#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ2
মায়া বসে বসে পানি খাচ্ছে।ঝালে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।চোখের সামনে সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে।
আহির এখনো মায়ার সামনের চেয়ারটায় বসে ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওরা লাইফে এতো লোককে মেরেছে,এতোবার র্যাগিং দিয়েছে,কথার অমান্য করলে পানিশমেন্ট দিয়েছে তারপরেও কখনো কারো জন্যে একটুও সহানুভূতি হয়নি।কিন্তু আজকে এই মায়া নামের মেয়েটাকে ছটফট করতে দেখে কেনো যেনো ওর ভীষন কষ্ট হচ্ছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আহিরের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো।কেনো যেনো আজকে ওর ছোট্ট বুড়িটার কথা ওর ভিষন মনে পড়ছে।ওর বুড়িটাও তো ঝাল খেলে এরকম ছটফট করতো।আহির চোখের পানিটা দ্রুত মুছে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।আহিরকে যেতে দেখে ওর বন্ধুরাও ওর পিছনে হাটা দিলো।
আহির দরজা পযর্ন্ত আসতেই হঠাৎ কেউ ক্যান্টিনে ঢুকে আহিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর গালে কশিয়ে একটা চড় মারলো।চড়ের শব্দে ক্যান্টিনে উপস্থিত সবাই মৃদ্যু কেপে উঠলো।আহির গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর বড় ভাই সাবরিদ সিজাত আহান ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।আহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান রাগি কন্ঠে বললো
“তোদের সাহস তো কম না,তোরা ভার্ষিটি এসে জুনিয়র ছেলে মেয়েদের র্যাগিং দিস?”
আহির তোতলাতে তোতলাতে বললো
“না,ভ-ভাই,আ-আসলে,,,,”
আহিরের কথার মাঝেই আহান ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ!আর একটা কথাও বলবি না।তোদের র্যাগ দেওয়া আমি বের করছি।তার আগে এটা বল ওই স্টুপিডটা কোথায়?”
আহির একটা ইনোসেন্ট ফেইজ করে বললো
“বিশ্বাস করো ভাই আমরা কাউকে র্যাগ দেই না।তুমি এখানে উপস্থিত যে কাউকে জিঙ্গেস করে দেখতে পারো।আমরা সত্যিই র্যাগিং করি না।আমরা আরো ভার্ষিটিতে কেউ র্যাগিং করলে সেটা আটকাই।”
আহিরের কথা শেষ হতেই আহানের পিছনে থেকে কেউ বলে উঠলো
“ওহ রিয়েলি?তাহলে একটু আগে যে ওই মেয়েটাকে চিলি সস দিয়ে নুডুলস খাওয়াচ্ছিলে সেটা কি ছিলো?”
কথাটা বলতে বলতে একটা মেয়ে এসে আহানের পাশে দাড়ালো।মেয়েটাকে দেখেই আহিরের রাগ উঠে গেলো।মেয়েটা আহিরের দিকে তাকিয়ে ওকে একটা চোখ টিপ মারলো।তারপর শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আহানের দিকে একটা ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“ভাইয়া এটার মধ্যে গত এক সপ্তাহে তোমার আদরের ভাইয়েরা যে যে ভালো কাজ করেছে তার সবকিছুর রেকর্ডিং করা আছে।”
আহান ফোনটা নিতে যাবে তার আগেই মেয়েটার হাত থেকে ছো মেরে আহির ফোনটা নিয়ে নিলো।তারপর ফোনটাকে ঠাস করে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।মেয়েটা আআআআআ বলে জোড়ে চিল্লিয়ে উঠলো।আহান দাতে দাত চেপে বললো
“তোর কি মনে হয় ফোনটা ভেঙে ফেললে আমি কিছুই জানতে পারবো না?ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, সাড়িকা অনেক আগেই আমাকে এই ভিডিও গুলো পাঠিয়ে দিয়েছে।সব দেখেই আমি এখানে এসেছি।”
__________
মায়া এতোক্ষন বসে বসে ওদের সব কথাই শুনছিলো।হঠাৎ ‘ও’ অনুভব করলো ওর নাক থেকে ব্লিডিং হচ্ছে।চোখের সামনে সবকিছু কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।মায়া আর এক মূহুর্ত্তও দেড়ি না করে বসা থেকে কোনো রকম উঠে দাড়ালো।এখন ওকে যে করেই হোক হসপিটালে যেতে হবে।নাহলে কিছুক্ষনের মধ্যেই যে ওর সাথে খুব খারাপ কিছু একটা হয়ে যাবে সেটা ‘ও’ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।
মায়া নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে এলোমেলো পায়ে সামনে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।কিন্তু কিছুটা দূর যেতেই ওর শরীরটা অবশ হয়ে আসলো। ‘ও’ আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে শরীরের সব ভর ছেড়ে দিয়ে পড়ে যেতে নিলো।কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ এসে ওর কোমরে এক হাত রেখে ওকে ধরে ফেললো।মায়া চোখ খুলে সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু লোকটাকে দেখার আগেই ‘ও’ সেন্সলেস হয়ে গেলো।
আহান এক হাত দিয়ে মায়াকে জড়িয়ে রেখে ওর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চারপাশে কি হচ্ছে সেদিকে ওর বিন্দুমাত্রও খেয়াল নেই।ওর মনে হচ্ছে ওর পৃথিবীটা থমকে গেছে।ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে।হঠাৎ সাড়িকার ডাকে আহানের হুশ ফিরে আসে।সাড়িকা দ্রুত আহানের কাছে এসে বলে
“ভাইয়া ঝাল খাওয়ার জন্যে মনে হয় আপিটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।প্লিজ ওনাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো।”
সাড়িকার কথা শুনে আহান আর দেড়ি না করে দ্রুত মায়াকে কোলে তুলে নিলো।তারপর আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“সন্ধ্যার আগে দুই ভাই বাসায় চলে আসবি।তোদের সাথে আমার কথা আছে।যদি বাসায় এসে আমি তোদের না পাই তাহলে তোদের কি অবস্থা হবে ভাবতেও পারছিস না।”
কথাটা বলে আহান মায়াকে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।সাড়িকাও আহানের পিছনে পিছনে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো তখনই আহির এসে ওর বাহু ধরে ওকে থামিয়ে দিলো।তারপর ওর এক হাত পিছনে মুচরে ধরে বললো
“খুব বড় ভুল করে ফেললি আজকে।আহান ভাইকে ওই ভিডিও গুলো দেওয়া তোর একদম উচিৎ হয়নি।একটু ওয়েট কর তারপর দেখ আমি তোর ঠিক কি অবস্থা করি।”
সাড়িকা একটা ঝাড়া মেরে আহিরকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো
“আগে নিজেরা তো বাচো,তারপর নাহয় আমার ব্যাবস্থা করে এসো।”
কথাটা বলে সাড়িকা হনহন করে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।আহির বিরবির করে বললো
“তোকে এই ভার্ষিডিতে আমি শান্তিতে লেখাপড়া করতে দিবো না সাড়িকা।শুধু একটু অপেক্ষা কর।তোর লাইফ কিভাবে হেল করতে হয় সেটা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।”
_______________________
তিন দিন পর,,,,,
হসপিটালের বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া।আজকে তিন দিন ধরে ‘ও’ হসপিটালে আছে।সবকিছু ওর আছে ভিষন বিরক্তিকর লাগছে।ছোট বেলা থেকেই এই হসপিটাল নামক জায়গাটা ওর কাছে বড্ড অপছন্দের।ওর মতে এখানে থাকার থেকে অসুস্থ হয়ে মরে যাওয়াও অনেক ভালো।
হঠাৎ মায়া শুনতে পেলো কেউ ওর দরজায় নক করে ভিতরে ঢুকছে। ‘ও’ ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আহির,মিহির,আহান আর একজন নার্স ভিতরে ঢুকছে।আহির আর মিহির দুজনের হাতে দুটো ফুলের বুকেট।মায়া কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকালো।আহির আর মিহির এসে ফুলের বুকেট দুইটা মায়ার বেডের উপরে রাখলো।মায়া চিল্লিয়ে বললো
“আরে কি করছেন?ফুলে আমার এলার্জি আছে।এগুলো এখান থেকে সরিয়ে ফেলুন প্লিজ।ঝাল খেয়ে মরিনি তাই এখন কি গোলাপ ফুল দিয়ে মারতে এসেছেন নাকি?”
মায়ার কথা শুনে নার্সটা এসে দ্রুত ফুলের বুকেট দুটো সরিয়ে ফেললো।মিহির খানিকটা রাগ দেখিয়ে বললো
“আমরা কিভাবে জানবো তোমার ফুলেও এলার্জি আছে?আর আমরা যদি আগে জানতাম তোমার ঝালে এলার্জি আছে তাহলে কখনো চিলি সস খেতে বলতাম না।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই আহির বললো
“হ্যা,এইজন্যে তোমার সাথে যা করেছি তার জন্যে আমরা দুজনেই রিয়েলি ভেরি সরি।”
মিহির আবারও বললো
“উই আর সরি।আমরা আমাদের ভুলটা বুঝতে পেরেছি তাই প্লিজ আমাদের মাফ করে দিও।”
কথাটা বলে আহির আর মিহির হনহন করে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।ওদের ভিষন রাগ লাগছে।শেষ পযর্ন্ত কিনা একটা পুচকে মেয়ের কাছে ওদের সরি বলতে হলো?শুধুমাএ আহানের ভয়ে মেয়েটাকে সরি বললো।নাহলে সরি বলা তো দূরের কথা,কোনোদিন এই মেয়েকে দেখতেও ওরা এখানে আসতো না।
মায়া বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে কারো চাপে পড়ে আহির আর মিহির ওকে সরিটা বলেছে।নাহলে এরা কারো সামনে যে মাথা নিচু করে সরি বলার ছেলে না সেটা মায়া আগে থেকেই জানে।আহির,মিহির চলে যেতেই আহান মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বললো
“আমার ভাইদের হয়ে আমি আপনাকে সরি বলছি।প্লিজ ওদের মাফ করে দিন।বয়সের দিক থেকে ওরা অনেকটা বড় হলেও ওদের মধ্যে তেমন একটা ম্যাচুরিটি আসেনি।তাই মাঝে মাঝে ভুল করে বসে।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।”
মায়া মুখ বাকিয়ে বললো
“হ্যা,আপনার ভাইয়েরা তো ছোট বাচ্চা।একদম ইনোসেন্ট দুধের ধোয়া তুলসি পাতা। তাইতো মানুষকে মেরে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যায়।”
আহান ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি?”
মায়া দাতে দাত চেপে বললো
“কিছুই বলতে চাইছি না।শুধু এটাই ভাবছি যে মানুষ কতোটা ইনোসেন্ট হলে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে,জুনিয়রদের ধরে র্যাগ দেয়,অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের ভার্ষিটি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।আপনার ভাইয়েরা সত্যিই একদম ইনোসেন্ট বাচ্চা।”
মায়া কথাটা যে আহানকে খোচা দিয়ে বলেছে সেটা আহান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।আহানের ভিষন রাগ লাগছে। ‘ও’ আহির,মিহিরকে বকা দিয়ে এখানে মেয়েটার কাছে সরি বলাতে নিয়ে এসেছে আর মেয়েটা উল্টে ওকেই কথা শোনাচ্ছে?আহান রাগি দৃষ্টিতে এক পলক মায়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুশতে ফুশতে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মায়া বিদ্রূপের হাসি হেসে বললো
“আপনারা হাজার বার সরি বলে মাথা ঠুকে মরে গেলেও আমি আপনাদের কোনোদিন ক্ষমা করবো না।”
_________________________
দশ তলার একটা বড় বিল্ডিংয়ের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে মায়া।গেটের এক সাইডের দেয়ালের উপরের সাইনবোর্ডে লেখা সুখ নীড়।মায়া লেখাটা পড়ে তাছিল্য হেসে বললো
“অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে নিজেরা বেশ শান্তিতেই আছেন দেখছি।তবে চিন্তা নেই আপনাদের সুখ,শান্তি হরন করার জন্যে আমি এসে গেছি।”
মায়ার কথা শেষ হতেই একটা মেয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বললো
“কিরে একা একা কি বলছিস?”
মায়া হালকা হেসে বললো
“তেমন কিছু না। ভাবছি শেষ পযর্ন্ত আমরা আমাদের লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি এসেই পড়লাম।”
মায়ার কথা শুনে মেয়েটা ভিতু ফেইজ করে বললো
“এসে তো গেলাম,কিন্তু আমার ভীষন ভয় করছে মেঘ।যদি ধরা পড়ে যাই।”
মায়া একটা ধমক দিয়ে বললো
“ধরা যদি পড়ি তাহলে তোর জন্যেই পড়বো।কতো বার বলেছি আমাকে মেঘ বলে না ডাকতে।তারপরেও তুই বারবার একই ভুল করিস।”
মেয়েটা ঠোট ফুলিয়ে বললো
“আমার কি দোষ,এতো বছরের অভ্যাস এতো সহজে ফেরানো যায় নাকি?”
মায়া বিরক্তির স্বরে বললো
“কষ্ট হলেও ফেরাতে হবে দিশা।নাহলে মেঘ নামটা কেউ শুনে ফেললে গন্ডগোল হয়ে যাবে।”
______________________
কেটে গেছে আরো তিনটা দিন।এই তিনদিনে মায়া আর দিশা মিলে ওদের ফ্লাটটা একদম গুছিয়ে ফেলেছে।অবশ্য এখানে ওরা ছাড়াও আরো দুটো মেয়ে আছে।যাদের সাথে ওরা ফ্লাটটা সেয়ার করে থাকবে।ফ্লাটটার মধ্যে দুটো বেডরুম,একটা ড্রইংরুম,একটা ডাইনিং রুম,একটা কিচেন আর বেডরুমের সাথে দুটো এটাচ ওয়াশরুম আছে।
বিকাল 04:00 বাজে……
মায়ার একটা কল আসায় ‘ও’ ফোনটা নিয়ে সোজা সাদে চলে আসে।তারপর কল ব্যাক করে কিছুক্ষন কথা বলে পিছনে ঘুড়ে নিচে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।কিন্তু সাদের দরজা দিয়ে নিচে নামতে যাবে তখনই কয়েকটা ছেলে-মেয়ের হাসাহাসির শব্দ ওর কানে ভেষে আসে।শব্দটা শুনে ‘ও’ দাড়িয়ে যায়।
#চলবে