তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩৩

0
464

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:33
#Suraiya_Aayat

সকালবেলা আরূ রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে, যদিওবা অনিকা খান নিজেই বানাচ্ছে আর আরু কেবল হাতে হাতে হেল্প করে দিচ্ছে , কারণ আরূ কিছু করতে চাইলেও অনিকা খান করতে দেন না ওকে সেই কারণে ৷

আরু ওঠার সাথে সাথেই আরিশকে ডেকে দিয়েছিল, তারপর দুজনের কিছু খুনসুটি চলার পর আরু নিচে নেমে এল আর আরিশ এখন ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে…..

কিছুক্ষণ পর আরিশ নিচে নেমে আসতেই দেখল পরিবেশটা সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ , সকলে সেখানে উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো কথা বলছে না ৷ সকলের মাঝে দেখতে পেল ওর খালাম্মা রেনু খান আর রাইসাকে , তবে হাতে রয়েছে লাগেজ….
তার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে গাড়ির ড্রাইভার ৷সে হয়তো সেগুলো গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছে….

আরিশ রাইসা আর ওর খালাম্মুকে দেখে কৗতুহল নিয়ে বলল:হোয়াট আ সারপ্রাইজ !তোমরা কখন এলে?

রাইসা কিন্তু কিন্তু করে বলল : আমরা কালকে রাতেই এসেছি তোর এমন খুশির খবর শুনে তবে তুই ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিলি আর সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত ছিলি তাই আর তোকে ডাকলাম না, যদিও বা আমাদের আসতেও অনেকটা দেরি হয়েছিল ৷

রেনু খান কিছুটা রেগে আছেন তা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু কি কারণ সেটা বুঝতে পারছে না ৷ তাহলে এতক্ষণে কি আরুশিকে নিয়ে আবার কোন ঝামেলা করলো উনি?

তখনই আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে দেখল আরূশির মুখটা বেশ খুসি খুসি তার মানে এমন কিছু হয়েছে যে আরুশি তাতে খুব খুশি , কিন্তু কি হয়েছে সেটা এখন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে , কেউ কিছুই বলছে না সকলেই নিস্তব্ধ প্রায়….

আরিস : তাহলে তোদের হাতে এত লাগেজ কেন? তোরা কি আবার কোথাও যাচ্ছিস আবার?

রেনু খান মুখ বেকিয়ে বললেন আরুশিকে উদ্দেশ্য করে,,,,
তোর বউয়ের জন্য আর থাকতে পারলাম কই , ওর জন্যই তো আমার মেয়ে এত অপদস্থ হয়েছে, বারবার ওকে হেনস্ত করেছে আর সেই দুঃখেই তো আমার মেয়েটা চলে যাচ্ছে ,নাহলে তুই তো জানিস যে ও তোকে কতটা চাই !

রাইসা হাতের ইশারা করে ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল : আহ মা তুমি থামবে, এসব কথা কেন তুমি শুরু করলে আবার ৷ আর যেটা সত্যি সেটা কেন বলছোনা, আমার এখানে ভালো লাগছে না তাই আমি থাকছি না এটাই ৷ সব থেকে বড় কথা হলো যখন ভালো লাগবে তখন আবার আসব ৷
হয়তো সেদিন আর আরিশকে পাবো না, এইটুকু কথা আস্তে আস্তে বলল রাইসা ,,,, কথাটা কেউ শুনতে না পেলেও আরূ ঠিক বুঝতে পেরেছে যে সেরকমই কোন একটা কথা রাইসা বলেছে ৷

আরিস: দেখ রাইসা আমার মনে হয় তুই যদি আরুপাখির উপর রাগ করে চলে যাস তাহলে সেটা খুব ভুল করছিস ৷

রাইসা সামনে এগিয়ে গিয়ে আরিশকে জড়িয়ে ধরল তারপর ফিসফিস করে বলল :
হয়তো আমার ভাগ্যে তুই নেই তাই তৃতীয় ব্যক্তি হয়েও তোর মনের মাঝে প্রবেশ করতে পারলাম না সেখানে যে কেবল তোর আরুপাখির. স্থান ৷

আরিশকে ছেড়ে বলল: ভালো থাকিস ৷

বলে আরূশির দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রাইসা ৷
ওর সাথে সাথে রেনু খান ও বেরিয়ে গেলেন ৷

আনিকা খান কাঁদছেন , যতই হোক নিজের বোন আর বোনঝি হয় ওরা , হাজার ভুল করলেও ভুলটা মেনে নিয়ে আবার নতুন করে শুরূ করতে হয় ৷উনি নিজেও জানেন যে আরূশির কোন দোষ নেই তবুও উনারা আজকে চলে যাচ্ছেন দেখে উনার খুবই কষ্ট হচ্ছে….

গোটা বাড়ি যেন কেমন একটা থমথম করছে সবকিছু যেন আরূর মাথার উপর দিয়ে গেল ৷ যে সমস্ত কাজে ওর হাতে নেই সেই সমস্ত কাজে দোষারোপিত হল ৷

সকলে খেলেও আরূ না খেয়ে উপরে চলে গেল, ওর তো কোন দোষ নেই ৷ নিজের স্বামীকে ভালোবেসে তার জন্য যদি কিছু করা অপরাধের হয় , অন্যায় হয় তাহলে সেই ভুল আরু হাজার বার করতে পারে ৷

মন মরা হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরেটা দেখছে একমনে ৷ দূরের আম গাছে দুটো পাখি বসে আছে পাশাপাশি, কত সুন্দরই না লাগছে তাদের দুজনকে একসঙ্গে , যেমনটা ওর আর আরিশকে লাগে একসঙ্গে থাকলে ৷

আজ খুব কষ্ট হচ্ছে আরূর তবে কেন তা জানে না , কারোর ওপর অভিমান , না কি অন্যকিছু , নাকি ওকে অপমান করেছে তাই ওর দুঃখ , কি আসল কারণটা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা ও ৷ আজকে আহানের কথা মনে পড়ছে খুব ৷ আগে ওর বাবা যখন ওকে কথা শোনাতেন কোন ভুল হলে তখনই আহান প্রতিবাদ করত ওর হয়ে ৷ অনেকদিন হল আহানের সঙ্গে কথা হয় না ওর ৷ অনেকটা রাগ করেই আহান আর ফোন করেনি আরুকে ৷

ওর এখনো মনে আছে ছোটবেলায় ওদের দুই ভাই-বোনকে ওর মা একই রঙের আর একই ধরনের দুটো গেঞ্জি এনে দিয়েছিলেন ৷ সেটা পড়ে ওরা একটা ছবি তুলেছিল ৷
ছবিটা ওর জামা কাপড়ের মধ্যে রাখা আছে, আজকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ছবিটা ৷ তাই আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ছবিটাকে আনতে গেল তখনই ছবিটা বার করতে গিয়ে খসখসে একটা জিনিস হাতে পড়তেই সেটা আসলে কি তা জানার জন্য বার করতেই দেখল একটা কাগজ , তাতে কিছু লেখা আছে….

লিখাগুলো বাংলাতে নয়, ইংরেজিতে লেখা তবে উচ্চারণগুলো বাংলাতেই ৷ আসলে সেটা কি তা জানার জন্য চিঠিটা খুলতেই অবাক হলো আরু ৷

ডিয়ার আরুশি ,,,,,,,

জানো তো তুমি বড্ড বেশি লাকি , যার জন্য তুমি আরিশ এর মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছো ৷ আমিও ওকে খুব ভালোবাসি তবে একজন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ৷ আর সব সময় একজন তৃতীয় ব্যক্তি প্রত্যাক্ষিত হয় একটা সম্পর্ক থেকে ৷ যদিও বা আমারই ভুল ছিল তোমাদের মাঝে গিয়ে ভালোবাসা আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা করার ৷
আরিশ কে আমি সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করি, তবে একসাথে বড় হওয়া টা শুরু হতে না হতেই বহুদূরে চলে গেলাম ওর থেকে ৷ সেই 11 বছর বয়স থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকি ফ্যামিলির সাথে , আরিসের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা ছিল সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ৷ আরিশকে ছেড়ে আসতে কষ্ট হয়েছিল খুব ৷তখন এই সমস্ত আবেগ ভালোবাসা কি তা ঠিক বুঝতাম না , তবে এখন বুঝি বেশ ৷
যখন শুনেছিলাম যে আরিশের সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারিনি তোমাকে৷ মনে হচ্ছিল তখনই সবকিছু শেষ করে দিই৷ আমার তোমার উপর রাগ হয়েছিল , আমি ভেবেছিলাম যে করেই হোক আরিশের জীবন থেকে তোমাকে আমি সরাবোই , আর এটাই ছিল আমার আসল উদ্দেশ্য ৷
তবে যখন দেখলাম ও তোমাকে খানিকটা হলেও ইগনোর করছে তা দেখে আমি ভাবলাম হয়তো কাজটা সহজ হবে তাই নানানভাবে চেষ্টা করতাম ৷ কিন্তু ওর বাইরের ইগনোর এর থেকেও বেশি কেয়ারটা ছিল তোমার প্রতি হাজার গুণ বেশি ৷
সেটা আমার প্রথমে চোখে পড়েনি অবশ্য আমি নিজের চোখে সেগুলো আনতে চাইনি কখনো,যত এড়িয়ে চলা যায় এগুলো থেকে ৷
আচ্ছা আজকে আমি যাকে ভালবাসি তাকে ছেড়ে কেন চলে যাচ্ছি প্রশ্নটা তোমার মনে আসছে না?না আসাটাই স্বাভাবিক, এতে অস্বাভাবিক এর কিছু নেই ৷

তাহলে বলি ,,,,,,,,

সেদিন যখন আরিস এর অফিসে গেলাম তখন আমি বাইরে অপেক্ষায় ছিলাম তুমি কখন বেরোবে আর আমি অফিসে ঢুকবো , তুমি বের হতেই অফিসে ঢুকলাম তারপর আরিসের সঙ্গে ঘুরতে গেছিলাম…

সেদিন,,,,,,

রাইসা যখন বলল যে আরিশ যেখানে ওকে নিয়ে যাবে সেখানেই ও যাবে , তখন আরিশ আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেল নদীর ঘাটে ৷ সেখানে বড় বড় স্টিমার, জাহাজ আর লঞ্চ গুলো দেখতেই মনটা আমার খুশিতে ভরে গেল….

রাইসা : আমি জানতাম তুই আমাকে এমনই একটা সারপ্রাইজ দিবি এখানে এনে৷

আরিশ মুচকি হাসল তারপর ওর হাত ধরে লঞ্চে উঠালো ৷

রাইসা তো মনে মনে খুব খুশি কারণ ওই যতই চাইছে যে আরিশকে নিজের কাছে আনতে আর সফল হচ্ছে ৷ আর এখন নিজেকে সফল দেখে ওর খুবই খুশি লাগছে ৷

লঞ্চ চলছে আর হওয়ায় আরিসের সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে , এক অপরূপ সৌন্দর্য কাজ করছে আরিশের মাঝে ৷ রাইসা মাঝে মাঝে আরিসের দিকে লজ্জা চোখে তাকাচ্ছে ৷

হঠাৎ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরিশ বলে উঠলো,,,,

জানিস তো মেয়েটাকে (আরু) আমি বড্ড ভালোবাসি তবে মেয়েটা বুঝতেই চায় না বড্ড অবুঝ, অল্প বয়স কিনা , তাই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তার মাঝে পার্থক্য করে উঠতে পারেনা এখনো ৷ সেই জন্যই তো বেশি রাগ করে থাকতে পারি না, নিজেকে কন্ট্রোল করা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে ৷তবে অনেক চেষ্টা করছি বারবার কেবল ওকে একটু বুঝানোর জন্য যে বাস্তবটা আসলে কী !

কথাটা শুনে রাইসা আরিশের দিকে তাকালো,,,,

আরিশ আবার বলতে শুরু করল :
জানিনা মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে, তবে মেয়েটার বাচ্চা স্বভাব দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিলাম ৷ও সবার থেকে আলাদা, ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটাও একটা অব্যক্ত চিঠির মত যেখানে হাজার অক্ষরে পরিপূর্ণ থাকলেও তা কখনো পড়ে শেষ করা যাবেনা….

রাইসা এবার রেগে গিয়ে বলল : তাহলে আমার কি হবে ? আমি তো তোকে ভালোবাসি ৷আমি জানিনা আমি তোকেই বিয়ে করবো তা যে করেই হোক ৷

আরিশ মুচকি হেসে রাইসার দিকে তাকালো আর বলল : জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় শুনেছিস ?

কথাটা শুনে রাইসা মাথা নিচু করে নিল কারন সত্যিই জোর করে আর সবকিছু পেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না ৷

আরিশ: তুই হাজার চেষ্টা করলেও আমি আরুপাখিক ছাড়বো না , ও আমার পাজরের এক একটা টুকরা ৷ তোর জন্য এটাই ভালো হবে যে তুই একটা পারফেক্ট জীবনসঙ্গী খুঁজে না , যে আমার থেকেও তোকে বেশি ভালবাসবে….
বৃথা একতরফা ভালোবাসা কখনো পূর্ণতা পায় না৷

রাইসা চুপ করে আছে আরিশের বলা কথাগুলো বুকে এসে বড্ড লাগছে, কিন্তু আরিশ যা বলছে সেগুলো সমস্তটাই সত্য….

জানিস 16ই এপ্রিলে একবার ওর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল৷
ভার্সিটিতে সবে নতুন নতুন এসেছে , শান্তস্বভাবের তবে , খুবই বেখেয়ালিপনা আছে ওর মধ্যে ৷ একা একা বাড়ি ফেরার জন্য ভার্সিটির গেট পার হতেই বড় রাস্তা পার করতেই একটা বাইক এসে পাশ থেকে ধাক্কা মারতেই রাস্তার এক সাইডে পড়ে গেল , মাথা কেটে ক্রমাগত রক্ত বেরোচ্ছিল সেদিন ৷ আর হাতে পায়ে চোট পেয়ে সমস্ত জায়গা থেকে ছিটছিট করে রক্ত বেরোচ্ছিল ৷

দূর থেকে সমস্ত দেখতেই মনে হল জীবনটা আমার মধ্যে আর নেই , সেটা যেন থেমে ছিল সেখানেই ৷ তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম , পরিচয়টা যখন জানতে চেয়েছিল তখন স্বামীর পরিচয়ে ভর্তি করিয়েছিলাম হসপিটালে কারণ আমি ভাবতাম যখন ভালোবাসি তখন ওকে নিজের জীবনসঙ্গী বানাবো এমন একটা উদ্দেশ্য নিয়েই ওকে ভালোবেসেছিলাম ৷ ও সমস্ত বেখেয়ালি ভালোবাসা আমার পছন্দ নয় ৷

যারা এভাবে ছেড়ে চলে যায় তাদেরকে বড্ড ঘৃণা করি আমি ৷

মেয়েটার প্রচুর ব্লাড শরীর থেকে বেরিয়ে গেছিল সেদিন, O- রক্তের গ্রুপের মানুষ খুবই কম তাই ব্লাড পাওয়াটা প্রচণ্ড টাফ ছিল ৷
ইমিডিয়েট রক্তের প্রয়োজন ছিল ওর,সারা হসপিটাল তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পেলাম না একটা মানুষকেও, কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি তখন….
নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হয়েছিল তখন আর এটাও মনে হয়েছিল যে ওর কিছু হয়ে গেলে আমিও আর বাঁচব না ৷
আরাভকে বলতেই ওউ বেরিয়ে পড়েছিল রক্তের খোঁজে, সমস্ত ব্লাড ব্যাংকে গিয়েও পেল না ৷ আরাভ সমস্তটাই জানত ৷

কথাগুলো যখন আরিশ বল ছিল তখন আরিশের চোখের কোনে জল জমে এসেছিল , তা রাইসা বেশ ভালই অনুভব করতে পেরেছে৷
অরিশের ভালোবাসার কথা শুনে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ,বুঝতে চেষ্টা করছে যে ভালোবাসা কত প্রকার হয় আর কিভাবে একটা মানুষকে কতটা গভীরভাবে ভালবাসতে হয়….

একটা সময় যখন ব্লাড পেলাম না তখন
মনে হয়েছিল ওর নয় আমার কিছু একটা হয়ে যাবে, নিজেকে নিয়ে আমি কখনোই ভাবিনি’ আর ভাবতেও চাইনা কখনো…. কেবলই ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো ৷

রাইসা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : তারপর!

চোখের কোন থেকে জমে থাকা জলটা মুছে নিয়ে পাগলের মতো হাসতে হাসতে আভার বললো আরিশ , হয়তো নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে ৷

আরিশ : আমি তখন এতটাই পাগল হয়ে গেছিলাম যে আমার নিজেরই যে ও নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ তা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ৷
ভালোবাসার ডেফিনেশনটা ঠিক কি তা আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি তবে মজার ব্যাপার কি জানিস তো , আরূপাখি মনে করে যে ওর ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আমি ওকে শিখিয়েছি৷ কি অদ্ভুত তাইনা ! আমরা হলাম একে অপরের পরিপূরক, স্বয়ং আল্লাহপাক আমাদের নিজের হাতের তৌরী করে পাঠিয়েছেন ৷

আরিশ এর কথা শুনে রাইসা আর সাহস পায়নি একটা শব্দও উচ্চারণ করার ৷আরিশের ভালোবাসার কথা শুনে ও বাকরুদ্ধ , তবুও আরুশির প্রতি হিংসা হয়েছিল খুব ৷ এমন ভালোবাসা যদি আরুশির বদলে ও পেত তাহলে হয়তো পৃথিবীর সবথেকে সৌভাগ্যবতী রাইসা নিজেই হত….
______

তোমার কি জানতে ইচ্ছা করে না যে আমি কেন আমার আম্মুর সঙ্গে তার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম? আমি তো চাইলেই আরিসের কাছে কাছে থাকতে পারতাম তবে কেন থাকেনি ?
অবশ্য প্রশ্ন না হওয়ারই কথা কারন আমি তোমাদের সম্পর্কের মাঝে একজন তৃতীয় ব্যক্তি ৷ তবুও উত্তরটা আমার বলতে খুব ইচ্ছা করছে তোমাকে, তা তুমি চাও আর না চাও ৷ জানো আমি এই কদিন শুধুমাত্র আরিশকে ভোলার চেষ্টা করছি,,,,, জানিনা কতটা ভুলতে পেরেছি তবে দূরে থাকার অভ্যাসটা করে নিয়েছি ৷

তবে সে যাই হোক আরিশ তোমাকে বড্ড ভালোবাসে,সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিও ৷ আর আশা করব তুমিও আরিশকে খুব ভালবাসবে আর ভালো রাখবে ৷ তোমাদের আগামী দিনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল ৷
আর ক্ষমা আমি তোমার কাছে চাইবো না কারণ তুমি নিজেও জানো যে ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সীমাটাও লংঘন করা যায় , সেটা তুমিও করো আর আমিও করেছি , তাই আমরা দুজনেই সমপর্যায়ে ৷ তাই না তোমার আমাকে সরি বলার আছে আর না আমার তোমাকে ৷
ভালো থেকো ৷

ইতি,
রাইসা 🙂

কথাগুলোর মাঝে যে রাইসার আরিশকে না পাওয়ার কাতরউক্তি ছিল তা আরুশি প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে অনুভব করতে পেরেছে ৷
সত্যি ভালোবাসা এমনই হয় ৷ তা যে পায় সে সব থেকে ভাগ্যবান আর যে না পায় সে হলো পৃথিবীর সবথেকে হতভাগা মানুষ….

চিঠিটা পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না আরূ ৷ আরিশ যে ওকে ভালবাসে সেটা আরিশ বারবার মানুষের সামনে প্রমাণ না করলেও ওর ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দেয় বারবর কিন্তু ওর অজান্তে আরিশ এতটা করেছে তা ও আজকে জানতে পারল চিঠিটা থেকে ৷ রাইসা না বললে ওর জীবনের এমন একটা ঘটনা হয়তো না জানা অধ্যায়ের খাতায় নাম লেখাত ৷
জীবনটা বড়োই অদ্ভুত ৷

আরু চিঠিটা আঁকড়ে ধরে অনবরত কেদেই চলেছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,,,,
সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার হাত দুটো ওকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিতেই কান্নার মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেল ৷
আরুকে কাছে টেনে আরিশ আরুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিল….

ভালোবাসার সুখে আজ কারোর চোখে জল আবার কারোর চোখে ভালোবাসা না পাওয়ার চোখের জল ৷

কিভাবে জীবনটা পার হয়ে চলেছে ক্রমাগত ৷ বেশিরভাগ সময়টাই এমন হয় যে আমরা যাকে চাই তাকে আর পাওয়া হয়ে ওঠে না আর অপ্রত্যাশিতভাবে এমনই একজন মানুষ জীবনে চলে আসে যার প্রতি পূর্বের ন্যায় ভালবাসাটা ঠিক আর হয়ে ওঠে না ৷ থেকে যায় কিছু ব্যর্থ ভালোবাসার মতো ঘটনা ৷

এই ভাবেই দিন পার করছে হাজার হাজার মানুষ আর নিজেকে সামিল করছে না পাওয়া ভালোবাসার ভিড়ে ৷( লেখিকা🙂র একান্ত মতামত ৷)

চলবে,,,,,,

আর কেমন হয়েছে বলবেন,যথেষ্ট গুচিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি তা আমি তাতে সফল ৷
আর বড়ো করে লিখেছি কিন্ত 🤗 ৷

https://www.facebook.com/102608248176901/posts/165745651863160/?sfnsn=wiwspmo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here