#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_15
চারপাশ থেকে মাগরিবের আযানের ধ্বনি ভেষে আসছে। সূর্য অস্ত গিয়েছে অনেকক্ষন,,, কিন্তু এখনও সমস্ত পশ্চিম আকাশ জুড়ে সূর্যের লালিমা বিচরন করছে। চারপাশের আবছা অন্ধকার আর আকাশে বিস্তির্ণ হয়ে থাকা লালিমা একসাথে মিশে পরিবেশটাকে অসম্ভব মোহনীয় করে তুলেছে। সারাদিন দৌড়,, ঝাপ ,,উড়াউড়ি করে পাখিরা নিজেদের নিড়ে ফিরছে।কোথাও কোথাও ঝিঝি পোকারা আর ব্যঙেরা নিজেদের বেসুরো কন্ঠে গান গাইছে।
সাড়ারুমে পিন পতন নিড়বতা,,, রুমের এক কোনার ফ্লোরে জায়-নামাজ বিছিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করছে মেঘ। নামাজ শেষে জায়-নামাজ টা ভাজ করে কাবার্ডে তুলে রেখে বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়লো। তারপর রুমটার চারপাশে ভালো করে চোখ বুলালো। সাড়া ফ্লোর চকলেটের খোসা আর ছেড়া কাগজে ভর্তি। খাট,,, সোফা,,,রিডিং টেবিল,, ড্রেসিং টেবিল প্রত্যেকটার উপরে জামা কাপর স্তুপ করে রাখা। জুতোর র্যাকটা উল্টে পড়ে আছে,,, কয়েক জোড়া জুতো এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। রুমটা দেখে মনে হচ্ছে কয়েকবছর ধরে রুমটা পরিষ্কার করনো হয়নি। মেঘ ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এই মূহুর্তে ও নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। কি দরকার ছিলো সেদিন মিহিরের পিছনে ওভাবে দৌড়ানোর।না ও সেদিন ওভাবে মিহিরের পিছনে দৌড়াতো, না ওর পা কাটতো,, আর না ওকে এভাবে নিজের বাড়িতে নিজেরই রুমে জেলের কয়েদির মতো বন্ধি হয়ে থাকতে হতো। এখন মেঘ যদি একবার হাতের কাছে মিহিরকে পেতো তাহলে পানি ছাড়া গিলে খেয়ে ফেলতো। কারন আজ প্রায় চারদিন ধরে মেঘ কে মেঘেরই রুমে মিহির বন্ধ করে রেখেছে। অবশ্য এটা মিহির নিজের ইচ্ছায় করেনি আহানের আদেশে করেছে।
সেদিন রেষ্টুরেন্ট থেকে আহান সরাসরি মেঘকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর মেঘকে এই রুমে রেখে রুমের বাইর থেকে লক করে দেয় আর বলে
এটা মেঘের সারাক্ষন দৌড়াদৌড়ি আর উল্টোপাল্টা কাজ করার পানিশমেন্ট। যতোদিন না ওর পায়ে ব্যাথ্যা ঠিক হচ্ছে ততোদিন মেঘ এই রুম থেকে বের হতে পারবেনা। আর কোনো সার্ভেন্ট বা বাড়ির কেউ এইরুমেও আসতে পারবে না। এই চারদিনে মিহির শুধু এই রুমে প্রতি বেলায় মেঘের খাবার নিয়ে এসে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে আবার চলে গেছে। মেঘ অনেকবার মিহির কে বলেছিলো দরজাটা খুলে রাখতে ও রুম থেকে কোথাও বেরোবে না। কিন্তু মিহির ওর কোনো কথাই শোনেনি। আর মিরা রহমান আজম রহমানও মেঘকে একবারও দেখতে আসেননি। সেটা নিয়ে মেঘ একটুও আশ্চর্য হয়নি কারন ও জানে সবাই আহানকে একটু বেশিই ভালোবাসে কখনো কেউ ওর কথায় অমত পোষন করেনা। মেঘের পায়ের ব্যাথ্যাটা এখন একদমই ঠিক হয়ে গেছে।শুধু হালকা কাটা দাগটা রয়ে গেছে। ব্যাথ্যা ঠিক হবেইনা বা কেনো মিহির ওকে জোড় করে প্রতি বেলায় একগাদা করে ঔষধ গিলিয়েছে।
মেঘ চোখেমুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে কিছুক্ষন বিছানার এদিক ওদিক গড়াগড়ি খেলো। কি করলে সময় কাটবে বুঝতে পাড়ছে না। এতোদিন সারাদিন বসে বসে শুধু ল্যাপটপে মুভি দেখেছে আর চকলেট খেয়েছে আর পড়ে পড়ে খুমিয়েছে। অতিরিক্ত ঘুমাতে ঘুমাতে এখন আর ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। মেঘ অনেকক্ষন ভেবে একটা আইডিয়া বেড় করলো মিহিরকে জ্বালানোর জন্য। ও শোয়া থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গেলো তারপর ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে একটা হেয়ার ওয়েলের বোতল হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো
“মিহিরের বাচ্চা তুই জোড় করে আমাকে হেয়ার ওয়েল কিনে দিসনা! আজকে তোকে আমি এই ওয়েলের বোতলে চুবিয়ে মারবো।”
কথাটা বলে মেঘ দরজার সামনে গিয়ে সেখানের ফ্লোরে বোতলের প্রায় অর্ধেক তেল ঢেলে দিলো। তারপর রুমের লাইট টা অফ করে জোড়ে একটা আম্মুগো বলে চিৎকার দিলো।চিৎকার দেওয়ার কিছু সেকেন্ড পরই মেঘ দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো। আর দরজা খোলার সাথে সাথে ধপাস করে একটা শব্দ আসলো সাথে কয়েকটা কন্ঠস্বরের চিৎকার মেঘের কানে ভেষে এলো। মেঘ বিরবির করে বললো
“এটা কি হলো? এখানে তো ওই বাদরটার একার পড়ার কথা ছিলো! কিন্তু ভয়েস শুনে তো মনে হচ্ছে এখানে একটা না,,একাধিক বাদর পড়েছে।”
মেঘ তড়িঘড়ি করে গিয়ে রুমের লাইট টা অন করে সামনে তাকালো। তাকিয়ে যা দেখলো তাতে ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো। কারন ওর সামনে সাড়িকা সাঈফা আর আহির উল্টে পড়ে আছে। আর ওদের থেকে কছুটা দূরে আহান আর মিহির হতবম্ভ হয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা আহীর, সাড়িকা, সাঈফার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ কিছুক্ষন অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে হা হা করে হেসে করে দিলো। মেঘের হাসি শুনে ওরা সবাই মেঘের দিকে তাকালো। আর এটাও বুঝতে পারলো এটা মেঘের কাজ।
কিছুক্ষন আগে মিরা রহমান , আজম রহমান, মোনা খান, আহাদ খান, মেঘের মামা মামিরা সহ সবাই শপিং করতে গেছে। শুধু আহান, আহীর, মিহির আর সাড়িকা সাঈফা রয়ে গেছে কারন ওরা মেঘকে সাথে নিয়ে যাবে সেইজন্য। একটু আগে আহান, আহির, সাড়িকা, সাঈফা এসে মেঘদের বাসার কলিংবেল বাজায় একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মিহির রেডি হয়ে সিড়ি দিয়ে নামছিলো আহানদের আসতে দেখে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আহানকে গিয়ে হাগ করে। তখনই ওরা মেঘের চিৎকার শুনতে পায়। চিৎকার শোনার সাথে সাথে ওরা সবাই মেঘের রুমের দিকে দৌড় দেয়। আহীর, সাড়িকা, সাঈফা আগে আগে দৌড়ে রুমে ঢুকতেই ধপাস করে পড়ে গিয়ে ওদের মুখ থেকে আপনা আপনি চিৎকার বেড়িয়ে আসে। ওদের পড়ার শব্দ আর চিৎকার শুনে আহান আর মিহির দৌড় থামিয়ে দাড়িয়ে পড়ে।
মেঘকে এভাবে হাসতে দেখে সাঈফা ঝাড়ি মেরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে
“আমরা পড়ে গেছি আর তুমি হাসছো? তুমি আমাদের বোন নাকি শএু?”
সাঈফার কথা মনেহয় মেঘের কান পযর্ন্ত পৌছালো না। সে এখনো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মিহির আর আহান মুখ টিপে টিপে হাসছে। আহীর রাগি গলায় বললো
“হাসবে না তো কি করবে? এটা তো ওরই কাজ।”
কথাটা বলতে বলতে আহীর উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু তৈলে শ্লিপ খেয়ে আবারও বসে পড়লো। বিরক্তি নিয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“ভাই প্লিজ আমাকে এখান থেকে তোল।”
মিহির কোনো রকম পা টিপে টিপে এগিয়ে এসে আহীরকে দাড় করালো আর তখনি সাঈফা মিহিরকে দিলো এক ধাক্কা। সাথে সাথে মিহির আহীরকে নিয়ে আবার তেলের উপর মুখ থুবরে পড়লো। এটা দেখে মেঘ এবার হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়লো। আহানও আর নিজের হাসি চেপে রাখতে না পেরে ফিক করে হেসে দিলো। মিহির চেচিয়ে সাঈফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ইউ ইডিয়েট,, এটা কি করলি? থাক্কা কেনো দিলি? মিনিম্যাম কমনসেন্স নেই তোর? আমার পুরো ড্রেসটা নোংরা হয়ে গেলো? এবার আমি বাইরে কীভাবে যাবো?”
মিহিরের কথা শেষ হতেই সাড়িকা ঝাঝালো গলায় বললো
“যা করেছে বেশ করেছে। তুমি আমাদের না তুলে আগে আহীর ভাইয়াকে কেনো তুলতে গেছিলে। যানোনা? সবসময় লেডিস ফাষ্ট হয়। আর বাইরে কি তুমি একলা যাবে নাকি আমরা যাবোনা?”
আহীর উপুর হওয়া থেকে বসতে বসতে বললো
“আমার কোমর শেষ!(তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো)ব্রো প্লিজ আমাকে এখান থেকে তোলো”
আহান হাসতে হাসতে বললো
“নো ওয়ে,,, আমি তোকে তুলতে আসি আর তোরা আমাকেও ফেলে দিস। নিজের ব্যাবস্থা নিজে কর ভাই।”
“তোমার মতো ভাই থাকার চেয়ে হাজারটা শএু থাকা ভালো। ”
আহীর কথাটা বলতে বলতে কোনো রকম করে দেয়ালে ভর দিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর মিহিরকে টেনে তুলে সাড়িকা সাঈফাকেও তুললো। মেঘ এখনো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাঈফা কাদো কাদো গলায় বললো
“আপ্পি আমরা পড়ে গেছি আর তুমি হাসছো? তুমি এটা আমাদের সাথে কেনো করলে? ড্রেসটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে এবার আমরা কি করে শপিং করতে যাবো।”
মেঘ কোনো রকম হাসি থামিয়ে মিহিরের দিকে ইশারা করে বললো
“আমি তো এই গাধা টাকে ফেলতে চেয়ে ছিলাম। আমি কি জানতাম নাকি এই গাধাটার জায়গায় তোরা পড়ে যাবি।”
মেঘ গিয়ে ওর কাবার্ড খুলে দুইটা হোয়াইট টপস আর ব্লাক জিন্স এনে সাঈফার হাতে দিয়ে বললো
“ফ্রেশ হয়ে এগুলো পড়ে নে। আশাকরি ফিট হয়ে যাবে।”
সাড়িকা সাঈফা মুখ ফুলিয়ে ড্রেস গুলো হাতে নিয়ে মিরা রহমানের রুমে চলে গেলো। মিহির মেঘের দিকে তাকিয়ে রাগি স্বরে বললো
” তোকে আমি পরে দেখে নেবো।”
মেঘ ভেংচি কেটে বললো
“পরে কেনো দেখবি? এখন কি পর্দা দিয়েছিস? ”
মিহির কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো।ওর পিছনে পিছনে আহিরও চলে গেলো। ওরা যেতেই আহান হাত দুটো প্যান্টের পকেটে গুজে মেঘের রুমে ঢুকতে ঢুকতে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আরে বাহ,, রুমটাকে মাএ চারদিনে পুরো গোয়াল ঘড় বানিয়ে ফেলেছো। দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এটা মানুষের রুম নাকি গরুদের।অবশ্য গরুরাও এর থেকে ভালো জায়গায় থাকে।”
বলতে বলতে আহান রুমে ঢুকে খাটের উপড়ে বসে পড়লো। মেঘ রাগে দাত কটমট করে বললো
“আপনার সাহস তো কম না। একে বিনা অনুমোতিতে আমার রুমে প্রবেশ করেছেন তার উপর আবার আমারই রুমে ঢুকে আমাকেই গরু সাথে তুলনা করছেন?”
আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
“এই রুমে ঢোকার জন্য আমি করোর পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। বরং এই রুমে কাউকে ঢুকতে হলে সবার আগে আমার পারমিশন নিয়ে তারপর ঢুকতে হয়।সেটা যেই হোক না কেনো।আর বাকি রইলো তোমাকে গরুর সাথে তুলনা করার বিষয় টা। তোমাকে যদি গরুর সাথে তুলনা করি তাহলে গরুকেও অপমান করতে হবে।”
আহানের কথা শুনে মেঘের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“আপনি এক্ষুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা। ”
“আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে আমিও রুম থেকে বেরোবো না দেখি তুমি কি করতে পারো।”
মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“I said get out of my room…”
আহান একটুও নড়লো না । তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান কে এভাবে ঠায় বসে থাকতে দেখে মেঘ রেগে সো-পিজের র্যাক থেকে একটা কাচের সো-পিজ হাতে নিয়ে আহানের দিকে ছুড়ে মারলো সাথে সাথে আহান সো-পিজটা ধরে ফেললো। তারপর আহান বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে সো-পিজ টা আবার জায়গা মতো রেখে মেঘকে হেচকা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।হঠাৎ আহানের এমন কাজে মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই আহান মেঘের দুই বাহু বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রাগি ক্ষীপ্ত স্বরে বললো
“এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোমার। সাবরিদ সিজাত আহানের সাথে মানুষ কোনো কথা বললেও একশো বার ভেবে বলে,, সেখানে তোমার মতো একটা পুচকে মেয়ে আমার গায়ে শপিজ ছুরে মারছে! খুবই হাস্যকর বিষয় তাইনা?”
আহান এতোটা কাছে আসায় মেঘ একদম স্টাচু হয়ে গেছে,,একটু নড়ার শক্তিটুকুও যেনো পাচ্ছে না।ওর ভীষন অশস্তি লাগছে,, হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে।শরীরের রক্ত গুলো অসভাবিক ভাবে ছোটাছুটি করছে। ওর চোখদুটো রসগোল্লার মতো বড়বড় করে ভয়ার্ত চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহান মেঘের বাহু আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে বললো
“আর কি যেনো বলছিলে? আমি যদি তোমার রুম থেকে বের না হয়ে যাই ,,তাহলে তোমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না?তুমি কি এটা জানো? এই রুমে যদি কারো আসার অনুমতি থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে একমাএ আমার । কারন আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা এই রুমে আছে। আর সেটার কাছে আসার জন্য আমি কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। নট ইভেন ইউ। গট ইট? আর ভবিষ্যতে যদি এই ধরনের কথা কখনো বলেছো তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। ”
আহান মেঘের বাহু এতো জোড়ে চেপে ধরায়,, মেঘ ব্যাথ্যায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে অস্পষ্ট গলায় বললো
“ল-লাগছে আমার….”
মেঘের কথায় আহানের হাতটা একটু আলগা হয়ে এলো। কিন্তু ও মেঘকে ছাড়লো না । বরং একই ভঙ্গিতে বললো
“এখন কেনো বলছো ‘লাগছে’ ? সেটা আমাকে থ্রেট করার সময় আমার দিকে শো-পিজ ছুড়ে মারার সময় মনে ছিলো না? আমাকে রাগালে আমি তোমার সাথে ঠিক কি কি করতে পাড়ি।”
মেঘ কাপা কাপা গলায় বললো
“স-সরি ভ-ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না। আপনি আমার থেকে একটু দূরে সরুন প্লিজ।”
মেঘের হাত-পা রীতিমতো কাপাকাপি শুরূ করে দিয়েছে। মুখটা ভয়ে একদম চুপসে গেছে। আহান মেঘের এমন অবস্থা দেখে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে মেঘের থেকে সরে এসে উঠে দাড়িয়ে বললো
“তোমাকে দশ মিনিট সময় দিলাম। তারমধ্যে চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো রেডি হয়ে নিচে চলে এসো।”
কথাটা বলেই আহান হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ সোয়া থেকে উঠে দাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। এতক্ষন যেনো ওর শ্বাসটা গলায় আটকে ছিলো। তারপর আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো ব্যাট্যা ধলা ইদুর তোকে আমি ছাড়বো না। একবার সুযোগ পাই তোকে আমি ত্যাজ্জ কাজিন করবো। ঘাড় ধরে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেবো।
____________
মেঘ রেডি হয়ে সিড়ি দিয়ে নামছিলো তখনি চোখ ড্রয়িং রুমের সোফার উপর। সেখানে আহান সোফার উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে ফোন স্ক্রল করছে। মেঘ বিরবির করে বললো এমন ভাবে বসে আছে যেনো শ্বসুর বাড়ি বেড়াতে এসছে,,,যএসব।
মেঘকে সিড়ি থেকে নামতে দেখে আহান উঠে দাড়িয়ে বললো
“চলো,,,,”
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“চলো মানে ,,, ভাইয়ারা কোথায়? ওরা যাবে না?”
“ওরা পড়ে আসবে। ওদের আরও দেরি হবে।তুমি আমার সাথে চলো।”
“না। আমি ওদের সাথে যাবো।”
কথাটা বলে মেঘ সিড়ি বেয়ে আবার উপরে উঠতে যাবে তার আগেই আহান মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে এসে, গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে, নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ড দিলো।
____________
শপিংমলের পার্কিজোনে এসে আহান গাড়িটা পার্ক করে মেঘকে ইশারা দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে বললো। মেঘ আহানের দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। আসার সময় সারা রাস্তায় মেঘ অনেক বার বলেছে সে আহানের সাথে যাবে না। মিহিরদের সাথে যাবে কিন্তু আহান তো আহান। সে মেঘের কথায় কোনো পাওাই দেয়নি। একসময় মেঘ চিল্লাচিল্লি করেও আহানের থেকে কোনো রিয়্যাকশন না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চুপ মেরে গিয়েছে। মেঘ গাড়ি থেকে নেমেই হনহন করে শপিংমলের ভিতরে চলে গেলো। ওর পিছনে পিছনে আহানও আসলো।মেঘের হাটতে হাটতে হঠাৎ আহানের দিকে চোখ পড়তেই ওর পা টা থেমে গেলো। ও ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো এইসব আবার কি ?এতোক্ষন তো সব ঠিকই ছিলো। এখন আবার এইগুলৌ কোথা থেকে আসলো।
চলবে,,,,,,,