#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ41
হসপিটালের কড়িডোরের বেঞ্চের উপর থম মেরে বসে হাতে থাকা কাগজটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আহান। এই মুহূর্তে ওর চারপাশে কী হচ্ছে সেদিকে ওর বিন্দুমাত্রও খেয়াল নেই। ‘ও’ শুধু কাগজটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের হিসেব মিলাতে ব্যাস্ত। এটা মেঘের প্রেগনেন্সি রিপোর্ট। তখন সাজিদ অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পর সাথে সাথে আহির, মিহির, আহান সাজিদকে ধরাধরি করে বাড়ির গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দিয়েছিলো। পথে আসার সময় সাজিদের মাথা থেকে অনেক ব্লাড বের হচ্ছিলো, তাই আহান মেঘের ব্যাগটা খুলে সেটা থেকে ওর জামা- কাপড় বের করে সাজিদের মাথা সহ ওর শরীরের আঘাত লাগা জায়গা গুলোতে পেচিয়ে দিয়েছিলো। তখনই আহানের হাতে এই রিপোর্ট টা এসে পড়েছিলো। আহান জরুরি কাগজ ভেবে রিপোর্টের দিকে তাকাতেই মেঘের প্রেগনেন্সি রিপোর্ট দেখে পুরো শকড হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকেই ‘ও’ এই রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে পুরনো কথা ভাবছে আর নিজেকে মনে মনে গালি দিচ্ছে।
এদিকে সবাই হসপিটালের কড়িডোরে বসে সাজিদের জন্যে কান্নাকাটি করছে। সাজিদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। গাড়ির নিচে চাপা পড়ায় ওর শরীরের প্রায় 85 পার্সেন্ট জায়গা থেতলে গেছে। এখন কোনো রকম ‘ও’ শুধুমাত্র নিঃশ্বাস টা নিতে পারছে। এছাড়া ওর পুরো শরীর একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে। আপাততো এই মুহূর্তে সবাই মিলে আল্লাহর কাছে শুধু একটা প্রে’ই করছে, যাতে আল্লাহ ওর প্রানটা বাচিয়ে দেন। এসব ঝামেলার মধ্যে মেঘের কথাটা সবার মাথা থেকে একদম বেড়িয়ে গেছে। মেঘ কোথায় আছে, কীভাবে আছে, সেদিকে ওদের কারো বিন্দুমাত্রও খেয়াল নেই। আহান বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এখন যা করার ওকেই করতে হবে। তাই ‘ও’ একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে হাতে থাকা কাগজটা ভাজ করে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো।তারপর কাউকে কিছু না বলেই হসপিটাল থেকে বের হওয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দিলো।
________________________
রাত 3:45
মাথার উপর এক মগ পানি ঢেলে দিতেই ধরফরিয়ে উঠে চোখ জোড়া খুলে ফেললো মেঘ। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে জেরিনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই মেঘের ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। ‘ও’ সতর্ক চোখে আশেপাশে ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারলো এটা কোনো একটা পরিত্যাক্ত গোডাউন। যেখানে ওকে নিয়ে এসে চেয়ারের সাথে ওর হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে। মেঘ আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে জেরিনের দিকে তাকাতেই জেরিন শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো
“ওয়েলকাম টু আওয়ার হেল মিসেস আহান খান।”
জেরিনের কথা শুনে মেঘ শক্ত কন্ঠে বললো
–“এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলো। কিন্তু তুই এখনো নিজেকে চেইঞ্জ করতে পারলি না। সেই আগের মতোই রয়ে গেলি। কুকুরের লেজ হয়তোবা কখনো সোজা হলেও হতে পারে। কিন্তু তোর মতো মেয়ের ভালো হওয়ার চান্স এক পার্সেন্টও নেই।”
মেঘের কথা শুনে জেরিন এগিয়ে এসে মেঘের গাল শক্ত করে চেপে ধরলো। তারপর দাত কিড়মিড় করে বললো
–“খবরদার মুখ থেকে যদি একটাও ফালতু কথা বের করেছিস তাহলে তোর অবস্থাও ওই আহান খানের মতো করবো।”
জেরিনের কথা শুনে মেঘ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। মেঘ বুঝতে পারছে না যে জেরিন কি বলছে এসব। ওর অবস্থাও আহান খানের মতো করবে, মানে? কী করেছে ওরা আহানের সাথে? মেঘ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে জেরিনের দিকে তাকিয়ে ওকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন এসে জেরিনের গালে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো। চড়টা খেয়ে জেরিন নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে গেলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় মেঘ চোখ বড় বড় করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর সামনে অগ্নি মূর্তি ধারন করে আবীর দাড়িয়ে আছে। আবীরকে এখানে দেখে মেঘ আরো এক দফা অবাক হলো। কারন সেদিনের পর থেকে আবীরের আর ছায়াটাও কখনো দেখতে পায়নি মেঘ। শুধু আবীর কেনো, আবীরের মা, জেরিন, জেরিনের মা ওদের কারো সাথেই সেদিনের পর থেকে মেঘদের আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না।
মেঘের অবাকের রেশ কেটে উঠতে না উঠতেই ওকে আরো অবাক করে দিতে জেরিন নিচ থেকে উঠে আবীরের কলার চেপে ধরলো। তারপর রেগে চেচিয়ে বললো
“তুমি আমাকে মারলে কেনো আবীর? তুমি জানো না? আমার গায়ে কেউ হাত তুলুক সেটা আমার একদম পছন্দ না।”
আবীর নিজের কলার থেকে জেরিনের হাত ছুটিয়ে নিয়ে ওর এক হাত পিছনে মুচড়ে ধরে বললো
“আমার ভালোবাসার গায়ে কেউ হাত তুলুক সেটাও আমার একদম পছন্দ না জেরিন। তোকে না বলেছি, আমার মেঘের থেকে একশো হাত দূরে থাকবি। তারপরেও তুই ওর গাল চেপে ধরলি কোন সাহসে?”
আবীরের কথা শুনে মেঘ এবার অবাকের চুরান্ত সীমানায় পৌছে গেলো। ‘ও’ হা করে আবীরের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললো
-শেষ পযর্ন্ত নাকি এই ছেলে আমাকে ভালোবাসে? লাইক সিরিয়াসলি? উল্টাপাল্টা কিছু গিলে এসেছে নাকি? নাহলে এসব উদ্ভট কথাবার্তা বলছে কেনো?
মেঘের এসব ভাবনার মধ্যেই জেরিন এক ঝটকায় আবীরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। তারপর চিল্লিয়ে আবীরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“কী বলছো এসব? পাগল হয়ে গেছো নাকি? তুমি কীভাবে মেঘকে ভালোবাসতে পারো আবীর? তুমি কী আমাদের প্লানের কথা সব ভুলে গেছো?”
জেরিনের কথা শুনে আবীর বললো
“না, যেভাবে সবটা প্লান করেছিলাম, সেই অনুযায়ীই সবটা হবে। শুধুমাত্র মেঘকে আমি কোথাও যেতে দিবো না।”
জেরিন অবাক কন্ঠে বললো
“মেঘকে কোথাও যেতে দিবে না, মানেটা কী? ওকে রেখে দিয়ে তুমি করবে কী? তুমি কী ভুলে গেছো যে তুমি আমাকে কী প্রমিস করেছিলে? তুমি বলেছিলে, আমরা আমাদের প্লানে সাকসেস হওয়ার পর তুমি আমাকে বিয়ে করবে। তাহলে শেষ সময়ে এসে এখন এসব কথা কেনো বলছো?”
জেরিনের কথা শেষ হতেই আবীর হো হো করে হেসে দিলো। আবীরকে এভাবে পাগলের মতো হাসতে দেখে জেরিন ভীষন অবাক হলো। আবীর জেরিনের কাছে এগিয়ে গিলে ওর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো
“বিয়ে? তাও আবার তোমার মতো একটা মেয়েকে? যে কিনা টাকার লোভে যেকোনো ছেলের সাথে বেড সেয়ার করতে পারে। ইনফ্যাক্ট টাকার জন্যে নিজের মাকে পযর্ন্ত খুন করতে পারে। এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করবো আমি? আমার কী মরার শখ জেগেছে নাকি?”
জেরিন নরম কন্ঠে বললো
“এভাবে কেনো বলছো আবীর? আমি আজ পযর্ন্ত যা যা অন্যায় করেছি সেসব তো তোমার কথাই করেছি। তুমি আমাকে যা করতে বলেছো, যেভাবে করতে বলেছো, আমি সবটা সেভাবেই করেছি। শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসি বলে তুমি এতো এতো অন্যায় করার পরেও আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাইনি। আর তুমি কিনা ওই মেয়েটার জন্যে আমাকে চিট করতে চাইছো?”
আবীর নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো
“হ্যা চাইছি। কারন আমি তোমাকে কখনো ভালোই বাসিনি। আমি শুধুমাত্র তোমাকে আমার কাজের জন্যে ইউজ করেছি। এখন আমার কাজ শেষ। তাই আমার লাইফ থেকে তোমার প্রয়োজনও শেষ।”
আবীরের কথা শুনে জেরিনের চোখ পানিতে ছলছল করে উঠলো। ‘ও’ এগিয়ে গিয়ে আবীরের সামনে দাড়িয়ে নিজের দু-হাত দিয়ে আবীরের গাল আলতো করে স্পর্শ করে বললো
“ইউ কান্ট ডু দিস আবীর। আই লাভ ইউ সো মাচ। আমি তোমাকে ছাড় বাচতে পারবো না। একদম মরে যাবো। প্লিজ তুমি আমাকে চিট করো না।”
মেঘ এতোক্ষন হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে এদের ড্রামা দেখছিলো। এসব দেখতে দেখতে এখন ওর ভীষন ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে একটা কাথা আর বালিশ ফ্লোরে বিছিয়ে নাক টেনে ঘুমাতে। মেঘ একটা হামি তুলে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো। এর মধ্যেই আবীর জেরিনকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর দাত কটমট করে রাগি কন্ঠে বললো
“আমার সামনে একদম এসব ফালতু ড্রামা করতে আসবে না জেরিন। এইগুলো আমার একদম পছন্দ না। তুমি প্লিজ এখন আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। তোমার এখানে আর কোনো কাজ নেই। যতোটুকু ঝামেলা আছে সেগুলো আমি সামলে নিতে পারবো। প্লিজ গেট লস্ট!”
আবীরের কথা শুনে জেরিন শুধু হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। ‘ও’ বুঝতে পারছে না, এটা কি সেই আবীর যে আগে রোজ ওকে ভালোবাসি বলতো? ওকে জড়িয়ে ধরে হাজারো জল্পনা-কল্পনা করতো। যেই ছেলেটা হাজার বার ওকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে ওর সাথে ক্লোজ রিলেশন তৈরি করেছে। সেই ছেলেটা কিনা এখন ওর চোখের পানিটাকেও ড্রামা বলছে? জেরিন এসব ভাবতে ভাবতে এক সাইডে রাখা নিজের হ্যান্ড ব্যাগটার দিকে এগিয়ে গেলো। তারপর ঝুকে ফ্লোর থেকে ব্যাগটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে ব্যাগের চেইন খুলে সেটা থেকে একটা রিভলবার বের করলো।তারপর রিভলবার টা হাতে নিয়ে জেরিন এসে আবীরের মুখোমুখি দাড়ালো। আবীর ভ্রু কুচকে জেরিনের দিকে তাকিয়ে ওর কার্য কলাপ দেখছে। জেরিন ওর হাতে থাকা রিভলবার টা নিজের মাথায় ঠেকিয়ে কান্নারতো স্বরে বললো
“তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো, তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।”
আবীর ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে মুখ বাকিয়ে হেসে বললো
“সো হোয়াট? তুমি নিজেকে শেষ করে দাও বা জাহান্নামে যাও, তাতে আমার কী? তুমি বেচে থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না। আর মরে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না।”
আবিরের এই কথাটা শুনে জেরিনের চোখে মুখে কঠিন ভাব ফুটে উঠলো। ‘ও’ নিজের মাথা থেকে রিভলবার টা নামিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে ফেললো। তারপর হাতে থাকা গানটা মেঘের দিকে পয়েন্ট করে আবীরের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“এই বার আপনার আসে যায় তো মিঃ রহমান? কী বলেন, এইবার আপনার ভালোবাসাকে পৃথিবী থেকে উড়িয়ে দেই?”
জেরিনের কথায় মূহুর্তের মধ্যে আবীরের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। মেঘ সরু চোখে জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললো
“তোরা নিজেরা ঝগরা করছিস ভালো কথা। বাট মাঝখানে আমাকে টানছিস কেনো? আজব! এমনিতেই আমার ঘুম পাচ্ছে। তার উপর তোদের এই রিভলবার দেখে হালকা করে মরেও যেতে ইচ্ছে করতেছে। এটাকে আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেল প্লিজ।”
মেঘের কথা শেষ হতেই জেরিন চিল্লিয়ে বললো
“যাষ্ট শাটআপ! এই সবকিছু শুধুমাত্র তোর জন্যে হয়েছে। আগেই যদি তোকে আমি মেরে ফেলতাম তাহলে আর এতো কিছু হতোই না।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“আ হা হা শখ কতো! তোমার বফ তুমি সামলে রাখতে পারো না। তাই সে অন্য মেয়েদের দেখলে চুক চুকানি শুরু করে। আর তুমি কিনা আমাকে মেরে ফেলার কথা বলছো?”
মেঘের কথা শেষ হতেই জেরিন এগিয়ে গিয়ে মেঘের মাথায় রিভলবার চেপে ধরলো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো
“তোকে এখন এখানে মেরে দিলেই ওর সব চুক চুকানি শেষ হয়ে যাবে। তারপর আমাকে বিয়ে করা ছাড়া ওর হাতে আর অন্য কোনো রাস্তা থাকবে না। সো, বি রেডি!”
জেরিন কথাটা বলতেই মেঘ চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। এর মধ্যেই আবীর দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জেরিনের হাত থেকে রিভলবার টা ছো মেরে নিয়ে নিলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় জেরিন হকচকিয়ে উঠে আবীরকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আবীর নিজের হাতে থাকা রিভলবার টা দিয়ে জরিনের কপাল বরাবর শুট করে দিলো। গুলির শব্দ কানে আসতেই মেঘ জোড়ে চিল্লিয়ে উঠে চোখ জোড়া খুলে ফেললো। চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো জেরিনের বডিটা মাটিতে পড়ে আছে। আর ওর কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। মেঘ আবারও একটা চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মেঘ ভয় পাচ্ছে দেখে আবীর হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে মেঘের সামনে হাটু গেরে বসলো। তারপর শান্ত স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ভয় পেও না মেঘ। কিচ্ছু হয়নি। আমি আছি তো।”
কথাটা বলে আবীর মেঘের গালে হাত রাখতে যাবে তার আগেই ওর কানে বাইরে থেকে আসা গুলির শব্দ ভেষে এলো। আবীর দ্রুত বসা থেকে দাড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো কী হয়েছে সেটা দেখার জন্যে। দরজার কাছে গিয়ে দরজার উপরে থাকা একটা ফুটো দিয়ে ‘ও’ বাইরে তাকালো। দেখলো, বাইরে দাড়িয়ে থাকা ওর সাজ্ঞ পাজ্ঞদের পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সাথে আহান আর ওর লোকেরাও দাড়িয়ে আছে। আবীর দরজা থেকে নিজের চোখ সরিয়ে দ্রুত মেঘের কাছে ছুটে আসলো। এদিকে একটার পর একটা গুলির শব্দ কানে আসায় মেঘ ভয়ে কুকড়ে আছে। ওর শরীর থেকে টপটপ করে ঘাম পড়ছে। আবীর কোনো কথা না বলে ঝটফট করে মেঘের হাত-পায়ের বাধন খুলতে লাগলো। হাত- পায়ের বাধন পুরোপুরি খুলে ফেলতেই মেঘ ছাড়া পেয়ে আবীরকে একটা ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিলো। কিন্তু দরজা খোলার আগেই আবীর দৌড়ে এসে মেঘের হাত ধরে ফেললো। মেঘ আবীরের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করে যাচ্ছে। ওকে এতোটা ছটফট করতে দেখে আবীর ওর হাত দুটো পিছনে মুচরে ধরে দড়ি দিয়ে শক্ত করে হাত দুটো বেধে দিলো। তারপর ওর বাহু ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গোডাউনের পিছনের দিকের দরজা খুলে ওকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো।
বাইরে আসার সাথে সাথে মেঘ হেল্প হেল্প বলে জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলো। মেঘের এমন কান্ডে আবীর বোকা হয়ে গেলো। ওর মাথাতেই আসেনি যে মেঘের মুখ খোলা রেখে ওকে বাইরে নিয়ে আসলে ‘ও’ চিল্লাতে পারে। মেঘের চিৎকার শুনে আহান সহ কয়েকজন পুলিশের লোক দ্রুত দৌড়ে পিছনের সাইডে আসলো। আবীর তাড়াতাড়ি ওর কোমড়ে গুজে রাখা রিভলবার টা বের করে মেঘের মাথায় পয়েন্ট করলো। তারপর আহানদের দিকে তাকিয়ে শাষানোর স্বরে বললো
“খবরদার কেউ যদি আমাকে আটকানোর চেষ্টা করো, তাহলে আমি ওকে শুট করতে বাধ্য হবো।”
আবীরের কথায় আহান কোনো পাএা না দিয়ে ওর হাতে থাকা রিভলবার টা দিয়ে আবীরের পায়ে একটা শুট করে দিলো। সাথে সাথে আবীর হাটু ভেঙে মাটিতে বসে পড়লো। আহান এগিয়ে এসে মেঘকে টেনে আবীরের থেকে দূরে সরিয়ে নিলো। তারপর আবীরের বুকের উপর কয়েকটা লাথি মেরে পুলিশদের ওকে নিয়ে যেতে বললো। পুলিশেরা আবীরকে টেনে নিজেদের জিপের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। ঠিক তখনই কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে আবীরের সামনে দাড়ালো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই আবীর পুলিশদের থাক্কা দিয়ে গাড়ির মধ্যে উঠে গেলো। আর মুহূর্তের মধ্যে সবার চোখের সামনে দিয়ে গাড়িটা হাওয়া হয়ে গেলো।
আকষ্মিক ঘটনায় পুলিশেরা সবাই বিচলিত হয়ে দ্রুত নিজেদের গাড়ি নিয়ে সেই গাড়িটাকে ধাওয়া করার উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়লো। আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘের কাছে এগিয়ে এসে ওর হাতের বাধন খুলে দিতে দিতে বললো
“আর ইউ ওকে?”
মেঘ কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো
“আপনাকে কেনো বললো?”
আহান মেঘের হাতের বাধন খুলে ওর সামনে দাড়িয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললো
“ত্যাড়া কথা না বলে যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার অ্যান্সার করো। ঠিক আছো তুমি? কোথাও ব্যাথা ট্যাথা পাও নি তো?”
“এই মুহূর্তে আমি আপনার কোনো প্রশ্নের অ্যান্সার দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।”
কথাটা বলে মেঘ একটা ভেংচি কেটে আহানকে সাইড কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আহান মেঘের বাহু ধরে টেনে ওকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে ওর গালে কশিয়ে একটা চড় মারলো। চড়টা খেয়ে মেঘের মাথা লাটিমের মতো বনবন করে ঘুড়তে লাগলো। ‘ও’ কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে রেগে চিল্লিয়ে বললো
“আপনার সাহস হলো কীভাবে আমাকে চ……”
মেঘ পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আহান ওর অন্য গালে আরেকটা চড় মারলো। পরপর দুটো চড় খেয়ে মেঘের চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো।
‘ও’ ছলছল চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“এর আগে আমাকে কেউ কখনো এভাবে মারেনি। আর আপনি আমাকে দুই দুইটা চড় মারলেন?”
মেঘের কথা শুনে আহান দাতে দাত চেপে বললো
“সবেমাএ তো দুটো চড় মেরেছি। এরপর তুমি যতোবার আমার প্রশ্নের ত্যাড়া অ্যান্সার দিবে, ততোবার একটা করে চড় খাবে। ”
আহানের কথা শুনে মেঘ ঠোট ফুলিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর দুটো গালেই ভিষন জ্বালা করছে। ‘ও’ মনে মনে রাগে ফুশছে আর আহানকে ইচ্ছে মতো বকা দিচ্ছে। আহান এগিয়ে এসে মেঘের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ওকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও গিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ড দিতে বললো।
______________________
মোটামুটি এখন সকাল ছয়টা বাজে। গড়ির সিটের উপর গুটিশুটি মেরে বসে দু-হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে মেঘ। কাদতে কাদতে ওর একদম হেচকি উঠে গেছে। পাশে বসেই আহান মেঘের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মেঘ ভুলেও একবারও আহানের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। কারন গাড়িতে উঠার পর আহান আবারও ওর গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছে। এবারের চড় দুটো আগের বারের থেকে আস্তে ছিলো ঠিকই। কিন্তু এমন শক্ত হাতের পর পর চারটা চড় খাওয়ার পর মেঘ আর নিজের ইমোশনটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। রাগে, দুঃখে, অভিমানে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিয়েছে।
মেঘকে এভাবে কাদতে দেখে আহান ওর হাত ধরে টেনে ওকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বসালো। তারপর ধমকের স্বরে বললো
“বলেছিলাম না আমার সাথে একদম ত্যাড়ামি করবে না। তারপরেও ত্যাড়ামি করলে কেনো?”
মেঘ মাথা নিচু করে কাদতে কাদতে বললো
“কোথায় ত্যাড়ামি করলাম? আমি তো চুপ ছিলাম।”
“কেনো চুপ ছিলে? আমার প্রশ্নের অ্যান্সার দেওনি কেনো? তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি না, তোমার খিদে লেগেছে কিনা? তাহলে তুমি অ্যান্সার দিলে না কেনো?”
আহানের কথায় মেঘ এবার মাথা তুলে আহানের দিকে তাকালো। তারপর নাক টেনে টেনে বললো
“কালকে সকালে লাষ্ট বারের মতো কিছু খেয়ে ছিলাম। তারপর থেকে পেটে আর কিচ্ছু পড়েনি। তাহলে খিদে লাগবে না তো এখনো পেট ভর্তি থাকবে?”
মেঘের কথা শুনে আহান শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। মেঘ মাথাটা আবারও নিচু করে নাক টানতে টানতে হেচকি দিতে লাগলো। আহান দেখলো মেঘের দুটো গালেই আঙুলের ছাপ বসে একদম লাল হয়ে গেছে। তার উপর কাদতে কাদতে মেঘের নাকটাও একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে। আহান আস্তে আস্তে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর গালে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো। আচমকা আহানের এমন কাজে মেঘ হালকা কেপে উঠলো। ওর হার্টবিটের গতি দ্রুত বেড়ে গেলো। আহান এক হাত মেঘের কোমড়ে রেখে ওকে টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। তারপর অন্য হাত দিয়ে মেঘের গালে স্লাইড করতে করতে বললো
“আমি তোমাকে একটা কিস করতে পারি?”
হঠাৎ আহানের এমন প্রশ্নে মেঘ চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো। আহান মেঘের গালের সাথে নিজের নাক ঘশতে ঘশতে হালকা হেসে বললো
“ডোন্ট সে নো। কারন তুমি না করলেও আমি এখন তোমার কোনো কথা শুনছি না। এই মুহূর্তে তোমার ওই রেড হয়ে যাওয়া কাপা কাপা ঠোটে আমার টুপ করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। আর আমি আমার ইচ্ছেকে সব সময় সবার আগে প্রায়োরিটি দেই।”
কথাটা বলে আহান এগিয়ে এসে মেঘের ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে টুপ করে ওর ঠোটে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। তারপর ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে দূরে সরে বসে এক হাত নিজের বুকের উপর রেখে লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিতে লাগলো।। মেঘ ঠোটে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আপনি কি রাক্ষস নাকি? এভাবে কেউ কাউকে কিস করে?”
আহান বাকা হেসে বললো
“তাহলে কীভাবে করে? তুমি আমাকে একটা কিস করে শিখিয়ে দাও। তারপর আমিও তোমাকে সেইভাবে কিস করে দেখিয়ে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে আহান ঠোট চেপে হাসতে লাগলো। আর মেঘ খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে…..