ভালোবাসার অনুভূতি – পর্ব ৫৫

0
1147

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকা‌ঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ55

দুই বছর পর,,,,,,,,,

দরজার কলিং বেলের শব্দে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো মেঘ।বেডের পাশের টি-টেবিলের উপর থাকা ছোট টেবিল ক্লোকের দিকে তাকিয়ে দেখলো অলরেডি নয়টা বেজে গেছে।মেঘ মাথায় হাত দিয়ে বললো

“ওহ শিট!আজকে আবারও উঠতে দেরি হয়ে গেলো।”

কথাটা বলতে বলতে মেঘ কম্বলের নিচ থেকে বের হয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা খুলতেই একজন মধ‍্য বয়সের মহিলা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো

“কি হইলো আম্মাজান আইজকে আবারো ঘুম থেইকা উঠতে দেরি হইছে?”

মেঘ দরজাটা আটকে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো

“কি আর করবো বলো?কালকে রাতে তিনটার সময় ঘুমিয়েছি।অফিসের কাজ করতে করতে কখন যে তিনটা বেজে গেছে টেরই পাইনি।”

মেঘের কথা শুনে মহিলাটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে চলে গেলেন মেঘের জন‍্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতে।মেঘ ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দ্রুত রেডি হতে লাগলো।এদিকে মহিলাটি ব্রেকফাস্ট রেডি করে ডাইনিং টেবিলের উপর এনে রাখলেন।তারপর মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললেন

“আম্মাজান নাস্তা দিছি তাড়াতাড়ি খাইয়া লও।”

মেঘ দরজার পাশের “শু-র‍্যাক” থেকে জুতা বের করে পরতে পরতে ব‍্যাস্ত গলায় বললো

“না খালা এখন খাওয়ার সময় নেই।ওগুলো তুমি খেয়ে নাও।আমি আসি।”

মেঘের কথা শুনে মহিলাটি মুখটা কালো করে বললো

“আমি এতো কষ্ট করে বানাইলাম আর তুমি না খাইয়াই চইলা যাইবা?”

মেঘ দরজা দিয়ে বের হতেই যাচ্ছিলো কিন্তু মহিলাটির কথা শুনে দাড়িয়ে গেলো।তারপর দ্রুত পায়ে দরজার সামনে থেকে ডাইনিং রুমে আসলো।এসে দেখলো মহিলাটি ওর জন‍্য ব্রেডের টোষ্ট আর ডিম অমলেট করেছে।মেঘ একটা ব্রেড টোষ্ট হাতে নিয়ে তাতে একটা বাইট দিয়ে খেতে খেতে মহিলাটি কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বললো

“আর মুখ কালো করে থাকতে হবে না।এইতো খেয়েছি এখন আমি আসি।আল্লাহ হাফেজ।”

কথাটা বলে মেঘ ওনাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।মহিলাটি মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ম্লানো একটা হাসি দিলেন।গত দুই বছর থেকে মেয়েটাকে দেখছেন উনি।একাই এই ফ্লাট টায় থাকে।সকাল হলে ভার্ষিটিতে যায়,সারাদিন ক্লাস করে।তারপর বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পযর্ন্ত পার্ট টাইম জব করে।বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত এগারোটা বাজে।বাসায় এসে আবার পড়তে বসে নাহলে অফিসের কাজে করে।উনি সারাদিন মেঘকে কাজ করতেই দেখেন।’ও’ সারাদিন কাজের মধ‍্যে নিজেকে ঢুবিয়ে রাখে।ওকে দেখলে মনে হয় ‘ও’ পড়া শোনা আর কাজ ছাড়া কিছু ভাবতেই চায় না।উনি অনেক বার মেঘকে জিঙ্গেস করেছে ওর বাসা কোথায়?বাবা মা কোথায় থাকে?বাবা মায়ের নাম কি?’ও’ পরিবারের সাথে না থেকে একা এই ফ্লাটে থাকে কেনো?আরো কতো শতো প্রশ্ন করেছে তার কোনো হিসেব নেই।কিন্তু যখনই মেঘের পার্সনাল ব‍্যাপ‍্যারে কিছু জিঙ্গেস করেন তখনই ‘ও’ কথাটা এরিয়ে যায়।এখন পযর্ন্ত উনি মেঘের নামটা ছাড়া আর কিছুই জানেন না।অবশ‍্য নামটাও আসল কিনা সেটাও জানেন না।মাঝে দেখেন মেয়েটা বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কাদতে থাকে।কাদতে কাদতে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে আবার সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
_____________________________
মেঘ রাস্তায় এসে রিকশার জন‍্য দাড়িয়ে ছিলো।হঠাৎ ওর সামনে লাল রঙের বেশ দামি একটা গাড়ি এসে থামে।’ও’ ভ্রু কুচকে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে।গাড়িটা থামতেই ওটার পিছনের সিটের দু পাশের দরজা খুলে দুটো ছেলে বেড়িয়ে আসে।মেঘ ছেলে দুটোর চেহরার দিকে তাকালো।সেই চির চেনা অতি প্রিয় দুটো মুখ।কতোদিন পর এদের দেখলো।ছেলে দুটো অন‍্যকেউ না,আহির আর মিহির।মেঘ এক ধ‍্যানে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তখনই আহির এসে মেঘের চোখে সামনে দুটো কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বললো

“আমার আর মিহিরের বিয়ের কার্ড।কালকে গায়ে হলুদ আর পরশুদিন বিয়ে।ইচ্ছে হলে আসিস আর নাহলে আমরা জোড় করবো না।”

মেঘ কাপাকাপা হাতে কার্ড দুটো নিলো।প্রথম কার্ড টা ওপেন করে দেখলো সেটাতে আহির ওয়েডস সাড়িকা লেখা আছে।আর দ্বীতিয় কার্ডটায় মিহির ওয়েডস সাঈফা লেখা আছে।মেঘ কার্ড দুটোর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।তারপর আহিরের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির ওকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললো

“তোর কোনো কথা শোনার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমাদের কাছে নেই।সাড়িকা,সাঈফা কান্নাকাটি করছিলো বলছিলো তুই না গেলে ওরা নাকি বিয়েটাই করবে না।তাই এগুলো দিতে আসলাম।নাহলে কোনো দিন আসতাম না।এবার তুই যাবি নাকি যাবিনা সেটা তোর ইচ্ছে।”

মিহিরের কথা শেষ হতেই আহির তাছিল‍্য হেসে বললো

“অবশ‍্য না গেলেও আমরা অবাক হবো না।কারন মানুষের সুখ শান্তি কেড়ে নেওয়া তো তোর পুরনো অভ‍্যাস।আহান ব্রোর লাইফ টা তো দুই বছর আগেই হেল করেছিস।এখন নাহয় আমাদের টাও করবি।”

কথাটা বলে আহির আর এক মুহূর্তও দাড়ালো সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো।মিহিরও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পড়লো।ওর উঠতেই গাড়িটা দ্রুত চলে গেলো।আর পিছন থেকে এক জোড়া অশ্রুসিক্ত চোখ সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
____________________________

রাত 10 টা

ছাদের একপাশের রেলিংএ বাইরের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সাঈফা।শূন‍্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের অন্ধাকারের দিকে।চারপাশে কি হচ্ছে সেদিকে ওর বিন্দু মাএও খেয়াল নেই।আপাততো ‘ও’ নিজের ভাবনায় মগ্ন।হঠাৎ কেউ এসে সাঈফাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে কোলে তুলে ছাদের ভিতরে এনে দাড় করালো।আকষ্মিক ঘটনায় সাঈফা হকচকিয়ে উঠলো।তারপর সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে রাগি লুক নিয়ে মিহির দাড়িয়ে আছে।সাঈফা একটা শুকনো ঢোক গিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো

“তুমি এতো রাতে এখানে?এখনো যাওনি?”

মিহির দাতে দাত চেপে বললো

“গিয়ে তো ছিলাম।কিন্তু মাঝ পথে গিয়ে দেখি ফোনটা ফেলে গেছি তাই আবার নিতে আসলাম।ভাগ‍্যিস এসেছিলাম নাহলে জানতেই পারতাম না,আমি না থাকলেই আপনি এসব কাজ করে বেড়ান।”

সাঈফা আমতা আমতা করে বললো

“আসলে ভালো লাগছিলো না তাই ওভাবে বসে ছিলাম।”

মিহির ভ্রু কুচকে বললো

“ভালো লাগছিলো মানে কি?বিয়েটা কি করতে চাও না?নাকি বোনের মতো ন‍্যাক‍্যামো করার ইচ্ছে জেগেছে?”

মিহিরের কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাঈফা ঝাঝালো কন্ঠে বললো

“সব কথায় আপিকে কেনো টেনে আনো বলোতো?দুই বছর আগে আপি যা করেছিলো সেটার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন ছিলো।নাহলে কখনো ওসব করতো না।তোমরা তো সব সময় আপিকে শুধু দোষারোপই করে গেছো।কখনো তো এটা জানতে চাওয়ার চেষ্টা করোনি হঠাৎ করেই ‘ও’ ওসব কেনো করেছিলো।আগে সব কিছু ভালো করে খোজ নিয়ে আসো তারপর আপির ব‍্যাপ‍্যারে কিছু বলতে আসবে।”

কথাটা বলেই সাঈফা হনহন করে ছাদ থেকে বেড়িয়ে আসলো।ওর ভিষন রাগ লাগছে।সত‍্যিটা না জেনেই সবাই শুধু মেঘকে দোষারোপ করে যাচ্ছে।আরে ভাই যাকে এতো ভালোবাসতো তাকে যখন দূরে সরিয়ে দিয়েছে তখন তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।এই সামান‍্য কথাটা এদের মাথায় যে কেনো ঢোকেনা ‘ও’ সেটাই বুঝতে পারে না।সাঈফা পারলে এখন মিহিরের মাথাটা ফাটিয়ে দেখতো যে ওর মাথার মধ‍্যে একটুও বুদ্ধি আছে নাকি পুরোটাই গোবরে ভরা।’ও’রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো হাতের মেহেদি ধোয়ার জন‍্য।

আজকে সাড়িকা,সাঈফার মেহেন্দি ছিলো।মেহেন্দীর অনুষ্ঠান টা সাঈফাদের বাড়িতে বসেই হয়েছিলো।অনুষ্ঠান শেষে বর পক্ষের লোকেরা যাওয়ার পর সাঈফা মেহেদি হাতে দিয়ে ছাদে চলে গিয়েছিলো।হঠাৎ করেই ‘ও’ আজকে মেঘকে বড্ড মিস করছিলো।মেঘের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।তাই ভেবেছিলো একা একা বসে থাকলে হয়তো মনটা ভালো হয়ে যাবে।অথচ মন তো ভালো হলোই না উল্টে মিহির এসে মাথাটা গরম করে দিলো।
____________________________
সাঈফা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো মিহির বেডের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।’ও’ মিহিরের দিকে একবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালে নিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বললো

“প্লিজ তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও।এই মুহুর্তে আমি ভিষন রেগে আছি যখন তখন তোমাকে যা খুশী বলতে পারি।আর বিয়ের মাএ দুই দিন বাকি আছে তাই এখন আমি তোমার সাথে কোনো তর্কে জড়াতে চাই না।”

সাঈফার কথা শুনে মিহির শোয়া থেকে বসে বললো

“আমি তোমার সাথে তর্ক করতে আসিনি মিষ্টি পাখি,রোমান্স করতে এসেছি।এখন আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে তাই ভাবছি তোমার সাথে এখন একটু প্রেম করবো।”

সাঈফা ওর হাতে থাকা তোয়ালে টা মিহিরের মুখের উপর ছুড়ে মেরে বললো

“তোর প্রেমের গুষ্টি কিলাই।তুই এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে।”

মিহির বসা থেকে দাড়িয়ে তোয়ালে টা বেডের উপর রেখে সাঈফার দিকে একপা একপা করে এগোতে এগোতে বললো

“ছিহ বউ নিজের হাজবেন্ট কে এভাবে তুই তোকারি করতে তোমার লজ্জা করেনা?”

সাঈফা ঝারি মেরে বললো

“লজ্জা কেনো করবে?তুমি এখনো আমার হাজবেন্ট হওনি।আমাদের বিয়ের আরো দুইদিন বাকি আছে।আর এই দুই দিনে যা কিছু হতে পারে।”

মিহির একদম সাঈফার কাছে এগিয়ে এসে ওর কোমরে এক হাত রেখে এক টানে সাঈফাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো

“যা কিছু হয়ে যেতে পারে মানে কি?বিয়েটা ক‍্যান্সেল করার প্লান করেছো নাকি?”

সাঈফা একটা তাছিল‍্য হাসি দিয়ে বললো

“আমি তো মেঘ আপিরই বোন।সো করতেই পারি।”

সাঈফার কথা শুনে মিহির হাত দিয়ে সাঈফার গালে শ্লাইড করতে করতে বললো

“যদি বিয়ে ক‍্যান্সেল করার মতো কোনো প্লান করে থাকো তাহলে সেটা মাথা থেকে এক্ষুনি ঝেরে ফেলো।নাহলে তোমাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ফেলে দিবো।”

সাঈফা চোখ ছোট ছোট করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো

“তোমার কি মনে হয় এইসব বললে আমি ভয় পেয়ে যাবো?”

মিহির একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো

“হুম ভয় পাবে।কারন আমি যে শুধু মুখে বলি না,কাজেও করে দেখাই সেটা তোমার থেকে ভালো কে আর জানে বলো?”

কথাটা বলেই মিহির সাঈফার নাকের সাথে নিজের নাক ঘসলো।সাঈফা ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।মিহির অনেকটা সময় নিয়ে সাইফার কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো।তারপর সাঈফার নাক টেনে দিয়ে বললো

“বউ আজকে এই পর্যন্তই থাক।বাকি রোমান্স নাহয় আমরা বিয়ের পরেই করবো।আপাততো আমার একটা আর্জেন্ট কাজ মনে পড়ে গেছে।তাই এখন রোমান্স করা বাদ দিয়ে কাজটা করতে যেতে হবে।টাটা…..”

কথাটা বলে মিহির আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না।সাঈফাকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।সাঈফা মিহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।’ও’ ভালো করেই জানে মিহির এখন কোথায় গেছে।লাষ্ট দুই বছর ধরে মিহির আর আহির রাতের এই সময়ে গায়েব হয়ে যায়।এই সময়ে ওদের দুজনের ছায়াটাও খুজে পাওয়া যায় না।কোথায় যায় সেটা সবাই ভালো করেই জানে।তাই এই বিষয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন করে না।
_____________________________
মেঘ অফিস থেকে ফিরে দরজার সামনে দাড়িয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফ্লাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো।ভিতরে ঢুকে দেখলো সেই মহিলাটি বেডের উপর ঘুমিয়ে আছে।মেঘ একটু হাসলো।ইনি মাঝে মাঝেই এরকম করে।কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এখানে রাতে থেকে যায়।সারা রাত জেগে মেঘের সাথে গল্প করে।ওর মাথায় তৈল দিয়ে দেয়,বিলি কেটে দেয়।এমন ভাবে আগলে রাখেন যেনো মেঘ ওনার নিজের মেয়ে।ওনি যতোক্ষন মেঘের কাছে থাকে ‘ও’ মায়ের থেকে দূরে থাকার কষ্ট টা ভুলে যায়।

মেঘ দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে।ওর হাতে থাকা ফাইল গুলো টেবিলের উপর রাখে।তারপর মহিলাটির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওনার মাথায় হাত রেখে মৃদ‍্যু কন্ঠে বলে

“খালা ডিনার করেছো?”

মহিলাটি ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে বললো

“না আম্মাজান তোমার আসার অপেক্ষা করতে ছিলাম।যাও তুমি গিয়া ফ্রেস হইয়া আসো তারপর দুজন মিলে এক সাথে খামু।”

“আচ্ছা,,,”

বলেই মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেস হওয়ার জন‍্য।এই ফ্লাট টায় একটা বেডরুম,একটা ডাইনিং রুম,একটা কিচেন আরেক টা বাথরুম।ব্লিডিং টার কালার একদম উঠে গেছে।জায়গায় ফাট ধরেছে।জানালার গ্রিলে জং ধরে একদম যা ইচ্ছে তাই হয়ে গেছে।মেঘ কয়েকবার চেয়েছিলো এই ফ্লাট টা ছেড়ে দিয়ে অন‍্য একটা ফ্লাটে উঠবে।কিন্তু যে টাকা মাইনে পায় তাতে এর থেকে ভালো ফ্লাট ওর পক্ষে এফোর্ট করা সম্ভব না।দুবছর ধরে ওর লেখা পড়া,খাওয়ার,জামা কাপর,বাসা ভাড়া এই সব কিছুর খরচ ‘ও’ নিজেই চালায়।ফেমিলির কারো কাছ থেকে একটা টাকাও নেয় না।আহাদ খান আর আজম রহমান প্রতি মাসে ওর একাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। কিন্তু মেঘ সেখান থেকে একটা টাকাও স্পর্শ করে না।

কাজের মহিলাটি মেঘের ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখছিলো।তখনই হঠাৎ করে ফাইলগুলোর মধ‍্যে থেকে সেই বিয়ের কার্ড দুটো বেড়িয়ে আসে।উনি কৌতুহল বশতো কার্ড দুটো হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে।ঠিক তখনই মেঘ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে।মহিলাটি কে এতোটা উৎসাহ নিয়ে কার্ড দুটো দেখতে দেখে মেঘ হাসি মুখে প্রশ্ন করে

“ওভাবে কি দেখছো খালা?”

মহিলা টি কার্ড গুলো দেখতে দেখতেই বললো

“আম্মা জান আমি এই কাগজ গুলা আরো একখানে দেখছি।এগুলা তোমার কাছে আসলো কোথা দিয়া?”

মেঘ তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো

“কোথায় দেখেছো?”

“তোমারে কইছিলাম না এক বড় লোক বাসায় কাজ করি সেইখানে দেখেছি।”

মেঘ বললো

“দেখতেই পারো,কারন এই কার্ড এখন এই শহরের প্রায় 50% নামি দামি বিজনেস ম‍্যানদের বাসায় খুজে পাবে।এগুলো কার বিয়ের কার্ড জানো?”

মেঘের প্রশ্ন শুনে মহিলাটি না সূচক মাথা নাড়ালো।মেঘ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো

বিজনেস ম‍্যান আহাদ খান এবং আজম রহমানের দুই ছেলের বিয়ে।মেঘের কথা শুনে মহিলাটি চোখ বড় বড় করে বললো

“এগুলা কি আহির খান আর মিহির রহমানের বিয়ার কার্ড?যাগো বিয়ার কথা টিবিতেও দেখাইছিলো?”

মেঘ ছোট্ট করে বললো

“হুমম!”

মহিলাটি অবাক কন্ঠে বললো

“ওনারা তো শুনছি খুব নামকরা মানুষ।ওনাগো বিয়ার কার্ড তুমি কই পাইলা?”

মেঘ স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“ওনারাই সকালে এসে দিয়ে গেলেন।”

মেঘের কথা শুনে মহিলাটির চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।উনি মেঘের দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন

“সত‍্যি করে কওতো আম্মাজান এইগুলা তুমি কই পাইলা?দেখো আমার কাছে একদম মিথ‍্যা কথা কবা না।আচ্ছা ওনারা কি তোমার অফিসের বস?”

ওনার অবস্থা দেখে মেঘ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো

“আরেহ না ওনারা আমার অফিসের বস হতে যাবে কেনো।আমি তো একটা ছোট খাটো কম্পানিতে চাকরি করি।ওনাদের অফিসে চাকরি করার মতো যোগ‍্যতা এখনো আমার হয়নি।”

মেঘের কথা শুনে মহিলাটি অসহায়ের মতো মুখ করে বললো

“তাহলে কই পাইলা?”

মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো

আমি বিজনেস ম‍্যান আজম রহমানের ছোট মেয়ে।আর মিহির রহমানের একমাএ ছোট বোন তাসনুবা সায়াজ মেঘনা।”

মেঘের কথা শেষ হতেই মহিলাটার হাত থেকে কার্ড দুটো নিচে পড়ে গেলো আর উনি চিল্লিয়ে বললো

“কিহ?”

হঠাৎ করে এতো জোড়ে চিৎকার দেওয়ায় মেঘ কেপে উঠলো।আবার পরক্ষনেই মহিলাটির অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে দিলো।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here