তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩২

0
441

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:32
#Suraiya_Aayat

আরু আরিশের হাত ধরে কিছুটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে তারপর কিছুটা ভিড়ের মাঝে যেতেই আরিশের হাতটা ছেড়ে দিল….

আরু আরিশের হাতটা ছেড়ে দিতেই আরিশ আরুর দিকে তাকাল,,,,,

আরিশ : কি হলো আরুপাখি হাতটা ছেড়ে দিলে যে! বাকিটুকু কি আমার সাথে চলবে না ?

আরোশী মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল : জীবনের সফলতার এতটা পথ যখন নিজে একাই চলে এসেছেন তখন সাফল্য অর্জনের সময় সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা আপনারই থাক , তাই আপনি একাই যাবেন ৷

আরিশ আরুর কথা শুনে মুচকি হেসে আরুর হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরল তারপরে বলতে লাগলো,,,,,
জীবনের সফল হওয়ার যখন চেষ্টা করেছি তখন আমি হয়তো একা ছিলাম কিন্তু সফলতায় চূড়ান্ত শিখরে গিয়ে আমি তোমাকে পেয়েছি তাই মাঝপথে এসে তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে কাপুরুষের মত একা একা সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা নেওয়া আমার স্বভাব এর মধ্যে পড়ে না ৷
যাদের যা প্রাপ্য তাদেরকে তার সম্পূর্ণ মর্যাদাটুকু দিতে আমি কখনোই দ্বিধাবোধ করব না , সে তুমি হোক আর যেই হোক….

আরিশ যে আরুর প্রকৃত জীবন সঙ্গী তা আগেই বারবারই প্রমাণ করে আরিশ ৷ কেবল কথাতেই নয় কাজেও তা বারবার প্রমাণ করেছে তা ৷ ও জানে যে আরিশ স্বার্থপরদের মত নয় যারা জীবনে সফলতা পেয়ে সকলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যর চোখে দেখবে ৷

হঠাৎ আরিশ আরুশিকে বলল : আমাকে কি আজকে কি খুবই সুন্দর লাগছে আরুপাখি ? মানে মেয়েরা কি আজকে আমাকে দেখে পাগল হয়ে যাবে? (ইচ্ছা করেই বলল)

আরুশি আরিশের পাশে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল ৷
আরু: এই হাত যখন একবার ধরেছি তখন অন্য সকল হাতের স্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখবো, তাই সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন ৷

আরিশ: দেখেছো তুমি এই সহজ কথাটাকে কত সহজ ভাবে বুঝলে কিন্তু আমার সাফল্যের ব্যাপারটাকে নিয়ে তুমি কত জটিলতা সৃষ্টি করলে !

আরু মুচকি হেসে বললো :চলুন ৷

আরিশ আরুর নাকটা টেনে দিয়ে :চলো আরুপাখি ৷

আরিশ আরুর হাতটা ধরে ওকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল , সবার ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে , বুঝতে পারছে যে ৷ দুজনের মধ্যে কোন একটা সম্পর্ক আছে ৷

কে কি ভাবলো তাতে বরাবরই দৃষ্টিপাত করে না আরিশ, তাই আজকেও ওর দিকে কে কিভাবে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই….

আফজাল সাহেব : এতক্ষণ কোথায় ছিলি ? সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য , প্রোগ্রামটাও থেমে রয়েছে ৷
আরিশ : আসলে বাবা অফিসের একটা কাজ এ গিয়ে লেট হয়ে গেছে সেই জন্য….

তখনই মাইক্রোফোনে প্রিন্সিপালের গলার আওয়াজ ভেসে এলো…

প্রিন্সিপাল স্যার : এবার আমরা আমাদের অনুষ্ঠান শুরু করতে চলেছি, আরিশ ও ইতিমধ্যে চলে এসেছে৷
প্রিন্সিপাল স্যার : এবার আমরা মঞ্চে ডেকে নেব আমাদের কৃতি ছাত্রকে যার জন্য এই বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন….

সঙ্গে সঙ্গে করতালির আওয়াজ আরুর কানে ভেসে এলো ৷
এত জোরে করতালির আওয়াজ শুনে আরু শিউরে উঠল , এক টানটান উত্তেজনাময় মুহূর্ত যেখানে পরিবারের সকলেই আজ গর্বিত আরিশ কে নিয়ে ৷

আরিশ স্টেজের উপরে উঠতেই একটা মেয়ে এসে হাতে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে গেল,
আরিসের মুখে সেই মন মাতানো হাসি যা দেখে যে কেউ পাগল হয়ে যেতে পারে ৷ এমনিতেই আরিশ অত্যন্ত সুন্দর তার ওপরে পাঞ্জাবীটাও মানিয়েছে বেশ ,আর অগোছালো চুল গুলো আরু কিছুটা পরিপাটি করে দেওয়াতে আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে ৷

প্রিন্সিপাল স্যার :আরিশ আমাদের কলেজের কৃতি ছাত্র , আমি সত্যিই গর্বিত আজ এরকম একজন স্টুডেন্ট কে পেয়ে ৷ এরকম চূড়ান্ত ফলাফল আজ অব্দি আমরা খুব কমই পেয়েছি চেষ্টা করব যেন ভবিষ্যতে আরিস এর মত স্টুডেন্ট আরো বানাতে পারি…
আমি এখন চাই আমাদের কৃতি ছাত্র আরিশ সে এখন যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে তার জীবনের এই সাফল্যের চাবিকাঠির আসল রহস্যটা সকলকে জানাই…বলে মাইক্রোফোনটা আরিশের হাতে ধরিয়ে দিলেন ….
মাইক্রোফোন টা হাতে নিতেই আরিশ কোনরকম ইতঃস্তত বোধ করলো না নির্বিঘ্নে নির্দ্বিধায় বলতে লাগলো,,,,,

আরিস: জীবনের লক্ষ্য টা হলো একটা বিরাট যুদ্ধের মাঠের মতো যা অনেক বড়, তাকে প্রশস্ত করার জন্য নিজের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টাই দরকার হয় ৷ আজকে আমি সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছি এর মানে এটা নয় যে আমার জীবনের লক্ষ্য সকলের থেকে আলাদা , তা নয়, আমিও একজন সাধারন মানুষ এর মতই যে নিজের পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সমানতালে মেতে থাকে ৷ পরিবারের সাপোর্ট টা হলো সব থেকে বড় জিনিস যা কেউ হয়তো পাই আর কেউ হয়তো পায় না , তবে আমি খুবই লাকি আমার পরিবারে প্রত্যেকটা সদস্যকে পেয়ে , তারা আমার জীবন টাকে রঙিন করে দিতে সমানভাবে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে , তাই আমি চাইব আমার এই সাফল্যের দিনে আমার আনন্দের সঙ্গে তাদেরকেউ সামিল করতে ৷ তাই আমি চাই তারা যেন স্টেজে উঠে আসেন….

আরিশ ডাকামাত্রই একটা স্টুডেন্ট ওদের সকলকে নিয়ে গেল স্টেজ এর কাছে , আরু যেতে না চাইলে সানা আরুর হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে গেল ৷

স্টেজে সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আরু সানার পিছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে….

আরিশ আবার বলতে শুরু করল ,,,,,,
মা বাবা জীবনের সবথেকে বড় একটা অংশ , ছোট থেকে তারাই লালন-পালন করেছেন , সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন তাই তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার মতো চূড়ান্ত পাপ আমি কখনো করতে চাইনা ,তারা আমার সব ৷ এটা হল আমার বোন সানা , সানা কে উদ্দেশ্য করে ,,, আমার জীবনের একটা অংশ যে সব সময় আমার জীবনটাকে ঝলমলে করে রেখেছে ৷
আর লাস্ট বাট নট দা লিস্ট, বলে কিছুটা হেঁটে গিয়ে পিছন থেকে আরুর হাতটা ধরে সামনে এনে সাইট থেকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে ৷ আরিশ ওকে চেপে ধরে আছে আর সমস্ত শরীরটা যেন কাঁপছে , সত্যিই আরিশ ওর জন্য এতটা করতে পারে তা আজ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না ৷

আরিশ : ইনি হলেন আমার ওয়াইফ বিনতে আরশি খান , আমার জীবনের সবথেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ৷ যাকে আমি চাইলেও কখনো নিজের থেকে আলাদা করতে পারবোনা ৷ কিভাবে একটা মানুষকে ভালবাসতে হয় তা আমি আমার আরুপাখির থেকেই শিখেছি , আর জীবনের শেষ সময় অব্দি আমি তারই হাত ধরে চলতে চাই ৷

আরূর চোখটা ছল ছল করছে আরিশের কথা শুনে,না পেরে আরূ সকলের সামনে আরিশকে জড়িয়ে ধরল , আর কেঁদে দিল ৷
চারিদিক থেকে হাততালির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, কলেজের ছেলে গুলো কেউ কেউ সিটি দিচ্ছে , নানান উৎসাহ জনিত কথা বলছে ৷
জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে এত বড় পাওয়া আরূর জীবনে পূর্ণতা এনে দিয়েছে….

ছাদের উপরে আরোশী বসে আছে দোলনায় আর আরিশ পিছন থেকে ওকে দোল দিচ্ছে….

আরুশি এবার উঠে গিয়ে আরিশের হাত ধরে আরিসকে ও দোলনাতে বসালো….

শক্ত করে আরূ আরিশের হাতটা ধরে বলল : আপনি আমাকে এত ভালবাসেন কেন বলুন তো?

আরিশ আরূর নাকে হালকা করে কিস করে বলল : তোমাকে দেখেই আমার ভালবাসতে ইচ্ছে করে তাই আর না ভালবেসে পারি বল !

আরূ: আমি কিন্তু মজা করছি না, আমি সত্যি কথা বলছি , বলুন আপনি কেন এত ভালবাসেন আমাকে?
আমার মধ্যে আপনি এমন কি পেয়েছেন যাতে আপনি আমার প্রেমে পড়েছেন, আমার থেকেও তো আরো অনেক ভালো আর সুন্দরী মেয়ে আছে ৷

আরীশ: আমি তোমাকে ভালোবাসি কারণ তুমি সবার থেকে আলাদা…

আরুশি: যেমন,,,,

আরিশ : এই যে কদিন পরেই তুমি আমার বাবুর আম্মু হবে তাই ৷(চোখ মেরে)

আরূ বুঝতে পারল যে আরিশ এখন লজ্জা দেওয়ার জন্য ওকে এসব কথাই বলবে , তাই দরকার নেই ওর উত্তর জানার তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল : নাহিদ ভাইয়া কে আপনি অফিসে কাজ দিয়েছেন তাই না?

আরিশ: কই নাতো৷

আরোশী : আপনি যতই বলুন যে না,আমি জানি যে আপনিই জবটা দিয়েছেন ৷

আরিস একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল : হ্যাঁ দিয়েছি কারণ ওনার এটার বড্ড দরকার ছিল ৷ জবটা না থাকলে ওনাকে নিজের ভালবাসার মানুষকে হারাতে হবে আর আমি তা কি করে দেখি বল ৷

আরু: কিন্তু আপনি নাহিদ ভাইয়াকে চিনলেন কি করে?

আরিস: মনে আছে সানা যেদিন ঘুরতে গেছিল সেদিনের কথা! তুমি বোর ফিল করছিলে আর তোমাকে বাড়ির গেটের সামনে ড্রপ করে আমি বেরিয়ে গেলাম নাহিদ ভাইয়া কে খোঁজার জন্যই গেছিলাম , অবশেষে উনাকে পেলাম ৷ সবকিছু জানার পর এক মুহুর্তও ভাবলাম না আর সিদ্ধান্ত নিতে তাই ওনার জব টা দিয়েদিলাম অফিসে , আর এরপরেও যদি তিথির বাড়ি থেকে না মানে তাহলে আমি নিজের দায়িত্বে ওদের বিয়ে দেবো ৷

আরূ: আপনি কত ভাবেন সবার জন্য , বলে আরিশের কাধে মাথা রাখলো ৷
আমাকে এভাবেই সারা জীবন ভালোবেসে যাবেন৷ আমি আর কিছু চাইনা….

আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মুচকি আরিশ হাসলো…. চাঁদটাও যেন আজ সমানতালে ওর সঙ্গে খুশি ৷

চলবে,,,,,,

আমি জানি আজকের part টা খুব ছোট আর ভালো হয়নি😞🙁৷ তাড়াহুড়োকরে লিখেছি না হলে আরো কিছু যোগ করতাম ৷ রাত 9.30টাই লিখতে বসেছি আর 10.51এ এসে শেষ হলো,,,,,সারাদিনের ব্যস্ততার কারনে সময় পাইনি লেখার ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here