ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৫৩

1
1204

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃপর্বঃ53

“চুপচাপ এখানে বসে কান্না করবি।এখান থেকে উঠলেই মেরে তোর ঠ‍্যাং ভেঙে দিবো।”

কথাটা বলেই মিহির গিয়ে দরজাটা খুলে ফেললো।খুলেই রাজ নামের ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।কিন্তু ‘ও’ যতোটা সম্ভব নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বেশ শান্ত স্বরেই জিঙ্গেস করলো

“কি ব‍্যাপ‍্যার ব্রো?আপনি এখানে?”

ছেলেটা মিহিরের কথায় পাএা না দিয়ে দরজার বাইরে থেকে উকি দিয়ে সাঈফা কে দেখলো।তারপর উদ্দীগ্ন কন্ঠে বললো

“ওর কি হয়েছে?ওভাবে কাদছে কেনো?আর এতোক্ষনই বা এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিলো কেনো?”

রাজকে সাঈফার জন‍্য এতোটা চিন্তিত হতে দেখে মিহিরের ইচ্ছে করছে এখনি রাজের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।মিহির নিজেকে সামলে নিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“আসলে ওর শরীর টা একটু খারাপ তাই ওকে বাইরে যেতে দেইনি।আর এই জন‍্য বাচ্চাদের মতো কাদছে।”

মিহিরের কথা শুনে রাজ মৃদ‍্যু চিল্লিয়ে বললো

“হোয়াট?শরীর খারাপ মানে?কি হয়েছে ওর?”

কথাটা বলে রাজ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই মিহির রাজের সামনে দাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বললো

“কারো রুমে ঢোকার আগে তার থেকে পারমিশন নিতে হয়,এই টুকুও ভদ্রতা শিখেন নি দেখছি।”

মিহিরের কথা শুনে রাজ একটু পিছিয়ে গেলো।কিন্তু একদম দমে গেলো না।বরং কন্ঠে আরো দৃরতা এনে জোড় গলায় বললো

“ওকে তাহলে আপনি আমাকে ভিতরে ঢোকার পারমিশন দিন।আর তা নাহলে ওকে এখানে আসতে দিন।আমি দেখতে চাই ওর কি হয়েছে।”

রাজের কথা শুনে মিহিরের রাগ টা এবার কন্ট্রোল লেস হয়ে গেলো।’ও’ রাগি কন্ঠে বললো

“না আমি আপনাকে এই রুমে ঢোকার পারমিশন দিবো।আর না সাঈফা রুম থেকে বাইরে বের হবে।আপনাকে কষ্ট করে ওর সমস‍্যা দেখতে হবে না।ওর সমস‍্যা দেখার জন‍্য এই বাড়িতে অনেক লোক আছে।আপনি এখন এখান থেকে আসতে পারেন।”

মিহিরের কথা শুনে রাজ কপট রাগ দেখিয়ে বললো

“হ‍্যা আমি এখানে থেকে চলে যাবো তবে সাঈফা কে সাথে করে নিয়ে তারপর।আমি জানি ওর কিচ্ছু হয়নি।আপনি ওকে এভাবে আটকে রেখেছেন তাই ‘ও’ কাদছে।এইবার ভালোয় ভালোয় বলছি ওকে আমার সাথে যেতে দিন নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

রাজের কথা শুনে মিহির তাছিল‍্য হেসে বললো

“খারাপ হয়ে যাবে?কি খারাপ হবে শুনি?”

রাজ দাতে দাত চেপে বললো

“আপনাকে আমি পুলিশে দিবো।এভাবে একটা মেয়েকে আটকে রাখার শাস্তি কি জানেন?”

মিহির রাজের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো

“হ‍্যা খুব ভালো করেই জানি।কিন্তু আপনি বোধহয় এটা জানেন না আমি কে?জানলে আমার সামনে দাড়িয়ে এসব কথা বলার সাহস পেতেন না।”

রাজ ভ্রু কুচকে বললো

“কে আপনি?”

মিহির একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।শুধু এটা জেনে রাখুন আজকে আপনি একটা ভয়ংকর অপরাধ করে ফেলেছেন।আমার খুব মূল‍্যবান একটা জিনিসটা কে স্পর্শ করেছেন।যেটা আমার একদমই সহ‍্য হয়নি।আপনি অভি ব্রো”র ভাই দেখে আজকে বেচে গেলেন।নাহলে আপনার জায়গায় যদি অন‍্যকেউ হতো তাহলে এতোক্ষনে তাকে মেরে পার্সেল করে যেখান থেকে এসেছে সেখানে পাঠিয়ে দিতাম।”

মিহিরের কথা শুনে রাজ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ এটা মনে করার চেষ্টা করছে কখন মিহিরের মূল‍্যবান জিনিস স্পর্শ করেছে।ওর সাথে তো মিহিরের দেখাই হলো এইমাএ।

এদিকে ওরা কি বলছে সেদিকে সাঈফার কোনো খেয়াল নেই।কাদতে হঠাৎ ওর চোখ গেলো দরজার দিকে।দরজাটা একদম খোলা আর একপাশে দাড়িয়ে রাজ আর মিহির কথা বলছে।সাঈফা ভাবলো এটাই এখান থেকে পালানোর সবচেয়ে ভালো উপায়।যেই ভাবা সেই কাজ।সাঈফা বসা থেকে দাড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে দিলো এক ভো দৌড়।আর মনে মনে বললো আজ যদি এখান থেকে বেরোতে পারি তাহলে জিবনে আর এই শয়তান টার সামনে আসবো না।

সাঈফা দরজার কাছ থেকে যখন দৌড়ে বেরোচ্ছিলো তখন মিহির ওর হাত ধরে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু সাঈফা বেশ জোড়েই দৌড়ে যাচ্ছিলো তাই ধরতে পারলো না।সাঈফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিহির মৃদ‍্যু চিল্লিয়ে বললো

“তোর কি মনে হয় তুই এখান থেকে পালিয়ে গেলেই বেচে যাবি?হুহ নেভার!তোকে আমি কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেবো না।তুই আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিস তাইনা?এবার আমি যদি তোর সুখ,শান্তি কেড়ে না নিয়েছি তাহলে আমার নামও মিহির না।”

কথাটা বলে মিহির রুমের মধ‍্যে ঢুকে ঠাস করে রুমের দরজাটা আটকে দিলো।আর রাজ সেখানেই বোকার মতো দাড়িয়ে সাঈফার যাওয়ার দিকে ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে রইলো।
_____________________________

আজকে হিয়ান আর আলিশার বিয়ে।সবাই বেশ হাসি খুশী থাকলেও আলিশার বাবা,মায়ের মুখে এক চিলতেও হাসি নেই।আলিশাও সকাল থেকে মনমরা হয়ে বসে আছে।সারাদিনে ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়াও করেনি।আলিশার মা কাজের ফাকে ফাকে শাড়ির আচল দিয়ে বারবার নিজের ভেজা চোখ জোড়া মুছছেন।আজকে তার একমাএ আদরের মেয়েটা সারা জিবনের জন‍্য বিদায় নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে যাবে।কালকে থেকে হয়তো আর মেয়েটাকে কাছে পাবেন না।আগের মতো খাইয়ে দিয়ে পারবে না।আগের মতো শাসনও করতে পারবেন না।হয়তো কখনো কখনো মেয়ের সাথে দেখা হবে কিন্তু আগের মতো একসাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আর কথা বলতে পারবেন না।এসব ভেবে বারবার ওনার গলাটা আটকে আসছে।ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে কাজ করতে পারছেন না।বারবার কোনো না কোনো কাজে গন্ডগোল করে ফেলছেন।

মেঘরা রেডি হয়ে আলিশার পাশে বসে ওর সাজানো দেখছিলো।তখনই আলিশার কিছু কাজিন এসে জানায় বর পক্ষের লোকেরা এসেছে।সেটা শুনে মেঘ,দিশা,সাড়িকা নিচে চলে যায় গেট ধরার জন‍্য।কিন্তু সাঈফা সেখানেই বসে থাকে।’ও’কিছুতেই এখন মিহিরের সামনে পড়তে চায় না।তাই যতোটা সম্ভব মিহিরের থেকে দূরে দূরে থাকে।

মেঘ,দিশা,সাড়িকা গেট ধরা, বরের হাত ধোয়ানো,জুতা চুড়ি করা থেকে শুরু করে একটা দুষ্টামিও করা বাদ রাখেনি।তিনজন মিলে পুরো বিয়ে বাড়িটা মাতিয়ে রেখেছে।আর সাথে হিয়ানের পকেটও পুরো খালি করে দিয়েছে।বিয়েটা বেশ ভালোয় ভালোয়ই মিটে গেলো।ওরা সন্ধ‍্যার একটু আগে চৌধুরী বাড়ির উদ্দ‍্যেশে বেড়িয়ে পড়লো।বিদায়ের সময় অভি,আলিশার মা-বাবা,অন‍্যান‍্য আত্মীয় স্বজনেরা সবাই ভীষন কান্নাকাটি করেছে।আলিশা কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।হিয়ান ওকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।তারপর নিজেও গিয়ে ওর পাশে বসে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাহুডোরে আগলে রাখে।মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা বর যাএীর সাথেই চলে আসে। আলিশার কিছু কাজিন আর অভিও আসে কনের সাথে স্পেশাল গেষ্ট হয়ে।
_____________________________
ওরা সন্ধ‍্যার কিছুক্ষন পর এসে চৌধুরী বাড়িতে প‍ৌছায়।হিয়ানের মা এসে আলিশা কে বরন করে ভিতরে নিয়ে আসে।বাসার ভিতরে এসে মেঘ,আলিশাকে নিয়ে সাড়িকাদের রুমে চলে যায়।সেখানে গিয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে নিজেদের ভারি লেহেঙ্গা চেইঞ্জ করে নরমাল ড্রেস পড়ে।তারপর মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা মিলে আলিশার বিয়ের সাজ উঠিয়ে ফুল সজ্জার জন‍্য আবার নতুন করে সাজাতে থাকে।সাজানোর এক পর্যায়ে আলিশা বলে বিয়েতে যে জুয়েলারি গুলো পড়েছিলো ওগুলো এখন আর ‘ও’ পড়তে পারবে না।কারন ওই গুলো ভিষন ভারী ছিলো।তাই আলিশার সারা গায়ে র‍্যাস পড়ে গেছে।এটা শুনে মেঘ,দিশা,সাড়িকা,সাঈফা বেশ টেনশনে পড়ে যায়।নতুন বউয়ের গায়ে যদি কোনো জুয়েলারি না থাকে তাহলে ব‍্যাপ‍্যার টা দৃষ্টিকটু লাগে।কিন্তু বাড়ির সবাই এখন নিজেদের কাজে খুব ব‍্যাস্ত আছে তাই কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।তার উপরে আবার আলিশাকে যে অন‍্য জুয়েলারি গুলো দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো ওর লাগেজের মধ‍্যে রয়ে গেছে।আর লাগেজ এখন হিয়ানের রুমে আছে।সেখানে আহান,অভি,রিয়ান, আহির,মিহির মিলে ফুলসজ্জার খাট সাজাচ্ছে তাই ওই রুমে এখন কাউকে এলাউ করছে না। এমনকি হিয়ানকেও না।

মেঘ গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন ভাবার পর ওর মনে পড়লো।ওর কাছে কিছূ হালকা টাইপ জুয়েলারি আছে।যেগুলো ‘ও’বিয়েতে পড়ার জন‍্য এখানে নিয়ে এসেছিলো।কিন্তু বিয়েতে আহান ওকে ড্রেসের সাথে ম‍্যাচিং করে জুয়েলারিও কিনে দিয়েছিলো।তাই ওর আর সেগুলো প্রয়োজন হয়নি।যেভাবে নিয়ে এসেছিলো এখনো সেভাবে ব‍্যাগেই পড়ে আছে।মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে “এক্ষুনি আসছি” বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
____________________________

মেঘ সাড়িকা সাঈফাদের রুম থেকে বের হয়ে এসে মিড়া রহমানের রুমের সামনে দাড়ায়।অভিদের বাড়িতে যাওয়ার আগে মেঘ ওর ল‍াগেস টা মিড়া রহমানের কাছে রেখে গিয়েছিলো।’ও’ রুমের মধ‍্যে ঢোকার জন‍্য দরজা ধাক্কা দিতেই দেখলো দরজাটা ভিতর থেকে লক করা।দরজা লক দেখে মেঘের ভ্রু কুচকে এলো।এখন তো এই রুমে কারো থাকার কথা না।কারন মেঘ যখন কড়িডোর দিয়ে আসছিলো তখন মিড়া রহমান আর আজম রহমান দুজনকেই নিচে ড্রইং রুমে দেখেছে।ওনারা যদি না থাকে তাহলে কে থাকতে পারে?যে থাকে থাকুক তাতে মেঘের কি?’ও’ শুধু ভিতরে ঢুকে জুয়েলারি গুলো নিয়ে আবার চলে যাবে।সেটা ভেবে মেঘ দরজায় নক করলো।

পথম বার দরজায় নক করায় ওদিক থেকে কোনো রেসপন্স এলো না।কিন্তু দ্বীতিয় বার নক করতেই দরজাটা খুলে গেলো।মেঘ তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে জেড়িন দাড়িয়ে আছে।জেড়িনের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।মেঘ সেদিকে পাএা না দিয়ে বললো

“আমার কিছু জিনিসপএ এই রুমে রাখা আছে,সেগুলো নিয়েই এখান থেকে চলে যাবো।”

মেঘ কথাটা বলে জেড়িন কে সাইড কাটিয়ে রুমের মধ‍্যে ঢুকে গেলো।রুমের মধ‍্যে ঢুকেই বেশ অবাক হলো।পুরো রুমটা এলোমেলো হয়ে আছে।রুমের মধ‍্যে যতো জিনিসপএ ছিলো সব ভেঙে চুড়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।একপাশের দেয়াল ঘেসে আবির মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।এই মুহূর্তে আবির কে দেখে মনে হচ্ছে ওর মতো নিস্পাপ বাচ্চা পৃথিবীতে আরেক টা নেই।মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এগুলো জেড়িনের কাজ।হয়তো কোনো একটা বিষয় নিয়ে রেগে গিয়েছিলো তাই সব কিছু ভেঙে ফেলেছে।এগুলো জেড়িনের পুরনো অভ‍্যাস রাগ উঠলেই ভাঙচুড় করে। এতো লোকের চিৎকার চেচামেচির জন‍্য বাড়ির কেউ হয়তো এসব ভাঙার সাউন্ড শুনতেই পায়নি।

মেঘ বিরক্তিকর একটা নিশ্বাস ফেলে ফ্লোরে পড়ে থাকা ওর ল‍্যাগেজ টার কাছে গেলো।তারপর সেটা সোজা করে দাড় করিয়ে টেনে বেডের উপর তুললো।জেড়িন যে এখনো মেঘের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা মেঘ ভালো করেই বুঝতে পারছে।কিন্তু ‘ও’ সেদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।মেঘ যখন ল‍্যাগেজ টা খুলে সামনের দিকে একটু ঝুকে জুয়েলারি গুলো বের করছিলো তখন অসাবধানতাবশত গলার কাছ থেকে ওর ওড়নারা সরে যায়।আর সাথে সাথে আহানের দেওয়া সেই “A” অক্ষরের লকেট বেড়িয়ে আসে।এটা এতোদিন মেঘ ওড়না আড়ালে লুকিয়ে রাখতো।আর নাহলে লকেট টা ঘুড়িয়ে ঘাড়ের দিকে চুলের নিচে রেখে দিতো।

কাজ করতে করতে যখনই মেঘের খেয়াল হলো ওর লকেক টা বেড়িয়ে গেছে।তখনই ‘ও’ সোজা হয়ে দাড়িয়ে লকেট টা আবার আড়াল করতে নিলেই জেড়িন এসে খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো।জেড়িন এসে এভাবে হাত ধরায় মেঘ একটু হকচকিয়ে উঠলো।মেঘ ভ্রু কুচকে বললো

“এটা কোন ধরনের অসভ‍্যতা?তুই এভাবে আমার হাত ধরেছিস কেনো?”

জেড়িন দাত কটমট করে বললো

“অস‍ভ‍্যতার তো কিছুই দেখিসনি,এইবার দেখবি।হাত টা সরা,দেখিতো এভাবে চোড়ের মতো কি লুকাচ্ছিলি?”

মেঘ শক্ত কন্ঠে বললো

“যাই লুকাই না কেনো,সেটা আমি তোকে দেখাতে বাধ‍্য নই।আমার হাত টা ছাড় বলছি।”

বলেই মেঘ জেড়িনের হাতটা ওর হাতের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু সরাতে যাবে তার আগেই জেড়িন লেকেটের উপর থেকে মেঘের হাতটা সরিয়ে ফেললো।আর লকেটের উপর “A” লেখা দেখেই জেড়িন হিংস্র বাঘিনী হয়ে গেলো।মেঘ জেড়িন কে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেড়িন ওকে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে একটা ধাক্কা দিলো।এতো জোড়ে ধাক্কা দেওয়ায় মেঘ তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ভাঙা কাচের উপর পড়ে গেলো।পড়ে গিয়ে ওর মাথা গিয়ে একটা কেবিনেটের সাথে বারি খেলো।সাথে সাথে ওর মাথার এক অংশ কেটে ব্লিডিং হতে লাগলো।জেড়িন চিল্লিয়ে বললো

“নিলজ্জ মেয়ে একটা,তোর লজ্জা করে না অন‍্যের বরের দিকে নজর দিতে?তোর সাহস হয় কি করে আমার আবির কে রুম ডেটের অফার দেওয়ার?আজকে তো তোকে মেরেই ফেলবো।”

কথাটা বলেই জেড়িন ফ্লোর থেকে ভাঙা কাচের কাচের ফুলদানি উঠিয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে গেলো।এদিকে মেঘের মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।শরীরে ভাঙা চুড়া কাচের অংশ ঢুকে গেছে।ওর দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।তাও জেড়িন কে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘ উঠার চেষ্টা করতে লাগলো ঠিক তখনই জেড়িন এসে ওর পিঠের উপর ফুলদানি টা ছুড়ে মারলো।আর মেঘ আবার উপুর হয়ে পড়ে গেলো।ওর মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো।মেঘ আর যন্ত্রণা সহ‍্য করতে না পেরে হাউমাউ করে কেদে দিলো।

আবির দূরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাকা হাসছে।মেঘকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে ওর মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।সেদিনের থাপ্পর গুলোর প্রতিশোধ নিচ্ছে ‘ও’।জেড়িন এসে মেঘের বাহু দাড় করিয়ে বলে

“তোর এই ভালো মানুষির মুখোশ টা আমি সবার সামনে টেনে ছিড়ে ফেলবো।তুই যে কতোটা নোংরা একটা মেয়ে সেটা আজকে সবাই নিজের চোখে দেখবে।”

কথাটা বলেই জেড়িন মেঘের হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যেতে লাগলো।রুম থেকে বের হওয়ার আগে জেড়িন ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিজের হ‍্যান্ড ব‍্যাগটা সাথে করে নিয়ে নিলো।আবিরও জেড়িনদের পিছনে পিছনে যেতে লাগলো।মেঘ ঠিক করে দাড়াতেই পারছে না।ওর সারা শরীরে রক্তের দাগ।কপালের কাটা জায়গাটা থেকে রক্ত পড়ে পুরো চেহারাটা লাল হয়ে গেছে।জেড়িন মেঘকে টানতে টানতে সিড়ির কাছে নিয়ে এসে জোড়ে ধাক্কা দিলো।আবির ভাবতেই পারেনি জেড়িন এমন একটা কাজ করবে।’ও’ স্তব্দ হয়ে সেখানেই ধপ করে বসে পড়ে।

মেঘের আসতে দেড়ি হচ্ছে দেখে সাঈফা রুমের বাইরে এসেছিলো মেঘকে খোজার জন‍্য।ঠিক তখনই দেখলো মেঘের নিস্তেজ শরীর টা সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।সাঈফা জোড়ে আপি বলে একটা চিৎকার দিলো।ওর চিৎকারে পুরো বাড়ি সুদ্ধ মানুষ সব স্তব্দ হয়ে গেলো।সাঈফা চিৎকার টা দিয়েই জোড়ে দৌড় দিলো মেঘকে ধরার জন‍্য।কিন্তু ‘ও’ সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামার আগেই মেঘের রক্তাক্ত শরীর টা গিয়ে হিয়ানের পায়ের সামনে পড়লো।হিয়ান সিড়ি দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে উপরে উঠছিলো।মেঘকে এভাবে পড়তে দেখে ওর হাত থেকে ঠাস করে ফোনটা পড়ে যায়।আর ও বাকশূন্ন হয়ে হাটু ভেঙে মেঘের সামনে বসে পড়ে।

সাঈফা জোড়ে দৌড় দেওয়ার কারনে অর্ধেক সিড়ি আসতেই ব‍্যালেন্সলেস হয়ে নিজেও সিড়ি দিয়ে পড়ে যায় ।ওর মাথার পিছনে আঘাত লেগে করে রক্ত বের হতে থাকে।বাড়ির সব মানুষ স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ডের মধ‍্যে কি থেকে যে কি হয়ে গেলো কেউ বুঝতে পারলো না।সবাই শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না।

এদিকে সাঈফার চিৎকার শুনে আহান,মিহির,আহির,অভি,রিয়ান রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে আসে।ওরা সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে যাবে তার আগেই ওদের পা থেমে যায়।ওদের সামনে সাঈফা আর মেঘের রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে।দুজনের রক্তে পুরো ফ্লোর ভেষে যাচ্ছে।আহান মেঘ পরী বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে নিচে মেঘকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়।

#চলবে,,,,

বিঃদ্রঃ নেক্সট পর্বে ধামাকা আছে😜

1 COMMENT

  1. Mane Megh er jonno risky jeneo osobbho meyetake Megh er sathe ek barite ene rakhlo. Barabarir ekta limit ache. Megh me barbar physically torture korche. Aar or maa babai ba kemon Megh er koster chaite oder kache onnoke khoma korata besi joruri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here