মিশে আছো মুগ্ধতায় – পর্ব ৩৫

0
1066

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ35 (মুখোশ উন্মোচন)

হলুদ, লাল, নীল মরিচ বাতির আলোতে সজ্জিত হয়েছে চারপাশ। পুরো গার্ডেন এড়িয়া জুড়ে অগোনিত মানুষের সমাগম। সবাই নিজেদের মতো করে পার্টির আনন্দ উপভোগ করছে। গার্ডেনের এক সাইডে একটা স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের উপরে উঠে একে একে সবাই নিজেদের পারফরমেন্স করছে। স্টেজের সামনের দিকটায় একদম পুরোটা জায়গা জুড়ে ব্রাইড-গ্রুম প্লাস গেস্টদের বসার জন‍্যে ব‍্যাবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সবার প্রথম সারির একদম মাঝখানে বসে আছে দিশা এবং অভি। ওদের সামনে ছোট একটা স্টুলের উপরে বসে আছে একজন হিনা আর্টিস্ট। যিনি এই মুহূর্তে খুব মনোযোগ দিয়ে দিশা আর অভির হাত এক করে মেহেন্দির ডিজাইন একে দিচ্ছেন। এতে অভি বেশ বিরক্ত হলেও দিশার খুশীর কথা ভেবে দাতে দাত চেপে চুপচাপ সবটা সহ‍্য করে নিচ্ছে।

গার্ডেনের এক সাইডে গিয়ে ঘাসের উপর মেঘ, সাড়িকা, সাঈফা আর আলিশা বসে আছে। এই জায়গাটায় তেমন একটা কোলাহল নেই। ওদের পাশে বসে অন‍্যান‍্য হিনা আর্টিস্ট’রা ওদের হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে। অবশ‍্য সবার হাতে পড়ালেও সাঈফার হাতে পড়াচ্ছে না। কারন সাঈফার হাতে সাজিদ মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে। সবার জোড়া জোড়িতেই সাঈফা এক প্রকার বাধ‍্য হয়ে সাজিদের হাতে মেহেদি পড়ার জন‍্যে রাজি হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবাই মিলে জোট বেধে হঠাৎ করে ওর কাছে এমন উদ্ভট বায়না কেনো করেছে, সেটা সাঈফার মাথার মধ‍্যে কিছুতেই ঢুকছে না।

মেঘ নিজের দু-হাতের উপরের সাইডের মেহেদি দেওয়া কম্পিলিট করে হাতের দুই আঙুল দিয়ে লেহেঙ্গার সাইড ধরে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর গলা খ‍্যাকানি দিয়ে সাজিদের দিকে তাকিয়ে বললো

“সাজিদ, আর ইউ রেডি?”

মেঘের প্রশ্ন শুনে সাজিদ নিজের ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বললো

“হুম, একদম!”

মেঘ একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ভীতু স্বরে বললো

“দেখিস ভাই মার টার খেলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই। জানিসই তো ‘ও’ এমনিতেই তোর উপর ক্ষেপে আছে। তারপর যদি তোকে এখন এই অবস্থায় দেখে, তাহলে তোর কি হাল করবে কে জানে!”

সাজিদ আশ্বাসের স্বরে বললো

“আরেহ টেনশন করো না। যা হবার হবে। বড় কিছু পেতে গেলে তো এইটুকু রিস্ক নিতেই হবে, তাইনা?”

মেঘ জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো

“বেস্ট অফ লাক ভাই।”

কথাটা বলে মেঘ দু-হাতের দু-আঙুল দিয়ে লেহেঙ্গার কোনা চিমটি কাটার মতো করে ধরে ওখান থেকে চলে গেলো। মেঘ যেতেই সাঈফা ভ্রু কুচকে বললো

“আচ্ছা তোমরা সবাই মিলে নিজেদের মাথায় কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো বলো তো? আমি তো তোমাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।”

সাঈফার কথা শুনে সাজিদ ওর দিকে তাকিয়ে মৃদ‍্যু ধমক দিয়ে বললো

“তোমাকে এতোকিছু না বুঝলেও হবে। তুমি চুপচাপ নিজের মুখটা বন্ধ করে হাসিহাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো।”
______________________

মেঘ লেহেঙ্গার কোনা ধরে হেটে হেটে স্টেজের দিকে যাচ্ছিলো। হঠাৎ A.k. আর ওর অ‍্যাসিটেন্ট এবং আরেকটা মেয়ে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো। মেঘ ভ্রু কুচকে একবার A.k. এর পা থেকে মাথা পযর্ন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। A.k. ডার্ক ব্লু কালারের পাঞ্জাবী আর হোয়াইট কালারের প‍্যান্ট পড়েছে। সাথে মুখে মাস্ক আর চোখে গোল গোল দুটো চশমা দিয়ে রেখেছে। মেঘ সরু চোখে A.k. এর দিকে তাকিয়ে বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো

“আপনি সব সময় এভাবে মুখে বড় একটা মাস্ক আর চোখে বাদাইম্মা মার্কা এরকম একটা চশমা কেনো দিয়ে রাখেন? সবাইকে নিজের ফেইস দেখাতে কি আপনার লজ্জা লাগে নাকি?”

মেঘের কথা শুনে A.k. এর অ‍্যাসিটেন্ট ফিক করে হেসে দিলো। A.k. চোখ ছোট ছোট করে একবার নিজের অ‍্যাসিটেন্টের দিকে তাকিয়ে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“জি না, কাউকে নিজের চেহারা দেখাতে আমার বিন্দুমাত্রও লজ্জা লাগে না। আসলে সবার ভালোর জন‍্যেই আমি নিজের ফেইসটা কভার করে রাখি। কারন কেউ আমার চেহারার দিকে একবার তাকালে দ্বিতীয় বার আর আমার দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারে না। একদম হা হয়ে ড‍্যাবড‍্যাব করে শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।”

A.k. কথাটা বলতেই মেঘ কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললো

“ওমাআআআআ আপনি এওো ছুন্দলী।”

A.k. টেনে টেনে বললো

“হ‍্যাআআআ আমি এওো ছুন্দলী! আপনি কি আমাকে দেখতে চান? চাইলে কিন্তু আমি আপনাকে নিজের চেহারা দেখাতেই পারি। কিন্তু আপনি ক্রাশ খেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলে কিন্তু সেই রিস্ক আমি নিতে পারবো না।”

A.k. এর কথা শুনে মেঘ একটা ভেংচি কেটে বললো

“নো থ‍্যাংকস! আপনার চেহারা দেখার আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আর ক্রাশ নামক অখাধ‍্য-কুখাদ‍্য আমি একদমই খাই না। সামনে থেকে সরুন, আমাকে ওদিকে যেতে হবে।”

কথাটা বলে মেঘ সাইড কাটিয়ে যেতে নিতেই ওর চোখ A.k. এর পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার উপর পড়লো। মেয়েটা A.k. এর এক হাত আকড়ে ধরে ওর সাথে একদম মিশে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার পড়নে পাতলা নেটের ডার্ক ব্লু কালারের একটা শাড়ি আর পায়ে ম‍্যাচিং পেন্সিল হাই হিল পড়া। সাথে ব্রাউন কালারের চুলগুলো কার্ল করে পিছনে ছেড়ে রাখা। মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা বেশ সুন্দরী এবং মর্ডান। মেঘ কিছু সময় মেয়েটাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে A.k. এর দিকে তাকিয়ে ব‍্যাজ্ঞাত্নক স্বরে বললো

“এটাকে আবার কোথা থেকে জোটালেন? এর আগে তো একে কখনো আপনার সাথে দেখিনি।”

মেঘের কথা শুনে A.K. নিজেও মেঘের মতো করে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে বললো

“এটাকে কোথাও থেকে জোটাইনি। এটা আমার কাছে আগে থেকেই ছিলো। আসলে ইনি হচ্ছেন আমার একমাএ জানের জান গার্লফ্রেন্ড। আমার একমাএ হার্টের পিচ, আমার একমাএ ভবিষ্যৎ বউ লিয়ানা।”

মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো

“লিয়ানা? বাহ কি দারুন নাম! যেমন আপনার গার্লফ্রেন্ড, তেমন তার নাম। চেহারার সাথে নামটা একদম পারফেক্টলি মানাচ্ছে।”

মেঘের কথা শুনে মেয়েটা মুচকি হেসে বললো

“থ‍্যাংক ইউ ডিয়ার!”

“ওয়েলকাম ম‍্যাম! ইউ আর লুকিং সো প্রিটি।”

মেঘের কথা শুনে লিয়ানা লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে আবারও মেঘকে ধন‍্যবাদ জানালো। মেঘ হালকা হেসে A.K. এর কাছে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ওর কানে কাছে ফিশফিশিয়ে বললো

“এই মাথামোটা, আটার দোকানটাকে কোথা থেকে জোটালেন বলুনতো? কথা শুনে তো মনে হচ্ছে এর মাথায় ঘিলুর জায়গায় কেউ গোবর রেখে দিয়েছে। নাহলে কি আর ইনসাল্ট’কে কমপ্লিমেন্ট ভেবে কেউ থ‍্যাংক্স দেয়? তবে যাই হোক, আপনার সাথে একদম দারুন মানিয়েছে। কারন আপনার মতো মুখে মাস্ক পড়া বাদরের জ‍ন‍্যে এই গোবর সুন্দরীই একদম পারফেক্ট।”

কথাটা বলে মেঘ মুখ বাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো। আর A.K. চোখ ছোট ছোট করে মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ‘ও’ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে মেঘ সুযোগ পেয়ে ওকে হালকা করে অপমান করে গেছে।
_________________________

মিহির গান গাওয়া শেষে গিটার’টা কাধে ঝুলিয়ে স্টেজ থেকে নামতেই কোথা থেকে মেঘ হঠাৎ করে এসে মিহিরের সামনে দাড়ালো। তারপর দাত বের করে একটা হাসি দিয়ে নিজের হাত দুটো মিহিরের সামনে ধরে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো

“হাতে মেহেদি পড়েছি। দেখতো কেমন হয়েছে?”

মেঘের কথা শুনে মিহির একবার মেঘের হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো

“সুন্দর হয়েছে!”

“সত‍্যি?”

মিহির মাথাটা উপর-নিচ করে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ালো। মেঘ খুশীতে গদগদ হওয়ার ভান করে বললো

“আচ্ছা তাহলে আমার সাথে ওইদিকে চল। ওখানে বসে সবাই নিজেদের হাতে মেহেদি পড়ছে। তুই ওদেরটা দেখে ডিসাইড করবি যে ওদের হাতের মেহেদি পড়ানোর ডিজাইন সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে, নাকি আমারটা সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে!”

মেঘের কথা শুনে মিহির কপাল কুচকে বললো

“এসব মেয়েলি ব‍্যাপারে আমাকে জড়াস না মেঘ। আমি এসব মেহেদি ডিজাইনের আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারি না। তুই বরং অন‍্য কাউকে নিয়ে গিয়ে দেখা।”

মেঘ নাক ফুলিয়ে মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“না, অন‍্য কাউকে নিয়ে গিয়ে দেখালে হবে না। তোকেই গিয়ে দেখতে হবে। চল আমার সাথে!”

মিহির বিরক্তির দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো

“এমনিতে তো সবসময় একদম দাদি-আম্মার মতো ম‍্যাচুরিটি দেখিয়ে ঘুড়ে বেড়াস। তাহলে এমন সিল্লি বিষয়গুলো নিয়ে বাচ্চামো করিস কেনো? বলছি না আমি এসবের কিছুই বুঝি না। তাহলে অযথা জেদ কেনো করছিস?”

মেঘ কাটা কাটা স্বরে বললো

“আমি মোটেও জেদ করছি না। জেদ তুই করছিস! তুই আমার সাথে গিয়ে সবার মেহেদির ডিজাইন গুলো দেখে কারটা বেষ্ট হয়েছে সেটা বললেই তো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে তুই এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার সাথে কথা কাটাকাটি করছিস। আচ্ছা আমি কি খুব বেশি কিছু আবদার করেছি তোর কাছে? ছোট বোন হয়ে বড় ভাইয়ের কাছে এইটুকু আবদার করার কি অধিকার আমার নেই?”

মেঘের কথার ধরন দেখে মিহির বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে মেঘ এবার ওকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করা শুরু করবে। তাই ‘ও’ আর বেশি কথা না বাড়িয়ে একটা দীঘাশ্বাস ফেলে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো

“হয়েছে আর বস্তা পচা ডায়লগ দিতে হবে না। কোথায় আছে সবাই? নিয়ে চল আমাকে।”

মিহির কথাটা বলতেই মেঘ ঠোট চেপে একটা দুষ্টু হাসি দিলো। তারপর সামনের দিকে হাটতে হাটতে হাত দিয়ে মিহিরকে ওর পিছনে আসার জন‍্যে ইশারা করে বললো

“ফলো মি!”

মিহির বিরক্তি ফেইস করে পকেট থেকে নিজের সেলফ ফোন বের করে হাতে নিলো। তারপর ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে ফোন স্ক্রল করতে করতে হাটতে লাগলো। মেঘ হাটতে হাটতে মিহিরকে নিয়ে সাঈফাদের কাছে এসে দাড়ালো। মিহিরকে দেখে সাঈফার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। সাঈফা শুকনো একটা ঢোক গিলে যথা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে থম মেরে বসে রইলো। সাজিদ মাথা নিচু করে সাঈফাকে মেহেদি পড়াতে পড়াতে মনে মনে বলোঃ- ‘এই বারের মতো প্লিজ বাচিয়ে নিও আল্লাহ। নাহলে এতো মানুষের মধ‍্যে বসে এই খারুচের হাতে মা*র খেলে আমার মান-সম্মানের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’

মেঘ কনুই দিয়ে মিহিরের হাতে খোচা মেরে বললো

“ভাইয়া দেখতো সাজিদ কতো সুন্দর করে সাঈফার হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে। ওয়াউ! ডিজাইনটা তো ভীষন সুন্দর হয়েছে।”

মেঘের কথা শুনে মিহির চমকে উঠে সামনে তাকালো। সামনে তাকিয়ে সাজিদকে সাঈফার হাত ধরে বসে থাকতে দেখে মুহূর্তের মধ‍্যে মিহিরের চোখ জোড়া রক্তবর্ন ধারন করলো। মেঘ একটু এগিয়ে গিয়ে সাজিদকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“ইয়ার তুই এতো ভালো মেহেদি পড়াতে পারিস? কই সাঈফা এটার কথা তো আগে কখনো আমাকে বলেনি।”

সাজিদ কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললো

“আমাকে নিয়ে তোর আর সাঈফার মধ‍্যে কখনো কথা হয়েছে নাকি?”

মেঘ স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“কথা হয়েছে মানে? সাঈফা যখনই আমাকে কল করতো তখনই শুধু তোর কথাই বলতো। তোর প্রশংসা শুনিয়ে শুনিয়ে আমার কান পচিয়ে ফেলেছিলো এই মেয়ে। সবসময় বলতো সাজিদ ভিষন মেধাবী স্টুডেন্ট, ‘ও’ খুব ভালো ডান্স করতে পারে, ‘ও’ অনেক সুন্দর করে পেইন্টিং আকে, ‘ও’ অনেক ভালো গান গায়। প্রথমবার তোর গান শুনে নাকি সাঈফা তোর উপরে বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়েছিলো।”

মেঘের কথা শুনে সাঈফা বড়বড় চোখ করে মেঘের দিকে তাকালো। তারপর বিরবির করে বললো

“এই বাদাইম্মার গান শুনে নাকি আমি ওর উপরে ক্রাশ খেয়েছি! আরেহ ওর গানের সুর শুনলে তো মনে হয় কেউ ফাটা বাশের মধ‍্যে পানি দিয়ে হুক্কা টানছে। আর পেইন্টিং? এই ছেলে জিবনে কখনো পেন্সিল ঘুড়িয়ে খাতায় একটা পাতা একেছে কিনা সেটা নিয়েই তো আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। আর ডান্সের কথা নাহয় বাদই দিলাম।”

সাঈফা কথা গুলো বলতেই সাজিদ সাঈফার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো

“তুমি আমার গান শুনে আমার ভয়েসের উপর ক্রাশ খেয়েছিলে সাঈফু? কই আমাকে তো আগে কখনো এই কথাটা বলোনি?”

সাঈফা জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে দাতে দাত চেপে মৃদু স্বরে সাজিদকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আমিও এইমাএই জানতে পারলাম। তোমাকে আগে থেকে কিভাবে বলবো?”

সাঈফার কথা শেষ হতেই মিহির চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো

“এখানে কি হচ্ছে এসব? এতোগুলো হিনা আর্টিস্ট থাকতে ওই ছেলে কেনো সাঈফার হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে? এখানে কি হিনা আর্টিস্টের অভাব পড়েছে নাকি? অভাব পড়লে আমাকে বলতি, আমি পার্লার থেকে কল করে আরো হিনা আর্টিস্টদের খবর দিতাম।”

মিহিরের কথা শুনে মেঘ কিছুটা বিরক্ত হওয়ার ভান করে বললো

“উফফ ভাইয়া সব সময় বোকা বোকা কথা বলবি না তো। আরেহ হিনা আর্টিস্টের অভাব পড়বে কেনো? সাজিদ ভালোবেসে সাঈফার হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে।”

মেঘ কথাটা বলতেই মিহির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। মিহিরকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘ কিছুটা ভরকে গেলো ঠিকই, কিন্তু সেটা মিহিরকে বুঝতে দিলো না। ‘ও’ জোড় গলায় মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? সাজিদ সাঈফাকে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে এতে তোর সমস‍্যা কোথায়?”

মেঘের প্রশ্নে মিহির এবার কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। তারপর গলা গ‍্যাকানি দিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করতে করতে বললো

“আজব তো আমার সমস‍্যা হতে যাবে কোন দুঃখে? আমি তো এমনিই ওইগুলো কথার কথা বলেছিলাম।”

মেঘ বিরবির করে বললো

“খারুচ কোথাকার! ভাঙবে তবু মচকাবে না।”

মেঘকে বিরবির করতে দেখে মিহির ভ্রু কুচকে বললো

“কিছু বললি?”

মিহিরের প্রশ্নে মেঘ ডানে-বামে ঘাড় ঘুড়িয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো। মিহির ঠোট বাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে সাঈফার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে হাটু গেড়ে বসলো। তারপর নিজের হাতের দু-আঙুল দিয়ে সাঈফার হাতের কব্জি চেপে ধরে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“মেঘ তুই তো আমাকে এখানে মেহেদির ডিজাইন দেখতে নিয়ে এসেছিলি তাইনা?তাহলে এখন এদিকে আয়। আমি দেখে বলছি তোর ডিজাইনটা সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে, নাকি সাঈফার ডিজাইনটা সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে।”

মিহিরের কথা শুনে মেঘ রীতিমতো ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে গেলো। ‘ও’ কি ভেবে মিহিরকে এখানে নিয়ে এসেছিলো, আর এখন কি হচ্ছে! মেঘকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিহির আবারও বললো

“কি হলো ওখানে ওভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো? এদিকে আয়।”

মেঘ জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে ধীর পায়ে মিহিরের দিকে এগিয়ে গেলো। এগিয়ে গিয়ে শুকনো মুখ করে মিহিরের পাশেই হাটু গেড়ে বসে পড়লো। মিহির কিছু না বলে সাঈফার দু-হাত শক্ত করে চেপে ধরে মেঘের কাছে এগিয়ে নিয়ে এসে ওর হাতের সব মেহেদি ঘশে মেঘের লেহেঙ্গায় লাগিয়ে দিলো। মেহেদি লেগে মুহূর্তের মধ‍্যে মেঘের সিলভার কালারের লেহেঙ্গা’টার রং পাল্টে গেলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় ওখানে উপস্থিত সবাই হতবম্ভ হয়ে গেলো। ওরা কেউ ভাবতেও পারেনি মিহির এমন একটা কাজ করবে। মেঘ চিল্লিয়ে বললো

“এটা কি করলি ভাইয়া? আমার লেহেঙ্গা’টা তো একেবারে নষ্ট হয়ে গেলো।”

মেঘের কথা শেষ হতেই সাঈফা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো

“ওহ শিট! আমার পুরো হাতে মেহেদি একদম লেপ্টে গেছে। এইবার আমি কি করবো?”

মিহির একটা বাকা হাসি দিয়ে অনুতপ্ত হওয়ার ভান করে বললো

“আই অ‍্যাম ভেরি সরি গাইস। এমন কিছু হবে সেটা আমি কখনো ভাবিনি। আসলে আমি তো সাঈফার হাতের মেহেদির কালার কেমন হয়েছে সেটা দেখতে চাইছিলাম। কিন্তু জামা-কাপড়ে মেহেদি ঘশলে যে এটা এভাবে নষ্ট হয়ে যায় সেটা আমার মনেই ছিলো না। এইবার আমি কি করবো?”

কথাটা বলতে বলতে মিহির সাঈফার হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মেঘও বসা থেকে দাড়িয়ে নিজের লেহেঙ্গার আচল টেনে ধরে মিহিরের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“তুই এটা ইচ্ছে করে করেছিস তাইনা? তোকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি। আগে আমি আমার লেহেঙ্গাটাকে বাচিয়ে নিয়ে আসি।”

কথাটা বলে মেঘ দ্রুত দৌড়ে বাসার দিকে চলে গেলো। মেঘের পিছনে পিছনে সাঈফাও দৌড়ে গেলো। ওরা যেতেই মিহির সাজিদের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর পাঞ্জাবীর কলার ধরে টেনে ওকে বসা থেকে উঠিয়ে দাড় করালো। তারপর হুমকির স্বরে বললো

“এখানে যতোদিন আছিস নিজের লিমিটের মধ‍্যে থাকবি। নাহলে এখান থেকে স-শরীরে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারবি না। বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান চলছে তাই আজকের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম। তা নাহলে……”

শেষের কথাটা শেষ না করেই মিহির সাজিদকে ছেড়ে দিলো। তারপর সাড়িকা আর আলিশার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে নিজের চুলগুলো ঠিক করতে করতে ওখান থেকে চলে গেলো। মিহির চলে যেতেই সবাই ফোশ করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
_________________________

A.k. ভুল করে নিজের ওয়ালেট’টা রুমেই ফেলে গিয়েছিলো। তাই ওটা নেওয়ার জন‍্যে নিচ থেকে উপরে নিজের রুমে আসলো। ওর পিছনে পিছনে লিয়ানাও আসলো। A.k. লিয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের মতো করে বিছানা উল্টেপাল্টে ওয়ালেট খুজতে লাগলো। এরমধ‍্যেই হঠাৎ করে লিয়ানা এগিয়ে এসে পিছন থেকে A.k. কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় A.k. কিছুটা চমকে উঠলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে কড়া গলায় লিয়ানাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“এসব কি করছো লিয়ানা? দরজা খোলা আছে দেখতে পারছো না? কেউ যদি এখন এখানে এসে পড়ে তখন আমাদের ব‍্যাপারে কি ভাববে?”

লিয়ানা A.k. এর পিঠের সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে বললো

“সবাই আপাততো নিচে আছে। তাই এখন এখানে কারোরই আসার চান্স নেই। আর তাছাড়া আসলেও বা কি? আমি যে তোমার গার্লফ্রেন্ড সেটা তো সবাই জানে।”

লিয়ানা কথাগুলো বলতেই A.k. ঝটকা মেরে লিয়ানাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো

“সবাই যেটা জানে সেটার বাইরেও কিন্তু আরেকটা সত‍্যি আছে লিয়ানা। তাই নিজের লিমিটে থাকো। নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”

লিয়ানা এগিয়ে এসে A.k. এর মুখোমুখি দাড়িয়ে অসহায় কন্ঠে বললো

“তুমি সব সময় আমার সাথে এরকম কেনো করো A.k.? তুমি তো বেশ ভালো করেই জানো যে আমি তোমাকে ভিষন ভালোবাসি। অথচ তুমি সব সময় আমাকে ইগনোর করে চলো। আজ অবদি আমাকে কখনো নিজের মুখটা পযর্ন্ত দেখতে দিলে না।”

A.k. শক্ত কন্ঠে বললো

“আমার মুখ দেখার তোমার কোনো দরকার নেই। তুমি শুধু সেটুকুই করবে যেটুকু তোমাকে বলা হবে। এর বাইরে যদি কিছু করার চেষ্টা করেছো তাহলে আমি কি করতে পারি সেটা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো।”

লিয়ানা এবার A.k. এর দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো

“আচ্ছা তুমি যা বলবে আমি তোমার সব কথা শুনবো। যা করতে বলবে সেটাই করবো। শুধু একটা বারের জন‍্যে আমাকে তোমার চেহারাটা দেখতে দেও প্লিজ।”

কথাটা বলে লিয়ানা A.k. এর মাস্কের দিকে হাত বাড়াতেই A.k. লিয়ানার হাত ধরে ফেললো। তারপর রাগি কন্ঠে বললো

“ডোন্ট ডেয়ার লিয়ানা!”

লিয়ানা এক ঝটকায় নিজের হাত A.k. এর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো

“আজকে আমি তোমার চেহারা দেখেই ছাড়বো A.k.। তুমি চাইলেও আজকে আমাকে আটকাতে পারবে না।”

কথাটা বলে লিয়ানা একটানে A.k. এর মুখের মাস্কটা খুলে ফেললো। তারপর ঠোটের কোনে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে A.k. এর দিকে তাকালো। কিন্তু ওর ঠোটের কোনের সেই প্রশান্তির হাসি বেশিক্ষন টিকলো না। A.k. এর চেহারার দিকে চোখ যেতেই লিয়ানা ভয় পেয়ে দু-কদম পিছিয়ে গেলো। তারপর ভয়ার্ত কন্ঠে বললো

“তুমি এখানে কিভাবে আসলে? ত-তুমি এ-এখনো বেচে আ-আছো ক-কিভাবে?”

A.k. শয়তানি একটা হাসি দিয়ে নিজের কোমড়ে গুজে রাখা রিভলবার’টা টেনে বের করে লিয়ানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো

“ভেবেছিলাম তোকে আর কয়েকটা দিন বাচিয়ে রাখবো। কিন্তু তুই সেটা হতে দিলি না। অতিরিক্ত পাকনামি করতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে নিয়ে আসলি। এইবার ম*রা*র জন‍্যে প্রস্তুত হ।”

কথাটা বলে A.k. ওর হাতে থাকা রিভলবার’টা দিয়ে লিয়ানার পেটে পরপর দুটো শুট করে দিলো। শুট করার সাথে সাথে লিয়ানা ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর পাশ থেকে কারো চিৎকারের শব্দে A.k. ঘাড় ঘুড়িয়ে দরজার দিকে তাকালো। দরজার দিকে তাকাতেই A.k. এর হাত থেকে রিভলবার’টা ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো। কারন দরজার সামনে মেঘ দাড়িয়ে আছে। আর ‘ও’ হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে A.k. এর দিকেই তাকিয়ে আছে।

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here