#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ_12
খান ম্যানসন,,,,,
মেঘ হটাৎই ঘুমের মাঝে অনুভব করলো ওর ভীষন অসস্তী লাগছে,,,শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ,,,,ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর গলাটা জোড়ে চেপে ধরেছে।মেঘ ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়লো। ও এক হাত নিজের বুকে রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে,,এসির মধ্যেও শরীর দরদর করে ঘামছে । মেঘ অনুভব করলো ওর পেটে ভীষন ব্যাথ্যা করছে। সাড়া শরীর কেমন কাপছে,,,,গলাটা শুকিয়ে গেছে। হটাৎ এমন শরীর খারাপ হওয়ার কোনো কারনই বুঝতে পারলো না । ভীষন পানির পিপাসা পেয়েছে ওর, কিন্তু বিছানা থেকে নামার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না ।পাশে তাকিয়ে দেখলো আলিশা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে একবার ভাবলো আলিশাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলবে, আবার পরক্ষনেই ভাবলো না থাক সাড়াদিনে আপ্পির উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে এখন আর ওকে ডাকা ঠিক হবে না।সাড়িকা সাঈফাও পাশের রুমে দরজা আটকে ঘুমাচ্ছে, এতো রাতে ওদের ডাকাও ঠিক হবে না ।রুমের মধ্যে অনেক খুজলো কিন্তু কোথাও কোনো পানির ছিটেফোটাও নেই।মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে গায়ে ওরনাটা কোনোরকম জড়িয়ে নিচের দিকে রওনা দিলো। সাড়া বাড়িতে লাল নীল সবুজ রঙের ডিম লাইট জ্বলছে,,,, ডিম লাইটের মৃদ্যু আলোতে পুরো বাড়ি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মেঘ গুটিগুটি পায়ে সিড়ির কাছে আসলো,,,, সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনি দেখলো ড্রইং রুমের আলো জ্বলছে।ও ভালো করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো ড্রইংরুমের সোফায় বসে আহান, আহির ,আর মিহির ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে।তিনজনের হাতে তিনটে ল্যাপটপ আর ওদের সামনের টেবিলে একগাদা ফাইল রাখা। আহান সিড়িআস মুখ করে নিজের ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে মিহির আর আহির কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।আর ওরা দুজন খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা শুনছে আর নিজেদের হাতে থাকা ল্যাপটপে টাইপ করছে।দেখেই ভোঝা যাচ্ছে অফিসের কোনো জরুরি প্রজেক্ট রেডি করছে।মেঘ ওদের দিকে বিরক্তি কর চোখে তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে বললো
আল্লাহ্ তুমি এই মানুষ রুপী আজব প্রানিগুলো কে পৃথিবীতে কেনো পাঠালে? এই মহাবিশ্বে এতো গুলো গ্রহ উপগ্রহ আছে সেখানে পাঠাতে পাড়লে না?বিশেষ করে এই আহান খানেকে এই ব্যাট্যা আস্ত একটা মানুষরূপী এলিঅন,,,একে তো এলিঅনদের সাথেই ভালো মানায়। আমি তো নিশ্চিত এর যদি ডি.এন.এ. টেস্ট করা হয় তাহলে 99.9% এলিঅনদের সাথে মিলে যাবে।আরে ভাই কোথায় চার বছর পর নিজের দেশে এসেছিস টানা একমাস খাবি ঘুমাবি আর বিশ্রাম নিবি। তা না করে এতো রাত জেগে ওই খচ্চর দুটোকে কাজ গেলাচ্ছে এই দুটোও বসে বসে গিলছে। যএসব কাজ খোড়ের দল কোথাকার। এরা এতো কাজ কিভাবে করে আল্লাহ জানে ।তারপর আবার মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিয়ে বললো ধ্যাত তেরি আমি এসব কেনো ভাবছি? ওরা গোল্লায় যাক তাতে আমার বাপের কি হুহ।
মেঘ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ডাইনিংয়ের দিকে যেতে লাগলো।আহান, মিহির, আহির কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ল্যাপটপ থেকে চোখ সড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো, দেখলো মেঘ সিড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিংরুমের দিকে যাচ্ছে। ওরা ভাবলো মেঘ হয়তো পানি খেতে নিচে এসেছে তাই মেঘকে কিছু জিঙ্গেস না করে আবার নিজেদের আজে মনোযোগ দিলো। এই বাসার নিচতলার একদম মাঝখানে উপড়ে উঠার সিড়ি।তার একপাশে বিশাল বড় ড্রয়িংরুম আর তারপাশে একটা মিডিয়াম একটা ষ্টোররুম আর দুইটা বেডরুম।আর সিড়ির আরেক পাশে বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে একটা ডাইনিং স্পেজ তার পাশে একটা বড় কিচেন আর দুইটা ওয়াশরুম আর একটা বেডরুম।ডাইনিং রুমটা আর ড্রইং রুমটা একদম ওপেন এস্পেজে।ড্রইংরুম থেকে স্পষ্টো ডাইনিং রুমটা দেখা যায়।মেঘ ডাইনিংরুমে ডুকে ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানির একটা বোতল নিয়ে চেয়ারে বসে বোতলের ঢাকনাটা খুলে ঢকঢক করে পুড়ো পানিটা শেষ করে ফেললো।কিন্তু খালি পেটে এতো খানি পানি খেয়ে গা গুলিয়ে উঠলো কেমন বমি বমি পাচ্ছে।তাই বমি আটকানোর জন্য কিছুক্ষন থম মেরে বসে রইলো। ওর সাড়াদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি, সকালে ব্রেকফাস্টে শুধু দুইটা ব্রেড আর একটু ফ্রুট জ্যাম খেয়েছিলো।রাতে এখানে আসার পর আহির আর মিহির রেষ্টুরেন্ট থেকে চিকেন বিরিয়ানি এনেছিলো কারন চিকেন বিরিয়ানি আলিশা, মেঘ ,সাড়িকা , সাঈফা ওদের চারজনেরই খুব ফেবারিট। কিন্তু মেঘের মন খারাপ থাকায় ও রাতে কিছুই খায়নি ।সবাই ওকে অনেকবার খেতে বলেছে কিন্তু ও না খেয়েই উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেঘ অনুভব করলো পানি খাওয়ার পর ওর পেটে ব্যাথ্যাটা আগের থেকে আরো বেরে গেছে।ও ভাবলো হয়তো এতো খানি ঠাণ্ডা পানি খেয়েছে তাই পেটে ব্যাথ্যাটা বেড়ে গেছে,,এখন একটু নরমাল পানি খেলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে।তাই ও নিজের হাত দিয়ে পেটটা শক্ত করে চেপে ধরে টেবিলের উপরে থাকা নরমাল পানির জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে খেয়ে নিলো।কিন্তু পেটের ব্যাথ্যাটা তো কমলোই না উল্টে ভীষন বমি পাচ্ছে।মেঘ একহাতে পেট চেপে ধরে আরেক হাত নিজের মুখে রেখে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।আহান, আহির , মিহির এতোক্ষন খুব মনোযোগ দিয়ে নিজেদের কাজ করছিলো,মেঘের কান্নার শব্দে তিনজনই চমকে ডাইনিংএর দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।ওরা তিনজনই বসা থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে ডাইনিংয়ের দিকে আসতে লাগলো। মেঘ ওভাবেই পেট আর মুখ চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আহান, আহির, মিহির মেঘের পিছন পিছন গিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাড়ালো। ওয়াশরুমের দরজাটা একদম খোলা।মেঘ একহাতে পেট চেপে ধরে বমি করছে ,, পেটে কোনো খাবার না থাকায় শুধু মুখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে,,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নাও করছে। আহান দ্রুত নিজের ট্রাউজারটা উপরে ফোল্ড করে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকলো।একহাত দিয়ে মেঘের কোমর ধরে আরেকহাত কপালে রাখলো।বমি করতে করতে মেঘ একসময় দূর্বল হয়ে আহানের গায়ে ঢলে পড়লো।আহানও একহাত দিয়ে মেঘের কোমর শক্ত করে ধরে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে দাড় করালো । তারপর ট্যাপ ছেড়ে মেঘের চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ওকে কোলো তুলে বাইরে বের হয়ে আসলো।ড্রইংরুমে এসে ওকে খুব সাবধানে সোফায় বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসলো।ওদের পিছনে পিছনে আহির আর মিহির আসলো,, তিনজনের চোখে মুখেই স্পষ্ট চিন্তা ও ভয়ের ছাপ ।
আহীর মেঘের আরেক পাশে বসে ওর গালে কপালে হাত ছোয়ালো তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
“ওর গায়ে জ্বর উঠলে এভাবে হটাৎ করে বমি করে। কিন্তু এখন শরীরের টেম্পারেচার তো নরমালই আছে,,মনে তো হচ্ছে না ওর গায়ে জ্বর উঠেছে তাহলে এভাবে হটাৎ বমি হওয়ার কারন কি?”
মিহির রাগি গলায় বললো
“জ্বরের জন্য বমিটা হয়নি, রাতে না খাওয়ার কারনে হচ্ছে। ”
মেঘ সোফার সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে ,,,এই মূহুর্তে বড্ড ক্লান্ত ও,,,খুব খিদেও পেয়েছে। কিন্তু মুখ ফুটে যে কিছু খেতে চাইবে শরীরে সেই শক্তিটুকুও নেই।পেটে এখনো হালকা হালকা ব্যাথ্যা করছে তাই এখনো একহাতে পেট চেপে ধরে রেখেছে।আহান মেঘের পাশে বসে একদম শান্ত ভঙ্গিতে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করছে। একধ্যানে শুধু মেঘের দূর্বল,ক্লান্ত ,বিধ্বস্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা যেনো আস্ত একটা মায়াপরী,,একবার কেউ এর দিকে তাকালে সহজে চোখ ফেরাতেই পারবে না।চোখ, নাক, ঠোট ,গাল সব কিছুই আল্লাহ্ খুব যত্ন করে অনেক সময় নিয়ে আর্ট করে হয়তো নিজের হাতে বানিয়েছেন। মাঝে মাঝে আহানের এটা ভেবে হাসি পায় এই মেয়েটাকে কেউ একজন পছন্দ হয়নি বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো।এটা নিতান্তই একটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া কিছুই না । অবশ্য আল্লাহ্ যা করেন সবসময় মানুষের ভালোর জন্যই করেন।যদি আবিরের সাথে মেঘের বিয়েটা না ভাঙতো তাহলে ও মেঘকে কিভাবে পেতো । ঠিক এই একটা কারনের জন্য আবির আর জেরিন মেঘের সাথে এতো অন্যায় করার পরও বাচিয়ে রেখেছে। নয়তো এতোদিনে ওই বিশ্বাস ঘাতক দুইটার কি করতো সেটা ও নিজেও জানে না।প্রায় চার বছর পর আহান আজকে মেঘকে দেখলো। এই চার বছরে আহান একবারের জন্যও মেঘের চেহারা দেখেনি, আর না শুনেছে ওর কন্ঠস্বর। ,,, হিমা, হিয়ান, অভি, রিয়ান ওদের সাথে প্রায়ই মেঘ ভিডিও কলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো।কিন্তু আহানের সাথে ভিডিও কল তো দূরের কথা কখনো নরমাল ফোন কল অবদি দেয়নি ইনফ্যাক্ট একটা মেসেজ পযর্ন্ত কখনো করেনি। আহানের এই বিষয়টা খুব খারাপ লাগলেও ওর কিছুই করার ছিলো না,, সবাই তো ওকে এই একটা শর্তই দিয়েছিলো যে ও মেঘকে তখনই পাবে যখন মেঘের থেকে দূরে থাকবে। এখন কেউ ওর থেকে মেঘকে কেড়ে নিতে পারবে না ,,ওর মেঘ পড়িকে ও নিজের করেই ছাড়বে সেটা কারো ভালো লাগুক বা না লাগুক। এইসবই ভাবছিলো তখনই মেঘের রাতে না খাওয়ার কথাটা শুনে ওর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
আহান রাগি গলায় মেঘকে জিঙ্গেস করলো
“তুমি রাতে কিছু খাওনি??”
মেঘ মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে ডানে বামে না সূচক মাথা নাড়ালো। আহান এবার ভীষন রেগে গেলো ও চেচিয়ে বললো
“ওয়াও সেটা আবার আপনি মাথা নেড়ে বলছেন? তারমানে আপনি আজকে সারাদিন কিছুই খান নি? ইচ্ছেতো করছে চড়িয়ে তোর গালটা লাল করে দেই।আরে নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে, তুই কোথাকার ছাগল রে। তুই জানিস না টাইম টু টাইম না খেলে তোর ব্লাড প্রেসার লো হয়ে যায়,,অসুস্থ হয়ে পড়িস ।”
আহানকে এভাবে রেগে কথা বলতে দেখে মেঘ ভিষন ভয় পেয়ে যায় ।ও ভয়ে আহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আহির নিজের একহাত মেঘের মাথায় রেখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আহানকে উদ্যেশ্য করে বলে
“প্লিজ ব্রো এবার থামো মেঘ ভয় পাচ্ছে!”
আহান তাকিয়ে দেখলো মেঘ গুটিশুটি হয়ে আহীরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুজে আছে। আহান ভাবলো এখন ওকে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। একে তো অসুস্থ তার উপর আবার এই মেয়ে বেশি ভয় পেলেই অঙ্গান হয়ে যায়,,, এখন ভয় পেয়ে অঙ্গান হয়ে গেলে একটা সাইড এফেক্ট হতে পারে । আহান জোড়ে জোড়ে দুইটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা কন্টোর্ল করার চেষ্টা করলো। তারপর বসা থেকে উঠে গিয়ে একটা ফাষ্ট-এইড বক্স নিয়ে ফিরে এলো,,,বক্স খুলে একটু নাড়াচাড়া করে কয়েকটা ঔষধের পাতা বের করলো,,,সেখান থেকে দুইটা ঔষধ ভেঙে মিহিরের হাতে দিয়ে বললো
“এই দুইটা এক্ষুনি ওকে খায়িয়ে দে,, এতে বমি আর পেটে ব্যাথাটা কমে যাবে যাবে। আর বাকিগুলো খাবার খাওয়ার পড়।”
মিহির ডাইনিং টেবিলে থেকে এক গ্লাস পানি এনে মেঘের সামনে ঔষধ আর পানির গ্লাস ধরে বললো
“চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো ঔষধটা খেয়ে নে, একদম ঘাড় ত্যাড়ামি করবি না ।”
মেঘ আহীরের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে একবার ঔষধের দিকে তাকালো।তারপর মিহিরের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে, কাদো কাদো গলায় বললো
“আমি ঔষধ খাবো না,,,দেখেই কেমন গা টা গুলিয়ে উঠছে খেলে নিশ্চিত আবার বমি পাবে!”
আহীর আদুরে গলায় বললো
“সোনা বনুটা আমার প্লিজ ঔষধ টা খেয়ে নে,, নাহলে আবার শরীরটা খারাপ করবে।”
মেঘ বিরক্তি নিয়ে ভাঙা গলায় বললো
“তোমরা জানো না, আমার ঔষধ খেতে একদম ভালো লাগে না। আর তাছাড়া আহান ভাইয়া তো ডক্টর না, ইনফ্যাক্ট ওনার ঔষধ সম্পর্কেও তো মনে হয় না কোনো ধারনা আছে! তাহলে আমি ওনার দেওয়া ঔষধ কেনো খাবো? ওই ঔষধ গুলো খেলে যদি আমার শরীর আরো খারাপ হয়ে যায়।”
মেঘের কথা শুনে আহীর আর মিহির আর চোখে আহানের দিকে তাকালো।আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,,
মিহির মৃদু ধমক দিয়ে বললো
“শাট আপ! উল্টোপাল্টা কথা না বলে ঔষধ টা খেয়ে নে।”
মেঘ জেদ্দি গলায় বললো
“বললাম না খাবো না,,একবার যখন বলেছি খাবো না তারমানে কিছুতেই খাবো না।”
আহান গিয়ে মিহিরের হাত থেকে ঔষধ নিয়ে নিলো।এরপর মেঘের পাশে বসে একহাত দিয়ে মেঘের গাল জোড়ে চেপে ধরে ঔষধ গুলো মুখে পুরে দিয়ে পানি খাইয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলো। মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঔষধটা খিলে নিলো।ঔষধ টা খায়িয়ে আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কিচেনে চলে গেলো । আর মেঘ রাগি চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে একগাদা বকা দিলো।কিছুক্ষন পর আহান কিচেন থেকে খাবার গরম করে প্লেটে করে নিয়ে এসে আহীরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ,,সোফার একপাশে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। আহীর ভাত মেখে মেঘেকে খায়িয়ে দিলো ।মেঘও চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো সবটা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে ঔষধটাও খেয়ে নিলো এবার আর ওকে জোড় করতে হয়নি আহানের ভয়ে নিজের ইচ্ছেতেই খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষে মিহির মেঘকে কোলে করে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে নিচে এসে আবার তিনজন নিজেদের কাজে মনোযোগ দিলো।
_________________________
সকালে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করলো। মেঘ এখন একদম সুস্থ হয়ে গেছে,,পেটে ব্যাথ্যা বমি বমি ভাব উইকনেস কিছুই নেই। ঔষধ গুলো দারুন কাজ দিয়েছে,, মনে মনে আহানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলেও মুখে সেটা প্রকাশ করলো না । ব্রেকফাস্ট করার পর মিহির ,আহির আর আহান অফিসে চলে গেলো। বাকিরা সবাই হিয়ানদের বাড়িতে আসলো ।মেঘদের সাড়াদিনটা অনেক হৈ হুল্লোর আর মজায় কাটলো । দুপুরে লাঞ্চ করার পর হিমাকে নিয়ে ওর শশুর বাড়ির লোকেরা সবাই চলে গেলো।ওনারা যাওয়ার পর বাকিরাও সবাই আস্তে আস্তে নিজেদের বাড়ির উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়লো। আহান , আহীর , মিহির ওদেরকে দুপুরে হিয়ান ফোন করেছিলো লাঞ্চে খেতে আসার জন্য ।কিন্তু ওরা জানালো ওরা আসতে পারবে না একটা ইম্পরটেন্ট প্রজেক্ট নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত আছে ।
_________________________
রাতে ঘুমানোর জন্য মেঘ নিজের বিছানা ঠিক করছিলো, মিহির এসে দরজায় হালকা নক করে বললো
“আসবো??”
মেঘ বালিশ ঠিক করতে করতে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো
“হ্যা আসো!”
“তোর শরীরের অবস্থা এখন কেমন? সাড়াদিনে একবারও পেটে ব্যাথ্যা, বমি হয়েছে?”
মেঘ কাজ শেষ করে স্থির হয়ে বসে বললো
“না,,,,নাউ আই অ্যাম অ্যাপসুলোটলি ফিট অ্যান্ড ফাইন।”
মেঘের কথা বলতে বলতে চোখ যায় মিহিরের হাতে থাকা একটি মিডিঅ্যাম সাইজের লাগেজের উপর।
মেঘ ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করে
“ভাইয়া এতো রাতে তুই ল্যাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
“আমি কোথাও যাচ্ছি না, এটা তোর জন্য আহান ভাইয়া ইউ.কে. থেকে নিয়ে আসছে।”
মেঘ কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে ল্যাগেজটার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর হি হি করে হেসে দিলো।হাসতে হাসতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“যেমন আহান ভাইয়া তেমন ওনার গিফট ‘গাজাখোড় মার্কা’,, মানুষ বিদেশ থেকে কতো কিছু নিয়ে আসে আর এনি কিনা আমার জন্য ল্যাগেজ নিয়ে এসেছে। হিমা আপিরা যখন বাংলাদেশে এসেছিলো তখন সবার জন্য কতো জুয়েলারি, ডিজাইনস ড্রেস ,মেকাপস , চকলেট এনেছিলো। আহান ভাইয়াও আপিদের কাছে সবার জন্য অনেক কিছু পাঠিয়ে ছিলেন। আর আমার জন্য কি পাঠিয়ে ছিলেন?? “একটা ল্যাপটপ” এমন একটা ল্যাপটপ যেটার আহান খানের মতোই মাথার তারছেড়া। গত ছয়মাস ধরে এতো চেষ্টা করেও ঠিকঠাক মতো ফাংসন গুলোই বুঝতে পারলাম না। আর এখন পাঠিয়েছেন এই ল্যাগেজ।”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“ওই শাকচুন্নি,, ল্যাপটপের জন্য তো তুইই কান্নাকাটি করছিলি!’ আম্মু’ আব্বুকে আর আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিতে মানা করেছিলো বিধায়,,তুই একসপ্তাহ ভার্ষিটিতে যাস নি,,ইনফ্যাক্ট রুম থেকেই বের হসনি। তার জন্যই তো আহান ভাইয়া আম্মু কে ফোনে অনেক বুঝিয়ে তোর জন্য ল্যাপটপ চালানোর পারমিশন নিয়েছে।”
মেঘ মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো
“তো ওনাকে ইউ.কে. থেকে ল্যাপটপ পাঠাতে কে বলেছে? আমি তো বাবাই কে বলেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কিনে দিতে,, যেগুলো আমি খুব ভালোভাবে চালাতে পাড়ি। আর এটা দুই একটা ফাংসন ছাড়া ঠিকঠাক মতো কিছুই বুঝতে পাড়ি না।”
“ওটা একটা লেটেস্ট মডেলের ল্যাপটপ তাই ফাংসন গুলো একটু অন্য রকমের । ছাড় তোকে বলে লাভ নেই।তোর মতো গরু ভালো জিনিস চিনবেও না আর চালাতেও পারবে না। ”
কথাটা বলেই মিহির হাতে থাকা ল্যাগেজ টা বেডের উপর উঠিয়ে ওটার চেইনটা খুলে ফেললো। মেঘ ল্যাগেজের তাকিয়েই ওর মুখটা হা হয়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে একবার ল্যাগেজের দিকে তো একবার মিহিরের দিকে তাকাচ্ছে। কারন ল্যাগেজটা ভর্তি গিফটস সবগুলো র্যাপিং পেপার দিয়ে র্যাপ করা। মেঘ ভীষন এক্সাইটেড হয়ে বেডের উপর বসে একটা একটা করে র্যাপিং পেপার খুলে দেখতে লাগলো।
মিহিরও বেডের উপর বসে ঠোটে মুচকি হাসির রেখা টেনে বোনের কান্ড দেখতে লাগলো । মেঘ র্যাপিং পেপার খুলে প্রথমেই দেখতে পেলো ছয়টা ছয় রকমের চকলেটের বক্স । তার পর পেলো ছোট্ট পুতুল ওয়ালা কয়েকটা চাবির রিং। এরপর পেলো কয়েকটা শপিজ, দুইজা মিনি সাইজের টেডিবিয়ার, একটা মেকআপ কিট, দুইটা পারফিউম । পারফিউম দুইটার উপরের অংশটা চৌকো বক্সের মতো, আর কাঠের তৈরি। তার উপরে সোনালী সেড দিয়ে খোদাই করে লেখা “মেঘ পড়ি” । মেঘ লেখাটার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে নামটা আওরাতে লাগলো “মেঘ পড়ি”। মেঘ লেখাটার উপরে একটা চুমু খেয়ে পারফিউম টা আলাদা করে একপাশে রেখে দিলো। সবার শেষের র্যাপিং পেপার মোড়ানো বক্সটা খুলতেই ওর চোখে পড়লো একটা সেলফ ফোন। মেঘ ব্রু কুচকে মিহির কে উদ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“আমি নিউ ফোন দিয়ে কি করবো ??আমার তো ফোন আছে…”
মিহির বিদ্রুপের স্বরে বললো
“ওমা তাইই তোর ফোন আছে ?? আমি তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম! তা তোর কোন ফোনটা যেনো? যেটা তোকে আব্বু চার বছর আগে কিনে দিয়েছিলো সেইটা? ”
মেঘ চোখ ছোট ছোট করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ও কি বলতে চাইছে। মিহির বললো
“ওটাকে ফোন বলে না ঝুনঝুনি বলে।ওটা যদি ফেরিওয়ালাদের ফ্রিতেও দিস না তাও ওরা নেবে না। এই চার বছরে ওটা কমপক্ষে চল্লিশটা আছাড় খাইছে , চার বার পানিতে পড়ে গেছে আর কতোবার যে তুই ওইটাকে সাড়িয়েছিস সেটা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। তোর ওই ফোন নামের কলঙ্কটা দিয়ে সেদিন আহীর কে কল দিয়েছিলাম ,,কল ঢুকতে ঢুকতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে কলটা দিয়েছি কিসের জন্য। ওটা যে স্পিডে চলে আমার মনে হয় তার থেকে ঠেলাগাড়িও জোড়ে চলে। ওই ঠেলাগাড়ি মার্কা ফোন দিয়ে করো কাছে কল দেওয়ার চেয়ে কবুতর দিয়ে চিঠি পাঠানো ভালো।”
মেঘ রেগে গিয়ে বললো
“বাই এনি চান্স,, তুই কি আমার ফোনটা কে অপমান করার চেষ্টা করছিস??”
#চলবে…..