#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ19
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে সাড়ে নয়টা বাজে দেখে মেঘ মাথায় হাত দিলো। দশটা বাজে ওর ক্লাস আরম্ভ হবে আর ‘ও’ কিনা সাড়ে নয়টা পযর্ন্ত কুম্ভকর্ণের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলো? মেঘ পাশে তাকিয়ে দেখলো দিশা বিছানায় নেই। রাতে ওর গায়ে পড়ে থাকা ড্রেসগুলো ঝুড়িতে ফেলে রাখা। আর রুমের দরজাটাও আলগা করে টেনে রাখা। মেঘ বুঝতে পারলো দিশা অলরেডি ভার্সিটিতে চলে গেছে। ‘ও’ বেড থেকে নামতে নামতে বিরবির করে বললো
“পিশাচিনি কোথাকার। কালকে কতো বার বললাম যে দিশা সকালে আমাকে তাড়াতাড়ি তুলে দিবি। আমিও তোর সাথে ভার্সিটিতে যাবো। কিন্তু বজ্জাত মেয়েটা আমাকে ফেলে রেখেই চলে গেলো?”
কথাটা বলতে বলতে মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। হসপিটালে সেদিন নার্সরা যখন টেস্ট করার নাম করে মেঘকে নিয়ে চলে গিয়েছিলো। তার কিছুক্ষন পর আজম রহমান মেঘকে দেখার জন্যে ওর কেবিনে এসে ছিলেন। এসে মেঘকে কোথায় দেখতে না পেয়ে উনি দিশাকে ঘুম থেকে তুলে মেঘের কথা জিজ্ঞেস করায় দিশা কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ওনাকে বলে দেয়। সব শুনে আজম রহমান সাথে সাথে মেঘকে খোজার জন্যে বেড়িয়ে পড়েন। কিন্তু পুরো হসপিটাল তন্নতন্ন করে খোজার পরেও যখন মেঘকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন ওনি বুঝতে পারেন এটা কারো ষড়যন্ত্র। তাই উনি দ্রুত হসপিটাল কর্তিপক্ষের সাথে কথা বলে পুরো হসপিটালর কড়িডোরের সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজ চেক করেন। সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারেন ওয়ার্ড বয়েরা মেঘকে হসপিটালের একদম টপ ফ্লোরে নিয়ে গেছে। যেখানে সচরাচর কেউ যাওয়া আসা করে না। এটা দেখার পর আজম রহমান আর অভি দ্রুত সেখানে যান। গিয়ে দেখেন ওখানে কেউ নেই, শুধুমাত্র মেঘ সেন্সলেস হয়ে স্ট্রেচারের উপর শুয়ে আছে। আজম রহমান মেঘকে ওখান থেকে নিয়ে এসে কেবিনে সিফ্ট করে উনি আবার সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করেন। তখন দেখতে পান ওনারা যাওয়ার কয়েক মিনিট আগে মুখে মাস্ক আর গায়ে হোয়াইট এপ্রোন পড়া একটা ছেলে ওই রুমটা থেকে বের হয়ে অন্য একটা লিফট দিয়ে নিচে নেমে চলে গেছে। ছেলেটাকে দেখে আজম রহমানের আর বুঝতে বাকি ছিলো না যে ওটা আহান। আর নার্সটা এবং ওয়ার্ড বয় দুটোও যে আহানের লোক সেটাও উনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরে ছিলেন। তাই উনি বেশি দেড়ি না করে ওইদিন সকালেই মেঘকে ইমাজেন্সি ভাবে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। উনি খুব ভালো করেই জানতেন মেঘকে ওখানে রাখলে উনি হাজারটা গার্ড দিয়েও আহানকে ওখানে আসা থেকে আটকে রাখতে পারবেন না। কারন আহান অন্যদের মতো শক্তি দিয়ে না, বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে সবাইকে বাজিমাত করে দেয়।
এই এক সপ্তাহ বাড়িতে বসেই মেঘের ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে। আপাততো ‘ও’ অনেকটা সুস্থ। তাই ‘ও’ ডিসিশন নিয়েছে এখন থেকে রেগুলার ভার্সিটিতে যাবে আর সব ক্লাস এ্যাটেন্ড করবে। তাছাড়া এটাও ভেবে রেখেছে যে এক্সাম শেষ হওয়ার আগ পযর্ন্ত সব ঝামেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে।
মেঘ ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নিচে নেমে এলো। ওকে রেডি হয়ে নিচে নামতে দেখে আজম রহমান ড্রইং রুম থেকে হাটা দিয়ে সিড়ির কাছে আসলেন। মেঘ সিড়ি দিয়ে নেমে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আজম রহমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“বাবাই আমি ভার্সিটি যাচ্ছি। অলরেডি অনেক গুলো ক্লাস মিস করে ফেলেছি। এরপর যদি আরো ক্লাস মিস করি তাহলে নির্ঘাত পরীক্ষায় রাজ হাসের ডিমের মতো বড় বড় দুটো ঘোড়ার ডিম পাবো।”
মেঘের কথা শুনে আজম রহমান হেসে দিলেন। তারপর হাসি মুখে এগিয়ে এসে মেঘের সামনে দাড়িয়ে বললেন
“যাবে তো অবশ্যই। কিন্তু যাওয়ার আগে তোমাকে একজন স্পেশাল গেস্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই?”
আজম রহমানের কথা শুনে মেঘ ওনার দিকে প্রশ্ন সূচক চাহনিতে তাকালো। উনি মুচকি হেসে ড্রইংরুমের সোফার দিকে তাকিয়ে কাউকে একটা চোখ দিয়ে ঈশারা করলেন। ওনার দৃষ্টি অনুসরন করে মেঘও ঘাড় ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকালো। দেখলো সেখানে ফরমার্ল ড্রেসে পচিশ,ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটার চোখে চিকন ফ্রেমের একটা চশমা পড়া। দেখে বেশ ভদ্র আর শান্ত,শিষ্ঠ টাইপের মনে হচ্ছে।
আজম রহমান চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ছেলেটা বসা থেকে উঠে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো। তারপর হাসিমুখে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আসসালামু অলাইকুম! কেমন আছো?”
মেঘ স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“অলাইকুমুস সালাম! জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। বাট আপনাকে তো চিনলাম না? কে আপনি?”
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আজম রহমান বললেন
“আরেহ চিনতে পারলে না? এটা তোমার আবীর ভাইয়া। তোমার বড় বাবার ছেলে।”
আবীর নামটা শুনেই মেঘের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ‘ও’ বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো
“তো ইনি হঠাৎ আমাদের বাসায় কি মনে করে এসেছেন? তোমার সাথে এনার কোনো কাজ ছিলো বাবাই?”
মেঘের এমন সোজাসাপ্টা প্রশ্নে আজম রহমান কিছুটা বিব্রত কর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলেন। উনি নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আবীর মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো
“আসলে আমি এখানে নিউ বিজনেস স্টার্ড করেছি। তাই আমি আপাততো কয়েকদিন এখানেই থাকবো।”
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“কেনো? আপনার থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই?”
মেঘের কথা শেষ হতেই আজম রহমান মৃদ্যু ধমকের স্বরে বললেন
“এটা কোন ধরনের প্রশ্ন মেঘ? অবশ্যই ওর আরো অনেক থাকার জায়গা আছে। বাট ‘ও’ আমার কথায় এখানে থাকার জন্যে রাজি হয়েছে।”
আজম রহমানের কথা শুনে মেঘের রাগ উঠে গেলো। ‘ও’ ভাবতেই পারছে না যে ওকে এখন থেকে রোজ এই আবীর নামের জানোয়ার টার মুখ দেখতে হবে। ‘ও’ আবীরের দিকে একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আজম রহমানকে উদ্দ্যেশ্য করে কঠিন গলায় বললো
“ওহ গ্রেট! তাহলে তোমরা কথা বলো। আমি আসছি, আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”
কথাটা বলে মেঘ ঘুড়ে দরজার দিকে হাটা দিলো। কিন্তু কয়েক পা যেতেই পিছন থেকে আজম রহমান বলে উঠলেন
“দাড়াও মেঘ! এখন থেকে প্রত্যেকদিন আবির তোমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে আবার আসার সময় নিয়ে আসবে। তোমার একা একা কোথাও যাওয়া চলবে না।”
মেঘ হাটা থামিয়ে পিছনে ঘুড়ে ওর বাবাইয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“হোয়াট? উনি কেনো রোজ আমাকে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা করবে বাবাই? আমার নিজের কি হাত-পা নেই বাবাই? আমি একাই চলে যেতে পারবো।”
মেঘের কথা শেষ হতেই আজম রহমান শক্ত কন্ঠে বললেন
“এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি তোমার মুখ থেকে কোনো কথা শুনতে চাই না মেঘ। তুমি বলেছো যে তোমার সাথে কোনো গার্ড ভার্সিটিতে যেতে পারবে না। আমি তোমার সেই কথাটা মেনে নিয়েছি। এবার আমি বলছি যে তোমাকে প্রতিদিন আবীরের সাথেই যাওয়া আসা করতে হবে। আর এটাই আমার শেষ কথা। এই কথার যেনো কোনো নড়চড় না হয়।”
কথাটা বলে আজম রহমান ভিতরে চলে গেলেন। অগত্যা মেঘকে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আবীরের সাথেই ভার্সিটিতে আসতে হলো। কারন আজম রহমানের কোনো কথা অমান্য করার স্পর্ধা মেঘের নেই। পুরোটা রাস্তা আবীর ড্রাইভিং করতে করতে একা একা বকবক করে গেছে। আর মেঘ দাতে দাত চেপে বসে বসে আবীরের সেই ডিসগাস্টিং কথা গুলো শুনে গেছে।
________________________
সব ক্লাস শেষে ছুটির পরে বাইরে এসে দিশা আর মেঘ ফুসকা খাচ্ছিলো। সেই মুহূর্তে একটা গাড়ি এসে মেঘদের পাশে দাড়ালো। মেঘ তাকিয়ে দেখলো গাড়ি থেকে আবীর নেমে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আবীরকে দেখে মেঘের মেজাজটা পুরোপুরি বিগরে গেলো। ‘ও’ দিশার দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে দাত কটমট করে বললো
“দেখ,ছাগলের বাচ্চাটা আবার এসে হাজির হয়ে গেছে। ইচ্ছে তো করছে রাস্তা থেকে একটা ইটের কুচো উঠিয়ে ব্যাটার মাথায় মারতে।”
মেঘের কথা শেষ হতে না হতেই আবীর এসে ওর সামনে দাড়ালো। তারপর নাক কুচকে বললো
“এসব কি খাবার খাচ্ছো? এগুলো কি মানুষে খায়? ছিহ! যএসব আন-হাইজেনিক ফুড।”
মেঘ শক্ত কন্ঠে বললো
“আমি যে খাবারই খাই না কেনো সেটা দিয়ে আপনার দরকার কি? যেই কাজে এসেছেন সেই কাজটা করে, এখান থেকে বিদায় হন।”
আবীর দাত বের করে হেসে বললো
“আমি তো তোমাকে আমার সাথে করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে এসেছি।”
মেঘ ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“কেনো? আমি কি ছোট বাচ্চা, যে আমাকে আপনার সাথে করে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে?”
আবীর বললো
“এই প্রশ্নটা বোধহয় তুমি তোমার বাবাকে করলে বেশি ভালো হতো। কারন উনিই আমাকে বলেছেন তোমাকে তোমার বাসায় সেইফলি পৌছে দিয়ে আসতে।”
আবীরের কথা শুনে মেঘ ওর দিকে রক্তিম চোখে তাকালো। ওকে এভাবে তাকাতে দেখে আবীর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারলো। এতে মেঘের মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো। কিন্তু ‘ও’ পাবলিক প্লেসে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায় না বলে আবীরকে কিছুই বললো না। আবীর একটু গলা খ্যাকানি দিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো? আমার সাথে বাড়িতে যাবে নাকি চাচ্চুকে ফোন দিয়ে বলবো তুমি আমার সাথে আসার জন্যে মানা করে দিয়েছো?”
মেঘ আবীরের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশু চল, আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”
মেঘের কথা শুনে দিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবীর ভ্রু কুচকে বললো
“চল মানে? উনিও কি আমাদের সাথে যাবে নাকি?”
মেঘ বললো
“হ্যা অবশ্যই! একই বাড়িতে যখন যাচ্ছি তখন আলাদা আলাদা যাওয়ার তো কোনো মানে হয়না,তাইনা?”
আবীর খানিকটা বিরক্তির স্বরে বললো
“আমি কারো বডিগার্ড নই, ওকে? আমার একটা রেপোটেশন আছে। আমাকে শুধুমাত্র বলা হয়েছে তোমাকে নিয়ে আসতে আর দিয়ে আসতে। তাই অন্য কাউকে লিফট দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আর সামান্য একজন স্টাফের মেয়েকে তো অবশ্যই না।”
স্টাফের মেয়ে কথাটা শুনে দিশার মুখটা একদম মলিন হয়ে গেলো। আজম রহমানের ইউরোপে যে কম্পানি আছে দিশার বাবা সেখানকার ম্যানেজার। দিশার বাবা-মা দুজনেই বাঙালি। ওনারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে এক ফ্রেন্ডের সাহায্যে ইউরোপে চলে যান। সেখানেই দিশার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। দিশার বাবা-মা দুজনেই বহু বছর ধরে আজম রহমানের কম্পানিতে জব করেন। ওনারা দুজনেই আজম রহমানের খুব বিশ্বস্ত লোক। বলা যায় আজম রহমান আর দিশার বাবা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড। মেঘ যেই বছর প্রথম ইউরোপে গিয়েছিলো, সেই বছর আজম রহমান বেশ গ্রান্ড করে মেঘের বার্থ ডে সেলিব্রেট করেছিলেন। সেখানে উনি ওনার কম্পানির বিশেষ কিছু স্টাফদের ফ্যামিলি সহ ইনভাইট করেছিলেন। সেই পার্টিতেই দিশার সাথে মেঘের ফাষ্ট আলাপ হয়। আর প্রথম আলাপেই দুজন একে অপরের সাথে ফ্রেন্ড শিপ করে নেয়। ধীরে ধীরে ফ্রেন্ড থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায় আর বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে বোন। দিশা নিজের বাড়ির থেকে মেঘদের বাসায় বেশি সময় কাটাতো। আবার আজম রহমান যখন নিজের কাজের জন্যে অন্য কোথাও যেতেন, তখন দিশার মা’ই মেঘের দেখাশোনা করতেন। দিশার মাও মেঘকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। উনি কখনো দিশা আর মেঘকে আলাদা চোখে দেখেন নি।
মেঘ অগ্নি দৃষ্টিতে আবীরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় ‘ও’ আবীরকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিশা মেঘের সামনে এসে হালকা হাসার চেস্টা করে বললো
“কুল ইয়ার! এতো রাগার কি আছে? আবাল মানুষদের কথায় কখনো কান দিতে হয় না, জানিস না? আর এমনিতেও আমার কোনো পাগল ছাগলের গাড়িতে উঠার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে নেই। তাছাড়া এর সাথে যাওয়ার চেয়ে রিকসায় করে যাওয়াটা অনেক সম্মানের।”
কথাটা দিশা আবীরকে শুনিয়ে শুনিয়েই বললো। দিশা কথা শেষ হতেই আবীর ওর দিকে তেড়ে আসতে আসতে দাতে দাত চেপে বললো
“হেই, কি বললে তুমি? তোমার সাহস হয় কিভাবে আমাকে এসব বলার? নিজের লিমিট টা ভুলে গেছো নাকি?”
আবীর দিশার কাছে আসার আগেই মেঘ এসে আবীরের সামনে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর আবীরের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
“নিজের লিমিট টা বোধহয় আপনি ভুলে গেছেন মিঃ রহমান। নাহলে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে এসব কথা বলার সাহস করতেন না।”
“এখানে সাহসের কি আছে? যেটা সত্যি আমি তো সেটাই বলেছি। এই মেয়েটা তোমাদের কম্পানির সামান্য একজন স্টাফের মেয়ে ছাড়া আর কিছুই না। তোমরাই তো শুধু শুধু পায়ের জুতো মাথায় নিয়ে লাফালাফি শুরু করেছো। তাই এই মেয়েটা এতোটা বেড়েছে। ”
মেঘ এতোক্ষন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে রাখলেও এইবার আর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ‘ও’ অগ্নি দৃষ্টিতে আবীরের দিকে তাকিয়ে ওকে চড় মারার জন্যে হাত তুললো। কিন্তু চড়টা মারার আগেই কেউ এসে মেঘের হাত ধরে ফেললো। মেঘ রাগি চোখে পাশে তাকিয়ে দেখলো আহান ওর হাত ধরে আছে। ‘ও’ ঝাড়া মেরে আহানের থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইলো কিন্তু ছাড়াতে পারলো না। আহান ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখে মৃদ্যু হেসে বললো
“আবর্জনা উড়ে এসে তোমার হাতে লাগুক অথবা তুমি নিজে গিয়ে আবর্জনা ধরো, শেষ পযর্ন্ত নোংরা কিন্তু তোমার হাতটাই হবে। তাই বলছি গুড গার্লের মতো বাড়িতে চলে যাও। রাস্তায় দাড়িয়ে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করো না। আমি দিশাকে সেইফলি বাসায় পৌছে দিবো। ডোন্ট ওয়ারি!”
কথাটা বলে আহান মেঘের হাত ছেড়ে দিলো। মেঘ আর কোনো কথা না বলে আবীরের গাড়িতে গিয়ে উঠে পড়লো। ওকে ইমিডিয়েটলি ওর বাবার সাথে কথা বলতে হবে। আবীরকে ‘ও’ কিছুতেই ওদের বাড়িতে থাকতে দিবে না। তার জন্যে যা করার দরকার হবে ‘ও’ তাই করবে। মেঘ গাড়িতে উঠতেই আবীরও গিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ড দিয়ে চলে গেলো।
ওরা যেতেই আহান দিশার দিকে তাকালো। দেখলো দিশার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ‘ও’ গিয়ে দিশার সামনে দাড়ালো। তারপর হাত দিয়ে দিশার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো
“ইশ রে, এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এভাবে কেদে কেদে সাগর বানালে চলবে? আসল গেম তো এখন শুরু হবে মাই ডিয়ার সিস্টার। চলো তোমাকে একটা দারুন ম্যাজিক দেখাই।”
কথাটা বলে আহান দিশার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো। আর দিশা বোকার মতো আহানের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে