#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#শেষ_পর্ব
হসপিটালের করিডোরে থম মেরে বসে আছে সবাই।চারপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।একটু আগে হিয়ানের মুখ থেকে সব সত্যিটা জেনে সবাই যেনো কথা বলার ভাষা হরিয়ে ফেলেছে।আহান এতোক্ষন দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে হিয়ানের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।ওর কথা শেষ হতেই আহান কোনো কিছু না বলে হিয়ানের সামনে গিয়ে ওর কলার ধরে নাকের উপর দুটো ঘুসি দিলো।এতো জোড়ে ঘুষি দেওয়ায় হিয়ানের নাক থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।আহানের এমন কান্ডে সবাই “থ” হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।হিয়ান নাকের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে।আহান চিল্লিয়ে বললো
“তুই সবটা জেনেও আমার থেকে হাইড করেছিস কেনো?এতোকিছু হয়ে গেছে আর তুই কাউকে কিচ্ছু বলার প্রয়োজনই মনে করিসনি?”
হিয়ান অসহায় কন্ঠে বললো
“মেঘ আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়েছিলো এই সত্যিটা আমি যাতে কাউকে না বলি।আর তাছাড়া আমি যখন সবটা জানতে পেরেছিলাম তখন তো তুই ছিলিই না।”
হিয়ানের কথার অ্যান্সারে আহান কি বলবে সেটা ওর জানা নেই।’ও’ পিছাতে পিছাতে দেয়াদের কাছে গিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।এই প্রথমবার নিজের করা কোনো কাজের জন্যে ওর আফসোস হচ্ছে।কেনো সেদিন সবটা না জেনেই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলো?কেনো একটা বার মেঘের কথা গুলোর সত্যতা যাছাই করার চেষ্টা করলো না?যদি সেদিন মেঘের ওই কথা গুলো বিশ্বাস না করতো তাহলে হয়তো আজকের দিনটা অন্যরকম হতো।এসব ভেবে আহানের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়তে লাগলো।
মিহির এসে হিয়ানের সামনে দাড়িয়ে ভাঙা গলায় বললো
“আহান ব্রো না থাকলেও আমরা তো ছিলাম ভাইয়া।তুমি আমাদের কেনো সবটা বললে না।”
হিয়ান কিছু বললো না চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।এখন সবার যা অবস্থা তাতে ‘ও’ যাই বলুক ওর কথা কেউই বুঝতে পারবে না।
___________
তখন আহানের লোকেরা ওকে ফোন করে মেঘের ব্রেন টিউমারের খবরটা জানায়।খবরটা শুনে আহান যখন মেঘের কাছে ছুটে গিয়েছিলো তখনই মেঘ অঙ্গান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।মেঘকে আচৎমকা অঙ্গান হয়ে পড়ে যেতে দেখে আহান নিজেকে আর সামলাতে পারেনি।মেঘকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিয়েছিলো।আহানকে ওভাবে কাদতে দেখে ওখানে উপস্থিত সবাই ভিষন অবাক হয়েছিলেন।ওনারা কেউ এটাই বুঝতে পারছিলেন না মেঘ সামান্য অঙ্গান হয়ে যাওয়ায় আহান পাগলের মতো এভাবে কাদছে কেনো।সবাই ওদের কাছে ছুটে এসে আহানকে বারবার জিঙ্গেস করেছিলো কি হয়েছে ‘ও’ এভাবে কাদছে কেনো?আহান কারো প্রশ্নের কোনো অ্যান্সার না দিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছিলো।এমন সময় হিয়ান দ্রুত আহানের কাছে এসে বলেছিলো
“আহান এখন কান্নাকাটি করার সময় না।প্লিজ ছাড় মেঘকে।আমার এখন ওকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।নাহলে বড় কোনো সমস্যা হয়ে যেতে পারে।”
হিয়ান তখন বুঝতে পারেনি আহান মেঘের ব্রেন টিউমারের ব্যাপ্যারটা জেনে গেছে।তাই ‘ও’ আহানের কাছে থেকে মেঘকে ছাড়িয়ে এনে নিজে কোলে নিতে চাইলো।কিন্তু ওর কোলে নেওয়ার আগেই আহান মেঘকে পাজ কোলে তুলে দ্রুত পায়ে গাড়ির দিকে যেতে লাগলো।হিয়ানও ওর পিছনে পিছনে দৌড়ে যেতে লাগলো।আর বাকিরা সবাই ওদের যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
গাড়ির কাছে এসে আহান মেঘকে নিয়ে পিছনের ছিটে বসে পড়লো।আর হিয়ান ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ষ্টার্ড দিলো।পুরোটা রাস্তা আহান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুধু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে গেছে।আহানের কান্না দেখে হিয়ানের চোখটাও বারবার ঝাপসা হয়ে আসছিলো।যতোবার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছিলো ততোবার হিয়ান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুচ্ছিলো আর নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেছিলো।
____
আহান আর হিয়ান মেঘকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর আজম রহমান আর আহাদ খান সব মেহমানদের কাছে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে সবাইকে বিদায় দিয়ে ওনারাও হসপিটালের উদ্দ্যেশ্য বেড়িয়ে পড়েন।
এখানে এসে দেখেন হিয়ান আর আহান দুজন দুপাশের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে।মেঘকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।আপাততো এই হসপিটালের একজন নিউরোলজিস্ট মেঘকে চেকআপ করছে।এতোদিন যিনি মেঘের ট্রিটমেন্ট করেছে ওনাকে হিয়ান ফোন করেছে।উনি অন দ্যা ওয়ে আছে,খুব তাড়াতাড়ি হয়তো এখানে চলে আসবে।
আহির মিহির এসে মেঘের কি হয়েছে সেটা জানতে চাইলে হিয়ান আর আহান দুজনই চুপ করে রইলো।পরে সবাই মিলে বারবার একই প্রশ্ন করায় হিয়ান বিরক্ত হয়ে সবাইকে সবটা বলে দিলো।
___________________________
বতর্মান……
ডাক্তার মেঘের কেবিন থেকে বের হয়ে এসে হিয়ানের সামনে দাড়ালো।ডাক্তার কে দেখে সবাই একটু নড়েচরে উঠলো।উনি হিয়ান কে উদ্দ্যেশ্য করে রাগি কন্ঠে বললো
“মিঃ হিয়ান আমি তো আপনাকে বলেছিলাম সার্জারির যাষ্ট কয়েকটা দিন বাকি আছে এর মধ্যে যাতে ‘ও’ কোনো রকম মেন্টাল ষ্ট্রেস না নেয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।তারপরেও কেনো ওকে মেন্টাল ষ্ট্রেস নিতে দিলেন,আমাকে দয়াকরে একটু বলবেন প্লিজ?”
ডাক্তারের কথা শুনে হিয়ান কোনা চোখে একবার আহানের দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে নিলো।মিড়া রহমান এসে ডাক্তারের সামনে দাড়িয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“ডাক্তার রিপা আপনি এতোদিন আমার মেয়েটার ট্রিটমেন্ট করেছেন অথচ একটা বারের জন্যও আমাকে ওর অসুখের কথাটা বলেননি?”
ডাক্তার রিপার সাথে মিড়া রহমান আর মোনা খানের আগে থেকেই পরিচিয় আছে।ওনারা একই প্রোফেশনে যেহেতু আছে তাই কর্মশুএে মাজে মাঝেই ওনাদর দেখা হয়।ডাক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“মিসেস রহমান প্রথমে আমি জানতাম না মেঘনা আপনার মেয়ে।পরে যখন ওর সব কাগজ পএ দেখে জানতে পেরে ছিলাম তখন ‘ও’ আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলো যাতে আপনাদের কিছু না বলি ।”
ডাক্তারের কথা শুনে মিড়া রহমান মাথা চেপে ধরে দাড়িয়ে রইলেন।ওনার বাচ্চা মেয়েটা দুইটা বছর ধরে এতো যন্ত্রণা সহ্য করে আসছে অথচ ওনাদের কিছু জানতেই দেয়নি?আর ওনারাও ভুল বুঝে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।কেউ একটবারও সত্যিটা জানার চেষ্টা করেনি।এসব ভেবে মিড়া রহমান ঢুকরে কেদে উঠলো।
ডাক্তার রিপা এসে মিড়া রহমানের কাধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো
“দেখুন আমি আপনাদের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি।প্লিজ সামলান নিজেদের।”
আহাদ খান এসে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন
“ডাক্তার আমার মেয়ের এখন কি অবস্থা?”
ডাক্তার রিপা লম্বা একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বললেন
“সার্জারিটা আজকেই করতে হবে মিঃ খান।যদিও আমরা আর কয়েকটা দিন পর সার্জারিটা করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে গেছে আজকের মধ্যে সার্জারি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
মোনা খান চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন
“ওকে ডাক্তার তাহলে তো আর অপেক্ষা করে লাভ নেই।এক্ষুনি ওটি রেডি করতে বলি?”
মোনা খানের কথা শুনে ডাক্তার ঘাড় নেড়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো
“হ্যা রেডি করতে বলুন।আর আপানারাও সব পরিস্থিতির জন্যে নিজেদের মানষিক ভাবে প্রস্তুত করুন।”
আজম রহমান একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
“সব পরিস্থিতির জন্যে নিজের প্রস্তুত করবো মানে?”
ডাক্তার বললেন
“দেখুন আমি আপনাদের মিথ্যা কোনো আশ্বাস দিতে চাই না।মেঘনার কেসটা আগে থেকেই অনেক কপ্লিকেটেড ছিলো।আমি আগেই ওদের বলেছিলাম সার্জরিটা করালেও হয়তো মেঘনাকে বাচানো যাবে না।তার পরেও হয়তো ভাগ্যে ক্রমে বেচে গেলেও যেতে পারতো।তবে এখন যেভাবে ব্রেনে প্রসার পড়েছে তাতে বাচার কোনো চান্স নেই বললেই চলে।তবে আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।”
কথাটা বলে ডাক্তার চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই আহির এসে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললো
“আন্টি আমি একটা বার আমার বোনের সাথে দেখা করতে পারি প্লিজ?”
ডাক্তার সোজাসাপ্টা ভাবেই বললেন
“না এখন পেসেন্টের কেবিনে কাউকে এলাউ করতে পারবো না।কারন আপনাদের কথা শুনে যদি ‘ও’ হাইপার হয়ে যায় তাহলে ওর ষ্ট্রোক পযর্ন্ত হতে পারে।”
কথাটা বলে ডাক্তার আবার মেঘের কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেলেন।
_______________________
রাত:11:00
ডাক্তারের কাছে অনেক রিকোয়েস্ট করে আহির আর মিহির মেঘের কেবিনে যাওয়ার পারমিশন পেয়েছে।ডাক্তার প্রথমে না করলেও ওদের অনুনয় বিনয় দেখে ওনার দয়া হলো।তবে কড়া ভাবে বলে দিয়েছেন যাতে ওরা এমন কোনো কথা না বলে যেটা শুনলে মেঘ হাইপার হয়ে যায়।আর এটাও বলে দিয়েছেন ওদের কথা বলা শেষ হলেই মেঘকে ওনারা ওটিতে সার্জারির জন্যে নিয়ে যাবেন।
আহির আর মিহির আস্তে করে কেবিনের দরজা খুলে ধীর পায়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।তারপর দুজন গিয়ে মেঘের বেডের দুপাশে রাখা টুলের উপরে বসে পড়লো।পাশেই কারো অস্তিত্ব অনুভব করে মেঘ পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো।তাকিয়েই আহির আর মিহিরকে পাশে বসে থাকতে দেখে মুচকি একটা হাসি দিলো।মিহির এক দৃষ্টিতে মেঘের হাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো।কতোদিন পর এই হাসি মুখটা আবার দেখতে পেলো।তবে এমন একটা পরিস্থিতিতেও মেয়েটা কিভাবে হাসছে ‘ও’ বুঝতেই পারছে না।মেঘ হাসি মুখেই আস্তে করে বললো
“ডাক্তার তোমাদের ভিতরে আসার পারমিশন দিলো?”
আহির ঠোটের কোনে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে মজার ছলে বললো
“নাহ প্রথমে তো দিতেই চাইছিলো না।পরে রিভলবার বের করে মাথায় ঠেকিয়ে হুমকি দিলাম।তারপর বাধ্য হয়ে ভিতরে আসার পারমিশন দিলো।”
আহিরের কথা শুনে মেঘ আবারও ঠোট প্রসারিতো করে হাসলো।তারপর একহাত উঠিয়ে আহিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“আমার হাতটা একটু ধরবে ভাইয়া?”
মেঘের কথা শুনে আহির অশ্রুসিক্ত চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা হাতে মেঘের হাতের উপর হাত রেখে ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।’ও’ কিছুতেই এই মুহূর্তে মেঘের সামনে বসে কাদতে চায় না।মেঘ হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখে আরেক মিহিরের দিকে বাড়িয়ে দিলো।মেঘ কিছু বলার আগেই মিহির ওর হাতের উপর হাত রাখলো।মেঘ মিহিরের হাতটাও শক্ত করে চেপে ধরে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো
“এই দুটো বছর তোমাদের সবাইকে ভীষন মিস করেছি।তোমাদের পিক দেখে কাদতে কাদতে যে কতো রাত পার করেছি তার হিসেব নেই।জানো,যখন দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছি তখন বকা দিয়ে খাবার খাওয়ানোর মতো কেউ ছিলো না।যখন মাথা যন্ত্রণায় পুরো রাত একা ফ্লাটে ছটফট করেছি তখন আমাকে দেখার মতো কেউ ছিলো না।ওই সময় ইচ্ছে করতো এক দৌড়ে তোমাদের কাছে চলে গিয়ে সবটা বলে দেই।কিন্তু পরক্ষনেই আবার মনে হতো তোমরা যদি সত্যিটা জানতে পারো তাহলে তোমরা আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে।তাই এসব ভেবে নিজেকে আবার সামলে নিতাম।আচ্ছা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো?”
মেঘের কথা শুনে আহির আর মিহিরের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়ছে।ওরা ঠোট কামরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।মিহির কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বললো
“কিভাবে তোকে ক্ষমা করবো বলতো?তুইতো কোনো অন্যায়ই করিসনি।অন্যায় তো আমরা করেছি।সত্যিটা না জেনে তোকে ব্লেম করেছি,বকা দিয়েছি।ইনফ্যাক্ট তোর গায়ে অবদি হাত তুলেছি।আচ্ছা তুই আমাদের ক্ষমা করতে পেরেছিস?”
মিহিরের কথা শুনে মেঘ ম্লানো হেসে বললো
“তোমরা কোনো অন্যায় করোনি।তোমরা যেটাই করেছো আমার কথা শুনে করেছো।আমার তোমাদের কারো উপরে কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই।”
হুট করেই আহির মেঘের হাত ছেড়ে দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“কেনো আমাদের আগেই সবটা বলে দিলি না বনু?কেনো শুধু শুধু এতোগুলো দিন নিজেকে এতোটা কষ্ট দিলি?তোর কি আমাদের এতোই সার্থপর মনে হয়েছিলো যে তুই আমাদের থেকে দূরে থাকলেই আমরা সবাই ভালো থাকবো?তোকে ছেড়ে আমরাও তো ভালো ছিলাম না।খুব কষ্ট হতো তোকে ছাড়া।কেনো আমাদের একটা বারের জন্যে সব সত্যিটা বলে দিলি না?”
কথাটা বলতে বলতে আহির শব্দ করে কেদে দিলো।মেঘ এক হাত দিয়ে আহিরকে জড়িয়ে ধরলো।ওর চোখ দিয়েও পানি গরিয়ে পড়ছে।’ও’ ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো
“বিশ্বাস কর ভাইয়া সবাইকে সবটা বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারিনি।অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু সবটা জানার পর তোদের কি অবস্থা হবে সেটা ভেবে আর কিছু বলার সাহস হয়ে ওঠেনি।”
আহির আর মেঘ দুজনই শব্দ করে কান্না করছে।মিহির মেঘের হাতটা ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিশব্দে কাদছে।হঠাৎ একজন নার্স কেবিনে ঢুকে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো
স্যার আপনারা কি করছেন এসব?প্লিজ এখানে এভাবে কান্নাকাটি করবেন না।আপনারা যদি এভাবে কান্নাকাটি করেন তাহলে ম্যামের সমস্যা হতে পারে।”
নার্সের কথা শুনে আহির মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে দ্রুত কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।মিহির চোখের পানি মুছে মেঘের দিকে তাকিয়ে জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো
“আমি এখন আসি!একদম ভয় পাস না,কিচ্ছু হবে না।”
কথাটা বলে মিহির যেতে নিবে তখনই মেঘ খপ করে মিহিরের হাত ধরে ফেললো।তারপর ধরা গলায় বললো
“ভাইয়া আমাকে একটু আদর করে দিবি প্লিজ?ওটি থেকে আর যদি কখনো ফিরে আসতে না পারি তাহলে তো আর কখনো তোদের কাছে ফিরে আসতে পারবো না।শেষ বারের মতো আমাকে একটু জড়িয়ে ধর না প্লিজ। আমি,,,,,”
মেঘ কথাটা শেষ করার আগেই মিহির ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললো
“কিচ্ছু হবে না তোর।তুই আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারবি না।তুই আমাকে আর আহির কে অনেক জ্বালিয়েছিস।একবার সুস্থ হয়ে ফিরে আয় তারপর তোর থেকে সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো।”
_____________________________
ষ্ট্রেচারে করে মেঘকে কেবিন থেকে বের কথা হলো।কেবিনের বাইরে সবাই দাড়িয়ে আছে।মেঘ এক নজর ভালো করে সবার দিকে তাকালো।হয়তো এটাই শেষ বারের মতো কাছের মানুষ গুলোকে দেখছে।আর কখনো হয়তো এদের দেখতে পাবে না।এখানে সবাই থাকলেও মেঘ আহান কে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।মেঘ বারবার আশেপাশে তাকিয়ে আহানকে খুজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও আহানের ছায়াটাও দেখতে পেলো না।ওকে ওটিতে ঢোকানো হবে ঠিক সেই মুহূর্তে আহান কোথা থেকে দৌড়ে এসে মেঘের এক হাত আকড়ে ধরলো।হঠাৎ এসে এভাবে হাত ধরায় মেঘ হকচকিয়ে উঠে সামনে তাকালো।দেখলো আহান ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে দাড়িয়ে আছে।ওর মাথায় একটা রুমাল টুপির মতো করে বাধা।মেঘ ধীর কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“কোথায় গিয়েছিলেন?”
আহান মেঘের দিকে ঝুকে ওর দু গালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বললো
“আমার বউয়ের জন্যে নামাজ পড়ে দোয়া করতে গিয়েছিলাম।যাতে সার্জারির সময় আমার বউয়ের একটুও কষ্ট না হয়।”
মেঘ আহানের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।’ও’ ভাবছে যদি সময় টা এখানেই থমকে যেতো তাহলে কতো ভালোই না হতো।তাহলে এভাবে যুগের পর যুগ নিজের ভালোবাসার মানুষটার ঠোটের কোনের অমায়িক হাসিটা দেখতে পেতো।কথাটা ভাবতে ভাবতে আবার মেঘের চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।আহান আলতো হাতে মেঘের চোখের পানিটুকু মুছে দিয়ে ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো
“কাদছো কেনো মেঘ পরী?দেখে নিও তোমার কিচ্ছু হবে না।একদম ভয় পেও না আমি আছি তো।আল্লাহ যেনো আমার আয়ু দিয়ে তোমাকে সহি সালামতো ফিরিয়ে নিয়ে আসে।”
কথাটা বলে আহান মেঘের হাতের উল্টো পিঠে ঠোট ছোয়ালো।মেঘ ভাঙা গলায় বললো
“আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন প্লিজ?”
আহান আস্তে করে বললো
“রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।”
মেঘ অনুরোধের স্বরে বললো
“সিগারেট খাওয়া আর ড্রিংকস করা ছেড়ে দিবেন প্লিজ?আমাকে প্রমিস করুন আমি যদি আর কখনো ফিরে নাও আসি তাহলেও আর ওইসব বাজে জিনিসে হাত লাগাবেন না।”
আহান আবারও মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“সবকিছু ছেড়ে দিবো শুধু তুমি আমার কাছে ফিরে এসো প্লিজ।তুমি কাছে থাকলে আমার অন্য কোনো নেশার প্রয়োজন হবে না।”
কথাটা বলে আহান মেঘের হাত ছেড়ে দিলো।ওয়ার্ড বয়েরা ষ্ট্রেচার টা ওটির ভিতরে নিয়ে ওটির দরজা বন্ধ করে করে দিলো।আহান হাটু গেরে ওটির সামনেই বসে পড়লো।তারপর মাথার রুমালটা হাত দিয়ে টেনে খুলে ফেলে হু হু করে কেদে দিলো।এতোক্ষন মেঘের সামনে হাসি মুখে কথা বললেও ভিতরে ভিতরে ‘ও’ শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।হিয়ান দৌড়ে এসে আহানকে টেনে তুলতে চাইলো কিন্তু ব্যার্থ হয়ে নিজেই ওর পাশে বসে পড়লো।আহান হিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো
“ওর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো ইয়ার।আমি ওকে ছাড়া বেচে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।”
আশে পাশের সব মানুষ আহানের উন্মাদের মতো কান্না করা দেখছে।ওর চিৎকার শুনে সবার গায়ে কাটা দিচ্ছে।হিয়ান,অভি,রিয়ান মিলে আহানকে সামলানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু যতো সময় যাচ্ছে ততো আহানের পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে।
_____________________________
দুই মাস পর,,,,,,,
হাতে কফির মগ নিয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে আহান।নিজেকে আজ একদম ফুরফুরে মনে হচ্ছে।এতো ঝড় ঝাপটার পর অবশেষে নিজের কাঙ্খিত জিনিসটা পেয়েই গেলো। ‘ও’ কফি খাচ্ছে আর বাড়ির সামনের লাইটিংয়ের ডেকারেশন গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে।হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।তারপর ভ্রু কুচকে বললো
“মেঘ পরী তোমরা মেয়েরা সব কিছুতে এতো টাইম লাগাও কেনো বলোতো?পার্লারে মেকআপ করতে গেলে সেখানে চার ঘন্টা লাগাবে।আর সেই মেকআপ উঠাতে ওয়াশরুমে গেলে আট ঘন্টা লাগাবে অদ্ভুত।তোমার অপেক্ষা করতে করতে কফি আর আমি দুজনই ঠান্ডা হয়ে গেলাম।কিন্তু তোমার দেখা পেলাম না।”
মেঘ হেসে দিয়ে বললো
“অপেক্ষার ফল সব সময় মিষ্টি হয়।”
আহান বিরক্তির স্বরে বললো
“অপেক্ষা করতে করতে এখন এই অপেক্ষা শব্দটার উপর ঘৃনা হয়ে গেছে।আর অপেক্ষা করতে বলো না তো।”
আহানের কথায় আবারও মেঘ হেসে দিলো।আহান কোনা চোখে তাকিয়ে তার প্রিয়তমার মনোমুগ্ধকর হাসি দেখতে লাগলো।
মেঘের সার্জারিটা বেশ ভালো ভাবেই সাকসেসফুল হয়েছে।ওর পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হতে প্রায় দেড় মাস সময় লেগেছে।মেঘ সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের সবাই মিলে ডিসিশন নিয়ে মেঘ আর আহানের ধুমধাম করে আবার বিয়ে দিয়েছে।
____
আহান মেঘের হাসি মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর দিকে একপা একপা করে এগিয়ে এসে মেঘের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“সো মিসেস আহান খান,সারা জিবনের জন্যে আপনাকে আগলে রাখার সুযোগ আমাকে দিবেন?আমাকে আপনার ঠোটের কোনের মিষ্টি হাসির কারন হতে দিবেন?আমার সবকিছু উজাড় করে আপনাকে ভালোবাসার অনুমতি দিবেন?”
আহানের কথা শুনে মেঘ লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে মাথাটা নিচু করে আহানের হাতের উপর হাত রাখলো।আহান আলতো হেসে মেঘের হাতের উল্টোপিঠে ঠোট ছুইয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো।
এতো অপেক্ষার পর অবশেষে মেঘ আর আহানের ভালোবাসার পূর্নতা পেলো।এই অন্ধকার রাতটা শাক্ষী হলো আরেক জোড়া ভালোবাসার জুটির মিলনের।
সমাপ্ত,,,,,
বিঃদ্রঃ পুরো গল্পটা পড়ার পর সবার মনের কেমন অনুভূতি হলো সেটা জানিয়ে একটা গঠন মূলক কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।🥰🥰
Happy ending howate valo laglo
Darun hoise golpota🥰🥰🥰