তোমার নেশায় আসক্ত – পর্ব ৩৬

0
390

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#parr:36
#Suraiya_Aayat

আরুশির বার্থডে উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করেছে আরিশ, যতই হোক আরুশির খুশি টাই ওর কাছে আগে, আর তাছাড়া আজকে আরুশির জীবনের সমস্ত সত্য উদ্ঘাটন করেই ছাড়বে এটা ঠিক করল ৷ যে করেই হোক আরুশিকে সমস্ত খুশি এনে দেবে ও ৷

সারাদিনটা আরুর খুব ভালোই কেটেছে , তবে সকাল থেকে মনটা খারাপ কারণ সকাল বেলা ওর মা একবার ওকে ফোন করেছিল, খুব কান্নাকাটি করেছেন , তবে আহানের সাথে আর কথা হয় নি, এতদিন ধরে ও আহানের সাথে কথা না বলে আছে সেটা ও নিজেই বিশ্বাস করতে পারেনা মাঝেমাঝে , কারণ ওর বিয়ের আগে ওদের দুই ভাইবোনের মধ্যে সম্পর্কটা এমন ছিল যে তা এভাবে একটা দূরত্বে পরিণত হবে সেটা ও কখনোই কল্পনাতে আনেনি, সময়ের পরিবর্তনের কারণে সময় মানুষকে কত কিছু শিখিয়ে দেয় আবার মানুষের জীবনে কত কিছু এনে দেয় ৷

অরিশের কিনে দেওয়া লাল রঙের শাড়িটা আরূ পরে আছে , একদম নতুন বউয়ের মত টুকটুক করছে ৷ সানা আর আরু বসে বসে গল্প করছে তার মাঝে আরিশের মা ঘরে এসে ওর কাছে গিয়ে উনার নিজের চোখ থেকে একটুখানি কাজল নিয়ে আরূর ঘাড়ে পিছনে দিয়ে দিলেন ৷

“আমার মেয়েটার ওপর যেন কারোর কখনো নজর না লাগে , সব সময় যেন ভালো থাকে ৷”

আরূশি মুচকি মুচকি হাসছে,,,,,,

আরুশি কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করল : আমার আম্মু এসেছে?

” উনি তো অনেকক্ষণ আগেই এসেছে নিচে বসে আছে, তোর জন্য অপেক্ষা করছে ৷”

আরূ উত্তেজিত হয়ে বলল : অনেকক্ষণ এসেছে, আমাকে এতক্ষণ বলো নি কেন?

” আরে মামনি সাজুগুজু করছিলি তাই তোকে বলতে পারিনি ৷”

আরুসি তাড়াহুড়ো করে বলল : মামনি আমি এখুনি দেখা করে আসছি ৷

অনিকা খান আর কিছু বলবেন তার আগেই আরূ কথাটা না শুনে ওর মায়ের কাছে চলে গেছে….

ড্রয়িংরুমের সোফায় একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে না আরুর মা, কেমন যেন বিচ্ছিন্ন লাগছে ওনাকে , জীবন থেকে বড় কিছু যেনো হারিয়ে ফেলেছেন তারই ছাপ মুখে…

এতদিন পর আরূর ওর মাকে দেখে ওর চোখে জল চলে এলো, দৌড়ে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরল ৷ হঠাৎ আচমকা ওনাকে কেউ জড়িয়ে ধরায় উনি বেশ চমকে গেলেন ৷

তাকিয়ে দেখলেন পাশে আরূ, উনি ছলছল চোখে আরূর গালে হাত রাখলেন ৷

কেমন আছিস মা?

এবার ওনাকে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরূ,,,,

তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে ভালো লাগে না আমার,তুমি পারলে কি করে এতদিন আমার সাথে না দেখা করে থাকতে, আর তুমি আর ভাইয়া আমাকে একেবারে পর করে দিয়েছো ৷ যেমন তুমিও কোন যোগাযোগ রাখো না তেমনি ভাইয়াও আমার সাথে আর কথা বলে না ৷

আরূর মা ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন: তোর ভাইয়া এতো দিন তোর উপরে অভিমান করে ছিল তবে এখন আর তা নেই ৷

আরূ তাও কেদেই চলেছে , যতই হোক এতদিন ধরে একটা মান-অভিমানের পালা চলেছে তা এত সহজে যে ঠিক হওয়ার ছিল না সেটাও ভালোই বুঝতে পেরেছিল ৷

তা ভাইয়া কোথায় ? ভাইয়াকে তো কোথাও দেখছি না ?

তোর ভাইয়া আরিশের সঙ্গে কথা বলছে তাই অন্যদিকে কোথাও গেছে হয়তো….

আরূ ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে, আজ অনেকদিন পর ওর মাকেও পেয়েছে তাই এত সহজে ওনাকে ছাড়বে না ৷

তখনই রেজোয়ান আহমেদ আর ওনার গোটা পরিবার এলেন ৷ আরিশের জোরাজুরিতে উনি না এসে আর পারলেন না তাছাড়া মেয়েটার ওপরে অদ্ভুত একটা টান কাজ করে উনার তাই মনটা আনচান করছিল ৷

আরূকে ওর মাকে জড়িয়ে থাকতে দেখে ওনাল নিজের চোখেও জল চলে এলো , আজ যদি উনার মেয়েটাও উনার কাছে থাকতেন তাহলে হয়তো এমন ভাবেই ওধাকে জড়িয়ে ধরে থাকত, এভাবে ধুমধাম করে হয়তো ওনার মেয়ের জন্মদিন পালন করতেন….

নিজেকে কোনরকম ভাবে সামলে নিয়ে উনি আরুর কাছে গেলে ৷

উনারা আরূর কাছে যেতেই আরূ ওর মাকে ছেড়ে মুখে হাসি নিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন ৷

কেমন আছো আন্টি? আর তোমার শরীর ভালো আছে?

আমি ঠিক আছি,আরূর গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন , তুমি কেমন আছ?

এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো , তা আয়ূশিকে দেখছিনা ও কোথায়?

তখনই আরিশ আয়ূশিকে কলে করে নিয়ে আরুর কাছে আসল ৷

এইতো আয়ূশি ৷

আরু ওকে কলে নিয়ে আদর করতে লাগল ৷

যে মুহুর্তে রেজোয়ান আহমেদ আরুশিকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছিল তখন আরুর মায়ের মনে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল , বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার মেয়েটা তার কাছ থেকে হারিয়ে গেল ৷ তখনই আবার পর মুহূর্তেই নিজের মনে মনে ভাবল মেয়েটা যে তার নয় তবুও যে নিজের মেয়ের মতোই ভাবে সে আরূকে….

কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হতেই আরিশ আরূর হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে গেল,,,,

কেকটা কাটো ৷

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে : আমি একা না আপনিও কাঁটবেন আমার সাথে ||

আরিশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে মুচকি হেসে আরূর সাথে কেকটা কাটলো ৷

আরো প্রথম আরিস কে দিল তারপর ওর মাকে তারপর একে একে সবাইকে দিল….
সবাই খুব খুশী ৷

আরু দেখলে অনেক দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহান, চোখের জল চলে এলো ওর এতদিন পর আহান কে দেখে ৷ সেই দিন ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল তারপর থেকে আর আহানের মুখোমুখি হয়নি ও ৷

ও আহানের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল ৷

তোর কি আমাকে আর মনে পড়ে না ভাইয়া , তুই তো ছোট বোনটার আর খোঁজ নিসনা ৷

আহান আর পারল না নিজেকে আটকাতে , ওউ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো , চোখে ফোটা ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে , বড্ড বেশি ভালোবাসে আরূকে, নিজের বোনটাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ও ৷

আমি নিশ্চিন্তে আছি কারণ আমি জানি আমার বোনের জামাই তাকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবে না ৷ বলে আরুশির হাত ধরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল…

আহান : আমার বোনটার সবসময় খেয়াল রেখো ৷

আরিশ মুচকি হাসল, সবাইকে একটু অপেক্ষা করতে বলল তারপর নিজের রুমে চলে গেল ৷

আরুশি সহ সবাই বেশ অবাক হল ,তবে আহান অবাক হলো না কারণ সমস্তটাই ও জানে যে এর পর কি হতে চলেছে ৷

কিছুক্ষণ পর আরিশকে সাথে করে একটা কাগজ আনতে দেখি আরুশির ভ্রু কুঁচকে গেল ৷

আরুপাখি এটা তোমার ভাইয়াকে দিয়ে দাও

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল : কিন্তু এটা কিসের পেপার ?

কাল রাতে যেটাতে তুমি সিগনেচার করেছে সেই কাগজ ৷

আরূ কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল, তারপরে অবাক চোখে আহানের দিকে তাকাল ৷

এগুলো কি ভাইয়া ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা ৷

আজ আমি সব বলছি আরুপাখি একটু অপেক্ষা করো ৷

উপস্থিত সবাই বেশ অবাক কারণ হঠাৎ এমন একটা সুন্দর মুহূর্তের মাঝে একটা সিরিয়াস টপিক চলে আসায় পরিবেশ থমথমে ৷

আরুপাখি তোমার মনে কি প্রশ্নটা আসেনা যে তোমার বাবা তোমার সাথে আমন টা করলেন কেন , অভ্র তোমার সাথে এমন টা করল কেন? বা তোমার বাবার তোমার প্রতি এত অনীহা কি কারনে ?

আরু এবার চমকে যাচ্ছে আরিশের এর প্রত্যেকটা কথায় ৷

তবে এই সমস্ত অদ্ভুত কথা শুনে রেজোয়ানা আহমেদ আর তার পরিবারের সবাই বেশ অবা হচ্ছে কিন্তু আসলে কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না….

আপনি প্লিজ একটু বলবেন যে কি বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা ৷

সবগুলো বলব আরুপাখি সব ৷

তুমি যাকে তোমার বাবা বলে মনে করো আই মিন আমরান সাহেব উনি আসলে তোমার বাবা নয় , ইভেন তুমি উনার পরিবারের কোনো সদস্য নও, না উনি তোমার মা , না আহান ভাইয়া তোমার নিজের ভাইয়া৷

কথাটা শোনা মাত্রই আরূর যেন পা এর নীচ থেকে মাটি সরে গেল, নিজের কানে যেন এসমস্ত কথা আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে না হঠাৎ করে কি থেকে কি সমস্ত শুনছে ৷

আপনি এসমস্ত কি বলছেন ,আমি বিশ্বাস করি না ৷

আরিশ আরুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে বলল ,
যাকে তুমি তোমার নিজের মা বলে মনে করো উনি তোমাকে ধানমন্ডি থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন যখন তোমার এক বছর বয়স ছিল…
আইমিন আজকের এই দিনটাতে ৷

আমি এসব বিশ্বাস করি না , আপনি কি সমস্ত আজগুবি কথা বলছেন ?

তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করো উনি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবেন না ৷

আরু ওর মায়ের দিকে তাকাতেই ওর মা মাথাটা নিচু করে দিলেন আর অনবরত যে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে তা উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷

আরিসের কথা শুনে রেজওয়ানা আহমেদ এবং তার স্বামী যেন নতুন এক আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন, কারণ ধানমন্ডিতেই উনারা নিজেদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছিলেন , একটা মীরাক্কেলের অপেক্ষা করছেন ওনারা ৷

আরিশ: যে পেপার টা দেখছো সেটা একদম সঠিক, তোমার দাদুভাই তোমাকে খুবই ভালোবাসতেন সেই জন্য নিজের সমস্ত প্রপার্টি তোমার নামে দিয়েছিলেন, আর একজন বাইরের মানুষ হয়ে তোমার বাবা মানে আরমান সাহেব উনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি যে সমস্ত প্রপার্টির মালিক আহান না হয়ে তুমি হবে ৷ তবে পেপারে ভালো করে লেখা ছিল যে তোমার কুড়ি বছর হলেই সমস্ত প্রপার্টির মালিক তুমি হবে তাই আমি চাই তুমি এখন সমস্ত প্রপার্টি আহানকে ফিরিয়ে দাও, আমি চাইনা অপরের কোন জিনিস তুমি নাও , তাই কালকে তোমার থেকে সিগনেচারটা নিয়েছিলাম সেই কারনেই ৷

আরু যেন এবার মাটিতে বসে পড়বে এরকম অবস্থা, মুহূর্তের মধ্যে কেমন উলট পালট হয়ে গেল সব ৷

আরিশ আবার বলতে শুরু করল ,,,,
আর এটাও জেনে রাখ যে তোমাকে বিয়ে করার পিছনে অভ্রের উদ্দেশ্য ছিল যা হলো ও তোমাকে বিক্রি করে দিতো , আর সে ক্ষেত্রে তোমার বাবা ও তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন , আর উনিও টাকার লোভে তোমাকে বেচে দিতে একবারোও দ্বিধাবোধ করেননি ৷
যেদিন তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলে আমি জানতাম তোমার সন্ধ্যাবেলা ফ্লাইট তাই তোমাকে সন্ধ্যা বেলা ওরা নিয়ে যাবে , কিন্তু তখন তোমার মা আমাকে ফোন করতেই আমার জানতে সুবিধা হলো ৷

” আরিস বাবা তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও, আরূ খুব বিপদে আছে এক্ষুনি এয়ারপোর্ট এর দিকে চলে যাবে তুমি ওকে বাঁচাও ৷”
বলে ফোনটা রেখে দিলেন ৷

উনি ভেবেছিলেন আমি হয়তো কিছু জানি না তবে আমি যে সমস্তটাই জানতাম , তাই এক মুহূর্ত আর দেরী করলাম না তোমার কাছে যেতে ৷ আশা করি পরের টুকু নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে ৷

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : হ্যা মনে আছে, আমি গাড়িতে উঠে পড়েছি, হঠাৎ করে আমার ফোনে আম্মুর কাছ থেকে ফোন আসতেই ফোনটা ধরতেই আম্মু কান্না করতে করতে বললো :
আরু মা ফিরে আয় ,অভ্র আর তোর বাপির উদ্দেশ্যে খারাপ , তুই আরিশের কাছে ফিরে যা ৷

আমি অপেক্ষা করছিলাম যে কেউ একজন আমাকে বলুক যে আপনার(আরিশ) কাছে ফিরে আসার জন্য তাহলে নিজের মনোবল টা আরো শক্ত হবে তবে আম্মু বলতেই দুবার আর ভাবি নি যে আমাকে আর কি করতে হবে তা নিয়ে ৷
যখনই গাড়ি থামাতে বললাম তখনই বাপি বলে উঠলো :
“কোথাও যাবিনা তুই, আমার সাথে তুই যাবি আর ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে ৷”

“আমি ওনার কাছে ফিরে যাবো ৷”আরূ জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে বলল ৷

আরমান সাহেব এবার একটু ধমক দিয়ে বললেন ,,,,,
“তোকে যদি এখন অভ্রের সাথে না পাঠাতে পারি তাহলে আমার সমস্ত পরিকল্পনা জলে মিশে যাবে, আর আমি এতো বড় লস কিছুতেই হতে দিতে পারি না ৷” কথাটা বলার পর কি হল তা শুনতে পেল না আরু কারণ তার আগেই অভ্র ক্লোরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছে…

এটুকু বলে আরু থেমে গেল আর তখনই আরিশ বলতে শুরু করল :
” তারপরেই এয়ারপোর্টে আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে বাড়ি আসলাম , আর প্রমাণসহ ওনাদেরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম ৷ আর উনি যে এত সহজে উনার কাজটা হাসিল করতে চেয়েছিলেন তা আমি বেশ ভালই জানতাম ৷
ভার্সিটিতে যখন তুমি পড়তে তোমার প্রতি আমার ছিল অদ্ভুত এক ভালো লাগা,আর তা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হতে থাকে ৷ তোমাকে চোখে চোখে রাখার সমস্ত দায়িত্ব কারোর ওপর না দিয়ে নিজেই নিয়েছিলাম , তখন দেখেছিলাম অভ্রকে তোমার সাথে সাথে ঘুরতে , প্রথমে উদ্দেশ্যটা ঠিক লাগলেও পরে খুব একটা ভালো লাগেনি আমার ৷ তার পরে জানতে পারলাম ওর আসল উদ্দ্যেশ্য , আর এক মুহূর্তও তোমাকে কাছছাড়া করতে দিতাম না , সবসময় চোখে চোখে রাখতাম আর তাতেই আমার কাজে আরো সুবিধা হল ৷”

আরু এবার কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে গেল , তখনই আরুর মা ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ৷
” কাঁদিস না মা , তুই আমার নিজের মেয়ে না হলেও আমি কখনো তোকে সেই নজরে দেখি নি, নিজের মেয়ের মতোই বড় করেছি,আর ভালোবেসেছি “…

রেজোয়ান আহমেদ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন : আরু আমার মেয়ে ৷

আরু কাঁদতে কাঁদতে ওনার দিকে অবাক চোখে তাকাল ৷

তখন আরিস মুচকি হেসে বলল : হ্যাঁ ও আপনারই মেয়ে , আপনার হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট আরুশি যার জন্য আপনারা এত বছর ধরে চোখের জল ফেলছেন ৷”

এবার আজিজ আহমেদ বলতে শুরু করলেন :
” আমরা তখন ধানমন্ডিতে থাকতাম , আমার ছেলেটাও তখন সবে সাত বছর বয়স, সেদিন ছিল আরুশির প্রথম জন্মদিন ছিল , পরীর মত সাজিয়ে ছিলাম নিজের মেয়েটাকে, তারপরে পার্কে ঘুরতে যেতেই একটু বেখেয়ালী হতেই মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন ৷”

আরিশ এবার বলতে শুরু করল :
” তার পরে যিনি নিয়েছিলেন তিনি হলেন একজন বাচ্চা পাচারকারী, আরমান সাহেব ওনাকে একটা বাচ্চা জোগাড় করতে বলেছিলেন তারপর উনিই বাচ্চাটা রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছেন আর তারপরে যা হয়েছে সব আশা করি সকলেই জানেন ৷”

আরূ যেন নিজের মধ্যে নেই, জীবনের বড় সত্যি আজ জানতে পেরেছে, এতদিন যাদেরকে নিজের পরিবার ভেবেছে এখন তারা কেউ নিজের নয় , আজকের নতুন বাবা-মা পেয়েছে , পেয়েছে একটা পরিচয় আর একটা পরিবার ৷

দীর্ঘ উনিশ বছর পরে রেজোয়ানা আহমেদ নিজের মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ৷ আজ সকলের চোখে জল , অবসান হলো সমস্ত দুঃখের ৷

চলবে,,,,,

সব ঘোটালা কেস ক্লিয়ার তো এবার নাকি?
এত বড়ো লিখেছি আজকে যে রিচেইক করতেই ভয় লাগল তাই আর রেক করিনি ৷ বানান ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here