#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ60
কথাটা বলে আহান মেঘের পায়ের বাধন খুলে ওর বাহু ধরে দাড় করালো।মেঘ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আহান কে একটা ধাক্কা মারলো।আহান এমন আচৎমকা ধাক্কার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।তাই মেঘের ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।সেই সুযোগে মেঘ জোড়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আহান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।তারপর নিজেও ওর পিছনে পিছনে হাটা দিলো।মেঘ রুমে থেকে বের হয়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো।ওর হাত দুটো এখনো বাধা।’ও’ সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে হঠাৎ কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে হাসি হাসি মুখ করে মিহির দাড়িয়ে আছে।মিহির কে দেখে মেঘ একটা শস্তির নিশ্বাস ফেললো।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির এসে হাতের বাধন খুলতে খুলতে বললো
“আজব হাত বেধে রাখার কি আছে আমি তো সেটাই বুঝলাম না?”
আহান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
“কি করবো বল?তোর বোন মুরগির বাচ্চার মতো যেভাবে লাফালাফি করে তাতে না বেধে কোনো উপায় ছিলো।দেখ পায়ের বাধন খুলে দিয়েছি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোজা নিচে চলে এসেছে।”
আহানের কথা শুনে মিহির হেসে দিলো।তারপর দড়িটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো
“কামঅন ব্রো যতোই মুরগির বাচ্চার মতো লাফালাফি করুক আর দৌড়াদৌড়ি করুক এখান থেকে আজকে কোথাও যেতে পারবে না।”
মিহিরের কথাটা শেষ হতেই মেঘ গিয়ে মিহির কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“ভাইয়া আমি এখানে থাকবো না ।আমাকে বাসায় দিয়ে আয় প্লিজ।”
আহান এসে এক ঝটকায় মেঘকে মিহিরের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর ড্রইংরুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো
“আগে বিয়েটা হোক তারপর আমি নিজে গিয়ে তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
কথাটা বলতে বলতে আহান মেঘকে ড্রইং রুমে নিয়ে আসলো।এখানে এসে যা দেখলো তাতে মেঘ আরো অবাক হলো।কারন ড্রইং রুমের সোফায় আহির,রিয়ান,হিয়ান,অভি বসে আছে।ওদের সাথে একজন উকিল আরেকজন মধ্যবয়স্ক হুজুর লোক।আহান মেঘকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও গিয়ে মেঘের পাশে বসে পড়লো।তারপর ওর হাত চেপে ধরে বললো
“কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”
মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে কর্কস কন্ঠে বললো
“বিয়ে পড়ানো শুরু করবে মানে?কতোবার বলবো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না!করবো না!করবো না!”
আহান হাত ধরে টান দিয়ে মেঘকে আবার নিজের পাশে বসিয়ে দিলো।তারপর আচৎমকা ঠাস করে মেঘের গালে একটা চড় মারলো।মিহির,আহির,অভি,রিয়ান,হিয়ান অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন যে আহান আজ অবদি মেঘের গায়ে একটা আচোড়ও কেটে দেখেনি।সে আজকে মেঘকে চড় মারলো?মেঘ গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ ভাবতেই পারছে না আহান ওর গায়ে হাত তুলেছে।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“চুপচাপ এখানে বসে থাকো।যতোক্ষন পযর্ন্ত না বিয়ে পড়ানো কম্পিলিট হচ্ছে।ততোক্ষন পর্যন্ত এখান থেকে এক চুল পরিমানও যদি নড়েছো তাহলে আরো একটা কানের নিচে পড়বে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।আহান মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে কাজিকে চোখের ইশারায় বিয়ে পড়াতে বললো।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে আহান কে কবুল বলতে বললো।আহান র্নিদ্ধিধায় তিনবার কবুল বলে দিলো।কিন্তু মেঘকে অনেক বার কবুল বলতে বলার পরেও ‘ও’ চুপ করে বসে রইলো।ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আহান বললো
“মিহির তোর বোন মনে হয় সত্যিই বিয়েটা করবে না বুঝেছিস।একটা কাজ কর,উকিল আর কাজি দুজনকে মেরে ওনাদের লাশটা গায়েব করে দে।”
আহান কথাটা বলার সাথে সাথে মেঘ অবাক কন্ঠে মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“মেরে লাশ গায়েব করে দেবে মানে?বিয়েটা আমি করবো না।তাতে ওনাদের ভুলটা কোথায়?আপনি ওনাদের কেনো মারতে চাইছেন?”
মেঘের কথা শুনে আহান স্বাভাবিক স্বরেই বললো
“আমি বিয়ে করবো তাই ওনাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।এখন যখন বিয়েটা হচ্ছেই না তাহলে ওনাদের বাচিয়ে রেখে কি লাভ?”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“আজব এটা কোন ধরনের লজিক?বিয়েটা হচ্ছে না তাই আপনি দুজন নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেলবেন?আপনার লজ্জা করছে না এই কথাটা বলতে?”
আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে বললো
“নাহ একদমই লজ্জা করছে না।আমি যদি শান্তিতে থাকতে না পারি তাহলে এদের কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবো না।”
এইটুকু বলে আহান আহির আর মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“তোরা হা করে তাকিয়ে কি দেখছিস?যেটা বলেছি সেটা কর।ওনাদের মেরে লাশ টা গায়েব করে তারপর তোর বোনকে বাড়িতে দিয়ে আয়।”
আহির আর মিহির একসাথে বললো
“ওকে ব্রো!”
বলেই ওরা ওদের কোমরে শার্টের নিচে গোজা রিভলবার টা টেনে বের করলো।তারপর মিহির গিয়ের হুজুর লোকটার মাথায় রিভলবার তাক করলো।আর আহির গিয়ে উকিলের মাথায় তাক করলো।মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“তোরা কি করছিস এসব?তোদের মাথা ঠিক আছে?”
মেঘের কথা শুনে আহির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
“সরি মেঘ আমাদের কিছুই করার নেই।আমরা ব্রো’র কথা কখনো অমান্য করি না।”
মেঘ বললো
“তাই বলে দুটো নির্দোষ মানুষকে এভাবে মেরে ফেলবি?বিয়েটা আমি করবো না তাতে ওনাদের দোষ কোথায়?”
মেঘের কথা শেষ হতেই হুজুর লোকটা অসহায় কন্ঠে বললো
“মামনি প্লিজ বিয়েতে রাজি হয়ে যাও।নাহলে এনারা আমাদের মেরে ফেলবেন।আমরা মরে গেলে আমাদের পরিবার কে দেখবে?সবাই তো রাস্তায় এসে দাড়াবে।”
হুজুর লোকটার কথা শেষ হতেই উকিল ছেলেটা বললো
“আপু আপনি আমার ছোট বোনের মতো।প্লিজ আমাকে বাচান।আমার কিছু হয়ে গেলে আমার অসুস্থ মা-বাবা কে দেখার কেউ নেই।”
ওদের কথা শুনে মেঘ ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।এই প্রথম আহান,আহির,মিহিরের প্রতি মেঘের ঘৃনা হচ্ছে।ওরা নিজেদের টাকার অহংকারে অসহায় দুটো মানুষ কে এভাবে অহেতুক কারনে মেরে ফেলতে চাইছে?মেঘের চোখ থেকে দু-ফোটা পানি গালে গড়িয়ে পড়লো।’ও’ আহানের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো
“আমি বিয়েতে রাজি আছি।”
মেঘের কথা শুনে ওখানে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আহান এসে আবারও মেঘের পাশে বসে পড়লো।তারপর বললো
“দ্যাটস গ্রেট।আগে রাজি হলেই পারতে তাহলে ওনাদের আর ভয় দেখাতে হতো না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আর কিছু বললো না।অবশেষে মেঘ আর আহানের ধর্মীয় ভাবে আর আইনি ভাবে বিয়েটা হয়েই গেলো।শাক্ষী হিসেবে মিহির আর আহীর সাইন করেছে।বিয়ে কাজ শেষ হতেই আহান গিয়ে হুট করে কাজিকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর হাসতে হাসতে বললো
“আঙ্কেল আপনি তো দারুন এ্যাক্টিন করেন।যাষ্ট ফাটিয়ে দিয়েছেন।আপনার অভিনয় দেখে আমারই কান্না চলে এসেছিলো।আর মেঘ তো একটা বাচ্চা মেয়ে ‘ও’ রাজি না হয়ে যেতো কোথায়।”
আহানের কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।মেঘ ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে।উকিল ছেলেটা বসা থেকে দাড়িয়ে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললো
“ভাই আমার এ্যাক্টিন টা কেমন হয়েছে?”
আহান হুজুর লোকটা কে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো
“দারুন হয়েছে।তোকে উকিল না বানিয়ে এ্যাক্টর বানানো উচিৎ ছিলো।”
আহানের কথা শুনে ছেলেটা ফিক করে হেসে দিলো।ওদের সবার কথা শুনে মেঘের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষন এখানে যা হচ্ছিলো সবকিছু আগে থেকে প্লান করা ছিলো।মেঘ ভাঙা কন্ঠে বললো
“তারমানে আপনারা সবাই মিলে এতোক্ষন আমার সাথে নাটক করেছেন?”
আহান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে মেঘের কাছে এসে বললো
“তো!তোমার কি মনে হয়,তুমি বিয়েতে রাজি না এইজন্য আমি আমার বাবার বয়সের একটা লোক কে বিনা দোষে মেরে ফেলবো?”
আহানের কথা শেষ হতেই উকিল ছেলেটা মেঘের সামনে এসে বললো
“আর আমি তো আহান ভাইয়ের ছোট ভাইয়ের মতো।আমাকে মারা তো দূরের কথা,আজ অবদি ভাই আমাকে একটা ধমকও দেয়নি।খুব ছোট বেলায় আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন।আমার বাবা আহাদ আঙ্কেলের ম্যানেজার ছিলেন।উনি মারা যাওয়ার পর আমার লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে আমাদের সংসারের খরচ সব কিছু আহাদ আঙ্কেল দিয়েছেন।ষ্টাডি কম্পিলিট করার পর আহান ভাই চাকড়িটা পাইয়ে দিয়েছেন।ওনারা শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন।কখনো কিচ্ছু চায়নি।তাই আজকে যখন ভাই আমার কাছে এসে এইটুকু হেল্প চাইলেন আমি আর মানা করতে পারিনি সরি ভাবি।”
মেঘের ইচ্ছে করছে নিজের মাথাটা দেয়ালের সাথে বারি দিতে।ওর আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো আহান অকারনে কখনো কোনো নির্দোষ মানুষ কে মারেনা।তাই যাই হয়ে যাক এনাদের মারার তো প্রশ্নয়ই উঠে না।মেঘ মাথা নিচু করে থম মেরে দাড়িয়ে রইলো।
উকিল ছেলেটা আর হুজুর লোকটা নিজেদের কাজ কম্পিলিট করে চলে গেলেন।ওনারা যাওয়ার পর আহান,আহির,মিহির, অভি,হিয়ান, রিয়ান একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো আর নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো।তখনই হঠাৎ করে মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“তোমরা সবাই মিলে ঠকিয়েছো আমাকে।সবাই মিলে আমাকে মিথ্যা বলেছো,বোকা বানিয়েছো।তোমাদের কারো কাছে আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই।”
মেঘ এতো জোড়ে চিল্লিয়ে কথা বলায় সবাই অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ কথাটা বলেই দৌড়ে উপরে চলে গেলো।ওরা সবাই উপরে তাকিয়ে আরো অবাক হলো।কারন মেঘ রুমে না গিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে।ওরা সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিজেরাও মেঘের পিছনে পিছনে দৌড় দিলো।
______
মেঘ ছাদে এসে রেলিংএর উপরে দাড়ালো।ঠিক তখনই আহান এসে মেঘকে টান দিয়ে রেলিংয়ের উপর থেকে নামিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মেঘ ধাক্কা দিয়ে আহান কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর চিল্লিয়ে বললো
“ডোন্ট টাচ মি!খবরদার একদম ছোবেন না আমায়।আপনি আমায় ঠকিয়েছেন।আমার ইমোশন নিয়ে গেম খেলেছেন।”
মেঘের কথা শুনে আহান অসহায় কন্ঠে বললো
“এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না মেঘ।আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই বাচতে পারবো না।তুমি এসব কেনো করছো আমি জানি না।আর জানতেও চাই না।আমি শুধু এইটুকু জানি তোমাকে আমার চাই।এ্যাট এনি কস্ট।”
মেঘ আবার চেচিয়ে বললো
“বাট আমি আপনাকে চাই না।কতোবার বলবো আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আমার মনে আপনার জন্য কোনো ফিলিংস নেই।আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই।কেনো বুঝতে পারছেন না আপনি?”
মেঘের কথা শুনে আহানের রাগ উঠে গেলো।’ও’ মেঘের কাছে এগিয়ে এসে ওর বাহু চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বললো
“তুমি কেনো আমার থেকে দূরে থাকতে চাও?কি করেছি আমি?এতো গুলো বছর ধরে পাগলের মতো শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবেসে গেছি।আর তুমি সবকিছু জেনেও আমাকে আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো?আমি ভেবেছিলাম সবটা জানার পর তুমি হয়তো তোমার ভুলটা বুঝতে পেরে আমাকে কাছে টেনে নিবে।কিন্তু তুমি এখনো আগের মতো একই কথা বলে যাচ্ছো।”
মেঘ তাছিল্য হেসে বললো
“ভালোবাসা?কিসের ভালোবাসা বলুনতো?আপনি তো আমাকে কখনো ভালোই বাসেন নি।যদি ভালো বাসতেন তাহলে আজকে এভাবে ঠকিয়ে আমাকে বিয়ে করতে পারতেন না।আমার ইচ্ছের দাম দিতেন।কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে সব সময় তার ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকার কথা চিন্তা করে।আর আপনি তো শুধু নিজের কথা ভেবে গেছেন।যখন দেখেছেন আমি বিয়েতে রাজি হয়নি তখন জোড় করে মিথ্যাে বলে আমাকে বিয়ে করে নিয়েছেন।”
হিয়ান,রিয়ান,আহির,মিহির ওরা অবাক হয়ে মেঘের কথা শুনছে।আহান হতবিহ্বল চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ ভাবতেই পারেনি মেঘ শেষ পযর্ন্ত ওর ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করবে।’ও’ শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো
“তুমি এখন কি চাও মেঘ?”
আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘ সোজা ভাবেই বললো
“ডিবোর্স!আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি আমার ভালোবাসা মানুষটা কে বিয়ে করতে চাই।”
মেঘের কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।আহান দু-কদম পিছিয়ে গেলো।’ও’ বোকার মতো মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কানে বারবার মেঘের বলা “আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে চাই” এই কথাটা বাজছে।’ও’ ভাবতেই পারছে না মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে।মিহির মেঘের সামনে এসে বললো
“তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?”
মেঘ মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো
“হ্যা।”
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহির নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে মেঘকে কশিয়ে একটা চড় মারলো। এতো জোড়ে চড় মারায় মেঘ ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ওর গালটা জ্বলে যাচ্ছে।জিবনে হয়তো এতো জোড়ে কেউ ওকে মারেনি।তবে গালের থেকেও মনের মধ্যে বেশি কষ্ট লাগছে।বুকের বাম পাশটা বড্ড জ্বালা করছে।একটা সময় যে মানুষগুলো ওকে সবসময় আগলে রাখতো।তারা আজকে ওকে আঘাত করছে।তবে এতে ওর কোনো আফসোস নেই।’ও’ তো এটাই চায় সবাই ওকে ভুল বুঝুক।যাতে ‘ও’ যদি মরেও যায় তাহলেও যেনো কেউ ওর জন্যে আফসোস না করে।মিহির চিল্লিয়ে বললো
“নিজের মুখে আবার হ্যা বলছিস?তোর লজ্জা করছে না?ইচ্ছে করছে তোর গলা টিপে এখানেই মেরে ফেলি।আরে আমরা তো সামান্য একটু নাটক করেছি বিয়েটা দেওয়ার জন্য।তাতেই তুই আমাদের ঠকবাজ বলছিস।তুইতো আমাদের থেকেও বড় ঠকবাজ।আহান ব্রো কে ভালোবাসার কথা বলে এখন আবার বলছিস তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?ছিহ!এতোটা নিচে কিভাবে নেমে গেলি?”
মিহিরের কথা শেষ হতেই আহান একপা দু-পা করে পিছাতে পিছাতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
“ওকে মেঘ পরী,তুমি যা চাও তাই হবে।আমি তোমার লাইফ থেকে চলে যাবো।তুমি আমাকে ডিবোর্স দিয়ে আবার নিজের মতো নতুন করে সবটা গুছিয়ে নিও।তোমার ভালোবাসার মানুষটা কে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করো।দোয়া করি তোমার কখনো যেনো আমার মতো অবস্থা না হয়।”
কথাটা বলতে বলতে আহান পিছাতে পিছাতে ছাদ থেকে বেরিয়ে গেলো।আহানের যাওয়ার দিকে তাকাতেই মেঘের চোখ থেকে দু-ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো।আহির এসে মেঘের হাত ধরে টেনে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে দাড় করালো তারপর বললো
“আমার জিবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তোর মতো সার্থপর মেয়েকে নিজের বোন ভাবা।তুই কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না।আজকে তুই আমার ভাইকে যতোটা কষ্ট দিয়েছিস একদিন দেখিস তুই এর থেকেও বেশি কষ্ট পাবি।রিভেঞ্জ অফ ন্যাচ্যার বলে একটা কথা আছে জানিসতো? আজকে যেটা করলি একদিন সেটা সুদে আসলে ঠিক ফিরে পাবি।”
কথাটা বলে আহির মেঘকে আবার ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।তারপর হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলো।ওর সাথে সাথে মিহির,হিয়ান,রিয়ান, অভিও ছাদ থেকে নেমে গেলো।মেঘ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলো।ওর কান্নার শব্দ এই অন্ধকার রাতের সাথে মিলিয়ে গেলো।সবাই এতোক্ষন ওর কঠিন কথা গুলো শুনেছে।কিন্তু এখন ওর এই চিৎকার গুলো কেউ শুনতে পেলো না।কেউ জানতেও পারলো না ‘ও’ কতোটা কষ্ট মনের মধ্যে চেপে রেখে ওই কথা গুলো বলেছে।
#চলবে,,,,,