ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৪৬

0
1206

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ46

চৌধুরী বাড়িতে পুরো দমে বিয়ের আয়োজন চলছে।আর দুইদিন পরে হিয়ানের বিয়ে।বিয়ের আয়োজন নিয়ে সবাই খুবই ব‍্যাস্ত আছে।দুই মিনিট বসার জন‍্যও কারো হাতে সময় নেই।বিয়ের সব আয়োজন হিয়ানদের বাড়িতেই হবে।গেষ্টরা অলমোষ্ট সবাই চলে এসেছে।মেঘ আর মিহির এতোদিন আহানদের বাড়িতেই ছিলো।আহান মেঘকে আর মিহিরকে নিজেদের বাড়িতে যেতে দেয়নি।কারন আবিরেরা এখনো মেঘদের বাড়িতেই আছে।মেঘের মামা-মামি আবিরদের সবাইকে বিয়েতে আসার জন‍্য ইনভাইট করেছে।তাই ওরা কেউই যায়নি,বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে তারপর একসাথে যাবে।এর মধ‍্যে মিরা রহমান অনেক বার ফোন করেছিলেন মেঘ আর মিহিরকে বাড়িতে ফিরে আসার জন‍্য। কিন্তু আহান সাফ সাফ মানা করে দিয়েছেন।ও বলেছে যতোদিন আবিরেরা ওই বাড়িতে আছে ততোদিন মেঘ বা মিহির কেউই ওই বাড়িতে যাবে না।মিড়া রহমান আহানকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এই কয়েকদিনে আহান আর মেঘের সম্পর্ক টা আরো গভীর হয়েছে।আহানের ছোট্ট ছোট্ট কেয়ারিং গুলো মেঘকে আহানের প্রতি অনেকটা দূর্বল করে দিয়েছে।ও সব সময় নিজেকে আহানের মনের মতো তৈরি করার চেষ্টা করে।আহানের অপছন্দের জিনিস গুলোকে সম্পূর্ন ইগনোর করে।আহানের পছন্দ অনুযায়ী সব কাজ করে।মেঘের এই ছোট ছোট চেইঞ্জ গুলো আহান সব সময় নোটিশ করে।আর ভিষন খুশীও হয়।এসব দেখে ওর মনের মধ‍্যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা আরো দৃঢ় হয়।এতো দিনের এতো অপেক্ষা এতো ভালোবাসার ফল যে মিষ্টি হতে চলেছে সেটা ভেবে ওর ঠোটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।
___________________________

সকালের ব্রেকফাস্ট করে সবাই বিয়ের শপিংয়ের জন‍্য বের হলো।শপিং মলে গিয়ে আহান মেঘকে রেখে গায়েব হয়ে গেলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো আমি না আসা পযর্ন্ত তুমি নিজের জন‍্য কিছুই চুজ করবে না।অগত‍্যা মেঘও নিজের কেনাকাটা বাদ দিয়ে আলিশা আর হিয়ানকে ড্রেস কিনতে হেল্প করতে লাগলো।সাড়িকা,সাঈফা,দিশা ওরা এক পাশে দাড়িয়ে নিজেদের মতো ড্রেস চুজ করছে।আহির আর মিহির একপাশের চেয়ারে বসে ফোন টিপছে।ওদের দেখে মনে হচ্ছে এসবে ওদের কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।অভি অনেকক্ষন আগেই আহানের সাথে চলে গেছে।মেঘ দেখলো আহির আর মিহির চুপচাপ বসে আছে।তাই ও নিজেই গিয়ে আহির আর মিহিরের জন‍্য ড্রেস চুজ করতে লাগলো।

প্রায় দুপুর তিনটার দিকে আহান আর অভি ওদের কাছে ফিরে আসলো।এসেই দেখলো সবাই খুব হাসি খুশী হলেও মেঘ মুখটা কালো করে বসে আছে।মেঘ আহানকে আসতে দেখে ম্লানো হাসলো।আহান এসে খুব তাড়াহুড়ো করে সবাইকে রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেলো।লাঞ্চটা সবাই রেষ্টুরেন্টেই করলো।এর মধ‍্যে আহান মেঘের সাথে তেমন একটা কথা না বলায় মেঘের মুখে বিষাদের ছায়া নেমে এলো।লাঞ্চ করা শেষে মেঘদের সবাইকে জুয়েলারির শপে নিয়ে এসে আহান আর অভি কাজ আছে আবার চলে গেলো।আহানকে চলে যেতে দেখে মেঘের এবার কান্না চলে আসলো।কিন্তু পাবলিক প্লেসে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না বলে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর এক কোনায় গিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।স‍ন্ধ‍্যার দিকে সবার শপিং করা কম্পিলিট হয়ে গেলেও মেঘের নিজের জন‍্য কিছুই কেনা হলো না।হিয়ান অনেকবার মেঘকে বলেছিলো নিজের পছন্দ মতো কিছু কেনার জন‍্য।কিন্তু মেঘ হিয়ানের একটা কথাও শোনেনি চুপচাপ এক কোনায় বসে রয়েছে।এর মধ‍্যে আহান আর অভির ছায়াও কেউ খুজে পায়নি।ওরা ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।
__________________________
সন্ধ‍্যা 07:00

মেঘরা সবাই শপিংমল থেকে বের হয়ে বাইরে এসে দেখে আহান আর অভি অলরেডি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে।হিয়ান এসেই আহানকে একটা ধমক দিয়ে বললো

“সারাদিন কোথায় ছিলি?শপিং করতে এসে কি এমন মহৎ কাজ করতে গেলি যার জন‍্য সারাদিন লেগে গেলো?তুই ব‍্যাস্ত ছিলি তাই আমরা এতদিন বড়দের সাথে শপিং করতে আসিনি।তোর ফ্রি হওয়ার জন‍্য অপেক্ষা করেছি।কিন্তু তুই আজকেও কাজে চলে গেলি?দুইদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুধু হয়ে যাবে।সবার কেনাকাটা কম্পিলিট অথচ এখন অবদি মেঘের কিছুই কেনা হলো না।”

হিয়ানের কথা শুনে আহান আর চোখে একবার মেঘের দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ একপাশে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।অভি এসে হিয়ানের কাধে এক হাত রেখে বললো

“থাম ভাই এতো রাগিস না।দুইদিন পর তোর বিয়ে,এখন যদি অতিরিক্ত রাগের ফলে তোর হার্টফেল হয় তাহলে আমার বোনটার কি হবে?এতো তাড়াতাড়ি ওর জন‍্য তোর মতো একটা অপাএ কোথায় পাবো বলতো?”

অভির কথা শুনে হিয়ান রাগি চোখে অভির দিকে তাকালো।আহির গিয়ে আলিশার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো

“অভি ব্রো পাএ নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।আলিশা বেবিকে বিয়ে করার জন‍্য আমিতো সেই কবে থেকে এক পায়ে দাড়িয়ে আছি।”

হিয়ান গিয়ে আহিরের হাত থেকে আলিশাকে ছাড়িয়ে এনে আহিরকে ওকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ওই তুই আমার বউয়ের থেকে একশো হাত দূরে থাকবি।একদম আমার বউয়ের চার পাশেও আসবি না।তোর ইন্টেনশন আমার একদম সুবিধার মনে হয়না।”

হিয়ানের কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো।মেঘের এতোক্ষন মন খারাপ থাকলেও ওদের কথা শুনে না হেসে পারলো না।আহির হাসতে হাসতে বললো

“সিরিয়াসলি ব্রো,তুমি এখন আমার জন‍্য জেলাস ফিল করছো?”

হিয়ান দাতে দাত চেপে বললো

“না রে জেলাস ফিল করছি না।চিন্তা হচ্ছে আমার।তোর তো আর ক‍্যারেক্টারের ঠিক নেই।কখন আমার বউটার দিকে নজর দিয়ে ফেলিস।”

আহির চোখ বড় বড় করে অবাক কন্ঠে বললো

“ব্রো তোমার কি আমাকে ক‍্যারেক্টারলেস মনে হয়?”

আহিরের কথা শুনে হিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাড়িকা ভেংচি কেটে বললো

“এখানে মনে হওয়ার কি আছে?তুমিতো আসলেই একটা ক‍্যারেক্টারলেস।মেয়ে দেখলেই হা করে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকো।”

আহির রেগে চিল্লিয়ে বললো

“হোয়াট?আমি কবে,কখন,কোন মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম?সাড়িকার বাচ্চা আবল তাবল কথা বললে তোকে এখানেই ফেলে চলে যাবো বলেদিলাম।”

সাড়িকা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির বললো

“ভাই তোরা এখানে আবার শুধু করে দিস না প্লিজ।আমি এমনিতেই খুব ক্লান্ত।এখন আর তোদের এই ক‍্যাট ফাইট দেখার মুড আমার নেই।সারাদিন হাটতে হাটতে আমার পায়ের নাট বল্টু ঢিলে হয়ে গেছে। এখন একটু রেষ্ট দরকার।”

মিহিরের কথা শেষ হতেই হিয়ান বললো

“হ‍্যা আমিও খুব ক্লান্ত।যদি আগে জানতাম বিয়ে করতে হলে এতো শপিং করতে হয় তাহলে জিবনেও বিয়ে করতাম না।এত শপিং করে বিয়ে করার থেকে তো চির কুমার থাকা ভালো।”
__________________________

আহানদের গাড়ি এসে চৌধুরী বাড়ির সামনে থামলো।ওরা শপিংমল থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে।শুধু আলিশা আর অভি নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে।যাওয়ার সময় ওদের সাথে দিশাকেও নিয়ে গেছে।যাওয়ার পথে দিশাকে ওর খালামনির বাসায় ড্রপ করে দেবে।

আহানরা গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো পুরো বাড়িটা ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।বাড়ির সামনের দিকটা এখনো ডেকারেশন চলছে।চারপাশে বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনা।একেক জন একেক ধরনের কাজ করছে।সবাই নিজেদের কাজে ব‍্যাস্ত।আহানরা গাড়ি থেকে নামতেই কয়েকজন সার্ভেন্ট ওদের দিকে এগিয়ে এলো।তারা গিয়ে একে একে গাড়ি থেকে জিনিসপত্র গুলো নামিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আহান গিয়ে নিজের গাড়ির ডিকি খুলে কয়েকটা শপিং ব‍্যাগ বের করলো।তারপর দুজন সার্ভেন্ট কে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওদেরকে কিছু একটা বলে ব‍্যাগ গুলো ওদের কাছে দিয়ে দিলো।ওরাও ব‍্যাগ গুলো নিয়ে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আহির,মিহির,সাড়িকা, সাঈফা, হিয়ান,মেঘ ওদের কাছে ব‍্যাপ‍্যারটা একটু ষ্ট্রেইঞ্জ লাগলেও অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় ওরা ব‍্যাপ‍্যারটা তেমন পাএা দিলো না।

মেঘরা বাসার ভিতরে এসে সবাই অবাক হয়ে গেলো।হিয়ানদের বাসার ড্রইংরুমে আবির জেড়িন সহ ওদের মা-বাবারা সবাই বসে আছে।এই সময়ে ওদের এখানে একদমই আশা করেনি মেঘরা।আহান অগ্নি দৃষ্টিতে আবিরদের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে ধীর কন্ঠে বললো

“এদের মনে হয় শান্তিতে বেচে থাকার ইচ্ছে নেই। থাকলে বারবার ঘুড়ে ফিরে মরার জন‍্য আমার সামনে চলে আসতো না।”

আহানের কথা শেষ হতেই আহির বললো

“আমার তো এদের চেহারা দেখলেই সবকটা কে জানে মেরে দিতে ইচ্ছে করে।”

মিহির বললো

“ইচ্ছে করলে মেরে দে।আমি আর এদের এক মুহুর্তও টলারেট করতে পারতেছি না।কোনো একদিন আমার সহ‍্য শক্তির বাধ ভেঙে যাবে আর আমি এদের কিছু একটা করে বসবো।”

মিহিরের কথা শেষ হতেই পাশ থেকে মোনা খান চাপা স্বরে বলে উঠলেন

“খবরদার এখানে কেউ কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।ওদের বড় ভাইয়া ইনভাইট করেছে।বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওরা এখানেই থাকবে।ওরা সবাই আপাততো তোমাদের গেষ্ট,তাই ওদের আপ‍্যায়ন করার দ্বায়িত্ব তোমাদের।ওদের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাববে না।বিয়ে উপলক্ষ্যে অনেক গেষ্টরা আসবে তাই এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমাদের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়।”

আহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো

“ওদের কারনে মেঘের গায়ে যদি এতোটুকু আচও লাগে,তাহলে আই সোয়‍্যার মা ওরা এখান একজনও সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ফিরতে পারবে না।তাতে তোমাদের মান সম্মান থাকুক,বা না থাকুক সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।”

কথাটা বলেই আহান হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।মিহিরও মেঘের হাত ধরে নিয়ে একদম উপরে চলে গেলো।ওদের সাথে হিয়ান,আহির,সাড়িকা,সাইফাও উপরে চলে গেলো।
___________________________

রাত 11:30

ছাদের এক কোনায় দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ দুটো বন্ধ করে গান শুনছে মেঘ।একফালি চাদের রশ্নি এসে মেঘের মুখে পড়েছে।চাদের আলোতে মেঘের চেহারাটা অসম্ভব মায়াবি লাগছে।হালকা বাতাশে ওর চুল গুলো মৃদ‍্যু উড়ছে।আজকে আহানের প্রতি বড্ড অভিমান জমেছে মেঘের।খুব কষ্টও হচ্ছে।বুকের বাম পাশটা ভয়ংকর ভাবে জ্বলছে।আজকে সারাদিনে তো আহান মেঘের সাথে কথা বলে নি।তার উপর এখানে আসার পরও কথা বলেনি।একবার দেখা অবদি করতে আসেনি।মেঘ একে তো বিয়ের জন‍্য কোনো শপিং করতে পারেনি সেটা নিয়ে আপসেট ছিলো।তার উপর প্রিয় মানুষের থেকে এমন অবহেলা যেনো ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে।কষ্টে কান্না গুলো সব দলা পাকিয়ে বেড়িয়ে আসছে।মেঘের চোখের কোনা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।হয়তো প্রিয় জনের দেওয়া সামান‍্য অবহেলাও মানুষকে ভয়ংকর ভাবে কষ্ট দেয়।

চোখ বন্ধ করা অবস্থাই মেঘ অনুভব করলো কারো গরম নিশ্বাস ওর চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।কেউ ওকে খুব কাছ থেকে গভীর চাহনি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।মেঘ ফট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।আবছা আলোতেও সামনে থাকা ব‍্যাক্তিটিকে মেঘের চিনতে একটুও অসুবিধা হবে না।সামনে থাকা ব‍্যাক্তিটি আর কেউ না আহান।মেঘ আহানকে দেখে দ্রুত চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে ফেললো।তারপর ওখান থেকে যেতে নিলেই আহান দেয়ালের দু পাশে হাত রেখে মেঘকে আটকে দিলো।আহানের এমন কান্ডে মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে দেয়ালের সাথে একদম পিঠ ঠেকিয়ে গুটিশুটি মেরে অন‍্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো।আহান মেঘের দিকে একটু ঝুকে বললো

“কাদছিলে কেনো?কি হয়েছে?”

আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘ বললো

“কোথায় কাদছিলাম?আর কাদবোই বা কেনো?”

“ওই দিকে তাকিয়ে কেনো এ‍্যান্সার দিচ্ছো আমার দিকে তাকাও!”

আহানের কথাটা শুনেও মেঘ অন‍্য দিকেই তাকিয়ে রইলো।আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে বললো

“কি হলো টিয়া পাখি তাকাও আমার দিকে?তুমি আমার উপর খুব রেগে আছো তাইনা?”

আহানের কথা শুনে মেঘের গাল গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।আহান আদুরে কন্ঠে আবারও বললো

“আই অ‍্যাম ভেরি সরি টিয়া পাখি।আর কখনো এরকম ভুল হবে না।আমি খুব বড় অন‍্যায় করে ফেলেছি।দরকার হলে তুমি আমাকে শাস্তি দাও।তবুও এভাবে চুপ করে থেকো না প্লিজ।”

আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ ফুপিয়ে কেদে উঠলো।মেঘকে কাদতে দেখে আহান তড়িঘড়ি করে মেঘের দু গালে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল‍ো

“এভাবে কাদছো কেনো মেঘ পরী?আমি তো সরি বলেছি।ভুল হয়ে গেছে আমার আর কখনো এরকম ভুল হবে না।আমি আর কখনো তোমাকে শপিংমলে একা রেখে যাবো না।”

মেঘ হিচকি দিতে দিতে বললো

“আপনি আজকে সারাদিন কেনো আমাকে ইগনোর করেছেন?কেনো আমার সাথে একটা কথাও বলেননি?জানেন আপনার এমন ব‍্যাবহার আমাকে কতোটা আঘাত দিয়েছে?কতোটা কষ্ট হচ্ছে আমার?”

কথাটা বলেই মেঘ আরো জোড়ে জোড়ে কেদে দিলো।মেঘকে এভাবে কাদতে দেখে আহান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে লো ভয়েজে বললো

“সরি মেঘ পরী আমি আর কখনো এমন করবো না।এই বারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ।আসলে তখন ওদের এই বাড়িতে দেখে মাথাটা এতো গরম হয়ে গিয়েছিলো যে তোমার সাথে কথা বলার সুযোগই পাইনি।আই অ‍্যাম সরি ফর দ‍্যাট।”

কথাটা বলেই আহান মেঘের ঘাড়ে ঠোট ছোয়ালো।মেঘ লজ্জায় আহানের শার্টের পিঠের অংশ খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো।আহান মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো

“জিঙ্গেস করবে না আজকে সারাদিন কোথায় ছিলাম?”

বলেই আহান মেঘের কানের লতিতে ঠোট ছোয়ালো।সাথে সাথে মেঘ কেপে উঠে ওকে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো।আহান মেঘকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে সামনের দিকে ঘুড়িয়ে মেঘের পিঠ ওর বুকের সাথে লাগিয়ে দাড় করালো।তারপর ওর কাধে নিজের থুতনি রেখে ওকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ধীর কন্ঠে বললো

“সারাদিন কোথায় ছিলাম জানো?তোমার আর আমার জন‍্য শপিং করেছি।সব কিছু একদম ম‍্যাচিং করে।বিয়ের প্রত‍্যেকটা ফাংসনে তোমাকে আমার পছন্দের রঙে রাঙাবো।তোমার ড্রেস থেকে শুরূ করে তোমার পায়ের জুতো পযর্ন্ত সব কিছু আমার পছন্দের হবে বুঝলে সুইটহার্ট?”

আহানের কথা শুনে মেঘের ঠোটের কোনে মৃদ‍্যু হাসি ফুটে উঠলো।ও সারাদিন কতো উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা করেছে অথচ আহান ওর জন‍্যই কেনাকাটা করায় সারাদিন ব‍্যাস্ত ছিলো।আহান মেঘের ঘাড়ে আস্তে করে ঠোট ছুইয়ে বললো

“কখনো উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা মাথায় আনবে না টিয়া পাখি।আমি সারাদিন যতোই ব‍্যাস্ত থাকি না কেনো তোমাকে অপেক্ষায় রেখে কখনো কোনো কাজ করতে যাবো না।আমার কাছে সবার আগে তোমার খুশী থাকাটা জরুরী তারপর বাকি সবকিছু।”

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here