দীপ্ত গোধূলি – পর্ব ৩৫

0
450

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩৫

গোধূলির সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।ওর সামনে কেউ হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়িয়ে দেয়া হাতের বিপরীতে থাকা মানুষটিকে দেখবে বলে মুখটা উপরে তুলতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে।আস্তে আস্তে পুরো শরীরটা কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে।ওর সামনে যে মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে সে আর অন্য কেউ নয়,দীপ্ত!

মিহিরের এনাউন্সমেন্ট শুনার পর বেশ অবাকই হয়েছিল গোধূলি।আরো একটি কাপল?রায়ান আদিবার মাঝে অন্য কাপল কি করে এলো?কে বা কারা হতে পারে?এইসব প্রশ্ন গোধূলির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।নিজের কৌতূহল মেটাতে সবটা দেখবে বলে মনস্থির করলো।কিন্তু সবকিছু থমকে যায় যখন ওই বড় লাইটের আলোটা নিজের গায়ে এসে পড়ে।

যথাসম্ভব নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে গোধূলি।অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের বাবা দিকে তাকায় গোধূলি।সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের চাহনির কারণ বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ান।বাবার মাথা নাড়াতে দেড়ি হয়েছে অবাধ্য চোখের জল গড়িয়ে পড়তে এক মুহূর্তও দেরি হয় নি।বাবার উপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আহসান সাহেবের দিকে তাকালে সেখানেও একই উত্তর পেয়ে গোধূলির বুঝতে বাকি নেই সবটা আগে থেকেই ঠিক করা।শুধু ওই জানতো না!এই সব কি ঘটছে?কেন ঘটছে?গোধূলির বোধগম্য হলো না!মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
দীপ্ত তখনও হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গোধূলির চোখ বেঁয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে সেই প্রসারিত হাতের তালুতে!দীপ্তের হৃৎপিণ্ডে মুচড় দিয়ে উঠে।ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে দীপ্ত।

– গোধূলি আ…..

দীপ্ত কিছু বলতে যাচ্ছিল।দীপ্তের গলা শুনতেই কান গরম হয়ে আসে গোধূলির।দীপ্তের দিকে না তাকিয়েই হাত উঁচিয়ে দীপ্তকে চুপ থাকতে বুঝায়।দীপ্ত অসহায় দৃষ্টিতে গোধূলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মুহূর্তে গোধূলিকে ওর ঠিক কি বলা উচিৎ আর কি নয় বুঝতে পারছে না।আদৌ কি কিছু শুনার বা বলার অবস্থাতে আছে ও!দীপ্তের সব কথা যেন গলায় দলা পাকিয়ে আসছে।এই মুহূর্তে নির্বাক থাকা ছাড়া আর কোনো পথই দীপ্তের জানা নেই।গোধূলি হাতের পিঠে চোখ মুছে নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা রাখে দীপ্তের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের উপর।

রিসোর্টে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষ মুগ্ধ নয়নে দীপ্ত-গোধূলি যুগলবন্দীর দিকে তাকিয়ে আছে।গোধূলিকে দেখে মনে হচ্ছে ঠিক যেন কোনো অপ্সরা।গোল্ডেন গাউনের উপর মেরুন ফতোয়া আর তার ঠিক পাশেই মেচিং সুটে দীপ্ত।দেখতে কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে দুজনকে।দীপ্তের হাত ধরেই সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে আসে গোধূলি।রায়ান এতক্ষণে বুঝে গেছে এত সাসপেন্সের মূল সারপ্রাইজ দীপ্ত গোধূলি!কিন্তু শুধু রায়ানেই নয়!রায়ানের মতো আহান, ইহান,আদিবা গোধূলি, লাজুক, মোটকথা বাড়ির বড়রা ছাড়া এই ডিসিশনের কথা কেউই জানতো না!ইনফ্যাক্ট মিহিরও জানতো না।ওকে শুধু এনাউন্স করতে বলা হয়েছে।যখন গোধূলিকে দেখতে পায় তখন মিহিরও বেশ অবাকই হয়।আহান বোনের অবস্থা বুঝতে পারছে।এই এনাউন্সমেন্টে যতটা না আহান শক্টড তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি শক্টড গোধূলির লেগেছে।আহান সাজ্জাদ সাহেব আর আহসান সাহেবকে এসে জিজ্ঞাস করলো,

– চাচ্চু!আব্বু!এই কাজটা কি ঠিক হলো?

ছেলের কথায় আহসান সাহেব খুব জোড় গলায় বলে,

– দীপ্ত আমাদের সাজিকে খুব ভালো রাখবে দেখিস!

– আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এটা না আব্বু!দীপ্ত সাজিকে খুব ভালো রাখবে সেটা আমিও জানি।কথাটা ভালো বা খারাপ রাখার নয়।মানলাম আমাদের বলা হয় নি!কিন্তু সাজি?ওকেও কি জানানোর প্রয়োজনবোধ করো নি তোমরা?

– আমাদের সিদ্ধান্তই ওর সিদ্ধান্ত!আমরা যেটা ঠিক বলে মনে করেছে সেটাই করেছি।আর আমার মনে হয় না সাজি আমাদের কথার অবাধ্য হবে!

– আর সেই সুযোগটাই তোমরা নিলে?

– আহান!

– সরি চাচ্চু!তোমাদের বলতে এসে হয়তো আমারই ভুল হয়েছে।তোমাদের মেয়ের উপর তোমাদের অধিকার,জোড় থাকবে এইটাই স্বাভাবিক।ভাই হিসেবে আমার অধিকার নাই থাকতে পারে!

আহানের কথায় সাজ্জাদ সাহেব বলেন,

– আহান তুই এইভাবে বলছিস কেন?সাজির উপর তোর অধিকার থাকবে কেন হাজারবার আছে।তোদেরকে সারপ্রাইজ দেবো বলে কিছু জানানো হয় নি!

সাজ্জাদ সাহেবের কথায় আহান রুদ্ধকন্ঠে বলে,
– আর সারপ্রাইজ!

– সাজ্জাদ আমার মনে হয় আহান ঠিকই বলছে।হটকারিতায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না! সাজি আদৌ এই এনগেজমেন্টটা করতে চায় কিনা একবার জেনে নিলে ভালো হতো না?

আহসান সাহেবের কথায় আহান তাচ্ছিল্যে হাসি দিয়ে বলে,

– তোমাদের কি মনে হয়!তোমরা যদি এখন সাজিকে এই এনগেজমেন্টটা করতে না করো তাহলে ও শুনবে?

– অবশ্যই!

– শুনবে না!

– মানে?

– কারণ ও তোমাদের মাথা নিচু হতে দেবে না!
ইউ নো হোয়াইট চাচ্চু,সব কিছুতেই না জোড় কাটানো যায় না।সো, এখন কিছু করতে যেও না।যা করার তো করেই ফেলছো তোমরা!এখন না হয় যেটা হওয়ার কথা সেটাই হোক!

____________________

যথা সময়ে দীপ্ত গোধূলির এনগেজমেন্ট সম্পূর্ণ করা হয়।ফটোগ্রাফি ভিডিওগ্রাফি সবই করা হয়।চারদিকে সবার চোখে মুখে খুশির আমেজ।তবে এত আনন্দ উল্লাসে ভরপুর আয়োজনের মধ্যেও কারো মন বিষাদে রূপান্তরিত হয়েছে!আর কেউ প্রিয় মানুষটিকে ওই অবস্থাতে দেখে হৃদয় দহনে পুড়ছে!

গোধূলিকে অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে লাজুক এসে জিজ্ঞেস করলো,

– গোধূলি তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?তোকে এতটা উদাসীন দেখাচ্ছে কেন?

লাজুকের প্রশ্নে গোধূলি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

– সেটা কি স্বাভাবিক নয় লাজুবু!মিথ্যে কৃত্রিম হাসি কতক্ষণই বা ধরে রাখা যায়!

……….

লাজুককে নীরব থাকতে দেখে গোধূলি আবারো তাচ্ছিল্যে হেসে বলে,

– তোমার কাছেও এর উত্তর নেই!

লাজুক কোনোমতে ওর কান্না সংবরণ করছে।কি বলে গোধূলিকে সান্ত্বনা দিবে ও?সত্যিই তো!ওর কাছে গোধূলির করা প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।গোধূলি যে সবার এই সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত ব্যথিত সেটা লাজুক আন্দাজ করতে পারছে।কারণ এই এনাউন্সমেন্টে গোধূলি যতটা অবাক হয়েছে ঠিক ততটাই অবাক লাজুকও!ইনফ্যাক্ট সবাই।লাজুকের পক্ষে আর এক মুহূর্তও এইখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না!মুখ চেপে স্টেজ থেকে নেমে চলে যায়।হয়তো সবার অগোচরে নোনা জলের বিসর্জন করতেই চলে গেছে!

– এটেনশন এভ্রিওয়ান!

স্টেজে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রনিত সাহেবের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে তিনি কি বলেন তা শুনবে বলে।

– আজকের এই আনন্দ উল্লাসে ভরপুর আয়োজনের মধ্যে আপনাদের উদ্দেশ্যে আমি আরেকটি খুশির সংবাদ ঘোষণা করতে চাই!আর সেটি হলো সামনের মাসের দশ তারিখেই আদিবাকে আমার ছেলের বউ করে আমাদের ঘরের লক্ষ্মীকে ঘরে তুলবো।

এনগেজমেন্ট পার্টিতেই রনিত সাহেব আদিবা আর রায়ানের বিয়ের ঘোষণা করায় পার্টির আনন্দের রেশ যেন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে।রংবেরঙের ফানুস উড়িয়ে সারা শহর আলোয় ভরিয়ে তুলেছে।সবাই এসে রায়ান আর আদিবাকে অভিবাদন জানাচ্ছে।
সবাই যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই সুযোগ বুঝে গোধূলি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here