দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ১

0
1786

রুপের বাজারে আমার জুড়ি নেই,বয়স থমকে আছে এসে কুড়িতেই…..

সবে শাওয়ার থেকে বেড়িয়ে ফুরফুরে মেজাজে গুনগুনিয়ে সুর তুলেছিল গোধূলি।গুনগুন করতে করতে মাথায় প্যাচানো টাওয়ালটা খুলতে খুলতে আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।কেউ একজন রুমের মেইন দরজার ফ্রেমটায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।সঙ্গে সঙ্গে গান বন্ধ করে দিয়ে চোখদুটো ভালো করে ঘষে নিয়ে আবার আয়নার দিকে তাকালো।না,ওর কোনো ভুল হয় নি,ও ঠিকই দেখছে।আয়নার উপর থেকে চোখ সড়িয়ে বিস্ফোরিত চোখে পিছনে ফিরে গোধূলি।নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর।এতবছর ধরে যার কোনো খোঁজ খবর নেই হঠাৎ করে সে যদি কারো সামনে এসে উপস্থিত হয় তাহলে বিশ্বাস না হওয়াটাই স্বাভাবিক।গোধূলির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে ও প্রায় সাত বছর পর দেখছে।এই সাত বছরে একটা বারের জন্যও দীপ্ত কখনো গোধূলিদের বাড়িতে আসে নি।কেন আসে নি সেটা গোধূলির জানা নেই।আর ও কখনো এর কারণ জানার প্রয়োজনবোধও করে নি।বরং দেখা না হলে ওর জন্য আরো বেশি ভালো!তবে হ্যাঁ বাকিদের সাথে ঘটনাচক্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজের সুবাদে দেখা সাক্ষাৎ হলেও গোধূলির সাথে তেমনটা কখনো হয় নি।এমনকি এই সাত বছরে দীপ্তের ছায়াটাও অবধি দেখে নি ও।এইমুহূর্তে গোধূলির মনে অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।দীপ্ত আজকে হঠাৎ এই বাড়িতে কেন এসেছে?কি মনে করে এসেছে?নাকি কোনো কাজ ছিল?যেই গোধূলির সাথে এই দীপ্তের সাপে নেউলে সম্পর্ক,আজ সেই দীপ্ত ওর পদধূলি গোধূলির ঘরে কিভাবে দিলো?

দীপ্ত কপাল কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গোধূলির দিকে তাকিয়ে আছে।গোধূলিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীপ্ত গলার স্বর উঁচু করে বললো,

– বয়স থমকে গেছে সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তুই এমন থমকে আছিস কেন?

দীপ্তের বলা কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই থতমত খেয়ে যায় গোধূলি।থমকানোর মতো কিছু হয় নি।তবে হ্যাঁ ও শুধু একটু অবাক হয়েছে!আর শুধু ও না,দীপ্ত আসাতে এই বাড়ির সকলেই কমবেশি একটু হলেও অবাক হয়েছে।এই সাত বছরে সবাই কত বার জানতে চেয়েছে,দীপ্ত কেন এই বাড়িতে আসে না?কত করে বলেছে আসার জন্য কিন্তু এই ছেলে আসে নি।বরাবরই ঠিক কোন না কোন কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে।

গোধূলি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে দীপ্তের দিকে ভেংচি কেটে চোখ সড়িয়ে নেয়।এইমুহূর্তে হাসার জন্য বিন্দুমাত্র ইচ্ছা না থাকলেও সৌজন্যতার খাতিরে গোধূলি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো,

– আপনি ভুল ভাবছেন আমি থমকে যাই নি।আসলে ভাবছিলাম আপনি হঠাৎ এ…….

– আমাকে নিয়ে আপনার এতকিছু না ভাবলেও চলবে।আপনি বরং তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসেন।

গোধূলিকে ওর পুরো কথা বলতে না দিয়েই দীপ্ত ওর কথাটা শেষ করেই দ্রুত গোধূলির রুম থেকে প্রস্থান করে।গোধূলি দীপ্তের বলা কথাটার মানেটা ঠিক বুঝতে পারলো না।দরজার দিকে ভ্রুকুটি করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো গোধূলি।দরজার দিক থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে দেওয়ালে টাঙানো ময়ূরাকৃতির ঘড়িটার দিকে তাকাতেই গোধূলির চোখ কপালে উঠে যায়।ঘড়ির কাটা বলছে,”আমি দশটার ঘর ছুঁই ছুঁই”!

গোধূলি এই বছর পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে।আজ ওর ভার্সিটিতে নবীন বরন।সাড়ে দশটায় ভার্সিটিতে উপস্থিত থাকতে হবে।গোধূলি তড়িঘড়ি করে রেডি হচ্ছে।রাতে ওর সব বান্ধবীরা বলছিল, ওরা সবাই নাকি শাড়ি পড়ে আসবে গোধূলিও যাতে শাড়ি পড়ে আসে।কিন্তু গোধূলি তেমন একটা শাড়ী পরে না।যদিও কখনো পরে তাহলে শাড়ী সামলাতে পারে না।আর এই চৈত্রের গরমের তপ্ত দুপুরে ঘেঁমে জবজবে হয়ে যাবে।সুখে থাকতে ভূতে কিলায়!এতো প্যারা নেওয়ার কি দরকার ?এই গরমে শাড়ী পড়ে গেলে ওকে না জানি কোন নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়!গোধূলি এতো ঝামেলা ফেইস করতে পারবে না।আগে থেকেই সাবধান থাকা ভালো নয় কি!তাই গোধূলি শাড়ী পরলো না।কালো আর সাদার কম্বিনেশনের সুন্দর একটা চুড়িদার পরেছে।কোমড় ডিঙানো ঘন ব্রাউনি চুলটা ভালো করে আঁচড়িয়ে নিয়ে কালো একটা হেয়ারব্যান্ড দিয়ে উপরে একটা জুটি করে নিয়েছে।কানে থাকা রূপালি রঙের ঝুমকোয় সূর্যের আলোর ঝলকানিতে চিলিক দিয়ে উঠছে।মেক-আপ খুব একটা পছন্দ না ওর।সাজ বলতে চোখের পাপড়িতে হালকা মাশকারা আর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ।ব্যাস,এতেই ওর সাজ কমপ্লিট।ওহ্ হ্যাঁ আরেকটা জিনিস বাকি রয়ে গেছে!মোর ইম্পর্ট্যান্ট ইজ,গোধূলির ফেভারিট হাতঘড়ি।ড্রেসিং টেবিলের সামনে যত্ন করে রাখা ঘড়িটা নিয়ে সযত্নে হাতে পড়ে নিলো গোধূলি।এখন ওর সাজ কমপ্লিট!

গোধূলি আয়নায় আরো একবার নিজেকে ভালো করে দেখে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখতে পেলো ড্রয়িং রুমে গোধূলির ফুপি বসে আছে।গোধূলি দৌড়ে গিয়ে দীপ্তি বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,

– ফুপি তুমি কখন এলে?কেমন আছো তুমি?

– ভালো আছি।এইতো একটু আগেই।তুই কেমন আছিস?

– আমিও ভালো আছি।

– তুই এত শুকিয়ে গেছিস কেন?মুখটা এত মলিন দেখাচ্ছে কেন?খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিক মতো?কেমন যেন কালো কালো হয়ে গেছিস।

দীপ্তি বেগম গোধূলির গালে,হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো।গোধূলি ওর ফুপির দিকে চোখ গোলগোল করে তাকায়।নিজের হাসি দমিয়ে রেখে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললো,

– তুমি এমনভাবে বলছো মনে হয় যে,আমি আগে বিশ্বসুন্দরী ছিলাম!

– তুই কোনো বিশ্বসুন্দরীর চেয়ে কম কিসে শুনি?

দীপ্তি বেগম গোধূলির গাল টেনে আদুরে গলায় বললো।গোধূলি ওর ফুপির কথায় মুখ ভেংচিয়ে বললো,

– হয়েছে ফুপি,আমাকে এইসব ঢপ দেওয়া এবার বন্ধ করো।নেহাতি আমি তোমার নিজের ভাইঝি বলে!আমার জায়গায় অন্যকোনো মেয়ে হলে তো ঠিকই বলতে,মেয়ের অবস্থা দেখো কয়লাবানুর আরেক রূপ!

কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয় গোধূলি।দীপ্তি বেগম ফের গোধূলির কান ধরে চোখ রাঙিয়ে আদুরে গলায় সুর টেনে বললো,

– তাই নাহ্ বুড়ি!খুব পেঁকে গেছিস তুই না?

– হু!

– আরে মানুষের গায়ের রঙে কি আসে যায়?তাঁর গুণই তো সব।

– আমরা কাউকে জাজ করার আগে তাঁর গুণগুলো খুঁজি না ফুপি।মেয়ে হোক বা ছেলে,আগে তাঁর রূপটাই খুঁজি।অবশ্য বাহ্যিক রূপটাই তো আগে চোখে পড়ে তাই হয়তো।তারপরেও মানুষ গুণের আগে রূপই দেখে।গুণগুলো তো আস্তে আস্তে প্রকাশ পায়।তবে হ্যাঁ অনেকের কাছে রূপের আগে গুণটাই চোখে পড়ে।কিন্তু সেটা খুবই কম,দশ পার্সেন্ট!বাকি নব্বই পার্সেন্টই রূপে মুগ্ধ হয়।তাই বলি কি ফুপি বাস্তবিক হও।কারণ আমাদের সমাজের যে ভিন্ন রূপ সেটা ভুলে গেলে কি করে হবে বলো!

গোধূলিকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে আছেন দীপ্তি বেগম।গোধূলির কথা শুনে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।এই মেয়েটা ছোট থেকেই এইরকম, যুক্তিবাদী স্পষ্টভাষী।গোধূলির কথার প্রত্যুত্তরে উনার আর কিছু বলার থাকে না।ও যা বলেছে প্রত্যেকটা কথাই যুক্তিসঙ্গত আর বাস্তবসম্মত।তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয়।অন্যদিকে এতক্ষণ একটু দূরে বসে ফুপি ভাইঝির আলাপন শুনছিলেন সাজ্জাদ সাহেব।ড্রয়িং রুমে থাকা বড় দেয়াল ঘড়িটার দিকে এক পলক তাকিয়ে গোধূলির দিকে তাকান।তারপর ধীর কন্ঠে বলেন,

– সাজি,আজকে তো ভার্সিটিতে তোমার প্রথম দিন তাই না?

বাবার শান্ত কণ্ঠ শুনে চকিত দৃষ্টিতে তাকায় গোধূলি।সাজ্জাদ সাহেবের দৃষ্টি স্থির খবরের কাগজের দিকে।গোধূলি বাবার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে কোমল স্বরে বললো,

– জ্বি আব্বু।

সাজ্জাদ সাহেবের হাতে থাকা খবরের কাগজটা টেবিলের উপর রেখে পাশে থাকা চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিলেন।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শীতল কন্ঠে বললো,

– বাহিরে দীপ্ত অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।আজ দীপ্ত তোমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে,যাও তাড়াতাড়ি।

সাজ্জাদ সাহেবের কথাটা শুনতেই গোধূলি বিস্মিত হয়ে তাকালো।ওর জন্য দীপ্ত অপেক্ষা করছে মানে?দীপ্ত ওকে ভার্সিটি নিয়ে যাবে কেন?বাড়িতে এত মানুষ থাকতে দীপ্তকে কেন নিয়ে যেতে হবে?আর তার থেকেও বড় কথা ওর নিজের দু’দুটো ভাই থাকতে দীপ্তকেই কেন যেতে হবে?গোধূলির মনে এখন অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।

– আপা,তোর ছেলের বিজনেসের কি খবর?

গোধূলিকে তাগাদা দিয়ে সাজ্জাদ সাহেব প্রশ্ন ছুড়লেন করে বোনের দিকে।দীপ্তি বেগম স্মিত হেসে বললো,

– তোর ভাগ্নেকে কি তুই চিনিস না?সারাদিন তো ওই অফিস নিয়েই থাকে।সারাদিন কাজ আর কাজ।আবার অফিসের কাজ বাসায় এসে করে।তবে ইদানীং দীপ্তকে একটু অন্যমনস্ক দেখছি।ওকে দেখলে মনে হয় ও কোনো কিছু নিয়ে বেশ চিন্তিত।অনেকবার জিজ্ঞাসও করেছি কিন্তু এই ছেলে কিচ্ছু বলে না।

– ব্যবসায়ীদের অনেক চিন্তা ভাবনা করে কাজ করতে হয়।ওদের সবদিক সামলে চলতে হয়।বাসায় বসে থাকলে চলে না।আর….

গোধূলিকে এখনো নির্বিকার চিত্তে বসে থাকতে দেখে সাজ্জাদ সাহেব উনার পুরো কথা শেষ না করে ফের বললেন,

– কি হলো সাজি তুমি বসে আছো কেন?বললাম না দীপ্ত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

বড়দের কথার উপর কথা বলবে এই শিক্ষা এ বাড়ির মেয়েদের দেওয়া হয় নি।বড়রা যা বলেন বা করেন সেটা ভালোর জন্যই করেন।এই শিক্ষায় দেওয়া হয়েছে এ বাড়ির ছেলে মেয়েদের।আর তাই গোধূলিও ওর বাবাকে ওর মনের প্রশ্নগুলোর বাস্তবে কোনো রূপ দিতে পারলো না।মাথা নিচু রেখেই নরম গলায় বললো,

– যাচ্ছি আব্বু।

__________________

গোধূলি বাহিরে এসে দেখে দীপ্ত গাড়ির মধ্যে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।দীপ্তর পড়নে কালো জিন্স হোয়াইট শার্ট কনুই অবধি ফোল্ড করা।হাতে ব্র‍্যান্ডের ঘড়ি আর চোখে কালো সানগ্লাস।দীপ্তকে দেখতে বেশ লাগছে!কিন্তু গোধূলি সেই দিকে ভ্রুক্ষেপহীন। ও নিজের মতো দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।গাড়ির কাছে গিয়ে পিছনের দরজা খুলে গাড়িতে উঠতে নিলেই দীপ্ত গলার স্বর উঁচু করে বলে উঠলো,

– আমাকে দেখতে কি ড্রাইভারের মতো লাগছে?

দীপ্তের বলা কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই গোধূলি অবাক হয়ে পিছনে ফিরে।দীপ্ত ভ্রু কুঁচকে গোধূলির দিকে তাকিয়ে আছে?দীপ্তের বলা কথাটার মানে বুঝতে গোধূলির সেকেন্ড তিনেক সময় লাগলো।কথার আসল মানে বুঝতে পেরে গোধূলি একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধ করে সামনে এসে দাড়াতেই দীপ্ত গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে দেয়।গোধূলি কোনো বাক্য ছাড়াই চুপচাপ গিয়ে ফ্রন্ট সীটে বসে পড়ে।দীপ্ত দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে এসে ড্রাইভিং সীটে বসে।নিজের সীট বেল্ট লাগিয়ে গোধূলির দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বললো,

– তোর বয়স তো দেখছি এখনো শূন্যতেই থমকে আছে!

গোধূলি জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল।দীপ্তের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় দীপ্তের দিকে।দীপ্ত বাঁকা হেসে গোধূলির দিকে একটু ঝুঁকতেই গোধূলি ভয় পেয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।বরফের মতো শক্ত হয়ে বসে আছে।ওর গরম নিঃশ্বাস দীপ্তের মাথায় আঁচড়ে পড়ছে।সেকেন্ড তিনেক পরেও কোনো কিছু আঁচ করতে না পেরে পিটপিটিয়ে চোখ খুলে চাইলো গোধূলি।ভালো করে চোখ খুলে দেখে দীপ্ত ওর সীট বেল্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।বুকে হাত দিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে গোধূলি।এতক্ষণে ও বুঝতে পারলো তখন দীপ্তের বলা কথাটার মানে কি।কিন্তু ও তো সীট বেল্টটা লাগিয়েছিল!তাহলে খুললো কিভাবে?দীপ্ত সীট বেল্ট টা লাগিয়ে দিয়ে গোধূলির দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,

– তোদের মাথায় কি ওইসব নেগেটিভ ভাবনা ছাড়া অন্য কিছু আসে না?ইডিয়েট!

কথাটা শেষ করেই দীপ্ত গাড়ি স্টার্ট দেয়।ইডিয়েট!এই শব্দ টা শুনেই গোধূলির কান গরম হয়ে যায়।ইডিয়েট?মানে অপদার্থ!গোধূলি ইসলাম সাজি কিনা অপদার্থ!কথাটা ভাবতেই গোধূলির বুক চিঁড়ে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে।ও সীট বেল্ট লাগাতে জানে।কোনো কারণে হয়তো খুলে গিয়েছিল।তার জন্য ওকে ইডিয়েট বলবে?গোধূলি আরেক দফায় একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বললো,

– আমি সীট বেল্টা টা লাগিয়ে ছিলাম।হয়তো কোনোভাবে খুলে গিয়েছিল।আর আপনি যেমনটা ভাবছেন ওই রকম কিছু না।তখন আপনি হঠাৎ করে আমার দিকে ওইভাবে ঝুঁকে গেলেন তাই একটু চমকে উঠেছিলাম,দ্যাটস ইট।

গোধূলির সোজাসাপটা জবাব শুনে দীপ্ত আঁড়চোখে একবার গোধূলির দিকে তাকিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়।গোধূলিও আর কোনো কথা বলে নি। সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইলো।দীপ্ত স্বাভাবিক ভাবেই ড্রাইভ করছে গন্তব্য গোধূলির ভার্সিটি।

______________

ভার্সিটির প্রথম দিন নিয়ে সবাই একটু বেশিই এক্সাইটেড থাকে।তাই গোধূলি বেশ এক্সাইটেড ছিল। আজকে ওর সব বান্ধবীদের নিয়ে একসাথেই ভার্সিটিতে আসার কথা ছিল।দুইভাইকে গতকাল রাতেই বলে দিয়েছিল ও আজ ওর বান্ধবীদের সাথে ভার্সিটিতে যাবে।কিন্তু গোধূলির বেড লাক!ওকে আজ দীপ্ত নিয়ে এসেছে।ফটোগ্রাফি আর ভিডিওগ্রাফি বরাবরই খুব ভালো লাগে গোধূলির।ভেবেছিল সব বান্ধবীরা মিলে ফিল্মই স্টাইলে ভার্সিটিতে এন্ট্রি নিবে।আজকে ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, সুদর্শন ছেলের হাতের ঘড়িতে কারোর ওড়নাটা গিয়ে আটকাবে!আর তখন গোধূলি সেটা দূর থেকে ক্যামেরাবন্দী করবে!কিন্তু তা আর হলো কই?দীপ্ত সবকিছু ভেস্তে দিলো!গোধূলির সব স্বপ্ন,স্বপ্নই রয়ে গেলো।ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া অবধি সব ফর্মালিটি গোধূলির আব্বুই করেছে।তো আজকে ভার্সিটিতে নিয়ে আসার দায়িত্ব দীপ্তকে কেন দিতে গেলো গোধূলি সেটাই বুঝতে পারছে না।এত দিন তো দিব্যি ভালোই ছিল ও।আজ হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে ওর ঘাড়ে চেপে বসেছে কে জানে!

আচমকায় গাড়ির ব্রেক কষার ফলে গোধূলি তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা সামনের দিকে ঝুকে যায় সেই সাথে ওর ভাবনার সুতো ছিড়ে।চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।অস্থির দৃষ্টি ফেলে সামনে তাকিয়ে দেখে ওর গন্তব্যে চলে এসেছে ও।গোধূলি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।ভার্সিটির মেইন গেইটটা খুব সুন্দর করে সাজানো। মনে মনে ভাবছে, ক্যাম্পাসের ভেতরটা হয়তো আরো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।

– হা করে না থেকে,গাড়ি থেকে নাম এবার!

দীপ্তের কথায় হুশ ফিরে গোধূলির।দীপ্তের কথায় গোধূলির রাগ হলেও রাগটা আর প্রকাশ করলো না।শুধু দীপ্তের দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে।গোধূলি গাড়ি থেকে নেমে চলে যেতে নিলেই দীপ্ত আদেশ জারি করে বললো,

– এখানেই দাঁড়া।এখান থেকে এক পা’ও নড়বি না।আমি গাড়িটা পার্ক করে আসছি।

গোধূলিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দীপ্ত ওর কথাটা শেষ করেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।গোধূলি ভ্রুকুটি করে দীপ্তের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো কিচ্ছুক্ষণ।গোধূলি চরম বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো,

– মানেটা কি?আসছি মানে?এই লোকটা কি এখন আমার সাথে ক্যাম্পাসের ভেতরও যাবে নাকি?

– হুম যাবো!তোর কোনো সমস্যা?

গোধূলি দীপ্তের কথা শুনে টাশকি খেয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছে দীপ্ত ওর কথাগুলো শুনে ফেলল নাকি?কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?ও তো বিড়বিড় করে বলেছে তাহলে শুনলো কিভাবে?আজব!

দীপ্ত গোধূলির মুখ দেখে গোধূলির অগোচরে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।চেহারায় সিরিয়াস ভাব এনে বললো,

– তুই কথাগুলো এত জোরে বলছিলি যে,দেখ ওইযে গেইট এর সামনে দাড়িয়ে থাকা দারোয়ান চাচাও শুনেছে!

গেইটে পাশে পাহারারত দারোয়ানকে দেখিয়ে বলল দীপ্ত।দীপ্তের কথা শুনে গোধূলি চিন্তায় পড়ে গেলো,সত্যিই কি ও এতো জোরে কথাগুলো বলে ফেলেছে নাকি?পরমুহূর্তেই আবার ভাবে,ধ্যাৎ! সেটা তো কোনোভাবেই পসিবল না। কারণ কথাগুলো তো ও বিড়বিড় করে বলছিল।এই ছেলে বরাবরই চতুর!ওকে যে বোকা বানানোর পায়তারা করছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে গোধূলি।তাই এখানে অযাচিত ভাবে সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।ওকে ঠিক সময়ে ক্যাম্পাসে যেতে হবে।গোধূলি বড় একটা শ্বাস টেনে নিজের একটু শান্ত করে নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,

– আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে- স্বর্ণালী তালুকদার(নামের এক তৃতীয়াংশ)
#সূচনা_পর্ব

চলবে………

[ বি.দ্র. ১ঃ~#দীপ্ত_গোধূলি গল্পের পার্টগুলো অনেকেই কপি করে পোস্ট করেছে,করছে।আমি গল্পের ভুল গুলো সংশোধন করে কিছু কিছু জায়গায় সংযোজন বিয়োজন করেছি।তাই অন্য কোথাও গল্পটা কেউ পড়ে থাকলে বা পড়লে বিভ্রান্ত হবেন না।হ্যাপি রিডিং🌺]

[ বি.দ্র. ২ঃ~ কপি করা নিষেধ ❌ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here