মিশে আছো মুগ্ধতায় – পর্ব ৩৪

0
1038

#মিশে_আছো_মুগ্ধতায়
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ34

সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঘ নিচে আসতেই দেখতে পেলো ড্রইংরুমে একদম থমথমে পরিবেশ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই গম্ভীর মুখ করে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। সোফার উপর কাধে ব‍্যাগ নিয়ে সাজিদ বসে আছে। সাজিদের সারামুখে মা*রে*র দাগ। সাড়িকা, সাঈফা মাথা নিচু করে সাজিদের পাশেই বসে আছে। ওদের অপজিট পাশের সোফার উপর মিড়া রহমান রাগি লুক নিয়ে বসে আছে। মেঘ এগিয়ে গিয়ে মিড়া রহমানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“কি হয়েছে তোমাদের? সবাই এমন গম্ভীর মুখ করে বসে আছো কেনো?”

মেঘের প্রশ্ন শুনে মিড়া রহমান কর্কশ কন্ঠে বললেন

“কি আবার হবে? ওই অসভ‍্যটার জন‍্যে একটা দিন আমার শান্তিতে থাকার কোনো উপায় আছে? ‘ও’ যেখানেই যাবে সেখানে গিয়েই একটা ঝামেলা পাকাবে।”

মেঘ বুঝতে পারলো না মিড়া রহমান কার কথা বলছেন। তাই ‘ও’ ভ্রু কুচকে মিড়া রহমানকে প্রশ্ন করলো

“কার কথা বলছো?”

“কার কথা বলছি বুঝতে পারছো না? তোমার ওই জানোয়ার ভাইটার কথা বলছি।”

মেঘ এবার ভালো করেই বুঝতে পারলো যে মিড়া রহমান মিহিরের কথা বলছেন। কিন্তু হঠাৎ করে মিড়া রহমানের এইভাবে মিহিরের উপর ক্ষেপে যাওয়ার কারনটা মেঘ কিছুতেই বুঝতে পারলো না। তাই ‘ও’ চিন্তিত স্বরে বললো

“তুমি হঠাৎ ভাইয়ার উপরে এতোটা ক্ষেপে গেলে কেনো মাম্মাম? কি করেছে ভাইয়া?”

“সেটা তোমার ওই গুনধর ভাইকে গিয়েই জিজ্ঞেস করো।”

ঝাড়ি মেরে কথাটা বলে বসা থেকে দাড়িয়ে কিচেনের দিকে চলে গেলো মিড়া রহমান। মিড়া রহমান যেতেই মেঘ সাড়িকা, সাঈফার মুখোমুখি দাড়িয়ে ওদেরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“কি হয়েছে, তোরা কিছু জানিস? মাম্মাম ভাইয়ার উপর এতো রেগে আছে কেনো?”

মেঘের প্রশ্ন শুনে সাড়িকা মিনমিনে কন্ঠে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে করে বললো

“কালকে রাতে যখন সাজিদ ছাদে গিয়েছিলো। তখন মিহির ভাইয়া অকারনেই সাজিদকে অনেক মেরেছে। আর বলেছে, আজকে সকালের মধ‍্যে যদি সাজিদ বাসা থেকে বের হয়ে না যায়, তাহলে সাজিদকে ভাইয়া মে*রে ফেলবে।”

সাড়িকার কথা শুনে সাঈফা আর সাজিদ দুজনেই ওর দিকে তাজ্জপ হয়ে তাকিয়ে রইলো। কারন সাড়িকা তখন মিড়া রহমানকেও এই কথা গুলোই বলেছে। আর সাঈফাও যে কাল রাতে সাজিদের সাথে ছাদে ছিলো সেই ব‍্যাপারটা সবার কাছ থেকে বেমালুম চেপে গেছে। সাড়িকার এমন মিথ‍্যা বলার কারনটা সাঈফা আর সাজিদ কিছুতেই বুঝতে পারছে না। মেঘ অবাক কন্ঠে বললো

“হোয়াআআআআট!”

সাড়িকা আবারও আগের ভঙ্গিতেই বলা শুরু করলো

“হ‍্যা! তাই সকালে উঠেই সাজিদ বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন‍্যে নিচে এসেছিলো। ফুপি মনি তখন সাজিদকে দেখে ফেলে, এবং ওকে আটকে দেয়। তারপর ওকে এইভাবে হঠাৎ করে চলে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করে, কিন্তু সাজিদ কিছুতেই ফুপি মনিকে কালকে রাতের ঘটনাটা বলতে চাইছিলো না। তাই আমি বাধ‍্য হয়ে ফুপি-মনি সহ বাড়ির সবাইকে সব সত‍্যিটা বলে দেই। সবটা শুনে ফুপি মনি রেগে গিয়ে মিহির ভাইয়াকে ঘুম থেকে তুলে নিচে নিয়ে এসে সাজিদকে সরি বলতে বলে। কিন্তু ভাইয়া কিছুতেই সাজিদকে সরি বলার জন‍্যে রাজি হচ্ছিলো না। সেইজন‍্যে ফুপি মনি ভিষন রেগে গিয়ে সবার সামনে ভাইয়ার গালে দুটো চড় মেরে দিয়েছে।”

সাড়িকার লাস্টের কথাটা শুনে মেঘ হতবম্ভ হয়ে থম মেরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। তারপর শুকনো কন্ঠে বললো

“ভাইয়া এখন কোথায়?”

“থাপ্পর খাওয়ার পর তো উপরের দিকে যেতে দেখলাম। নিজের রুমেই আছে হয়তো।”

সাড়িকা কথাটা বলতেই মেঘ আর এক সেকেন্ডও ওখানে দাড়ালো না। দ্রুত দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো। মেঘ চলে যেতেই সাঈফা সাড়িকাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে ফিশফিশিয়ে বললো

“তুই সবাইকে মিথ‍্যা কথা বললি কেনো?”

সাড়িকা ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো

“কি মিথ‍্যা বলেছি?”

“কালকে রাতে তো সাজিদের সাথে আমিও ছাদে ছিলাম। আর মিহির ভাইয়া সাজিদকে মে*রে*ছে ঠিকই। কিন্তু হু*কি গুলো তো উনি আমাকে দিয়েছিলো। তাহলে তুই আমার কথা কাউকে বললি না কেনো?”

সাঈফার কথা শুনে সাড়িকা সাঈফার মাথার পিছনে ঠাস করে একটা চড় মারলো। তারপর দাতে দাত চেপে বললো

“আমি যদি বলতাম যে কালকে রাতে সাজিদ আর মিহির ভাইয়ার সাথে তুইও ছাদে ছিলি। তাহলে যেই থা*প্প*র দুটো মিহির ভাইয়ার গালে পড়েছে, ওই থা*প্প*র দুটো তোর গালে পড়তো। আর সাজিদকে মারার জন‍্যে সবাই মিহির ভাইয়ার প্রশংসা করতো।”

কথাটা বলে সাড়িকা বসা থেকে দাড়িয়ে গটগট করে উপরে চলে গেলো। কিন্তু সাঈফার মনে কেমন যেনো গিলটি ফিল হতে লাগলো। মিহির সাজিদকে মারার কারনে ‘ও’ মিহিরের উপর রেগে ছিলো ঠিকই। তবে ঘড় ভর্তি মানুষের সামনে কেউ মিহিরের গালে চড় মারুক সেটা সাঈফা কখনো চায়নি।
_______________________

মেঘ দৌড়ে মিহিরের রুমের সামনে এসে বুঝতে পারলো রুমের দরজাটা হালকা করে লাগিয়ে রাখা। তাই ‘ও’ দ্রুত দরজায় ধাক্কা দিয়ে রুমের মধ‍্যে ঢুকে গেলো। রুমের মধ‍্যেই ঢুকেই মেঘের সারা শরীর জমে একদম বরফ হয়ে গেলো। কারন মেঘের থেকে কিছুটা দূরে ফ্লোরে একটা ভাঙা কাচের গ্লাস পড়ে আছে। সেই গ্লাসটার কিছুটা ভাঙা অংশ মিহির হাতের মধ‍্যে নিয়ে চেপে ধরে বেডের উপর বসে আছে। আর মিহিরের হাত থেকে চুইয়ে, চুইয়ে রক্ত বের হয়ে ফ্লোরে পড়ছে। মেঘ কিছুক্ষন থম মেরে দাড়িয়ে থেকে এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সামনে হাটু গেরে বসে পড়লো। তারপর মিহিরের কাচ চেপে ধরা হাতটা খোলার চেষ্টা করতে করতে বললো

“ভাইয়া কি করছিস? ছাড়া এটা! দেখ তোর হাত কেটে ব্লিডিং হচ্ছে।”

মেঘের কথা শুনতে পেয়েও মিহির কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। কাচটা ওভাবে হাতের মধ‍্যে চেপে ধরেই থম মেরে বসে রইলো। মেঘ কাদো কাদো কন্ঠে বললো

“ভাইয়া প্লিজ কাচটা ছাড়। আমাকে তোর হাতটা দেখতে দে প্লিজ।”

মিহির শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“মেঘ যা এখান থেকে। আমাকে একটু একা থাকতে দে প্লিজ।”

“না! আমি কোথাও যাবো না। আগে তুই এটা হাত থেকে ছাড় বলছি। আমাকে হাতটা দেখতে দে।”

কথাটা বলে মেঘ নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে মিহিরের হাত খোলার চেস্টা করলো। কিন্তু মিহির এতো শক্ত করে নিজের হাতটা মুঠোবন্ধি করে রেখেছে যে মেঘ কিছুতেই ওর হাতের মুঠো থেকে কাচটা বের করতে পারলো না। তাই মেঘ বাধ‍্য হয়ে মিহিরের হাতের কব্জিতে জোড়ে কামড় বসিয়ে দিলো। কিন্তু তাতেও মিহিরের কোনো হেলদোল হলো না। ‘ও’ আগের মতোই শক্ত হয়ে বসে রইলো। মেঘ এবার আর সহ‍্য করতে না পেরে হাটু গেড়ে বসে থাকা অবস্থায়ই মিহিরকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠলো। মেঘের এমন কান্ডে মিহির কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো। তারপর মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“কিরে তোর আবার কি হলো? কাদছিস কেনো?”

মেঘ ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো

“কাচটা ওভাবে চেপে ধরে রেখেছিস কেনো? তোর হাতে ব‍্যাথা লাগছে তো।”

মিহির অবাক কন্ঠে বললো

“আমার হাতে ব‍্যাথা লাগছে তাতে তোর কি? তুই এভাবে কাদছিস কেনো?”

মেঘ বাচ্চাদের মতো করে নাক টানতে টানতে বললো

“আমারও খুব ব‍্যাথা লাগছে।”

“তোর আবার কোথায় ব‍্যাথা লাগছে?”

মিহিরের প্রশ্নের প্রতিউওরে মেঘ বাচ্চাদের মতো করে বললো

“জানিনা কোথায় ব‍্যাথা লাগছে। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ কাচ টা হাত থেকে ফেলে দে ভাইয়া। প্লিজ!”

কথাটা বলে মেঘ আবারও জোড়ে শব্দ করে কেদে দিলো। মেঘের কথা শুনে মিহির ফিক করে হেসে দিলো। মুহূর্তের মধ‍্যে ওর সব রাগ, অভিমান গায়েব হয়ে গেলো। মিহির হাতে থাকা কাচ’টা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে ঠোট ফুলিয়ে বললো

“কাচ’টা তো ফেলে দিলাম। এখন যদি হাতে ব‍্যান্ডেজ না করি তাহলে তো ব্লিডিং বন্ধ হবে না। কিন্তু এখন আমার হাতে কে ব‍্যান্ডেজ করে দিবে? একজন তো কেদে কেদে নিজের নাকের পানি আর চোখের পানি দিয়ে আমার টি-শার্ট একদম ভিজিয়ে ফেলেছে। তার কি সময় আছে আমার হাতে ব‍্যান্ডেজ করে দেওয়ার?”

মিহিরের কথা শেষ হতেই মেঘ মিহিরকে ছেড়ে দিয়ে ওর পেটে জোড়ে একটা পাঞ্চ মারলো। তারপর নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো

“খরবদার একদম আমার সাথে কোনো ড্রামা করতে আসবি না। বস এখানে আমি ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তার কিছুক্ষন পর হাতে একটা ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আবার রুমে ফিরে এলো। মিহির চুপচাপ বসে বোনের কান্ড দেখছে। মেঘ একদম আস্তে আস্তে খুব যত্ন সহকরে মিহিরের হাত থেকে কাচগুলো বের করলো। তারপর এন্টিসেপক্টিক দিয়ে হাতটা ক্লিন করে সুন্দর করে ব‍্যান্ডেজ করে দিলো। হাত ব‍্যান্ডেজ করা শেষ হলে মিহির মেঘের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো

“আমার হাত তো ব‍্যান্ডেজ করা হয়ে গেছে। এইবার তোর ব‍্যাথা কমেছে?”

মিহিরের কথা শুনে মেঘ রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। তারপর হাতে থাকা ফাষ্ট এইড বক্স টা দিয়ে মিহিরের মাথায় জোড়ে একটা বারি মে*রে রাগে ফুশতে ফুশতে বললো

“খবরদার তুই আমার সাথে কোনো কথাই বলবি না। মাথামোটা, বদরাগি, খবীচ, খারুচ একটা। আজ থেকে তুইও আমার ভাই না, আর আমিও তোর বোন না। এখন থেকে তুই আমার থেকে একশো হাত দূরে থাকবি।”

(বিঃদ্রঃ এই ডায়লগটা আমিও মাঝে মাঝে ভাইয়াকে বলি। কিন্তু ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার থেকে একশো হাতের জায়গায়, এক হাজার হাত দূরে চলে যায়। তারপর আমার রাগ কমে গেলে আমি নিজেই গিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন‍্যে ওর কাছে মাফ চাই।🥴🥴 কিন্তু তখন সে এমন ভাব করে যেনো আমি সত‍্যি সত‍্যি তার বোন না।🥴)
_______________________

সকাল 10:15

বাসার সামনের গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে মেঘ, দিশা আর সাজিদ। ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে অভি আর আহির। সবার চোখে মুখেই আপাততো বিরক্তির ছাপ। প্রায় পচিশ মিনিট ধরে ওরা সবাই এখানে দাড়িয়ে আছে। কারন আজকে সকাল, সকাল ওদের সবার শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে সবাই গাড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো সাঈফা ওদের সাথে আসেনি। তাই সাঈফাকে ডেকে নিয়ে আসার জন‍্যে মেঘ সাড়িকা’কে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু সাড়িকা সেই যে সাঈফাকে ডাকতে গেলো তারপর আর আসলোই না।

এই মুহূর্তে মেঘের ইচ্ছে করছে সাড়িকা আর সাঈফাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। বিরক্তিতে ওর মেজাজ একদম তুঙ্গে উঠে গেছে। মেঘের বিরক্তির ধাপ আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে দিশা বললো

“প্রথমে তো সাঈফা আসলো না। এখন সাঈফাকে নিয়ে আসতে গিয়ে সাড়িকাও আসছে না। কোথায় গিয়ে আটকে গেছে ওরা দু-বোন?”

দিশার কথা শুনে মেঘ ঝাড়ি মেরে বললো

“তুইও যেখানে দাড়িয়ে আছিস, আমরাও সেখানেই দাড়িয়ে আছি। তাহলে কিভাবে বুঝবো ওরা কোথায় গেছে?”

দিশা নাক ফুলিয়ে বললো

“আজব! আমি তো নরমাললি প্রশ্ন’টা করলাম। তুই ওদের রাগ এখন আমার উপর ঝাড়ছিস কেনো?”

“তোর উপর ঝাড়বো না তো কার উপর ঝাড়বো? তোকে কতো করে বললাম যে দিশা আংকেল-আন্টিকে নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি আসবি, তুই আসলে তারপর আমরা একসাথে শপিং করতে যাবো। কিন্তু তুই সেই যে গেলি তারপর আজকে সকালে আসলি। অথচ আজকে সন্ধ‍্যায় তোদের মেহেন্দি, কালকে তোর গায়ে হলুদ, কিন্তু এখনো আমাদের সবার বিয়ের অর্ধেক কেনাকাটাই বাকি। বাহ!”

মেঘের কথা শেষ হতেই দিশা ক্ষেপে গিয়ে বললো

“আরেহ আমি কি ওখানে শুধু আমার মা-বাবাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম নাকি? ওখানে গিয়ে আমাকে আমার স্কুল ফ্রেন্ড, হাই স্কুল ফ্রেন্ড, কলেজ ফ্রেন্ড সবাইকে খুজে খুজে ইনভিটিশন কার্ড দিতে হয়েছে। তারপর ওদেরকে এই বিয়েতে আসার জন‍্যে রাজি করাতে হয়েছে। সেইজন‍্যেই তো এতোগুলো মানুষকে রাজি করাতে করাতে আমার এখানে আসতে এতোটা লেইট হয়ে গেলো।”

মেঘ দাতে দাত পিশে বললো

“বাহ, তোর গুষ্ঠির পিন্ডিদের দাওয়াত দিয়ে এখানে নিয়ে এসে ভিষন ভালো কাজ করেছিস। এখন তোর আগের যে পুরনো ছেড়া জামা আছে, সেগুলো পড়ে বিয়ে করে নিস। আমি এখন কোনো শপিং, টপিং করতে পারবো না। চললাম আমি বাসায়!”

কথাটা বলে মেঘ বাসার দিকে যাওয়ার জন‍্যে পা বাড়াতেই বাসার মধ‍্যে থেকে সাড়িকা দৌড়ে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো। তারপর বুকে হাতে দিয়ে হাপাতে হাপাতে মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আপি, সাঈফাকে বাড়ির কোথাও খুজে পাচ্ছি না। নিশ্চয়ই পেত্নি’টা শপিং করার ভয়ে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে পড়েছে।জানোই তো ওই মেয়ে এক নম্বরের কাজ চোর।”

সাড়িকার কথা শুনে মেঘের ইচ্ছে করলো ওর নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ে ফেলতে। কিন্তু ‘ও’ যথা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো

“বাহ একদম অচাম মার্কা কাজ করেছে। এক বোন শপিং করার নাম শুনলে অজ্ঞান থাকা অবস্থায়ও শপিং করার জন‍্যে লাফালাফি শুরু করে দেয়। আর আরেক বোন শপিং করার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। কি দারুন ব‍্যাপার! এই তোরা দুজন জমজ বোন কিভাবে হলি বলতো? তোদের দু-বোনের মধ‍্যে না চেহারার মিল আছে, আর না কোনো কাজ কর্মের মিল আছে।”

মেঘের কথা শেষ হতেই সাড়িকা এগিয়ে এসে মেঘের হাত ধরে ওকে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো

“আরেহ ধুর, আমাদের মধ‍্যে মিল-অমিল তুমি পরেও খুজে বের করতে পারবে। আগে শপিং করে আসি চলো। আমি তো আর এক মিনিটও এখানে দাড়িয়ে ওয়েট করতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে, শপিংমলের জিনিসপএ গুলো আমার নাম ধরে আমাকে জোড়ে জোড়ে ডাকছে। তাড়াতাড়ি চলো আপি!”

সাড়িকার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। আর মেঘ উপরের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো

“হায় আল্লাহ এই কোন পাগল নিয়ে আমি ফেশে গেলাম। এইবার এই মেয়ে আজকে আমার জীবন ভাজা ভাজা করে তারপর শান্ত হবে। প্লিজ আল্লাহ এইবারের মতো আমাকে বাচিয়ে নিও।”
_________________________

মুখ, হাত-পা বাধা অবস্থায় ফ্লোরে বসে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আছে সাঈফা। রাগে সাঈফার চোখ জোড়া একদম রক্তবর্ন ধারন করেছে। একটু আগেই ‘ও’ সাজিদের সাথে কথা বলে সাজিদদের রুম থেকে বের হয়ে রেডি হওয়ার জন‍্যে নিজের রুমে যাচ্ছিলো। কিন্তু মাঝ পথে কোথা থেকে মিহির এসে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে। তারপর ওর হাত-পা, মুখ শক্ত করে বেধে দিয়ে ওকে ফ্লোরে বসিয়ে দরজা ভিতর থেকে লক করে দিয়েছে। দরজা লক করে দিয়ে নিজে গিয়ে আড়ামচে বেডের উপর বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে। গেমস খেলার মাঝে মাঝে আবার “ইয়াহু” বলে জোড়ে চিল্লিয়েও উঠছে। যেটা বারবার সাঈফার কানে এসে বারি খাচ্ছে, আর ওর ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে মিহিরের কাছে গিয়ে ওর কানের নিচে ঠাটিয়ে কয়েকটা চড় মেরে দিতে। কিন্তু চাইলেও সাঈফা এখন সেটা করতে পারবে না। কারন ওর হাত-পা বাধা। সাঈফা মুখ দিয়ে “উমম উমম” শব্দ করে ছটফট করে নিজের হাত-পা দড়ি থেকে খোলার চেষ্টা করছে। ওকে ছটফট করতে দেখে মিহির ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকালো। তারপর ঠোটের কোনে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বললো

“এভাবে ছুটাছুটি করে কোনো লাভ নেই ম‍্যাডাম। দড়ি এতো শক্ত করে বেধেছি যে আপনি এখানে বসে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে শহিদ হয়ে গেলেও নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন না। তাই অযথা এভাবে লাফালাফি করে আমার মেজাজ খারাপ করবেন না।”

মিহিরের কথা শুনে সাঈফা ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। সাঈফাকে এভাবে তাকাতে দেখে মিহির কিছুটা ভয় পাওয়ার ভান করে বললো

“এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো ম‍্যাম? বাচ্চা ছেলেটার দিকে এভাবে তাকালে সে ভয় পেয়ে যাবে না? প্লিজ আমার দিকে এভাবে তাকাবেন না ম‍্যাম। আমার আপনাকে খুব ভয় লাগছে।”

সাঈফা মিহিরের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেই মুখ থেকে উমম উমম শব্দ করে যাচ্ছে। সাঈফার কান্ডে মিহির এবার বিরক্ত হয়ে বসা থেকে উঠে সাঈফার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর মুখ থেকে সেলোটেপ টা টেনে খুলে ফেললো। তারপর বিরক্তির স্বরে বললো

“কি সমস‍্যা তোর? চুপচাপ এখানে বসে থাকতে পারছিস না? মুখ থেকে এমন অদ্ভুত শব্দ বের করে আমার কানের তেরোটা কেনো বাজাচ্ছিস?”

মিহির কথাটা বলতেই সাঈফা রাগি কন্ঠে বললো

“আপনার সমস‍্যা কি? আপনি এইভাবে আমার হাত-পা বেধে আমাকে আটকে রেখেছেন কেনো?”

“ইচ্ছে হয়েছে তাই আটকে রেখেছি। আমার সব কাজের কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে নাকি?”

“ইচ্ছে হয়েছে আটকে রেখেছেন মানে? এটা কি মামু বাড়ির আবদার পেয়েছেন নাকি? যখন ইচ্ছে হবে আমাকে অপমান করবেন। আবার যখন ইচ্ছে হবে আমাকে নিয়ে এসে এখানে আটকে রাখবেন।”

সাঈফার কথা শুনে মিহির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। তারপর শান্ত কন্ঠে বললো

“আমি তোকে যতোবার অপমান করেছি, ততোবার তোর ভালোর জন‍্যেই তোকে অপমান করেছি। কারন আমার মনে কখনো তোর জন‍্যে কোনো ফিলিংস ছিলো না। তাই আমি চাইনি যে তুই আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু একটা ভেবে নিজের ভবিষ্যৎটা খারাপ করিস।”

সাঈফা তাচ্ছিল্য হেসে বললো

“হ‍্যা আপনি যেটা চেয়েছিলেন সেটাই তো হয়েছে। আমি আপনার থেকে সারা জিবনের জন‍্যে দূরে চলে গেছি। তাহলে এখনো আপনি কেনো আমার পিছনে পড়ে আছেন?”

মিহির খানিকটা রাগি কন্ঠে বললো

“আমি তোর পিছনে পড়ে নেই সাঈফা। আমি শুধু চাইছি তোকে সাজিদের থেকে দূরে রাখতে। দেখ, তুই সাজিদকে নিয়ে নিজের মনের মধ‍্যে উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে আবারও নিজেকে কষ্ট দিস না। ওই ছেলে একদমই তোর যোগ‍্য না।”

“অদ্ভুত তো আমি অন‍্য কাউকে নিয়ে ভাববো কি ভাববো না, সেটা একান্তই আমার ব‍্যাক্তিগত ব‍্যাপার। এটা নিয়ে আপনি বলার কে? আর সাজিদ আমার যোগ‍্য কিনা সেটা ভাবার জন‍্যে আমার বাবা-মা আছে। তাই এসব নিয়ে আপনাকে এতো মাথা না ঘামালেও চলবে। আর আপনার জন‍্যে এটাই ভালো হবে যে আপনি আমার আর সাজিদের থেকে একশো হাত দূরে থাকুন।”

সাঈফার কথা শুনে মিহির কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে সাঈফার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ওর হাত-পায়ের বাধন খুলে দিতে দিতে বললো

“আমিও কাকে নিয়ে মাথা ঘামাবো আর কাকে নিয়ে ঘামাবো না, সেটাও আমার ব‍্যাক্তিগত ব‍্যাপার। এটা নিয়ে আমি তোর কাছ থেকে কোনো এডভাইস শুনতে চাই না। তুই শুধু ভালো ভাবে একটা কথা নিজের মাথার মধ‍্যে ঢুকিয়ে নিস। যদি তোকে আবারও আমি ওই সাজিদের সাথে দেখেছি, তাহলে আজকে যেভাবে তোকে টেনে নিয়ে এসে এখানে হাত-পা বেধে আটকে রাখলাম। সেইভাবে আবারও তোকে নিয়ে এসে হাত-পা বেধে আটকে রাখবো।”

কথাটা বলতে বলতে মিহির সাঈফার হাত-পায়ের বাধন পুরোপুরি খুলে দিলো। সাঈফা বসা থেকে দাড়িয়ে কাঠ কাঠ কন্ঠে মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“এসব না করে আপনি ভালো একটা মানষিক ডাক্তার দেখান। কারন আপনার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আপনার মাথায় গন্ডোগোল দেখা দিয়েছে। নাহলে কখনোই এসব ফালতু মার্কা কাজ করে নিজের সময় নষ্ট করতেন না।”

মিহির সরু চোখে সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো

“হাত-পায়ের বাধন খুলে দিয়েছি বলে মুখে যা আসছে তাই বলছিস, তাইনা? ভুলে যাস না, যেভাবে বাধন খুলেছি সেভাবে আবার বেধেও রাখতে পারবো। তাই অযথা ফালতু কথা না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।”

“হ‍্যা যাচ্ছি! এখানে থাকার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।”

কথাটা বলে সাঈফা একটা ভেংচি কেটে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু দরজা খোলার আগেই মিহির পিছন থেকে সাঈফাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলে উঠলো

“আরেকটা কথা, আজকের ব‍্যাপারটা যেনো বাসার কেউ জানতে না পারে। যদি কেউ জেনেছে তাহলে কিন্তু তোর উপরে আমি থার্ড ডিগ্রি দিবো।”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here