খাওয়া হবে না , একবার কাজের মধ্যে ঢুকে গেলে খাওয়া-দাওয়ার কথা আর কিছু মনেই থাকে না আরিশের, এতদিনে এগুলো বেশ ভালই বুঝতে পেরেছে আরূ ৷

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,,,
__” কখন ফিরবেন?”

আরিশ ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে আরু কে বলল,,,,
__” আজ হয়তো ফিরতে লেট হবে আরুপাখি, তুমি যেন বেশি রাত জেগো না কেমন!”
বলে আরুশির গালে আলতো করে স্পর্শ করে কপালে ভালবাসার পরশ একে দিল….

আরুর চোখের কোনায় জল জমে রয়েছে,
হয়তো পলক পড়লেই টপটপ করে গড়িয়ে পড়বে৷ মানুষটার কষ্ট দেখে নিজেরও প্রচন্ড কষ্ট হয় ৷ সারাদিন অফিস কলেজ করে নিজের কেয়ার টুকু নিতেই ভুলে যাই আরিশ ৷

আরুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

আরিশ যেতেই আরুর চোখের কোনে জমে থাকা জলগুলো অবাধ্য হয়ে গড়িয়ে পড়ল চোয়াল বেয়ে ৷ কেন এতটা কষ্ট পায় মানুষ টা ? কেন এত কষ্ট করে? উত্তর একটাই,,,,, প্রিয়জনকে ভালো রাখার জন্য ৷
কিন্তু সকলকে ভাল রাখতে গিয়ে দিনশেষে আরিশের নিজের আর ভালো থাকা হয়ে ওঠে না….

অনেকক্ষণ ধরে ঘরে বসে থাকতে থাকতে আরুসি বোর হয়ে গেছে ৷ একপলক ঘড়ির দিকে তাকাতেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখটা নিচে নামিয়ে নিল , ঘড়িটার দিকে তাকালেই বুকের ভেতরটা কেমন একটা করে ওঠে ৷ কত তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায় দিনটা ৷ শীতকালের আবহে সূর্য্যটাও আজ কাল তাড়াতাড়ি নিজের গন্তব্য ফিরে যায়, যদি তাকে কোনভাবে আটকে রাখা যেত তাহলে হয়তো প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষার প্রহরটাও আরো দীর্ঘ তো….

সন্ধ্যা হতেই আরো বেশ কিছুক্ষন বাকি আছে তাই একটু গার্ডেন থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছা হল আরুশির, সানা কলেজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই ওর সাথে আজকের গল্প করার সুযোগটা আজ নেই ৷ এমনিতেও আজকে মনটা ওর কেমন একটা করছে, খুব একটা ভালো লাগছে না , বড্ড একা একা ফিল করছে আরিশকে ছাড়া ৷

বিছানা থেকে ওড়নাটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরূ ৷
আস্তে আস্তে বাগানের মধ্যে হাঁটছে আর ফুল গাছ গুলোকে মাঝে মাঝে আলতো করে স্পর্শ করে দেখছে, দিনের শুরুতে কত সহজ ভাবে ফুটে ওঠে আর দিনশেষে কেমন নেতিয়ে পড়ে ৷
তবে আরিস সারাদিন নিজেকে সতেজ প্রমাণ করার চেষ্টা করে তবুও ভীতর থেকে ওর নিজের শরীরটা যে আর চলে না সেটা ও নিজেও বুঝলেও কাউকে বুঝতে দেয়না , কথাগুলো বারবার ভাবছে আরূ….

কিছুটা হাটতেই নিজেকে যেমন ক্লান্ত ক্লান্ত বলে মনে হল তাই আর বেশি না হেঁটে দুরে দোলনাটাই গিয়ে বসে পড়ল ৷ দোলনার শিকলটার সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিজের ক্লান্তি দূর করতেই কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো অনিকা খান হাতে একটা প্লেট নিয়ে ওর পাশে বসে আছেন….

__”কিরে তুই এখানে কি করছিস? আমি তোকে কখন থেকে খুঁজেই চলেছি, তোর রুমে গেলাম তোকে না পেয়ে তাই গার্ডেনে এলাম, দেখলাম তুই এখানে বসে আছিস ৷”

আরু মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” কিছু বলবে মামনি?”

__”কিছু বলবো তো অবশ্যই আর তার সঙ্গে আমার নাতিনাতনীটার পেটপুজোটাও সেরে যাব ৷ তোর জন্য গরম গরম চিকেন দিয়ে সিঙ্গারা বানিয়েছি আমি, তুইতো খুব ভালবাসিস ! তাই জন্য নিয়ে এলাম বানিয়ে ৷সানা তো ঘুমাচ্ছে, ওর জন্য কয়েকটা রেখে দিয়েছি আর আরিশের জন্যও রাখলাম ৷ তাড়াতাড়ি খেয়ে নে না হলে আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে ৷”

আরু প্লেটটার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,
__”তুমি রেখে যাও মামনি আমি খেয়ে নেব ঠিক ৷”

__”আমি জানি তুই খাবি না তাই তুই আগে খা তারপর আমি যাবো ৷”

তখনই বাড়ির কাজের মেয়েটা অনিকা খানকে ডেকে উঠতেই তাড়াহুড়ো করে ব্যস্ততা নিয়ে আরুশিকে সিঙাড়াটা খেতে বলে উনি চলে গেলেন ৷

সিঙাড়ার প্লেটটা নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল আরু, আরিশ আসলে তারপর দুজনে একসঙ্গে খাবে ৷

চলবে,,,,,,,

পেজ এর রিচ কমে গেছে একটু বেশি বেশি comment করবেন plz…..যদি কাজ হয়

যদি এরকম ভালোবাসাটা বাস্তবে থাকত🙂৷
আমার তো আরিশটাকে জীবন্ত একটা মানুষ বলে মনে হয় ,কোন গল্পের কাল্পনিক চরিত্র হিসাবে নয় ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here