#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ33
তাই মেঘ খাবারে থুথু দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে বের করে দরজায় হালকা নক করে রুমের ভিতরে ঢুকলো। কিন্তু রুমে ঢুকেই মেঘের চোখ জোড়া রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেলো। ‘ও’ শকড হয়ে একদম স্টাচু হয়ে নিজের জায়গাতেই দাড়িয়ে রইলো। কারন রুমের মধ্যে থাকা টু বেডের সোফার উপর বসে A.k. দু-হাতে দুটো রিভলবার নিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখছে। মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে A.k. এর সামনে থাকা টি-টেবিলের উপর খাবারের ট্রে টা রাখলো। তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে A.k. কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনি এখনো ফ্রেশ না হয়ে, এই দুটো রিভলবার হাতে নিয়ে বসে আছেন কেনো? আর বিয়ে বাড়িতে এই দুটো নিয়ে এসেছেনই বা কেনো?”
মেঘের কথা শুনে A.k. রিভলবার থেকে চোখ সরিয়ে মেঘের এর দিকে তাকালো। তারপর ডান হাতে থাকা রিভলবার’টা মেঘের দিকে পয়েন্ট করে স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“এই দুটো ব্যাগের মধ্যে ছিলো। তাই আগেই ব্যাগ থেকে বের করে রাখলাম। এখানের কেউ যদি আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার চেস্টা করে, তাহলেই তাকে ঠুস করে উড়িয়ে দিবো।”
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“বিয়ে বাড়িতে আপনার সাথে উল্টাপাল্টা কাজ করার জন্যে কে বসে আছে শুনি?”
“অনেকেই আছে! যার মধ্যে একজন এই মূহুর্তে আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে। যে এতোক্ষন আমার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার খাবারে কিছু একটা দেওয়ার চেস্টা করছিলো। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে দেয়নি!”
A.k. এর কথা শুনে মেঘ থতমত খেয়ে গেলো। মেঘ এটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে বাইরে দাড়িয়ে ‘ও’ যা করছিলো সেটা রুমের মধ্যে বসে A.k. কিভাবে জানলো? তাই ‘ও’ নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে খানিকটা জোড় গলায় A.k. কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এসব আপনি কি বলছেন মিঃ A.k.? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মেঘের কথা শুনে A.k. চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষন মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললো
“বুঝতে পারছেন না? ওকে আপনাকে ভালো ভাবে বোঝাচ্ছি, ওয়েট।”
কথাটা বলে A.k. নিজের হাতে থাকা রিভলবার দুটো টি-টেবিলের উপর রাখলো। তারপর পাশ থেকে নিজের সেলফ ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা বের করে ফোনের স্কিনটা মেঘের দিকে ঘুড়িয়ে ধরলো। মেঘ ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে হালকা করে জিব কাটলো। কারন এটা হচ্ছে রুমের বাইরে থাকা সি.সি. ক্যামেরার কিছুক্ষন আগের ফুটেজ। যেখানে মেঘ এতোক্ষন বাইরে বসে কি কি করছিলো সবটা দেখা যাচ্ছে। আসলে বিয়েতে এতো লোকজন উপস্থিত থাকবে। আর এদের যাতে কোনো রকম বিপদে পড়তে না হয়, তাই বেডরুম গুলো ছাড়া বাড়ির সব জায়গায় সি.সি. ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আর এই ক্যামেরার ফুটেজ মনিটরের সাথে কানেক্ট করে দেওয়া হয়েছে, যেটা আলাদা একটা রুমে কয়েকজন গার্ডদের আন্ডারে আছে। সাথে আহির, মিহির আর অভির ফোনের সাথেও সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজের কানেক্ট দেওয়া আছে। ওরা চাইলেই যেকোনো সময় বাড়ির যেকোনো জায়গার ফুটেজ নিজেদের ফোনেই দেখে নিতে পারবে। কিন্তু মেঘের এটা মাথায় ঢুকছে না যে A.k. এর ফোনে এই সি.সি. ক্যামেরার কানেকশন কে দিলো! ওর জানা মতে A.k. এর ফোনে তো এটা কিছুতেই কানেক্ট থাকার কথা না। ওর এসব ভাবনার মধ্যেই A.k. বলে উঠলো
“ভুল যখন একটা করে ফেলেছেন। তখন শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে মিস মেঘনা। আপনি শাস্তি পাওয়ার জন্যে তৈরি তো?”
A.k. কথা শুনে মেঘ চমকে উঠে ওর দিকে তাকালো। তারপর তোতলাতে তোতলাতে বললো
“ক-কিসের শ-শাস্তি? দ-দেখুন আমি ক-কিন্তু আপনার খাবারে -কিছুই ম-মিশাই নি। ত-তাহলে অযথা আ-আমাকে শাস্তি দ-দিবেন ক-কেনো?”
“মেশান নেই ঠিকই। বাট কিছু একটা মেশাতে চেয়েছিলেন তো। দেখুন, আমার মতে অপকর্ম করা এবং অপকর্ম করার চিন্তা মাথায় নিয়ে আসা, দুটোই সমান। তাই শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।”
কথাটা বলে A.k. টি-টেবিলের উপর থেকে গান নেওয়ার জন্যে হাত বাড়াতেই মেঘ জোড়ে দৌড় দিলো। দৌড়াতে দৌড়াতে A.k. কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আপনি আপনার মত নিজের পকেটেই রাখুন। আপনার মতো পাজি লোকের মত শোনার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। বুঝেছেন?”
কথাটা বলে মেঘ দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর মেঘের কান্ড দেখে A.k. ফিক করে হেসে দিলো।
_________________________
এদিকে A.k. এর আসার খবর শুনে অভি ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে A.k. এর রুমের দিকেই যাচ্ছিলো। তখনই কেউ দ্রুত বেগে ছুটে এসে অভির সাথে ধাক্কা খেয়ে ওকে নিয়ে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। আসলে মেঘ ভয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দৌড়চ্ছিলো তাই ‘ও’ অভিকে দেখতে পায়নি। অভি ফ্লোরে বসে কোমড়ে হাত দিয়ে মৃদ্যু চেচিয়ে বললো
“আল্লাহ আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙেই গেলো। কোন হাতি রে তুই? পড়ার মতো আর কোনো জায়গা পেলি না, সোজা এসে আমার গায়েই তোকে পড়তে হলো?”
কথাটা বলে অভি ঘাড় সোজা করে পাশে তাকাতেই দেখলো, মেঘ ওর পাশেই উপুর হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। মেঘকে পড়ে থাকতে দেখে অভি মেঘের এক হাত ধরে টেনে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর অবাক কন্ঠে বললো
“তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস? ঘুমাস নি এখনো?”
অভির প্রশ্ন শুনে মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“ঘুমালে কি আর তোমাকে আমার মতো একটা হাতির সাথে ধাক্কা খেতে হতো?”
মেঘের কথা শুনে অভি দাত বের করে ক্যাবলা কান্ত মার্কা একটা হাসি দিলো। তারপর কাচুমাচু করে বললো
“আই অ্যাম সো সরি। আসলে আমি ভেবে ছিলাম অন্যকেউ। তাই ভুল করে মুখ ফশকে কথাটা বলে ফেলেছি। কিন্তু তুই এতো রাতে এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো? কি হয়েছে তোর?”
মেঘ কঠিন স্বরে বললো
“আমার কিছুই হয়নি। আমার ইচ্ছে হয়েছিলো তাই আমি এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। তোমার কোনো সমস্যা?”
কথাটা বলে মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। মেঘকে দাড়াতে দেখে অভিও কোনো রকম কোমড়ে হাত দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর ভ্রু কুচকে বললো
“এতো রাগ দেখাচ্ছিস কেনো? আমি তো নরমাললি প্রশ্নটা করলাম।”
“আমার রাগ আমি দেখাচ্ছি। তোমার তাতে কি?”
মেঘের কথা শুনে অভি এবার দু-হাত জোড় করে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আমার কিছুই না। তোকে এসব জিজ্ঞেস করাই আমার ভুল হয়েছে। তুই যা বোন ঘুমাতে যা।”
মেঘ ত্যাড়া কন্ঠে বললো
“যাবো না! আমি এখানেই দাড়িয়ে থাকবো। তোমার কোনো সমস্যা?”
অভি এবার বিরক্ত হয়ে বললো
“না, আমার কোনো সমস্যা নেই। তুই এখানে দাড়িয়ে থাক, এখানে বসে নাচতে থাক নাহলে এখানে বসে ঘুমিয়ে পড়, তোর যা মনে চায় তুই তাই কর। আমিই চলে যাচ্ছি এখান থেকে।”
কথাটা বলে অভি A.k. এর রুমে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্য পা বাড়াতেই মেঘ কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গিয়ে অভির সামনে দাড়ালো। মেঘকে সামনে এসে দাড়াতে দেখে অভি ভ্রু কুচকে বললো
“আবার কি হলো তোর?”
মেঘ গম্ভীর কন্ঠে বললো
“এখানে থাকা সি.সি.ক্যামেরার সাথে A.k. এর ফোন কানেক্ট করলো কে? উনি তো একটু আগেই আমাদের বাসায় আসলেন।”
অভি স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“বাইরের সার্ভন্ট কোয়াটারে বসে যারা সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজ অপজারভ করছে, তাদের থেকে কানেক্ট করিয়ে নিয়ে এসেছে মনে হয়।কারন চাচ্চু ওদের আগেই বলে দিয়েছিলো যে A.k. এখানে আসলে A.k. এর ফোনে যাতে ওরা সি.সি. ক্যামেরার সাথে কানেক্ট দিয়ে দেয়।”
অভির কথা শুনে মেঘের ওর বাবার উপর ভিষন রাগ লাগলো। এই A.k. লোকটাকে নিয়ে ওর বাবার এতো বাড়াবাড়ি মেঘের কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। এর আগেও তো ওরা আরো অনেক বড়বড় কোম্পানির সাথে বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু কখনো তো অন্য কাউকে নিয়ে আজম রহমানকে এতোটা বাড়াবাড়ি করতে দেখেনি মেঘ! তাহলে A.k. এর বেলায় আজম রহমান কেনো এতো বাড়াবাড়ি শুরু করেছে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না ‘ও’ ?
________________________
ঘড়ির কাটায় রাত প্রায় দুইটা বাজে। সন্ধ্যায় ঘুমানোর জন্যে সাঈফার চোখে ঘুম আসছিলো না। তাই ‘ও’ রুম থেকে বের হয়ে নিচের কিচেনে আসলো। কিচেনে এসে এক মগ কফি বানিয়ে ছাদের উদ্দ্যেশে রওনা দিলো। ছাদে আসতেই সাঈফা দেখতে পেলো ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিহির স্মোক করছে। সাঈফা মিহিরকে দেখেও না দেখার ভান করে ছাদের অন্য পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর রেলিংয়ের উপর বসে বাইরের দিকে পা ঝুলিয়ে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে এসে সাঈফার কোমড়ে হাত রেখে ওকে হেচকা টান দিয়ে রেলিং থেকে নামিয়ে ছাদের ফ্লোরে দাড় করালো। আকষ্মিক ঘটনায় সাঈফা প্রথমে ভেবেছিলো এটা মিহির। কিন্তু পড়ে যখন ওকে ছাদের ফ্লোরের উপর দাড় করালো তখন ‘ও’ সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো এটা ওর বড় খালার ছেলে সাজিদ। সাজিদ সাঈফার থেকে তিন বছরের বড়। এতোদিন সাজিদদের বাসায় থেকেই সাড়িকা, সাঈফা লেখাপড়া করেছে। ছেলেটা ভিষন হেল্পফুল!সব সময়ই সাড়িকা, সাঈফাকে লেখাপড়ায় অনেক হেল্প করে। সাড়িকা, সাঈফা এবং সাজিদের বয়সের মধ্যে অনেকটা ঘ্যাপ থাকলেও ওদের বন্ডিং টা একদম বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো।
সাঈফা ভ্রু কুচকে সাজিদকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?”
সাজিদ হালকা হেসে বললো
“রুমে সবাই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তাই আমি ছাদে এসেছিলাম ফোন কথা বলার জন্যে। কিন্তু এসে দেখি তুমি বাইরের দিকে পা ঝুলিয়ে রেলিংয়ের উপর উঠে বসে আছো। অসাবধানতা বশত যদি তুমি ওখান থেকে পড়ে যেতে তখন কি হতো বলো তো?”
সাঈফা দাত বের করে হেসে বললো
“কি আবার হতো, এখান থেকে পড়ে টুপ করে মরে যেতাম।”
সাঈফার কথা শুনে সাজিদ চোখ পাকিয়ে সাঈফার দিকে তাকালো। তারপর ধমক দিয়ে বললো
“সব সময় শুধু আজেবাজে কথা। তোমার মুখে কখনো ভালো কথা আসেনা তাইনা?”
“এখানে আজেবাজে কথার কি হলো? আরেহ ভাই মৃত্যু তো যখন তখন যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এখন যদি আমার মৃত্যু এখান থেকে পড়ে যাওয়ার কারনে লেখা থাকে, তাহলে কি হাজার চেষ্টা করেও তুমি সেটাকে আটকাতে পারবে?”
সাঈফার কথা শুনে সাজিদ বেশ ক্ষেপে গেলো। ‘ও’ সাঈফার দিকে এগিয়ে এসে দাতে দাত পিশে বললো
“না আটকাতে পারবো না। কিন্তু তোমাকে ধাক্কা দিয়ে তোমার মৃত্যুটা একটু সহজ করে দিতেই পারি।”
কথাটা বলে সাজিদ ঝট করে সাঈফাকে কোলে তুলে নিলো। আকষ্মিক ঘটনায় সাঈফা পুরো বোকা বনে গেলো। সাজিদ সাঈফাকে কোলে নিয়ে রেলিংয়ের পাশে চলে গেলো।তারপর ওকে কোল থেকে নামিয়ে আগের মতো করে রেলিংয়ের উপর বসিয়ে দিয়ে বাকা হেসে বললো
“খুব তো মরার শখ তোমার তাইনা? এইবার তোমাকে এইখান থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেই?”
কথাটা বলে সাজিদ সাঈফাকে হালকা করে ধাক্কা মারতেই সাঈফা ভয় পেয়ে সাজিদের টি-শার্টের কলার খামচে ধরলো। তারপর ভীতু কন্ঠে বললো
“কি করছো সাজিদ? নামাও আমাকে এখান থেকে। পড়ে যাবো তো।”
সাজিদ হাসতে হাসতে বললো
“কি হলো এখন? সব সাহস একদম ফুশশশশ হয়ে গেলো? আর কখনো বসবে রেলিংয়ের উপর?”
সাজিদ কথাটা বলার সাথে সাথে কেউ ওর পিছনের টি-শার্টের কলার ধরে ওকে টেনে সাঈফার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসলো। হঠাৎ করে সাজিদ ছেড়ে দেওয়ায় সাঈফা পড়ে যেতে নিয়েও রেলিংয়ের দেয়াল ধরে আবার নিজেকে সামলে নিলো।
সাজিদ কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ অনবরত ওর বুকে, পেটে ঘুশি দিতে লাগলো। সাঈফা দ্রুত রেলিং থেকে নেমে পিছনে ঘুড়তেই দেখতে পেলো মিহির রেগে সাজিদকে একটার পর একটা কিল, ঘুশি দিয়ে যাচ্ছে। থামা থামির কোনো নামই নিচ্ছে না। সাঈফা কি করবে বুঝতে না পেরে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মিহিরকে ধাক্কা দিয়ে সাজিদের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। মিহির আবারও সাজিদকে মারার জন্যে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে নিলো। কিন্তু সাঈফা এসে মিহির আর সাজিদের মাঝখানে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে রাগি কন্ঠে বললো
“কি সমস্যা আপনার? ওকে এভাবে মারছেন কেনো?”
মিহির রাগে ফুশতে ফুশতে বললো
“ইচ্ছে হয়েছে তাই মেরেছি। তোকে বলবো কেনো?”
সাঈফা চেচিয়ে বললো
“আপনার ইচ্ছে হয়েছে বলে আপনি এইভাবে একটা মানুষকে জানোয়ারের মতো মারবেন? আপনার মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই তাইনা? যতো দিন যাচ্ছে ততো আপনি একটা জানোয়ারে পরিনত হচ্ছেন।”
সাঈফার কথা শুনে মিহির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু মুখে কিছুই বললো না। সাঈফা আবারও বললো
“আপনি শুধু জানোয়ার না, একটা তাড়ছিড়া পাগলও। কারন কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনোই অকারনে কাউকে এভাবে আঘাত করতে পারে না। আপনার মতো পাগল, ছাগলকে তো মানোষিক হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে রাখা উচিৎ। নাহলে অন্তত একেবারে জানে মে*রে ফেলা উচিৎ। কারন আপনার মতো দুই/চারটা পাগল ছাগল না ম*র*লে আমাদের মতো মানুষেরা কখনোই এই সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না।”
সাঈফার শেষের কথাটা শুনে মিহিরের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। ওর চারপাশটা হঠাৎ করেই কেমন থমকে গেলো। মিহির থম মেরে কিছুক্ষন নিজের জায়গাতেই দাড়িয়ে রইলো। তারপর সাঈফার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর দু-হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে কঠিন স্বরে বললো
“তোর এসব কথায় আমার কিছুই যায় আসে না, বুঝেছিস? শুধু একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। কালকের দিনের পর থেকে ওই ছেলেটার ছায়াও যেনো আমি এই বাড়ির কোথাও খুজে না পাই। যদি পেয়েছি তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। এখন তো শুধুমাত্র কয়েকটা ঘুশি দিয়ে ওকে ছেড়ে দিলাম। এরপর যদি তোর আশেপাশেও ওকে দেখেছি তাহলে সবার আগে ওকে আমি জ্যা*ন্ত ক*ব*র দিবো। তারপর তোকে কু*চি কু*চি করে কে*টে তোর বডির কা*টা অংশ গুলো জংলি কু*কু*রকে খেতে দিবো।”
কথাটা বলে মিহির সাঈফাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে ছাদ থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। আর সাঈফা স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে থেকে মিহিরের শেষের কথা গুলো ভাবতে লাগলো।
#চলবে….