#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_14
আহান রেষ্টুরেন্টের মধ্যে ঢুকে কয়েক পা এগোতেই হটাৎ কিছু একটা দেখে দাড়িয়ে গেলো। ওর ফেইস রাগে লাল হয়ে গেলো। ও রক্তিম চোখে সামনে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে এই চোখ দিয়ে ওই মানুষ গুলোকে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেবে।আহানের এমন হটাৎ রেগে যাওয়ার কারন বুঝতে পারলো না মেঘ ।তাই আহানের দৃষ্টি অনুসরন করে সামনের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও চমকে উঠলো,,,অবাক হয়ে সামনের মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো ‘এরা এখানে কি করছে??’
ওদের থেকে কিছুটা দূরে রেষ্টুরেন্টের একপাশে বসে আছে আবির আর জেরিন। শুধু আবির আর জেরিন না,, সাথে মেঘের দুই ফুপি আর ফুপা,,,চাচা-চাচীরা আর ওর সব কাজিনেরাও আছে। ওরাও সবাই অবাক চোখে মেঘদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে ভয়ে ভয়ে আহানের দিকে তাকালো দেখলো রাগের কারনে আহানের নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। আহান কিছুক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে মেঘকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর হাটু গেড়ে মেঘের সামনে বসে ওর কাটা পা টা নিজের হাটুর উপড়ে রাখলো। মেঘকে এভাবে কোলে করে আনতে দেখে হিয়ানরা সবাই অবাক হলো।একটু আগে তো মেঘ ঠিকই ছিলো হটাৎ এমন কি হলো যে আহান ওকে কোলে করে ভিতরে নিয়ে এসেছে। ওরা ভ্রু কুচকে আহান কি করে সেটা দেখতে লাগলো।
ওরা সবাই রেষ্টুরেন্টে ঢুকেই আবিরদের দেখেছিলো কিন্তু কোনো রিয়্যাক্ট করেনি এমন একটা ভাব করেছে যেনো ওদের কাউকে চিনেই না। আর আবিররাও ওদের খেয়াল করেনি কারন ওরা সবাই নিজেদের মতো কথা বলায় ব্যাস্ত ছিলো।খেয়াল করলেও দিশা আর মিহিরকে ছাড়া ওরা কাউকেই চিনতে পারতো না। হিয়ান, অভি, আলিশা, সাড়িকা, সাঈফা,রিজা ওরা সবাইকে না চিনলেও আবির, জেরিন আর মেঘের মেজ চাচা-চাচীকে চেনে । মিহির অনেক আগেই আবির আর জেরিনের পিক ওদের দেখিয়েছে। আর মেঘের মেজ চাচা – চাচীর সাথে হিয়ানদের চার বছর আগে হসপিটালেই আলাপ হয়েছিলো। আর এই চার বছরে মেঘের দাদু বাড়ির অন্য কেউ মেঘদের সাথে যোগাযোগ না রাখলেও মেঘের মেজ চাচা-চাচী মাঝে মাঝে মেঘদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো,, কয়েক বার হিয়ান আর আহানদের বাড়িতেও গিয়েছিলো।
এখন দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে তাই রেষ্টুরেন্টে তেমন একটা লোক নেই। এই সময়ে কেউ নিজ নিজ কর্ম স্থানে থাকে। আবার কেউ কেউ স্কুলে, কলেজে বা ভার্সিটিতে আছে।এই মধ্যপ্রহরের সময়টা প্রায় সবাইয়ি বিজি থাকে।আহীর, মিহির, অভি ,হিয়ান,একটা টেবিলে বসেছে। আর ওদের পাশের টেবিলৈ বসেছে আলিশা, সাঈফা, সাড়িকা, দিশা আর রিজা। ওদের সবার থেকে খানিকটা দূরে আবির জেরিন সহ মেঘের অন্যান্য কাজিনরা আর বড়রা বসে আছে। ওনারা একএক টেবিলে ছয়জন করে বসে নিজেদের পছন্দ মতো স্নাক্স খাচ্ছে ।আহান যখন মেঘকে কোলে নিয়ে আসছিলো তখন রেষ্টুরেন্টের অনেকেই উৎসুক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে আবিরাও তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু একে তো মেঘকে এতো বছর পর এখানে দেখলো ,তাও আবার এভাবে একটা ছেলের কোলে দেখে ওরা শকড হয়ে মুখ হা করে আহান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আহীর ওয়েটারকে খাবারের ওডার্র দিচ্ছিলো আহানকে ওভাবে হাটু গেড়ে বসতে দেখে অবাক হয়ে আহান কে উদ্দেশ্য জিঙ্গেস করলো
“what is this bro? একে তো ওকে ভেতরে কোলে করে নিয়ে আসলে তার উপর হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে পড়েছো। এখন কি খাওয়া রেখে বিয়ের জন্যে প্রপোজ করবে?”
আহীরের কথায় মেঘ চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। আহান দাতে দাত চেপে বললো
“Shut up আহীর,, মেজাজ খাড়াপ আছে উল্টোপাল্টা কথা বলিস না। আর ওকে আমি এখন প্রপোজ করবো না,, খুন করে ফেলবো!”
আহানকে এভাবে রাগি স্বরে কথা বলতে দেখে আহীর ভ্রু কুচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে জিঙ্গেস করলো
“what happen bro? Anything serious? আর ওরই বা কি হয়েছে?”
“কি আর হবে,,,, পা কেটে গেছে।”
মিহির বসা থেকে দাড়িয়ে বললো
“হোয়াট? কেটে গেছে মানে কি? কীভাবে কাটলো?”
আহান শক্ত কন্ঠে বললো
“সেটা তোর বোনকেই জিঙ্গেস কর? মহা রানির তো প্রতিদিন একটা অঘটন না ঘটালে পেটের ভাত হজমই হয় না! রোজ কিছু না কিছু উল্টোপাল্টা কাজ করে ওর নিজেকে হার্ট করতেই হবে।”
ওদের কথার মাঝেই মেঘের মেজ চাচা এসে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“হেই ইয়াং ম্যান,, হাউ আর ইউ?”
আহান দাড়িয়ে ওনাকে হাগ করে মুচকি হেসে বললো
“আ’ম ফিট এ্যান্ড ফাইন আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি বেটা। তোমাদের কি অবস্থা? দেশে কবে আসলে?”
“পরশু দিন সকালে বিডি তে ব্যাক করছি আঙ্কেল। কিন্তু আপনারা সবাই এখানে কেনো? কোনো অকেশন আছে নাকি?”
“সামনের সপ্তাহে আমার ছেলের বিয়ে।তাই আজকে ওরা সবাই বিয়ের শপিং করতে বেড়িয়েছে। কেনো তোমরা জানো না? চারদিন আগেতো আমি নিজে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে আসছি। তোমার মামা বাড়িতেও গিয়ে ছিলাম। ওনারা বলেছেন ওনারা সবাই বিয়েতে আসবেন।”
তারপর ওনি মেঘের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন
“একি মামনি তোমার পায়ে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ করা কেনো?”
মেঘ মৃদু স্বরে বললো
“কেটে গেছে কাকাই।”
“কীভাবে কাটলো মা? একটু সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না? অনেক খানি কেটে গেছে নাকি?”
আহান কটাক্ষ করে বললো
“ইনি যদি সাবধানে চলাফেরা করেন তাহলে নিজের হাত-পা কাটবে কে? তাই ইনি ভুলেও কখনো সাবধানে চলাফেরা করেন না।এ্যান্ড ডোন্ট ওয়ারি আঙ্কেল, পা বেশি কেটে গেলেও কোনো প্রভলেম নেই ছোট্ট একটা ইনজেকশন দিলেই পায়ের ব্যাথ্যা একদম চলে যাবে।”
ইনজেকশনের কথা শুনে মেঘের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। ও কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“ই্-ইনজেকশন?”
আহান বাকা একটা হাসি দিয়ে বললো
“হ্যা ইনজেকশন’,,, একটা ইনজেকশন দিলেই দেখবে তুমি হয়ে হাটতে পারছো। ”
“আমি কিছুতেই ইনজেকশন দেবো না।”
আহান সিরিআস হওয়ার ভান করে বললো
“ইনজেকশন তো তোমাকে দিতেই হবে।”
বলেই আহান গার্ডরা যে টেবিলে বসেছে সেই টেবিলের দিকে তাকিয়ে একজন গার্ডকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“শাওন গাড়ি থেকে ফাষ্টএইড বক্সটা নিয়ে আসো।”
আহানের কথায় শাওন নামের ছেলেটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বাইরে চলে গেলো। ইনজেকশন দেওয়ার ভয়ে মেঘের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আহান বাকা হেসে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের কাকাই সহ বাকিরা সবাই মুখ টিপে হাসছে। ওরা সবাই জানে মেঘ ইনজেকশন ভীষন ভয় পায়।
__________________
অনেকক্ষন থেকে আবির অবাক চোখে শুধু মেঘের দিকেই তাকিয়ে আছে । একটুর জন্যও ওর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছে না। আবীরের চোখে মুখে স্পষ্ট মুগ্ধতার ছাপ। মেঘ এ্যাস কালারের একটা টপস পড়েছে সাথে হোয়াইট লেডিস জিন্স। মাথায় এ্যাস কলারের হিজাব পড়া হোয়াইট কালারের জরজেট ওরনাটা কাধের এক সাইডে ফেলে রেখেছে। চোখের নিচে চিকন করে হালকা কাজল দিয়েছে,,, তাছাড়া আর কোনো সাজ নেই।আবীর খেয়াল করলো মেঘের চেহারায় আর সেই বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা নেই,, এখন ওকে একদম এড্যাল্ট এবং ম্যিচিউড লাগছে। আর সব চেয়ে সুন্দর হলো মেঘের ওই ঘন পাপড়ি ওয়ালা সাদা মনির চোখ দুটো। আবীরকে এভাবে মেঘের দিকে তাকাতে দেখে আবিরের বাবা ধীর গলায় বললো
“ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার অধিকার তোমার নেই। নিজের চোখকে সংযত করো।”
আবীর চমকে উঠে ওর বাবার দিকে তাকালো। ওর বাবা তাছিল্য হেসে চেয়ার থেকে উঠে মেঘদের কাছে চলে গেলো।
_____________
কিছুক্ষন পরই শাওন নামের ছেলেটা ফাষ্টএইড বক্স নিয়ে এসে আহানকে দিলো। আহান বক্সটা হাতে নিয়ে আবার হাটু গেড়ে মেঘের সামনে বসে, ওর কাটা পা টা ধরে পুরনো ব্যান্ডেজটা খুলে ফেললো। দেখলো মেঘের পা অনেকটাই কেটে গেছে। তবে ঘা ওতোটা গভীরও না কয়েকদিন ঠিকমতো ঔষধ খেলেই সেড়ে যাবে। আহান খুব সাবধানে এ্যান্টি স্যাপটিক দিয়ে ড্রেসিং করে ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে, আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। তারপর একটা সিড়িন্স ভেঙে তারমধ্যে মেডিসিন ঢুকিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“আর ইউ রেডি…..?”
“নো, নেভার…”
বলেই মেঘ এক লাফে চেয়ারের উপর উঠে সেখান থেকে টেবিলের উপরে উঠে গেলো।
ওর এমন কান্ডে কেউই অবাক হলো না।কারন ওরা সবাই জানে মেঘ ইনজেকশনকে সাংঘাতিক ভয় পায়। রেষ্টুরেন্টে তেমন কেউই নেই,, দুই একজন যারা আছে তারা এতো বড় মেয়ের এমন বাচ্চামো দেখে হাসছেন। রেষ্টুরেন্ট কর্তিপক্ষের লোকেরা কিছু বলছে না,, কারন ওরা আহান কে ভালো করেই চেনে এবং ভয়ও পায়। আফটার অল একজন পলিটিশিয়ানের ছেলে তার উপর একজন নামকরা ইয়ংগেষ্ট বিজনেস ম্যান।
আহান ইনজেকশন টা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো
“একি তুমি ওখানে উঠেছো কেনো? নিচে নামো ইনজেকশনটা দিতে হবে ।”
“আমি কিছুতেই ইনজেকশন দেবো না।”
“ইনজেকশন তো তোমাকে দিতেই হবে। এবার তুমি নিচে নামবে নাকি আমি উপড়ে উঠবো?”
“খবরদার আপনি এখানে আসবেন না।আসলে আমি আপনাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেবো।”
আহান মেঘকে আরেকটু ভয় দেখানোর জন্য চেয়ারের উপর উঠলো। আহানকে চেয়ারের উপর উঠতে দেখেই মেঘ ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে টেবিল থেকে নেমে আহীরের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। ও ভয়ের চোটে ভুলেই গেছে যে ওর পায়ে ব্যাথ্যা। আহীরকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদো কাদো গলায় বললো
“ভাই প্লিজ আমাকে বাচাও,, আমি ইনজেকশন দেবো না। ”
আহীর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“ব্রো প্লিজ,,ওকে আর শুধু শুধু ভয় দেখিয়ো না।”
”শাট আপ’ আহীর,,, ওকে মোটেও ভয় দেখাচ্ছি না। এই ইনজেকশন আমি ওকে সত্যি সত্যি দিবো। এবার তুই সামনে থেকে সড়ে দাড়া ,,নাহলে এটা আমি তোর ব্যাক সাইডে দিয়ে দেবো।”
বলেই আহান মেঘের এক হাত ধরে টান দিয়ে আহীরের থেকে ছাড়িয়ে এনে ঝাড়ি দিয়ে বললো
“এখন ভয় পাচ্ছো কেনো? উল্টোপাল্টা কাজ করার সময় মনে থাকে না? কোন সাহসে তুমি মিহিরের গাড়ির পিছনে দৌড় দিয়েছো। যদি পড়ে গিয়ে আরও বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতো তখন কি হতো? আর পড়ে গেছো কেটে গেছে ভালো কথা! সেখানে ভালো করে ড্রেসিং করে ঔষধ লাগাও নি কেনো? আর নিজে ঔষধ না লাগাও অন্তত মামনিকে তো ( মীরা রহমান ) বলতে পাড়তে মামনি তোমাকে ঔষধ লাগিয়ে দিতো?”
মেঘ মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে বললো
“সরি……..”
“ইটস ওকে,,,, ভবিষ্যতে যেনো এরকম ভুল কখনো না হয়।ব্যাথ্যা পেলে কখনো বড়দের থেকে লুকাবে না।”
মেঘ উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো ।
মেঘ ওর মাথার উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে ব্যাক্তিটির দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওর চাচ্চু (আবিরের বাবা) কে দেখতে পেলো। খুশিতে মেঘের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। মেঘ মুচকি হেসে বললো
“আসসালামু ওলাইকুম চাচ্চু,,, কেমন আছো?”
“ওলাইকুমুস সালাম,, আমি ভালো আছি মামনি । তুমি কেমন আছো? তোমার মা-বাবা,, খালা মনি, খালু,,মামা-মামিরা সবাই কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্,,, সবাই আছে চাচ্চু।”
মিহির এতোক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘের লাফালাফি দেখছিলো আর হাসছিলো। কিন্তু ওর চাচ্চুকে মেঘের সাথে কথা বলতে দেখে ওর মেজাজ টা চরম মাএায় খারাপ হয়ে গেলো। চার বছর আগে মিহিরের বার বার বারন করার পরেও এই লোকটা জোড় করে আবীরের সাথে মেঘের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আর এই লোকটার জন্যই ওর বোনকে সবার সামনে এতোটা অপমানিত হতে হয়েছে । কে বলেছিলো ওনার ওই স্কাউন্ডেল ছেলের সাথে ওর বোনের বিয়ে ঠিক করতে। নেহাত ওনি গুরুজন নাহলে ওনাকে একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে দিতো।মিহির রাগে গজগজ করতে করতে সাঈফার পাশের চেয়ারটায় গিয়ে বসে পড়লো। তারপর টবিলের উপর নিজের হাতটা উঠিয়ে একটা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে রাগে জোড়ে গ্লাসটা চেপে ধরলো।সাঈফা দেখলো রাগের চোটে মিহিরের চোখ লাল হয়ে গেছে। গ্লাসটা আর দুই তিন সেকেন্ড ওভাবে ধরে থাকলে ওটা ভেঙে মিহিরের হাতে ঢুকে যাবে। সাঈফা তারাতারি মিহিরের হাত থেকে টান দিয়ে গ্লাসটা নিয়ে নিলো। তারপর বিরক্তি কর কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বললো
“কি সমস্যা আপনাদের ? কয় ভাইয়ের রাগ সব সময় নাকের ডগায় থাকে কেনো? যেখানে সেখানে রেগে ভাংচুর করা গুন্ডামি করা আপনাদের সভাব হয়ে গেছে। এই জন্য আমরা আপনাদের সাথে সহজে কোথাও যেতে চাই না,, কারন আপনাদের মধ্যে ম্যানারস নামের কোনো বস্তুই নেই । খিদে পেয়েছিলো তাই রেষ্টুরেন্টে খেতে আসছি,,, কিন্তু খাবার কখন খাবো আপনাদের রাগ দেখতে দেখতেই তো আমার পেট ভরে গেছে।”
মিহির দাতে দাত চেপে বললো
“আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না,,,নাহলে এই কথা গুলো বলার জন্য তোকে মেরে এখানে পুতে দিতাম।”
“হ্যা লাইফে তো ওই দুইটা জিনিসই খুব ভালো করে শিখেছেন ,,, একটা বাপের টাকায় ফুটানি করা আরেকটা কথায় কথায় গুন্ডামি করা।”
“শাট আপ ইডিয়েট,,, নিজের মুখটা বন্ধ রাখ নাহলে এই গ্লাসটা আমি তোর মাথায় ফাটাবো।”
সাঈফা বিরবির করে বললো
“হ্যা গন্ডার তুই তো এটাই পারবি। তোর মতো লেজ ছাড়া গরুরা ভালোবাসার মানে কি বুঝবে? আল্লাহ্ আমি কেনো এই আনরোমান্টিক ছাগলটা কেনো যে ভালোবাসতে গেলাম?”
মিহির বিরক্তি নিয়ে বললো
“বিরবির করে কি বলছিস?সাহস থাকে তো জোড়ে বল।”
সাঈফা “কিছু না” বলে মিহিরের দিকে একবার তাকিয়ে ঠোট উল্টিয়ে বসে রইলো। তা দেখে মিহির মুচকি হেসে একজন ওয়েটারকে ডাক দিলো। ওয়েটার এসে একে একে সবার থেকে খাবারের ওডার নিতে লাগলো।
_____________
আহান, মেঘ, আর আবিরের বাবা বসে কথা বলছিলো। তখনই একজন ওয়েটার এসে আহানের থেকে খাবারের ওর্ডার চাইলো। আহান নিজে কি খাবে সেটার ওর্ডার করে,, মেঘের জন্যও মেঘের ফেবারেট খাবার চিকেন ফ্রাইড রাইস ওর্ডার করে দিলো। এটা দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে মনে মনে বললো ইনি কীভাবে জানলো আমার চিকেন ফ্রাইড রাইস খুব পছন্দের। আমি তো ওনাকে কখনো বলিনি,,, তাহলে কি ভাইয়ারা কেউ বলেছে? নাকি আমি একটু বেশি বেশি ভাবছি! ওনি হয়তো এমনিতেই ওর্ডার দিয়েছে আর সেটা কো-ইনসিডেন্সলি আমার পছন্দের সাথে মিলে গেছে। সে যাই হোক,, এতো ভেবে লাভ নেই। খিদে পেয়েছে যেকোনো একটা খাবার পেলেই হলো।……
আহান ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা টেনে আবিরের বাবাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আঙ্কেল আপনি কি খাবেন? ওনাকে ওর্ডার করে দিন,,,”
আবিরের বাবা উঠে দাড়িয়ে বললেন
“না বাবা আমি কিছুই খাবো না ,,,তোমরা খাও ”
“কেনো আঙ্কেল,,,,,”
আবীরের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
“আমি এখানে বেশিক্ষন বসে তোমাদের সাথে গল্প করলে , তোমার আন্টি এখানে এসে সিন-ক্রিয়েট করবে। মেঘকে উল্টোপাল্টা কথা শোনাবে ওনার সাথে জেরিনও যোগ দিবে।”
ওনার কথার মাঝে আহান ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“আরে কিচ্ছু হবে না আঙ্কেল,,,আপনি বসুন তো”
আবিরের বাবা ওনার একহাত আহানের কাধের উপর রেখে মুদ্যু হেসে বললেন
“তোমাকে দেখলেই যেকেউ চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে তুমি যথেষ্ট শান্ত-সিষ্ঠ ,ভদ্র একটা ছেলে বাবা। মিহির কে নিশ্চয়ই এতো দিনে খুব ভালো করে চিনেছো,, ও ছোটবেলা থেকে অনেক রাগি বদমেজাজি। বিষেশ করে মেঘকে কেউ কিছু বললে ও একদম সহ্য করতে পারে না। একে তো ওর কাকিমনি (আবিরের মা) কে আর জেরিনকে মিহির আগে থেকেই পছন্দ করে না তার উপর যদি ওরা এখানে এসে মেঘকে কিছু উল্টোপাল্টা বলে তাহলে আমি নিশ্চিত মিহির ওনাদের মুখের উপড়ে গ্লাস ছুড়ে মারবে।”
কথাটা বলেই ওনি মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে ওনাদের টেবিলে চলে গেলেন। মেঘ আবিরের বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,,
হায়রে চাচ্চু তোমার এতো বয়স হয়ে গেলো তাও তুমি এখনো ঠিকঠাক করে মানুষ চিনতে পারলে না! এই শয়তানের হাড্ডিটা কে কিনা তুমি বললে এটা শান্ত – শিষ্ট ভদ্র ছেলে? এই ভিলেনটার পাষ্ট রেকর্ড যদি শোনো তাহলে তোমাকে এখান থেকে সোজা হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে,,,বাসায় আর ফিরতে পারবে না। এনার ভিলেন গিড়ির গল্প শুনে আমিই প্রায় হার্ট অ্যাটাক করতে করতে বেচে গেছি।
#চলবে………