#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ47
বাড়ির সবার রাতের ডিনার করার পর আহান,মেঘ,হিয়ান,আহির, মিহির,সাড়িকা,সাঈফা ডিনার করার জন্য নিচে নামলো।ওরা সিড়ি দিয়ে নেমে ড্রইংরুমে এসে দেখে আজকে বিয়ের জন্য যে শপিংগুলো করা হয়েছিলো সেইগুলো বাসার সবাই আনপ্যাক করে দেখছে।বাসার লোকেরা ছাড়া কয়েকজন গেষ্টরাও এখানে আছে।তাদের মধ্যে আবির জেড়িন সহ মেঘের চাচ্চুরা ফুফুরা সবাই আছে।আহানদের নামতে দেখে ড্রইংরুমে উপস্থিত সবাই ওদের দিকে তাকালো।কিন্তু ওরা কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো।ওরা বসতেই সার্ভেন্ট এসে ওদের খাবার সার্ভ করলো।ওরাও কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজেদের মতো খাবার খেতে লাগলো।ওনারাও কিছুক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজেদের কাজে মন দিলেন।
এই বাসার ড্রইং স্পেজ থেকে ডাইং স্পেজ একদম ক্লিয়ারলি দেখা যায়।কারন ডাইনিং স্পেজ আর ড্রইং স্পেজের মধ্যে আলাদা কোন দেয়াল নেই।
খাওয়ার এক পর্যায়ে মোনা খান মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ তুমি কিছু শপিং করোনি?তোমার ড্রেসগুলো কোথায় গেলো?এখানে তো সবারটা আছে কিন্তু তোমারটা তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।”
মোনা খানের কথা শুনে মেঘের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।ও আর চোখে একবার আহানের দিকে তাকালো।দেখলো আহান কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো খাবার খাচ্ছে।মেঘ কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।মেঘকে চুপ থাকতে দেখে মোন খান আবারও বললেন
“কি হলো মেঘ চুপ করে আছো কেনো?তুমি কিছু কেনাকাটা করোনি?আর আহানেরও তো কোনো ড্রেস খুজে পাচ্ছি না।তোমরা কি দুজনের একজনও কিছু কেনাকাটা করোনি?”
মোনা খানের কথা শেষ হতেই আহান খাওয়া থামিয়ে কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিলো
“শপিং করবো না কেনো মা?অবশ্যই শপিং করেছি।মেঘের আর আমার জিনিসপএ গুলো আমি আমার কাছে রেখে দিয়েছি।ওইগুলো তোমাদের কারো দেখার দরকার নেই।বেশি দেখতে ইচ্ছে হলে ফাংশনে যখন পড়বে তখন দেখে নিও।”
আহানের কথাটা বাকিরা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও, আবিরদের পরিবারের সবাই বেশ অবাক হলো এটা ভেবে যে মেঘের ড্রেস আহানের কাছে কি করছে?আর আহানই বা কেনো সেগুলো কাউকে দেখাতে চাইছে না?আবির তীক্ষ্ম কন্ঠে আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো
“মেঘনার ড্রেস তোমার কাছে কেনো রেখেছো?আর বাকিদের জিনিসপএ গুলো যখন সবাই দেখতে পারছে তাহলে ওর গুলো দেখতে প্রভলেম কোথায়?”
আবিরের কথাটা শেষ হতেই ড্রইংরুমে পিন পতন নিরবতা ছেয়ে গেলো।আহানের এতোক্ষনের শান্ত চেহারাটায় রাগের আভাস দেখা দিলো।চোখ জোড়া ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে গেলো।আহির,মিহির, হিয়ান ওরা খাওয়া বন্ধ করে শক্ত মুখে বসে আছে।সাড়িকা,সাঈফা, মেঘ ওরা ভীতু চোখে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।আহান খাবারের প্লেট টা সামনের দিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে আবিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দ্যাটস নন অফ ইউর বিজনেস ব্রো।গেষ্ট হয়ে এসেছো গেষ্টদের মতো থাকবে,খাবে আর চলে যাবে।আমাদের কারো কোনো বিষয়ে নাক গলাতে আসলে তার ফল তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না।মাইন্ড ইট!”
কথাটা বলেই আহান হনহন করে উপরে চলে গেলো।আহানের পিছনে পিছনে আহির আর মিহিরও খাওয়া ছেড়ে চলে গেলো।ওরা যেতেই মেঘ,সাড়িকা,সাঈফা একটা সস্তির নিশ্বাস ফেললো।ওরা ভেবেছিলো হয়তো এক্ষুনি ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে যাবে কিন্তু অল্পের উপর দিয়ে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে এটা ভেবে ওদের ভয়টা দূর হলো।হিয়ান বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে হাত টা ধুয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে আবিরের সামনে দাড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো
“আহানকে প্রশ্ন করার স্পর্ধা ভবিষ্যতে আর কখনো দেখিও না।একমাএ আমরা ছাড়া ওকে বাইরের কেউ প্রশ্ন করুক সেটা ওর একদম পছন্দ না।তাই ভুলেও আর এই ভুলটা করতে যেও না তাহলে পস্তাতে হবে।”
কথাটা বলেই হিয়ানও উপরে চলে গেলো।ওদের কথা শুনে রাগে আবির শাপের মতো ফুসতে লাগলো।কিন্তু মুখে কিছুই বললো না।দাতে দাত চেপে চুপচাপ বসে রইলো।
_____________________________
বাসায় অতিরিক্ত গেষ্ট থাকায় রাতের বেলা ইয়ং জেনারশনের যারা আছে তাদের সবাইকে ছাদে ঘুমাতে দেওয়া হলো।ছাদের দুইপাশে লম্বা করে বিছানা করা হলো,একপাশে মেয়েদের জন্য অন্যপাশে ছেলেদের জন্য।মেঘ,সাড়িকা,সাঈফা এসে জেড়িনদের থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।শোয়ার কিছুক্ষন পরেই সাড়িকা,সাঈফা ঘুমিয়ে পড়লো।কিন্তু অনেকক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকার পরেও মেঘের চোখে ঘুম ধরা দিলো না।ও বেশ কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে শোয়া থেকে উঠে বসলো।কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে সিধান্ত নিলো ফোনে গেমস খেলবে।যেই ভাবা সেই কাজ ও দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোনে গেমস খেলতে লাগলো।
আহান,মিহির,আহির,হিয়ান রাত দেড়টার সময় ছাদে আসলো।ওরা এতোক্ষন হিয়ানের রুমে বসে অফিসের কাজ করছিলো।হিয়ানের রুম একদম খালি,ওটা বরের রুম তাই ওখানে কাউকে শুতে দেওয়া হয়নি।তাছাড়া হিয়ান বাইরের লোকেদের ওর রুমে একদম এলাউ করে না।হিয়ানের জিনিসপএ কেউ ইউজ করুক সেটা ওর একদম পছন্দ না।ওরা চারজন চাইলে ওই রুমেই শুতে পারতো কিন্তু মেঘদের জন্য ওরাও ছাদে চলে এসেছে।ওরা ছাদে এসে দেখলো সবাই গভির ঘুমে আছে, শুধু একমাএ মেঘই বসে বসে ফোন টিপছে।এতো রাতে মেঘকে ফোন টিপতে দেখে আহানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।ও মেঘের কাছে মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“তুমি এখনো ঘুমাওনি?রাত কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে?একটু সুযোগ পেলেই তোমার অনিয়ম করতে হবে তাইনা?”
আহানের ধমক শুনে মেঘ কেপে উঠলো সাথে ওর হাত থেকে ফোনটাও পরে গেলো।ফোন পড়ে যাওয়ার মেঘ গেমসটা হেরে গেলো।সেইজন্য ও কাদো কাদো মুখ করে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান আবারও ধমক দিয়ে বললো
“তুমি জানোনা রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ হয়?তারপরেও কোন সাহসে তুমি না ঘুমিয়ে ফোন টিপছো?বকা না শুনলে পেটের ভাত হজম হয়না?”
কথাটা বলে আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ ঠোট ফুলিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান টান দিয়ে মেঘের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো
“আমি তোমার সাথে কথা বলছি আর তুমি ফোনের দিকে তাকিয়ে আছো?”
আহানের কথা শুনে মেঘ কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আপনার জন্য আমি এই লেবেল টা হেরে গেলাম।যাষ্ট ফিনিশিং ষ্টেপে ছিলাম কিন্তু আপনি সব মাটি করে দিলেন এ্যা এ্যা এ্যা।”
“শাটআপ!তুমি ঘুম বাদ দিয়ে এতো রাতে গেমস খেলছো আর গেমসে হেরে গেছো তাই আবার কাদছোও?তুমি কি বাচ্চা?”
মেঘ ঠোট ফুলিয়ে বললো
“আমি ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম আসছিলো না।তাই বাধ্য হয়ে ফোনে গেমস খেলছিলাম।”
আহান কিছুক্ষন মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
“ভালো করেছো!এইবার চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পড় নাহলে তুমি আর তোমার ফোন দুটোকেই ছাদ থেকে টুপ করে নিচে ফেলে দেবো।”
বলেই আহান অন্যপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ওর পাশে এসে আহির,মিহির,হিয়ানও শুয়ে পড়লো।আহানকে শুয়ে পড়তে দেখে মেঘ মুখটা বাচ্চাদের মতো করে বললো
“আমার ফোনটা তো দিন?”
“এখন ঘুমিয়ে পড়।এটা কাল সকাল ছাড়া পাবে না।গুড নাইট এন্ড সুইট ড্রিমস।”
কথাটা বলেই আহান চোখ বন্ধ করে ফেললো।মেঘ কিছুক্ষন রাগি চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে ঠাস করে শুয়ে পড়লো।তারপর মাথায় নিচে থাকা বালিশটা মাথার উপরে চাপা দিয়ে কাথা মুড়ি দিলো।আহান চোখ খুলে মেঘের অবস্থা দেখে মৃদ্যু হেসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
_____________________________
সকালে উঠে সবাই একে একে ফ্রেস হওয়ার জন্য নিচে রুমে চলে এলো।আহান,আহির,মিহির,হিয়ান ওরা রুমে এসে ফ্রেস হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করতে লাগলো।কিছুক্ষন পর মিড়া রহমান আর একজন সার্ভেন্ট কফি এবং স্নাক্স নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।আহান ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে একবার মিড়া রহমানের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার গম্ভীর মুখ করে নিজের কাজ করতে লাগলো।বিষয়টা মিড়া রহমানের চোখ এড়ালো না।উনি ম্লানো একটা হাসি দিয়ে হিয়ানের কাছে এসে ওর হাতে একটা কফি মগ দিলো।হিয়ান মুচকি একটা হাসি দিয়ে কফি মগটা ওনার হাত থেকে নিয়ে ওনাকে থ্যাংক্স বলে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।উনি আরেকটা কফি মগ হাতে নিয়ে আহিরের দিকে এগিয়ে দিলেন কিন্তু আহির ওনার হাতের টা না নিয়ে ট্রে থেকে অন্য একটা মগ নিয়ে খেতে শুধু করলো।মিহিরও সেইম কাজ করলো।ছেলেদের এমন কান্ড দেখে মিড়া রহমানের চেহারায় অন্ধকারের ছায়া নেমে এলো।ঠোটের কোন থেকে মুচকি হাসিটা মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো।উনি ওনার হাতে থাকা কফি মগটা কাপাকাপা হাতে আহানের দিকে বাড়িয়ে দিলেন।আহান ওনার দিকে না তাকিয়েই কাজ করতে করতে শক্ত কন্ঠে বললো
“লাগবে না,আমার এখন গিদে নেই।”
মিড়া রহমান শুকনো মুখে বললো
“অনেক বেলা হয়ে গেছে বাবাই আপাততো এইগুলো খেয়ে নাও ব্রেকফাস্ট হতে অনেক সময় লাগবে।ততোক্ষন না খেয়ে থাকলে তোমার শরীর খারাপ করবে।”
আহান তাছিল্য হেসে বললো
“আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না।আমি মরলাম নাকি বাচলাম, খেলাম নাকি খেলাম না সেটা নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে হবে না।”
মিড়া রহমান অসহায় কন্ঠে বললেন
“তুইতো আমার উপরে রেগে আছিস বাবাই।যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দে তবুও শুধু শুধু খাবারের উপরে রাগ দেখিয়ে নিজেকে কষ্ট দিস না।কফিটা খেয়ে নে বাবাটা প্লিজ।”
“আরেহ বাহ আজকে তো দেখছি আপনার আমার উপরে একদম দরদ উতলে উঠছে।কেনো বলুন তো?হঠাৎ আমার উপরে এতো দয়া হওয়ার কারন জানতে পারি?”
মিড়া রহমান বললেন
“আচ্ছা আহান আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমার হাত থেকে এক কাপ কফি খেতেও তোর প্রভলেম হচ্ছে?”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আহান হাতে থাকা ল্যাপটপটা ঠাস করে বন্ধ করে বললো
“আপনি খারাপ হতে যাবেন কেনো?খারাপ তো আমি।তাইতো আমি কেদে মরে গেলেও আমার উপরে কারো দয়া হয় না।যেই কাজ গুলো করলে আমি সব থেকে বেশি কষ্ট পাই সেই কাজ গুলো আপনারা সবাই বেশি করেন।অন্য একজনের করা ভূলের শাস্তি আমাকে দেন।এ্যাকচুলি আপনারা সবাই খুব ভালো একমাএ আমিই খারাপ।”
কথাটা বলেই আহান ছো মেরে মিড়া রহমানের হাত থেকে কফিটা টেনে এনে ঢগঢগ করে পুরো কফিটা খেয়ে ফেললো।কফিটা খুব বেশি গরম না থাকলেও একদম কমও গরম ছিলো না।আহানের কান্ড দেখে মিড়া রহমান হতবাক হয়ে গেলো।আহির,মিহির,হিয়ান কিছুই বললো না চুপচাপ বসে রইলো।ওরা ভালো করেই জানে আহান রেগে গেলে এই ধরনের উল্টাপাল্টা কাজ করে।আহান কফি মগটা মিড়া রহমানের হাতে দিয়ে বললো
“এই নিন কফিটা খেয়ে নিয়েছি এইবার আপনি এখান থেকে চলে যান।আপনার এই আমাকে ভালোবাসার ড্রামাটা আমার ঠিক সহ্য হচ্ছে না।তাই প্লিজ আমার সাথে এরকম ন্যাক্যামো না করে এখান থেকে চলে যান।আর যাদের সাথে এই ন্যাক্যামো টা করে মহান সাজতে পারবেন তাদের সাথে গিয়ে করুন।”
কথাটা শোনার সাথে সাথে মিড়া রহমানের মনে হলো কেউ ওনার কালিজা ধরে টান দিয়েছে।ওনার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পড়তে লাগলো।ওনার চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে গেলো।উনি শাড়ির আচল দিয়ে চোখের পানিটা মুছে কান্নারতো গলায় বললো
“তোর মামনিটা যে বড্ড বাজে রে বাবাই।তাই এতো চেষ্টা করেও কাউকে ভালো রাখতে পারে না।যতোই সবাইকে খুশী রাখার চেষ্টা করে ততোই সবাই তাকে ভূল বোঝে।জানিস আহান আমিও তোর মতো ভুল করেছিলাম।একজনকে ভালোবাসার ভুল।তাকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলে ছিলাম যে তার জন্য বাবা-মা,ভাই-বোন সবার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে তার সাথে এক কাপরে চলে গিয়ে ছিলাম।প্রত্যেকটা দিন তার জন্য অপমান সহ্য করেছি।কতো চড় খেয়েছি তারও হিসেব নেই।আমার এতো বড় পরিবার থাকতেও আমার কেউ ছিলোনা।ইনফ্যাক্ট আমি আমার বাবা-মাকেও শেষ বারের মতো একবার দেখতে পারিনি।কষ্ট হতো খুব,প্রত্যেকটা দিন মরার মতো বেচে ছিলাম।মনে হতো আমার শুরু শরীরটাই আছে প্রানটা আর নেই।কিন্তু তবুও কখনো আফসোস হয়নি কারন যাকে ভালো বাসতাম তাকে তো কাছে পেয়ে ছিলাম।সেও তো আমারই মতো তার পরিবারের লোকদের থেকে কতো অপমান সহ্য করেছে।”
এতোটুকু বলে মিড়া রহমান থামলো।তারপর একটা শুকনো ঢোক গিলে আবারও বললো
“আচ্ছা আহান একটা কথা বলতো? চার বছর আগে যদি তোর সাথে মেঘের এ্যানগেজমেন্ট টা জোড় করে করিয়ে দিতাম তাহলে কি মেঘ তোকে মেনে নিতো?উহুম জিবনেও নিতো না।উল্টে ও আমাদের উপর রেগে যেতো,আমাদের সবাইকে ঘৃনা করতো।সাথে তোকেও ঘৃনা করতো।তখন কি করতি?ভালোবাসার মানুষটাকে জোড় করে বিয়ে করতি?তার সাথে জোড় করে সংসার করতি?জোড় করে কি কখনো কারো ভালোবাসা পাওয়া যায়?না যায় না।সব কিছুতে জোড় করতে করতে একদিন দেখতি তুই নিজেই হাপিয়ে গেছিস।না নিজে ভালো থাকতি,না মেঘ ভালো থাকতো,আর না আমরা ভালো থাকতে পারতাম।এই চারটা বছরের অপেক্ষাটা তোর জন্য হয়তো অনেক কষ্টের ছিলো কিন্তু কিছু কিছু অপেক্ষার ফল সব সময় মিষ্টি হয়।হয়তো একটু বেশিই সময় লেগেছে কিন্তু তোর কাঙ্খিত জিনিসটা তো তুই ঠিকই পেয়ে গেছিস।”
মিরা রহমানের কথা শুনে ওরা সবাই অবাক চোখে মিড়া রহমানের দিকে তাকালো।ওরা ভাবতেই পারেনি মেঘ যে আহানকে ভালোবাসে সেটা উনি জানেন।ওদের সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে মিরা রহমান জোড় পূর্বক একটু হাসলেন তারপর বললেন
“তোদের কি মনে হয় আমার মেয়ে কি করে,কোথায় যায় সেগুলোর খবর আমি রাখি না?মেঘের চেহারা দেখলে আমি বলে দিতে পারি ওর কখন কোন জিনিসটা চাই।ওর চোখে আমি স্পষ্ট আহানের জন্য ভালোবাসা টা দেখেছি।”
ওরা এখনো অবাক চোখে সবাই মিড়া রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে।মিড়া রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন
“আর আবিরদের মাফ করে দেওয়ার একটাই কারন সেটা হচ্ছে মেঘের বড় চাচ্চু মানে আবিরের বাবা।উনি লাষ্ট এক বছর ধরে ভিষন অসুস্থ।অলরেডি দুইবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন।আরেকবার করলে হয়তো ওনাকে আর বাচানো যাবে না।আমরা ওখান থেকে চলে আসার পর ওনি অনুশোচনা বোধে একদম ভেঙে পরে ছিলেন।নিজেকে সব সময় ঘর বন্দি করে রাখতেন।কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না।নিজের বউয়ের আর ছেলের করা অপরাধের জন্য লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতেন না।লাষ্ট বার যখন হার্ট অ্যাটাক করে ছিলেন তখন শুধু একটা বার মেঘ আর মিহিরকে দেখার জন্য ছটফট করেছে।এইসব যখন মেঘের বাবা জানতে পেরেছিলো তখন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি।আগের সব কিছু ভুলে গিয়ে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হসপিটালে ছুটে গেছে।আমি তখনও কিছু জানতাম না।উনি হসপিটাল থেকে ফিরে এসে আমাকে সবটা জানায়।সবটা জানার পর আমিও আর কারো উপর রেগে থাকতে পারিনি।ভেবেছি সবাই আমাকে অপমান করলেও ওই লোকটা তো সব সময় আমাকে নিজের ছোট বোনের মতো স্নেহ করেছে।সব সময় সাপোর্ট করেছে।আমার জন্য নিজের পরিবারের সাথে লরাই করতেন।তাহলে শুধু কেনো অন্যদের করা ভুলের সাজা আমরা ওনাকে দেবো।এইসব আমি মিহির আর মেঘকে অনেক আগেই বলতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু ওরা কষ্ট পাবে তাই ওদের চাচ্চুই ওদের বলতে বারন করেছিলো।বলেছিলো আমরা যাতে বিয়ের নাম করে ওদের দুজনকে ওখানে নিয়ে যাই।”
এক সাথে কথা গুলো বলে থামলো মিড়া রহমান।তারপর আহানের কাছে গিয়ে একহাত ওর মাথায় রেখে নরম কন্ঠে বললো
“তোকে তোর মামনি কষ্ট দিতে চায়না রে বাবাই।কিন্তু কি করবে বল তোর মামনি যে হেল্পলেস।যেই মানুষটা অসময়ে বড় ভাইয়ের তোর মামনির পাশে ছিলো তাকে কিভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে উপেক্ষা করে চলে আসতাম বলতো।ওই লোকটা তো আর মেঘের খারাপ চায়নি।উনি চেয়েছিলো মেঘের সাথে আবিরের বিয়েটা দিয়ে মেঘকে ওই বাড়ির বড় বউ বানাতে যাতে মেঘের ফুপিরা আর কখনো মেঘকে বাজে কথা বলতে না পারে।যাই হোক অনেক কিছু বলে ফেললাম,পারিস তো তোর পচা মামনি টা কে ক্ষমা করে দিস।তোর মামনির হয়তো কাউকে ভালো রাখার যোগ্যতা নেই।তাইতো আজকে আমার ছেলেদের আমার হাত থেকে কফি নিয়ে খেতেও ঘৃনা লাগছে।”
কথাটা বলেই মিড়া রহমান দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আহান ওখানেই ষ্টাচু হয়ে বসে রইলো।কি করেছে এটা ও?এতো বড় ভূলটা কিভাবে করতে পারলো?এখন কিভাবে মামনিকে ফেইস করবে?কোন মুখে ওনার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে?
আহির আর মিহির মাথা চেপে ধরে বসে আছে।ওদের চোখের কোনে পানি জমেছে।ওর হয়তো আজকে ওই মানুষ টা কে একটু বেশিই আঘাত দিয়ে ফেলেছে।এর জন্য হয়তো নিজেদের কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।
হিয়ান ওর হাতে থাকা কফি মগটা জোড়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো
“ইউ নো হোয়াট?আজকে আমার একটা প্রবাদ বাক্য মনে পড়েছে “মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশী”।তোরা সবাই মেঘকে খুব ভালো বাসিস।সব সময় মেঘকে নিয়ে চিন্তা করিস একমাএ উনিই মেঘের ভালো চায় না। আর সব সময় মেঘের ক্ষতি চায় তাইনা?আরে কোনো মা বাবা কখনো নিজের সন্তানের খারাপ চায়না।মা বাবা যা করেন সন্তানের ভালোর জন্যই করেন।কিন্তু তোরা তো এসব কিছুই দেখবি না।তোদের কাছে তো নিজেরা যেটা ভাববি সেটাই ঠিক,বাকি সব কিছু ভূল।
কথাটা বলেই হিয়ান হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।কিন্তু দরজার বাইরে এসে ওর পা টা থেমে গেলো।ও অবাক কন্ঠে বললো
“মেঘ তুই এখানে?”
মেঘের নামটা কানে আসতেই আহান,আহির,মিহির চমকে দরজার দিকে তাকালো।
চলবে,,,,,,