#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ39
সকালের মিষ্টি রোদের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুমটা আলগা হয়ে গেলো মেঘের। ‘ও’ চোখ বন্ধ রেখেই পাশ ফিরে শোয়ার জন্যে নড়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু হঠাৎ ওর অনুভব হলো কেউ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। হঠাৎ এমনটা অনুভব হওয়ায় মেঘ ঝট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো। দেখলো, আহান ওকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। মেঘ কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। আচমকা এতো জোড়ে ধাক্কা দেওয়ায় আহানের ঘুম ভেঙে গেলো। ‘ও’ কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে ঘুমুঘুমু চোখে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ আহানের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগে ফুশছে। আহান মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বিরক্তির স্বরে বললো
“ঘুম থেকে উঠেই বাদরের মতো হাত-পা ছোড়া শুরু করে দিয়েছো? তুমি একটু সময়ও শান্ত হয়ে থাকতে পারো না, তাইনা?”
আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ রাগি কন্ঠে বললো
–“আপনাকে যে এতোক্ষনে গলা টিপে মেরে দেইনি, এটাই আপনার চৌদ্দ গুষ্ঠির ভাগ্য। আপনাকে না বলেছিলাম, আমার থেকে একশো হাত দূরে থাকবেন? তাহলে সাহসে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলেন?”
আহান ভ্রু কুচকে বললো
“নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর জন্যে সাহসের প্রয়োজন হয় না, একটুখানি রোমান্টিক হলেই হয়। আর তাছাড়া আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরিনি। তুমি কালকে রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ে কাপতে কাপতে এসে নিজেই আমার সাথে মিশে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছিলে।”
আহানের মুখ থেকে “কালকে রাত” শব্দটা শুনতেই মেঘের চোখে মুখে ভয় এবং আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠলো। ওর চোখের সামনে একে একে কালকে রাতের সব ঘটনা গুলো ভেষে উঠলো। মেঘ কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে ভীতু দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আচ্ছা আমার ফোনটা কোথায়?”
আহান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বললো
“কী জানি? মনে হয় এখনো গার্ডেনেই পড়ে আছে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ তড়িৎ গতিতে বেড থেকে নেমে ধরজার দিকে পা বাড়াতে নিলেই আহান এগিয়ে এসে মেঘের হাতের কব্জি ধরে টেনে ওকে আবারও বসিয়ে দিলো। তারপর ভ্রু কুচকে বললো
“কোথায় যাচ্ছো?”
মেঘ বললো
–“ফোনটা নিয়ে আসতে।”
আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের শরীরের দিকে তাকিয়ে বললো
“এই অবস্থায়?”
আহানের কথায় এতোক্ষনে মেঘের হুশ আসলো। ‘ও’ কপাল কুচকে নিজের শরীরের দিকে তাকাতেই ভীষন অবাক হলো। কারন মেঘ কালকে রাতে যেই লেহেঙ্গাটা পড়ে ছিলো সেটা এখন ওর গায়ে নেই। ওর গায়ে এখন একটা ছেলেদের টি-শার্ট আর ঢিলাঢালা ট্রাউজার পড়া। মেঘ খানিকটা অবাক কন্ঠে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আমার গায়ে যেই ড্রেস টা ছিলো সেটা কোথায়? আমাকে এসব কে পড়িয়ে দিয়েছে?”
আহান হালকা হেসে বললো
“তোমার ড্রেসগুলো কালকে রাতে একদম রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলো। তাই বাধ্য হয়ে আমি তোমাকে চেইঞ্জ করিয়ে দিয়ে আমার টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়িয়ে দিয়েছি।”
আহানের কথাটা মেঘের কানে আসতেই ‘ও’ চারশো চল্লিশ বোল্টের শকড খেলো। হঠাৎ করেই ওর মাথাটা বনবন করে ঘুড়তে লাগলো। মেঘকে এমন স্তব্দ হয়ে চোখ বড় বড় করে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আহান সরু চোখে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ এক ঝটকায় আহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
“কি বলছেন আপনি এসব? আপনি আমার সাথে মজা করছেন, তাইনা?”
“এখানে মজা করার কী আছে? আজব! তোমার ড্রেসটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ওটা পড়ে তো আর তুমি ঘুমোতে পারতে না। তাই চেইঞ্জ করিয়ে দিলাম।”
আহান কথাটা বলার সাথে সাথে মেঘ বেড থেকে নেমে হেটে গিয়ে বেডের অন্যপাশে আহানের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর দু-হাত দিয়ে আহানের টি-শার্টের কলার শক্ত করে চেপে রাগে চিল্লিয়ে বললো
“হাউ ডেয়ার ইউ! আপনাকে না বলেছিলাম, নিজের লিমিট ক্রস করবেন না? তাহলে কেনো আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন? কোন অধিকারে আপনি আমার কাছে এসেছেন?”
মেঘ আহানের কলার চেপে ধরায় আহান বেশ রেগে গেলো। ‘ও’ মেঘের হাত ধরে এক টানে নিজের কলার থেকে মেঘের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর মেঘকে হেচকা টান দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিয়ে ‘ও’ শক্ত করে মেঘের হাত দুটোকে বেডের সাথে চেপে ধরলো। মেঘ ছটফট করে আহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আহান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর ছটফটানি দেখছে। মেঘ চোখ মুখ কুচকে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মি. আহান ছাড়ুন আমাকে। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনি যদি বারবার আমার সাথে এইভাবে অসভ্যতা করতে থাকেন তাহলে কিন্তু আমি সবাইকে সব সত্যিটা বলতে বাধ্য হবো।”
মেঘের কথা শুনে আহান ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“কথায় কথায় আমাকে এসব বাচ্চা মার্কা কথা বলে হুমকি দেওয়াটা বন্ধ করো। তোমার কী মনে হয়, তোমার এসব হুমকি শুনে আমি ভয়ে চুপসে যাবো?”
মেঘ অগ্নি দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমি মোটেও হুমকি দিচ্ছি না। আমি যেটা বলেছি খুব তাড়াতাড়ি সেটা করেও দেখাবো।”
আহান মেঘের দিকে একটু ঝুকে ওর নাকে নাক ঘশে দিয়ে বললো
“তাই নাকি? তাহলে তো আরো ভালোই হবে। এখন নিজের বউকে চুপি চুপি করে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে রাখতে হয়। আর তখন ওপেনে সবার সামনে থেকে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে আসবো।”
মেঘ তাচ্ছিল্য হেসে বললো
“আপনার এসব দ্বিবাস্বপ্ন কখনো সত্যি হবে না। আর মাএ কিছু দিনের অপেক্ষা, এর মধ্যেই আমাদের ডিবোর্সের কাগজটা চলে আসবে। তারপর আপনি একদিকে চলে যাবেন আর আমি আরেক দিকে চলে যাবো। আমাদের আলাদা হওয়াটা এখন শুধুমাএ সময়ের অপেক্ষা।”
মেঘের কথা শুনে আহান স্থির দৃষ্টিতে মেঘের চোখের দিকে তাকালো। তারপর মুচকি হেসে শান্ত স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দ্বিবাস্বপ্ন কিনা জানিনা। তবে তোমাকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি আমার লক্ষ্যের একদম কাছাকাছি চলে এসেছি। একবার আমি আমার লক্ষ্যে পৌছে যাই, তারপর তোমাকে সারা জীবনের জন্যে আমি আমার করে নিবো।”
কথাটা বলে আহান মেঘের ঘাড়ে মুখ গুজলো। মেঘ আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে একদম শান্ত হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই মেঘের বন্ধ করা চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপটাপ করে পানি পড়তে লাগলো। এতোদিনে আহানের প্রতি জমে থাকা ওর সমস্ত রাগ, অভিমান মুহূর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে গেলো। মেঘ তো এতোদিন এটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো। ‘ও’ তো মনে মনে চাইছিলো যে আহান সবকিছু ভুলে গিয়ে ওকে আবারও আপন করে নিক। আহান ওর কাছে স্বীকার করুক যে এতোদিন ‘ও’ যা যা করেছে সব বাধ্য হয়ে করেছে। ‘ও’ এখনো মেঘকে আগের মতোই ভালোবাসে। এটাও স্বীকার করুক যে এখন পযর্ন্ত মেঘের প্রতি ওর ভালোবাসা টা এক বিন্দুও কমেনি। এসব ভাবতে ভাবতে মেঘ শক্ত করে আহানকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুজলো। ধীরে ধীরে আহানের স্পর্শ গুলোও আরো গভীর হতে থাকলো। দুজনেই হারিয়ে গেলো একে অপরের মায়ায়। একে অপরের মোহে ডুবে গিয়ে পূর্নতা দিলো নিজেদের অপূর্ন ভালোবাসাটাকে।
_________________________
দেড় মাস পর………..
হসপিটালের কড়িডোরে রিপোর্ট হাতে নিয়ে থমথমে মুখে বসে আছে মেঘ। ওর চোখে মুখে এসে ভর করেছে হাজারো ক্লান্তিরা। আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে মেঘের বিন্দুমাত্র মাএও খেয়ার নেই। মেঘের কানে বারবার ডাক্তারের বলা একটা কথাই ভেষে আসছে। “ইউ আর প্রেগনেন্ট মিস মেঘনা!” কথাটা যতোবারই মেঘের কানে এসে বারি খাচ্ছে, ততোবারই মেঘের শরীরের লোম গুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে। কী বলবে ‘ও’ সবাইকে? সবাই যখন বাচ্চাটার বাবার পরিচয় জানতে চাইবে তখন কীভাবে সবাইকে সত্যিটা বলবে? আর বলবেই বা কী?
মেঘের এখনো মনে আছে আহানের বলা সেদিনের কথা গুলো। সেদিন আহানের সাথে ইন্টিমেট হওয়ার পর মেঘ যখন বসে বসে ভাবছিলো যে আজকের পর হয়তো ওদের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তখনই আহান এসে মেঘকে জানায়, ‘ও’ ইচ্ছে করে নাকি মেঘের সাথে কিছুই করেনি। ভুল বশতো আবেগে ভেষে গিয়ে নাকি ‘ও’ মেঘের এতোটা ক্লোজ হয়ে গিয়েছে। মেঘ যাতে এসব কোনো কিছুই মনে না রাখে। সবকিছু যাতে একটা অ্যাক্সিডেন্ট ভেবে এখনি এখানেই সবটা ভুলে যায়। কারন আহানের লাইফে মেঘের জন্যে নাকি আর কোনো জায়গাই অবশিষ্ট নেই। এসব বলে আহান সেদিন মেঘকে “সরি” বলে ওখান থেকে চলে গিয়েছিলো। সবাইকে বলেছিলো ওকে একটা ইম্পরটেন্ট কাজের জন্যে u.k. তে চলে যেতে হবে। তাই ওর পক্ষে আর এখানে থাকা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এটা বলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আহান সেদিন ফার্ম হাউজ থেকে চলে গিয়েছিলো। কাজের কথা বলে গিয়েছিলো তাই ওকে আর কেউ আটকায়ও নেই।
এসব ভেবে মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর রিপোর্ট গুলো বুকের সাথে চেপে ধরে এলোমেলো পায়ে হসপিটাল থেকে বের হওয়ার উদ্দ্যেশে সামনের দিকে পা বাড়ালো।
_________________________
রাতঃ 10:00
মেঘ বাসায় এসে রিপোর্ট গুলো কাবার্ডে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এই মুহূর্তে ভিষন ক্লান্ত হয়ে আছে ‘ও’। ওর এখন একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন। কিছুদিন ধরে মেঘের শরীরটা এমনিতেই ভালো যাচ্ছিলো না। বারবার ‘ও’ মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলো, খাবার দাবারের উপর থেকে রুচি একদম উঠে গিয়েছিলো, কিছু খেলেই বমি করে দিতো, গা গুলিয়ে উঠতো। তাই মেঘ রুটিন চেকআপের জন্যে ওদের ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো। তিনি মেঘের লক্ষন গুলো শুনে ওকে একজন গাইনাকলজিষ্টের সাথে দেখা করতে বলে। সেখানে গিয়ে মেঘ ওর প্রেগনেন্সির খবরটা জানতে পারে। ডাক্তার নিজেও মেঘের রিপোর্ট গুলো দেখে হতবম্ভ হয়ে বসে ছিলো। কারন মিড়া রহমানের মেয়ে হওয়ার সুবাদে উনি মেঘকে খুব ভালো ভাবেই চিনতেন। আর ওনার জানা মতে মেঘ এখনো আন ম্যারেড। তাই হঠাৎ করে মেঘের প্রেগনেন্সির খবর শুনে উনি বেশ শকড হয়ে ছিলেন। ইনফ্যাক্ট ব্যাপারটা মিড়া রহমানকেও জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেঘ অনেক রিকোয়েস্ট করে ওনাকে এই বিষয়ে কাউকে কিছু জানাতে বারন করে দিয়েছে। সাথে মুখ বন্ধ রাখার মূল্য হিসেবে ওনাকে মোটা অংকের একটা চেকও দিয়ে এসেছে।
সকাল আটটায় মেঘের ঘুম ভাঙলে ‘ও’ ফ্রেশ হয়ে একেবারে রেডি হয়ে অফিসের ফাইল পএ গুলো নিয়ে নিচে নামলো। নিচে নেমে দেখলো সবাই অলরেডি ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করা শুরু করে দিয়েছে। মেঘ গিয়ে চুপচাপ একটা চেয়ারের উপর বসে নিজের মতো করে ব্রেডে জ্যাম লাগানো শুরু করলো। মিড়া রহমান শান্ত স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ কী হয়েছে তোমার? আমি কিছুদিন ধরে তোমার বিহেইবিয়ার লক্ষ করছি। তোমাকে সব সময় কেমন অন্য মনষ্ক দেখায়। কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছো নাকি?”
মিড়া রহমানের প্রশ্নে মেঘ একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বললো
“না মাম্মাম, তেমন কোনো ব্যাপার না। আসলে প্রজেক্টের কাজটা তো একদম শেষের দিকে তাই সেটা নিয়ে একটু বেশিই এফোর্ট দিতে হচ্ছে। সেজন্যে একটু টেনশন আছি আরকি।”
মেঘের কথাটা মিড়া রহমানের মোটেও বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো না। কিন্তু তাও উনি আপাততো মেঘকে কিছুই বললেন না। মেঘ কোনো রকম একটু খানি খেয়ে চেয়ার থেকে উঠে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
______________________
মেঘ গাড়ি থেকে নেমে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে আহানের অফিসের মধ্যে আসলো। আপাততো ‘ও’ কিছুদিন ধরে এখানেই বসছে। যেহেতু আহান এখন বাংলাদেশে নেই আর প্রজেক্টের কাজটাও একদম শেষের দিকে তাই ওকেই সবটা সামলাতে হচ্ছে। সবকিছু একা হাতে সামলাতে গিয়ে মেঘ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তবে ‘ও’ মনে মনে এটা ঠিক করে রেখেছে যে এই প্রজেক্ট টা কম্পিলিট হলে আহানের সাথে ‘ও’ আর কোনো যোগাযোগই রাখবে না।
মেঘ অফিসের মধ্যে ঢুকে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের কেবিনে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে এসে মেঘের কেবিনের দরজায় নক করে ভিতরে আসার জন্যে পারমিশন চাইলো। মেঘ মেয়েটাকে ভিতরে আসার পারমিশন দিতেই মেয়েটা ভিতরে এসে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ম্যাম A.k. স্যার একটু আগেই অফিসে এসেছেন। উনি প্রজেক্টের ফাইলগুলো নিয়ে আপনাকে আর আপনাদের সমস্ত টিম মেম্বারদের ছয় তলার মিটিংরুমে যেতে বলেছেন।”
মেয়েটার কথা শুনে মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“উনি তো u.k. তে ছিলেন, b.d. তে আসলেন কখন?”
“উনি গতকাল এসেছেন ম্যাম।”
মেঘ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে ফাইলগুলো হাতে নিতে নিতে ব্যাস্ত কন্ঠে মেয়েটাকে বললো
“ওকে তুমি যাও! আমি আসছি।”
মেঘের কথা শুনে মেয়েটা চলে গেলো। মেঘ কেবিন থেকে বের হয়ে এগিয়ে গিয়ে লিফটে উঠে ছিক্স বাটন প্রেস করলো। বাটন প্রেস করতেই লিফটের দরজা আস্তে আস্তে বন্ধ হতে শুরু করলো এর মধ্যেই কোথায় থেকে আহান দ্রুত এসে নিজের পা দিয়ে লিফটের দরজা থামিয়ে দিলো। তারপর ওর অ্যাসিটেন্টকে নিয়ে নিজেও লিফটে উঠে পড়লো। মেঘ আহানের দিক থেকে মুখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করেই মেঘের হৃদ স্পন্দন দ্রুত উঠানামা শুরু করলো। ‘ও’ জোড়ে জোড়ে লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আহান মেঘকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজের অ্যাসিটেন্টকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আচ্ছা আমার চেহারা দেখতে কি এতোই খারাপ যে লোকজন আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে?”
আহানের প্রশ্ন শুনে ওর অ্যাসিটেন্ট বললো
“কীভাবে জানবো স্যার? আপনি তো সব সময় মাস্ক পড়ে থাকেন।”
আহান ওর অ্যাসিটেন্টের কাছ থেকে এমন বোকা বোকা অ্যান্সার পেয়ে চোখ গরম করে লোকটার দিকে তাকালো। লোকটা একটা ক্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে আহানের দিকে তাকালো। এর মধ্যেই লিফটের দরজা খুলে গেলো। মেঘ আর কোনো দিকে না তাকিয়ে লিফট থেকে বের হয়ে মিটিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। আহানও ওর অ্যাসিটেন্টকে নিয়ে মেঘের পিছন পিছন এগিয়ে গেলো।
প্রায় দুই ঘন্টা পর মিটিং শেষ করে আহান আর মেঘের টিমের অন্যান্য সব মেম্বারের মিটিং রুম থেকে বের হয়ে যে যার মতো নিজেদের কাজে চলে গেলো। মেঘ ক্লান্ত হাতে ফাইলগুলো আস্তে আস্তে সব গুছিয়ে নিয়ে টেবিলের উপরে ঢেকে রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। ওর শরীরটা কেমন অশার হয়ে আসছে, চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, বুকের মধ্যে কেমন ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। আহান নিজের চেয়ারে বসে মেঘের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেঘকে ওর কাছে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে। মেঘ হাত দিয়ে টেবিলের উপর কোনো রকম ভর দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। কিন্তু বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। বসা থেকে দাড়াতেই ওর মাথা ঘুড়িয়ে উঠায় ‘ও’ ধপ করে আবারও চেয়ারে বসে পড়লো। আহান দ্রুত নিজের চেয়ার থেকে উঠে মেঘের দিকে এগিয়ে এসে ব্যাস্ত স্বরে বললো
“আর ইউ ওকে মেঘ? কী হয়েছে তোমার? এরকম ছটফট করছো কেনো?”
মেঘ আহানের প্রশ্নের কোনো অ্যান্সার না দিয়ে টেবিলের উপরে রাখা ওর সেলফ ফোনটা হাতে নিয়ে ওর একজন টিম মেম্বারকে ফোন দিয়ে এখানে এসে ওকে নিয়ে যেতে বললো। মেঘের কথার মাঝেই আহান মেঘের হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে গিয়ে কলটা কেটে দিলো। তারপর পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করতে করতে বললো
“ওদের কাউকে আসতে হবে না। আমি এক্ষুনি ডাক্তারকে ফোন করছি। ওনি এসে তোমাকে চেকআপ করে যাবেন।”
আহান কথাটা বলার সাথে সাথে মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ওর গালে কষিয়ে একটা চড় মারলো। আহান গালে হাত দিয়ে হতোবম্ভ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেঘ জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে চেচিয়ে বললো
“খবরদার ভবিষ্যতে যদি কখনো আর আমার কোনো ব্যাপার নিয়ে আপনি নাক গলিয়েছেন তাহলে আজকে যেটা হলো এর থেকেও খারাপ কিছু হবে। আজকে তো শুধু একটা থাপ্পর মারলাম। এরপর যদি আপনি আমার আশেপাশেও এসেছেন তাহলে আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো। মাইন্ড ইট!”
চলবে,,,,,,,
[বিঃদ্রঃ সবাই মেন্টাললি প্রিপারেশন নিন। গল্পটা একদম শেষের দিকে। আর হয়তো 2/3 টা পর্ব আছে।]