#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ61
আজ চারদিন ধরে নিজেকে রুম বন্ধি করে রেখেছে মেঘ।ওর নিজেকে কেমন জ্যান্ত লাশ মনে হচ্ছে।সেদিন রাতে ‘ও’ ছাদ থেকে নিচে নেমে দেখে রিয়ান,হিয়ান,অভি,আহির,মিহির ওরা সবাই আহান কে খুজতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে।মেঘ ওদের কথা শুনে বুঝতে পারে আহান ছাদ থেকে নেমে তখনই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে।মেঘকে নামতে দেখে মিহির ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সোজা বাড়িতে নিয়ে আসে।বাড়িতে আসার পর মেঘ ওর রুমে চলে আসে।সেদিন যে রুমে ঢুকেছে তারপর ‘ও’ আর রুম থেকে বের হয়নি।সার্ভেন্ট এসে সময় মতো ওকে খাবার দিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু মেঘ এক বেলাও ঠিক করে খাবার টা খায় না।কোনো রকম ঔষধ খাওয়ার জন্যে একটু খানি খায়।সারাদিন বেডের এক কোনায় শুয়ে শুয়ে আহানের কথা ভেবে কান্না করে।মাঝে মাঝে কান্না করতে করতে যখন ওর মাথায় ভয়ংকর যন্থনা উঠে তখন ‘ও’ বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে চিল্লিয়ে কান্না করে।তবে মুখে বালিশ চেপে ধরায় সেই কান্নার শব্দ কারো কানে গিয়েই পৌছায় না।
মেঘ আনশোয়া হয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফোনের গ্যাল্যারিতে আহানের কিছু পিক দেখছিলো।তখনই ওর রুমের দরজায় কেউ এসে নক করলো।মেঘ ভাবলো সার্ভেন্ট হয়তো খাবার নিয়ে এসেছে।তাই ‘ও’ ফোনটা বিছানায় রেখে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজাটা খুলতেই ‘ও’ অবাক হলো।কারন ওর সামনে হিয়ান দাড়িয়ে আছে।হিয়ানের চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়ান মেঘকে সাইড করে গটগট করে রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা লক করে দিলো।দরজা লক করতে দেখে মেঘের ভ্রু কুচকে এলো।হিয়ান মেঘের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বললো
“এতো কিছু করার পরেও তুই রুমে ঢুকে এভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস?লাষ্ট চারদিন ধরে আমরা প্রত্যেকটা মানুষ আহান কে পাগলের মতো খুজে চলেছি।আর তুই?তোর তো আহান মরে গেছে নাকি বেচে আছে সেটা নিয়েও কোনো মাথা ব্যাথ্যাই নেই।কি সুন্দর নিজের রুমে বসে আড়ামচে খাচ্ছিস,ঘুমাচ্ছিস।একটা বারও ভাবছিস না,তোর থেকে এতোবড় আঘাত পাওয়ার পর ওই ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে?”
হিয়ানের কথা শুনে মেঘ বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো।তারপর কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“আহান ভাইয়াকে চারদিন ধরে খুজে চলেছো মানে?ভাইয়া এখন কোথায় আছে?”
হিয়ান শক্ত কন্ঠে বললো
“জানিনা কোথায় আছে।তবে বাংলাদেশে নেই।অন্য কোনো কান্টিরিতে চলে গেছে।ওর ফোনটাও বন্ধ।”
কথাটা শুনে মেঘ ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।ওর মাথাটা কেমন খালি খালি লাগছে।’ও’ ভাবতেই পারেনি আহান কাউকে কিছু না বলে এভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।হিয়ান আবারও বললো
“চারদিন ধরে আমরা সবাই হন্নে হয়ে ওকে খুজে চলেছি।আমাদের যতো সোর্স ছিলো সবাইকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।কিন্তু সেদিন ফার্ম হাউজ থেকে বের হওয়ার পর ওকে আর কেউ দেখেনি।একটু আগে ওর পি.এ. জানালো ‘ও’ নাকি দেশ ছেড়েই চলে গেছে।কোথায় গেছে কাউকে কিচ্ছু জানায়নি।”
হিয়ানের কথা শেষ হতেই মেঘ হাউমাউ করে কেদে দিলো।মেঘকে কাদতে দেখে হিয়ান অবাক হলো।’ও’ ভাবতে পারেনি আহানের যাওয়ার খবর শুনে মেঘ কাদবে।হিয়ান অবাক হলেও ওর মন একটুও নরম হলো না।’ও’ বিদ্রুপের স্বরে বললো
“কাদছিস কেনো?তোর তো খুশী হওয়ার কথা।তুই তো এটাই চেয়েছিলি যাতে আহান তোর থেকে দূরে চলে যায়।আর তুই তোর নিউ বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারিস।”
মেঘ কাদতে কাদতে চিল্লিয়ে বললো
“নাহ,আমি কক্ষনো চাইনি ওনি আমার থেকে দূরে চলে যাক।আমি তো সারা জিবন ওনার সাথেই থাকতে চেয়ে ছিলাম।”
হিয়ান দাতে দাত চেপে বললো
“তোর এই ন্যাক্যামো গুলো এখন একটু বাদ দে প্লিজ।এসব এখন আমার আর সহ্য হচ্ছে না।এতোই যখন সাথে থাকতে চেয়েছিলি তাহলে অন্য ছেলের সাথে রিলেশনে গেলি কেনো?আহান কে এভাবে ঠকালি কেনো?”
মেঘ আগের থেকেও আরো জোড়ে চেচিয়ে বললো
“আমি কোনো রিলেশনে যাইনি।কাউকে ঠকাইনি।আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে।তাই এসব নাটক করতে বাধ্য হয়েছি।”
মেঘের কথাটা কানে আসার সাথে সাথে হিয়ান দু-কদম পিছিয়ে গেলো।তারপর কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“কি বলছিস এসব?তোর ব্রেন টিউমার আসবে কোথা থেকে?তুই নিজের দোষ ঢাকার জন্যে আমাকে মিথ্যা বলছিস তাইনা?আমি জানি তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস।”
হিয়ানের কথা শুনে মেঘ ওর দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো।তারপর ফ্লোর থেকে উঠে টেষ্টের সব রিপোর্ট গুলো হিয়ান কে দেখালো।সব রিপোর্ট দেখার পর হিয়ান বাকশূন্য হয়ে গেলো।ওরা সবাই মিলে মেঘকে কতো কিছু বলেছে অথচ কেউ একটা বারও মেঘের এতো বড় সমস্যা টা আন্দাজ করতে পারেনি।
হিয়ান কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে মেঘকে বললো ‘ও’ সবাইকে সবটা জানিয়ে দিবে।কিন্তু মেঘ অনেক কষ্টে হিয়ান কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাউকে কিছু বলতে বারন করলো।হিয়ান প্রথমে রাজি না হলেও পরে মেঘের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।মেঘ বলেছিলো ‘ও’ যেদিন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে সেদিন ‘ও’ নিজে সবাইকে সব সত্যিটা জানাবে।
তার এক সপ্তাহ পর মেঘ বাসার সবাইকে জানায় ‘ও’ আর এই বাসায় থাকতে চায় না।ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে অন্য আলাদা একটা বাসায় থাকতে চায়।সবাই মেঘের কথা শুনে সাফ সাফ মানা করে দেয়।কিন্তু মেঘ কারো কোনো কথায় পাএা না দিয়ে সবার সাথে মিসবিহেব করে বাসা থেকে বের হয়ে আসে।কারন এখানে থাকলে ওর অসুস্থতার কথা সবাই জেনে যেতো।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই মেঘ নিউ জব আর ফ্লাটের ব্যাবস্থা করেছিলো।’ও’ বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে নিজের ফ্লাটে উঠে।কিছু দিন পর অফিসও জয়েন করে।প্রথম প্রথম ওর কাজ গুলো বুঝতে একটু সমস্যা হতো।ধীরে ধীরে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।অফিস জয়েন করার এক মাস পর মেঘ ওর ভার্ষিটি চেইঞ্জ করে ফেলে।সাথে ওর ফোনের সিম কার্ডও চেইঞ্জ করে ফেলে।হিয়ান ছাড়া বাকিদের সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়।
এই দুই বছর মেঘকে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ওর থেরাপি,মেডিষিন সব কিছুর খরচ হিয়ান দিয়েছে।নিজের সাধ্যমতো মেঘকে সবচেয়ে বেষ্ট ট্রিটমেন্ট টা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।যখনই মেঘ একটু অসুস্থ হয়ে পড়তো হিয়ান নিজের সব কাজ ফেলে রেখে ওর কাছে ছুটে যেতো।আর মেঘ যতোক্ষন পযর্ন্ত না বেটার ফিল করতো ততোক্ষন পযর্ন্ত হিয়ান ওর পাশ থেকে এক পাও নড়তো না।
_________________________
বতর্মান
হিয়ান মেঘের মাথায় এক হাত রেখে বললো
“কাদছিস কেনো বুড়িটা?ভয় পাস না।আমি আছি তো,তোর কিচ্ছু হতে দেবো না।”
মেঘ হিয়ান কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“ভীষন ভয় লাগছে ভাইয়া।মনে হচ্ছে আমি কক্ষনো আর আমার কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে পাবো না।”
হিয়ান বললো
“মেঘ দুইটা বছর একা একা ফাইট করেছিস নিজের এই অসুখটার সাথে।আর আজকে শেষ মূহুর্তে এসে এরকম বোকা বোকা কথা বলছিস?ইনশাআল্লাহ দেখিস কিচ্ছু হবেনা তোর।একবার সার্জারিটা হয়ে গেলে সবকিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।”
হিয়ানের কথা শেষ হতেই মেঘ হিয়ান কে ছেড়ে দিলো।তারপর হিয়ানের দিকে ম্লানো হেসে বললো
“আমাকে সান্তনা দিচ্ছো ভাইয়া?থাক দিতে হবে না।আমার ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে।উনি বলেছেন সার্জারিতে আমার লাইফ রিস্ক আছে।বাচার চান্স খুবই কম।”
মেঘের কথা শুনে হিয়ান মাথা নিচু করে ফেললো।ওর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“আহান কে আমি আমার লাইফ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়ে ভালোই করেছিলাম।কারন দুইটা বছর আমি যেই যন্ত্রণা সহ্য করেছি আহান যদি আমাকে ওতোটা কষ্ট পেতে দেখতো কখনো সহ্য করতে পারতো না।আহান কেনো?বাকিরা কেউই সহ্য করতে পারতো না।তার থেকে ওরা আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে থেকেছে সেটাই ভালো হয়েছে।ওরা ভেবেছে আমি ওদের ছেড়ে ভীষন ভালো আছি।আমিও এখন আর ওদের এই ভুলটা ভাঙাতে চাই না।এতোদিন যেটা ভেবে এসেছে যতোদিন পযর্ন্ত বেচে থাকবো ততোদিনও নাহয় এটাই ভাববে।”
এইটুকু বলে মেঘ একটু থামলো।তারপর আবার বললো
“আমার একটা কথা রাখবে ভাইয়া?ধরে নাও এটাই আমার শেষ আবদার।”
শেষ আবদার কথাটি শুনে হিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ নীচু স্বরে বললো
“ভাইয়া আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কক্ষনো ওদের সত্যিটা বলবে না প্লিজ।ওরা এতোদিন যেমন ভেবে এসেছে যে আমি সার্থপর,ঠকবাজ,ক্যারেক্টারলেস একটা মেয়ে,আমার যাওয়ার পরও নাহয় সেটাই ভাবলো।ওরা সত্যিটা যদি জানতে পারে তাহলে সবাই খুব কষ্ট পাবে।তার থেকে আমাকে খারাপ ভেবে নাহয় সবাই আমাকে ভুলেই গেলো।সবার ভালোর জন্য নাহয় কিছু কথা অজানাই থেকে গেলো।আমি নাহয় একটা খারাপ মেয়ে হয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলাম।কেউ আমার জন্যে নাই বা দোয়া করলো।কিন্তু দিনশেষে ওরা সবাই ভালো তো থাকবে।আর ভুলে যাবে এই সার্থপর,খারাপ মেয়েটা কে।”
কথাটা বলে মেঘ আর এক মুহূর্তও ওখানে দাড়ালো না।দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।এদিকে হিয়ানের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পড়ছে।এতো চেষ্টা করার পরেও কি শেষ রক্ষা হবে না?আহানের কাছে কি মেঘকে আর ফিরিয়ে দিতে পারবে না?কেউ কি কোনোদিন জানতে পারবে না,এই দুই বছরে ওরা সবাই যতোটা কষ্ট পেয়েছে তার থেকে হাজারগুন বেশি কষ্ট মেঘ পেয়েছে।সত্যিই কি সবার সবকিছু অজানাই থেকে যাবে?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হিয়ান রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।
_____________________________
মেঘ ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো।সেখানে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।কাদতে কাদতে কখনো ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো বুঝতেই পারলো না।ঘুম যখন ভাঙলো তখন বিকাল সাড়ে চারটা বাজে।
মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ‘ও’ এতো সময় পযর্ন্ত কিভাবে ঘুমিয়েছে বুঝতেই পারছে না।এখনো ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ কিছুই করা হয়নি।মেডিসিন গুলোও খাওয়া হয়নি।শাওয়ার নেয়নি,নামাজ পড়েনি।সবকিছু একদম এলোমেলো হয়ে গেছে।সকালে কিছু না খেয়েই ছাদে চলে গিয়েছিলো।ছাদে যাওয়ার পর ওর ডাক্তার ওকে ফোন করে জানায় সামনের সপ্তাহে ওর সার্জারি হবে।আর অপরেশন থিয়েটারে যখন তখন ওর যা কিছু হয়ে যেতে পারে।’ও’ যাতে মেন্টালি নিজেকে সেইভাবে প্রিপেয়ার করে।সার্জারিতে আরো কিছু কমপ্লিকেশন হতে পারে ডাক্তার সেগুলোও ওকে জানায়।সব শুনে মেঘের মনে হয়েছিলো ‘ও’ হয়তো আর বাচবেই না।তাই তখন হিয়ান কে জড়িয়ে ধরে অভাবে কেদে দিয়েছিলো।মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নেওয়ার জন্যে।
মেঘ শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুচ্ছিলো।তখনই কেউ এসে দরজায় নক করলো।মেঘ টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে গিয়ে দরজাটা খুললো।দেখলো আহান দরজার সামনে দাড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।আহান কে এখানে দেখে মেঘ একটু হকচকিয়ে গেলো।আহান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো
“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও।আমরা সবাই একটু পরে ঘুড়তে বের হবো।”
কথাটা বলে আহান ফোনের দিক থেকে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই ওর দৃষ্টি মেঘের উপর আটকে গেলো।আহান মুগ্ধ দৃষ্টিতে পলকহীন চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।এই দৃষ্টিতে নেই কোনো লালশা,নেই কোনো খারাপ আকাঙ্খা।শুধু আছে একরাশ ভালোলাগা আর ভালোবাসার। শাওয়ার নেওয়ায় মেঘকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে।ওর চুল থেকে পানির ফোটা টুপটাপ করে ওর চোখ,গাল,ঠোট,গলায় চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা কোনো তাজা গোলাপ কে এইমাএ পানিতে চুবিয়ে ওঠানো হয়েছে।আর তার শরীর থেকে পানির ফোটা গুলো মুক্তোর মতো ঝড়ে পড়ছে।
আহান কে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘের অশ্যস্তি হতে লাগলো।’ও’ মাথা টা নিচু করে কাচুমাচু করতে করতে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।আহানের হঠাৎ চোখ গেলো মেঘের গলার দিকে।গলার দিকে চোখ যেতেই মুহূর্তের মধ্যে ওর চেহারা থেকে মুগ্ধতার রেশ কেটে গেলো।আহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘের গলার চেইনটার দিকে।যদিও লকেট টা দেখা যাচ্ছে না তার পরেও চেইননের ডিজাইন টা দেখে আহানের চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না যে এটা ওর দেওয়া সেই চেইনটা।আহান হাত বাড়িয়ে মেঘের চেইন টা ধরতে যাবে তার আগেই মেঘ দ্রুত দু-কদম পিছিয়ে গেলো।সেই সুযোগে আহান রুমের মধ্যে ঢুকে দরজাটা লক করে দিলো।আহানকে দরজা লক করতে দেখে মেঘ একটু ঘাবড়ে গেলো।পরক্ষনেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে কন্ঠে একটু জোড় এনে বললো
“একি আপনি পারমিশন না নিয়ে আমার রুমে প্রবেশ করেছেন কেনো?”
আহান দুষ্ট হেসে বললো
“তুমি পারমিশন না নিয়ে আমার নামের লকেট গলায় পড়তে পারো,আমার সারনেইম ইউজ করতে পারো,আমাকে না বলে অন্য ফ্লাটে গিয়ে থাকতে পারো,আর আমি পারমিশন না নিয়ে একটু তোমার রুমে ঢুকতে পারবো না?আর তাছাড়া তুমি আমার আইনতো বিয়ে করা বউ।তাই তোমার রুমে ঢুকতে গেলে আমার পারমিশন নেওয়ার কোনো প্রয়জোন নেই।”
আহানের কথা শুনে মেঘ ভয় পেয়ে গেলো।মেঘ বুঝতে পারছে না যে ‘ও’ আহানের সারনেইম ইউজ করে সেটা আহান কিভাবে জানলো। একথা তো কারোরই জানার কথা না।মেঘের ভাবনার মধ্যে আহান ওর একদম কাছে গিয়ে ওর কোমরে হাত রাখলো।তারপর হেচকা টান দিয়ে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর কানের কাছে লো ভয়েজে বললো
“তোমার খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলা মিথ্যে গুলো আস্তে আস্তে সব বেড়িয়ে যাচ্ছে মাই কুইন।একবার আমি পুরো সত্যিটা জানতে পারি তারপর তোমার কি অবস্থা করবো তুমি ভাবতেও পারছো না।এতোগুলো বছর অনেক জ্বালিয়েছো এখন আর এসব জ্বালা সহ্য করার মতো শক্তি আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই।”
কথাটা বলে আহান মেঘের গলায় থাকা চেইনটা টান দিতেই জামার মধ্যে থেকে লকেট টা বেড়িয়ে আসলো।আহান লকেট টার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।যেটা ভেবেছিলো ঠিক সেটাই হয়েছে।এটা সত্যিই ওর দেওয়া চেইনটা।তারমানে ওর মেঘ পরী আজ অবদি এটা গলা থেকে খুলেনি।আহানের ভাবনার মধ্যেই মেঘ ছো মেরে আহানের হাত থেকে চেইনটা নিয়ে লকেট টা আবার জামার মধ্যে ঢুকিয়ে হাইড করে ফেললো।আহান বিদ্রুপের স্বরে বললো
“লকেট টা লুকিয়ে ফেললেই কি সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে নাকি?”
মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“ক-কিসের ম-মিথ্যে?এটা আপনার দেওয়া উপহার ঠিকই।বাট “A” তে আপনার নাম সেইজন্য এটা পড়িনি।আমার বয়ফ্রেন্ডের নামও “A” দিয়ে।তাই এটা আর খুলিনি,এখনো পড়ে আছি।”
মেঘের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহান হাত দিয়ে শক্ত করে মেঘের গাল চেপে ধরলো।তারপর রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“আর একটা মিথ্যা কথা বললে তোমার হাত-পা ভেঙে তোমাকে জ্যান্ত মাটিতে পুতে ফেলবো।আমাকে কি তোমার সার্রকাসের জোকার মনে হয় যে তুমি যখন যা বলবে সেটাই আমি বিশ্বাস করে নিবো?অলরেডি তোমার ওইসব ভুলভাল কথা বিশ্বাস করে আমার জীবন থেকে দুটো বছর নষ্ট হয়ে গেছে।আর না!এইবার আমি আর তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করবো না।নিজে খোজ খবর নিয়ে সবটা জানবো।”
কথাটা বলে আহান মেঘের গাল ছেড়ে দিলো।মেঘ ভয়ে ভয়ে জিঙ্গেস করলো
“নিজে খোজ খবর নিয়ে সবটা জানবেন মানে?”
.
আহান মেঘের আরেকটু কাছে গিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললো
“আমি অলরেডি লোক লাগিয়ে দিয়েছি।এই দুই বছর তুমি কি কি মহৎ কাজ করেছো সব নিউজ চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমার কাছে এসে পড়বে।এমনিতেই বড্ড দেরি করে ফেলেছি।আমি যদি সেদিন তোমার কথা গুলো বিশ্বাস না করে তোমার ব্যাপ্যারে একটু খোজ-খবর নিতাম তাহলে আর এতো কিছু হতোই না।”
আহানের কথা শুনে মেঘের হাত-পা কাপছে।’ও’ ভাবছে আহান যদি সবটা জেনে যায় তাহলে ওর এতোদিনের করা সব প্লান মাটিতে মিশে যাবে।আর সত্যিটা জানলে আহান কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না।মেঘকে এতোটা ভয় পেয়ে যেতে দেখে আহান মেঘের গালে শ্লাইড করতে করতে বললো
“এতো ভয় পাচ্ছো কেনো মেঘ পরী?”
আহানের প্রশ্নের উওর না দিয়ে মেঘ মাথাটা নিচু করে ফেললো।আহানের স্পশে ওর শরীর জমে যাচ্ছে।হৃদ স্পন্দনের গতি দ্রুত উঠা নামা করছে।ঠোট জোড়া মৃদ্যু কাপছে।কোথা থেকে রাজ্যের লজ্জা,জড়তা এসে মেঘের চোখের পাতায় ভর করেছে।তাইতো চোখ তুলে আহানের দিকে তাকানোর শক্তি টুকু পাচ্ছে না।হুট করেই আহান এক হাত মেঘের ঘাড়ে রেখে ওর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় মেঘ চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো।আর আহান পরম যত্নে চোখ বন্ধ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটার ঠোটের স্বাদ গ্রহন করতে লাগলো।
চলবে,,,,,