#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:38
#Suraiya_Aayat
আরূর খবর শুনেই রেজোয়ানা আহমেদ তড়িঘড়ি করে ছুটে এসেছেন , প্রথমে তিনি জানতেন না যে আরুর ঠিক কি হয়েছে , তারপর যখন জানলেন যে তার মেয়ে মা হতে চলেছে তখন আনন্দে আটখানা হয়ে পড়লেন ৷
এ আনন্দ উনি কোথায় রাখেন….
সেই কখন থেকে আরূর সঙ্গে বসে গল্প করছেন, মা মেয়ে মিলে বেশ ভালই গল্প জমিয়েছে ৷
__”আরিশ কোথায় ওকে তো কোথাও দেখছি না?”
__”আসলে মা উনি একটু বাইরে গেছেন দরকারে, এক্ষুনি চলে আসবেন ৷”
__”আচ্ছা ৷ যখন শুনেছিলাম যে তুই অসুস্থ তখন মনে হচ্ছিল হৃদয়টা যেন বেরিয়ে এসেছে ৷”বলে আরুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ৷
আরূ ওর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেল , যতই হোক নিজের মা বলে কথা,এত বছর তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এখন উনাকে পেয়ে খুব খুশি আরু…
তড়িঘড়ি করে আরূর আম্মু ছুটতে ছুটতে আরুর ঘরে এলেন ,এসেই বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে দিলেন,,,,,,
হঠাৎ এমনটা হওয়াই আরু চমকে গেল তারপর বুঝতে পারলেন যে ওর আম্মু প্রচন্ড কান্নাকাটি করছে, দুই মাকে পেয়ে বেশ খুশি আরূ, দু জনকেই সমানভাবে ভালবাসে ও ৷
__”কয়েক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল যে আমার জীবন টাকেই আমি হারিয়ে ফেলেছি ৷ নিজের একটু যত্ন নিয়ে হয় তো নাকি?এত কেয়ারলেস কেন তুই? এত বছরেও তোকে আমি শুধরাতে পারলাম না৷”
আরূ ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
__” আমি যদি পাল্টে যাই তখন কি আমি আর তোমার সেই আগের আরু থাকবো ? আমি যাতে না চেঞ্জ হয়ে যাই সেই জন্যই তো আমি এমন অবাধ্য মেয়ের মত হয়ে থাকি তোমার কাছে সব সময় ৷ তোমার কি ভালো লাগে না সেটা?”
উনি আরুর কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,,,
__” তুইতো আমার সেই ছোট্ট আরু মা ই থাকবি , তুই কি আমার কাছে কখনো বড় হবি নাকি রে! ‘
ওনার চোখের কোনে জল চলে এলো ৷
হঠাৎ করে ওনার নজর গেল রেজোয়ানা আহমেদের দিকে , উনি এতক্ষণ রেজোয়ানা আহমেদ কে লক্ষ্য করেননি , উনি সেই ঘরে কে কে উপস্থিত তা দেখেননি ,আসলে আরূ কে নিয়ে এতো চিন্তায় ছিল যে আশেপাশে কোন কিছুতেই নজর দেন নি ৷
__”আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি এই ঘরে রয়েছেন ৷”
বলে আরুশির আম্মু মাথাটা নীচু করে নিল ৷
উনার মধ্যে আজ একটা অনুশোচনা কাজ করছে অপরের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করার জন্য , তবুও উনি আজও এখনও আরুকে আগের মতই ভালবাসেন, মায়ের ভালোবাসার কোনো পরিবর্তন হয়না ৷
রেজোয়ানা আহমেদ মুচকি হেসে বললেন ,,,,,,
__”একজন মা হয়ে আপনার থেকে এমনই ব্যবহারটাই আশা করেছিলাম আপু , আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কেন উল্টো আমার আপনার কাছে আরও কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত কারণ আপনি এতগুলো বছর একটা মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন , যেটা আমিও করতে পারিনি ৷ আপনি এত বছর ওর মায়ের মতো ওর পাশে ছিলেন, ওকে ভালোবেসে গেছেন,ওর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ আমি আপনার কর্মের বিন্দু পরিমাণ মাত্রও কিছু করতে পারিনি শুধু দূর থেকে চোখের জল ফেলে গেছি ৷
আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মত মুখ আমার নেই তবে আপনার প্রতি ভালোবাসার হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারি ৷”
আরুশির আম্মু এবার কেঁদে ফেললেন , কারণ উনি ভেবেছিলেন রেজোয়ানা আহমেদ হয়তো মায়ের অধিকার চাওয়ার জন্য ওনাকে আরুশির কাছে এলাও করবেন না, এ সমস্ত হাজারো আজগুবি কথা উনি ভেবেছিলেন নিজের মনে মনে ৷
আরুশি ছলছল চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, কত সুন্দর ভাবে দুজন দুজনকে মানিয়ে নিয়েছেন ওর সঙ্গে সম্পর্কটা নিয়ে কোনো বিবাদ ছাড়াই ৷ এইভাবে ভালবাসার মানুষগুলো সুখে থাক , আনন্দে থাক…..
❤
জোর করে আরুশির মুখে ডিমের শেষ টুকরোটা ঢুকিয়ে দিল আরিশ ৷ এখন থেকে ওকেই আরুশিকে খাইয়ে দিতে হবে কারণ আরিশ জানে যে ও যদি আরুর খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর না দেয় তাহলে দুদিন পর আরুশিকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না৷ এমন অবস্থায় আরূশির বেশি বেশি চিপস , কোলড্রিংস,চকলেট খাওয়া এগুলোকে বন্ধ করতে হবে, তবে সেগুলো একদিনে সম্ভব নয় তাই বেশ একটু খাটাখাটনি করতে হবে আরিশকে ৷
ডিমের শেষের অংশটুকু আরূশির মুখে একটু বেশিই ছিল কারণ এতক্ষণ ধরে যা যা খাচ্ছিল তার সমস্ত টা খেয়ে উঠতে পারছিল না তাই বেশির ভাগটাই মুখে রয়ে গেছে , আর এই অবস্থায় ও আরিশকে কিছু বলতে চায় তবে মুখের খাবার গুলোর জন্য কিছু বলতে পারছে না ঠিকঠাক ৷
আরিশ ধমক দিয়ে বলল,,,,,
__” মুখের খাবার গুলো আগে শেষ করো তারপর যা খুশি বলবে তার আগে একটা কথা বললে আরো ডিম নিয়ে আসবো ৷”
আরুশি আরিশের ধমকে তাড়াতাড়ি করে মুখের খাবারটুকু শেষ করে নিয়ে ট্রে র উপর থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিলে ,কারন এই মুহূর্তে ও আরিশকে যেটা বলবে সেটা বলা খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে ও , এটা না বলতে পারলে হয়ত পেটের খাবার গুলো হজম হবে না ,তা পেটের মাঝেই ওর বেবির সাথে তিড়িংবিড়িং করে খেলা করবে ৷
জলটা খাচ্ছে আর ক্রমাগত হাত নাড়াচ্ছে আরূ, তারমানে ও আরিশকে কথাটা ভীষণভাবে বলতে চাই৷
আরুর কর্মকান্ড দেখে আরিশ রেগে যাচ্ছে কারণ খাওয়ার সময় কথা বললে গলায় খাবার আটকে গেলে বিপদ আর এখন জল খেতে গিয়ে যদি গলায় আটকে যায় তখন আরেকটা সমস্যা হবে , মেয়েটাকে নিয়ে কোনভাবেই ও পেরে ওঠেনা আরিশ, বড্ড বেপরোয়া নিজেকে নিয়ে ৷কবে যে নিজেকে ঠিকভাবে গুছিয়ে নেবে সেটা আরিশ জানে না ৷ আরিশ তো ভেবেই নিয়েছে যে সারা জীবন ওর বেবিকে আর আরুর টেক কেয়ার করার দায়িত্বটা ওরই ৷ কারণ মা যেমনটা কেয়ারলেস , বেবি ও যদি তেমনটাই কেয়ারলেস হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই ৷
__”জলটাকে শেষ করো তারপর কথা বলবে ৷”
আরুশি ঢকঢক করে সমস্ত টা খেয়ে নিল,তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ট্রের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,
__”ওই যে দেখছেন দুধের গ্লাস টা , আমি কিন্তু দুধটুকু আর খাব না ৷”
আরুশির কথা শুনে আরূশির দিকের ভ্রু কুঁচকে তাকাল আরিশ অর তার সঙ্গে চোখ দুটোও ছোট ছোট হয়ে এল ৷ সামান্য এই কথাটুকু বলার জন্য আরূর মধ্যে এত ব্যস্ততা দেখে আরিশ অবাক ৷ মাঝেমাঝে নিজেকে পাগল বলে মনে হয় আরিশের ৷ আরুশি যা যা করে তাতে ও হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা ৷
আরুশি এবার গ্লাসটার দিকে মেনশন করে বললো,,,,,
__” ওই যে ওদিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন,আর আমার মনে হচ্ছে আপনি হয়তো ঠিক দেখতে পাচ্ছেন না তাই আমার দিকে এভাবে ড্য৷ব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন ৷”
আরিস আরুর দিকে রাগী চোখে তাকালো, নিজের অবাক হওয়াটাকে আটকাতে হবে ওকে, এবার একটু স্ট্রিকট হতে হবে না হলে আরুশিকে কোনভাবেই শায়েস্তা করা যাবে না….
আরিশ আরুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আরু বললো,,,
__” এই যে আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে , আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”
আরিশ,,,,
__” তুমি বাঘও না আর ভাল্লুকও না ,তুমি আমার আরুপাখি আর আমার বাবুর আম্মু তাই আমার বাবুর এখন খিদে পেয়েছে তাই তুমি এখন খাবে…”
আরোশী দেখছে যে কোনোভাবেই কোনো কাজ হচ্ছেনা তাই ও আস্তে আস্তে আরিশের দিকে সরে গেল গিয়ে আচমকা আরিসের জামার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো,,,,,,
__”আপনি কি এখন আমাকে ভালোবাসবেন ? যেমনটা আপনি আমাকে বাসেন ৷”
আরিশ একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো আর বুঝতে পারলো যে আরুশির মতলবটা কি ৷ অন্য দিন আরু প্রচণ্ড লজ্জা পাই, কখনো এমন কিছু বলে উঠতে পারে না ৷
__”অনেক ভালোবাসবো তোমায় আরুপাখি , ভালবাসায় ভরিয়ে দেবো তবে আপাতত ওই এক গ্লাস দুধ তোমাকে শেষ করতেই হবে ৷”
বলে আরুকে কিছু আর বলার সুযোগ না দিয়ে দুধের গ্লাস টা নিয়ে জোর করে খাইয়ে দিলো ৷
এই দুধের গন্ধটাই যেন আরুশির একদম সহ্য হয় না ৷
দুধটুকু আরুশিকে খাইয়ে গ্লাসটা ট্রেতে রাখার অপেক্ষা তারমধ্যেই আরোশী হড়হড় করে বমি করে দিল আরিশের গায়ে ৷
আরিসের বেহাল অবস্থা , জামা কাপড়ের উপরে সব বমি লেগে গেছে ৷
আরুশি ভয় পেয়ে গেল , তাহলে এবার কি আরিশ ওকে খুব বকা ঝকা করবে এই নিয়েই ভেবে কিন্তু না, আরিশ আগের মতই শান্ত যেমনটা সব সময় থাকে৷ ওকে অবাক করে দিয়ে আরিশ আরিশিকে কলে তুলে নিলো,তারপর প্রথমে আরুশিকে চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে তারপরে নিজের ফ্রেশ হয়ে নিল….
মানুষটিকে আরুশি যতই দেখে ততই যেন অবাক হয়ে যায় বারবার , একটা মানুষ এতটা শান্ত ভাবে কি করে সমস্তটা সমাধান করে যেখানে আরোশী কখনো এত শান্ত দৃষ্টিতে কখনো কোন কিছুই ভাবে না সমস্ত কিছুতেই ও তাড়াহুড়ো করে ৷বারবার মানুষটার প্রেমে পড়ে যায় ও তার জন্য কোন কারন লাগে না ৷
আরিশ কোলে তুলে নিতেই আরুশি শক্ত করে শার্টের কলারটা খামচে ধরল, আজ ওর ও খুব ইচ্ছা করছে আরিশের ভালোবাসা পেতে, ও জানে যে আরিশ তাকে কখনোই ফিরিয়ে দেবে না…..
আরুশিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরিশ আরুশির দিকে ঝুকে বলতে লাগলো,,,,,,
__”কেন সব সময় তোমার নেশায় আমাকে ঘায়েল করো , তুমি কি জানো না যে বারবার আমি তোমার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি !”
বলে আরোশীয দুই গালে হাত রেখে ওর ঠোঁট জোড়াকে আঁকড়ে ধরল ৷ আরুশি ও পরম আবেশে আরিশকে ওর নিজের কাছে টেনে নিল….
চলবে,,,,,
আজকের জন্য এতটুকুই😕