#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:30
#Suraiya_Aayat
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আরু আর আরিশ দুজনেই শুয়ে আছে ৷ আজ অনেকদিন পর নিজেকে কেমন চিন্তামুক্ত লাগছে আরিশের ৷
আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুও চুপচাপ আরিশের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে কোন কথা বলছে না ,এটাই হলো ওর একমাএ নিরাপদ জায়গা ৷
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরু বলে উঠল,,,,,
“আচ্ছা আপনি এত talented কেন?”
আরিশ আরুকে ওর নীচে শুইয়ে দিয়ে ওর ওপর ঝুকে গেল ৷
” আমি talented নই ৷”
আমি জানি যারা talented হয় তারা তাদের talent টাকে স্বীকার করতে চাই না , এই যে যেমনটা আপনি ৷”
“সত্তিই যদি তাই হয় তাহলে আমার ছোট্ট আরুপাখিটাও হবে talented ,কি বল?”
আরু আরিশের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেল ৷
“আমার বউটা লজ্জাও পায়,বাবা আমার তো জানাই ছিল না তা ৷”
আরু আরিশের বুকে কিল মেরে বলল,,,,
“আপনি সবসময় আমাকে এভাবে লজ্জা দেন কেন বলুন তো !
“আমি তোমাকে কখন লজ্জা দিই আরুপাখি?”(চোখ মেরে)
আরু কথা ঘোরানোর জন্য বললল,,,,,
“আজকে একটা এত ভালো দিন চলুননা আমরা আজকে কোথাও ঘুরতে যাই ৷”
“কোথায় যাবে আরুপাখি?”
“এই আশে পাশের কোথাও , সবাইমিলে একসাথে অনেকটা সময় কাটাবো খুব ভালো লাগবে ৷”
“আচ্ছা,তাহলে বিকালে রেডি হয়ে থেকো ,সবাইমিলে একসাথে বেরোনো যাবে ৷”
আরুশি আরিশের গালে হালকা করে কিস করে বলল:Thank u ৷
আমাকেও তো এখন তার রিটার্ন দিতে হয় বলে আরুশির ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরল ৷
❤
বিকালবেলা ওরা সবাই বেরিয়েছে আফজাল খান আর অনিকা খানকে ওরা নিতে চেয়েছিল তবে উনাদের মুখে একই কথা ” এসব ছোটদের মাঝখানে আমরা গেলে তোদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে আমরা বরং অন্য কোনো দিন যাবো ৷”
আরোশী অনেক বার তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে ওদের আনন্দ নষ্ট হবে না বরং গেলে আনন্দটা দ্বিগুণ হবে কিন্তু তা ওনারা দুজন গেলেন না৷
❤
সানা ,আরু আর আরিশ তিনজনই দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে , আরাভের আসার অপেক্ষা করছে ৷
আরিশ : আচ্ছা আরুপাখি আরাভের জন্য আমরা যে অপেক্ষা করছি সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমাকে গাড়ি বার করতে দিলে না কেন ? গাড়ি না হলে আমরা যাব কিসে?
সানা : সত্যিই তো তোমরা যাব কিসে ?
ওদের কথা বলতে বলতেই আরাভ চলে এসেছে একটা রিক্সা করে আর তার পিছনে আর একটা ৷
আরোশী : ঐতো আরাভ ভাইয়া রিকশা নিয়ে চলে এসেছে,এখন আমার রিক্সায় যাব ৷
আরিশ আরুশির কথা শুনে মুচকি হাসলো , ও জানে মেয়েটা বরাবরই বাচ্চা স্বভাবের ৷ একদিন রিকশাতে গেলে মন্দ হবে না ব্যাপারটা , তাছাড়া এরকম সৌভাগ্য তো ওর আর কখনো হয়নি ৷
আরুশির কথামতো আরাভ আর সানা একটা রিকশাতে বসলো আর আরু আর আরিশ আরেকটাতে ৷
রিক্সায় উঠতেই আরিশ রিকশার ছাউনিটা মেলে দিল৷
আরুশি আরিশের দিকে তাকাল ৷
আরু: ছাউনিটা আপনি দিলেন কেন , এটার কি এখন খুবই প্রয়োজন ছিল!
আরিশ : আমার কেমন একটা লাগছে আরূপাখি !
আরুশি আর কিছু না বলে রিক্সার ঝাপটা ফেলে দিল,,,,
আরু : সৌন্দর্যটাকে ভালো লাগার চোখে দেখুন আর সেটার মাঝে যদি হাজারো আত্মসম্মানবোধ আর বিলাসিতার প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন তাহলে সেটা আর সৌন্দর্য থাকে না ,তখন সেটাও নগর সভ্যতার একটা কুলসিতার মধ্যেই যুক্ত হয়ে যায় ৷
আরিশ আরুশির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে , মেয়েটা অল্প বয়সী হলে কতটা বোঝে , কতটা গভীর ভাবে ভাবে এই ছোট ছোট. ব্যাপার-স্যাপার গুলো , কিন্তু আরিশ কখনো এই ব্যাপার গুলো ভেবে দেখার সুযোগই পাইনি ৷
মুচকি হাসি দিয়ে আরিশ আরুকে বলল,,,,
তুমি এত কিছু কি করে জানো আরূপাখি?
আরোশী শান্ত দৄষ্টিতে আরিস এর দিকে তাকাল ৷
আরু: এগুলো বোঝার জন্য কিছু জানার প্রয়োজন হয় না , ভালোবাসা চোখে দেখলেই আপনা আপনিই আপনার মধ্যে এই অনুভুতিটা চলে আসবে ৷
কথায় কথায় রিকশার ঝাকুনিতে আরিস টলোমলো হয়ে গেল তার সাথে ভয়ও পেয়ে গেল , কিন্তু পরক্ষনেই আরুশি আরিশের হাতটা ধরে নিল ৷
আরু: ভয় নেই আমি থাকতে আপনার কিছু হবে না৷
আরিশ শুধু আরুশিকে মুগ্ধ নয়নে দেখেই যাচ্ছে কারণ ও আজকে যেন একটা নতুন আরুশিকে দেখছে যে সব সময় বাচ্চাদের মত ব্যবহার করে, তাকেও যেন আজকে স্বাবলম্বী বলে মনে হচ্ছে,
এক অপরূপ সৌন্দর্য কাজ করছে অন্য দিনের তুলনায় ৷
রিক্সা চলছে আরিশ আর আরুশি দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছে ৷ আরিশ ক্রমাগত ভয় পাচ্ছে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার তাই আরু শক্ত করে আরিশের হাত তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে , বাতাসে উড়ে যাওয়া চুল গুলো বারবার মুখে এসে আছড়ে পড়ছে তবে বিরক্ত হচ্ছে না , অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আরুশির মাঝে ৷
রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ ,মানুষের কোলাহল এই সমস্ত কিছুই যেন আজ উপেক্ষিত ওদের ভালোবাসার কাছে ৷
আরুশির পছন্দ করে দেওয়া নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পড়েছে আরিশ আর নিজেও তার সঙ্গে ম্যাচ করে নীল রঙের শাড়ি পরেছে , হাতের কাচের চুড়ি আর হালকা একটু মেকআপ….
এই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে আরিশ কি করে পড়ল সেটাই ভাবছে এখন……
আরিসের এখনো মনে আছে আরুর ভার্সিটির সেই প্রথম দিনের কথা ৷
ভার্সিটির বিরাট গেটটা পার করে একা একা হেঁটে আসছিল আর সবকিছুই ছিল সেদিন অজানা আরুর কাছে ৷ এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সবকিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছিল আরু ৷ অনেককেই অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে করতে আসছিল তবে শেষের গন্তব্যটি হল আরিশ ৷
মালিহার ম্যাথের একটা ক্যালকুলেশন মিলছিলনা, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পরও না পেরে আরিশের কাছে নিয়ে গেল ক্যালকুলেশন টা ৷ দেখা মাত্রই সলভ করার আইডিয়াটা আরিশের মাথায় চলে এল ৷ তবে তা শুরু করার আগেই হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো , বিরক্ত নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলে একটা অল্প বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ শরীরের গঠনও বেশ , দেখে বয়সটা আন্দাজ করা যাবে না ৷
চোখ দুটো টানা টানা, কপালের চুল গুলো বারবার আছড়ে পড়ছে মুখে , চোখের কোনে জমে থাকা কাজলটাও চোখের সাথে লেপ্টে গেছে ৷ পরিধান করে থাকা হলুদ রঙের থ্রি পিসটাও মানিয়েছে বেশ ৷ পরিপাটি দেখাচ্ছিল বেশ ৷
এর আগে একটা মেয়েকে কক্ষনো এতটাও গভীরভাবে ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেনি আরিশ ৷
আরোশী হলো তার জীবনের প্রথম রমনী যাকে সে এতটা নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে ৷
আরূ : আপু আপনি কি একটু বলতে পারবেন যে বায়োকেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্টটা ঠিক কোথায়?
মালিহা বেশ অবাক হয়েছিল আরুর কথা শুনে আর তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিল আরিশ কারন দুজনেই ভেবেছিল যে আরু হয়তো আরিশকে জিজ্ঞাসা করবে কারণ আরিশ অত্যন্ত একজন সুপুরুষ , গোটা ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ ৷নতুন সব মেয়েরা ইতিমধ্যেই ও সঙ্গে গভীর আলাপচারিতার চেষ্টা করেছে তবে কাউকে পাত্তা দেয়নি আরীশ ৷ কারো মধ্যে নতুন কিছু খুঁজে পাইনি আরিশ , সবাই প্রায় একই যারা ওকে পটানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু আরু তার মধ্যে অন্যরকম একজন যে নিজে থেকে কোনো ইচ্ছা দেখায়নি আরিশের সঙ্গে কথা বলার ৷
মালিহা : তুমি কি আমাকে বললে?
আরু কিন্তু কিন্তু করে : হ্যাঁ আপু আমি তো আপনাকেই বললাম , কেন আপনার মনে হলো না? (আদো আদো স্বরে )
মালিহা: সেটা নয় আসলে এমনিতেই ৷ বায়ো কেমিস্ট্রির ডিপার্টমেন্ট হল থার্ড ফ্লোরে যে কর্নারে রুমটা রয়েছে 212 নম্বর সেটাই ৷
আরুশি : থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু বলে আরিসের দিকে কোন রকম দৄষ্টিপাত না করেই বিদায় নিল ৷
আরিস ততক্ষণ আরুর দিকে তাকিয়ে ছিল যতক্ষণ না আরুশি ওর চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেছে৷
মালিহা ও আরিশের কান্ড দেখে কিছু আর বলার সাহস পায়নি কারণ আরিশ ওর সিনিয়ার আর আরিশ এইসমস্ত মেয়েদের ব্যাপারে কথা বলতে একদমই পছন্দ করেনা….
সেই দিন আরুশির মাঝে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল আরিশ এর ৷ সবার থেকে অন্যরকম আরু , কারো সঙ্গে ও মেলে না…
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আরূর হাতের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আরুকৈ জড়িয়ে ধরল ৷ আররু ও আরিশের কাঁধে মাথা রেখে ওদের যাত্রাটা কে অনুভব করতে লাগলো ৷
রিকশা থেকে নামতেই আরাভ আর সানা ওদের কাছে এগিয়ে এলো ৷
আরাভ আরিশকে কিছুটা কিন্তু কিন্তু করে বলল : আসলে কি বলতো,,,
আরাভের কথার টোন শুনে আরিশ বুঝতে পেরেছে যে আরাভ কি বলতে চাইছে তাই আর বেশি হেঁয়ালি না করে আরিশ বলল :
বুঝতে পেরেছি , তোদের আলাদা সময় চাই তাই তো? আচ্ছা যা তবে একসঙ্গে কিন্তু বাড়িতে ফিরতে হবে বলে দিলাম ৷
আরাভ: হ্যাঁ নিশ্চয়ই , বলে ওরা দুজন হাত ধরে বেরিয়ে গেল….
আরুশি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তারপর আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল : কত ভালোবাসে সানাকে আরাভ ভাই তাইনা!
আরিশ :হমমম!
যেমনটা আমি তোমাকে বাসি (মনে মনে)
তারপরে দুজন সামনে হাতে হাত ধরে এগিয়ে হাটতে লাগল ৷ একটা পার্কে বেড়াতে এসেছে ওরা দুজন৷ আশেপাশের কত ভালোবাসার মানুষ হাতে হাত রেখে বসে আছে , একান্ত সময় পার করছে…
হঠাৎ কিছুটা দূরে নজর যেতেই আরিশ আরুশিকে বলল:
আরুপাখি তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি ৷
আরূ: আপনি এখন আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন? তবে কথাটা হয়তো আরিশ শুনলো না , বলার আগেই চলে গেছে ও ৷
আরূশির একটু রাগ হলো আরিশের উপরে , না বলে হূট করে কোথায় চলে গেল তাই ৷
তারপর দৃষ্টি দিল নিক্ষেপ করল লেকের জলের দিকে, বিকালের সূর্যের আলোতে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে ৷ ওর খুবই ইচ্ছা হচ্ছে এখন জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকার তবে যার সঙ্গে বসে থাকবে সেই মানুষটাই উধাও হয়ে গেল ৷
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরূ বোর হয়ে চলেছে তবে আরিশের আসার নাম নেই ৷
হঠাৎ করে চুলে আলতো স্পর্শ পেয়ে ও বুঝতে পারল যে আরিশ এসেছে , আর তার সঙ্গে একটা খুব সুন্দর সুগন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে ৷ বুঝতে বাকি রইল না যে বেলি ফুলের মালাটা সযত্নে হাতখোপা করে আরিশ ওর মাথায় বেঁধে দিয়েছে ৷
মুচকি মুচকি হাসছে আরু আরিশের কাণ্ড দেখে ৷
আরিশের সমস্ত রোমান্টিকতা যেনো, আজকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে ,অদ্ভুত এক ভালো লাগা সৃষ্টি করছে ৷
আরিশ তারপর আরুশিকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেই আরূর গালে হাত রেখে বলল :
তোমার জন্য মালাটা আনতে গিয়েছিলাম আরুপাখি , আমি জানি আমার খুব লেট হয়েছে আই এম রিয়েলি সরি ৷(কান ধরে ৷)
আরিস এর কান্ড দেখে আরু মুচকি হেসে ফেলল কারণ এত লোকের মাঝখানে আরিশ ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কান ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি ৷ আরুশি আরিশের হাতটা কান থেকে নামিয়ে নিয়ে বলল :
কান ধরতে হবে না , আমি আর রেগে নেই ৷
আরিশ আর আরু দুজনই মুচকি হাসতে লাগল….
আরূ: চলুন না ওই লেকের ধারে যাই , আমার খুব ইচ্ছা করছে ওখানে যেতে…
আরিস : আমার আরুপাখি বলেছে তার মানে যেতেই হয় বলে আরুর সঙ্গে সেখানে গেল….
দুজনের জলের মধ্যে পা ঢুবিয়ে বসে আছে আর ভালোবাসাগুলো মিলিয়ে দিচ্ছে একসঙ্গে….
হঠাৎ আরু কাঁধে আলতো একটা হাতের স্পর্শ পেতেই অত্যন্ত কৌতুহলের সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা পিচ্চি বাচ্চা দাঁড়িয়ে খিলখিল করে মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে হাসছে আরুর দিকে তাকিয়ে ৷ বাচ্চাটার হাসি দেখে আরুর যেন মন ভরে গেল ৷
বাচ্চাটিকে দেখে আরূ আর আরিশ দুজনেই জল থেকে উঠে এলো ৷
আরিশ নীচু হয়ে বাচ্চাটাকে কলে তুলে নিল…..
আরু মেয়েটার গাল দুটো টেনে ,,,,,
তোমার নাম কি ?
আমাল নামম আয়ূশি ৷(আধোআধো কন্ঠে)
আরিশ আর আরূ মুচকি হাসছে ৷
আরূশি আরিশের থেকে আয়ূশিকে কলে নিল,,, ,
আরিশ : তোমার তো দেখছি আমার আরুপাখির মতো নাম ৷
আয়ূশি :তোমাল আরূপাখি আতে,কিইনতু যানোতো আমাদেল নেই ৷ আমাদেল তো টিয়াপাখি আতে সে আমাল সাথে কতা বলে ৷
আরিশ:তাই,,,,
আয়ূশি:তা তোমাল আরূপাখি টা কোথায় ?
আরিশ আয়ূশির গালে চুমূ দিয়ে বললল,,,,,
তুমি যার কোলে উঠেছ সে আমার আরূপাখি ৷
আয়ূশি:এ বাবা তোমাল পাখি তো ওলে না ,কি পতা ৷
আয়ূশির পাকা পাকা কথা শুনে ওরা দুজনে হাসতে হাসতে শেষ তারপর আধোআধো কোন্ঠে কথাগুলোর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷
আরূশি:আম্মু তোমার এই সুন্দর নামটা কে রেখেছে?
আয়ূশি: আমাল দাদিমা রেখেছে ৷
আরূশি:তা তোমার দাদিমা কোথায়?
আয়ূশি:যানো তো আমাল দাদিমা রোজ নামাজ পলতে গিয়ে খুব কান্না কলে ৷
আরিশ আর আরূশি দুজন দুজনের দিকে অবাক চোখে তাকালো তারপর আরিশ বলল:
তা তোমার দাদিমাকে কি কেউ বকা দেয়?
আয়ূশী:না না,দাদিমা তো আমার ফুপ্পিআম্মুল জন্য কাদে ৷
আরূশি:কি হয়েছে তোমার ফুপ্পিআম্মুর ?
আয়ূশি:দাদিমা ফুপ্পিকে খুঁজে পায়না,কোথায় হালিয়ে গেতে ৷বলে আয়ূশি ও কান্না করে দিল ৷
ওদের কথায় কথায় আয়ূশির বাবা মা ওর কান্না শুনে ছুটে এলো….
আসিফ(আয়ূশির বাবা):আই এম রিয়েলি সরি ও আপনাদের কে বিরক্ত করলো ৷ আসলে আমার আম্মু একটু অসুস্থ তো তাই ওনাকে একটু খেয়াল রাখতে গিয়ে আয়ূশি এখানে চলে এসেছে ৷
আরুশি: কোথায় আপনার মা?
আসিফ : আসলে ওই দিকে বসে আছে একা একা,আমি আর আমার ওয়াইফ এতখন ওখানেই ছিলাম ,তার মাঝে আয়ূশি চলে এসেছ ৷
আরোশী : আপনার মা কি খুব অসুস্থ?
আসিফ: অসুস্থ তবে তা মানসিক দিক থেকে ৷
আয়ূশি যখন ওনার কথা বলছিলেন আরোশীর তখন কষ্ট হচ্ছিল ওনার কথা শুনে, আর এখন যখন উনি এখানেই আছেন তাহলে দেখা করতে সমস্যা কোথায়?
আরুশি: আমরা কি ওনার সাথে একটু দেখা করতে পারি?আই মিন এতদূর অবধি পরিচয় হয়ে দেখা না হলে খুব খারপ লাগত আর কি ৷
আসিফ: কোন সমস্যা নেই আসুন ৷
আরুশি আয়ূশিকে কলে নিয়ে আরিশের সাথে ওনাদের পিছন পিছন যেতে লাগল ৷
আরু যত এগিয়ে যাচ্ছি heartbeat টা যেন ততই বেড়ে চলেছে ,তবে কেন তা জানে না ৷
ওনার সামনে যেতেই বুকের ভিতর মোচঢ় দিয়ে উঠল ওর ৷
উনি একমনে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন হয়তো দীর্ঘ কোনো ব্যথা নির্মূল করার চেষ্টা করছেন , পাশে বসে আছেন প্রায় 70 বছর বয়সের একজন বয়স্ক লোক , বুঝতে বাকি রইলো না যে ওটা ওনার স্বামী….
আরুশি ধীর পায়ে উনার সামনে যেতেই অদ্ভুত এক টানে উনি আলতো চোখে আরুর দিকে তাকালেন, চোখ দিয়ে ওনার আপনি জল গড়িয়ে পড়ল ৷
আরুশি হাঁটু গেড়ে বসে উনার চোখের জলটা মুছে দিলেন ৷
উনি নিস্তব্ধ , যেন কথা বলার ভাষাটা হারিয়ে ফেলেছেন এমন ৷
আরুশি : আপনি কাঁদবেন না প্লিজ, আপনাকে কাঁদতে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….
উনি আরুশির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বললেন : আমার মেয়েটাও যদি আজ আমার কাছে থাকতো তাহলে সেও তোমার মতই হতো ৷ বড্ড মনে পড়ে তার কথা…
উনার স্বামী উনার কাঁধে হাত রাখলেন রেখে বললেন: সবার কপালে যেমন কন্যা সুখ থাকে না হয়তো আমাদের কপালেও নেই , আল্লাহ হয়তো রাখেননি…
উনাদের এমন আবেগপ্রবণ কথা শুনে আরুশির মনে হচ্ছে যেন ওনাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদেতে, আর ওনার কষ্টে নিজেকেও সামলে করতে….
❤
রিকশা করে বাড়ি ফিরছে আরু আর আরিশ তবে আরূকে আর আগের মত ঠিক প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছেনা, যতটা না আসার সময় দেখাচ্ছিল ৷ হয়তো ওই মহিলার কাতরতায় কষ্ট পেয়েছে খুব , তবে ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীরভাবেই ভাবতে চাই আরিশ….
সেখান থেকে আসার আগে ওনাদের বাড়ির এড্রেস টা নিয়ে এসেছে আরিশ যাতে যোগাযোগ বজায় থাকে, তবে এই মুহূর্তে আরুশিকে সামলানো টা দরকার ৷
চলবে,,,,,,,
গল্প কেমনভাবে এগোচ্ছে জানাবেন প্লিজ ৷