তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩৫

0
410

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:35
#Suraiya_Aayat

একটা কালো কাপড় দিয়ে আরুর চোখটা বেঁধে আরিশ আরুর কে সামনের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আরুর যেহেতু চোখটা বাধা তাই আরিশ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে , আর এরপরই বা কি হতে চলেছে সেগুলো ওর ধারণার বাইরে, ওর যে আজ জন্মদিন সেটা ওর মনে নেই যদি মনে থাকত তাহলে বুঝতে পারতে যে আরিশ ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এমনটা করছে, কিন্তু বরাবরের মতই আরু তো একটা বলদ 😒 ৷

আরূ চোখে হাত দিতেই আরিশ বলে উঠলো : একদম নয় আরুপাখি, আমি যখন তোমাকে চোখ খুলতে বলবো তখনই তুমি চোখ খুলবে তার আগে নই….

আরু : আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বলবেন তো, না হলে আমি বুঝবো কি করে !

” তোমাকে যদি এখন বলি তাহলে এভাবে আনার মানে কি? আর এত কথা বলার কি আছে , একটু চুপ করো,আর একটু পরেই তো সবকিছু দেখতে পাবে ৷”

আরূ বুঝতে পারল যে আরিশ নাছোড়বান্দা , ওকে কোনমতেই বলবে না তাই ও শান্তশিষ্ট মেয়ের মতো চুপ হয়ে গেল ৷

আরিশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে আর ক্রমাগত কাউন্টডাউন করছে,,,3…..2……1…..

তারপরে আরুর চোখটা খুলে দিতেই হঠাৎ করে কানে তীব্র একটা আওয়াজ ভেসে এলো….
শব্দটার উৎস খুঁজতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো বড় বড় অক্ষরের বাজির আলোতৈ লেখা আছে❤” হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি”❤,আর তার সঙ্গে অজস্র সাদা আর লাল রঙের বেলুন আকাশে উড়ে যাচ্ছে ৷
অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য , এমনটা আরু এর আগে কখনো দেখেনি….

আরিস আরুর কাঁধে চুমু দিয়ে বলল :
হ্যাপি বার্থডে আরুপাখি , আমার ছোট্ট আরুপাখি আজ 20 বছরে পা রাখলো ৷

আরিসের থেকে এরকম একটা সারপ্রাইজ পেয়ে আরুর চোখে জল চলে এলো , কখনো এসব কল্পনাও করেনি , তারপরে আরু আরিশের দিকে ঘুরে তাকালো…

আরু ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলল : আপনি আমার জন্য এতটা,,,,,

এরপর আর কিছু বলতে পারল না আরিশ আরুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে বলল:
একদম এমন কথা বলবে না আরুপাখি , তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো ? আমার কি আর দশটা পাঁচটা বউ আছে যে তাদের জন্য আমি করবো, তুমিই তো আমার সব বলে আরুকে জড়িয়ে ধরল…

আরিশ আরুশিকে জড়িয়ে ধরতেই আরু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো…

আরিশ আরুকে নিজের সাথে আরও জোরে চেপে ধরল : একদম কাঁদবে না আরুপাখি, তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না….

আরিশ এর কাছ থেকে ও ওর জীবনে নতুন করে বাঁচতে শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছে, জীবন টাকে কিভাবে সঠিক পথে আর আনন্দ করে সবার সাথে কাটাতে হয় সেটা ও আরিশকে ভালোবেসে বুঝেছে ৷

আরু এখনো কেদেই চলেছে আরিশের বুকে,,,

আরিশ এবার আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো : আরুপাখি দেখো এখন 12:05,অলরেডি 5 মিনিট তুমি এভাবেই কেদে কেদে কাটিয়ে ফেলেছ, এবার কেকটাও তো কাটতে হবে নাকি, তারপর তোমাকে আবার অনেক অনেক আদরও করতে হবে তাই আর দেরী করা ঠিক হবে না….

আরিসের কথা শুনে আরু লজ্জা পেয়ে গেল, তারপর আরিশকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল : আপনি কেন সবসময় এভাবে আমাকে এমন কিছু বলে লজ্জা দেন বলুন তো….

আরিশ চোখ মেরে বললো : শুধুই কি বলি,কিছু কি ,,,,,,

আরু আরিশের মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে ৷

“আপনাকে বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি৷”

আরিশ আরুর কথা শুনে হাসতে লাগল তারপর আরুর হাত ধরে সামনের টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে কেক রাখা রয়েছে…..

টেবিলের কাছে যেতেই হঠাৎ করে আরিশ আরুর সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল ৷
হঠাৎ এমন একটা সময়ে এই কাগজটার কি তাৎপর্য সেটা বুঝতে না পারে আরু আরিসকে জিজ্ঞাসা করল: এটা কিসের কাগজ?

আরিশ আরুর হাতে পেনটা ধরিয়ে দিতে দিতে বলল: এখানে একটা সই করে দাও ছোট্ট করে ৷

আরু: আমার সই কেন লাগবে?

আরিশ আরুর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল : বিশ্বাস করো তো আমাকে?

” নিজের থেকেও বেশি”, বলে কাগজটায় কি লেখা আছে তা না পড়ে আরু সিগনেচার করে দিল৷

আরিশ আরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল: আমি চাই না কখনো কারো খারাপ আঁচ তোমার গায়ে লাগুক তাই সকল খারাপের থেকে সারা জীবন এভাবেই আগলে রাখব তোমায় , কোনো খারাপ কাজের তকমা তোমাকে পেতে দেব না ৷

“আপনি কি এত ভাবছেন ?’

আরুর কথাই আরিশের ধ্যান ভাঙ্গলো , তারপরে আরিশ বলল : তেমন কিছু না আরুপাখি,এটাই ভাবছিলাম যে তোমার বয়স এখন 20 তাহলে আমাদের বেবিও তার আম্মুর থেকে প্রায় কুড়ি,তারমানে আমাদের বেবি তোমার থেকে20 বছরের ছোট হবে,আমার থেকে আরো 26 বছরের ছোট হবে,তুমি আমার থেকে 6 আর আমি তোমার থেকে 6 এর ছোটবড়ো মানে অলসেট ৷ বলেই আরিশ হাসতে লাগলো ৷ আসলে ও আরূকে কনফিউজড করার জন্য এমনটা বলল ৷

আরিশ কি বলল তা আরুর মাথার উপর দিয়ে গেল, কথায় কোনো লজিক নেই , আউলাঝাউলা কথাসব৷
আরিশ কি বললো আরু আর কানে নিল না কারণ সত্যিই কথাটাই কোনো লজিক নেই , যে তা থেকে বুঝে কোন মানে বার করবে আরু ৷

” আচ্ছা আর বেশি দেরি না করে ম্যাডাম আপনি এবার কেকটা কেটে ফেলুন ৷”

“আপনিও আমার হাতে ধরবেন, “আরিশ আরুর কথা রাখতে ছুরিটা আরূর সাথে ওউ ধরলো ৷

কেকটার দিকে আরুশি এতক্ষণ নজর দেয়নি , কিন্তু যখন সেদিকে তাকালো অবাক হয়ে গেল খুব কারণ কেকটার ওপরে আরুর একটা ছবি রয়েছে যেখানে আরু পাউট করে একটা পোজ দিয়েছে সে রকমই৷ ছবিটা আরুর খুব পছন্দের, ছবিকাকে আরো কিউট লাগছে কেকটার ওপরে দেখতে ৷

এরপর দুজন মিলে কেক কাটলো….

দুজন দুজনকে খাইয়ে দিয়ে আরিশ আরুশির কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো ৷

” আমি জানিনা তুমি কি মনে করবে, তবে আমি আজ তোমার জন্য কোন গিফট নিয়ে নি আরুপাখি ৷”

আরু আরিশের গালে স্পর্শ করে বলল :
আমার আবার কিসের গিফটের দরকার , যেখানে আপনি নিজেই আল্লাহর দেওয়া আমার সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার , আপনাকে পেয়েই আমি খুশি আর কিছু চাইনা আমার ৷

আরিশ মুচকি হাসলো , তারপর আরুর হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল…..

পিছন থেকে একটা মিউজিক বাজতে লাগলো ৷

“একদিন আকেলে থে হাম তুম….

তুম মূঝমে মে ,মে তুমমে তুম ,

একদিন আকেলে থে হাম তুম,

তুম মুঝমে,মে তুমমে তুম,

মেরে কানোমে আহিসতা সে,

উস রোজ কাহাথা যো তুমনে,

কিসি ওর সে না বো কেহনা,,,,,

তুম মেরে হো,মেরে রেহনা,

তুম মেরে হো মেরে রেহনা,

তুম সাথ মেরা হার দাম দেনা

তুম মেরে হো,মেরে রেহনা….”

গানের সাথে সমান তালে নাচছে দুজন , আর দুজন দুজনের মাঝে যেন হারিয়ে গেছে…
গান থামতেই আরূ নিজেই আরিশের ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল, এই দ্বিতীয়বারের মতো আরূ নিজে থেকে আরিশকে ভালোবাসছে, আর আরিশ কোনোভাবেই তা ফিরিয়ে দিতে চায় না…..

” মামনি আর কত খাওয়াবে বলো তো , সেই থেকে খাইয়েই যাচ্ছ আমাকে , এবার তো আমি পুরো ফুটবল হয়ে যাব, প্লিজ মা মণি আর না ৷”

” নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস, কি অবস্থা চেহারাটার,আর এর উপরে আবার একটা নাতি-নাতনি আসলেই উল্টে যাবি তখন কি হবে বলতো, তোকে সামলাবো নাকি তাকে সামলাবো কোনটা?”

কথা গুলো শুনতেই আরু চুপ হয়ে গেল ৷ এই একটা জিনিস নিয়ে কোন কথা হলেও আরু আর কোন কথা বলে উঠতে পারে না , খুব লজ্জা পায় ও ৷

আরু চুপ হয়ে গিয়েছে, অনিকা খান ওকে খাওয়াচ্ছেন আর ও মুখ বুজে সব খেয়ে নিচ্ছে না হলে আবার লজ্জায় পড়বে ওনার কথা শুনে ৷

আরুকে চুপ থাকতে দেখে অনিকা খান মুচকি মুচকি হাসছেন সানার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷

” তা এই যে আপনার জন্মদিন , তার ট্রিট কোথায়?”

আরু সানার দিকে অবাক চোখে তাকালো ,,,,,

” কিসের ট্রিট ? কবেকার ট্রিট?জন্মদিন তার জন্য আবার ট্রিট দিতে হয় ! কোথায় তুই আমার একটু কেয়া করবি, তা না !”

“সত্যিই তো , তোর খেয়াল রাখা উচিত ওর, আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুখবর আসতে চলেছে আমাদের পরিবারে ৷”

আরু কথাটা শুনেই মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল, সত্তিই ওদের পরিবারের একজন সদস্য বাড়তে চলেছে তবে তা খুব শীঘ্রই, কিন্তু আপাতত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সঠিক নই আরু নিজেও…

অনেকক্ষণ ধরে আরিশ ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে মানাচ্ছে যাতে তারা আজকে আরুর জন্মদিনে যায়….

” আজ আরু যদি আজ আপনার নিজের মেয়ে হতো তাহলে কি আপনি যেতেন না ?”

কথাটা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ কেঁদে ফেললেন , করে কারণ আজকের দিনেও যে তার মেয়ের জন্মদিন ছিল ৷ এরকমই একটা দিনেই তিনি তার মেয়েকে হারিয়েছিলেন সে কথাটা বারবার চোখে ভাসছে ৷ চোখে জমে থাকা জল নিয়ে ঝাপসা চোখে দূরে ফ্রেমে বাঁধানো বাচ্চাটার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন : দেখো বাবা তোমাকে আমি কি করে বোঝাই যে আজ নয় অন্য দিন যাবো আমরা ৷

” তা আমি জানিনা তবে আপনারা না গেলে আরূপাখি খুবই কষ্ট পাবে ৷”

আজিজ আহমেদ রেজওয়ানা আহমেদের কাঁধে হাত রেখে বললেন: ছেলেটা তো ঠিকই বলছে, আজ নিজের সন্তানের কাছে নেই বলে অপরের সন্তানের খুশিতে শামিল হবো না সেটা কি করে হতে দেই বল , যতই হোক সেও একটা সন্তান ৷”

রেজোয়ান আহমেদ চোখটা মুছে আরিশের দিকে তাকিয়ে বললেন : আচ্ছা বাবা আমরা যাব ৷

” শুধু আপনারা দুজন গেলে হবে না , আপনাদের গোটা ফ্যামিলিকে যেতে হবে তার সাথে আয়ুশিকেও৷”

বলে আরিস আয়ূশির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল , আর পকেট থেকে চকলেটটা বার করে আয়ূশির হাতে দিল ৷

চকলেটটা আয়ূশির হাতে দিতেই খুব খুশি হলো ও, আর আরিশের গালে চুমু খেলো…..

রেজওয়ানা আহমেদ (মনে মনে):মেয়েটা বড়োই ভাগ্যবতী যে এমন একজন স্বামী পেয়েছে ৷ আল্লাহ সবসময় ওদেরকে ভালো রাখুক ৷ আমিন ৷

রাত আটটা,,,,,,

চলবে,,,,,,

পরেরদিন সবার সব কনফিউশন দূর হবে ইনশাআল্লাহ ৷ Good night😴

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here